অপ্রেমের প্রিয় অধ্যায় পর্ব -১২

#অপ্রেমের_প্রিয়_অধ্যায়
#পর্ব_১২ (ঝাল!)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ

কলটা তড়িঘড়ি করে কেটে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চা-টা শরবতের মতো এক চুমুকে গিলে ফেলল তনুজা। নিজেকে স্থির করে ভাবতে লাগল শুদ্ধর বিষয়ে। ছেলেটার চোখ-মুখে মায়া উপচে পড়ে। এত্ত মিষ্টি একটা ছেলেকে এড়ানো যায় না। শুদ্ধর সাথে যদি তনুজার বাচ্চা কালে দেখা হতো, তবে গাল দুটো টেনে দিতে ভুলত না। বলা বাহুল্য, তনুজার মনে শুদ্ধর প্রতি কোনোরূপ দূর্বলতা এখন অবধি নেই; ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনাও তলানিতে। পাথর-হৃদয়া তনুজা, নিজের অনুভূতির পরিচালনা নিজেই করতে পারে। তবুও তনুজা থামল। জীবনের এত এত আফসোসের ভীড়ে আরও একটি আফসোস স্বযত্নে তুলে রাখল, “শুদ্ধ! তুমি কেন আরও আগে এই দুনিয়ায় এলে না?”

ওপাশে শুদ্ধ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইল। তারপরই খেয়াল করল নিজের দিকে। শাওয়ার নিয়ে আর টি-শার্ট গায়ে জড়ায়নি। ব্যাপারটা ‘তাতে কী?’ বলে আকাশে উড়িয়ে দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে ডাইনিংয়ে এলো। গলা উঁচিয়ে শাওনকে ডাকল, “আ-রে ওও শাওইন্যা! খাবিনি?”

শাওন উত্তর দিতে গিয়েও থেমে গেল—শুদ্ধকে নিজের টোনে কথা বলতে দেখে। তারপর ফিক করে হেসে ফেলল। সঙ্গদোষ বলেও তো একটা শব্দ আছে!

_____
পরদিন শুদ্ধদের সাথে তনুজার ক্লাস ছিল না। তাই শুদ্ধ ভার্সিটিতে গেলেও, ডিপার্টমেন্টের ভবনে ঢোকেনি। জোড়া পুকুরটির পাড়ে বসে রইল সারাটি সকাল। ক্লাসে শুদ্ধকে না পেয়ে তার বন্ধুরা ধরে নিয়েছে—সে তার ম্যামের পিছে পিছে ঘুরছে। কিন্তু বাস্তব তো তা নয়। শুদ্ধ আর যাই করুক না কেন, তনুজার ক্ষতি চায় না।
তনুজা অফিস-রুম থেকে উঁকি দিয়ে বেশ কয়েকবার দেখেছে, শুদ্ধ সেই তখন থেকে এখানটায় বসে আছে। আবারও দেখল। কিছু বলার নেই তার। তাই, চোখের চশমাটা ঠিক করে সামনের বইটা দেখতে লাগল।
পাড়ে বসে পুকুরে পাথর ফেলতে ফেলতে শুদ্ধ ভেবে যাচ্ছিল, জীবন ঠিক কীভাবে এগোচ্ছে। সে সাঁতরে চলেছে। কূল পাচ্ছে না। না না, পাচ্ছে। একটাই পাচ্ছে। সেটা হলো স্বয়ং তনুজা। আনমনে ছক কষতে থাকল কিছু একটার। আর ভাবতে লাগল কোনো এক নন্দিনীর সেই একাকী দিনগুলোর কথা। এগুলো জানতে কী বেগই না পোহাতে হয়েছিল শুদ্ধকে!

