আসমানী ও জ্বীন পর্ব -০২

#আসমানী_ও_জ্বীন
#০২
#ইসরাত_জাহান_এশা

হুরমুর খেয়ে অধরা আসমানীর গায়ের উপর পরে যায় ভয়ে আ,,,, বলে চিৎকার করে উঠে অধরা । চাঁদনী অধরার চিৎকার শুনে দৌড়ে চলে আসে

মম মম তুমি কোথায় বলতো? কি হয়েছে তোমার?

— এই যে আমি স্টোর রুমে একটা টর্চ নিয়ে আসো তো আর তোমার করীম চাচা কে ডাকো সে যেনো তারাতারি স্টোর রুমে আসে।

চাদঁনী করীম সাহেব কে ডেকে স্টোর রুমে নিয়ে যায়।

—- কি হয়েছে মেডাম জরুরি তলব কেনো??
—- এই যে আসমানীকে এখান থেকে নিয়ে ওর রুমে শুয়ে দিয়ে আসুন।

আসমানী নামটা শুনে আঁতকে উঠল করীম সাহেব। তার মানে আসমানী এই বাড়ীতেই থাকে আর এতো বছর আমি এখানে আছি কখনো তো দেখেনি আমি ভেবেছি হয় তো ওকেও ওর মায়ের সাথে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

অধরা করীম সাহেবের দিকে ধমকের সুরে বলে উঠল
— কি হলো চাচা তুলুন ওকে তারপর ওর ঘরে শুয়ে দিয়ে আসুন।

করিম সাহেব নীরবতা ভেংগে আসমানীকে কোলে তুলে ওর রুমে শুয়ে দিয়ে আসে। আর ভাবতে শুরু করে আসমানী এখানেই আছে খবরটা আজকেই ওস্তাদ কে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু কি ভাবে এখান থেকে যাবো উপায় বের করতে হবে। বেশি দেরি করা যাবে না। আহারে মেয়েটাকে ঐ পিশাচীনি না জানি কত যন্ত্রনা দিয়ে রেখেছে। কবে যে এই অন্ধকার ছায়া এখান থেকে কেটে যাবে কে জানে।
,,,,,

চাঁদনী মা যা তো ডাক্তার ডেকে নিয়ে আয় ওকে মেরে ফেলা যাবে না ওকে বাচিঁয়ে রাখতে হবে, না হলে আমাদের প্লান সব শেষ।

—- ওকে মম। আচ্ছা মা তুমি না বললে আসমার গালে তুমি গরম খুন্তি চেপে ধরেছিলে কই কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না।
— আরে হ্যা সত্যি তো এটা হতে পারে না। ওর গালে তো ফোসকা পড়েছিল কিন্তু কই গেলো সেটা। আচ্ছা পড়ে ভাব্বো সেটা কিন্তু আগে ডাক্তার ডাক।

আসমানীকে ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে যায়। আসমার দাদু আসমার পাশে বসে থাকে সব ঔষধ পত্র সেই খাওয়ায়।

রাতে সকল ঝামেলা মিটিয়ে অধরা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো হটাৎ অধরার কানে কিছু অদ্ভুত আওয়াজ আসতে শুরু করল,,,, অধরা ভয়ে এক পা সামনে আগায় ২ পা পিছনে দিকে যায়।
— ক কে এমন অদ্ভুদ শব্দ করছ? কে তুমি সারা দাও?
— হা হা হা তুই আমাকে চিনতে পারছিস না? আমি চন্ডি তোর মা
— চন্ডি, আমার মা ?
— আয় আয়নার সামনে দেখে যা আমি কে।

অধরা আয়নার সামনে যেতেই প্রথম নিজেকে দেখলেও কতক্ষণ পর একটা অর্ধ চেহারার মহিলাকে দেখতে পেলো।
— কে কে আ আপ আপনি??
— আমি তোর মা
— আমার মা?
— হ্যা তোর মা তুই আমার সন্তান তোর শরীরে পিশাচীনির রক্ত বইছে।
— না এটা হতে পারে না কি ভাবে সম্ভব আমি মানি না আমি পিশাচ সন্তান,আমি মানব সন্তান।
— না তারা তোর মা – বাবা না। আমি তোর মা- আর তোর বাবা হলো রিন্দা সে বন্দী আছে বিরাট একটা জঙ্গলে বড় একটা বট গাছে। আমি তোর মা। তুই যাকে মা বলে জানিস তার সন্তান বদলে আমি তোকে রেখে আসি। যাতে তুই সুস্থ থাকো। না হলে যে কোনো সময় তোর উপর বিপদ আসতে পারে।
—তাহলে আমার জায়গায় যে ছিল সে কোথায়?
— ওকে শয়তানের নামে উৎসর্গ করেছি।
— বিশ্বাস করি না আমি।
— বিশ্বাস না হয় সেটা কাল রাতেই বুঝতে পারবি ভরা পূর্নিমার রাত তখন তোর শরীরে প্রচুর ব্যথা অনুভব হবে শরীর জ্বলে পুড়ে আসবে।
— কি বলছেন এসব।
— হ্যা ঠিক বলছি।
— না এই রকম হতে পারে না।
— এটাই হবে আমি কাল আবার আসব। হা হা হা হা হা হা।

