উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -৪+৫

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_04
#Writer_Fatema_Khan

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে কথা। সবুজ রঙের শাড়িতে মেরুন রঙের পারের একটি সুতির শাড়ি পরেছে কথা৷ চোখে মোটা করে কাজল হাত ভর্তি সবুজ আর মেরুন রঙের কাচের চুড়ি। মাথায় খোপা করে গাজরা পরেছে। কপালে মেরুন টিপ। নিজেকে আবার দেখে নিল কথা।

—না ভালো লাগছে না কপালে তো শুধু কালো রঙের টিপ মানায়। অন্য কোনো রঙ কপালকে ফুটিয়ে তুলতে পারে না।

কপালের মেরুন রঙের টিপটা তুলে কালো রঙের টিপ পরে নিল কথা।

—এখন ভালো দেখাচ্ছে।

—কিরে তোর হলো আমি কিন্তু রেডি? ৮টা বাজতে চলল আমাদের কিন্তু ৯টার আগেই কলেজ থাকতে হবে। আরে বাহ! আমার নজর না পরে যায় তোর উপর খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।

কনকের ডাকে আয়না থেকে চোখ ফিরিয়ে কনকের দিকে তাকায় কথা। কনককে এক নজর মাথা থেকে পা অবধি দেখে বললো,

—আজ কার মাথা নষ্ট করতে যাচ্ছিস তুই? এভাবে সাজগোজ করে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে আজ তোকে দেখতে আসতেছে।

—আরে কি বলিস যে তুই, আজ আমাদের কলেজেএ এত বড় একটা প্রোগ্রাম হবে আর আমরা তো পার্টিসিপেট করব। তাই এটুকু সাজ তো চলে তাই না।

— হুম ঠিক আছে এবার চল।

তারপর দুইজনে রুম থেকে বের হয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।

__________

ঘড়ির কাটা তখন ৮টা বরাবর। সূর্যের তীর্যক আলো কাচের জানালা ভেদ করে পর্দার ফাঁকে দিয়ে এসে পরলো শিলার মুখে। খানিকটা নড়ে উঠতেই রিয়ান উঠে পর্দা ঠিক করে দিল। রিয়ানের ঘুম ভেঙে গেছে অনেক আগেই। সে শিলাকে দেখতে ব্যস্ত ছিল তাই আর শিলাকে ডাকা হয়নি। আড়মোড়া ভেঙে শিলা চোখ খুলে দেখে রিয়ান তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

—কি হল এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো, কিছু বলবে?

—না, কিছু না। তুমি উঠবে কখন ৮টা বেজে গেছে তো

—এখন উঠে যাব। আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।

— হুম যাও।

শিলা উঠে যাবে ঠিক সেই সময় রিয়ান তার হাত ধরে ফেলল।

—কি হল হাত ধরে আটকালে কেনো?

—তোমাকে খুব ভালোবাসি বুঝলে মেয়ে। আমার তো আবার ভালোবাসার মানুষের আমার থেকে দূরে চলে যায়। তাই কাউকে ভালোবাসতে ভয় করে এখন।

—আমি আছিতো তোমার কাছেই তাই না। কোথাও যাব না তোমাকে ছেড়ে।

— হুম তাই যেনো হয়। আচ্ছা একটা কথা বলো তো, আমি কি কখনো কথা কে ফিরে পাব না?

—নিশ্চই পাবে।

—আচ্ছা আমাদের কথা তার মনে আছে নাকি কে জানে আর এখন কথা ঠিক কি করছে?