ঠিক এভাবেই কেটে গেল আরও দুটো দিন। শুদ্ধ-তনুজার কথা-বার্তা নেই। ক্লাসে এলেও, মাঝে হাজার মাইলের দূরত্ব থাকে; মানসিক দূরত্বটাই তো মূল! তনুজা ভেবেই নিয়েছে, শুদ্ধর মস্তিষ্কে সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এদিকে শুদ্ধর মাথায় কী খেলছে—তা হতে সে নিজেই অজ্ঞাত।

সন্ধ্যায় দিশার হলুদ। শাওনের নিমন্ত্রিত হওয়ার দরুন, শুদ্ধও সাথে যাবে। প্রাপ্তি দাদার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে, এজন্য আসতে পারেনি। ওদিকে তুহিন নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ, বরাবরই হৈচৈ এড়িয়ে চলে। তাই আর আসেনি সে।

দুজনেই তৈরি হয়ে সেন্টারে গেল। চতুর্থ তলায় দিশার হলুদ সন্ধ্যা হচ্ছে। শুদ্ধ আর শাওন ভেতরে প্রবেশের পর থেকেই খেয়াল করল, অনেকের দৃষ্টি তাদের উপর। অবশ্য দু’জন পুরুষই ভারি সুদর্শন এবং আকর্ষণীয় বটে! শাওন শুদ্ধকে ইশারায় ওপাশে দাঁড়াতে বলে সোজা হেঁটে দিশার কাছে চলে গেল। দিশার পরনে গাঢ় সবুজ জামদানি, আটপৌরে করে পরা; গায়ে কাঁচা হলুদের গয়না। শাওন মুগ্ধ হয়ে হাসল। স্টেজে দিশাকে একা বসে থাকতে দেখে সে এগিয়ে গিয়ে পাশের খালি জায়গাটায় বসে পড়ল। ফোন বের করে সেলফি তোলার ভান করে বলল, “বিয়ের হলুদ মাখার আগেই দেখি সুন্দরী হয়ে গেছ! দুলাভাই জিতসে, মাশাআল্লাহ্!”

দিশা চোখ তুলে তাকাল। না চাইতেও চোখ দুটো ছলছল করছে। কোনোমতে অশ্রু সামলে নিয়ে শাওনের উদ্দেশ্যে বলল, “তুমি চাইলেই কিন্তু আমি তোমার!”

শাওন ঠোঁট থেকে হাসি একদমই সরাল না। বরং দিশার দিকে আরও খানিকটা চেপে বসে বলল, “চাই না।”

তারপরই সুর করে গেয়ে উঠল, “চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হওওও! পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি কারো নও!”

পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল দিশার চাচাতো বোন। শাওনকে দেখে দাঁড়িয়ে বলল, “বাব্বাহ! ভালো গান জানেন তো!”

শাওন বাঁকা চোখে অপূর্বার দিকে তাকিয়ে বলল, “আসলে সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে দেখলে, গানটা এমনি এমনিই চলে আসে..”

অপূর্বা প্রশংসা গায়ে ভালো মতো মেখে নিয়ে হেসে বলল, “তা বউয়ের কী লাগেন?”

শাওন বাহু দিয়ে দিশাকে সামান্য গুতো দিয়ে বলল, “বলো বলো, কী লাগি!”

দিশা নিজেকে সামলে নিয়ে হাসল, “ফ্রেন্ড লাগে।”

অপূর্বা চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, “এই! তুই এই ফ্রেন্ডকে আগে কই লুকিয়ে রেখেছিলি, আপু? বলতো!”

দিশার কিছু বলার আগেই শাওন বলল, “এতদিন সুন্দরী কাউকে দেখিনি, তাই গর্তে থেকে বের হইনি। আজ বের হওয়া তবে সার্থক, মিস..”

“অপূর্বা!”

“হ্যাঁ, অপূর্বা। বুঝলে?”
এটুকু বলে পকেট থেকে একটা কার্ড এগিয়ে হাতের ইশারায় বোঝাল, “কল মি লেটার!”

অপূর্বা কার্ডটির দিকে না তাকিয়েই মুচকি হেসে হ্যান্ড ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে নিল। পেছন থেকে তার মায়ের ডাক আসায়, সে ওদিকটায় চলে গেল। যাওয়ার আগে পরোক্ষভাবে শাওনকে বোঝাল, “আই’ল কল ইউ, টুনাইট!”

