অচিনপুর পর্ব -০৩+৪

#অচিনপুর – ৩ ও ৪

#অচিনপুর – ৩

আমাদের বাড়িটাকে ঘিরে কাঠের বেড়া দিয়েছিলেন বাবা। এই পাহাড়ের মানুষগুলো সরল সোজা। তাদের থেকে এমন বিপদের আশংকা নেই যে পাথরের প্রাচীর তুলে দিতে হবে। বেড়া লাগানোর কারণ ছিল জংলি জানোয়ারের উপদ্রব থেকে বাঁচতে। মাঝে সাঝে উত্তরের পাহাড় থেকে হাতিও নেমে আসত তখন!
সেই কাঠের বেড়া উইতে খেয়েছে, বর্ষার জলে পচেছে অনেক দিন। মামি অনেক বার ভেবেছে মেরামত করবে। খরচের সাথে না পেরে পাহাড় থেকে বাঁশ এনে তা দিয়েই ঘিরে দিয়েছে। একটুখানি আঙিনা আমাদের। দুটো টিনটিনে পেঁপে গাছ আর চারটে কলা গাছ, এদিক সেদিক কোণাখুপচিতে টক ফলের গাছ কয়েকটা, আমড়া, আমলকি, জলপাই, কামরাঙা। ব্যস, আঙিনার দৌড় শেষ। বেড়ায় দেওয়া বাঁশগুলো কঞ্চির সাইজ। ওগুলো পেরোতে বেশি বেগ পেতে হলো না আমাকে। আমি একটু কারসাজি করে মাথা গলানোর মতো ফাঁকা করে নিলাম। আর তারপরই ভোঁ দৌড় দিলাম। এই বাড়ি আর সামনের গেইট আজ নিষিদ্ধ এলাকা আমার জন্য। আকরামুজ্জামান সাহেব মেখলি পাড়া না ছাড়া পর্যন্ত আমি বাবা আজ আর বাড়ি ফিরছি না!
রাস্তায় নেমেই দূর থেকে হেমা দিদির সাইকেল দেখতে পেয়ে ডাক দিলাম,
— ও হেমা দিদি, একটু থামো!
হেমা দিদি সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়াল। আমি দৌড়ে ওর কাছে গিয়েই হাঁপাতে শুরু করলাম। হেমা দিদি ভুরু কুঁচকে বলল,
— আজকেও তোর মামি বকাবকি করছে? পালিয়ে এসেছিস?
আমি হাসলাম। বললাম,
— তুমি কোথায় যাচ্ছ?
— ওল তুলব। বাবা জুমে গেছে। আমি বস্তা নিয়ে যাচ্ছি।
— কাল যে এত বৃষ্টি হলো! ওলে গলা ধরবে না?
— আমার পিসী চলে যাচ্ছে তার বাড়িতে। ওরা তো শহরে থাকে। পিসীর শাশুড়ি গোঁ ধরেছে, নাপ্পি দিয়ে জুমের ওল খাবে। আসছে শীত পর্যন্ত সে নাকি বাঁচবে না!
— নাপ্পি! পচা লাগে!
হেমা দিদিও হাসল।
— লিটিনাও খেতে চায় না। ওর কাছেও গন্ধ করে৷ যারা খায় না তাদের কাছে গন্ধ করে। আর যারা খায়, ওই গন্ধটার জন্যই খায়। বুঝেছিস? তুই খেতে শুরু কর, একসময় দেখবি আমের ভর্তাতেও নাপ্পি পুড়িয়ে দিচ্ছিস!
— ছিঃ! জীবনেও খাব না আমি! এই জীবনে কত কিছুই তো খাইনি। এটাও না খেয়ে আমার জীবন চলে যাবে। সব কিছুই খেতে হবে এমন কি কোনো কথা আছে?
হেমা দিদি গম্ভীর হয়ে গেলো। আমার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
— তা নেই স্বর্ণ। কোনো খাবার তোকে খেতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু আরেক জনের খাদ্যাভ্যাসকে বিদ্রুপ করাটা তাকে আর তার পুরো জাতিকে অপমান করার মতো!
আমি তাড়াতাড়ি হেমা দিদির হাত ধরে ফেললাম। চোখ দুটো জলে ভরে এলো আমার। বললাম,
— এ মা দিদি, আমি একদম ওসব ভাবিনি। তোমরা ছাড়া আমার কে আছে বলো? আমি তো পাহাড়ি-বাঙালি আলাদা করে ভাবি না কখনো। কিন্তু তুমি ভাবো! লিটিনাও তো একই কথা বলে। নাপ্পির কথা উঠলেই ওর বমি পায় – সেটা বলে। কিন্তু ওকেও কি তুমি এই কথা বলো? বলো না তো? আমিও তো লিটিনার মতোই তোমাকে দিদি বলে ডাকি!
