Marriage_With_Benefits part 16

#Marriage_With_Benefits
#Part_16
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আমি উনার কথা শুনে হাসবো না কান্না করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।কিন্তু এখন না আমার হাসি পাচ্ছে না কান্না।নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি এখন আর কি করার? একেই সহ্য করতে হবে।আর কিছুই করার নেই।(আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম)

আস্থা ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমাকে আজ কিছু কথা বলবো।(আভি গম্ভীর গলায়)

আমি তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম।ফ্রেশ হতে।আভি কি বলবে! হয়ত কিছু সেরিয়াস!ওকে আমি কখনই এমন গম্ভীর হতে দেখি নি। হা উনি অনেক রাগী মানুষ।
আমি এই সব ভেবেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি আভি মুখে হাত দিয়ে সোফায় বসে কিছু ভাবছে?

আভি,,?(আমি)

আস্থা এসো।এইখানে বসো।
বলেই আমাকে বেডে বসালো।তারপর উনি আমার সামনে সোফায় বসে আমার উদ্দেশ্য বলা শুরু করলো
আস্থা।তোমাকে এখন অনেক কিছু করতে হবে।(আভি)

অনেক কিছু মানে?(আমি অবাক হয়ে)

দেখো এই বাড়ি যতই বড়ো এই বাড়ির মানুষের মন ততই ছোটো।আমার মা আর বাবার লাভ ম্যারেজ হয়েছিল।কিন্তু আমার দাদু আমার মাকে মেনে নেন নি।যেমন উনি কাল তোমাকে মেনে নেন নি।উনি আমার বাবার বিয়ে উনার বন্ধুর মেয়ে ঈশানির সাথে দিতে চেয়েছিলেন।ঈশানি ওই মহিলা যে তোমাকে কাল বরণ করে ছিলো।যখন আমার বাবা বিয়ে করে নি তখন দাদু উনার সাথে আমার ছোটো চাচুর বিয়ে দেন।কিন্তু তখনও দাদু আমার মাকে পছন্দ করতো না।কারণ আমার মা অনাথ ছিলো।তার কোনো বংশ পরিচয় ছিলো না।তখন আমার বাবা মাকে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলো।সেখানে মা বাবা একসাথে কাজ করে নিজেদের সংসার চালাতে শুরু করলো।কিন্তু যখন আমার আট কি নয় বছর ছিলো তখন দাদু হঠাৎ আমাদের সুখের সংসারে আসলো।উনি আমাদের মেনে নিলো।আমরা উনাদের সাথে এই বাড়িতেই থাকতে শুরু করলাম।সব কিছু ভালোই চলছিলো কিন্তু হটাৎ মা আর বাবার মধ্যে ঝগড়া হতে শুরু করলো।মা বাবা প্রতিদিন ঝগড়া করতো।ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ফাটল ধরা শুরু করলো।আমি তখন বুঝার ক্ষমতা রাখি।আমি বুঝতে পারি আমার মা বাবার সম্পর্কে কিছু ঠিক নেই।একদিন বাবা মায়ের ঝগড়া এতো বেড়ে যায় যে বাবা মাকে ডিভোর্সি দেওয়ার কথা বলে।আর এই কথাটা আমার মনে অনেক আঘাত করে।যেইটা উনি কখনও আশা করেননি।আমার মার একটাই পরিবার ছিলো সেটা হলো আমি আর বাবা।বাবাকে খুব ভালোবাসত মা।সেদিন আমি মাকে অনেক কান্না করতে দেখি।মা চিৎকার করে ভিক্ষা চাইছিলো যাতে তাকে ডিভোর্স না দেয়া হয়।কিন্তু সেদিন আমার বাবার মন পাথর হয়ে গেছিলো।উনি আমার মাকে ডিভোর্স দিয়েই শান্তি হলো।আমাকে আমার দাদু আর বাবা নিজের কাছে রেখে দিলো।আমাকে শেষ দেখাও দেখতে দিলো না আমার মাকে।আমি সেদিন খুব কান্না করছিলাম আর সেইটাই ছিলো আমার জীবনের শেষ কান্না।তার কিছু দিন পর আমার বাবা জানতে পারলো উনি যেই কারণে আমার মাকে ডিভোর্স দিয়েছে সেটা আমার মা করেই নি।সব ছিলো আমার দাদুর কাজ।উনি আমার বাবার সামনে আমার মাকে চরিত্রহীন বানিয়েছেন।আমার বাবাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছেন আমার মা তাকে টাকার জন্য বিয়ে করছে।কিন্তু ততক্ষণ অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার মা কোথায় ছিলো আমরা কেউই জানতাম না।আমার বাবা মাকে খুঁজে বের করার সব চেষ্টা করে কিন্তু পারে নি।মার পরিচিত সবার সাথে কথা বলে কিন্তু তারাও মার সম্পর্কে কিছুই জানতো না।আমার বাবা পাগলের মত হয়ে উঠল আমি তখন বুঝতে পারলাম আমার বাবা আমার মাকে কতো ভালোবাসত।কিন্তু এখন দেরি হয়ে গেছে।বাবা মাকে হারিয়ে নেশাকে আপন করে নেয়।একদিন বাবা মাতাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো তখনই বাবার অ্যাকসিডেন্ট হয়।এখন বাবা কোমায়। ডক্টর বলছে উনার নাকি সুস্থ হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।উনার ব্রেইন থেকে সুস্থ হওয়ার কোনো রেসপন্স করছে না।উনি এখন হসপিটালে আছে।
আভি আমাকে সব গুলো কথা বলে এখন চুপ করে আছে।আমি এতো দিন যেই মি:কোবরা কে চিনতাম উনি একদম তেমন না।এখন আমি বুঝতে পারলাম কেনো উনার নাকের ডগার এতো রাগ থাকে।আমি ভাবতাম আমিই শুধু দুঃখী এখন দেখি উনি আমার থেকেও দুঃখী।আমি অন্তত যাদের কাছ থেকে কষ্ট পাইছি তারা আমার আপন না কিন্তু উনি তো আপন মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছে।তবুও উনি এখনও ঠিক আছে এইটাই তো অনেক।আমি জানি না আমার বাবা মা কে?আমি উনাদের পাই নি।কিন্তু উনি উনাদের পেয়ে হারিয়েছেন।কোনো জিনিসের না পাওয়ার কষ্ট থেকে পেয়ে হারানোর কষ্ট বেশি।আমার কেনো যেনো উনার কষ্ট দেখে বুকটা কেঁপে উঠছে।মনে হচ্ছে উনাকে জরিয়ে ধরতে।আচ্ছা উনি কি মাইন্ড করবে যদি আমি উনাকে জড়িয়ে ধরি।না থাক আস্থা নিজের অনুভূতি গুলো কাবু করে রাখ।

