অচিনপুর পর্ব -১৫

#অচিনপুর- ১৫

টেস্ট পরীক্ষা শেষ হলো আমার। কয়েক মাসের ব্যবধানে আরেকটা বড়ো পাবলিক পরীক্ষায় বসব।
আমি কোচিংয়ে যাই নিয়মিত। পড়াশোনাও করি। কিন্তু বড়ো আপা আর ফেরেনি। শুনছি এই সপ্তাহেই ওর আর উজ্জ্বল দাদার বিয়ে হবে। তারপর ওরা রাজধানী শহরে চলে যাবে। মামি ওকে ফিরিয়ে নিতে এসেছিল এই কয়েকদিনেই কয়েকবার করে, ও একদম রাজি হয়নি। আমার বাবার করা বেশ কয়েকটা বীমা পলিসি থেকে অনেকগুলো টাকা এসেছিল। সেসব থেকে একটা টাকাও মামি নষ্ট করেনি। অনেক কষ্ট করে, অনেক অভাবে সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছে কিন্তু ওই টাকাটা ধরে না। আমাদের সব বোনেদের উচ্চতর পড়াশোনা আর বিয়ের খরচ বাবদ বড়ো অঙ্কের ওই টাকা মামি আলাদা করে রেখেছে। ওই টাকা দিয়েই বড়ো আপাকে চেম্বার করিয়ে দেবে লোভ দিয়েছিল। বিদেশে পড়তে পাঠাবে তাও বলেছিল, সেসব কিছুই কানে নেয়নি বড়ো আপা। উদাস হয়ে বলেছিল,
— আমার বাবার অত টাকা নেই, মা!
— আমার আছে, আমি টাকা দেবো।
— কোথায় পাবে টাকা? ওই স্বর্ণকে ঠকানো টাকাটা তো? ও তুমি তোমার কাছেই রাখো। ওই টাকাতে কখনো কারো ভালো হতে পারে না, আমারও ভালো হবে না!
মামি বিরস মুখে কেঁদে ফেলেছিল,
— স্বর্ণ কি কখনো মানা করবে তোকে টাকা দিতে? ও কি তোদের তেমন বোন? আমি পেটে ধরিনি ওকে, কিন্তু ও কি তোর আপন বোনের চাইতে কম?
আমি কেঁদে দিয়ে মামিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। কিন্তু বড়ো আপার মন একটুও গলল না। এতটা পাষাণ হয়েছে ও! কঠিন করে বলেছিল,
— আমি বোকা স্বর্ণ নই, মা। যেমন ইচ্ছে তেমন করে আমাকে চালাতে পারবে না তুমি। তুমি বাড়ি যাও। গিয়ে মশলায় কষিয়ে স্বর্ণর নরম মাথা চিবিয়ে খাও। আমি আর ওই বাড়িতে ফিরব না।
আমরা মন খারাপ করে ফিরে এসেছিলাম।
বড়ো আপা চলে যাওয়াতে সবারই মন খারাপ হয়েছে। আমাদের পরিবার ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। মামি সকাল সকাল থাপ্পড় মেরে বসল মেজ আপাকে। তারপর চুল ধরে টেনে গিয়ে গেল ঘরের ভিতর। আমরা ওর কান্নার শব্দ শুনলাম শুধু। অসুস্থ মানুষটা! ওর চিকিৎসা না করিয়ে মামি ওকে মারল এইভাবে! ওর জন্য আমার কী যে কষ্ট হচ্ছে!
গুমরে কাঁদলাম আমিও। ফিসফিস করে প্রার্থনা করলাম, আমাদের পরিবারটা আবার আগের মতো হয়ে যেত যদি!