— হয়েছে। আর ন্যাকামি করতে হবে না। তোদের সবগুলো ছুকড়ির ওই ফটফট চোখে জল আনার কায়দা আমি জানি। এবার চটপট বল আমাকে থামালি কেন?
— আমাকে বরণ পাড়ায় দিয়ে আসবে?
— তাহলে তো আমাকে অনেকটা ঘুরে যেতে হবে!
— আমাকে ঝরনা পর্যন্ত এগিয়ে দাও। আমি নালা পার হয়ে চলে যাব।
— পড়ে গেলে?
— আমি তো প্রায়ই যাই ফুল দিতে। পড়ে যাই না তো!
— বরণপাড়ায় ফুল দিতে যাস? কোন বাড়িতে? রাজার বাড়ি?
— হুম!
— প্রহ্লাদদের কোনো জাত নেই জানিস?
— এমন করে কেন বলো?
— সমাজে বলে। আমার বলতে ভালো লাগে না, কিন্তু কথা তো সত্যি। প্রহ্লাদের দাদী ছিল পাহাড়ের মেয়ে। আমাদের রাজামশাইয়ের মেয়ে। কিন্তু বিয়ে করে নিলো মুসলমান বেটাকে। ধর্ম, জাত, কূল সব খোয়াল।
— কিন্তু জো- মাও তো পাহাড় ছেড়ে কোনোদিন যায়নি!
— কিন্তু পাহাড় তো তাকে ছেড়েছে। ওরা বিজুতে আসে না। সে বছর প্রবারণা পূজায় মাও এসেছিল দান করতে। সমাজের কেউ ছোঁয়নি সেসব। সমাজের সবাই মিলে তাকে অনেক অপমান করে সমাজে আসতে বারণ করে দিয়েছে।
— কিন্তু তবুও তো প্রহ্লাদ দাদা, প্রভাত দাদা নিজেদেরকে পাহাড়ের ছেলেই বলে!
— আবার নামাজও পড়ে, ইদও করে। বুঝি না ওদের ব্যাপার স্যাপার! বড়োলোকদের কিছুই আমি বুঝি না। অত কথা বলিসনে তো, স্বর্ণ! যাবি? গেলে পেছনে উঠে বস তো বাপু!

প্রভাত দাদাদের বাড়িটা দেখলে আমার হিংসা হয় রীতিমতো। চারিপাশে পাহাড় ঘেরা স্বপ্নের মতো সুন্দর বাড়িটা। পাথুরে মাচার উপর ঝা চকচকে প্রকান্ড বাড়িটা। আগেও এমনই ছিল বাড়িটা। তবে আগেরটা ছিল কাঠের বাড়ি। কাঠের মাচা, কাঠের পাটাতন, কাঠের দেয়াল আর সিঁড়িগুলোও কাঠের। আর আগের কাঠের বাড়ি আর এই নতুন ইট-পাথরের বাড়ি দুটোরই অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই পেল্লাই পেল্লাই সাইজের জানালা! সিলিং থেকে ফ্লোর অবধি নেমে আসা বিরাট বিরাট জানালা! আর সেই জানালাগুলো খুলে দিলেই চোখের সামনে এসে উদ্ভাসিত হয় আস্ত ঝরনাটা। সেই কোন অনাদিকাল থেকে পাহাড় গড়িয়ে জলের ধারা গড়িয়ে গড়িয়ে নামছে আর মাটিতে নেমেই কেমন নদী হয়ে যাচ্ছে! এক চিলতে ছোটো নদীটা যেন প্রভাত দাদাদের পোষ মানা নদী। মানুষ প্রাণী পোষে, পাখি পোষে, গাছে পোষে – আর এরা আস্ত একটা নদীই পুষে রেখেছে! একদম বাড়ির পেছন বাগান দিয়ে কুলকুল করে বয়ে চলে সারাদিন ধরে। কী স্বচ্ছ এর পানি! এই নদীটার নাম ওলি। ওলি মানে ঘুমপাড়ানি। এই পুরো বরণ পাড়াটাকে রাত্রিবেলা ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব যেন এর।
অনেক আগে লুসাই পাহাড় থেকে পাহাড়ের সন্তানেরা পথ ঘুরে এখানে এসে বসতি শুরু করেছিল। অর্থ, অলংকার, মূল্যবাণ রত্ন থাকলেও ফসল ছিল না, ছাউনি দেওয়া ঘর ছিল না, বাচ্চার দুধের জোগান দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পশুও ছিল না! মায়েরা তখন এই নদীর পানিতে আঁজলা ভরে খাওয়াত বাচ্চাগুলোকে। আর কিছুক্ষণের জন্য বাচ্চাগুলো শান্ত হয়ে যেত। নদীর স্রোত পাথরে বাধা পেয়ে এক নতুন সঙ্গীত তৈরি করত। ঘুমপাড়ানি গান মনে করে ক্ষুধার্ত