অচিনপুর পর্ব -০৫

#অচিনপুর – ৫

এই বাড়ির সমস্ত মানুষগুলো ধর্মে-বর্ণে একাকার হয়ে আছেন।
হাসনাইন আংকেলের বাবা বাঙালি মুসলমান সুলতান আর মা পাহাড়ি মেয়ে ইখিন। বাবার ধর্মে বড়ো হয়ে মুসলমান হাসনাইন পড়াশোনা করতে রাজধানী শহরে গিয়ে, বউ করে আনেন সনাতন ধর্মের মেয়ে সঞ্চিতাকে, মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে যে সাজেদা নাম নিয়েছে!
সন্তানদেরকে ইসলামি নিয়ম কানুনের শিক্ষা দিলেও সাজেদা আন্টি সেইসব ধর্মীয় আচার পালন করেন কি না আমি জানি না।
হাসনাইন আংকেল বেঁচে থাকতে সাজেদা আন্টিকে সিদূরে সিঁথি রাঙাতেও দেখেছি আমি। আর এখন নিপাট সাদা থান শাড়ি পরা মহিলাটার বয়স কখনো কখনো জো মাওয়ের থেকেও বেশি মনে হয় আমার কাছে। পাহাড়ি রাজবংশের বড়োবধূটি উঠোনে বসে জবাই করা হাঁসের পশম পরিস্কার করছিলেন।
আমি কাছে যেতেই বললেন,
— প্রমি জাগল না?
আমি বেজার মুখ করে বললাম,
— নাহ!
— এদিকে আয়। রোদ উঠেছে কত! রোদে পিঠ দিয়ে বস।
আমি ভয়ে ভয়ে গেলাম না! পাশেই ডন বসে আছে। রোদে ওর সারা শরীর ঝিকমিক করছে। চোখে আহ্লাদি ভাব। তাতে আমি গললাম না। ওর বিরাট বপুতে অনেক ভয় আমার। আমাকে দেখতে পেয়ে নড়েচড়ে বসল ওটা। কেউ কেউ করে আদুরে সুরে ডেকে উঠে নিজের বাঁকা লেজটা নাড়িয়ে দিলো৷ আমি আরো বেশি সংকুচিত হয়ে গেলাম।
সাজেদা আন্টি ডনকে তাড়িয়ে দিলেন,
— যা, যা তোর ঘরে গিয়ে ঘুমো।
আলাস্কান ম্যালমিউট জাতের কুকুরটি তার বিশাল শরীর নিয়ে রাজার মতো হেলেদুলে প্রস্থান করল।
আমি গিয়ে সাজেদা আন্টির পাশে বসলাম।
এখান থেকে সুমঙ্গলকে দেখা যাচ্ছে। এই বাড়ির বহু বছরের চাকর। রাজা দেবাংশুর আমলের। এখনও লাঠি হাতে নিয়ে সদর আগলে বসে থাকে। বুড়ো হয়ে কুঁজো হয়ে গেছে। বয়সের ভারে শরীর ভেঙে গিয়েছে, একটা ছোটোখাটো মানুষ দেখা যায় ওকে। কিন্তু ওর চোখদুটো ভয়ংকর। চোখ দিয়েই যেন রাজবাড়ি আগলে রাখবে। ওর ছেলেও বংশানুগত চাকর। বনমালি নাম। বনমালির মেয়ে চিনাও এই বাড়ির চাকরি করে।
চিনা কতকগুলো শুকনো ডাল-কঞ্চি এক করে আগুন বানিয়ে ফেলল। সেই আগুনে হাঁসের চামড়ার পশমগুলো পোড়াতে শুরু করল। পটপট শব্দের সাথে সাথে দপদপ শব্দ করে হাঁসের চামড়ার নিচের তেলও গলে আগুনে পুড়তে শুরু করলে একটা চামড়া পোড়া গন্ধে ভরে গেল চারপাশটা। সাজেদা আন্টি মুখে আঁচলচাপা দিয়ে চিনাকে বললেন,
— আজ আমার উপবাস। আমিষ রাঁধব না। আমি দেখিয়ে দিলে তুই রান্না করতে পারবি না?