অথচ, কার্ডটা ভালো ভাবে দেখলেই বুঝতে পেত, সেটায় কোনো নম্বর নেই। সেটা এক ফার্নিচারের কার্ড। লাস্ট টাইম একটা ফার্নিচারের দোকানে গিয়েছিল তারা। শুদ্ধর রাগের উপকারার্থে টি-টেবিলটি ভেঙে যাওয়ার জন্য নতুন করে কেনার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল, সেখান থেকেই দিয়েছিল। পকেটে পুড়ে আর সরাতে মন নেই। আজ হাতে পড়ল, দিয়ে দিলো। সুন্দরী মেয়েদের প্রথম দেখলে, কিছু একটা দিতেই হয়। হোক তা টাকা কিংবা পকেটে অযতনে পড়ে থাকা কাকলি ফার্নিচারের কার্ড।

অপূর্বার যেতেই দিশা মুখ খুলল, “আমাকে দেখিয়ে এসব না করলেই চলত না বুঝি?”

শাওন এক গাল হেসে বলল, “উঁহু, চলত না।”

তারপরই দিশা শাওনের চোখে চোখ রাখল। ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে বলল, “আমি কি তোমার এতটাই অযোগ্য?”

_____
শুদ্ধ এক কোনায় জুসের গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে অ্যারেঞ্জমেন্টস দেখছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ-ই তার নজরে আটকে গেল, ল্যাভেন্ডার জামদানি পরিহিত এক শুভ্রাঙ্গীর দিকে। সে হেসে হেসে কিছু মহিলাদের সাথে গল্প করে যাচ্ছে। প্রথমে তনুজাকে দেখে বিশ্বাস করতে না পারলেও, পরে ঠিক পাশেই রাবেয়াকে দেখতে পেয়ে শুদ্ধর খেয়ালে এলো, দিশার বাসাটা তো তনুজাদের কলোনিতেই!
বিষয়টা বোধগম্য হতে মোটেও শুদ্ধর বেগ পোহাতে হয়নি। হালকা কেশে গলা ঝেড়ে এগিয়ে গেল সেখানটায়। সেখানে তনুজা বাদেও রাবেয়াসহ আরও দু’জন মহিলা আছে।

শুদ্ধ কাছাকাছি দাঁড়িয়েই মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বলে উঠল, “হেই লেডিস! হোয়াটসআপ!”

আশাতীতভাবে শুদ্ধকে এখানে দেখে তনুজা প্রথমে ভড়কে গেল। এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাল। শেষ দৃষ্টি গিয়ে ঠেকল শুদ্ধর গভীর চোখপানে। দেখল—সে চোখে দুষ্টুমি খেলছে।

রাবেয়া প্রথমে শুদ্ধকে দেখে ঠিক চিনতে পারল না। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় প্রথম সাক্ষাৎ মনে এলো, এরপরই বলে উঠল, “আর-রে শুদ্ধ, কী খবর! সেই যে, গেলে! এরপর আর দেখাই নেই!”

শুদ্ধ মাথা চুলকে হাসল। পাশের মহিলারা রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করছে, “কে, ভাবি?”

রাবেয়া হাসতে হাসতে বলল, “আমাদের তনুজার কাজিন ও। কী মিষ্টি ছেলে! এত সুন্দর সুন্দর কথা বলে না! শুধু শুনতেই মন চায়। এই, তুমি কল দাওনি কেন?”

শেষোক্ত প্রশ্নটি রাবেয়া শুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বলল। শুদ্ধ ঠোঁট উলটে বলল, “দিতাম তো! কিন্তু আমি ভুলে দশ ডিজিট তুলেছিলাম। একটা নম্বর মিসিং!”