বাচ্চাগুলো সেই সুরের সাথে ঘুমিয়েও যেত। আর সারাদিন জুমের জমি তৈরি করে, বুনো পশু শিকার করে তাকে খাবারের উপযোগী করে, গাছের ডাল, বাঁশ দিয়ে মাথা গোঁজার মাচা তৈরি করে নারী-পুরুষেরা যখন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে শরীর এলিয়ে দিতো, আঁধার কেটে কেটে এই নদীটা তখন কোথা থেকে যেন একরাশ মিষ্টি হাওয়া বইয়ে দিতো আর সেইসব পথভোলা মানুষগুলোর চোখ জুড়ে নামিয়ে দিতো রূপকথার রাজ্য থেকে চুরি করে আনা স্নিগ্ধ ঘুমের বটিকা! তাই এই নদী ছিল তাদের কাছে ঘুমপাড়ানি নদী। সেই থেকে এই নদীর নাম ওলি।
লোকজ এই গল্পটা আমি প্রিয়াংশু কাকার মুখে শুনেছি। তারপর লিটিনাও বলেছে।
আমাদের পাড়া থেকে অনেকটা রাস্তা ঘুরে আসতে হয় বরণ পাড়ায়। হাঁটাপথে ঘন্টা লেগে যায় প্রায়। কিন্তু ঝর্ণা আর পাহাড়ের খাড়ি বেয়ে নেমে একটা নদী পার হয়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে দশ কি পনেরো মিনিট লাগে। ওলি নদীর এই দিকটাতে পানির গভীরতা একদম কম। আধাহাঁটু ভেজে বড়োজোর। নিচের পাথরগুলো একটু স্যাতস্যাতে, পিছলে যাওয়ার ভয় আছে। কিন্তু আয়াস কমিয়ে এমন শর্টকাট রাস্তা পেতে একটু ঝুঁকি নেওয়াই যায়! আমার অভ্যাসও হয়ে গিয়েছে। বলে না, প্রাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট! এই পথে যেতে যেতে এই পথই আমার পথ হয়ে গেছে। এই নুড়ি-পাথর আমায় উলটে ফেলে দেয় না, পানির স্রোত লাফিয়ে এসে আমার পিরান ভেজায় না, এলোমেলো বাতাসগুলো আমার চুল উড়িয়ে দেয় না! বরণপাড়ার মুখেই একটা ঝরনা, সেই পাহাড়টা বেশ উঁচু। লাফ দিয়ে লাফ দিয়ে জংলি আগাছার সাহায্য নিয়ে নেমে আসলেই অমলতাস আর আকাশমণির মস্ত বাগান। অমলতাস আর আকাশমণির ফুল ঝরে ঝরে হলদে হয়ে থাকে পুরো বাগানটা! হলদে ফুলগুলো যেন আমার জন্যই গালিচা হয়ে বিছিয়ে থাকে সারাটা জঙ্গল জুড়ে! রাশি রাশি সোনারঙ ফুলের রেণু মাথায় মেখে আমি ওলি নদীর সরু ধারা পার হয়ে যাই দিব্যি!

কী অন্ধকার ঘরটা! সমস্ত জানালাগুলো আটকে, পর্দা টেনে ঘুমিয়েছে প্রভাত দাদা। আমি একটা একটা করে জানালা খুললাম। কাঠের পাল্লাগুলো দড়াম শব্দ করে খুলল আর ঘরটা নিমেষেই আলোয় ভরে গেল। মশারির ভেতর থেকে ঘুমঘুম গলাতেও প্রভাত দাদা হেঁড়ে গলায় চিৎকার শুরু করল,
— ফ্যান বন্ধ করল কে? গরমে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি!
তখনই ঝর্ণার উদ্দাম হাওয়া এক ঝটকাতে ঘরে ঢুকে ঘরের সবকিছু এলোমেলো করে দিতে উদ্যত হলো।
প্রভাত দাদা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— স্বর্ণ, তুই জানালা খুলেছিস? এঁটে দে। আমার সব কাগজপত্র টেবিলে ছড়িয়ে রাখা, বাতাস এসে সব উড়িয়ে নিয়ে যাবে!
— এত সুন্দর সকাল, তুমি ঘুমিয়ে কাটাবে? উঠে পড়ো না!
— তুই ফ্যানটা চালিয়ে দে। তারপর অন্য কোথাও যা।
— ইলেকট্রিসিটি নেই তো!
— কখন থেকে?
— সেই কোন ভোরবেলা থেকেই তো!
চোখ কচলে চোখের ঘুম তাড়িয়ে উঠে বসল প্রভাত দাদা। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— এমন সেজেছিস কেন?
