মেঘ_বৃষ্টি
❤❤পর্ব=১৪
রোদ_রোদেলা
#তানিয়া_আনিতা
মেঘের কেবিনে ঢুকতেই বৃষ্টি দেখল মেঘ আর টিনা কথা বলছে।ঠিক কথা বলছে কিনা বোঝার উপায় নেই কারণ দুজান দুজনের খুব কাছে ছিল বলতে গেলে টিনা মেঘের গলা জরিয়ে আছে আর আহ্লাদী গলায় বলতে থাকে
——-কি গো মেঘ বেবি এতোদিন কোথায় ছিলে জানো তোমায় কত মিস করছিলাম।একটাবার আমায় তোমার মনে পরল না।
——-কি বলো টিনা তোমায় মনে পরবে না। আমি সব কিছু ভুলতে পারলেও তোমায় কীভাবে ভুলি।জানোই তো তুমি আমার কতো কাছের।
——-হুমম সেই তো তাই আমাকে একটা কল করার দরকার মনে করোনি আসলে তুমি আমায় একটু মিস করোনা। মুখ কালো করে বলল টিনা।
——-আাহা রাগ করছো কেন সত্যি বলতে একটু বিজি ছিলাম বেবি plz don’t angry with me
,
,
,
,
,
,
কথা টা শুনে টিনা মেঘকে জরিয়ে ধরল আর এতোক্ষণ দরজার আড়াল থেকে সবকিছু দেখছিল বৃষ্টি। দুজনের এমন নির্লজ্জতা দেখে বৃষ্টির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর এদিকে মেঘ বৃষ্টির আগমন টের পেয়ে টিনার সাথে নাটক করতে থাকে আর আড়চোখে বৃষ্টিকে দেখতে থাকে। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃষ্টিকে একটু জ্বলানো।বৃষ্টির ফেস দেখে মেঘ বুঝতে পারল তার বুদ্ধিটা কাজে দিয়েছে। তাই মনে মনে হাসতে লাগলো কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করল না।বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আর এসব দেখতে পারল না তাই চলে যেতে নিলে পেছন থেকে মেঘের ডাকে থমকে দাঁড়ায়।
——-কি হলো মিস বৃষ্টি চলে যাচ্ছেন কেনো,আপনাকে তো ডাকা হয়েছে তাহলে
বৃষ্টি পেছনে ফিরে অগ্নি চোখে মেঘের দিকে একবার তাকিয়ে টিনার দিকে তাকালো
——–তো কি করব আপনি তো এখানে নিজের ব্যক্তিগত কাজে বিজি আমি তো আর আপনাদের কাজে বিরক্ত করতে পারিনা তাই ভেবেছি কাজ শেষ হলে আপনি নিজেই আমাকে ডেকে নিবেন।
.
.
.
.
.
.
মেঘ এবার বুঝতে পারল বৃষ্টি খুব রেগে গেছে তাই সে টিনাকে চলে যেতে বলল।টিনা কিছুটা রাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল আর বৃষ্টি এখনো তার অবস্থায় আছে সে এতোটাই রেগে আছে পারলে দুজনকে মেরে আলুর দম বানাতে পারলে খুশি।মেঘের ডাকে বৃষ্টির হুস ফিরল
——-ও যে জন্য ডেকেছি আপনাকে আপনি তো এতোদিন ছুটিতে ছিলেন তাই অনেক কাজ জমে গেছে। এই ফাইলগুলো নিন কালকের মধ্যে সবগুলো কমপ্লিট করে আমাকে দেখাবেন।
।
।
।
।
বলেই বৃষ্টিকে একগাদা ফাইল ধরিয়ে দিল আর বৃষ্টি তো দেখেই চোখ কপালে তুলল কারণ এতোগুলো ফাইল তাও একদিনে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘ বলে উঠল
——–কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না কালকের মধ্যেই কাজগুলো কমপ্লিট করবেন। এখন আপনি আসতে পারেন।
,
,
,
,
বলেই মেঘ নিজের কাজে মন দিল। এদিকে বৃষ্টি বুঝতে পারল মেঘ ইচ্ছা করে তাকে এসব করতে দিয়েছে।আর তাই বৃষ্টি ও কোনো কথা বাড়ালো না কারন সে ভালো করে জানে মেঘকে বললেও মেঘ তার কথা শুনবে না পারলে আরও তাকে কথা শুনাবে যেটা বৃষ্টি চাই না।তাই নিরবে সে বেরিয়ে যেতে নিলে মেঘ বলে উঠে
——–তো মিস বৃষ্টি ছুটি কেমন কাটল।মানে যে কাজের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন সেটা কি ভালোভাবে হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি তো।
কথাটা শুনেই এবার বৃষ্টি আরও রেগে গেল কারণ মেঘ বৃষ্টিকে একথা বলার মানে হচ্ছে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়া। তাই দাঁত কটমট করে বলল
——-আমার ছুটি কেমন কেটেছে সেটা না হয় আর নাই বা জানলেন কিন্তু আপনার আগামী দিনগুলো কেমন কাটবে সেটা চিন্তা করেন। হয়তো সামনে আপনার জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে স…্য…..া…..র
বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর মেঘ হাতে থাকা কলমটা ঘুরিয়ে বলতে থাকে
