উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -৬+৭

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_06
#Writer_Fatema_Khan

কাব্য আজ খুব খুশি। কারণটা হচ্ছে আজ সে দেশে ফিরে যাবে। আর কাব্য যেদিন খুশি থাকে সেদিন সে সুইমিং করে। ইউনাইটেড স্ট্যাটস অব আমেরিকার আলাস্কার ফায়ারব্যাংকসে এই সময়টাতে হাড় হীম করা ঠান্ডা পরে। আর এত সকালে কাব্য এই ঠান্ডার মাঝে সুইমিং পুলে সুইমিং করছে। পুলের সামনেই জুস হাতে বসে আছে তূর্য। কাব্যকে দেখছে আর হাসছে। কি করে একটা ছেলে ৫বছর আগে একরাতের পরিচয়ে কাউকে ভালোবাসতে পারে! সেই ট্রেনে তো তূর্য নিজেও ছিল, কিন্তু কই সে তো মেয়েটার দিকে একবারের বেশি তাকায় নি। আর সেখানে ১০মিনিটের আলাপে আজ ৫ বছর পর্যন্ত কাব্য কিনা সেই মেয়েকে মনে রেখে দিয়েছে। যেখানে সে দেখতে কেমন হয়েছে তাও জানে না বা কাব্যের কথা সেই মেয়ের মনে আছে কিনা কিছুই জানে না। তবে সেই মেয়ে কোথায় থাকে কোন কলেজে পড়ালেখা করে তার সব ডিটেইলস আছে কাব্যর কাছে। সুইমিং শেষ করে কাব্য তূর্যের সামনে এসে দাঁড়ায় তবে তূর্যের কোনো হেলদোল না দেখে তার কাধের উপর হাত রাখে। তূর্য কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
—কি হল, কিছু বলবি?

—কি ভাবছিলি এতক্ষণ?

—না তেমন কিছুই না। আচ্ছা তোর সুইমিং শেষ হলে বাসার ভেতর চল

— হুম চল।

তারপর কাব্য আর তূর্য ভেতরে চলে যায়। কাব্য আয়নার সামনে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে। কালো জিন্স সাদা টি-শার্ট তার উপর লেদারের জ্যাকেট। হাতে ঘড়ি চুলগুলো সুন্দর করে সাজানো বাস সে তৈরি। তূর্যও তৈরি হয়ে কাব্যের রুমে আসল। তূর্যকে দেখতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কালো শার্ট এর সাথে কালো প্যান্ট সাথে ঘড়ি আর চুল সেট করা। তারপর দুইজনেই নিজেদের ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে পরলো এয়ারপোর্টের দিকে।

__________

ধোঁয়া উঠা কফির মগে চুমুক দিয়ে সূর্যাস্ত দেখছে কথা। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে কনক। তার হাতেও এক মগ কফি। পলকবিহীন নয়ন নিবদ্ধ সামনে থাকা রক্তিম আভা ছড়ানো সূর্যের দিকে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে দূরে। ভালো করে খেয়াল করলে আকাশে পাখিদের দেখা যাবে। তারা নিজেদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। কথা বরাবরই এসব জিনিস খুব উপভোগ করে থাকে। সাথে বাইরে থেকে আশা ঠান্ডা হাওয়া তার শরীর জুড়িয়ে যায় সব মিলিয়ে। সারাদিনের খাটনি যেনো এক নিমিষেই কেটে যায়। তবে কথা আজ ক্লান্ত, যেনো বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই চোখ বন্ধ হয়ে আসবে। তাই এই পর্যন্ত তিন মগ কফি খেয়ে নিয়েছে। আর এদিকে কনক এক মগ নিয়েই বসে আছে।
—এই কথা আজ তোর কি হয়েছে বল তো, সেই যে একের পর এক কফি শেষ কিরেই যাচ্ছিস তোর শরীর খারাপ নাকি?

—না তেমন কিছু না। আসলে আমি একটু টায়ার্ড। তাই টায়ার্ডনেস কাটানোর জন্যই কফি খাচ্ছি। সামনে পরীক্ষা তাই রাত জেগে না পড়লে হবে না।

—আমারও অনেক পড়া কমপ্লিট করতে হবে। আচ্ছা শোন না স্যারের সাথে যে গেলি কি কি হল?