আমি সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উলটো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,
— সুন্দর লাগছে না আমাকে?
— হুম, পাহাড়ের মেয়েদের মতোই দেখাচ্ছে।
প্রভাত দাদার উত্তর আমার পছন্দ হলো না। কাঁচুলি, লুঙ্গি আর ওড়নাতে আমাকে তো পাহাড়ের মেয়েদের মতোই দেখাবে। ভালো দেখাচ্ছে কিনা সেটা জানতে চেয়েছিলাম ওর কাছে!
প্রভাত দাদা বালিশটাকে সমান করে আবার শুয়ে পড়েছে দেখে আমি বললাম,
— আবার ঘুমাবে?
প্রভাত দাদা চোখ না খুলেই বলল,
— তাহলে কী করব, বলে দে?
— দেখো,
আমি জানালার পাশে সরে এলাম। কোনো গরাদ না দেওয়া জানালা থেকে মাথা গলিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে এলাম খানিকটা। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে বললাম,
— ঝর্ণার পানিতে রোদ লেগে ঝলমল করছে কেমন দেখো তো! যেন রাশি রাশি মুক্তো মানিক ওখানে জলের নিচে গিয়ে রোদ পোহাচ্ছে! খালের পাশে দুটো ছাগল আপনমনে নাচছে। এইপাশে তোমার মায়ের পোষা রাজহাঁসগুলো কেমন অহংকারী রাণীর মতো গলা উঁচু করে তাকাচ্ছে! বাতাসেরও যে আলাদা করে গান আছে, এখানে দাঁড়ালেই স্পষ্ট শুনতে পাওয়া যায়। আর ওই যে আকাশটা ছায়া ফেলেছে নদীর জলে আর পাহাড়ি স্রোত বারেবারে সেই প্রতিবিম্বটাকে ভেঙেচুরে দিয়ে বয়ে চলেছে…। আচ্ছা, প্রভাত দাদা, তুমি আমার বড়ো আপাকে বিয়ে করবে?
অসংলগ্ন আর অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন শুনে প্রভাত দাদা কিছুটা বিস্মিত হলো। অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
— বড়ো আপাকে কী করব?
— বিয়ে করবে বড়ো আপাকে?
— না।
আমি কাতর হয়ে বললাম,
— তাহলে মেজ আপাকে বিয়ে করে নাও, প্রভাত দাদা!
মাথা নাড়ল প্রভাত দাদা।
আমি মন খারাপ করে বললাম,
— মেজ আপাকেও বিয়ে করবে না?
— না।
এবারে মরিয়া হলাম আমি, প্রভাত দাদার হাতটা চেপে ধরে বললাম,
— তাহলে ছোটো আপাকে বিয়ে করো, প্লিজ!
প্রভাত দাদা শেভ করেনি, একমুখ খোঁচা খোঁচা দাড়িসমেত হেসে ফেলল। চোখ মুখ সব দিয়ে ঠা ঠা করে হেসে বলল,
— ওরে বোকা চাঁপাফুল, আরেকটু নিচে নামতি! তাহলে এই বাসী মুখ আর কাপড়চোপড় নিয়ে এমন সাত সকালেও ঠিকই বর সাজতে রাজি হয়ে যেতাম!
প্রভাত দাদার কথার কোনো মাথামুণ্ডু নেই। আমি নিচে কোথায় নেমেছি! আমি তো উপরে এলাম৷ এই মোটা মোটা সিঁড়িগুলো বেয়ে দোতলায় প্রভাত দাদার কামরায় এসেছি। রুষ্ট হয়ে বললাম,
— তুমি আমার একটা কথাও শোনো না!
