অচিনপুর পর্ব -০২

#অচিনপুর – ২

বড়ো আপা ব্যস্ত ব্যস্ত এসে আমাকে ধরল,
— স্বর্ণ, তাড়াতাড়ি আমার সাদা জামার ওড়নাটা খুঁজে দে তো।
— সাদা জামাটাই পরবা আজ?
— কেন? পরা যাবে না?
ভুরু কোঁচকালো বড়ো আপা।
— না, সেটা বলিনি। পাচ্ছ না যখন অন্য কোনো জামা পরো!
আমি হাই তুললাম। আমার ঘুম পোরেনি। ছোটো আপা সারারাত জাগিয়ে রেখেছে আমাকে। বকবক করেই গেছে। ঘুমের ঘোরে সেসব কিছুই আমার কানে যায়নি। দাঁড়িয়ে, শুয়ে, বসে – সব ভাবেই ঘুমানোর অভ্যাস আছে আমার। আর ঘুমকাতুরেও আমি কম নই। কলেজ যাওয়ার বাসে উঠে বসতে না বসতেই ঘুমিয়ে যাই। সদর স্টপেজ পার হয়ে মহিলা কলেজের কাছাকাছি যাওয়ার খানিক আগে থেকেই কন্টাক্টর ছেলেটা বাসের বডিতে চাপড় দিতে দিতে হাঁক দেয়,
— ময়লা কলেজ, নামেন নামেন, ময়লা কলেজ!
তখনো আমার ঘুম কাটে না। বাসের লক্করঢক্কর সিটে বসে, সামনের সিটের ময়লা চিটে পড়া কাভারে কপাল ঠেকিয়ে যে গাঢ় ঘুমটা আসে, নিজের বিছানার হুইল লেমন ওয়াশিং পাউডারের সুঘ্রাণযুক্ত চাদরের উপর সেই ঘুম বসে না! আমি নির্দিষ্ট স্টপেজে না নেমে ঘুমাতে থাকি। আরো একটা বা দুটো স্টপেজ পার হয়ে, ঘুম কাভার করেই নামি। তারপর উল্টোদিক থেকে আসা লোকালে চেপে বসি। তাতে করে একটা ক্লাস মিস হয়ে যায় আমার। কিন্তু ঘুমটা যা হয়, সারাটা দিনের জন্য ফুরফুরে হয়ে যাই।
বড়ো আপা সাদা জামার ওড়নাটা খুঁজে পেয়েছে। কুচরিমুচরি হয়ে আলমারির এক কোণে পড়ে ছিল ওটা। কিন্তু ওটার এমন দশা হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। কাপড় শুকালে সেগুলোকে সুন্দর ভাঁজ করে তোষকের তলায় রাখার নিয়ম করে দিয়েছে মামি। এতে করে ভাঁজগুলো সমান হয়ে যায়, কাপড় দেখলে মনে হয় সেগুলোকে ইস্তিরি ডলে সমান করা হয়েছে। আচমকা আর ঘন ঘন লোডশেডিং হয় আমাদের এখানে তাই এই ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় করতেও মামির একটা পদ্ধতি বটে এই ব্যবস্থাটা, আমি জানি।
আমিই এই ওড়নাটাকে পরশুদিন রাতে আলমারির কাপড়ের স্তুপের নিচে দলা করে রেখে দিয়েছিলাম। আমি জানতাম, আজ বড়ো আপা এটাকে চাইবেই চাইবে। আজ এই জামাটাই ও পরতে চাইবে আমি জানতাম। কিন্তু আমি চাই না, যেখানে ও যাচ্ছে সেখানে যাক। আর এই সাদা জামাটাই পরে যাক এটা একেবারেই চাই না। সাদা জামাতে ওকে ভীষণ স্নিগ্ধ দেখায়। মনে হয় ও কোনো তিন্নি না, ও কোনো মানবী নয়। পাহাড়ের কোনো আদিবাসী মালিনীর কোমল হাতে একটা একটা করে গেঁথে তোলা শুভ্র শাদা জুঁই ফুলের একগাছি মালা ও। তখন ওর আশপাশ থেকে জুঁইয়ের একটা মিষ্টি, মোহনীয় ঘ্রাণও পাই আমি!