________

কলেজের গেইট দিয়ে দৌড়ে আসছিল কথা আর কনক। কারণ তাদের ৯টার আগে আসার কথা ছিল আর তারা ৯ঃ১৫ তে কলেজ এসেছে। দৌড়ে যেতে গিয়ে কথা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেয়। ভয়ে চোখ মুখ খিচে চোখ বন্ধ করে রাখে। কিন্তু কোনো রকম ব্যাথা না পাওয়ায় কথা চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে ইংরেজি শিক্ষক নিবির স্যার কথার কোমরে দুই হাত দিয়ে আগলে রেখেছে। কথা তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে স্যারের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়।

—সরি স্যার আসলে আমি দেখতে পাই নি। না হলে এমন ভুল হত না ।

—আরে সরি বলতে হবে না। তোমরা তাড়াতাড়ি যাও আর প্রোগ্রামের বাকি কাজ গুলো করে ফেলো।।

—জি স্যার

—আর হ্যাঁ শোনো কথা

— জি বলেন স্যার

—তোমাকে শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে আর কনক তোমাকেও কোনো অংশে কম লাগছে না।

—ধন্যবাদ স্যার। এবার আমরা যাই অনেক কাজ বাকি আছে।

—ঠিক আছে।

কথা আর কনক তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসলো। নিবির স্যার কে কথার মোটেও পছন্দ না। কারণ নিবির স্যার কথাকে পছন্দ করে এটা তার ব্যবহারেই বুঝা যায়। কথা আর কনক যেখানে প্রোগ্রাম হবে সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। প্রোগ্রাম শুরু হতে হতে প্রায় ১০টা বেজে যায়। তবে প্রধান অতিথি এখনো আসে নি। এর মাঝে কয়েকটি পারফরম্যান্স শুরু যায়।

—১১টা বাজতে চলল আর এই প্রধান অতিথি রায়হান খান তার আসার কোনো নাম আছে।

—সেটাই তো দেখছি উনি এখনো আসলেন কেনো?

—আসলে বরলোকেরা এমনি হয়। তাদের কোনো টাইম সিডিউল দরকার হয় না। নিজেরা যে টাইমে কাজ করবে সেটাই তাদের ঠিক টাইম।

দুই বান্ধুবি কথা বলছিল। তখন গেইট দিয়ে ইয়া বড় এক গাড়ি ঢুকলো। গাড়ি পার্কিং সাইডে রেখে দেয়। সামনে থেকে ড্রাইভার বের হয়ে পিছনের দরাজা খুলে দিল। গাড়ি থেকে ৪৫ বছর হবে এমন একজন মানুষ বের হল। লোকটাকে সবাই তো চেনে কারণ এর আগের বছরও ইনিই প্রধান অতিথি ছিলেন। খুব ভালো একটা এমাউন্ট ডোনেশন করেন কলেজে। তাই এই রায়হান খান কেই প্রধান অতিথি হিসেবে ডাকা হয়। সবাই দুই সারিতে দাঁড়িয়ে ওনার উপর ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে। আর সবশেষে একটা মেয়ে তার গলায় একটা বড় ফুলের মালা পরিয়ে দেয়। তারপর তিনি স্টেজে উঠে নিজের চেয়ারে বসে। আর বাকি পারফরম্যান্স শুরু হয়। এক এক করে সব পারফরম্যান্স শেষ হতে থাকে। এবার পালা কথা আর কনকের। তারা একটা নাচ পরিবেশন করবে। আর কিছুক্ষণ পরেই তাদের নাম ঘোষণা করা হলে তারা স্টেজে চলে যায় তাদের পারফরম্যান্স দেওয়ার জন্য। তারা দুইজনেই খুব সুন্দর করে নাচ পরিবেশন করে আর সবাই করতালির সাথে তাদের আরও উৎসাহিত করে।

_________

—আজকেই তোর চলে যেতে হবে নাকি? আর কয়েকটা দিন থেকে যা তারপর না হলে চলে যাস।

কথার মা আয়ানের উদ্দেশ্যে বললো।

—আসলে আন্টি আমি চাইলেও আর থাকতে পারছি না। কারণ আমি এসেছিলাম তো রিয়ানের বিয়েতে এটেন্ড করার জন্য আর অফিস থেকে ছুটিও নিয়েছি ততদিনের। আর আমার কাল থেকে অফিস জয়েন করতে হবে। তাই আজকেই যেতে হবে। আর রিয়ান তো সব জানেই ওকে আমি আসার আগেই সব বলেছিলাম।