চিনা মাথা নাড়ল।
সাজেদা আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— তুই কি হাঁসের মাংস খাস? দুপুরে খেয়ে যা এখানে।
আমি মনে মনে হাসলাম। আজ দুপুরে এখানেই থাকতে হবে আমাকে। সাজেদা আন্টি না বললেও এখানে খেতে হতো আমাকে। জিজ্ঞেস করায় লজ্জার হাত থেকে বেঁচে গেলাম।
— হাঁস খাই না!
— জো-মাও তো সেদ্ধ সবজি খাবে শুধু। সাথে মরিচভর্তা দিলে প্রমিও খাবে। প্রহ্লাদ দুপুরে আসবে না। আর প্রভাত শুধু খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করে। তা অচিনপুরে এসে থাকেই তো দুটো দিন। হাঁসগুলোতে তেল এসেছে। ওর পছন্দও। চিনাই রান্না করে দিতে পারবে। চিনার হাতে মাছ ভালো হয় না। মাংস ভালো হবে। তোকে কি ডিম করে দেবো?
আমি মাথা নাড়লাম। ওই সই! চলবে।
হাত ধুয়ে এসে পাশে বসলেন সাজেদা আন্টি। আমাকে বললেন,
— তোর মা-ও হাঁসের মাংস খেতে চাইত না। আমাদের বাড়িতে খুব হতো। ভাইয়ার বন্ধুরা গেলেই আগে হাঁস কাটা হতো। নারকেল দুধে তেল উঠিয়ে মাংস কষাত আমার মা। আর ছিটরুটি সাথে। সবাই চেটেপুটে খেত, শুধু তোর মায়ের জন্য ডিম ভেজে দিতে হতো।
সাজেদা আন্টি প্রায়ই আমার মায়ের প্রসঙ্গ তোলেন। আমার মায়ের গল্প বলেন। আর প্রমাণ করতে চান, আমি একদম আমার মায়ের মতো। আমার একটুও পছন্দ হয় না এসব কথা। মায়ের কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করে না। মায়ের ছবি দেখতে ইচ্ছে করে না। মাকে মনে করতে ইচ্ছে করে না। অচেনা আর অদেখা একটা মানুষের জন্য বুকটা ভারী করা কোনো কাজের কথা নয়। ওই মানুষটা আমার অজানাতেই থাকুক না!
আমি এড়িয়ে যাই সাজেদা আন্টিকে।
তাঁতঘরে মাকু চলার ঘুটঘুট শব্দ হচ্ছে। রাজবাড়ির খানিকটা দূরেই বিশাল চালাঘর। অনেকগুলো তাঁতে দিনরাত কাপড় বোনা হচ্ছে। বহুদিন এটা অলস বসে ছিল। প্রহ্লাদ দাদা সম্প্রতি আবার বিনিয়োগ করেছে। শ্রমিকরাও রাজবাড়ির কাজে ফিরে এসেছে। একসময় এরাই তাঁত ছেড়ে জুমে চলে গিয়েছিল। ওদের রাজা দেবাংশুকে একঘরে করে দিয়েছিল। তার জীবিকার পথও বন্ধ করতে চেয়েছিল। উল্লখযোগ্য সংখ্যায় বাঙালিরা তখন পাহাড়ে এসে সেটেল হচ্ছিল বলে পাহাড়ের রাজাকে নিঃসম্বল হতে হয়নি তখন। অচিনপুর গ্রামের বাইরে অচিনপুর শহরেই অনেকগুলো ব্যবসা ছিল তার।
প্রহ্লাদ দাদার চেষ্টায় তাঁতঘরে আবার ফিরে এসেছে তাঁতিরা। পাহাড়ের চাষের জমি কমে যাওয়াটাও তার একটা কারণ। বাঙালিরাই এখন সংখ্যায় বেশি অচিনপুরে। তারা পাহাড়ের পর পাহাড় কিনে নিয়েছে পানির দামে। হঠাৎ কিছু বেশি নগদ টাকার লোভে পড়ে, পাহাড়ের বোকা মানুষগুলো জমি ছেড়ে দিয়ে এখন টাকা ফুরিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে৷ অনেক জমি আবার সেটেলাররা জবরদখলও করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদে স্বনির্ভর কৃষকেরা ক্রমশ জমি হারিয়ে কর্মহীন হচ্ছে।
এইজন্যই জীবিকার তাগিদে ওইসব কৃষকরা ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি আর প্রথার অনেক বাধানিষেধ আর নিয়ম কানুনের বেড়া ডিঙিয়ে কৃষি বাদে অন্যান্য পেশায় কর্মরত হতে শুরু করেছে।
বহুদিন এই বাড়িটা নিঝুমপুরী হয়ে ঘুমিয়েছিল। আবার কর্মচঞ্চলতায় জাগতে শুরু করেছে!