ও রেগে রেগে কোঁচকানো ওড়না সমান করার জন্য বিছানায় বসে আয়রনে হিট দিচ্ছে। আমি পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও গরম ইস্তিরির চাইতে বেশি হট হয়ে বলল,
— যা তো স্বর্ণ, বিরক্ত করবি না এখন।
আমি আরো জোরে চেপে ধরলাম ওকে। ঘুম থেকে জেগে উঠে ওর সাথে একটু দলাইমলাই না করলে আমার সকালই হয় না!
বাবা চলে যাওয়ার পরে এই প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে আমি একা থেকেছিলাম গুণে গুণে এগারোটা রাত!
বাবা যখন এখানে থাকতে এলো, সেই শুরুতে আদিবাসী পাহাড়ের মানুষগুলো নাকি আমাদেরকে ভালোভাবে দেখত না। বাঙালি আমরা যারা পাহাড়ের জায়গা কিনে বসত শুরু করি তাদেরকে ওরা বলে সেটেলার। সেটেলারদেরকে ওরা খুব ঘৃণা করে। ওদের সাধারণ বাঁশ, কাঠ আর পাহাড়ি ঘাসের তৈরি টঙের পাশে আমাদের পাথুরে ইটের বাড়িই পার্থক্য তৈরি করে দেয়৷ বাবা শার্ট-প্যান্ট পরতেন, সাহেবি ঢঙে কথা বলতেন, গাড়ি চালাতেন, আমাকে মিশনারী স্কুলে পড়াতেন আর আমাদের বাড়ির অন্দরেই টয়লেট – তাই ওরা ভীষণ অপছন্দ করত বাবাকে৷ তারপর সব বদলাতে শুরু করত। বাবার চেষ্টায় মেখলি পাড়ার ভেতর অব্দি পাকা রাস্তা এলো, খাম্বা বসে বিদ্যুতের লাইন এলো আর জুমের জায়গা কিনে নিলেও ওর প্রাক্তন মালিক নির্দ্বিধায় ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকল। ধীরে ধীরে বাবা খুব সম্মানের আর কাছের লোক হয়ে উঠল এই মেখলির সাধারণ পাহাড়ের মানুষগুলোর কাছে।
কিন্তু সংকোচ আর বাধার প্রাচীর ছিল সামনে। এক পাতে খাওয়ার মতো সম্পর্ক তৈরি হয়নি কখনোই। ওরা শূ কর মেরে উৎসব করলে বাবা সেই জায়গা মাড়াত না। চোলাই মদের ফোয়ারা ছুটলে বাবা সেদিন ঘরে বসে থাকত। আর ওরাও ফল কিংবা আনাজ বাদে ওদের রান্না করা খাবার কখনো বাবাকে সাধেনি।
বাবা চলে যাওয়ার পরেও এই সংস্কার সবার মনে এঁটে ছিল। আমাকে ভালোবাসলেও আহার দেয়নি কেউ। ইলোরা কাকি দূর থেকে ভাত রাঁধতে দেখিয়ে দিচ্ছিল।
— হাড়িটা কাত হয়ে আছে, মা। অমনে সোজা করো।
হাড়ি সোজা করার চাইতে আমি আমি আরো খানিক কাত করে ফেললাম। গরম পানি ছলকে পড়ল আমার গায়ে। সাত বছরের মেয়ে আমি তখন। এর আগে গরম হাড়ি ধরেও তো দেখিনি। লছমি দিদি রান্না বাদে অন্য সব কাজ করে দিয়ে যেত। রান্নাটা বাবাই সারত। আমি এক কাপ চায়ের পানিও তো গরম করে দিইনি কোনোদিন!