—হ্যা মা এ যাক। আসলে ওর ছুটি দিতে চায়নি অনেক কষ্টে ছুটি নিয়েছে। বুঝোই তো নতুন চাকরি হলে যা হয়। একটু পুরানো হলেই আর সমস্যা থাকবে না। আজ ওকে যেতে দাও।

—জি আন্টি আজ যেতেই হবে আমাকে। আপনি মন খারাপ করে থাকবেন না।

—ঠিক আছে যাও তাহলে। তবে সাবধানে থাকবে। এরপরের বার ছুটিতে এলে একটা পরী রেডি করে রাখব তার সাথেই বিয়ে দিয়ে দিব। তারপর এই ছন্নছাড়া জীবন আর কাটাতে পারবে না দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পরলে।

—আচ্ছা রিয়ান তোর মা এভাবে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উপরে পরে লেগেছে কেনো জানিস কিছু?

—কই জানি না কিছুই। আমার মনে হয় মা কোনো মেয়ে পছন্দ করে রেখেছে তাই এভাবে বলে সবসময়।

—এই তোমরা দুইজনে আস্তে কি বলাবলি করছো? নিশ্চয় আমি বিয়ে বিয়ে করি এটা নিয়েই কথা বলছ তাই না। সে যাই বলো না কেনো রিয়ানের তো বিয়ে হল এবার আয়ানের টা আর কয়েক মাসের ভেতর আমি দিয়ে তারপর মুক্তি। আর মেয়েটার বিয়ে তো আর দিতে পারলাম না। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটাও জানি না। আর বেঁচে থাকলেও ভালো আছে কিনা কোথায় আছে কিভাবে আছে কে জানে?

—আন্টি প্লিজ কান্না করবেন না কথা যেখানেই আছে ভালো আছে।

— হুম বাবা তাই যেনো হয়। আর চোখের পানি সেতো মেয়েটার কথা মনে আসলেই বেয়ে পরে। একে কি আর আটকানো যায়।

কথার মা সেখান থেকে উঠে চলে এলো। রিয়ান আয়ানের উদ্দেশ্যে বললো,

— সত্যি আমার বোনটা এভাবে কি করে পাঁচটা বছর গায়েব হয়ে গেলো।

— খোঁজ তো কম করা হল না বল। বাচ্চা একটা মেয়ে কি করে উধাও হয়ে গেলো? তবে আমরা পাশের গ্রাম আর শহর সবকিছুই চেক করেছি। না পেলে আর কি করার।

—আচ্ছা তুই তো ঢাকায় থাকিস ওইখানে যায় নি তো?

—যেতেও পারে, ওইরাতে লাস্ট ট্রেন টা ঢাকার ছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে এতবড় শহরে কি করে খুজে বের করব?

_________

কথা আর কনক দাঁড়িয়ে আছে কলেজের মাঠের এক জায়গায়। সাথে আরও কয়েকজন আছে। তারা আজকের প্রোগ্রাম নিয়ে কথা বলছিল। সেই সময় নিবির স্যার পিছনে এসে দাড়ালো তাদের। আর কথাকে ডাক দিল।

—কথা

কথা পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে নিবির স্যার দাঁড়িয়ে আছে।

—জি স্যার বলেন

—তোমার নাচ খুব সুন্দর ছিল। একবারের জন্যও চোখ ফেরাতে পারিনি আমি। আর রায়হান খানও খুব সুনাম কিরছিলেন তোমাদের দুইজনের।

—ধন্যবাদ স্যার।

তখন রায়হান খান গাড়িতে হেলান বসেছেন। কথা সেদিকেই তাকিয়ে আছে। বড্ড পরিচিত সেই মুখ মনে হয় তার কাছে। নিমিষেই গাড়ি কলেজের গেইটের বাইরে চলে গেলো। আর কথা সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে। গাড়ি দেখা যাচ্ছে না তবু্ও তার দৃষ্টি সেদিকেই।
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_05
#Writer_Fatema_Khan

