Game 2 পর্ব -১৯+২০

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_19+20

নিরব চমকে উঠলো কারন লিফটের ভেতর মেহেরিন ছিল। একটা নীল রঙের হুডি আর জিন্স পড়া সে। হাতে থাকা কালো টুপি টা মাথায় দিয়ে নিরবের কলার ধরে লিফটের ভেতর আনলো সে। লিফট বন্ধ হবার সাথে সাথে নিরবের কপাল বরাবর গান ধরল। নিরব পুরো থতমত খেয়ে গেল। কি করবে এখন মেহেরিন। মেহেরিন হেসে বলল..

– গান সাইলেন্ট মোডে আছে তোমাকে এখানে মেরে ফেললেও কেউ হদিস পাবে না!

নিরব কি বলবে বুঝতে পারল না। মেহেরিন আবারো বলে উঠে..
– কি বলেছিলাম! বলেছিলাম আমার সাথে থাকতে তাই না। তাহলে..

– আমাকে ওরা ফোন করেছিলো!

– ওহ আচ্ছা তাই এখানে চলে এলে! আমাকে বলো নি কেন?

নিরব একটা শুকনো ঢোক গিলল। মেহেরিন গান রেখে জোরে হাসল। অতঃপর বলল..
– কি ভাবলে এখানে এসে ওদের সব বলে দেবে আর আমি কিছুই জানতে পারবো না। হুম!

– আমি মানে আমি!

– রাখো আমি আমি! এটা জানো তোমার ওপর ২৪ ঘন্টা নজর রাখছি আমি, এটা একবার ও ভাবলে না এসব যে করছিলে আমি জানতে পারলে তোমার প্রাণ টা আর থাকবে কি না! সে যাই হোক এতে আমার একটা লাভ হয়েছে। খুঁজতে আর কষ্ট করতে হলো না ওরা কোন হোটেলে আছে। এখানে আছে। তোমাকে যখন ডেকেছে নিশ্চিত কিছু না কিছু বলবে। আর সেই কথা তুমি আমাকে বলবে! না বলবে না তোমাকে আর বিশ্বাস নেই। বাট যদি ওখানে গিয়ে মুখ খুলো তো.. তো কি বললেও তো আমি জানবো না তাই না। নকল নিরব হবু জামাই একটা কথা বলি কয়েকদিন আগেই কিন্তু আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে। রিং পড়িয়েছিলাম তো আমি নাহ!

বলেই মেহেরিন এক গাল হাসল। নিরব মেহেরিন’র হাসি দেখে সন্দেহ হলো। সে নিজের রিং এর দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন হেসে বলল..
– ট্র্যাকার মেশিন এটাতে যার মাধ্যমে তোমার ২৪ ঘন্টার খবর আমি রাখি! আর এর মাধ্যমেই আমি এখান পর্যন্ত এসেছি। তাই এখন তোমাকে ওখানে যেতে হবে আর এই রিং এর মাধ্যমে আমি তোমাদের মধ্যের কনভারসেশন জানবো তাই যদি তোমার মুখ খুল তো..

– না না আমি কিছু বলবো না!

– কি করে বিশ্বাস করবো তোমাকে!

– এই যে এই রিং এর মাধ্যমে, আমি যা বলবো সব শুনবে তুমি!

– গুড! আর হ্যাঁ আমি 76th floor থাকবো। যেভাবেই হোক নিরবের খোঁজ করবি যাতে আমি তাকে খুঁজে পাই ওকে!

– হুম!

মেহেরিন হেসে নিরবের কলার ঠিক করে বলে..
– হবু জামাই সাহেব মুড ঠিক করেন যাতে ওরা কিছু বুঝতে না পারে, ঠিক আছে!

অতঃপর নিরব তার মুড ঠিক করার পর নিরব তার ফ্লোরে নেমে পড়ে আর মেহেরিন তার উপরের ফ্লোরে থাকে। তার কানে ব্লুটুথ যার মাধ্যমে ও সব শুনতে পারবে। এদিকে এক লোক এসে নিরব কে নিয়ে যায়। মেহেরিন তার হাতে থাকা ট্র্যাকিং ডিভাইস দিয়ে দেখছে নিরব কোথায় যাচ্ছে। নিরবকে একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরব সেখানে গিয়ে দেখে অংকন রায় সোফায় বসে আছে। নিরব কে দেখা মাত্র সে হেসে নিরব কে তার পাশে বসায়। ওয়াইনের গ্লাস টা নিরবের কাছে দেয়। নিরব অনিচ্ছাকৃত হাসি দিয়ে গ্লাস টা নেয়। অংকন হেসে বলে.

– তা খবর কি!

– হুম স্যার ভালোই! প্ল্যান মতো মেহেরিন রাজি হয়েছে বিয়ের জন্য।

– হ্যাঁ জানি সেটা তবে কথা ছিল বিয়ের পর’ই মেহেরিন কে এখানে আনা কিন্তু তুমি তো দেখছি বিয়ের আগেই এখানে নিয়ে এসেছো!

