উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -০২+৩

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_02+3
#Writer_Fatema_Khan

ট্রেনের ওয়াশরুমে গালের হলুদ ধুয়ে নিল কথা। সাথে খুলে ফেলল গায়ের সব ফুলের গয়না। কিছুক্ষণ আগে তার কামরায় থাকা মহিলারা বলাবলি করছিল তাকে নিয়ে। কথা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইল কিছু সময়। কথা নিজের বোকামির কথা ভেবেই কান্না পাচ্ছে আবার। ভাইয়া সামনে থেকেও সে কি করে এই বোকামি করল। চোখের পানি যেন বাধ বাঁধছে না। হঠাৎ তার মনে হল কেউ তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। পিছন ফিরে দেখে তার কামরায় থাকা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কথার দিকে তাকিয়ে আছে। কথা পাশ কেটে চলে আসতে নিলে ছেলেটা কথাকে ডাক দেয়। আর কথা থেমে যায়।

—আপনি কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

কথা কিছু না বলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কথার ছেলেটিকেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। যেচে এসে কথা বলার কি আছে?

—আপনি চুপ করে আছেন কেন? আসলে হয়েছে কি আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আজ আপনার গায়ে হলুদ ছিল। কিন্তু আপনি ট্রেনে কেন?

—আমি পালিয়ে এসেছি বাড়ি থেকে কারণ এই বিয়ে আমি করব না। আর আমি একজনকে ভালোবাসি।

—আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু যাকে ভালোবাসেন সে কোথায় আর এভাবে কাঁদছেন কেন?

—সে বলেছে আমাকে বিয়ে করবে না তাই কোনো রাস্তা না দেখে আমি ট্রেনে উঠে যাই। আচ্ছা এই ট্রেন কোথায় থামবে আর কত সময় লাগবে সেখানে যেতে?

—ট্রেন ঢাকা যাচ্ছে। আর পৌছাতে আরও ৫-৬ ঘন্টা লাগবে।

—আচ্ছা। আপনারা কি ঢাকা থাকেন নাকি এখানেই

—না আমরা ঢাকা থাকি। সব বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছিলাম। আজ ফিরে যাচ্ছি।

—ওহ!

—আচ্ছা আপনি কোথায় উঠবেন ঢাকাতে

—তা ঠিক জানিনা, দেখি আমার এই উদ্দেশ্যহীন জীবন কোথায় গিয়ে থামে

—আপনার বয়স কত?

—১৪ তে পা দিয়েছি এবার

—এত কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে আপনাকে

— হুম আমাদের বাড়ির সব মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়।

—ঠিক আছে ভেতরে আসুন এমনিতেও অনেক ঠান্ডা পরছে।

—জি যাচ্ছি

কথা আর ছেলেটি ভেতরে গিয়ে যে যার মত বসে পরল। ছেলেটি কয়েকবার কথার দিকে তাকালেও কথা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার নিষ্পলক চোখে ঘুম নেই আছে হাজারো প্রশ্ন “কি হবে তার?”

_________

কথার বাড়িতে এখন কান্নার জোয়ার বইছে। তাদের বাড়ির আদরের মেয়ে আজ কোথায় আছে কেউ জানে না। কথার মায়ের জ্ঞান ফিরে নি এখনো। সেই রাতে সে জ্ঞান হারিয়েছে মেয়ের এমন একটা কাজ সে মানতে পারে নি। মাঝে একবার জ্ঞান ফিরলেও কথাকে কাছে না পেয়ে আবার জ্ঞান হারালো সে। রিয়ান তার মায়ের কাছেই বসে আছে। তার ছোট চাচী মানে শিলার আম্মু বারবার এসে কথার মাকে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু তার জ্ঞান ফেরার কোনো নাম নেই।

কথার বাবারা দুই ভাই আর এক বোন। কথার বাবা আরমান রহমান বড় আর ছোট ভাই আশরাফ রহমান। তারা যৌথ পরিবার। ছোট চাচার এক মেয়ে শিলা। আর আরমান রহমানের এক ছেলে আর এক মেয়ে। পরিবারে শিলা সবার ছোট। তার ১৩ বছর। রিয়ান ২০বছরে পা দিল আর কথার ১৪। কথার ফুফি রাজিয়া দেশের বাইরে থাকে। এবার দেশে এসেছেন নিজের ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য। আর এসেই তাদের কথাকে পছন্দ হয়ে যায়। আর রাজিয়ার ছেলে নিবিরও ছেলে হিসেবে খুবই ভালো তাই কেউ অমত করেনি। কথার মা আফসানা ও চাচী নাদিয়া বেগম আগেই বলেছিল মেয়ের বয়স কম একটু ভেবে দেখতে। কিন্তু কেউ তাদের কথা শুনে নি। আর আজ তাদের কথা না শোনার ফলে তাদের পরিবারে নেমে এল এতবড় এক ঝড়। রাতে কথার ফুফিকে কিছু না জানালেও সকালে তারা সব জেনে যায়। এখন বাড়ির সবাই খুব চিন্তাই কথাকে নিয়ে। তারা বাচ্চা মেয়েটার উপর এই বিয়ে চাপিয়ে না দিলেও পারত।