— তোর সব কথা আমি শুনি, চাঁপা। একদম মিথ্যে বলবি না। ওই যে আমার ব্যাগটা পড়ে রয়েছে। ওটা খোল, যত বই আনতে বলেছিলি সব এনেছি। ওগুলো নে আর জানালাগুলো আটকে দিয়ে বিদায় হ! পরশু থেকে আবার অনেক কাজ আমার। আজ আর কাল ছুটি। আজ সারাদিন শুধু ঘুমাব।
প্রভাত দাদা দড়াম করে বিছানায় পড়ল আবার।

#অচিনপুর -৪

প্রভাত দাদার দাদীকে তাকে সবাই ডাকে মাও। এই বরণ পাড়া, মেখলি পাড়াসহ আরও অনেকগুলো পাড়া নিয়ে আমাদের অচিনপুর গ্রাম। বহু বছর আগে লুসাই পাহাড় থেকে যারা নেমে এসেছিল, দিনে দিনে তারা সংখ্যায় বেড়েছে। অনেক অনেক গোত্রে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দূর থেকে দূরের ওই সমস্ত পাহাড়গুলোতে। সেই সব পাহাড়ি গোত্রের গোত্রপতি, কেউ কেউ বলত রাজা – তিনি ছিলেন উপজাতি রাজা দেবাংশু। রাজার ছেলে রাজা হয়, এই নিয়মে দেবাংশু ছিলেন রাজা আর রাজার একমাত্র মেয়ে পাহাড়ি রাজকন্যার নাম ছিল ইখিন। ইখিনের জন্মের কিছু পরেই ওর মা মরে যায়। দেবাংশু ছেলের মতো করেই লালন পালন করতেন মেয়েকে। ইখিন বন্দুক চালাতে পারত, বুনো হাতিকে পোষ মানিয়েছিল, পশু শিকারে লক্ষ্য ছিল অব্যর্থ! আবার চেম্মুডু পার হয়ে পড়াশোনা করতে সাহেবদের বানানো স্কুলেও যেত।
ইখিন যখন বড়ো হলো, স্কুল ছেড়ে কলেজে যেতে শুরু করল, এই পাহাড়েই সাব ইন্সপেক্টর হয়ে আসেন সুলতান সাহেব। প্রেম হলো পাহাড়ি রাজকন্যা আর বাঙালি সুলতানের। এখন পাহাড়ি-বাঙালি বিয়ে অহরহ হচ্ছে, তবুও বেশিরভাগ সময়েই পরিবারগুলো মেনে নিতে চায় না। আর সেই অত আগে এইরকম সম্পর্ক মেনে নেওয়াটা ছিল অসম্ভবের প্রতিশব্দ!
বাঙালি ছেলে সুলতানের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ইখিনের এই সম্পর্কটাকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেয় না কেউ। না রাজা নিজে না তার প্রজারা। ইখিন তখন সমস্ত বাধা পেরিয়ে সুলতান সাহেবের হাতটা ধরেন। সুলতানকে বিয়ে করতে ধর্ম পালটে তিনি জোহরা নাম নেন।
এখন সবাই তাকে জোহরা মাও বা জো-মাও ডাকে। থুথথুরে জোহরা মাওয়ের ত্বকে অসংখ্য বলিরেখা আর চোখে পাহাড়ের জন্য অপরিসীম ভালোবাসা! বাবার একমাত্র মেয়ে ছিলেন বলে রাজামশাই তাকে দূর করে দেননি, ত্যাজ্য করেননি, ব্রাত্য হতে দেননি। তার চেয়ে নিজের প্রজাদেরকে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। সেইসব স্বাধীন প্রজাদের কেউ কেউ আমরণ দেবাংশুকেই নিজেদের রাজা মেনেছিলেন। কেউ কেউ দেবাংশুকে পুরোপুরি ক্ষোভে কুপিত করেছিলেন, সমাজচ্যুত হতে হয়েছিল সমাজের রাজা দেবাংশুকেই!
রাজা নিজের কাছেই রেখেছিলেন কন্যা ইখিনকে, তবে মেয়ের কাছ থেকে কথা আদায় করেছিলেন তার সন্তানেরা কেউ কখনো পাহাড় ছেড়ে যাবে না। জোহরা মাওয়ের ছেলেমেয়েরা সবাই কথা রেখেছে। বাঙালি মেয়ে বিয়ে করেও ছেলেরা কেউ বরণপাড়া ছাড়েনি। আর প্রহ্লাদ দাদা, প্রভাত দাদাও বরণপাড়া ছেড়ে যাবে না। নানা কাজে এরা অচিনপুর শহরে যায়, রাজধানী শহরে যায় কিন্তু সংগ্রাম আর দুর্গম, কঠিন জীবনের এই পাহাড়েই ফিরে আসে।
প্রহ্লাদ দাদার প্রেমিকা আছে। তার কলেজের বন্ধু য়েন য়েন। য়েন য়েন দিদিকে দেখেছি আমি। পাহাড়ের অভিজাত পরিবারের মেয়ে ও। ওর বাবা এখানের সবচেয়ে বড়ো মন্দিরটার পুরোহিত। উপজাতিদের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব তাঁতে হাতে বোনা জামা পরে কলেজে আসত। এমনকি, বাঙালি পোশাকেও কোনোদিন ওকে দেখিনি আমি। এই বিয়েতে ঝামেলা আছে আমি সতর্ক করে দিয়েছি প্রহ্লাদ দাদাকে। ইখিন মাও রাজার মেয়ে ছিলেন বলে পাহাড়িরা তাকে হত্যা করেনি কিন্তু জাত-ধর্ম বিসর্জন দেওয়ার এই অপরাধ তারা মাফও করেনি। পাহাড়ের যাবতীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে তাকে অংশ নিতে দেওয়া হয় না। এমনকি তাকে তারা একঘরে করেও রেখেছে। বাঙালিরা ছাড়া জোহরা মাওয়ের কাছে কেউ আসে না।
য়েন য়েন দিদিকে বিয়ে করতে চাইলে পাহাড়ের উগ্র ছেলেরা প্রহ্লাদ দাদাকে প্রাণেই মেরে দেবে!