ইলোরা কাকি বলল,
— ভাত হয়ে এসেছে। ওই হাড়িটার উপর কাত করে দাও।
আমি ভাতের হাড়ি গড় করতে গিয়ে সব ভাত ফেলে দিলাম। হাত পোড়ালাম তারপর চিৎকার করে কাঁদলাম।
সেদিনই প্রথম আমি আমার মামাকে দেখি। জিপের পিঠে অনেকগুলো বস্তা, শাড়ি পরা একটা মহিলা আর মুখ গোমড়া করে বসে থাকা তিনটে মেয়ে। সবাইকে আমি প্রথম দেখেছিলাম সেদিন!
এগারো বছরের মেয়েটি চোখ বড়ো বড়ো করে আমাকে দেখছিল সেদিন। ভীষণ অবাক হয়ে বলেছিল,
— তুমিই আমার নতুন ছোটো বোন?
ইলোরা কাকি, সুপ্রিয়া কাকি মাঝে মাঝে ইয়ার্কি করে বলত,
— স্বর্ণ মা, তোমার বাবাকে আবার বিয়ে দেবে না?
আমি অবাক হয়ে বলতাম,
— বাবার বিয়ে দিলে কী হবে?
— তোমার আবার ভাই হবে, বোন হবে। ছোটো ভাইবোনের সাথে খেলা হবে।
আমার ভীষণ হিংসা হতো। আমি বাদে আমার বাবার অন্য কোনো ছেলে মেয়ে থাকবে এটা আমি মানতেই পারতাম না। ছোটো ভাই বা ছোটো বোনে খুব রাগ ছিল আমার।
বাবার আবার বিয়ে না হয়েও কোনো বড়ো বোন হতে পারে এটা জানতে পেরে আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম সেদিন। আর বড়ো বোনটি জড়িয়ে ধরে আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছিল, আমি তখন নাক ভরা জুঁই ফুলের ঘ্রাণে আকুল হয়েছিলাম!
বড়ো আপা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। ইন্টার্নি করছে। টাউন হল লাইব্রেরিতে পার্ট টাইম চাকরিও করে। কিন্তু প্রেম করে পাহাড়ি ছেলে উজ্জ্বল মুরংয়ের সাথে। উজ্জ্বল দাদাকে আমার একটুও ভালো লাগে না। পাহাড়ের ছেলে হয়েও ও পাহাড় ভালোবাসে না। এই দেশে থাকতে চায় না। এই পাহাড়ে চাকরি নেই, শিক্ষা নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই – সভ্য কিছু নেই। ও তাই সভ্যদের দেশে চলে গেছে। আর বড়ো আপাকেও নিয়ে যাবে। আমি কেমন করে থাকব আমার আপাকে ছাড়া!
সপ্তাহের শেষ দিনে উজ্জ্বল দাদা আসে ওদের পাহাড়ের বাড়িতে। আর টাউন হলের লাইব্রেরিতে দেখা করে দুজনে।
ভাগ্যিস মামা-মামি কেউই এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। উজ্জল দাদার বাবা-মাও মানে না। পাহাড়ি-বাঙালি আবার বিয়ে হয় নাকি? আমরা একই রকম হলেও আলাদা!
আমার কিন্তু আলাদা মনে হয় না। কৃষ্ণা দিদি কি আমার পর? ইলোরা কাকি যখন চুলে বাদামের তেল দিয়ে দেয়, তখন যে তাকে আমার ভীষণ মা মা মনে হয়, সেটা কি মিথ্যে? মৈথিলী কাকির গাছের উচ্ছে পেয়ারা ডাসা হলে, সবার আগে, একদম প্রথম তোলা পেয়ারাটা আমার জন্য নিয়ে আসে আঁচলের তলায় ঢেকে, সেটা কি সে আমার পর বলে?
আমার তো কেউ নেই, কিছু নেই – এই পাহাড় আর পাহাড়ের মানুষগুলো বাদে আমার অন্য কোনো পৃথিবীও নেই। উজ্জ্বল দাদাকেও আমি খুব ভালোবাসতাম, যদি ও বড়ো আপাকে নিয়ে এই অঅচিনপুর গ্রামের কোনো পাহাড়েই ছাউনি বাঁধত! আমার আপাকে ও নিয়ে গেলে, আমি কেমন করে থাকব?