_________

সকাল ৭টার উপরে বাজে। আর ৩ঘন্টা পরেই ট্রেন ঢাকা পৌঁছে যাবে। কথা এখনো ঘুমাচ্ছে। রাতে হয়তো ঘুমাই নি তাই সকালেই ঘুমিয়ে পরেছে। কাল রাতের ছেলেটি কথার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রাতে কান্না করার ফলে চোখের পানির দাগ তার গালে রয়ে গেছে। ছেলেটির ইচ্ছে করলো কথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে কিন্তু নিজের ইচ্ছে নিজের মনেই দমিয়ে রেখে দিল। ছেলেটি নিজের মনেই ভাবল

—এই বাচ্চা মেয়েটা যাবে কোথায়? এত বড় ঢাকা শহর কাউকেই তো চিনে না আর আমার দ্বারাও কোনো সাহায্য করা সম্ভব না। তবে মেয়েটি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলল। আচ্ছা মেয়েটির নাম কি? জিজ্ঞেস করব উঠলে? না থাক আবার কিছু মনে করলে। জিজ্ঞেস না করাই ভালো। এটা তো বলতেই পারি তার বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা। এভাবে একা এতবড় শহরে বিপদ ছাড়া আর কিছুই নেই মেয়েটার জন্য। কিন্তু আমি বললে আবার খারাপ ভাববে নাতো। যদি ভাবে আমি তার একাকিত্বের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি। না না আমি কিছুই বলব না।

কথার পাশে থাকা মহিলাটি কথাকে ডেকে তুলে দেয় আর বলে

—এই মেয়ে উঠে যা। কতবেলা আর ঘুমাবি, রাতেও কিছুই খাস নি এখন কিছু খেয়ে নে

—আমার কাছে টাকা নেই

—কার কাছে যাবি তুই

—কারো কাছেই যাব না। আসলে আমি ঢাকার কিছুই চিনি না

—এই মেয়ে চুপ কাউকে এই কথা বলবি না। সবাই তোর সুযোগ নিবে। আচ্ছা শোন আমার কথা। আমি এক জায়গায় তোকে নিয়ে যাব আর ওইখানে দিয়ে আসব তুই যাবি আমার সাথে?

—আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন আর আপনাকেই বা কি করে বিশ্বাস করি?

—করেই দেখ। আর এই শহরে একা তো থাকতে পারবি না, তাই না। কারো তো সাহায্য লাগবে। তবে আমি জোর করব না আমার সাথে তুই নিজে যেতে চাইলেই আমি নিব।

—আচ্ছা আরেকজন মহিলা আছে উনিও আপনার সাথে যাচ্ছে?

—না সে আমার সাথের না। তুই উঠে পর আর এই নে আমার থেকে কিছু খাবার খেয়ে নে। আর ঘন্টা খানেক পর ট্রেন ঢাকায় চলে আসবে।

—আচ্ছা

কথা যেই উঠে যাবে দেখে সেই ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথা কিছু না বলে হাত মুখ ধুতে চলে গেলো। ছেলেটির বন্ধুরা তাকে বলল

—কিরে তোর কি হল সকাল থেকে দেখছি কেমন চুপচাপ বসে আছিস। কিছু হয়েছে কি তোর নাকি শরীর খারাপ?

—না তেমন কিছুই না, এমনি ভালো লাগছে না।

—আরে ট্যুরে এতদিন এত মজা করলাম আর এখন ফিরে যাচ্ছি তাই মনে হয় তোর খারাপ লাগছে তাই না

— হুম এটাই কারণ।

ছেলেটি নিজের মনে ভাবল

—আচ্ছা আমি কেন এই মেয়েটিকে নিয়ে এত ভাবছি? সেতো একটু পর কই চলে যাবে তার ঠিক ঠিকানাও থাকবে না আমার কাছে। তবে কেন জানিনা মেয়েটির জন্য খুব মায়া হচ্ছে। আমি কিছু করতে পারলে অবশ্যই করতাম। কিন্তু নিজেই তো লেখাপড়া করি মেয়েটির জন্য কি করব? সামনেই এইচএসসি এক্সাম তারপর তো…..