অসুখে পড়ায়, তারপর পরীক্ষা বলে অনেক দিন কৃষ্ণা দিদির নার্সারিতে যাওয়া হয়নি। আজ বিকেলের ফুল আমি তুলব বলে দুপুরের একটু পরেই বাগানে ঢুকে পড়েছি। সারাবাগানে প্যাচপেচে কাদা। পা দেবে যাচ্ছে নরম মাটির ভেতর। কিছু কিছু জায়গায় ইট বিছানো। ইটে পা পড়লেই ঘন কাদা পিচিক করে ছুটে বেরুচ্ছে। দোলনচাঁপা, কামিনি, স্পাইডার লিলি ফুটে আছে৷ বর্ষার ফুল সব রাতে ঘ্রাণ ছাড়ে – কিন্তু কৃষ্ণা দিদির বাগানটা দিনেও সুবাসিত। আমি ঘ্রাণে মাতোয়ারা হতে হতে কৃষ্ণা দিদির কাছে গেলাম। ও একটা টবের নিচে জমে থাকা পানি ফেলে দিচ্ছিল। টবটাতে একটা নতুন গাছ। ছোটো ঘন্টার মতো, কিন্তু মাথা উঁচু করে ঝুলে আছে । হলদে ফুলে বেগনে ছটা! আমি জানতে চাইলাম,
— কী গাছ ওটা?
— আসল নাম গুলনার্গিস। লোকে ডে-লিলিও বলে। তুমি পানির ভেতর এলে কেন, দিদি? আবার অসুখ করবে।
— না করবে না। গোলাপের ডালগুলো ছেঁটে দেবো? কদম লাগাও না কেন তুমি?
— প্যালেকে বলেছি। ও ডাল ছাঁটাই করে দিয়ে বাগান পরিস্কার করে দিয়ে যাবে।
— আমি কী করব তবে?
— তুমি কতকগুলো সুখদর্শন আর রজনীগন্ধার স্টিক কেটে নেও। গোলাপ ফুটেছে অনেক। দোলনচাঁপাগুলো সব তুলে ফেলবে। একটু পরেই জিপ আসবে৷ গোলাপ আর রজনীগন্ধার বড়ো একটা অর্ডার আছে। সামনের বছর কদম লাগাতেই হবে রে, দিদি! রাজধানীতে বিশাল ডিমান্ড। বড়ো বড়ো চালান যাচ্ছে, আমি সেদিন দেখে এলাম শহরে। আর বেলি-টেলি কী কতকগুলো পাবে, সব তুলে দিও।
আমি ফুলের ঝাঁপি নিতেই কৃষ্ণা দিদি প্রশ্ন করল,
— মায়ন্তী বুড়িকে যেতে দেখলাম, তোমাদের বাড়িতে। তোমার মামির কি এই বয়সে আবার ছেলেপুলে হবে নাকি?
তারপর মুখ টিপে হাসল।
আমি রেগে গেলাম,
— তুমি খুব বিশ্রী কথা বলো, কৃষ্ণা দিদি। এমন করে বললে আমি আর কখনো তোমার কাছে আসব না। পাহাড়ের সবাইই তো মামির কাছে আসে, কত কী দরকারে!
— আচ্ছা বেশ, রেগে যেও না তো, দিদি! মায়ন্তী বুড়িকে তো ছেলেপুলে হওয়া বাড়িতে ছাড়া তেমন দেখা যায় না, তাই অবাক হয়েছি। তোমাদের বাড়িতে তো বউ নেই আর। বোনেদেরও বিয়ে থা হয়নি। এইজন্য জানতে চেয়েছি। যাও, তুমি ফুল তোলো গে যাও! কিছু বললেই ছ্যাৎ করে ওঠো কেন, দিদি?