আমার ভাবনার মাঝেই মামি এসে চিৎকার করে বলল,
— ওই ছেলেটা আবার এসেছে, তিন্নি?
বড়ো আপা ইলেকট্রিক সুইচটা অফ করে সদ্য ইস্তিরি করা ওড়নাটা ঝাড়া দিলো, ওটার উষ্ণতা ঝেড়ে ফেলতে। মামি নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে বলল,
— কী জানতে চেয়েছি, তিন্নি? উত্তর দে।
বড়ো আপা ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে বলল,
— উজ্জলের বাড়ি এটা। এখানে তো ও আসবেই।
— না। সব বেচে চলে গেছে ওরা। আবার কেন আসবে?
— বেচে দিলেই সব মুছে যায়, মা? এই পাহাড়ে ওর ছেলেবেলা, বেড়ে ওঠা এখানে, — নদীতে আঁজলা পেতে ও পিপাসা মিটিয়েছে। এই পাহাড়ের ফল-ফসল ওদের আহার জুগিয়েছে। এই আকাশ, পাহাড়, ফুল – সবই তো ওদের। অধিকার ছেড়ে দিলেই কি সম্পর্ক মুছে যায়? ও আসলে তুমি ঠেকানোর কেউ না, মা!
ক্লান্ত কন্ঠে জবাব দিলো বড়ো আপা।
মামি যেন সেসব শুনল না। বলল,
— অত কাব্য করিস না, তিন্নি। আমি মুর্খ মা নই। ওর পাহাড়, বেশ তো, আসুক ও। তুই ওর সাথে দেখা করতে যাস কেন তবে?
— এই কথা অনেকবার হয়ে গেছে, মা। আর ভালো লাগে না।
— তিন্নি, ওদের সাথে আমাদের যায় না!
বড়ো আপা ছোটো করে শ্বাস ফেলল। ক্লান্ত কন্ঠে বলল,
— এই কথাও অনেকবার হয়ে গেছে।
— বারবার হবে। তোর কানে না ঢোকা পর্যন্ত হবে। ওদের ধর্ম আলাদা, সংস্কার আলাদা, আচার আলাদা, খাবারের অভ্যাস আলাদা।
— উজ্জ্বল আমাকে কোনোকিছুতে জোর করবে না, মা। আর আমিও ওকে জোর করে কিছু করাব না। ও ওর সংস্কার মানবে, আমি আমার ধর্ম আর শিক্ষামতো চলব।
মামি মরিয়া হলো,
— আর বিয়েটা কী মতে হবে? উজ্জ্বল মুসলমান হবে?
— ওর মায়ের সৎকার করে মুসলমান হবে।
— মাকে মেরে ফেলবে?
বড়ো আপার কন্ঠস্বর তীক্ষ্ণ হলো,
— কী বাজে বকছ, মা!
— তবে মায়ের আয়ু ও জানল কীভাবে? নাকি মায়ের মৃত্যু প্রার্থনা করছে?
— মা!
— মা, মা করে লাভ নেই, তিন্নি! ও ওর মতো ওর ধর্ম, আচার নিয়ে থাকুক। তুই তোর মতো থাক। তুই পড়াশোনা জানা বুদ্ধিমতি মেয়ে। আমার বড়ো সন্তান তুই। অনেক দায়িত্ব তোর। ছোটো বোনগুলোর দায়িত্বও তোর মাথার উপর। তোর দেখানো পথেই তো চলবে ওরা। সব শেষ করে দিস না, তিন্নি।
বড়ো আপা কেঁদে ফেলল,
— এই সমস্ত দায়িত্ব তো আমি চাই না, মা। আমাকে আমার মতো করে বাঁচতে দিচ্ছ না কেন? বড়ো হওয়াটা কি আমি নিজে বেছে নিয়েছি? বড়ো বলে আমাকেই কেন ঠকতে হয়, হারতে হয়?
মামি তুতলে গেলেন,
— তোকে আমরা ঠকিয়েছি?