তখন কথা কামরায় ফিরে আসে আর ছেলেটি তার ভাবনা থেকে ফিরে আসে। কথা একটা শুকনো রুটি সাথে এক কাপ চা খেয়ে নেয়।

________

ট্রেন থেকে নেমে কথা এদিক ওদিক দেখতে থাকে। তখন ছেলেটি এসে কথার কাছে দাঁড়ায়।

—হয়তো আর কখনো দেখা হবে না আপনার সাথে। তবুও বলছি আবার আপনার সাথে দেখা হলে ভালো লাগবে। আর সাবধানে থাকবেন। এই শহরের বেশিরভাগ মানুষ ঠকবাজ হয়। তাই খুব সহজে কাউকে বিশ্বাস করবেন না। আর আপনার নামটা যেন কি

—আমার নাম কথা, কথা রহমান। আর আপনার নাম?

—আমার নাম…..

ছেলেটি নাম বলার আগেই সেই মহিলাটি এসে কথাকে বলে

—কিরে মেয়ে চল তাড়াতাড়ি। আমার দেরি হচ্ছে।

— হুম আসছি। আপনি চলেন

—তাড়াতাড়ি ওই গাড়ির কাছে আয়

বলে মহিলাটি চলে গেলো গাড়ির কাছে। কথা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল

—আচ্ছা তাহলে কি আসি। ভালো থাকবেন

—আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন।

কথা গাড়ির কাছে চলে গেলো। গাড়িতে উঠার আগে আরেকবার ছেলেটির দিকে ফিরে দেখল ছেলেটি এখনো কথার দিকেই তাকিয়ে আছে। কথা হাতে ইশারা করে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। ছেলেটিও হাতের ইশারায় বিদায় জানালো। তারপর তার বন্ধুদের কাছে চলে গেলো। কথার গাড়িও ছেড়ে দিয়েছে। কথার নতুন গন্তব্য কি হবে আবার কোনো নতুন বিপদ কথার জন্য অপেক্ষা করছে নাতো।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_03
#Writer_Fatema_Khan

পুরো বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় করছে সবাই। বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে আজ৷ সবাই ব্যস্ত বিয়ের কাজে। মেহমান আসছে তাদের আপ্যায়ন করা। চারপাশে একটা রমরমা ভাব। আজ রিয়ানের বিয়ে তার চাচাতো বোন শিলার সাথে। দেখতে দেখতে ৫বছর কেটে গেছে। শিলার এখন ১৮ বছর আর রিয়ানের ২৫ বছর। কথা যাওয়ার পর কেউ শিলার বিয়ের কথা কখনো ভাবে নি। শিলা যখন চাইবে তখন তার বিয়ে হবে। রিয়ান আর শিলা একজন আরেকজনকে পছন্দ করত তাই পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়ে ঠিক করে৷ তাদের একটাই আফসোস তারা তাদের আদরের মেয়েটিকে আর খুঁজে পায় নি। কথার মা এখনো কথার বাবাকেই দোষারোপ করে তার মেয়ে চলে যাওয়ার জন্য। এত কম বয়সে বিয়ে ঠিক না করলে আজ মেয়েটা তাদের কাছেই থাকত।

________

শিলাকে তার বান্ধুবিরা পার্লারে নিয়ে গেছে। বউ সাজে শিলাকে অপরূপ সুন্দরী লাগছে। লাল বেনারসি পরেছে শিলা আর সাথে গোল্ডের গয়না। আর সাজ কম্পলিট হওয়ার পর তো শিলাকে খুব সুন্দর লাগছে। এত খুশির মাঝেও শিলার মন খারাপ কারণ হল কথা। কথা তার একবছরের বড় ছিল কিন্তু দুইজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। এমনকি বিহানের কথাও শিলা জানতো কিন্তু আজ অবধি কাউকে বলে নি। আজ তার জীবনের সবচেয়ে বড় দিন আর এই দিনেই তার বোন হোক আর বন্ধু হোক সে তার পাশে নেই।

—এই শিলা কোথায় হারিয়ে গেলি, জিজুর কাছে নাতো?