বর্ষার পানিতে ভিজে ভুজে ফুলগুলো যেন আনন্দে ঝলমল করছে। নয়নতারার বীজ থেকে গাছ হয়ে হয়ে একটা সাইড পুরো ভরে আছে। মধুমালতী, দোপাটিতে পুরো বাগান রঙিন হয়ে আছে। এসব ফুল তোলে না কৃষ্ণা দিদি। এগুলোর নাকি ডিমান্ড নেই। আমি কয়েকটা তুলে নিলাম ঝুড়িতে। জিপ আসতেই ঝুড়িগুলো সব তুলে দিলাম ওতে। ফুলে ভরা ঝুড়ি, জিপ ভরা ফুলের ঝুড়ি – দেখতেই মুগ্ধতা! এক গোছা রজনীগন্ধা, গুলনার্গিসের কয়েকটা ছড়া, আর আলাদা করে তোলা দুমুঠো দোপাটি ও মধুমালতী, আমার ঝাঁপিতে নিলাম আমি। সৌমিককে দেবো ওগুলো। ও ভীষণ খুশী হবে। রজনীগন্ধা আর গুলনার্গিসগুলো খুব সুগন্ধিও ছড়াবে। কৃষ্ণা দিদি জিপে উঠে চলে যেতেই আমার বেলিফুলের কথা মনে পড়ল। আগাছার মতো বেলির গাছ হয়েছে এবার এই বাগানে। সারা বাগানে যত্র তত্র ছড়িয়ে আছে। আমি দুটো ডাল বাড়িতে লাগিয়েছিলাম সেগুলোতেও ফুল এসেছে। কয়েকটা ফুল তুলে একটা মালাও গেঁথে নিলাম চটপট করে।
অনেক দিন পরে এসেছি আমি এই বাড়িতে। আমাকে দেখেই সৌমিক খুশি হয়ে উঠল। আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
— আমার অসুখ করল, তুমি আমাকে দেখতে যাওনি কেন?
— আমি যে রোজ গেলাম। রোজ গিয়ে কৃষ্ণার বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম!
— রোজ যেতে? সে তো তবে ফুল নিতে!
— সেটা ভুল কথা। ফুল না, আমি আমার ফুলপরীকে দেখতে যেতাম।
আমি হেসে হেসে বললাম,
— তবে বাড়িতে কেন যেতে না? মামি তো কতবার ডেকেছেও তোমাকে। ওই দিন বারবিকিউ করলাম সেদিনও কিংশুককে পাঠিয়ে দিয়েছিল মামি, তোমাকে ডাকতে।
— তোমাদের বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে না।
— এ মা কেন? মামা, মামি সবাই তোমাকে কত পছন্দ করে!
— কিন্তু আমি পছন্দ করি না।
— কাকে?
— তোমাকে ছাড়া আর কাউকেও আমি পছন্দ করি না, ফুলপরী। তাই তোমার বাড়িতে গেলে বড্ড বোকা বোকা লাগে নিজেকে। আর ওরা তোমাকে ডেকেও দেয় না। আমি নিজে থেকেও বলতে পারি না, তোমাকে ডেকে দেওয়ার কথাটা। তাই তোমার বারান্দার নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। রাত্রিবেলা যেতাম – চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। যেন অন্য কেউ আমাকে দেখ ফেলে বাড়িতে না ডাকে তাই সবচেয়ে অন্ধকারে মিশে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
আমার শরীরে কাটা দিতে শুরু করল। সৌমিক কী বলতে চাইছে স্পষ্ট হওয়া দরকার। আমি যেটা ভাবছি, সেটাই কি ও বলতে চাইছে? ধরা গলায় বললাম,
— ছোটো আপাকে পছন্দ করো না তুমি?