নিরব থমতম খেয়ে যায়। কিছু বলতে যাবে তখন ‌মিঃ রায় এসে বলে উঠে..
– যাই হোক বিয়ের পর আনুক বা আগে আমাদের কাজটা হলেই হয়!

নিরব তাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তখন মিঃ রায় তাকে ইশারায় বসতে বলে। নিরব বসে পড়ে। মিঃ রায় হেসে বলে..

– তবে যাই হোক তুমি কিন্তু কাজটা ভালো করেছো!

– জ্বি স্যার!

অংকন হেসে বলল..
– আমরা প্ল্যান চেঞ্জ করেছি!

নিরব বলে উঠে..
– প্ল্যান চেঞ্জ!

মেহেরিন বলে উঠে..
– প্ল্যান চেঞ্জ!

মিঃ রায় বলে উঠে…
– হ্যাঁ প্ল্যান চেঞ্জ!

– কিন্তু নতুন প্ল্যান কি!

অংকন বলে উঠে..
– এটাই যে মেহেরিন না নিরব কে মরতে হবে!

নিরব চমকে উঠে! বলে..
– আমাকে!

মিঃ রায় আর অংকন দুজনেই হেসে উঠে বলে..
– তুমি তো নকল নিরব! তুমি না আসল নিরব মরবে!

– মানে মরার কথা তো মেহেরিন’র !

– হ্যাঁ কিন্তু তুমি এটা তো জানো ওদের জন্য আমার বিজনেস এ অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। কোটি কোটি টাকা লস হয়েছে আমার। আমিও চাই খান দের এই অবস্থা হোক। মেহেরিন মরে গেলে তো আর বিজনেস এ কিছু হবে না কিন্তু যদি সবাই জানে মেহেরিন বর্ষা খান তার হবু বর নিরব কে খুন করেছে তখন তাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে। তার কোম্পানি ঢুবে যাবে। খান রা মাটিতে মিশে যাবে। ওদের এতোদিনের সব মান সম্মান ডুবেবে এটাই হবে আমার প্রতিশোধ।

নিরব সব শুনল কিন্তু কিছু বললো না। অংকন বলে উঠলো..

– এখন এটা শোন বিয়ের দিন তোমায় কি করতে হবে…

এদিকে মেহেরিন সব শুনতে থাকলো। সব শোনার পর মেহেরিন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে..

– বিয়ের দিন খুব বড় ধামাকা হতে চলেছে!

অতঃপর নিরব সেখান থেকে বেরিয়ে পরে। মেহেরিন ও তার পিছু পিছু বের হয়। নিরব একটা টেক্সি তে উঠে, টেক্সি তে উঠার পর নিরব দেখে ড্রাইভার হলো ইহান। তাকে দেখার পর নিরব খুব ঘাড়বে যায়। ইহান বলে উঠে..

– তোমাকে এরপর কি করতে হবে এটা আমি বলবো বুঝলে!

নিরব বাধ্য ছেলের মতোই মাথা নাড়ল।
.
মেহেরিন মাত্র হোটেলে ঢুকল, ঢুকতেই দেখে নির্ঝর আর কথা বের হচ্ছে। কথা বেশ ভালো ভাবেই নির্ঝর’র হাত ধরে রেখেছে। কিন্তু ব্যাপার হলো নির্ঝর একবারও মেহেরিন’র দিকে তাকাল না। সে নিজের মতো করেই হেটে চলে গেল। তবে এখানে কথা মেহেরিন দেখে হেসে দিলো। মেহেরিন’র কিছুটা অপমানিত বোধ হলো কারন নির্ঝর ওকে ইগনোর করেছে!

রাতে মেহেরিন হোটেলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিল। কিছুক্ষণ বাদে ঘরে এসে ল্যাপটব অন করল। এখানে হোটেলের রিসেপশনে লাগানো সিসি টিভি ফুটেজ আছে। মেহেরিন দেখছে কোনো গন্ডগোল হচ্ছে নাকি কারন প্ল্যান আবারো কোনসময় চেঞ্জ হতে পারে।
হঠাৎ তার নজরে পরল নির্ঝর আর কথা হোটেলে ফিরছে। তখন প্রায় অনেকটা রাত হয়েছে। ওরা এখন আসল। মেহেরিন একটা মুখ ভেংচি দিয়ে ল্যাপটব বন্ধ করে দিলো।

এদিকে আরিশা সবে মাত্র নিহা আর আনহা’র সাথে গল্প করে রুমের লক খুলতে যাবে হঠাৎ করেই কেউ তার কোমর জরিয়ে ধরে। আরিশা’র কোনো সন্দেহ নেই এটা যে রোদ্দুর! রোদ্দুর আরিশার ঘাড়ে থিতুনি রেখে বলে…

– জানো কতোক্ষণ ওয়েট করেছি আমি!

আরিশা’র রুমের লক খুলে বলে..
– না জানার ইচ্ছে নেই!

– বর কে এভাবে অপেক্ষা করানো ঠিক না বুঝলে!