প্রমিও ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। আমাকে দেখে বলল,
— তোর চাচা আবার এসেছে?
আমি মাথা নাড়লাম।
ও বলল,
— তুই লোকটাকে এত ভয় পাস কেন? সে কি ভয়ংকর দেখতে? মনস্টার? আমাদের সুমঙ্গলের মতো? তোকে খেয়ে ফেলবে নাকি মারবে ধরে?
আমি মাথা নাড়লাম,
— নাহ! সেরকম না। বাবার মতো দেখতে। কিন্তু লোকটাকে আমার ভালো লাগে না!
ও বিজ্ঞের মতো সাজেশন দিলো,
— আমার মনে হয় ওনার সাথে একবার দেখা করা উচিত তোর। শুনে তো দেখবি লোকটা কী বলতে চায়! বাড়িতে মামি আছে, মামা আছে, আপুরা আছে। তাদের সামনে থেকে তো তোকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে না! আবার এমনও হতে পারে, সে খুব ভালো কিছু বলতে চায় তোকে। দেখ, তোর বাবা কোনো বিশাল প্রপার্টি রেখে গেছে কিনা তোর নামে! রাতারাতি মাল্টিবিলিয়নার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না!
আমি ঠোঁট উল্টালাম!
— আর ওই বড়ো সাদা বাড়ির ছেলেটা এসেছে বুঝি? সৌমিক?
— হুম!
— কাল রাতে এস্রাজ বাজতে শুনেছি। কবে এসেছে?
— দুই দিন আগেই।
রাজবাড়ির এদিক থেকে সৌমিকদের বাড়িটা কাছেই। বরণপাড়ার এদিক দিয়ে রাস্তাও আছে। খুব কম মানুষের যাওয়া আসা বলে এই রাস্তাটা সাধারণত কেউ ব্যবহার করে না। ওদিকের পাহাড় আর বন বেশ গহীন। ওদিকের পাহাড়ে ডুলে জাতির বসবাস। ওরা কারো সাথে মেশে না, জীবনযাত্রাও আলাদা। আর আলাদা থাকতেই পছন্দ করে ওরা।
প্রমি বলল,
— সৌমিক এবার তোকে প্রপোজ করবে, দেখিস!
অনেকদিন ধরে প্রমির এই কথা শুনে আমি যারপরনাই বিরক্ত। ওর ধারণা এই অচিনপুরে সৌমিক আসেই শুধু আমাকে দেখতে!
আমি উড়িয়ে দিলাম ওর কথা।
প্রভাত দাদার আনা নতুন শাড়িটা গায়ে মেলতে মেলতে ও বলল,
— দাদার পছন্দ খুব বিশ্রী! ফুল বিজুর স্কার্ট অন্তত দশটা আছে আমার। আবারও আরেকটা!
— আমার তো নেই!
— শুধু তোর জন্যই আনত এই স্কার্ট! আমি মোবাইল চেয়েছিলাম, সেটা আনেনি!
— মোবাইল দিয়ে কী করতি? মেখলি পাড়া, বরণ পাড়ার কোথাও নেটওয়ার্ক আছে?
শাড়িগুলো ভাঁজ করে আলমারিতে তুলে ফেলেছে প্রমী। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
— মোবাইলে গেম খেলতে পারতাম। আর শহরে গেলে গান লোড করে আনা যেত। আর এমনিতেও শহরে ঢুকলেই নেটওয়ার্ক কাভারেজ পাওয়া যায়।
আমি চুপিচুপি জানতে চাইলাম,
— প্রহ্লাদ দাদা শহরে বাসা করবে, তাই না?
— সেরকমই মনে হচ্ছে। তোকে কে বলেছে?