সৌমিক আমার হাতদুটো চেপে ধরে বসালো আমাকে। তারপর ও বসল আমার পায়ের কাছে। আমার চোখে চোখ রেখে বলল,
— খুব স্পষ্ট করে বলছি, ফুলপরী। একদম মুখস্থ করে ফেলবে। আমি তোমার ছোটো আপা মানে বিন্নিকে একদম পছন্দ করি না। পছন্দ করা দূরের কথা, আমার অপছন্দের মানুষের তালিকায় ও শুরুতে আছে। এত গায়ে পড়া মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি। কিন্তু ও তোমাকে ভালোবাসে তাই অপছন্দ কাটিয়ে ওর সাথে ভদ্র থাকি আমি। এইটুকুই। তোমার সমস্ত ভালো লাগাকে আমি ভালো লাগাতে চাই, তোমার সমস্ত ভালোবাসাগুলোকেও আমি ভালোবাসি।
সৌমিকের চোখের ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে যেন অজস্র কথা। কত সে না জানি ব্যকুলতা, কত না পড়তে পারা ভাষা – আমার গায়ে কাঁটা দিলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। রজনীগন্ধাগুলোর গোড়া কেটে ফুলদানির পানিতে ভিজিয়ে দিলাম। গুলনার্গিসগুলোকে রাখলাম জানালার কার্নিশে, পানি ছিটিয়ে দিলাম ওর গায়ে। বেলিফুলের মালাটা সৌমিকের টেবিলের উপর রেখে দিলাম। বললাম,
— আজ সব সুগন্ধি ফুল এনেছি গো! রাত্রে ঘ্রাণে ভেসে যাবে তুমি। কেমন চমৎকার ঘুম হবে, বলবে আমাকে কাল সকালে, কেমন?
সৌমিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম,
— আচ্ছা, তুমি তো ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু চাকরি করো না? এরকম দুই মাস কোনো অফিস ছুটি দেয়?
— আমার দাদা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কাকারা, ফুফু, বাবা সবাই আর্কিটেক্ট। দাদার কনসালটেন্সি ফার্ম ছিল। সেটা এখন কনস্ট্রাকশনও করে। আমার বাবার অফিসে চাকরি করি আমি, সেটা বলতে পারো। এই পাহাড়ে আমাদের খুব একটা দামি সম্পদ ফেলে রাখা আছে। ওটাকেই পাহারা দিতে দুই মাস এখানে এসে থাকতে হয় আমাকে।
— এই বাড়িটাকে এত দামি মনে কর তোমরা?
সৌমিক মুখ ভোঁতা করে ভুরু কুঁচকে তাকালো।
— বাড়ি? বাড়ির কথা কি কিছু বললাম আমি?
— বললে না দামী জিনিস? দামী সম্পদ? এই বাড়িটা ছাড়া এই অচিনপুরে আর কী আছে তোমাদের?
সৌমিক হাসলো। আমার চুল টেনে দিয়ে বলল,
— লোকে বোকা বলে সেটা ভুল। তুমি আসলে বোকাদের রাণী। বোকারাম, বোকাদের সর্দার!
আমি ঠোঁট উল্টালাম!
সৌমিক গিটারে টুনটুন করতে করতে বলল,
— চুটিয়ে পড়াশোনা করছ নাকি? এটা জেনে খুব ভালো লাগছে।
— প্রহ্লাদ দাদা বলেছিল, আমার বাবা নাকি চাইত আমি ইঞ্জিনিয়ার হই। কিন্তু এখন তো আর সেটা সম্ভব না। আমার মা, বাবাও নাকি খুব ভালো ছিল পড়াশোনায়। ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারলেও ভালো ছাত্র তো হওয়া সম্ভব। তাই আমি খুব পড়াশোনা করছি।
— অবশ্যই ফুলপরী। চেষ্টা করলেই পারবে তুমি। যে চমৎকার মেধা তোমার ধমনীতে তা বৃথা যাবে না। তুমি অবশ্যই খুব ভালো রেজাল্ট করবে।
— তুমি আমার বাবা মাকে চেনো?
সৌমিক থতমত খেয়ে গেল। বলল,
— আমি কীভাবে চিনব তাদেরকে?
— তবে যে বললে…
— ও তো তুমিই বললে বলে। তুমি বললে না, প্রহ্লাদ বলেছে তারা ইঞ্জিনিয়ার ছিল। তাই আমিও বললাম।
— ওহ!