কিছুক্ষণ শান্ত থাকার পর উনি আবার বলতে শুরু করলো
আমি তোমাকে এই জন্য বিয়ে করেছি কারণ আমার মনে হয় তুমি আমার এই বাড়ির সবাইকে শিক্ষা দিতে পারবে।যারা আমার মাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের সব কয়টার শেষ দেখে ছাড়বে তুমি!দাদুকে বুঝিয়ে দিবে আমার মা কি ছিলো এইবাড়িতে।দাদুকে বুঝিয়ে দিবে উনি কতো ভুল ছিলেন আমার মাকে তাড়িয়ে দিয়ে।উনাকে যেনো আফসোস করতে হয়।তুমি উনাকে আফসোস করতে বাধ্য করবে।আর এইটাই আমার বেনিফিটস্।তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমার বেনিফিটস্ কি বিয়েতে?আমার বেনিফিটস্ এইটাই বিয়েতে।কি আস্থা তোমার উপর কি আস্থা রাখতে পারি?(আভি)

আমি জানি না।আমি কি করে এইসব করবো?কিন্তু আমি করবো এইটা শিউর।আমি দাদুকে বুঝিয়ে দিবো উনি আপনার মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে ভুল করছে।আর এই বাড়ির সবাইকে শিক্ষা দিবো।(আমি উনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

আমি জানি আস্থা তুমি পারবে।এই বাড়িতে কেউ তোমাকে কিছু বলতে পারবে না।কারণ আমি এই বাড়ি,এই চৌধূরী গ্রুপের উত্তরাধিকার। দাদুও তোমার কোনো ডিসিশনে কিছু বলতে পারবে না যদি না আমি কিছু বলি।তাই তুমি যা খুশি করতে পারো।ফুল পাওয়ার আছে তোমার।(আভি)

আপনাকে ঠিক করার পাওয়ার আছে?(আমি টিটকারি করে)

স্বামীর ঘাট তো স্ত্রীর কাছেই থাকে!
বলেই আভি হেসে দিলো।

আপনার এই হাসির জন্যই আমি সব করবো।আস্থা এখন কি কি করবে খালি চৌধুরীরা দেখবে!(আমি মনে মনে)

তখনই কেউ দরজায় নক করলো।
কিরে দুপুর একটা বাজতে চললো।তোরা কি এখনও বাসর করবি?ভাই থাম থাম।(নিহাল দরজার বাহিরে থেকে)