– আহারে বর মশাই আপনি কবে আমার বর হলেন শুনি!

রোদ্দুর রুমের দরজা খুলে আরিশা’র বাহু ধরে ঘরে নিয়ে গেল। অতঃপর দ্রুত দরজা বন্ধ করে দরজায় আরিশা কে চেপে ধরে বলল…
– ওয়েট করো আদুরীর নকল বিয়েটা শেষ হোক এরপর’ই তোমার ব্যবস্থা করছি!

আরিশা রোদ্দুর কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে বলে..
– আবার রুম থেকে বের হন!

রোদ্দুর হেসে বিছানায় শুয়ে থাকে। আরিশা এসে রোদ্দুর’র সামনে দু হাত কোমরে রেখে বলে..
– বের হতে বলেছি আর আপনি তো দেখছি এখানে শুয়ে পড়লেন!

রোদ্দুর উঠে বসে বলে..
– ওপস ভুলে গেছি!

বলেই আরিশা কে টেনে তার উপর শুইয়ে দিয়ে বলে…
– এখন ঠিক আছে!

আরিশা কতোক্ষণ ছটফট করতে থাকে। কিন্তু রোদ্দুর তাকে কোনোমতে ছাড়ে না। হঠাৎ রোদ্দুর আরিশা’র গালে কিস করে। আরিশা চুপ হয়ে গেলে রোদ্দুর নিজের গাল পাতে। আরিশা গালের কাছে গিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। রোদ্দুর “আম্মুউউ” বলে চিৎকার করে আরিশা কে ছেড়ে দেয়।‌ আরিশা হাসতে থাকে, রোদ্দুর বলে উঠে..

– আমাকে কামড় দেওয়া দেখাচ্ছি!

আরিশা কথা শুনেই দৌড় দেয়। রোদ্দুর ও তার পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে। পুরো ঘর জুড়ে দুজনেই ঘুরতে থাকে। একপর্যায়ে রোদ্দুর পেছন থেকে আরিশা’র কোমড় ধরে জরিয়ে নেয়। আরিশা অনেক ছোটাছুটি করতে থাকে। রোদ্দুর তখন আরো শক্ত করে তাকে জরিয়ে ধরে। আরিশা বলে উঠে..

– আমি কিন্তু চিৎকার করবো!

– আই ডোন্ট মাইন্ড!

– ছেড়ে দিন না!

– ধরলাম’ই না আর ছাড়ার কথা বলছো!
অতঃপর রোদ্দুর আরিশা কে নিজের দিকে ঘুরালো। দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছে। আরিশা তাকিয়ে আছে রোদ্দুর’র দিকে। রোদ্দুর আরিশা’র গাল ধরে তার কপালে চুমু গেল। অতঃপর তাকে কোলে তুলে নিল। আরিশা চোখ বড় বড় রোদ্দুর কে দেখছে। রোদ্দুর হেসে বলে..
– তুমি তো দেখছি আমাকে নজর দিয়ে দিবা!

– বাজে কথা রাখুন! কোলে তুললেন কেন?

রোদ্দুর’র কিছু না বলে বাঁকা হাসি দিল। কি করবে রোদ্দুর! কিন্তু রোদ্দুর তার ভাবনা ভুল করে তাকে নিয়ে বেলকনিতে গেল। অতঃপর সেখানে দোলনায় বসে আরিশা কে তার কোলে বসাল। আরিশা’র এবার নিজের’ই কেমন লজ্জা হতে লাগলো। এতোটা ভুল ভেবে নিলো সে রোদ্দুর কে। রোদ্দুর’র আরিশা’কে জরিয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দিয়ে বলল..

– বিশাল আকাশের যেমন ওই একটা চাঁদ তেমনিই আমার আকাশে শুধু আরিশা নামের একটা চাঁদ!

আরিশা হেসে বলল..
– তাহলে তারা গুলো কে?

রোদ্দুর আমতা আমতা করতে লাগলো। আরিশা বলে উঠে..
– ওহ আচ্ছা তার মানে..

– এই না না এমন কিছু না!

– তাহলে!

– ওরা কেউ না। ওদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

– তাই বুঝি!

– জানু বিশ্বাস করো!

আরিশা হেসে রোদ্দুর’র গাল টেনে বলল..
– জানু আমি জানি তুমি প্লে বয়!

রোদ্দুর অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল। আরিশা বলে উঠে..
– এবার এসব ছেড়ে দাও ঠিক আছে।

– রোদ্দুর কখনো কোন মেয়ের কাছে যায় নি শুধু তোমাকে ছাড়া!

– তার মানে মেয়েরা এসেছে!

– তুমি এমন ভাবে বলছো কেন?

– সত্যি বলছি তাই।

– সত্যি বলছি এমন কেউ নেই, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ছুঁই নি।

আরিশা কেমন করে তাকাল রোদ্দুর’র দিকে। রোদ্দুর বলে উঠে…
– আরু সত্যি বলছি!