পিছনে চার পাঁচজন লোক ছুটে আসছে। সামনে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে কথা। বারবার পিছনে তাকিয়ে দেখছে তারা কতটুকু এসে গেছে। খুব কাছেই তারা কথা সামনে ফিরতে যাবে ঠিক তখন কিছুর সাথে পা আটকে নিচে পরে যায়।

—মা……

—কি হল তুই ঠিক আছিস, কি হয়েছে? আর কান্না করছিস কেনো বল আমায়

—কনক এক গ্লাস পানি দে

—দিচ্ছ তুই বস। এই নে, পানি খেয়ে নে।

কথা গ্লাসের সবটা পানি এক শ্বাসে খেয়ে নেয়।

—আস্তে খা শ্বাস আটকে যাবে তো! আচ্ছা তুই কি আবার ওই স্বপ্ন টা দেখছিলি?

— হুম সেই রাতের ঘটনাটাই চোখের সামনে ভাসে। ওই রাতের ঘটনা হয়ত আমার জীবন থেকে কখনোই দূরে যাবে না।

—চিন্তা করিস না এখন ঘুমিয়ে পর সকালে তো ক্লাস আছে তাই না।

— হুম তুইও ঘুমিয়ে পর।

—আচ্ছা। এই শোন,

—কি বল?

—নিবির স্যার তোকে খুব পছন্দ করে এটা কি তুই জানিস?

—না জানার কি আছে, স্যারের ব্যবহার দেখেই বুঝা যায়।

—স্যার কিন্তু খুব স্মার্ট দেখতে। যেমন হাইট তেমন লুক ভেবে দেখতে পারিস কিন্তু

—একটা মজার কথা জানিস?

—কি?

—পাঁচ বছর আগে আমার যে বিয়ে ঠিক হইছিল আমার ফুফির ছেলের সাথে

— হুম, কি হয়েছে এখন

—আমার ফুফির ছেলের নাম নিবির ছিল।

—তাই নাকি

—ভাইয়া তো দেশের বাইরে থাকত খুব স্মার্ট ছিল। এই সময় যদি নিবির ভাইয়া আর আমার বিয়ে ঠিক হত আমি এক লাফে রাজি হয়ে যেতাম। কিন্তু সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অনেক কিছু বদলে গেছে আমাদের জীবনে যা চাইলেও বদলাতে পারব না। হিরাকে কাচ ভেবে ফেলে দিয়েছি আর তামা কে স্বর্ন ভেবে তার পিছনে ঘুরেছি। বাসায় একবার বললেই হত যে আমি এত কম বয়সে বিয়ে করব না কিন্তু এমন এক ভুল করেছি যেটা সংশোধন করার কোনো উপায় আমার জানা নেই।

—এসব ভাবিস না। দেখিস এমন কেউ আসবে যে তোর সব দুঃখ দূর করে দিবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে যে। তবে তুই স্যারের বিষয়টি ভেবে দেখিস। সব দিক দিয়ে স্যাত পারফেক্ট আর তোর যে কেউ নেই এটাও জানে।

—এটা হয়না। আমার জীবনের সাথে আমি কাউকে জড়াতে চাই না। যে আমার জীবনে আসবে তার জীবন আমার মত হয়ে যাবে।

—তবুও একবার ভেবে দেখ….

—কনক ঘুমিয়ে পর সকালে ক্লাস আছে আমাদের।

—আচ্ছা তুইও ঘুমা।

— হুম ঘুম আসছে এমনিতেও।

__________

আরও ৩০মিনিট আগে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে আয়ান। ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো মাত্র। একা একটা বাসায় সে একাই থাকে। পরিবার বলতে তার মা আর বোন। তারা গ্রামে থাকে তবে আবার গ্রামে গেলে তাদের নিয়ে আসবে এখানে। আয়ানের বোন এবার এইসএসসি দিচ্ছে। পরীক্ষা শেষ হলেই তাদের ঢাকায় নিয়ে আসবে। আয়ান খাওয়া শেষ করে তার মাকে কল দিল।

—হ্যালো! মা আমি বাসায় এসে গেছি আরও অনেক আগেই। তুমি ওষুধ খেয়ে নিও। আর রোজা কি করছে?