—স্যার আমাকে স্টুডেন্ট এর বাসার সামনে নামিয়ে দিল তারপর আমি ভেতরে চলে গেলাম আর স্যার গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।

—মানে তোদের মাঝে কোনো কথা হয়নি আর!

—হয়েছে একবার স্যার জিজ্ঞেস করছিল আমার সমস্যা হচ্ছে কিনা স্যারের সাথে যাওয়ায়, আমি বললাম কোনো সমস্যা হয়নি। ব্যাস আর কথা হয়নি।

—এই জন্য পাঠিয়েছিলাম তোকে। কোথায় একটু ভালোবাসার কথা বলবি তা না করে চুপচাপ বসে ছিলি।

—আমার স্যারের উপর কোনো অনুভূতি কাজ করে না, তাহলে এখন আমি নিজের উপর জোর তো করতে পারি না। তাই না কনক

— হুম, বুঝলাম। তোর কথাও ঠিক তবুও দেখ স্যার কিন্তু খুব ভালো মানুষ এটা মাথায় রাখিস।

— ওকে মাথায় রাখলাম। এবার পড়তে চল

— হুম চল।

_________

ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে আয়ান। তার মন আজ খুব ভালো। সে পেয়ে গেছে তার প্রিয় মানুষটিকে। ঠোঁটের কোণে তার হাসি ঝুলেই আছে। ওই মুহূর্তের পর সব কেমন উলোটপালোট হয়ে গেছে। মিটিংয়ে গিয়েও ভালো মত মনোযোগ দিতে পারছিল না। তবু্ও মিটিং কোনমতে শেষ করেছে। ফোনের রিংটোনে ঘোর কাটল আয়ানের। রিয়ানের কল এসেছে। মুখে আবারও হাসি ফুটে উঠেছে আয়ানের। রিয়ানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল তারপর কল কেটে নিচে চলে এলো।

_________

এলার্মের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে কনকের। চেয়ে দেখে পাশে কথা নেই। কনক উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। কথাকে তখনও সে দেখে নি। রান্নাঘরে গিয়ে দুইজনের জন্য সকালের নাস্তা বানালো তারপর কলেজের জন্য তৈরি হয়ে নিল কনক। কথার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কনক ভয় পেয়ে গেলো। বারান্দায় এসে দেখে কথা বারান্দায় নেই। পুরো বাসা খুঁজেও কনক কথাকে খুঁজে পেলো না। তারপর কনক সোজা ছাদে চলে গেলো কথাকে খুজতে। ছাদেও কোথাও না পেয়ে কনক ভয় পেয়ে গেলো। এখন সে কি করে খুঁজে বের করবে কথাকে, এমনিতেও মেয়েটার জীবনে খারাপ সময় পিছু লেগেই আছে। এটা হয়তো আর পিছু ছাড়বে না।

________

তূর্য আর কাব্য এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই বাইরে কাব্যের বাবাকে দেখতে পেলো। তিনি আগে থেকেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রায় পাঁচ বছর পর ছেলেকে সামনে দেখতে পেলো। এত বড় বিজনেস ম্যান হওয়া সত্ত্বেও ছেলেকে দেখে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিলো৷
—কি হল বাবা তুমি কান্না করছ কেনো, আমিতো এসেই গেছি তাই না।

— হুম এসে গেছিস কিন্তু এই বছরগুলো আমি আর তোর মা কি করে কাটিয়েছি তা হয়তো তুই ভাবতেও পারবি না। তোর ফিউচারের জন্য তোকে আমাদের কাছ থেকে এত দূরে পাঠিয়েছি।

—আমি সব জানি। এবার এসে গেছি তো আর কোত্থাও যাব না। এবার হাস তো বাবা। আর রায়হান খানের চোখে বাচ্চাদের মত পানি মানায় না বুঝলে।

— ঠিক আঙ্কেল, আপনার নামের সাথেও কান্নাকাটি মানায় না। তবে আপনাকে এখন চেনাই যায় না।

—কেন চেনা যায় না?