আরিশা হেসে বলল..
– আরে মজা করছিলাম সিরিয়াস হচ্ছো না।

রোদ্দুর মুখ ভেংচি কেটে আরিশা কে জরিয়ে ধরে বলল..
– আমার জান টা নিয়ে নিয়েছিল আরেকটু হলে।

– এটা আমার তাই আমিই নিবো।

– হ্যাঁ আমার জান শুধু আদুরী আর তুমিই নিবে। আদুরী আর আরু এই দুইজন আর কেউ না ওকে।

– হুম হুম!

অতঃপর দু’জনেই সেখানে বসে আকাশ দেখতে থাকল!
.
আজ সবাই বের হবে বিয়ের শপিং করতে। নির্ঝর আর কথা একসাথে গেল আর একসাথেই ছিল। নির্ঝর কথা’র সমস্ত ড্রেস নিজেই পছন্দ করলো। মেহেরিন এসব দেখে কোনো প্রভাব পরল না। কারন ওর সব ড্রেস ওর দু ভাই আর দু বোন পছন্দ করছে। সে, কাব্য, নিরব আর ‌ইহান মিলে মলে ঘুরতে লাগল। সবাই যে যার মতো ঘুরছে। মেহেরিন’র হাতে আইসক্রিম। খাচ্ছে আর ঘুরতে। খানিকক্ষণ পর মনে হলো ওকে কেউ ফলো করছে। মেহেরিন’র মনে হলো এটা অংকন এর লোক। তাই সে নিরবের হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। এদিকে নিরবের প্রাণ যেন যায় যায়। এদিকে একজন তো ওদিকে। কে যে ওর প্রাণ নিবে বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে নির্ঝর মেহেরিন কে দেখতে না পেয়ে দোকান থেকে বের হয়ে বাইরে খুঁজতে লাগল। দেখল মেহেরিন নিরবের হাতে মাথা রেখে ঘুড়ে বেরাচ্ছে। এটা দেখার পর’ই তার মাথা গরম হয়ে গেল। সে দ্রুত তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেহেরিন নির্ঝর কে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল হঠাৎ নির্ঝর বলে উঠে..

– নিরব দা তোমাকে আমার সাথে আসতে বলেছে!
বলেই নিরব কে টেনে নিয়ে গেল। মেহেরিন বিরক্ত হল কিন্তু কথা বললো না। এদিকে কথা এলো মেহেরিন’র কাছে। তার কাছে এসে তাকে নিয়ে শপিং করতে লাগল। মেহেরিন’র সাথে কথার ভাব হয়ে গেল। মেহেরিন খুব মিশুকে তাই সবার সাথে মিশতে সময় লাগে না। এদিকে নির্ঝর নিরব কে শাসালো যেন মেহেরিন’র কাছাকাছি না দেখে ওকে। নিরব বেচারা মাঝখান দিয়ে ফেসে গেল!

টানা ৩ দিন চললো এই বিয়ের শপিং! অতঃপর কাল থেকে শুরু হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। মেহেদী, সঙ্গীত থেকে শুরু করে বিয়ে সব অনুষ্ঠান হবে।
আজ মেহেদী এই উপলক্ষে হোটেলের ছাদ খুব জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে। সবাই রেডি হয়ে চলে এলো ছাদে শুধু মেহেরিন’ই এসেছে যে একটা কালো জ্যাকেট আর জিন্স পড়া। তাকে অনেক কষ্ট করে পাঠানো হলো তৈরি হবার জন্য। অতঃপর সে শুধু লেহেঙ্গা পড়েই চলে এলো। কোনো সাজ নেই তার মুখে! চুল গুলো কোনমতে আঁচড়ে চলে এসেছে তবে তাকেই যেন সবচেয়ে সুন্দর লাগছে এখানে!

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সবাই সবার হাতে মেহেদি পড়ছে শুধু মেহেরিন বাদে। সে মেহেদী পড়বে না মানে পড়বেই না। কেউ তাকে জোড় করেনি অবশ্য। মেহেরিন বসেছে কথা কে মেহেদী পড়াতে কারন তার মতে ওর বিয়ে তো আর হবে কিন্তু তাই বলে তো নির্ঝর আর কথা’র বিয়েটা সে নষ্ট করতে পারে না। মেহেরিন বেশ সুন্দর করেই মেহেদী পড়ালো আর অনেক সুন্দর নির্ঝর’র নাম লেখে দিলো তার হাতে। কথা তো এসব দেখে অনেক খুশি। মেহেরিন ও বেশ খুশি। শুধু একজনই খুশি হয় নি সে হলো নির্ঝর। তার এসব দেখেই মাথা গরম হয়ে গেল। মেহু পাখি কি না শেষে তার নাম কথা’র হাতে লেখল।

মেহেরিন মেহেদী দেওয়া শেষ করে হাঁটতে লাগল। হঠাৎ তার চোখ পড়ল নিশি হাতে মেহেদী পড়াচ্ছে ঠিক কিন্তু তার চোখ একটা ছেলের দিকে। দুজনেই চোখে চোখে বেশ আলাপ করছে। কিছু না কিছু তো ঘাপলা আছে এখানে। তখন কাব্য এসে ওর ঘাড়ে হাত রেখে বলল..