শিলার বান্ধুবি মিলি বলে উঠলো।

—আরে না রিয়ানের কথা না। আসলে কথাকে নিয়ে ভাবছিলাম। আজ ও সবার আগে থাকত আর আজ সে নিজেই নেই কোথাও।

—চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে আর দেখিস কথাও ফিরে আসবে। আর কথা হয়তো কাউকে ভালোবাসতো তার সাথেই আছে মনে হয়।

—এটা তো কোনো ভাবেই সম্ভব না। কারণ কথা বিহান ভাইকে পছন্দ করতো। আর বিহান ভাই তো গ্রামেই ছিল কিন্তু কথাকে পাওয়া যায় নি। তারমানে ওই রাতে বিহান আসে নি। আমার কথার কোনো ক্ষতি না হয়ে গেছে। (শিলা নিজেই ভাবতে লাগলো)

—এই শিলা কি হল আবার চুপ হয়ে গেলি যে!

—কই কোথাও না। আচ্ছা তোদের সাজ শেষ হয়েছে? হলে আমাদের যাওয়া দরকার।

—যাব আর কি রিয়ান জিজু পালিয়ে যাবে না বুঝলি।

— হুম বুঝলাম।

তারপর শিলা মিলি আর বাকি বান্ধুবিরা কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেলো। শিলাকে একটা রুমে নিয়ে বসানো হলো। শিলা পৌছানোর কিছু সময় পর বরযাত্রী এসে পরে। সব ফরমালিটি শেষ করে রিয়ানকে স্টেজে বসানো হয়। তারপর কাজী এসে রিয়ানের কাছে বসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে। বিয়ে পড়ানোর পর কাজী রিয়ানকে তিনবার কবুল বলতে বলে। রিয়ান তিনবার কবুল বলে দেয়। শিলার কাছেও কাজী বিয়ে পড়িয়ে কবুল বলতে বলে। শিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে কান্না শুরু করে দেয়। সবাই বুঝানোর পর শিলাও কবুল বলে দেয়। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মোনাজাত ধরে। বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কিছু সময় পর শিলাকে স্টেজে আনা হয় আর রিয়ানের পাশে বসানো হয়। রিয়ান শিলার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল

—খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে

শিলা লজ্জা পেয়ে বললো

—তোমাকেও খুব ভালো লাগছে।

—এটা এভাবে লজ্জা পেয়ে বলতে হয়। আর কান্না করার কি ছিল কবুল বলার আগে?

—বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আমার কষ্ট হচ্ছে না বুঝি

—যেই বাড়ি থেকে বের হয়ে এখানে এলি ফেরার পর সেই বাড়িতেই যাবি তাহলে এত কান্না কিসের?

—তুমি মেয়ে হলে বুঝতে। এখন এসব তুমি বুঝবে না।

—তোদের বুঝাবুঝি হলে আমি আসব?

আয়ান তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বললো।

—তুই আবার লেইট। সব কাজেই তোর লেইট। এমন না হয় যে তোর বিয়ের দিন তুই ছাড়া সবাই উপস্থিত থাকবে। আর তুই সবার শেষে যখন গেস্টরা চলে যাবে তখন বিয়ে করতে আসবি।

—এমনটা হলেও মন্দ না কিন্তু।

সবাই হেসে উঠলো আয়ানের কথায়।

_______

সবাই নতুন বউ শিলা আর রিয়ানকে নিয়ে এসেছে। বাড়ির মেইন ফটকে দাঁড়িয়ে আছে তারা। রিয়ানের মা আর চাচী এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। সাথে আরও আছেন পারা প্রতিবেশি কিছু মহিলা। রিয়ানের মা শিলা আর রিয়ানকে বরণ করে ভেতরে নিয়ে আসে। বসার ঘরে এনে শিলাকে বসানো হয় আর রিয়ান উপরে চলে যায় সিড়ি দিয়ে। সেখানের কিছু আত্মীয় বলে উঠলো

—আজ যদি কথা পালিয়ে না যেত তাহলে তার ঘরে দুই একটা বাচ্চা থাকত।

—যা বলেছো ওই মেয়ে নিজের কপাল নিবে নষ্ট করলো।

—এই নতুন বউ তুমিও কিন্তু এখন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাবে বাচ্চার জন্য।

শিলা কিছুই বললো না। তাই শিলার ফুফি বললো,

—বিয়ে তো আমার ছেলের সাথে ঠিক হয়েছিল। যেখানে আমার কোনো সমস্যা নাই সেখানে আপনাদের কেনো? আর বাচ্চা কখন নিবে না নিবে এটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আর আপনি না বুঝলেন।

