অজানা_অনুভূতি পর্ব ২+৩

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ২
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

হায়াতের রুমে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইফাত। ওর সামনেই বসে আছে হায়াত ও আয়াত।

ইফাতঃ এবার মাফ করে দেও বোনু। আর করবো না।

হায়াতঃ আমার ফেসওয়াশ দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার করেছিস আর এমনি এমনি মাফ করে দিবো।

আয়াতঃ আচ্ছা বাথরুম পরিষ্কার করার জন্য কি আমাদের ফেসওয়াশই পাইছো আর কিছু কি ছিলো না।

ইফাতঃ আরে পাইনি তাই তোহ ফেস ওয়াশ দিয়ে। এইবার তোহ যেতে দেও বোনুরা।

” কি হচ্ছে এখানে””(ইভান)

হায়াত আর আয়াত ইভানকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। ইফাত কান ছেড়ে দাড়ালো।

ইফাতঃ আসলে ভাইয়া তেমন কিছুই না। আমরা..

ইভানঃ তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি। আর তুমি(হায়াতকে) দিন দিন অসভ্য বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো কোনো কান্ডা জ্ঞান নেই নাকি বড়দের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানো না। নাকি এটাও ভুলে গিয়েছো। দিন দিন তোমার অভদ্রতামি বেড়েই চলছে। এসব ছেড়ে পড়াশোনায় মন দেও।(হালকা রেগে জোরে বলল)

হায়াত চুপচাপ হাত বাজ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ইফাত ও আয়াত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইশান ইভানের আওয়াজ শুনে রুমে আসলো।

ইশানঃ কি হয়েছে বড় ভাই এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো?

ইভানঃ তোরা একে(হায়াতকে উদ্দেশ্য করে) আদর করে করে মাথা উঠিয়ে ফেলছিস। আর তুমি কান খুলে শুনে রাখো কলেজ থেকে যদি কোনো রকম অভিযোগ আসে তাহলে আর একমূহুর্ত দেরি করবো না এই বাড়ি থেকে বিদায় করতে।

হায়াতের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তারপরও ইভানের দিকে এক নজরও তাকালো না।

ইশানঃ আচ্ছা বড় ভাই বাদ দেও তোহ। চলো।

ইশান ইভানকে টেনে নিয়ে গেলো। ইফাত হায়াতের কাছে এসে মাথায় হাত ভুলিয়ে চলে গেলো।
আয়াত চুপচাপ বসে আছে। হায়াত দৌড়ে বাথরুম এ চলে গেলো।

আয়াতঃ ২ ঘন্টা শাওয়ার নিবে এখন। এটা তোহ নতুন না ডেইলি হচ্ছে। জানি না সব কিছু কবে ঠিক হবে।

দরজার বাহির থেকে হায়াতের দাদী সব দেখে শুনে নিজের রুমে গিয়ে বসলো।

আয়াতের মাঃ আম্মা আপনি কাদছেন কেনো। ওরা তোহ বাচ্চা মানুষ সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখলেন না আমাদের হায়াত কতো ভালো একটা জবাবও দেয়নি ওর বড় ভাই ইভানকে।

হায়াতের দাদীঃ এটাই তোহ সমস্যা ছোট বউমা। ৪ বছর ধরে হায়াত আর ইভান একে অপরকে দেখতে পারছে না। হায়াত ওর বাবা মা মরার পর থেকে ইভানের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। ইভান হায়াতকে দোষারোপ করে বেরাচ্ছে। দিন দিন ওরা একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ছোট বউমা আমার বড় ছেলে আর বড় বউ তোহ চলে গেলো সংসারটাকে এলোমেলো করে গেলো।(কাদছে)

আয়াতের মাঃ হ্যা মা সব কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। জানিন্স কবে ঠিক হবে ওদের ঝামেলা। আম্মা আর যাই বলুন ওরা সবাই একেঅপরকে ভালোবাসে। ওরা পাচ ভাইবোন কখনো একে অপরের ক্ষতি করবে না যতই মান অভিমান হোক না কেনো। ইভান আর হায়াত একে অপরেকে ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করছে না। আপনি চিন্তা করবেন না এতে আপনার প্রেসার লো হয়ে যাবে।

রাতে খাবারের টেবিলে সবাই বসে খাবার খাচ্ছে হায়াত বাদে। আয়াত নিজের আর হায়াতের খাবার নিয়ে রুমে যাচ্ছিলো।

ইভানঃ আয়াত তুমি কোথায় যাচ্ছো। যার খাবার খাওয়ার সে নিজে আসবে তুমি এখানে বসেই খাবে।

আয়াতঃ স্যরি ভাইয়া যতদিন আমি আর হায়াত এই বাড়িতে আছি আমরা এক সাথেই খাবার খাবো। আর বার বার এক কথা বলতে ইচ্ছে করে না।

আয়াতের মাঃ আয়াত এটা কোন ধরনের ব্যবহার। নিজের বড় ভাই এর সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে।

আয়াতঃ সেটাই তোহ নিজের ছোট বোনের সাথে কি কেউ এমন ব্যবহার করে। আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি। যদি তোমাদের আপত্তি থাকে তাহলে হায়াতের সাথে সাথে আমাকেও এই বাড়ি থেকে বিদায় করে দিও।

আয়াতের বাবাঃ আয়ায়াত (রেগে)

ইশানঃ ছোট আব্বু বাদ দেও তোহ। সবাই খাবার খাও।

ইফাতঃ হ্যা ছোট আব্বু। ওরা এখনো অনেক ছোট তাই ওদের কিছু বলো না।

ইভান খাবার রেখে চুপচাপ উঠে চলে গেলো। সবার চেহারা মলিন হয়ে গেলো।।

চৌধুরী বাড়িতে★★
খাবার টেবিলে বসে আছে আরহাম। খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে তা দেখে আরহামের মা বলল

আরহামের মাঃ কি হলো আরহাম খাবার খাচ্ছো না কেনো। খেতে ভালো লাগছে না বুঝি।

আরহামঃ না মানে আম্মু আসলে।

আরহামের বাবাঃ যা বলার সোজাসাপটা বলো। (খাবার রেখে আরহামের দিকে তাকালো)

আরহামঃ আসলে বাবা আমি কলেজে টিচিং করতে চাচ্ছি না।

আরজামের বাবাঃ কেনো এতে কি সমস্যা?