– ওরা তো জিজু!

– জিজু!

ইহান বলে উঠে…
– হুম নিশান! যাকে নিশি ভালোবাসে!

– কবে হলো এসব আর আমি জানি না!

– এসব কথা আর যাই হোক কেউ তোকে বলবে না।
পেছন থেকে রোদ্দুর বলে উঠে!

– কিন্তু এই হবু জিজু এখানে কি করছে!

আরিশা বলে উঠে..
– ভালোবাসার টানে বাংলাদেশ ছেড়ে এসে গেছে আর কি!

– মজা দেখাচ্ছি! আমার থেকে লুকানো নাহ!
বলেই মেহেরিন গেলো নির্ঝরের সামনে। নির্ঝর তাকে দেখে কিছুটা থমতম খেয়ে গেল। মেহেরিন তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে..
– কে আপনি!

– আমি নিশান!

– ওহ্ আচ্ছা তাহলে এখানে কি করছেন? কার গেস্ট আপনি!

নিশান বেশ ঘাবড়ে গেছে। তার সামনে আদুরী দাঁড়ানো এভাবে তাকে ছেড়ে দিবে এটা হতেই পারে না। নিশান কি বলবে বুঝতে পারছে না। এদিকে নিশি ও বেশ ভয় পেয়ে গেছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে ৫ বিচ্ছুর দল হাসছে। এর মানে বুঝতে বাকি নেই যে মেহেরিন সবকিছু জেনে গেছে। এখন নিশানের কি হবে।

এদিকে নিশান কিছুই বলতে পারছে না দেখে মেহেরিন’র খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সেটা সে বুঝতে না দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করতে যাবে তখন কোথা থেকে নির্ঝর এসে বলল..
– ও আমার ফ্রেন্ড আর আমার গেস্ট!

মেহেরিন’র মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। সে কিছু না বলেই চলে এলো সেখান থেকে। তখন নিশান বলে উঠে..
– রাগ করলো নাকি!

– হ্যাঁ তবে তোমার না আমার সাথে।

– বাবা কি ডেঞ্জারেস! যাই হোক থ্যাংকস ভাই তুমি না থাকলে যে কি হতো!

– তুমি কি ভাবলে ও কিছু না জেনে এখানে এসেছে। সব কিছু জানে ও। তাই এসেছে এখানে!

– কি বলছো!

– হুম। আচ্ছা আমি বরং যাই রাগ ভাঙাই গিয়ে। মারাত্মক রেগে আছে।

– হুম যাও!

অতঃপর নির্ঝর গেলো মেহেরিন’র পিছু পিছু! মেহেরিন কে একা দেখে নির্ঝর তার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরাল। মেহেরিন বলে উঠে..

– কি হয়েছে?

– তোমার হাতের মেহেদি দেখতে এলাম। দেখি দেখি।

– আমি হাতে মেহেদি দেয় নি।

– কেন?
বলেই মেহেরিন’র হাত ধরল।

– আমার ইচ্ছা আপনাকে কেন বলবো।

– না তোমার সাথে একটা ইম্পর্ট্যান্টে কথা ছিল।

– কি আর কার ব্যাপারে।

– কথার ব্যাপারে এখানে এসো বসো।
অতঃপর দুজনেই বসল। মেহেরিন’র হাত নির্ঝর এখনো ধরে রেখেছে। তবে মেহেরিন’র সেখানে খেয়াল নেই। সে ভাবছে নির্ঝর কি বলে। নির্ঝর বলতে লাগল..
– আচ্ছা মেহেরিন কথা কেমন বলো তো?

– কেমন?

– মানে ভালো তো! তোমার কি মনে হয় আমার জন্য ঠিক ও।

– কিইই? এটা বলুন আপনি ওর জন্য ঠিক কি না।

– আচ্ছা যাই হোক ( নিজের ফোন বের করে মেহেরিন’র হাতে দিয়ে বলল ) দেখো!

– কি দেখবো!

– এই যে দেখো কিছু গয়না। বাসর রাতে কথা কে দেবো তবে কোনটা দেবো চুজ করতে পারছি না। করে দাও!

মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে ফোন টা নিয়ে দেখতে লাগল। প্রায় অনেকক্ষণ পর মেহেরিন’র একটা নেকলেস পছন্দ হলো। সে নির্ঝর কে দেখিয়ে বলল..

– এই নিন এটা! আমার কাজ শেষ!