— অর্পিতা, পিয়েত্রা, সুনয়ন ওরা সবাই বলাবলি করছিল কলেজে। য়েন য়েন দিদি নাকি তোদের বাড়িতে থাকবে না৷
প্রমি রুষ্টমুখে বলল,
— তুই সবাইকে সব কথা বলে দিস, স্বর্ণ। এইজন্য তোকে কিছু বলি না আমি! মাওকে এই কথাটা বলিস না যেন, খুব কষ্ট পাবে।
— যাহ! বলব না আমি। তোর নতুন রূপার গয়নাটা আমাকে দেখা তাহলে!
প্রমি রেগে লাল হয়ে গেল।
মাওকে এত আগলে রাখে এরা!
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে আমি চিলেকোঠার ঘরটাতে গেলাম। এটা প্রভাত দাদার স্টুডিও। আমি উঁকি দিলাম। প্রভাত দাদা খুব ব্যস্ত। ইজেল দাঁড় করিয়ে দ্রুত হাতে ব্রাশ টেনে যাচ্ছে। কী ব্যস্ত ও এখন! আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কোঁকড়াচুলো মুখটার সমস্ত পেশীগুলো শক্ত হয়ে এসেছে। চোখের দৃষ্টিতে ক্ষীপ্রতা। যেন নষ্ট করার সময় নেই একফোঁটাও। এই দুনিয়াতে ও আর ওর ওই ছবি ছাড়া আর কিছু নেই।
ক্যানভাসে ছবিটা ফুটতে শুরু করেছে। এক সময় সেটা একটা সম্পূর্ণ ছবি হলো। লুঙি, কাঁচুলি আর কোমরে ওড়না বাঁধা একটা মেয়ে ওলি নদীর জলে ফুল ভাসিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটার মাথায় ফুল, হাতে ফুল, কানে আর গলায়ও ফুলের গয়না! কিন্তু মুখের জায়গাটা খালি। চোখ-মুখ নাক কিছু নেই! এমন না যে প্রভাত দাদা মানুষের মুখ আঁকতে পারে না। কাঠকয়লা দিয়ে সুমংগলের যে একটা দারুণ ছবি এঁকেছে ও, তাতে চোখদুটো এত জীবন্ত যে ওদের সদর তোরণে ঝুলিয়ে দিলে লোকে ভাববে সুমংগলই তাকিয়ে রয়েছে নিষ্ঠুর চাহনি দিয়ে। মানুষের মুখ আঁকা অসংখ্য ছবি আছে এই স্টুডিওটাতে। শুধু মুখ না আঁকা কয়েকখানা ছবি আলাদা করে রাখা – এই কয়টাই আবার একটু বেশি প্রিয় প্রভাত দাদার!
আমার খুব কৌতুহল হলো আজ। মুখটা বাড়িয়ে দিয়ে জানতে চাইলাম,
— ও প্রভাত দাদা, এটা কি তুমি আমাকে এঁকেছ?
প্রভাত দাদার মুখটা কুঁচকে গেল। ও ক্যানভাস থেকে চোখ না সরিয়েই বলল,
— তোর কীসে মনে হলো যে তোকে এঁকেছি?
আমি ঢোঁক গিলে বললাম,
— থামি পরা মেয়ে তো আগে আঁকোনি!
— কই? ওই যে আরো আছে। মাওকে এঁকেছি, সেটাতে ও তো থামি পরা আছে সে।
আমি মিনমিন করে বললাম,
— না, আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে, এই মুখ না আঁকা ছবিগুলোর সাথে আমার মিল আছে।
আমার দুটো বেণির একটা টেনে দিয়ে প্রভাত দাদা বলল,
— যেদিন নিঃসন্দেহ হবি, সেদিন চিনতে পারবি এটা আমি কাকে এঁকেছি। বুঝেছিস বোকা চাঁপা ফুল? আজকে চিনাও থামি পরেছে, ওই দেখ!
জানালা দিয়ে দেখিয়ে দিলো প্রভাত দাদা, আমিও তাকালাম। ছাগলগুলোকে ঘরে ঢুকিয়ে হুড়কো দিচ্ছে চিনা। আমার পরা থামির মতোই একটা থামি ওর পরনে!