আরহামঃ সমস্যা নেই মানে বাবা বাহির থেকে পড়ে আসছি কি কলেজে টিচিং করার জন্য নাকি আমি অন্য কাজ করতে চাই।

আরহামের বাবাঃ তোমাদের দুই ভাইকে আমি যা বলেছি তাই করবা। আমার কথার অবাধ্য হবা না। সব কথা মেনে আসছি তোমাদের তাই আমি যা বলবো তাই শেষ কথা। চুপচাপ খাবার খাও।

আরহাম রেগে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। অর্পা ওর চাচাতো ভাই আরনাব চৌধুরীকে খোচা দিলো।

অর্পাঃ ভাইয়া আজকে তুমি কলেজে কেনো আসোনি।

আরনাবঃ ফ্রেন্ডসদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তাই।

অর্পাঃ তুমি জানো আজকে আরহাম ভাইয়া আমাদের সাথে কি করেছে।

আরনাবঃ কি করেছে?

“এই তোমরা কি ফুসুরফুসুর করছো চুপচাপ খাবার খাও”

অর্পা/আরনাবঃ জিই দাদীমা।

অর্পাঃ পড়ে বলবোনে।

আরনাবঃ আচ্ছা।

★★
আরহামের বাবার রুমে
আরহামের মাঃ আর কতো ছেলেদের সাথে এমন করবে ওদের যা ইচ্ছে তাই করুক।

আরহামের বাবাঃ আমি যা করছি ওদের ভালোর জন্যই করছি। শুধুমাত্র তোমার কথায় ওদের বিদেশে পড়ার জন্য পাঠিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি। ওরা কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক সব ভুলে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে আছে। তাই ওদের কলেজে পাঠিয়েছি হয়তো সেখান থেকে ওদের জীবন্টা পালটে সুন্দর হয়ে যাবে।

আরহামের মাঃ যদি তোমার এই সিদ্ধান্তে কোনো বড় ধরনের ঝামেলা হয় আমার মন্টা কেমন যেনো খোচখোচ করছে আরহামের বাবা।

আরহামের বাবার চেহারায়ও চিন্তার ছাপ কিন্তু তা প্রকাশ করেননি।

পরেরদিন সকালে
হায়াতদের বাসায় প্রিসা আর আনিশা আসছে। হায়াত ও আয়াত রেডি হচ্ছে।

প্রিসাঃ হায়াত তোর সয়তান ভাইটা কোথায়।

হায়াতঃ আমার কত নাম্বার ভাইকে খুজতেছিস।

প্রিসাঃ দূর প্রতিদিন এক কথা বার বার বলা লাগে নাকি। জানিস না কার কথা বলছি।

আয়াতঃ আমাদেরও একই কথা প্রতিদিন জেনেও বারবার জিজ্ঞেস করিস কেনো। ডাইনি ইশান ভাইয়া তার রুমে।

প্রিসাঃ ওকে।(বলে দিলো এক দৌড়)

আনিশাঃ আজকে আবার বকা খাবে। প্রতিদিন আগে আগে আসে যাতে ইশু ভাইয়াকে জালাতে পারে।

আয়াতঃ বেচারি এতো চেষ্টা করছে ভাইকে পটাতে কিন্তু ভাইয়াও নাছরবান্দা প্রেম করবে না মানে করবেই না।

হায়াতঃ প্রেম করার দরকার কি আমার ভাইকে ডিরেক্ট বিয়ে করাবো। (হালকা হেসে)

আনিশাঃ আচ্ছা আমি পানি খেয়ে আসছি।

আনিশা রুম থেকে বের হতে না হতেই কেউ এক টান দিয়ে সাইডে নিয়ে গেল। আনিশা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

আনিশাঃ কি ব্যাপার ইফাত ভাইয়া আমাকে এইভাবে প্রতিদিন টেনে সাইডে নিয়ে আসেন কেনো। মানুষ দেখলে কি ভাববে হ্যা নিজেকে কি মনে করেন ( রেগে)

ইফাতঃ আমি তোমার কোন জনমের ভাই লাগি। খবরদার ভাইয়া বলবা না একদম…

আনিশাঃ একদম কি করবেন।

ইফাতঃ কিডন্যাপ করে ফেলবো।

আনিশাঃ ইশ আসছে আমার কিডন্যাপার। নিজেকে আয়নায় দেখছেন কখনো। ফু দিলে উড়ে যাবেন।

ইফাতঃ আয়না আমি প্রতিদিনই দেখি। আর ফু দিলে উড়ে যাবো তাই না দেও ফু দেও না যদি না উড়ি তাহলে তোমাকে কাচা টমেটোর ভর্তা খাইয়ে দিবো। (রেগে)

আনিশাঃ এইরে রেগে গেলো নাকি এখন কি হবে(মনে মনে) হাহাহা জিই আমি তোহ মজা করছিলাম আচ্ছা আমি আসি

বলে দৌড় দিতে নেয় ওমনি ইফাত হাত ধরে ফেলে।
আনিশাঃ হাত ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে তোহ। এমন কেনো করছেন ছেড়েদিন আমার হাত।( আনিশা ভয়ে প্রচুর ঘামছে)

ইফাত নিজের মুখ আনিশার দিকে এগুচ্ছে তা দেখে আনিশা চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ইফাত তা দেখে হেসে আনিশার কানের কাছে গিয়ে বলল
ইফাতঃ তোমার এই ভয় ভরা মায়াবী চেহারা দেখে আবারো প্রেমে পড়ে গেলাম।