নির্ঝর বলে উঠে..
– হুম আমার কাজ ও শেষ!
বলেই নির্ঝর উঠে গেল তবে মেহেরিন কিছু বুঝতে পারল না। খানিকবাদে নিজের হাতে নজর গেলো। তার হাতে মেহেদি দিয়ে নির্ঝরের নাম লেখা।‌ সে বড় বড় চোখ করে তাকাল। নির্ঝর পিছনে ঘুরে তাকে একটা চোখ টিপ দিল। মেহেরিন রেগে হাত মুঠ করে নিলো। তাড়াতাড়ি গিয়ে হাত ধুল কিন্তু মেহেদি যাচ্ছে না। নির্ঝরের লেখা নাম যাচ্ছে না এতো সহজে। মেহেরিন বেশ রেগে গেলো। কিন্তু তবুও নির্ঝরের সাথে কোন কথা বলল না। এরকম অনুষ্ঠানের মাঝে কেটে গেল দুইদিন। এর মধ্যে নিশি এসে তাকে অনেক মানিয়ে টানিয়ে রাগ ভাঙালো। নিশানের সাথেও সবার দেখা করালো। সবাই নিশান কে বেশ পছন্দ করে।

#চলবে….

[ আরেকটা পর্ব দেবার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২০ ( #বিয়ের_ধামাকা )

বিয়ের বাকি আর দুদিন কিন্তু এর মাঝেই নির্ঝর উধাও। কেউ খুঁজে পাচ্ছে না তাকে। ব্যাপার টা ঠিক কি হলো কেউ বুঝতে পারছে না কিন্তু এখানে মেহেরিন’র কোন ভাবনা নেই। সে তার মতোই বেশ আছে। নির্ঝর থাকল না গেলো এটা নিয়ে সে মাথা ঘামাচ্ছে না। নির্ঝর’র ফোন ও অফ। কথা বলল একবার পুলিশ রিপোর্ট করতে কিন্তু মেহেরিন বলে উঠে “২৪ ঘন্টার আগে কিছু না করা ভালো”।
সবাই এটাই শুনে বসে থাকে তবে অভ্র গার্ডদের দিয়ে খোঁজ লাগাচ্ছে তার ব্যাপারে।

আজ গায়ে হলুদ! সকাল থেকেই এই তোড়জোড় চলছে সবার। তবে সবার মাঝেই চিন্তা হলো নির্ঝর এখনো আসে নি। কথা বলে উঠে…

– ও এখনো আসে কিছু একটা করো তোমরা!

নিহা বলে উঠে..
– খোঁজ করছে কথা চিন্তা করো না। দেখবে ওকে পাওয়া যাবে।

– কাকে পাওয়া যাবে!
সবাই পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা সেই বলেছে। কথা নির্ঝর কে দেখা মাত্রই তাকে গিয়ে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো। নির্ঝর কথাকে সামলাতে লাগল। সবাই বকাবকি করতে লাগলো। নির্ঝর বলল..

– একটা কাজ ছিলো তাই!

– তোর ফোনের কি হয়েছে তাহলে!

– চুরি হয়ে গেছে। নতুন ফোন কেনার ঠ
টাইম পায়নি।

সবাই একের পর এক কথা এক কথা বলছে কিন্তু শুধু মেহেরিন যে কি না কিছুই বলছে না। সে শুধু দাঁড়িয়ে নির্ঝর কে দেখছে। কথা খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে নির্ঝর কে। নির্ঝর কথার মাথায় হাত রেখে বুলিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে কোথাও যেন তার মনে কেমন একটা অনুভুতি হলো। তবে সেটা কি মেহেরিন এটা বুঝতে পারলো না। অভ্র দূর থেকে ঠিক’ই বুঝতে পারল মেহেরিন’র মনে কি চলছে। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। মেহেরিন বেরিয়ে গেলো!

রাতে গায়ে হলুদে..
খুব ধুমধাম করেই গায়ের হলুদ চলছে তবে মেহেরিন সেখানে নেই। সে কালকের প্ল্যানিয়ের জন্য ‌ডেভিল’র সাথে কথা বলছে আর এখানে তার জায়গায় আরেকজন কে ঘোমটা পরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু নির্ঝর আর কথার গায়ে হলুদ হলো কারন নির্ঝর এখান থেকে উঠে গেলেই মেহেরিন অন্য কিছু ভাববে আর এটা হতে দেওয়া যাবে না। অবশেষে গান বাজনা দিয়ে শেষ হলো গায়ে হলুদ!

রাতে মেহেরিন হোটেলের ছাদের দিকে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই তার চোখে পরল নির্ঝরের রুমের দরজা খোলা। হাসির আওয়াজ আসছে সেই রুম থেকে। মেহেরিন সেখানে দাঁড়িয়ে দেখল নির্ঝর আর কথা হাসাহাসি করছে। হাসাহাসি’র এক পর্যায়ে তারা দুজনেই মারামারি করতে লাগলো। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে দেখছে দুজনেই ফাজলামি করছে। একসময় ‌নির্ঝর কথার দু হাত পিছনে ঘুরিয়ে তার কাছে এনে তার সাথে কথা বলছে। কথা হাত ছুটিয়ে ফেলল নির্ঝর আবার তার পিছনে ঘুরতে থাকে। নির্ঝর আবারো তাকে ধরতে গেলে মারামারি লেগে যায়। তখন দুজনেই একসাথে বিছানায় পড়ে যায়। অতঃপর জোরে হাসির শব্দ আসে। নির্ঝরের বুকের উপর শুয়ে কথা হাসছে। মেহেরিন আর দাঁড়িয়ে থাকে না চলে আসে সেখান থেকে। ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশের মাঝে যেন সে নির্ঝর আর কথা কে দেখতে পাচ্ছে। নির্ঝরের এতো কাছাকাছি কথা কে দেখতে পাওয়া তাকে যেন কেমন অস্থির করে তুলছে। তবে কারনটা সে বুঝতে পারছে না। বার বার তার কানে নির্ঝরের ডাকা মেহু পাখি কথাটা যেন বাজছে!