“কী বলো! আচ্ছা, আমি আবার দিচ্ছি। নাও।”

শুদ্ধ এবার ভালোভাবে দেখে রাবেয়ার নম্বরটি নিল। কিছুক্ষণ কথা-বার্তা শেষে একে একে করে সবাই কেটে পড়তে লাগল। এই মুহূর্তে রইল রাবেয়া আর তনুজা। রাবেয়া একাধারে শুদ্ধর সাথে কথা বলে যাচ্ছে। অস্বস্তিকর এই পরিবেশটিতে তনুজা কেবল নীরব শ্রোতা। ঠিক সেই মুহূর্তে রাবেয়ার ফোনে একটা কল এলো। বাড়ির কল! বাচ্চাদের রেখে আসায় খুব জ্বালাতন করছে রাবেয়ার স্বামীকে। জলদি ফিরতেই কলটা করেছে। অগত্যা রাবেয়া তনুজাকে হলুদটা উপভোগ করতে এবং শুদ্ধকে ‘তনুজাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিয়ো। রাত হয়ে যাবে তো!’ বলে বিদায় নিল।

জড়িমা কাটাতে শুদ্ধ কাশল। তনুজা তাকাল। শুদ্ধ তা দেখে হাসল। হাসতে হাসতে বলল, “ম্যাম, ভালো আছেন?”

ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে চোখ দুটো ভীড়ে স্থির রেখে তনুজা বলল, “ভালো আছি।”

“আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না?”

তনুজা আবারও তাকাল শুদ্ধর দিকে। বলল, “না।”

শুদ্ধর এতে তেমন কিছুই গেল কিংবা এলো না। পূর্বের ভঙ্গিমায় রইল, সেভাবেই বলতে থাকল, “আমিও ভালো আছি।”

তনুজা শুদ্ধকে এখানে ফেলেই স্টেজের উলটো দিকে হাঁটা দিলো। এতক্ষণ রাবেয়া সাথে থাকায় সে চেয়েও শুদ্ধকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। হাঁটতে হাঁটতেই শুনতে পেল, “ম্যাম, এত জোড়ে কেউ হাঁটে? একটু ধীরে হাঁটুন না! আমি পা মেলাতে পারছি না। উফ! শাড়ি পরেও এভাবে কীভাবে হাঁটেন?”

তনুজা ডানে তাকিয়ে শুদ্ধকে দেখল। শুধাল, “পিছু নিচ্ছ কেন?”

“ম্যাম, রাবেয়াপু বলেছিল আপনার খেয়াল রাখতে। আর আমি নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে ভীষণ সচেতন। আপনাকে একা কী করে ফেলি, বলুন? তাছাড়া বিয়ে বাড়িতে নানান ধরণের মানুষ থাকে, এর মধ্যে একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই দাদি-নানিরা তাদের জোড়া বানাতে উঠে-পড়ে লেগে যায়। অত কাহিনির দরকার কী? তার চেয়ে জোড়া-জোড়া ঘুরি, চলুন।”

“তুমি একটু বেশিই বলছ না, শুদ্ধ?”

শুদ্ধ বরাবরের মতো হেসে বলল, “আমি কম বলতাম কবে?”

তনুজা জানত, ছেলেটা এমনই কোনো ত্যাড়া উত্তর দেবে। এর চেয়ে বেশি কী-ই বা আশা করা যায়! শুদ্ধ ওদিকে কথা বলতেই থাকল। আর তনুজা বিশ্বের সেরা শ্রোতার ভূমিকা পালনে ব্যস্ত। এভাবে কিছুটা সময় কাটতে ওরা বুফের পাশে চলে গেল। এখানে ফুচকার ব্যবস্থা আছে। শুদ্ধ তনুজাকে শুধাল, “ম্যাম, ফুচকা খাবেন?”

তনুজারও খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই আর না করল না। শুদ্ধ দুই প্লেট ফুচকা দিতে বলে, তনুজাকে জিজ্ঞেস করল, “ম্যাম, ঝাল কেমন?”

“একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি।”

এমন এক চাঞ্চল্যকর উত্তরে শুদ্ধ না হেসে পারল না। সে ফুচকা খায় না, খেলেও ঝাল ছাড়া; লালের চিহ্ন মাত্র থাকে না। সেখানে আজ শুদ্ধ উভয় প্লেটেই ‘একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি’ ঝাল দিতে বলল।
ফুচকা হতেই প্রথম প্লেটটা হাতে নিয়ে তনুজার দিকে এগিয়ে দিলো। তনুজা ফুচকা নিল এবং খেতে শুরু করে দিলো। এরপর শুদ্ধও প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তাকিয়ে রইল তনুজার দিকে। তনুজার সে-খেয়াল নেই। সে তো ফুচকায় সমস্ত মনোযোগ স্থির করে রেখেছে। চিত্তাকর্ষক সকল অনুভূতি কেবল শুদ্ধর মধ্যেই খেলে বেড়াচ্ছে। ঠিক এই কারণে সে ফুচকা না খেয়ে তনুজার দিকে তাকিয়ে রইল। প্রচুর ঝাল! প্রতিটা ফুচকার মধ্যে শুকনো মরিচ গুড়ো এবং কাচা মরিচ কুচি—উভয়ই একদম ভরে ভরে দেওয়া। তনুজা খাচ্ছে, বারে বারে শ্বাস টানছে, দম ফেলছে। ঝালে জিভের গোড়া প্রায় অবশ হয়ে যাচ্ছে। তবুও খাওয়া থামাচ্ছে না!

দেখতে দেখতেই শুদ্ধর চোখ গেল, তনুজার ঠোঁটে। স্বীয় মনকে শাসালো সে, “ম্যাম লাগে তোর!”
মন হেসে উত্তর দিলো, “এই মুহূর্তের জন্য সব ভুলে যা, ভুলে যা উনি তোর ম্যাম। একটা সাধারণ মেয়ের মতো ট্রিট কর না!”
“চুপ!”
মনকে ধমকিয়ে চুপ করাল, শান্ত আর সে হতে পারল না। তনুজাকে দেখতে দেখতেই ফুচকা মুখে তুলল। তখনই বুঝল, তার মুখের ভেতরটা ঝলসে যাচ্ছে! এতটাই ঝাল! তনুজার খাওয়া প্রায় শেষ। তাকাল এক পলক শুদ্ধের দিকে। ওকে খেতে না দেখে বলল, “কী? খাও!”

শুদ্ধ হেসে মাথা নেড়ে বোঝাল, “খাচ্ছি!”
কিন্তু খেতে গিয়ে যে কী অনুভব করছে, তা কেউ বুঝতে পারছে না। শেষের দুটো মুখে দিতে গিয়ে শুদ্ধর অবস্থা নাজেহাল। নাক-মুখ গরম হয়ে গিয়েছে। চোখে জল জমা হয়ে আছে। তনুজা চিন্তিত স্বরে শুধাল, “কী ব্যাপার, শুদ্ধ? ঝাল লেগেছে নাকি?”

শুদ্ধ কিছু বলল না। ত্বরিতে কেবল ডানে-বাঁয়ে মাথা নাড়ল। তনুজাও আর কিছু বলল না। এদিকে শুদ্ধ খাওয়া শেষও দিলো না। প্লেটটা রেখে তনুজার উদ্দেশ্যে বলল, “ম্যাম, একটু আসি, কল করব একটা।”

“হুম, যাও।”

অনুমতি পেতে দেরি, শুদ্ধর যেতে দেরি না। এক প্রকার দৌড়েই আড়ালে চলে গেল। আর তারপর হলো বিস্ফোরণ। দু’হাতে মুখ চেপে, ভার্সিটির অধিকাংশ রমনীর বুক-কাঁপিয়ে বেড়ানো শুদ্ধ এখানটায় বাচ্চাদের মতো প্রায় লাফিয়েই উঠল! ইশ! নিজেদের ক্রাশের এই অবস্থা যদি মেয়েরা দেখতে পেত!

চলবে..

শব্দসংখ্যা: ১৭২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here