তার চেয়ে আমার বড়ো আপাকে বিয়ে করে নিলে ও অনেক সুখে থাকত।
এসব প্রেম ভালোবাসা শুধুই ঢং ছাড়া কিছু নয়!
প্রহ্লাদ দাদারও শুধু ঢং, প্রভাত দাদারও আরেক রকম ঢং!

বইগুলো বের করতে করতে একটা শপিং ব্যাগ বেরোলো বাদামী কাগজের প্যাকেটের মাঝ থেকে। আমি আবার প্রভাত দাদার ঘুম ভাঙালাম। সে লাল টকটকে চোখ নিয়ে উঠে বসল। আমি ভয় পাচ্ছিলাম আমাকে বকে কি না! বকল না, বিমর্ষ মুখে বলল,
— চাঁপা, ঘুমাতে দিবি না?
আমি শপিং ব্যাগটা নিয়ে বললাম,
— এটা কী? কার এটা?
— ওই ব্যাগে যা আছে সবই তোর।
— এটাতে কী আছে?
প্রভাত দাদা প্রচন্ড বিরক্ত হলো। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
— খুলে দেখ, চাঁপা। অকারণ প্রশ্ন করবি না!
আমি খুশি হয়ে উপরের র‍্যাপিং পেপারের প্যাকেটটা ছিঁড়ে দূরে ছুড়ে দিলাম।
শাড়ি। নীল রঙের শাড়ি আর ফুল বিজুতে পরার জন্য হলুদ স্কার্ট, ব্লাউজ আর ওড়না!
আমার সব পাহাড়ি বিন্ধুরা বিজুতে কী সুন্দর করে সাজে! এখন তো আমার অনেক পরিচিত বাঙালি মেয়েদেরকেও দেখি মাথায় ফুলের মুকুট আর হাতে গলায় ফুলের গয়না পরে বিজুতে আসতে৷ হলুদ স্কার্ট,ওড়না পরে ওরা পাহাড়ি গানের তালে তালে নাচে, গান গায়, হেসে ওঠে খিলখিল করে।
বিজু উৎসবের আগে কৃষ্ণা দিদির কাজ অনেক বেড়ে যায়। বিজু মানেই ফুলের উৎসব। সব ফুলগুলোকে অনেক যত্ন, আদরে রাখা হয় কয়েকটা দিন – এই উৎসবের আগে আগে। নিজেদের সর্বোত্তম সুন্দর আকারে এসে যায় ওরা তখন। তবে বিজুর আগের রাতটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এইদিন বাগানটাকে কড়া পাহারায় রাখতে হয়। অন্ধকার ঘন হলেই ফুল চুরির উৎসব শুরু হয়। যত ফুল চুরি হয়, অত ফুল আসলে লাগেও না কারো। কিন্তু চুরি করাটাই যেন ওই দিনের বিশেষ আনন্দ, তাই অকারণেই ফুলচুরির এডভেঞ্চারে নেমে যায় ছোটো ছেলেমেয়ের দল।
কৃষ্ণা দিদি সারারাত জাগে সেদিন। তার ফুলগুলোকে পাহারা দেয়। আর সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে পড়ে যার যার চালানের ফুল তাকে তাকে বুঝিয়ে দিতে।
এতদিন বিজুতে গেলেও মামি আমাকে কখনো পাহাড়িদের অনুষ্ঠানের জামা-শাড়ি দেয়নি। আমাদের চার বোনের কাউকেই না। অন্য সময় আমরা এই বিশেষ স্কার্ট আর ব্লাউজ পরতে পারলেও কোনো উৎসবে কখনো পাই না! আমরা যে পাহাড়ি নই, আলাদা এদের থেকে, এই বিভেদটা খুব সূক্ষ্মভাবে আঁচিয়ে রাখে মামি। জুম ঘরের সমস্ত চাষীদের কাছে মা হলেও, মামি তাদেরকে প্রজা ভেবে করুণাই করে যায় শুধু!