হঠাৎ কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে মেহেরিন তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। তাকিয়ে দেখে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন এসে অভ্র কে একপাশ দিয়ে জরিয়ে ধরল। অভ্র মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে বলে..
– আমার আদুরীর কি হয়েছে? মন খারাপ!

– না!

– তাহলে এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো যে!

– কালকের কথা ভাবছি!

– দা কে মিথ্যে বলছো!

মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে। অভ্র হেসে বলে..
– নির্ঝর আর কথার কথা ভাবছো!

– ওই লেজ কাটা ব্যাঙ কে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না তবুও কিভাবে যে মাথায় চলে আসে। আমার মাথাটার অপারেশন করাতে হবে বুঝলে।

– তোমার মন কে ঠিক করতে হবে আদুরী!

মেহেরিন তাকায় অভ্র’র দিকে। অভ্র হেসে বলে..
– সহ্য হয় না ওদের একসাথে!

– ( মেহেরিন মাথা নাড়ায়! )

– কারন কি?

– জানি না তবে কেমন জানি লাগে! তুমি বলো না দা এটা কেন হয়!

অভ্র কিঞ্চিত হেসে বলে..
– যখন সময় হবে তখন বুঝবে। সময় তো আর চলে যাচ্ছে না। কাউকে নিয়ে ভাবছো তাহলে নিশ্চিত কিছু আছে। নিজেই খুঁজে বের করো!

মেহেরিন কিছু না বলে অভ্র কে জরিয়ে ধরে আর মনে মনে বলে..
– দা কেন বলছে সময় আছে উনার তো কাল’ই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা বিয়ে হচ্ছে তো কি? আমার ভাবনার সাথে বিয়ের সম্পর্ক কি? আমি কি ভাবছি এসব। না না মাথা থেকে এসব ঝাড়তে হবে কালকের কথা নিয়ে ভাবতে হবে!

খানিকক্ষণ পর..
নির্ঝর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। অভ্র’র মুখে শুনলো মেহেরিন তাকে আর কথা কে দেখে জেলাস ফিল করেছে। কথাটা শোনা মাত্রই সে বুকে হাত দিয়ে পড়ে যেতে নেয়। কাব্য আর ইহান এসে ধরে তাকে। সবাই হাসতে থাকে। নির্ঝর মনে হচ্ছে এখনো স্বপ্নের মধ্যে আছে। সে দৌড়ে গিয়ে আহিয়ান আর নীল কে গিয়ে জরিয়ে ধরে। অতঃপর নিহা’র দু গাল টেনে বলে..
– থ্যাংকস দি তোমার আইডিয়া কাজে লেগেছে।

অতঃপর এসে কথা কে নিয়ে ঘুরতে থাকে। কথা দেখছে তাকে। নির্ঝরের মুখের হাসি তাকে পাগল করছে। এদিকে সবাই খুব খুশি। অবশেষে তার প্রেমের প্রথম ধাপ আগালো মাত্র!

নির্ঝর কথার হাত ধরে বলে..
– থ্যাংকস ইয়ার তুই না থাকলে কিছুই হতো না। আজ যা হলো সব কিছুই তোর জন্য। থ্যাংকু সো মাচ।

– তোর কাজ হয়েছে এতেই আমি অনেক খুশি!

নিহা বলে উঠে..
– কথা’র ফ্লাইট তো কালকেই!

– হ্যাঁ দি কাল’ই চলে যাচ্ছি!

– সরি ইয়ার আমাকে বলতে হবে তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস না তাই পালিয়ে গেছিস।

– যাই হোক! সব ঠিকঠাক হলে তো সত্যি টা জেনেই যাবে। তখন সব ঠিক হবে!
নির্ঝর কথা’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে!

.
বিয়ের দিন..
সকাল থেকে বিয়ের তোরজোর! কথা কে সাজাতে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে সেটা শুধু আদুরী কে দেখানোর জন্য। সাজানোর কথা বলেই ওকে এপারপোর্ট এ পাঠানো হবে। নির্ঝর এসে কথাকে বিদায় জানায় এর সাথে বাকি সবাই! কথা নির্ঝর কে জরিয়ে ধরে অল দা বেস্ট বলে!