—খেয়ে নিব ওষুধ আর রোজা পড়ছে। তুই খেয়েছিস বাবা?

—খেয়েই কল দিলাম।

—আচ্ছা আয়ান একটা কথা বল আমাকে তুই কি ঠিক করেছিস বিয়ে করবি না। কার জন্য অপেক্ষা করছিস তুই, আমাকে বল বাবা কাউকে কি পছন্দ করিস তুই?

—সময় হলে আর তার দেখা আবার পেলে অবশ্যই বলব মা। তাকে একবার দেখেছি আমি শুধু।

—জানা নেই চেনা নেই কি করে বের করবি তাকে কিছুই জানি না আমি। তবে আমি ঢাকায় এসেই তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলব আর যার সাথে ঠিক করব তাকেই তোর বিয়ে করতে হবে বুঝলি।

— হুম বুঝলাম। এবার রাখছি মা কাল সকালে অফিস আছে।

কল কেটেই আয়ান বিছানায় শুয়ে পরে। চোখ বন্ধ করতেই মায়াবী দুটো চোখ ভেসে উঠলো সাথে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি। হাসলে বা গালে টোল পরে তার সৌন্দর্য কে বাড়িয়ে তুলছে।

— খুঁজে বের করব তোমাকে আমি দেখে নিও। কিন্তু তার আগে আমার কথার খোঁজও নিতে হবে। একটাই চাওয়া কথা যেনো ভালো থাকে আর আমি তাকে সুস্থ ভাবেই খুঁজে পাই।

________

ক্লাস শেষ করে কলেজের মাঠে আড্ডা দিচ্ছিল কথা আর কনক। সাথে আরও কয়েকজন ছিল সবাই ক্লাসের কথা পড়া নিয়ে আলোচনা করছিল। মাঝখানে কথা বলে উঠলো,

—আমাকে যেতে হবে। আজ একটা টিউশন তাড়াতাড়ি করতে হবে। দুইদিন পড়াতে যাই নি কলেজের প্রোগ্রামের জন্য। আজ তাড়াতাড়ি যেতে হবে একটু বেশিউ পড়াতে হবে সামনে এক্সাম আছে বাচ্চাটার।

—আচ্ছা যা তাহলে। কিন্তু এই সময় রিকশা পাবি তো, নাকি আমি আসবো তোর সাথে।

—না ঠিক আছে আমি চলে যাব, তুই থাক আড্ডা দে।

—তুমি বললে আমি দিয়ে আসতে পারি যেখানে তোমার টিউশন আছে।

নিবির স্যার পিছন থেকে বলে উঠলো। কথা পিছনে ফিরে দেখে পকেটে হাত রেখে কথার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে স্যার। কথা চোখ নামিয়ে বলল,

—দরকার নেই স্যার আমি যেতে পারব। কাছেই আছে একটা রিকশা করে চলে যাব।

—তোমার কি মনে হয় এই সময় তুমি কোনো রিকশা পাবে?

—স্যার ঠিক বলছে এই সময় তেমন একটা রিকশা পাবি না তারচেয়ে বরং তুই স্যারের গাড়ি করে চলে যা।

কথা এক প্রকার বাধ্য হয়ে স্যারের সাথে তার গাড়ি করে যেতে রাজি হয়। নিবর স্যার আগে আগে হাটছে আর কথা পিছনে। নিবিরের মুখে যেন প্রশান্তিকর হাসি ফুটে উঠেছে। নিবির গাড়ির দরজা খুলে দিলে কথা উঠে বসে। তারপর নিবির গিয়ে পাশের সিটে বসে পরে আর গাড়ি স্টার্ট করে।

—যাক বাবা অবশেষে মেয়েটা রাজি হল। এভাবেই একদিন ভালোবাসাও হয়ে যাবে।

কনক বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলে উঠে।

________

কথা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। গাড়িতে উঠার পর থেকে একবারের জন্য ও নিবিরের সাথে কথা বলে নি কথা। নিবির কথার উদ্দেশ্যে বললো,