আনিশা ইফাতের কথায় চোখ খুলে তাকালো। ইফাতের নেশাভরা চোখের দিকে তাকালো কেমন যেনো নেশা নেশা লাগছে।
আনিশাঃ এই চোখের দিকে তাকালে আমার এক অন্যরকম অনুভূতি হয় এক অজানা_অনুভূতি। (মনে মনে)
ইফাত আনিশার হাত ছেড়ে হালকা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আনিশার বুক ধুকপুক করছে। ইফাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক দৌড়ে হায়াতের রুমে এসে পড়লো।ইফাত আনিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

★★★
ইশানঃ এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছো।

প্রিসাঃ আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।

ইশানঃ কোনো কমন সেন্স নেই এইভাবে একটা ছেলের রুমে ডুকে গিয়েছো।

প্রিসাঃ আরে এটা আমারও ঘর ভবিষ্যতে তোহ এই রুমেই থাকবো তাই না।

ইশানঃ দেখো প্রিসা এক কথা বার বার বলতে পারবো না। তুমি কিন্তু অনেক বাড়াবাড়ি করছো।

প্রিসাঃ আমি বাড়াবাড়ি না কাজ করছি। রুমের এই হাল করে রেখেছেন। ছি ছি ছি এমন উল্টো পালটা করে রেখেছেন কেন আমাকে কি কাজের বুয়া মনে হয় যে আপনার কাজ করে বেরাবো (রেগে)

ইশানঃ ইস ঢং দেখো না এমন ভাব দেখাচ্ছে মনে হয় আমার বউ। এই মেয়েকে কিছু বলতে পারিনা কেনো। ওকে দেখলেই আমার মনে কেমন যেনো অনুভূতি হয় এক অজানা_অনুভূতি। (মনে মনে)

প্রিসা ইশানের রুমে এসে দেখে ইশান বাথরুমে আর পুরো বিছানা এলোমেলো। প্রিসা তা ঠিক করে দিচ্ছিলো। রোজ রোজ এসে এমন করে প্রিসা ইশানও এইসবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে কারন যতকিছুই বলুক না কেনো এই মেয়ে কিছুতেই শুনবে না।

প্রিসা ইশানের ঘর গুছিয়ে একটা শার্ট বাছাই করে দিলো যা ও রোজ করে।

প্রিসাঃ আজকে এই নীল রঙ এর শার্টটা পড়বেন আর খবরদার অন্য শার্ট যদি পড়েন তাহলে তোহ জানেনই কি করব।

ইশান মাথা ঝাকালো। মানে সে জানে। কারন এর সাথে তর্ক করে লাভ নেই। একবার প্রিসার পছন্দ করা শার্ট না পড়ায় ইশানের গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিলো।
বাসার সবাই জানে প্রিসা ইশানকে পছন্দ করে। তাই ওদের ব্যাপারে কেউ কিছু বলে না আর বেচারা ইশান প্রিসার অত্যাচার সহ্য করছে।

★★★
দেয়ালের উপর দিয়ে হাটছে ৪ বান্ধুবি হায়াত, আয়াত, আনিশা,প্রিসা।

আয়াতঃ হায়াত আমি আর যাবো না আমার ভয় করছে।

হায়াতঃ এর চেয়ে কি ভালো আইডিয়া তোর আছে নাকি। যদি থাকে তাহলে তুই ওইদিক দিয়েই যা।

আনিশাঃ আরে কথা বলিস না পড়ে যাবো তোহ।

৪ জন মেয়েকে দেয়ালের উপর দিয়ে হেটে যেতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে একজন।

” এই মেয়েরা তোমরা এইভাবে দেয়ালের উপর দিয়ে কেনো হাটছো” একটি ছেলে

হায়াতঃ আরে আগে গান বন্ধ করেন কিছু বুঝি না( কানে হাত দিয়ে জোড়ে বলল)

গান বন্ধ হলো।
হায়াতঃ এই মিয়া আপনারা যে এইভাবে নাচানাচি রঙ্গারঙ্গি করছেন তাতে তোহ রাস্তা বন্ধ করে রাখছেন। আমরা কলেজে যাবো কিভাবে তাই দেয়ালের উপর দিয়ে যাচ্ছি। আজ যদি কলেজে যেতে দেরি হয় আর স্যার যদি বকা দেয় না আপনাদের আমি ছাড়বো না। ভুলেও আপনাদের দলকে ভোট দিবো না হু কিছুদিন পর আমারও ন্যাশনাল আইডি কার্ড হবে। বাই (এই বলে আবার হাটা দিলো)

এই তোহ কলেজে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিয়েছিলো হায়াতরা মাঝ পথে থেমে যায়।কারন রাস্তায় অনেক মানুষ রঙ দিয়ে মাখামাখি করছে গান বাজাচ্ছে। পুরো রাস্তা ব্লক সামনে যাওয়ার কোনো পথ নেই। কলেজে যাওয়ার জন্য এই একটাই রাস্তা।

হায়াতঃ এই এরা এভাবে পাগলের মতো লাফাচ্ছে কেন। কার বিয়ে লেগেছে।

আনিশাঃ আরে বিয়ে না ভোট জিতেছে তাই এতো খুশি।

আয়াতঃ কে ভোট জিতেছে যে এতো খুশি।

প্রিসাঃ কে আবার নেতার ছেলে ভোটে দাঁড়িয়েছিলো সে জিতে গেছে।

হায়াতঃ যেই জিতুক আমাদের কি। চলতোহ।

আয়াতঃ কোথায় চল যাবি কিভাবে। এই ভিড়ের মাঝে গেলে গোছল হয়ে বের হতে হবে দেখিস না কিভাবে রঙ নিয়ে মাখামাখি করছে।

আনিশাঃএখন কি হবে আরহাম স্যার তোহ ভাববে আমরা পড়া কমপ্লিট করিনি তাই কলেজে যাইনি।(মন খারাপ করে)

হায়াতঃ আরে আমি আছি কোন দিনের জন্য। এক মিনিট দাড়া আমি ৫ মিনিট চিন্তা করি।(গালে হাত দিয়ে ভাবছে)