এদিকে মেহেরিন’র কোনো খোঁজ খবর নেই। নিরব আর নির্ঝর ঠিক সময়ে স্টেজে এসে পড়েছে তবে কথা এখনো আসে নি। বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে তখন মেহেরিন কে নিয়ে আসা হলো। একটা গাঢ় লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়া সে। আজও কোনো সাজ নেই তার মুখে। নির্ঝর দু চোখ ভরে দেখছে তার মেহু পাখি কে। মেহেরিন কে স্টেজে বসানো হলো। মেহেরিন দূর থেকে নির্ঝর কে ইশারা করে কথার কথা জিজ্ঞেস করে। নির্ঝর ইশারায় বলে সে এখনো সাজছে। মেহেরিন কিছু না বলে বসে বসে চকলেট খেতে থাকে। বিয়ের কনে বিয়ের দিন চকলেট খাচ্ছে সবাই এটা দেখে অবাক। সকল মেহমানরা আসছে একে একে! ভিড় বাড়ছে। নিরব সুযোগ বুঝে উঠে গেল তখন মেহেরিন’র কানে থাকা ব্লুটুথ বেজে উঠলো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নিরব নেই। সে কানের ব্লুটুথ টা অন করে স্টেজ থেকে দূরে সরে আসে। তখন শুনতে পায় নিরব কারো সাথে কথা বলছে। গতকাল’ই সে নিরবের ফোন টা ট্র্যাক করেছে যাতে নিরবের বলা সমস্ত কথা সে শুনতে পায়। মেহেরিন শুনতে পেলো অংকন নিরব কে বলছে…

– নিরব কে তারা মারতে পারে নি। ডেভিল এসে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছে কিন্তু এভাবে তারা হেরে যেতে পারে না। আজ যে করেই হোক অংকন মেহেরিন কে শেষ করবে।

মেহেরিন এই কথা শুনে হেসে দেয়। তখনই তার ফোনে ডেভিলের মেসেজ আসে, তারা নিরবকে তারা সেভলি নিয়ে আসতে পেরেছে। তাদের প্ল্যান এটাই ছিল যে এখানে নকল নিরব কে বিয়েতে বসিয়ে আসল নিরব কে মেরে ফেলবে। অতঃপর নকল নিরব কে সরে যেতে বলে মেহেরিন কে কল করে আসল নিরবের কাছে আনা হবে আর সেখানে পুলিশ ও পাঠানো হবে। পুলিশ এভাবে মেহেরিন কে ‌নিরবের খুনি ভেবে নিয়ে যাবে। কিন্তু মেহেরিন এখানে তার নিজের #Game খেললো। সে ডেভিল কে সেখানে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে এখানে কনে সাজে থাকল যার কারনে কেউ এমনটা ভাবতেও পারে নি। আর যেহেতু মেহেরিন নকল নিরবের কথা জানে এটা তারা জানে না তাই এসব ভাবার প্রশ্ন ও আসে না।

কিন্তু এখানে হঠাৎ মেহেরিন খুশিতে আবার তাদের কথা শুনতে থাকে। নকল নিরব জিজ্ঞেস করছে..

– তাহলে এখন আমি কি করবো..

– তোমাকে কিছু করতে হবে না এখন। মেহেরিন হয়তো নিরব কে বাঁচাতে পেরেছে। তবে….

– তবে..

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। কি বলবে এবার ও। তখন আওয়াজ আসলো..

– তবে আজ মেহেরিন কে মরতে হবে আর এটা অংকনের হাতেই। মেহেরিন দুই জান পাখি আসছে আমার কাছে। একজন তার ফুফুজান আর আম্মু জান!

এটা শোনার পর’ই মেহেরিন চমকে উঠলো। আশপাশ তাকিয়ে কোথাও শান্ত আর অরনি কে দেখতে পেলো না সে। এদিকে নিরব বলে উঠে..
– কি বলছো!

– হুম তাদের এতোক্ষণে গাড়িতে উঠানো হয়েছে আমার কাছেই আসছে আর তোমার আর কোন দরকার নেই আমার। বাই বাই!

বলার সাথে সাথেই নিরবের ফোন ব্লাস্ট হলো। মেহেরিন দ্রুত তার ব্লুটুথ বের করে কানে হাত দিল। ব্লাস্টের আওয়াজ খুব জোরে হওয়ায় হৈচৈ লেগে গেছে। নির্ঝর উঠে দৌড়ে নিরবের কাছে আসলো। ব্লাস্টের কারনে নিরব সেখানেই মারা গেছে। মেহমান রা বের হয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন এবার উঠে দাঁড়াল। সে দৌড়ে গেল অভ্র’র কাছে। নির্ঝর তাকে অভ্র’র কাছে দেখে নিজেও গেল। মেহেরিন অভ্র কে কিছু বললো যার কারনে অভ্র, নিহা আর নীল তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে চলে গেল। মেহেরিন বের হতে যাবে নির্ঝর তখন এসে তার হাত ধরল। মেহেরিন তাকালে নির্ঝর তাকে বলল..

– কি হয়েছে?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here