—হুহ বুঝছি সব।

রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়। শিলাকে বসানো হয় রিয়ানের রুমে। পুরো রুম কাচা ফুল দিয়ে সাজানো। ফুলের সুগন্ধে পুরো রুম সুরভিত হয়ে আছে। শিলার পরণে নীল জামদানি আর গায়ে ফুলের গয়না।

ঠিক সেই সময় দরজা খোলার শব্দে শিলা একটু নড়েচড়ে বসে। রিয়ান শিলার কাছে এসে বসে।

—বাব্বাহ এত বড় ঘোমটা! এই প্রথম তোমাকে এত লজ্জা পেলে দেখলাম।

—আচ্ছা হলে এবার আমার মুখ থেকে ঘোমটা সরাও।

রিয়ান শিলার মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে নেয়। শিলা লজ্জা পেয়ে যায়।

— সত্যি আজ তোমাকে অপরূপ লাগছে।

শিলা লজ্জায় রিয়ানের বুকে মুখ লুকায়। রিয়ান দুই হাতে শিলাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ধীরে দগীরে দুইজন চলে যায় এক অজানা ভালোবাসার শহরে। রাত যত গভীর হতে থাকল তাদের ভালোবাসাও গভীর হল।

_______

ফজরের আজানের ধ্বনিতে চারদিকে এক প্রশান্তি বয়ে গেলো। সূর্য এখনো উঠে নি। আড়মোরা ভেঙে ঘুম ঘুম চোখে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। এখনো চারদিক অন্ধকার। ওযু করে নামাজ আদায় করে নিল। নামাজ শেষ করে কানে এলো কিছু মধুর কিচিরমিচির শব্দের গান। বারান্দায় ছুটে গিয়ে দেখে পাখিরা ডাকছে সামনে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছের উপর। আবার উপরে তাকিয়ে দেখে কিছু পাখি এই গাছের ডান থেকে ওন্য গাছের ডালে উড়ছে। সূর্য তখন উকি দিচ্ছে পূর্ব দিগন্তে। আর এক জোরা নয়ণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। নভেম্বরের শেষের দিকে ঠান্ডা পরে। হালকা বাতাসে শরীরে কাপুনি দিয়ে যায়। সেই হাড়হীম করা ঠান্ডার ভেতর দাঁড়িয়ে প্রকৃতিকে স্বাগতম করছে সে। চোখ জোরা বন্ধ করে উপভোগ করছে সে। তার ধ্যান ভাঙে কারো ডাকে।

—কথা তোর প্রতিদিনের কাজ শেষ হলে এবার ভেতরে আয়। একদিন বড় একটা অসুখ বাধাবি এই ঠান্ডার ভেতর গায়ে গরম কাপড়ও নেই। কি যে করিস তুই।

কথা ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দেয়। ১৯বছরের যুবতি মেয়ে এখন কথা।

—পারিস তো এভাবে হাসতে। এবার আয় আমাদের আবার যেতে হবে তো।

—আমার হয়ে যাবে কনক ম্যাডাম। আপনি নিজে রেডি তো?

—আমি রেডি হব তুই আগে ভেতরে আয়। বাইরে প্রচুর ঠান্ডা পরছে।

—এই নে চলে আসলাম এবার ঠিক আছে

— হুম ঠিক আছে। আচ্ছা তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে আমাদের বের হতে হবে। আজ তো কলেজের একটা ফাংশন আছে। আর আমাদের একটা পারফরম্যান্স আছে ভুলে গেছিস নাকি?

—না ভুলি নি। আচ্ছা চল তাড়াতাড়ি করে যাই। কলেজে অনেক কাজও করতে হবে প্রোগ্রামের।

—আমিও সেটাই বলছি।

—আচ্ছা শোন প্রোগ্রামের চিপ গেস্ট যেন কে?

—আরে আমাদের দেশের বড় একজন বিজনেসম্যান আছে না রায়হান খান উনি।

—মনে পরেছে গতবারও উনি এসেছিল তাই না? ওনাকে দেখলে মনে হয় ওনার মত কাউকে আমি দেখেছি আগে তবে মনে পরে না আমার।

— হুম উনিই ছিল। আর তোর এই উলটা পালটা চিন্তা ভাবনা এবার অফ কর। ওনার মত আবার কাকে দেখবি, ওনাকের দেখেছিস হয়তো। আচ্ছা এবার চল।

—ঠিক আছে চল

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here