এবার বিজুতে এই হলদে থামি পরলে কি মামি আমায় খুব বকবে? লুকিয়ে পরব তবে। বাড়ি থেকে অন্য রঙের জামা পরে বেরোবো। এখানে এসে জামা পালটে থামি পরে নেবো। প্রমি আর আমি একসাথে বিজুতে যাব, কৃষ্ণা দিদির কাছ থেকে ফুলের গয়না নেবো।
প্রমি আমার কলিজার বান্ধবী। ওর সুবাদেই এই রাজবাড়িতে আসার শুরু আমার। তারও আগে বাবার সাথে সম্পর্ক ছিল প্রহ্লাদ দাদার বাবা হাসনাইন আংকেলের। জোহরা মাওয়ের ছেলে – হাসনাইন আংকেল। আমার বাবা আর হাসনাইন আংকেল ছিলেন বন্ধু। তারা এক সাথেই পড়তেন। প্রকৌশল বিদ্যার ছাত্র ছিলেন দুজনেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে আমার বাবা চাকরিতে ঢুকে গেলেন আর জো-মাওয়ের ছেলে, তার মাতামহকে দেওয়া কথা অনুযায়ী পাহাড়েই ফেরত এলেন। তবে বিয়ে করে নিয়ে আসেন অন্য এক সহপাঠীর ছোটো বোন সঞ্চিতাকে। সঞ্চিতা আন্টি সনাতন ধর্মাবলম্বী বাবার মেয়ে। তিনিও মুসলমান হয়ে সাজেদা নাম নিয়ে পাহাড়েই এসে উঠলেন।
আমার মা মরে গেলে, বাবাও এসে এই পাহাড়েই ঘর তুললেন। হাসনাইন আংকেলই নিয়ে এসেছিলেন বাবাকে। স্ত্রীর মৃত্যুশোকে বাবা এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে হাওয়া বদলই একমাত্র সমাধান বলে দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। তাই এই পাহাড়ে বেড়াতে এসে, এখানেই স্থায়ী হয়ে যান বাবা। জমির দাম কম ছিল, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নামমাত্র দামে পাহাড়ের পর পাহাড় কিনে নেন বাবা। আর ধনী বন্ধুর সাহায্যে খুব সহজেই বাড়ি-গাড়ি করে ফেলেন।
সাত বছর একসাথে ছিলাম আমরা, সুখে এবং দুঃখে। কিন্তু বাবা মরে যাওয়ার পরের সময়টাতেই কাউকে পাশে পাইনি আমি। এইজন্য মামি একদম দেখতে পারেন না জো-মাওয়ের পরিবারের কাউকেই। মামির কী দোষ – আমাকে হাত পুড়িয়ে ভাত রাঁধতে মামি তো নিজের চোখেই দেখেছিলেন!
কিন্তু আমি তো জানি সত্যিটা।
হাসনাইন আংকেল আর সাজেদা আন্টি তখন বিদেশে ছিলেন, খুব একটা শক্ত অসুখ করেছিল আংকেলের। এত শক্ত যে অনেক চিকিৎসাতেও সারল না। বড়ো বড়ো দেশের বড়ো বড়ো ডাক্তারের চিকিৎসাতেও না। তারা জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। দেশে এসে রাজধানী শহরের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন সাজেদা আন্টি। কিন্তু আংকেল একদম রাজি হননি। পাহাড়েই ফিরে এসেছিলেন। ফিরে এসে বন্ধুর মৃত্যুর অত বড়ো গুরুতর সংবাদ আরো যেন খানিকটা প্রাণশক্তি কেড়ে নিয়েছিলেন তার থেকে। বিছানায় পড়ে পড়ে বছর তিনেক টিকেছিলেন।
মামি বলেন জোহরা মাও-ও তো আসতে পারত। শিশু বয়সের ছোট্ট আমার খাবারটাও তো পাঠাতে পারত অন্তত! কিন্তু মামিকে কিছুতেই বোঝাতেই পারি না আমি, জো-মাওকে কেউ এখানে আসতেই দেয়নি। দূর থেকে দেখতে পেয়েই, দীনেশ কাকা, নুটিং দাদা, সুবিমল কাকা আর তিত্তেই দাদা বাঁশের লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন – মেখলি পাড়ার পবিত্র মাটিকে জো-মাওয়ের পায়ের ধুলো দিয়ে মাড়াতে দেবেন না বলে। মাও কীভাবে আসত!
এখনকার মতো এত সহজ ছিল না সেই দিনগুলো! আর আমার বাবার কেনা পাহাড়ের জমিগুলো নিয়েও ভয় ছিল তাদের। মাও সেগুলো অধিকার করে নিয়ে যদি আর জুম চাষীদেরকে বিনা শর্তে চাষ করতে না দেন, যেমনটা আমার বাবা দিতেন!
আমি সবদিক থেকেই একা হয়ে পড়েছিলাম সেই দিনগুলোতে!
মামি তাই দুই চোখে দেখতে পারেন না জো-মাওয়ের পুরো পরিবারটাকে! জো-মাও ও মামিকে দেখতে পারেন না। তিনি মনে করেন আমার সমস্ত সম্পত্তির উপর লোভ মামির। আমাকে দেখলেই বলে ওঠেন,
— এই যে মামিমায়ের সোনার ডিমপাড়া রাজহাঁস, কী করতে এসেছিস এখানে?