—কথা, তোমার কি সমস্যা আমার সাথে যাওয়ায়? এমনটা জানলে আমি কখনোই তোমাকে নিয়ে আসতাম না।

—না স্যার ঠিক আছি আমি। আর আপনার সাথে আসতে আমার সমস্যা হবে কেনো? আপনি আমার স্যার আপনার উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।

নিবির যেনো সস্তির শ্বাস ফেললো কথার কথা শুনে। কথা নিবিরকে বিশ্বাস করে ভেবেই খুব খুশি লাগছে তার।

________

আয়ান অফিসের একটা মিটিং আছে৷ তবে মিটিং অফিসে হবে না এটেন্ড করতে হবে একটা রেস্টুরেন্টে। আয়ান বাইক করে যাচ্ছিল, ঠিক তখন দেখে সেই মেয়েটি রিকশা থেকে নামে। মেয়েটি ভাড়া মিটিয়ে সামনে থাকা বাড়ির ভেতর ঢুকে যায়। আয়ানের মুখে অজান্তেই হাসি ফুটে যায়। সে পেয়ে গেছে সেই মেয়েকে, যে কিনা তার পুরোটা অনুভূতি জুড়ে রয়েছে। মেয়েটি যতক্ষণ পর্যন্ত ভেতরে না গেছে ততক্ষণ পর্যন্ত আয়ান সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। মেয়েটি ভেতরে যাওয়ার পর আয়ান বাইক থেকে নেমে বাড়ির কাছে যায় আর চারপাশে তাকাতে থাকে। দেখে একজন দারোয়ান বসে আছে। তার কাছে গিয়ে আয়ান জিজ্ঞেস করে,

—আচ্ছা ভাই এইমাত্র যে মেয়েটি ভেতরে গেলো সে কি এখানেই থাকে

—আপনি কে? আর একটা মেয়ের খবর নিচ্ছেন ঠিক বুঝলাম না ব্যাপারটা

—আসলে আমি ওই মেয়ের মামাতো ভাই হই। অনেকদিন যোগাযোগ না থাকায় জানি না আর কি কোথায় থাকে। আজ দেখলাম তাই জিজ্ঞেস করছি

—কে, কনক আপা? সে তো এখানেই থাকে আর সাথে আরেকটা মেয়ে থাকে তার বান্ধুবি।

— ওহ আচ্ছা অনেক ধন্যবাদ। আপনার সময় নষ্ট করলাম।

—ঠিক আছে। তবে, আপারে কিছু বলতে হবে

—না আমি আবার আসলে মাকে নিয়ে আসব তখন দেখা করে নিব। কনককে কিছু বলবেন না যেনো। আজ আসি তাহলে।

আয়ান বাইক নিয়ে চলে গেলো মিটিংয়ে।সে তার পছন্দের মানুষের খোঁজ পেয়ে গেছে। এখন খুব শীঘ্রই তার মাকে জানিয়ে দিবে আর তার আগে কনকের মনে নিজের জায়গা করে নিতে হবে।

________

যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম, চোখ আটকে গেছিলো আমার সেদিন, তোমার অগোছালো চুল, চোখে লেপ্টে থাকা কাজল, দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলাম আমি। জানো তোমার উদ্দেশ্যেহীন পথের গন্তব্য হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম আমি। তবে সুযোগ ছিল না আমার তাই তোমার হাতটা শক্ত করে ধরতে পারি নি আমি। তবে আমি আসছি তোমার কাছে ফিরে। আবার দেখা হবে আমাদের খুব শীঘ্রই। তুমি উদ্দেশ্যহীন কথা না তুমি কাব্যের কথা হয়ে থাকবে আমার কাছে। আসছি আমি এখন শুধু অপেক্ষা কিছু সময়ের।

ডাইরির পাতা বন্ধ করে ল্যাম্প শেডের দিকে তাকিয়ে রইল কাব্য। ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি তার প্রেয়সীকে কাছে পাওয়ার।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here