মন খারাপ করে বললাম,
— কিন্তু কতটা পারব জানি না। কোচিং-এ ভর্তি হওয়ার সময় বড়ো আপা অনেকগুলো টাকা দিয়েছে। কলেজের স্যারেরা আবার মডেল টেস্ট করাচ্ছে। বুলেট টেস্ট নাম দিয়েছে। ওই টেস্টগুলো দিতে পারলে ভালো হতো।
— মামি টাকা দেবে না?
— মামিকে বলাই যাবে না। মামি তো এটাই চায় না যে আমি কোচিং করি। আমার কোনো কষ্ট মামি সহ্যই করতে পারে না। ছোটো থাকতে যেদিন যেদিন আবদার করতাম স্কুলে যাব না, মামি অমনি কম্বলে জড়িয়ে নিতো আমাকে। আর জুমের ধান সব নষ্ট হলো না এই বর্ষায়? নতুন করে আবার বীজধান কিনতে হচ্ছে তো! চাষিরা প্রতিদিনই বাড়িতে এসে হাতজোড় করে বসে থাকছে!
— তিন্নি দেবে না টাকা?
— বড়ো আপা কোথায় পাবে অত টাকা? লাইব্রেরির কাজটাও নেই এখন ওর। আবার শহরে বাসা করার খরচও আছে। মেডিকেল থেকে যা পায় ওর নিজেরই চলতে কষ্ট। ওকে আমি আর বলব না! আচ্ছা বাদ দাও, আমি প্রশ্নব্যাংক জোগাড় করে নিজে নিজেই পরীক্ষা দেবো। সেটা কামান টেস্ট হয়ে যাবে, বলো?
নিজের রসিকতায় নিজেই হাসলাম অনেকক্ষণ। তারপর বললাম,
— শুধু খাতাটা চেক করে দেওয়ার কেউ থাকলেই হতো। ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার লোকও তো থাকা দরকার, তাই না?
বিকেল পড়তে শুরু করেছে। একটু পরেই সন্ধে নামবে। আমাকে বেরোতে হবে। জানালায় দাঁড়িয়ে সৌমিক বলল,
— আমি যদি কিছু টাকা দিই তোমাকে?
আমি খুব অবাক হলাম। বললাম,
— তুমি কেন দেবে? মামি বলে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে নেই।
— আমি কি তোমার কেউ না?
— তুমি তো আমার বন্ধু। বন্ধুত্বে টাকা পয়সার আদান প্রদান করতে নেই। তবে বন্ধু হারিয়ে যায়।
সৌমিকের গভীর চোখজোড়া হাসল। বলল,
— ফুলপরী, তুমি আমাকে হারাতে চাও না?
আমি অনিশ্চিত মাথা নাড়লাম। এদের অনেকের অনেক কথাই আমি ঠিকঠাক বুঝি না। বোঝার ভান করে মাথা নাড়াতে হয়, তাই ভান করি।
— মনে করো, এটা তোমারই টাকা। আমি শুধু বাহক হয়ে তোমায় দিচ্ছি।
— সেটা কীভাবে হয়?
— হয় না? আচ্ছা বেশ, ধার নাও তবে। এইচ এস সির পরে অচিনপুরে টিউশন পড়িয়ে শোধ দিয়ে দিও!
আমি একটু ভাবলাম।। এই বুদ্ধিটা মনে ধরেছে আমার। বললাম,
— আমি তবে কাগজে লিখে দেবো তোমাকে, কত টাকা পাবে তুমি। আমি ভুলে গেলেও তুমি আমাকে মনে করিয়ে দেবে, ওই কাগজ দেখিয়ে!
সৌমিক হাসল হোহো করে।
— আচ্ছা ঠিক আছে। যা সমস্ত কথা, প্রতিজ্ঞা – তুমি ভুলে যাবে। আর আমি কথা দিচ্ছি, সব তোমাকে মনে করিয়ে দেবো।
আমি আবার ঠোঁট উল্টালাম। বললাম,
— সন্ধে হয়ে আসবে। আমি আসি?