বলেই চন্ডি আয়না থেকে চলে যায় অধরা বার বার খুজঁতে শুরু করে কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়না। সারারাত অধরা আয়নার দিকেই তাকিয়ে থাকে।আর নিজেকে বার বার দেখতে থাকে।

আমাকে যেভাবে হোক এখান থেকে বের হতে হবে। কিন্তু এ বাড়ির লোক কখনোই আমাকে এমনিতে ছুটি দিবে না তারচেয়ে পালানোর চেষ্টা করাই ভালো হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ করীম সাহেব কোনো কিছু না নিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে যায়।

— অবনী মা অবনী
— হ্যা বাবা তুমি এসেছো?
— হ্যা গো মা এসেছি তবে আজ এখনি আমাকে বের হতে হবে কোথায় যাচ্ছি কিছুই বলব না। তবে হ্যা মা আমাকে আটকানোর চেষ্টা করবে না আজ যদি না যাই তাহলে সামনে দুষ্টের দমন আমরা করতে পারব না। তুই তোর মাকে নিয়ে তোর নানু বাড়িতে চলে যা। আর হ্যা আমি হটাৎ করেই আসব ততদিনে তুই একটা কাজ করবি সুন্দর করে একটা নকশী কাথাঁ সেলাই করে রাখবি। আর নামাজ পড়ে বাবার জন্য দোয়া করবি। আর কখনো যদি কোনো বুড়ি তোর কাছে ভিক্ষা নিতে আসে তখন ভিক্ষা তো দিবি আর সাথে খাইয়ে দিবি। এখন আমি আসছি আর যে অবস্থায় থাকো না কেনো সব সময় শুকরিয়া আদায় করবি।
— আচ্ছা আব্বা তুমি চিন্তা করো না। তুমি শুধু দোয়া করো আমি যেনো সঠিক পথে চলতে পাড়ি।
— আচ্ছা মা আসি বিদায় দে মা।
— ফীআমানাল্লীলাহ।

করীম সাহেব দৌড়ে চলে গেলো উওরের জঙ্গলের দিকে পুরো জঙ্গল পেড়িয়ে একটি নদী। যেভাবে হোক এই নদী আমাকে পেরিয়ে যেতেই হবে কিন্তু এতো বড় নদী কোথায় নৌকা পাবো অনেকক্ষন ভাবতে ভাবতে,,,
হটাৎ একটি বৃদ্ধ লোক সামনে এসে রুক্ষ গলায় জিজ্ঞেস করল।

— কে হে আগন্তুক তুমি?
— আমি করীম আমার অনেক তারা আছে আপনি কি আমাকে নদীটি পার করে দিবেন?
— তুমি কি জানো না এই নদী সহজে কেউ পার হতে পারে না?
— হুমম জানি তবে আমাকে পার হতে হবে। যে ভাবে হোক নদীর ওপারে যেতে হবে।
— কিন্তু কিভাবে?
— তা জানিনা তবে এটুকু জানি আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।
—আমি তোমার একটি পরিক্ষা নেবো যদি তুমি উর্ত্তিন হও তাহলেই তোমাকে আমি ওপারে দিয়ে আসব। আরো যদি আমার সাহায্যের দরকার হয় তাও করব।
— আচ্ছা।
— মনে করো আমি তোমাকে নদীর মাঝখানে নিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছি বা ফেলে দিয়েছি এমতাবস্থায় তুমি ভয় পেতে পারবে না।

করীম সাহেব লক্ষ করলেন আসলেই সে নদীর মাঝখানে আছেন আর পানিতে অনেক জোরে জোরে ঢেউ শুরু হয়েছে। এমন ভাবে নৌকা নড়াচড়া করছে এই বুঝি নৌকা উল্টে যাবে। কিন্তু তার মনে কোনো ভয় কাজ করছে না তবে তার উদ্দেশ্য সে পৌছাবে। সাথে সাথে সে নৌকায় ২ রাকাত নফল নামাজের নিয়্যত করে দাড়িয়ে গেলো নামাজে সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই নৌকা উল্টে গেলো।,,,,

চলবে,,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here