হায়াতঃ বেস্টুরা ম্যাংগোবার খাবি।(দুষ্টু হাসি দিয়ে)

হায়াতের হাসি দেখে ওরা বুঝে গেলো হায়াত কোনো আইডিয়া পেয়েছে।
আয়াতঃ শুরু কর কিভাবে যাবি।

হায়াত পাশে ইটের উপর পা রেখে দেয়ালে উঠে পরলো আর হায়াতের পিছু পিছু বাকিরাও উঠলো হায়াত ম্যাংগোবার খেতে খেতে আরামে হাটছে। আর বাকিরা ওর পিছু পিছুই।

★★★
হায়াতরা দেয়াল থেকে লাফ দিয়ে নেমে হাটা দিলো। কেউ একজন হায়াতের যাওয়ার পথে চেয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে। এই প্রথম কাউকে দেখে সে মুগ্ধ হলো।

কলেজে ঠিক সময়ে পৌছে ক্লাস করে টিফিন টাইমে মাঠের মাঝে বসে আছে হায়াত বসে বসে ম্যাংগোবার খাচ্ছে। অর্পারা সাইডেই বসে আড্ডা দিচ্ছে।

হঠাৎ করে আরহামকে এদিকে আসতে দেখে অর্পারা দিলো এক দৌড় হায়াতের সেই দিকে খেয়াল নেই সে নিজের মতো ম্যাংগোবার খাচ্ছে।

আরহাম হায়াতের কাছে এসে হালকা কাশি দিলো। হায়াত আরহামের দিকে তাকিয়ে ম্যাংগোবার খাওয়ায় মন দিলো। তা দেখে আরহাম আবার কাশি দিলো।

হায়াতঃ ডাক্তার দেখান।

আরহামঃ মানে?

হায়াতঃ বলছি ডাক্তার দেখান। নাক কান গলার ডাক্তার এর কাছে গিয়ে কাশি দিন ডাক্তারবাবু আপনাকে ঔষধ দিয়ে দিবে। আমি কোনো ডাক্তারবাবু না যে এখানে এসে কাশি দিচ্ছেন ( এই বলে আবার নিজের ম্যাংগোবার খাচ্ছে)

আরহামঃ আমি যে তোমাদের স্যার সেটা কি ভুলে গিয়েছো। এমন ভাব করছো জেনো আমাকে চিনো না আর আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলো যে আমি তোমার টিচার না তুমি আমার টিচার। আর এভাবে রোদের মধ্যে মাঠে বসে ম্যাংগোবার খাচ্ছো কেনো।দাড়াও।(হালকে রেগে)

হায়াতঃ এই আর কিছু পারো আর না পারো রাগ দেখাইতে পারো তাইনা। আমি যে স্টুডেন্ট সেটা কি তুই ভুলে গিয়েছিস। নিজেকে যে কি মনে করে। আমি কি তোর কাছে গিয়েছি নাকি তুই আমার কাছে এসেছিস। আর হ্যা মাঠে বসেই তোহ ম্যাংগোবার খাচ্ছি বাথরুমে বসে তোহ আর খাচ্ছি না। বেটা খচ্চর দুইদিন হলো এসেছে আর আমার পেছনে হাত পা নাক কান গলা ধুয়ে পড়ে আছে। তোরে তোহ তেলাপোকার বাজি খাওয়াতে মন চাইছে। হিংসুটে নিজে তোহ ম্যাংগোবার খেতে পারে না তাই আমাকে দেখে হিংসা হচ্ছে( এমন হাজারো বকা দিয়ে যাচ্ছি মনে মনে কারন সয়তান স্যারবাবুকে কিছু বলতে পারমু না)

আরহামঃ ওহ হ্যালো মিস রেডিও কোথায় হারিয়ে গেলেন।
হায়াতের মুখের উপর তুরি বাজিয়ে।

হায়াতঃ জিই স্যার। ইয়ে মানে ম্যাংগোবার খাবেন। (একটা ম্যাংগোবার এগিয়ে দিয়ে)

আরহাম ম্যাংগোবারটা নিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো। হায়াত আরহামের এমন ব্যবহারে অবাক হলো।

হায়াতঃ এমা কেনো এসেছিলো তা না বলেই চলে গেলো ঢং দেখলে বাচি না হুহ। আমার ম্যাংগোবার নিয়ে গিয়েছে হুহহ।

★★
আয়াত লাইব্রেরিতে গিয়ে এক এক করে অনেক গুলো বই নিচ্ছে।

আয়াতঃ আজ সব বই বাসায় নিয়ে যাবো। ভাগ্য ভালো নাস্তা মানে নাতাশা ডাইনিটা কলেজে আসেনি নয়তো আমার পছন্দ করা বই ছিনিয়ে নিয়ে যেতো আর হায়াত ম্যাডাম তা নিয়ে বিশাল কি যেনো বলতো হ্যা গিরিংগি লেগে যেতো। বুঝি না এই মেয়েটা এমন আজব কথা কোথায় পায়। নাতাশাকে৷ আস্তা ডাকে ঝামেলাকে গিরিংগি বলে। যাক আমি সব বই পেয়ে গিয়েছি। (আয়াত অনেক গুলো বই নিলো যার ফলে ব্যালেন্স করতে না পেড়ে উপুড় হয়ে পরলো) ওমাগো (বলে চিৎকার দিলো)

আয়াত আস্তে করে উঠে বসলো।
আয়াতঃ এই আমার চশমা কই গেলো কিছুই তোহ দেখি না। (আয়াত হাত দিয়ে চশমা খোজায় ব্যস্ত)

এরমাঝে কেউ এসেছে যা আয়াত ট্যার পেলো কিছু বলার আগেই আয়াতের চোখে চশমা পড়িয়ে দিলো।
আয়াত চশমা ঠিক করে সামনের মানুষটার দিকে তাকালো। আশেপাশে তেমন কেউ নেই সবাই টিফিন খাচ্ছে। আবার সামনের লোকটার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

আয়াতঃ আপনি আর…..
#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ৩
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