——-আমিও সেই অপেক্ষায় আছি মিস বৃষ্টি। আমিও দেখতে চাই বিপরীত পক্ষের ভালোবাসা কতোটা কষ্টের হয়।দরকার পরলে সেই কষ্টে নিজেকে দগ্ধ করবো তাও তোমাকে ছারবো না। এবার দেখবে তুমি কেমন বেড়াজালে পরো একদিকে অফিস অন্য দিকে বাসা দুই জায়গায় তোমাকে আমায় সহ্য করতে হবে। না পারবে অফিস ছাড়তে আর না পারবে বাসা।
বৃষ্টি গজগজ করে নিজের ডেক্সে এসে ফাইলগুলো কে আছাড় দিলো তারপর নিজেকেই নিজে বলতে লাগলো
——–কি ভেবেছে নিজেকে আমি তার চাকর যখন যাই ইচ্ছে তাই করবে আর আমিও সেটা মেনে নিবো। কখনোই না এই বৃষ্টি দমে যাওয়ার মেয়ে নয় আজকে থেকে দেখো এই বৃষ্টি তোমায় কেমন শায়েস্তা করে।তারপর ফাইলের দিকে করুন চোখে চেয়ে রইল। হঠাৎ তার ডেক্সে তৃনার আগমন ঘটল।
——-কিরে বৃষ্টি তুই এভাবে হুটহাট করে কই চলে যাস বলতো।
——-আমি আবার কি করলাম
——-কি করলাম এতোদিন কই ছিলি তোকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু তুই ধরিস নি
তোকে কি করে বলি এতোদিন আমি কি অবস্থার মধ্যে ছিলাম।আমি যে অনেক বড় দজ্জালের পাল্লায় পরেছি সেটা তোকে বোঝানো সম্ভব না আর তোকে বলাও সম্ভব না।
——-কিরে কই হারায়লি
——-না না তেমন কিছু না আসলে এক কাজিনের বিয়ে ছিল তাই আর আসতে পারিনি আর ছুটি ও নিয়েছিলাম।
——-কি বলিস কাজিনের বিয়ে নাকি তোর মজা করে
——-মা….নে…. আমার বিয়ে কেন হতে যাবে কি বলিস আবোল তাবোল
——-আরে আরে মজা করছিলাম এতো হাইপার হচ্ছিস কেন।
——-স্যারের সাথে দেখা করছিস। একদিকে ভালো হয়েছে কেননা স্যারও এতোদিন ছিলনা কিনা কি জরুরি কাজ ছিল তাই আসেনি।শ্রাবণ এতোদিন সব দেখেছে।
——-হুমম জানি তো কি জরুরি কাজ আমার বিয়ে ভন্ডুল করায় তো ওনার জরুরি কাজ ছিল দজ্জাল, শয়তান একটা (মনে মনে)
হঠাৎ তৃনার চোখ গেল ফাইলের দিকে। ফাইল গুলো দেখে তৃনা হা হয়ে গেল
——-আরে এতোগুলা ফাইল। এগুলো কি সব তুই কমপ্লিট করবি
বৃষ্টি মন খারাপ করে
——হুমম দেখনা স্যার আমার ওপর কি টর্চার করছে এতোগুলো কেমনে কারবো তাও কালকের মধ্যে
——কি-ই ইইইইইইই
——-দূর এভাবে চিৎকার করিস না এমনি এতো কাজ। তুই এখন যা আর আমাকে কাজ করতে দে।
তৃনা আর কিছু না বলে চলে গেল আর বৃষ্টি ফাইলের দিকে তাকিয়ে একটা ফাইল হাতে নিলো আর দেখতে লাগলো।এদিকে রোদেলা ক্লাস শেষ করে বান্ধবীদের সাথে কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিল হঠাৎ রাস্তার ওপরপাশে কেউ একজনকে দেখে তার চোখ আটকে গেল।সে দ্রুত পায়ে রাস্তার ওপর পাশে দৌড় দিল আর পেছন থেকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো
——-এই যে শুনছেন, এই যে মি. শুনতে পারছেন
কারো চিৎকার পেয়ে লোকটি পেছনে ফিরে তাকালো দেখতে পেল একটা মেয়ে তাকে ডাকছে।ভালো করে তাকাতেই লোকটি মেয়েটাকে চিনতে পারল।
——-আরে আপনি কেমন আছেন
——-ভালো আপনি সেই কখন থেকে আপনাকে ডাকছি কিন্তু আপনি তো ফিরে তাকাচ্ছেন না চিৎকার করতে করতে আমার গলা শেষ
——-তো এভাবে চিৎকার করলে কেমনে বুঝবো আপনি কাকে ডাকছেন আর আমার তো একটা নাম আছে তাই না
——হুমম কিন্তু আমি না ভুলে গেছি তাই
——-হাহা এতো তাড়াতাড়ি ওকে আমার নাম রোদ চৌধুরী। তো এখানে কি করছেন
——আসলে আমাদের কলেজ এখানে ওই যে রাস্তার ওপাশে। বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খাচ্ছিলাম আপনাকে দেখে চলে আসলাম। কোথাও কি যাচ্ছেন
——- হুমম আসলে একটু কাজ ছিল। বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম।
——-ও যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার সাথে এক কাপ কফি
——ও সরি আজকে না অন্য একদিন কিছু মনে করবেন না আসলে খুব জরুরি
——-ও সমস্যা নাই আপনার নাম্বারটা পেতে পারি
——ওকে নিন।
নাম্বার দেওয়ার পর রোদ চলে গেল আর রোদেলা সেদিকে চেয়ে রইল তারপর আবার বন্ধুদের কাছে চলে গেল।
,,
,
,
,
,
চলবে……..