আমার মন খারাপ করল। কেন যে প্রভাত দাদার আঁকা ছবির সাবজেক্ট হতে ইচ্ছে করে আমার, কে জানে! অথচ সবার ছবি এঁকে দিলেও আমাকে নিয়ে একটাও ছবি আঁকে না ও!
প্রমি হন্তদন্ত হয়ে ডাকল আমাকে,
— তোর মজনু এসেছে! বাবারে! কী প্রেম, এই বাড়িতেও চলে এসেছে তোকে খুঁজতে!
আমি প্রমির কথা বুঝতে পারলাম না। চোখ ছোটো করে তাকিয়ে রইলাম। আমি কিছু বলার আগেই প্রভাত দাদা বলল,
— কী বললি, প্রমি? কে এসেছে?
আমি কিংবা প্রমি কেউই কখনো প্রভাত দাদাকে এভাবে রেগে যেতে দেখিনি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইলাম।
প্রমি ভয়ে ভয়ে বলল,
— ওই যে বড়ো বাড়িটা, ওই বাড়িতে যে ছেলেটা আসে, সে এসেছে স্বর্ণকে খুঁজতে!
প্রভাত দাদা থেমে থেমে প্রশ্ন করল,
— তবে তুই যেন কী বললি?
প্রমি প্রায় কেঁদেই ফেলল,
— ইয়ার্কি করেছি দাদা!
প্রভাত দাদার মুখটা তরল হলো। ও প্রমির মাথায় হাত রেখে বলল,
— এমন পচা ইয়ার্কি আর কখনো করবি না। সম্পর্কে মজা থাকা দরকার, কিন্তু সম্পর্ক নিয়ে মজা করতে হয় না!
প্রমি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় যেতে বলে চুপচাপ নেমে গেল।
প্রভাত দাদার হয়তো কোনো কারণে মন খারাপ। এখন এখান থেকে চলে যাওয়াটাই শ্রেয়। আমি বেরিয়ে আসব, প্রভাত দাদা ডেকে বলল,
— ছেলেটা কে রে চাঁপা?
আমি রোবোটের মতো করে বললাম,
— ওই তো বড়ো বাড়ির ছেলে। নাম সৌমিক। রাজধানীতে থাকে৷ ও ইঞ্জিনিয়ার। আর খুব ধনী ওরা। বর্ষার সময়ে আসে। দুই মাস থাকে মেখলিতে।
— কই, আমি তো চিনি না!
— তুমি তো অচিনপুরে থাকোই মাসে দুই দুই চার দিন। এসেই কত কাজ করো! ব্যস্ত থাকো। আর সৌমিকও তো বরণ পাড়ার এদিকে আসে না। তাই চেনো না। হয়তো দেখাও হয়েছে রাস্তায় কোথাও বা শহরে। খেয়াল করোনি হয়তো। কিন্তু খেয়াল করা তো করার কথা! কী ভালো দেখতে ওকে, আর তেমনই ভালো মানুষ! তেমনি হাসিখুশি, আনন্দ করা মানুষ। ফুল ভালোবাসে খুব! যে দুই মাস ও থাকে মেখলিতে, সেই দুই মাস আমি রোজ ফুল দিতে যাই ওদের বাড়িতে।
— রোজ যাস?
— যাই তো! স্বর্ণচাঁপা, ডেইজি, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা সব ফুল দিয়ে আসি। ও ফুল খুব ভালোবাসে। যেদিন আমি যেতে পারি না, সেদিন ও নিজেই চলে আসে। কৃষ্ণা দিদির বাগান থেকে নিজেই ফুল তুলে নেয়। মামা মামি সবাই ওকে ভীষণ পছন্দ করে। খুব ভালো গান করে তো! এস্রাজ বাজায়, গিটার বাজায় আর দারুণ আড্ডা দেয়…
একটানে বলতে বলতে খেয়াল করলাম, প্রভাত দাদার চোখদুটো জ্বলছে। রাতের বেলা বাড়ি পাহারা দেওয়ার সময় অন্ধকারে আলাস্কান ম্যালমিউট জাতের কুকুর ডনের চেহারা যেমন করে জ্বলে ঠিক তেমন করে….

চলুক…
আফসানা আশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here