আয়াতঃ আপনি আরহাম স্যার। ধন্যবাদ স্যার আমার চশমাটা দেওয়ার জন্য। (এই বলে বই গুলো এক এক করে নিচ্ছে)

“জিই আমি আরহাম নই আমি আরনাব চৌধুরী “(আরনাব)

আরনাবের কথায় আয়াত দাঁড়িয়ে গিয়ে অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।

আরনাবঃ ওহ হ্যালো পিচ্চি কি হলো। ( আয়াতের মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে)

আয়াতঃ আপনি আরনাব স্যার। একদম আরহাম স্যার এর মতো চেহারা আপনার আহা কতো মিল আপনাদের খালি চোখ দুটি আলাদা নয়তো কি যে হতো অফ।(চিন্তিত হয়ে) আচ্ছা আপনি আমাদের ইংলিশ ক্লাস নিবেন তাই না।

আরনাবঃ হ্যা। তোমার নাম কি?

আয়াতঃ আমিই আয়াত আহমেদ (ভাব নিয়ে বলল)

আরনাবঃ আচ্ছা তাহলে তুমিই সেই ঝগড়াটে দলের একজন সদস্য তাই না।

আয়াতঃ মানে (ভ্রু কুচকে)

আরনাবঃতুমি অর্পার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই তোহ?

আয়াতঃ জিই স্যার।

আরনাবঃ অর্পা তোমাদের কথা বলে বলে আমার কান জ্বালা ফালা করে ফেলছে। যাইহোক আয়াতকে তোহ দেখে ফেললাম এবার নাহয় বাকি ৩ জনকেও দেখে নিবো। আচ্ছা আমি আসি।

এই বলে আরনাব চলে গেলো। আয়াত ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ আরনাবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বইগুলো নিচে থেকে উঠিয়ে চলে গেলো।

ক্লাস শেষ করে অর্পা দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাহিরে হুট করে একটা বাইক এসে অর্পার সামনে থামলো অর্পা হালকা ভয় পেলেও পরক্ষণেই রাগি চোখে তাকালো।

অর্পাঃ হায়াতের বড় ভাই মিস্টার ইভান আহমেদ বাইক নিয়ে মাটিতে আছেন তোহ মাটিতেই থাকুন। আকাশে উড়ার কি দরকার।

ইভান হেলমেট খুলে একটা হাসি দিলো।
ইভানঃ গোলাপি বাইকে উঠো।

অর্পাঃ খবরদার আমাকে গোলাপি ডাকবে না। একদম পিটিয়ে গোলাপি নাম ভুলিয়ে ফেলবো।(রেগে)

ইভানঃ তুমি উঠবা নাকি আমি নামবো। তুমি তোহ জানো যে আমি নামলে কি হবে।(সয়তানি হাসি দিয়ে)

অর্পাঃ অফ এটার সাথে রাগ করেও থাকা যায় না। সব সময় এমন হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে। কি দেখে যে এটার সাথে রিলেশনে গিয়েছিলাম। জীবনটা তেজপাতা করে দিলো ( মনে মনে বকবক করে বাইকে উঠলো)

ইভান অর্পাকে নিয়ে চলে গেলো। ওদের রিলেশনের কথা সবাই জানে অর্পার ১৮ বছর হলেই বিয়ে দিবে ইভানের সাথে। দুই পরিবার রাজি তোহ কি আর করবে কাজী। হাহা।

★★★

কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে হায়াতরা।
আনিশাঃ এই অর্পাটা কোথায় গেলো।

হায়াতঃ ইভানের সাথে গেছে।(ম্যাংগোবার খেতে খেতে বলল)

আয়াতঃ তাইতোহ আগে আগে গেটের বাহিরে দাড়িয়ে ছিলো। রাগও করবে আবার সাথেও যাবে। বুঝি না এদের মধ্যে দুইদিন পরপর কি হয় অফ।

আনিশাঃ তুই বুঝবি কিভাবে জীবনে কি একটাও প্রেম করেছিস।

আয়াতঃ ইশ এমন ভাবে বলছে মনে হয় নিজে ৫০ টা প্রেম করেছে। ইফাত ভাইয়াকে লাইক করিস আর বলতেও পারিস না।

আনিশাঃ তুই সব সময় ইফাতের নাম নিস কেন বলতো । তুইও একদিন প্রেমে পরবি। তখন তুই মরার প্রেম করবি দেখিস (হালকা রেগে)

হায়াতঃ আচ্ছা দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পড়ছে যে তোরা আমার ভাইদের প্রেমেই পড়লি।(ভ্রু কুচকে)

আনিশাঃ আমি পড়িনি।

প্রিসাঃ আচ্ছা তাহলে গাল এমন লাল টমেটো হয়ে যাচ্ছে কেনো। ওইসব রাখ আর দেখছিস ইভান ভাইয়া কতো ভালো অর্পাকে নিয়ে ঘুরতে চলে গেলো আর হায়াত তোর সয়তান ইশান ভাই আমাকে পাত্তাই দেয় না। (মন খারাপ করে)

হায়াতঃ হয়েছে তোর ড্রামা। আর…

” আপনাদের গোল মিটিং শেষ হলে রাস্তা থেকে সরে দাড়ান”

কারো কথা শুনে হায়াতেরা লোকটার দিকে তাকালো।

হায়াতঃ এই তোরা সাইড হো তোহ আরহাম স্যার তোহ অনেক মোটা তাই অনেক যায়গা লাগে যেতে তাই না স্যার। (দাত বের করে হেসে)

আরহাম রাগী চোখে তাকালো।
আরনাবঃ আরে বাহ মিস আয়াত আপনি আর আপনার ঝগড়াটে গ্রুপ এখানে (হেসে বলল)

আয়াত রাগে দাত কটমট করছে।
হায়াতঃ ওরে আরনাব স্যার আপনি তাই না। আপনারা জমজ আহা কত সুন্দর লাগছে আপনাদের। আরনাব স্যার আমাদের ক্লাস তোহ আজকে নিলেন না।যাইহোক আমি হায়াত ও প্রিসা আর ও আনিশা আর এ হলো আমার চিম্পু(আয়াতকে উদ্দেশ্য করে)