সৌমিক হঠাৎ করেই বেশ গম্ভীর হলো। হয়তো আমি ভুল দেখলাম, মনে হলো ওর চোখ কাঁদছে। ও খুব অস্থির হয়ে জানতে চাইল,
— সেদিন তো পাহাড়ের রাজপুত্রের সাথে দেখা হলো। দারুণ দেখতে। একদম ক্রাউনড প্রিন্সের মতোই। তুমি কি প্রভাতকে ভালোবাসো, ফুলপরী?
আমি ওর প্রশ্নটা বুঝিনি। সপ্রশ্ন তাকিয়ে রইলাম দেখে আবার বলল সৌমিক,
— তুমি কি কখনো চাও ও তোমার নিজের মানুষ হোক?ওর বউ হতে চাও তুমি? সেইরকম ভালোবাসা কি তোমাদের?
আমি হেসে ফেললাম। লজ্জাও পেলাম। সৌমিকের বুকে কিল দিয়ে বললাম,
— যাও! ওসব কখনো ভাবিইনি আমি! তুমি কি তাই ভেবেছ? প্রভাত দাদা এমনিই স্নেহ করে আমাকে। আমার বাপ মা নেই তো, তাই সবাই স্নেহ করে, ভালোবাসে। এই পাহাড় আর পাহাড়ের সমস্ত মানুষ আমাকে ভালোবাসে। এত সব ভালোবাসার ঋণ যে কেমন করে শুধব!
সৌমিকের মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত হলো। ও একমুখ হাসি নিয়ে বলল,
— আর আমাকে নিয়ে কিছু ভাবো না?
— কী ভাবব?
— আমাকে ভালোবাসবে, ফুলপরী?
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,
— কীইইই?
— আমি তোমার একান্ত নিজস্ব মানুষ হতে চাই। তোমার সমস্ত সুখের কারণ হতে চাই। আমি চাই আমার দিনের শুরুটা তোমার হোক, রাতের অন্ধকারেও আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।
আমার আনা বেলিফুলের মালাটা ও আমার খোপাতেই পরাতে পরাতে বলল,
— আমি তোমাকে ভালোবাসি, স্বর্ণচাঁপা। আমার ফুলপরী, আমি তোমাকে চাই। আমার সবচেয়ে প্রিয় রমণী হিসেবে তোমাকে চাই। বুকের বাঁপাশের একক মালিকা হিসেবে তোমাকে চাই। তোমাকে ভালোবাসি আমি। আমি চাই তুমিও আমাকে ভালোবাসো। আজকে ঘুমাতে যাবে যখন, খুব ভালো করে ভেবে দেখো তো, আমাকে ভালোবাসা যায় কি না!
থেমে যাওয়া এস্রাজের মুছে যাওয়া সুরের মতো করে আমার কানের কাছে রিনরিন করে বাজতে থাকল সৌমিকের আকুল হওয়া গলার স্বরটুকু,
— আমাকে ভালোবাসবে, ফুলপরী?

চলবে….
আফসানা আশা

বৃষ্টি, তোমাকে দিলাম – বেশ দামি বই। প্রিঅর্ডারে বেশ ডিসকাউন্ট পাচ্ছেন বিভিন্ন বুকশপে। পরে প্রায় ৮০/১০০ টাকা দাম বেড়ে যাবে। তাই যারা বইটি নেবেন মনস্থির করেছেন, তারা এখনি অর্ডার করে ফেলবেন। আর যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, অপেক্ষা করবেন রিভিউয়ের জন্য। কেননা এই বইয়ের প্রমোশনাল পোস্ট আসবে না। প্রমোশনের জন্য যে অংশটাই দিতে চাই, সেটাই স্পয়লার হয়ে যায়!
অর্ডার লিংক পেইজে, গ্রুপে দেওয়া আছে। এই পোস্টের কমেন্টবক্সেও লিংক দেবো। আপনারা চাইলে আমার ইনবক্সেও অর্ডার করতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here