— আলবৎ! মুন্নি এসে বলেছে বিছানার বাইরের দিকে ও শোবে। আমি জায়গা ছাড়লাম না৷ কেননা দেয়ালের দিকে শুলে আমার দমবন্ধ হয়ে থাকে। তোমরা এসে বললে, ‘তুই না বড়ো!’ অমনি আমি নিজেকে দেয়ালে আটকে দিতে শুরু করলাম। ইদে পছন্দের জামাটা কখনো পাইনি। কেন? ছোটো বোনদের চাওয়া আগে পূরণ করে কিছু থাকলে তবে তো আমি পাব! আমার মন খারাপ হলে তোমরা বললে, ‘তুই না বড়ো!’ আমি অমনি বড়ো হয়ে গেলাম! বড়ো হওয়াটা দেখাতে দেখাতে আমার সব প্রিয় জিনিসগুলো ভুলে গেলাম। আমাকে বুঝ দেওয়া হতো, সামনের বছর। সামনের বছর বিন্নি নইলে স্বর্ণর অন্য কোনো প্রয়োজন সামনে এসে যেত। বোনদেরকে খাওয়াতে হবে, সাজাতে হবে, পড়াতে হবে, স্কুলে নিতে হবে – এত এত দায়িত্ব করতে গিয়ে নিজের পড়াশোনাটাই ঠিকঠাক হলো না। মেডিকেলের শেষের সিরিয়াল ভাগে পেলাম। আর পারছি না, মা। এবারে নিজের জন্য একটা মানুষকে চেয়েছি আমি, যাতে আমার বোনদের কোনো অংশ নেই। আমি এবার নিজের জন্য উজ্জ্বলকে চাই!
মামি কিছু বলল না। বেরিয়ে যেতে যেতে দরজাটা বাইরে দিয়ে আটকে দিয়ে বলল,
— আজ তুমি ঘরের বাইরে যাবে না!
আপা কাঁদল না। থম মেরে বসে রইল। মুখ তুলে তাকিয়ে আমাকে বলল,
— মাকে কে বলেছে স্বর্ণ, আমি উজ্জ্বলের সাথে দেখা করব আজ?
— আশ্চর্য! আমি কীভাবে জানব সেটা? বিদ্যার কসম, বিশ্বাস করো, আমি বলিনি বড়ো আপা।
— শোন স্বর্ণ, উজ্জ্বলকে বিয়ে না করলেও, চেম্মুডু পার হয়ে এই অচিনপুর গ্রামে বাঙালি ছেলে তুই কোথায় পাবি? এই পাহাড়ে আমি থাকব না। তুইও থাকবি না। আমরা কেউ থাকব না।
আমি মিনমিন করে বললাম,
— বাঙালি ছেলে আছে তো!
— কে?
— প্রভাত দাদা!
বড়ো আপা হেসে ফেলল। আমাকে থ্যাবড়া চুমু দিয়ে বলল,
— প্রভাতের সাথে কত জনকে বিয়ে দিবি তুই! আমাকে, মুন্নিকে, বিন্নিকেও! প্রভাতকে খুব ভালো লাগে তোর?
আমি মাথা নাড়লাম,
— খুব!
বড়ো আপা হাসল।
আমি বললাম,
— তুমি হাসছ? মামি তো দরজা আটকে দিলো, তুমি তো আজ উজ্জ্বল দাদার সাথে দেখা করতে পারবে না।
— এখনই দরজা খুলে দেবে। মা নিজেই দেবে…
— মোটেও না। মামি বলল তো আজ তোমাকে বাইরে যেতে দেবে না। মামি যা বলে তাই করে।
— আজ ঠিক খুলে দেবে।
— তুমি কীভাবে জানো?
— বাইরের ঘরে তোর চাচা আকরামুজ্জামান সাহেব এসে বসে আছেন। মা একটু বাদেই দরজা খুলে তোকে ডাকবে।
আমার গায়ে কাঁটা দিলো। ভয়ে ঠোঁট শুকিয়ে এলো। ঠোঁট চেটে ভিজিয়ে নিয়ে আমি বললাম,
— ওই ভয়ংকর লোকটা কেন এসেছে?

চলবে…
আফসানা আশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here