আরনাবঃ চিম্পু হাহাহাহাহা (আরনাব হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া অবস্থা)

আরহামঃ ছোটু তোর হয়েছে চল এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আর তুমি(হায়াতকে) দিন দিন বড় হচ্ছো আর বেয়াদব হচ্ছো।

হায়াতঃ এখানে বেয়াদবের কি আছে।

আরহামঃ এই মেয়ে তুমি কি তর্ক ছাড়া আর কিছু পারো না।

হায়াতঃ আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করা ছাড়া আর কিছু পারেন না। পায়ের উপর পা রেখে ঝগড়া করতে আসেন। আপনি যদি স্যার না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে নিতাম।

আরহামঃ কেনো আমি কি অদৃশ্য নাকি যে এখন দেখতে পাও না। যদি না দেখতে পাও তাহলে যলদি ডক্টর দেখাও।

হায়াতঃ ডক্টর আমি না আপনি দেখান আপনার মাথায় সমস্যা আছে। বুঝি না আপনাকে স্যার যে কে বানালো।

আরহামঃ নিজ যোগ্যতায় হয়েছি। তোমার মতো ফাকিবাজ না আমি।

হায়াত আর আরহামে ঝগড়া দেখে আশেপাশের মানুষ তাকিয়ে আছে একজন টিচার আর স্টুডেন্ট এইভাবে ঝগড়া করছে। আরনাব, আয়াত, প্রিসা আর আনিশা অবাক হয়ে ওদের ঝগড়া দেখছে ওরা কি হায়াতকে কি থামাবে হায়াতের সাহস দেখে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।

অনেক কষ্টে আরহাম আর হায়াতকে থামিয়ে নিয়ে গেলো। আরহাম ও আরনাব গাড়িতে বসে আছে। আরনাব আর চুপ থাকতে না পেড়ে হেসে দিলো

আরহামঃ তুই এভাবে পাগলের মতো হাসতেছিস কেনো।

আরনাবঃ হাহাহা ভাই সিরিয়াসলি তুই একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া করছিলি। তুই তোহ জেসিকাকে ছাড়া তেমন কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলতি না প্রয়োজন ছাড়া। ভাই হায়াত মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে তুই যে টিচার তারপরও ভয় না পেয়ে উত্তর দিয়েছে। আমার তোহ অনেক ভালো লাগলো কি মিষ্টি মেয়ে।

আরহাম কিছু না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আরনাবের বলা কথা গুলো ভাবছে। আসলেই তোহ জেসিকাকে ছাড়া আমি তেমন কোনো মেয়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলিনি তাহলে আমি হায়াতের সাথে কেন বারবার নিজে থেকেই ঝগড়া করছি। ওরা তোহ সাইডে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলো আমি কেনো এমন করলাম। যেদিন কলেজে প্রথম গিয়েছিলাম ওইদিন মাঠের মাঝে একটা মেয়ের দিকে চোখ পড়ে সে মাঠের মাঝে লাফালাফি করছে। নিজের অজান্তেই ওইদিন মাঠের মাঝে চলে গিয়েছিলাম। নিজে থেকে তার সাথে কথা বলেছিলাম কিন্তু কেনো? নাহ আর ভাবতে পারছি না। আমার এখন জেসিকাকে প্রয়োজন ওর কাছে গেলেই শান্তি পাবো। (এমন হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আরহামের মাথায়)

★★

আয়াতঃ হায়াত এটা তুই কি করলি। আরহাম স্যার যদি পড়ে কিছু করে। পরিক্ষায় যদি তোকে ফেইল।করিয়ে দেয়।

হায়াতঃ আমি হায়াত আর হায়াত কখনো অত্যাচার সহ্য করবে না।যেটা ভুল সেটা ভুলই আরহাম চৌধুরি স্যার হলেও আমার সাথে আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করে অপমান করে অনেক সহ্য করেছি আর না। আর পরিক্ষার খাতায় যদি আমি সব সঠিক লিখি তাহলে সে ফেইল করাবে কিভাবে। চল তোহ এতো ভেবে লাভ নেই। ( এই বলে হাটা দিলো। খুব তোহ সাহস করে আয়াতকে বুঝিয়ে দিয়েছে কিন্তু মনে মনে ভয় করছে হায়াত তুই কি মুখে একটু তালা লাগাতে পারিস না। না জানি স্যারবাবু আমার সাথে কি করে। এই সব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে গেলো)

এভাবে দিন যাচ্ছে। হায়াত ও আরহামের মাঝে ঝামেলা আছেই। ঝগড়া চলছেই আরহাম হায়াতকে নানান ভাবেই অপমান করে বেড়ায় কিছু হলেই হায়াতকে কথা শোনায় হায়াতও সুযোগ বুঝে এর জবাব দেয়। ওইদিকে অর্পা আর ইভানে মাঝে ঝগড়া চলে আর এক হয় এসবের মাঝেও ওদের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। প্রিসা ইশানের মনে জায়গা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আনিশা ইফাতকে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু মুখ ফুটে এখনো বলতে পারেনি। অপেক্ষায় আছে কখন ইফাত প্রপোজ করবে আর আনিশ হ্যা বলবে। ইদানীং আরনাব আয়াতের একটু বেশিই কেয়ার করছে। আয়াত তাতে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে নিজের মতোই আছে।

হায়াতরা সেকেন্ড ইয়ারে উঠে পড়েছে। একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে কারো ডাকে থেমে যায় হায়াত।

হায়াতঃ কি হলো রিফাত এইভাবে ষাড়ের মতো ডাকছিস কেনো।

রিফাতঃ আসলে হায়াত আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই….