দেখো মীর জাফর এসে পড়ছে।(আভি)

আমি মুচকি হেসে দরজা খুলতে যাবো তখনই আভি আমার হাত ধরে একটানে নিজের বুকে মিশিয়ে নিলো।আমি এই ঘটনায় প্রচন্ড অবাক
গেলাম।

আরে।সোফা থেকে চাদর আর বালিশ টা বেডে রাখো আগে।তারপর দরজা খুলো।নাইলে সন্দেহ করবে ওরা।(আভি)

ওহ।হা।আমি করছি।
বলেই উনার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোফা থেকে বালিশ আর চাদর বেডে রাখলাম ঠিক করে যাতে কেউ আর সন্দেহ না করতে পারে।

দরজা খুলেই দেখি নিহালই।
কেমন আছেন নিহাল ভাইয়া?(আমি মুচকি হেসে)

আলহাদুলিল্লাহ ভাবি আপনি কেমন আছেন?এইতো ভালো।ভিতরে আসুন!(আমি)

আচ্ছা চলুন।
বলেই নিহাল ভিতরে আসলো।আমি গিয়ে বেডে বসলাম আর নিহাল গিয়ে সোফায় বসলো।তখনই আভি এসে নিহালের মাথায় একটা থাপ্পড় মারলেন।
তোর আসার সময় হলো?একে তো তুই মীর জাফর গিরি করলি। দ্বিতীয়ত তুই এত লেট।(আভি ভ্রু কুঁচকে)

আরে তোদের প্রাইভেট টাইমে বেঘাৎ ঘটাতে চাই নি।তাই লেট।(নিহাল জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

কি করে বলবো আমি কেনো লেট?(নিহাল মনে মনে)

আচ্ছা। যাই হোক।এখন কি কি জামা এনেছিস তা দেখা আমার বউয়ের জামা খারাপ হলে তোর খবর আছে।(আভি ভাব নিয়ে)

ইস।দুই দিন হলো বিয়ে হয়েছে এখনই বউ ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না।(নিহাল টিটকারি মেরে)

আমি উনাদের কথোকথনটি শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি।আমার মনে হচ্ছে আমি আভির সত্যিকারের বউ আর নিহাল ভাইয়ার ভাবী।আর এদের কথা যেই শুনবে সেই কোমায় চলে যাবে।(আমি মনে মনে)

সেকি তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো?তুমি যাও।গিয়ে ড্রেস গুলো দেখো পড়ে।তোমার দেবর এনেছে।(আভি)

যাচ্ছি যাচ্ছি।
বলেই আমি ওয়াশ রুমে চেঞ্জ করতে গেলাম।

কাপড় পরেই অবাক একদম আমি যেই কাপড় পড়া পছন্দ করি সেই কাপড়।আর সব গুলো কাপড় আমার সাইজের।কিন্তু নিহাল ভাইয়া এতো নিখুঁত ভাবে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে।না…আমার তো মনে হয় না।হতে পারে উনি এমনি এনেছে আর ভাগ্যক্রমে তা আমার একদম ঠিক হয়ে গেছে।(আমি মনে মনে এইসব ভেবে বের হলাম)

আভি সব কাপড় আমার একদম ঠিক লাগে।আর আমার পছন্দও হয়েছে।ধন্যবাদ নিহাল ভাইয়া আপনাকে।(আমি খুব খুশি হয়ে)

নিহাল সত্যিই করে বলতো।তুই কি আস্থার জন্য কাপড় কিনেছিস?(আভি ভ্রু কুঁচকে)

আরে হা বাবা।(নিহাল)

ওকে।(আভি সন্দেহর দৃষ্টিতে)

নিহাল আভির দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিচ্ছে।

তখনই কেউ একজন আমাদের খাওয়ার জন্য ডাকলো।

পরেই আমি আর আভি খেতে গেলাম।

অফো।হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।এখনই আভি আর আস্থা জেনে ফেলত এই গুলো কিনতে ডালিয়া আমাকে সাহায্য করছে।(নিহাল বিড়বিড় করে)


আজ সকালে
দূর।এই আস্থার মি:কোবরা কি কিনতে বলেছে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।আমি কি আর আস্থা পছন্দ জানি?আমি কি কোনো দিন মেয়েদের কাপড় কিনছি?এখন আমার কি হবে?আমি কি করবো? কোথায় কার কাছ থেকে সাহায্য চাইবো?(নিহাল শপিং মলে বসে বসে মাথা চুলকাচ্ছে)

ভাগ্যক্রমে সেইখানে ডালিয়া গিয়েছিলো।কিছু বই কিনার জন্য।


চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here