এইজন্য এই বাড়ির তেতলায় যেতে চাই না আমি। কিন্তু ওখানেই তো সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ এই বাড়ির! থরে থরে আচারের বয়েম সাজানো আছে বারান্দার কার্নিশ ধরে!
পূর্ব দিকের রোদ যখন ঘুরে ঘুরে মাথায় ওঠে, সেই টকটকে রোদ যেখানটাতে উপুড় হয়ে পড়ে সারাদিন ধরে, সেই জায়গাটা জুড়ে শত শত বয়ম মেলে দেন জো-মাও। কাঠের বড়ো হাতাটা সেই বয়েমে ডুবিয়ে দেন তিনি। তারপর হেসে হেসে বলেন,
— হাতটা পেতে দে দিকিনি!
আমি ডান হাতটা পেতে দিতেই হাতের পরে এক হাতা তেঁতুল, জলপাই, আম, আমলকি, কামরাঙার আচার এসে পড়ে!
তারপর পাশে একটা কাঠের পিঁড়ি পেতে দেন জো-মাও। আমার সাথে টুকটুক করে গল্প করেন।
— ও দিদিভাই, এবার জুমের ভুট্টা কেমন হলো বল তো? অজয় কি আজকেও ওর বউকে মেরেছে? টিকো ছেলেটা কত বড়ো হলো, বল দিকিনি? কলেজে যাস? কী পড়ায় সেখানে? কবিতা পড়ায়? সঞ্চয়িতা পড়ায় তোদের? টাগোর ভালোবাসিস? মেখলির উত্তরের উঁচু পাহাড়ের বাড়িটার ছেলেটা এবছরও এসেছে? তোর কোনো বোনকেই বিয়ে করবে ও ছেলে তাই না রে? বেশ হবে। বেড়াতে আসবে বলে বাড়িটা তুলেছিল ওরা। কী সুন্দর বাড়ি! যে বছর আমার বিয়ে হলো সেই বছর বাড়িটা উঠেছিল। আমরা কলেজ যেতে গিয়ে উলটো ঘুরে ওই বাড়িটা দেখে আসতাম। পালকিতে করে যেতাম আমি। অত সুন্দর বাড়িতে এত বছর কেউ থাকতে আসেনি। এখন ছেলেটা আসে, খুব ভালো। দেখতেও ভালো ও। আমার বাড়িটা দেখতেও এসেছিল কয়েকদিন। রাজার বাড়ি বলে দেখতে এসেছিল। তা সেই পুরোনো বাড়ি কি আর আছে? আমার কত পুরুষ আগের সে বাড়ি, কাঠ পচে ভেঙে পড়ছিল। ভেঙে, নতুন করে না গড়লে তো আর চলছিলই না! প্রহ্লাদের বই ভিজে যেত, আমার শুঁটকি আর শুকনো মরিচ, গম, ভুট্টা, আচার সবতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ছিল। পুরোনো দিন – যা ফুরিয়ে গিয়েছে, চাইলেই কি আর তা ধরে রাখা যায়?

ঝাপসা হয় জো-মাওয়ের চোখ, যেন পুরোনো দিনে হারাতে চায়। সেই দিনগুলো আমারও মনে পড়ে। সিঁড়িগুলোতে লাফ দিয়ে লাফ দিয়ে উঠতাম আমি, প্রমি আর প্রভাত দাদা। লুকোচুরি খেলতেই পারা যেত না। মচমচ করে শব্দ হতো এর গায়ে। ক্যারক্যার করে উঠত দরজাগুলো! কান খাড়া করে রাখলেই লুকোনোর জায়গাটা বোঝা যেত। ধরা পড়ে যেতাম সহজেই!

আমি চুপচাপ নেমে আসলাম দোতলায়। প্রমির ঘরে। কলেজ ছুটির দিনে ও অনেক বেলা করে ঘুমায়৷ ডাকতে গেলেই বিরক্ত হবে।
আজকে অনেকটা সময় এই বাড়িতে থেকে যেতে হবে আমাকে। যতক্ষণ না চৌধুরী আকরামুজ্জামান নামের লোকটা এই অচিনপুর ছেড়ে বহুদূরে ফেরার পথটা ধরেন! মামি আশেপাশের সব জায়গাতে খুঁজলেও এই বাড়িতে আসবেন না। মেখলি পাড়া থেকে বরণ পাড়া আসতে ঘন্টাখানেক সময় লেগে যায়। গাড়ি ছাড়া কেউ আসতে চায় না। আমি যে অমন জঙ্গুলে রাস্তা দিয়ে শর্টকাট নিই তা তো মামি জানেই না…

চলুক….
আফসানা আশা
কপি কইরেন না, প্লিজ লাগে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here