আনিশাঃ হ্যা তোহ বল এইভাবে কাচুমাচু হয়ে আছিস কেনো।

রিফাতঃ ইয়ে মানে আমি…

হায়াতঃ নাস্তা(নাতাশা) এর ভাই কি তোকে পিটিয়েছে নাকি।

রিফাতঃ না আসলে আজকে আমি তোমায় আমার মনে কথা বলতে চাই আমি তোমায় ভালোবাসি তোমাকে বিয়ে করতে চাই( এক দমে বলল)

হায়াতঃ একটা চড় মেরে ৩২ দাত ফেলে ৩৮ দাত বানিয়ে ফেলবো। কোথায় তুই আর কোথায় আমি। দুই দিন পর আমার বিয়ে হবে আমার বাচ্চা কাচ্চা তোকে মামা ডাকবে। এরপর দেখা যাবে তুই বড় হতে হতে আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে। একটু খানি ছেলে আসছে আমাকে বিয়ে করতে আগে জেএসসি দিয়ে পাশ করে নে। যদি ফেইল করিস তাহলে তোর খবর আছে। যা বাসায় যা গিয়ে পড়তে বসবি। নয়লে তোর মাকে বলে মোটা বেডির সাথে বিয়ে দিয়ে দিমু।(রেগে)

রিফাত ঃ এই না হায়াত আপু আমি তোহ মজা করছিলাম। আমি আসি বাই ( বলে দৌড় দিলো)

এইদিকে আয়াত, আনিশা,প্রিসা হেসে কুটিকুটি।

আয়াতঃ সত্যি হায়াত রাজি হলেও পারতি। তুই এইচএসসি দিবি তোর জামাই জেএসসি দিবে আহা কতো সুন্দর কাপল হাহাহাহা।

হায়াতঃ হ্যা হ্যা খুব হাশি পাচ্ছে তোদের তাইনা। দেখবি একেবারে দরজাল জামাই জুটবে তোদের কপালে।(রেগে)

আনিশাঃ আমাদের কপালে দরজাল জুটবে কি না জানি না। তোর কপালে শনি রবি সোম সব আছে।

প্রিসাঃ কেনো?

আনিশাঃ কেনো আবার খুব তোহ বড় বড় করে বলেছিলো ফেইল করবে না এইবার প্রথম ক্লাস টেস্টে আমরা ৫ জন আইসিটিতে ফেইল করেছি এখন আমাদের আরহাম স্যার সাবান দিয়ে ধুয়ে দিবে।

হায়াতঃ আরে দূর কিছুই করবে না। স্যারকে পটিয়ে ফেলবো দেখিস।

আয়াতঃ স্যারকে প্রেমের জ্বালে পটিয়ে ফেলবি (অবাক হয়ে)

হায়াতঃ আরে না প্রেমের জ্বালে কেন পটাবো দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পড়েছে নাকি। পটাতে হলে আমার ক্রাশকে পটবো ওই নীল চোখওয়ালা আরহাম নীলবাবুকে না হুহহ।

প্রিসা,আয়াত,আনিশাঃ হ্যা হ্যা জানি তুই যে কি পটাবি।

হায়াতঃ তোদের কি আমাকে বিশ্বাস হয় না । তোরা দেখিস নীলবাবুকে এমন বাটার মাখবো যে সে আমাদের কিছুই বলবে না।হুহহ (ভাব নিয়ে)

★★★
রাত ১১.৩০ টায় হায়াত, আয়াত, আনিশা, প্রিসা মুই বেয়ে কারো বারান্দায় উঠে কারো রুমে গেলো।

হায়াত,আয়াত,আনিশা,প্রিসাঃ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ হ্যাপি বার্থডে গোলাপি (চিল্লিয়ে বলল)

অর্পা চিল্লাচিল্লি শুনে লাফ দিয়ে উঠে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। কারন পুরো রুমে বেলুন দিয়ে সাজানো হাতে গিফট আর কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর বান্ধুবিরা। আর পাশেই দাড়িয়ে আছে আরহাম ও আরনাব।

হায়াতঃ তুই এমন দেবদাসের মতো বসে আছিস কেনো। উঠ তোহ।

অর্পাঃ তোদের আমার জন্মদিন মনে ছিলো।

আয়াতঃ না আমাদের কেন মনে থাকবে। আমরা কি মনে রাখতে পারি সব তোহ তুই মনে রাখিস (হালকা রেগে)

অর্পাঃ আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো।

হায়াতঃ চুপচাপ এসে কেক কাট তোহ। অনেক কষ্টে করে ৫০ বার রেসিপি দেখে কেকটা বানিয়েছি।

আরহামঃ তুমি কেক বানিয়েছো।(অবাক হয়ে)

হায়াতঃ জিই হ্যা আমি বানিয়েছি(ভাব নিয়ে)

আরহামঃ তাহলে মনে কর অর্পা তোর আর কেক কাটা লাগবে না। কেকে তোহ ১২ টা থেকে ১৩ টা বানিয়ে ফেলেছে।

হায়াতঃ কি যে বলেন না নীলবাবু একবার খেয়ে দেখুন তাহলেই বুঝবেন আমি যে কতো ভালো রাধুনি (মুচকি হেসে)

আরহামঃ এর আবার কি হলো এমনিতে তোহ কথায় কথায় বাকা উত্তর দেয় আজকে এতো সুন্দর করে কথা বলছে। এর মতলব তোহ ঠিক লাগছে না (মনে মনে)

অর্পা কেক কাটলো। কেক খেয়ে দেয়ে অর্পা নিচে গেলো। আর অর্পা না আসা পর্যন্ত হায়াত, আয়াত, আনিশা,প্রিসা, আরহাম ও আরনাব অর্পার রুমে আছে।

আরনাবঃ ভাই যদি একবার দাদী জানতে পারে যে অর্পা রাতে ইভানের সাথে আছে আর আমরা মেয়েদের সাথে আছি না জানি কি করে।

আরহামঃ হুম তাই ভাবছি ছোটু। দাদীমা ঘুমাচ্ছে। আর সে একবার ঘুমালে চুরে এসে যদি তাকে চুরি করেও নিয়ে যায় না টের পাবে না।

আরনাবঃ তা অবশ্য ঠিক।

★★★
ইভান অর্পাকে নদীর পাড়ে নিয়ে আসলো অর্পার চোখ বাধা।

অর্পাঃ ইভান কি করছো কোথায় নিয়ে এসেছো।

ইভানঃনিশ্চুপ
ইভান অর্পার চোখ খুলে দিলো অর্পা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কারন নদীর পাড়ে একটা টেবিল তার উপর ক্যান্ডেল, বেলুন দিয়ে সাজানো টেবিলের মাঝে কিছু একটা ঢেকে রাখা হয়েছে।

ইভানঃ শুভ জন্মদিন গোলাপি। তুমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। ভালোবাসি_তোমায় গোলাপি। আজকে তাওমার জন্য স্পেশাল দিন তাই সেটাকে আরেকটু স্পেশাল করার চেষ্টা আরকি।

অর্পাঃ আমিও তোমায় ভালোবাসি ইভান। তোমাকে আমি প্রথম স্কুলে দেখেছিলাম হায়াত ও আয়াতকে নিতে এসেছিলে। তখন থেকেই আমি তোমার অপেক্ষায় থাকতাম তোমার জন্য আমার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি হতো। এক অজানা_অনুভূতি যা অন্য কারো জন্য হতো না। এরপর যখন তুমি আমায় প্রথম বলেছিলে ভালোবাসি আমি এতো খুশি হয়েছিলাম বলার বাহিরে। আর প্রতিবছরের মতো এই জন্মদিনেও তুমি আমায় নতুন করে সারপ্রাইজ দিয়েছো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ইভান অর্পার কপালে চুমু দিলো। এরপর অর্পাকে নিজের হাতে রান্না করা নুডলস খাইয়ে দিচ্ছে। অর্পার প্রিয় খাবার নুডলস 🍝🍜

★★★
আনিশা, প্রিসা ঘুমে বিভোর। আয়াত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আরহাম নিজের ফোনে জেশিকার সাথে চেটিং করছে। হায়াত ফোনে ডোরেমন দেখছে।

আরনাব আয়াতের পাশে এসে দাড়ালো। আয়াত একবার আরনাবের দিকে তাকিয়ে। আবার বাহিরের দিকে তাকালো।

আরনাব নিরবতা ভেঙ্গে বলল
আরনাবঃ আয়াত তোমরা এতো রাতে অর্পাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য চলে এসেছো। আর এইভাবে মই বেয়ে এসে রুম সাজিয়ে সারপ্রাইজ দেওয়ার আইডিয়া আসে কিভাবে তোমাদের মাথায়।

আয়াতঃ স্যার আমাদের মাথায় না হায়াতের মাথায়। আমরা সব কিছু হায়াতের উপর ছেড়ে দেই বাকিটা হায়াত যা ভালো বুঝে তাই করে।আর আমরা ওকে সাপোর্ট দেই।

আরনাবঃ হুম আচ্ছা তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে।

আরনাবের এমন কথায় আয়াত অবাক চোখে তাকালো।
আরনাবঃ না মানে যদি আপত্তি না থাকে বলতে পারো। মনে করো আমি তোমার স্যার নই ফ্রেন্ড ভাবো আমায়।

আয়াতঃ নাহ নেই। তেমন কাউকে ভালো লাগেনি তাই নেই। আমি পিউর সিংগেল হুহ (ভাব নিয়ে) আপনি কারো প্রেমে পড়েননি।

আরনাব আয়াতের প্রশ্নে এক ধ্যানে সামনে তাকালো।
আয়াত আরনাবের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরনাবঃ প্রেমে পড়েছি কি না জানি না তবে একজনের জন্য আমার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি হয় এক অজানা_অনুভূতি। তার প্রতিটি কথা প্রতিটা শব্দ আমায় মুগ্ধ করেছে। তাকে নিয়ে নতুন করে সপ্ন দেখছি। তাকে বোঝার চেষ্টা করছি। (এই বলে আরনাব থামলো

আরনাব এক ধ্যানে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে আয়াত আরনাবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

★★★
হায়াত ফোন রেখে আরহামের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

আরহাম নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত। ৫ মিনিট এইভাবে থেকে হায়াত আরহামের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আর গালে হাত দিয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরহাম হায়াতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো

আরহামঃ কি ব্যাপার এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন। কখনো কি কোনো ছেলে দেখোনি নাকি।

হায়াতঃ ছেলে তোহ দেখেছি কিন্তু কচ্ছপ দেখিনি ( মনে মনে) নীলবাবু মার অনেক বোরিং লাগছে।

আরহামঃ নীলবাবু(অবাক হয়ে) কে নীলবাবু।

হায়াতঃ অফফো আপনি নীলবাবু কলেজে স্যারবাবু আর বাকি যায়গায় নীলবাবু কারন হলো আপনার চোখ নীল তাই নীলবাবূ।

আরহামঃ হায় আল্লাহ এই মেয়ে যে কতো কি করে (আস্তে করে)

হায়াতঃ কিছু বললেন নীলবাবু।

আরহামঃ হ্যা না। তোমার বোরিং লাগছে এতে আমি কি করবো।

হায়াতঃ কি করবেন মানে আমার সাথে খেলবেন।

আরহাম্ ফোন রেখে ভ্রু কুচকে তাকালো।
হায়াতঃ কি হলো ভয় পেয়ে গেলেন তাই না হেরে যাবেন বলে। আমি জানি আমাকে কেউ হারাতে পারবে না।

আরহামঃ আচ্ছা কি এমন খেলা যে তোমাকে কেউ হারাতে পারবে না। আর তুমি খেলাও পারো আমি তোহ ভাবলাম ঝগড়া ছাড়া আর কিছুই পারো না।

হায়াতঃ কথায় কথায় অপমান দেখে নিবো আপনাকে( মনে মনে) আরে স্যার কি যে বলেন আমার এতো প্রশংসা না করে বলুন খেলবে কি না।

আরহামঃ ঠিক আছে কি খেলা।

হায়াতঃ চুড়ুই পাখি বারোটা….

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here