—আগে ক্লিন সেইভ একদম হিরো লাগত আর এখন দাড়ি রেখে দিয়েছেন তাই আর কি

—এখন কি বুড়ো লাগে আমাকে

—না আগে হিরো লাগত আর এখন হিরোর বাবা

—হাহাহা! তুমি তো খুব মজার কথা বলো। আচ্ছা চল তাহলে যাওয়া যাক কাব্য আর তূর্য তুমিও আমাদের সাথে যাবে।

—না আঙ্কেল আমি আমার বাসায় যাব। কতদিন পর মা আর বোনকে দেখব।

—আচ্ছা তাহলে তোর সাথে বিকালে দেখা করব। ফোনে যোগাযোগ করব

—ঠিক আছে। তাহলে আসছি। আল্লাহ হাফেজ

—আল্লাহ হাফেজ।

________

কলেজের প্রথম ক্লাস নিবির স্যারের। ক্লাসে ঢুকেই আজ দেখে কথা নেই। পুরো ক্লাস ভালো করে দেখে নিলো কিন্তু কথা কোথাও নেই। এমনকি কনকও আজ কলেজ আসেনি। নিবির একজন স্টুডেন্টকে জিজ্ঞেস করলো কথা আর কনক আজ কলেজ আসেনি কেনো জানে কিনা। সে বলল সে জানে না। নিবির আর কিছুই জিজ্ঞেস করলো না নিজের ক্লাসে মনযোগ দিলো। কিন্তু মনে একটা ভয় গেথে গেলো যে দুইজন মেয়ে রেগুলার ক্লাস করে আজ তাদের দুইজনের একজনও নেই সব ঠিক আছে কিনা?

________

কনক আবার রুমে এসে কথাকে কল দেয়। তার মোবাইলে রিং বাজতে থাকে কিন্তু কেউ ওইপাশে কল রিসিভ করে না। অনেকবার কল দিতেই থাকে কনক। কিন্তু কথার ফোন রিসিভ করার নাম ই নাই। কনক চিন্তিত হয়ে খাটে বসে পরে। বসে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে বালিশের নিচে একটু করে কি যেনো দেখা যাচ্ছে। কনক বালিশের নিচে হাত দিয়ে দেখে এটা কথার মোবাইল। কথার মোবাইল সাইলেন্ট করা তাই রিং বাজা সত্ত্বেও কনক শুনতে পায় নি। কনক বলে উঠলো,
—তাহলে কথা কোথায় চলে গেলো!
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_07
#Writer_Fatema_Khan

ছোট একটা লেকের পাশে কিছু বাচ্চা খেলা করছিল। বাচ্চাগুলোর পাশেই তাদের মা বাবা ছিল। দুইজন বাচ্চা তাদের খেলা নিয়ে ঝগড়া লেগে গেলো। দুইজন ই হার মানতে নারাজ। অনেকক্ষণ ধরে ঝগড়া করার পর অবশেষে ছেলেটা মেয়েটার কাছে হার মেনে মন খারাপ করে বসে থাকল। এই দৃশ্য কারো চোখের কোণে পানি নিয়ে এল। কথা খানিকটা দূরেই বসে সবকিছু দেখছিল আর নিজের আর রিয়েনের খেলার সময় লেগে যাওয়া ঝগড়ার কথা মনে পরে গেলো। যেখানে সবসময়ই রিয়ানকে হার মানতে হত। তারপর রিয়ান মন খারাপ করে বসে থাকলে কথা গিয়ে তার রাগ ভাঙাত। এখানেও মেয়েটি পরে ছেলেটির কাছে গিয়ে রাগ ভাঙালো তারপর তারা আবার খেলা শুরু করল। কথা তাদের খুনশুটি দেখে একাই হাসতে লাগলো।
—আমি সকাল থেকে তোকে খুঁজে যাচ্ছি আর তুই এখানে বসে হাসছিস

কথা বাচ্চাদের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে কনক দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খুব রেগে আছে। কথা নরম স্বরে জবাব দিল,
—আসলে হয়েছে কি আমিতো….

—কিছু বলতে হবে না আমাকে। আমি কে তোর যে কিছু বলে আসবি

—শোন না আমার কথা রাগ করে জানুটা

—আমার মনে কতকিছু আসছিল, কত টেনশনে ছিলাম তুই ভাবতে পারিস, একটু ধারণাও আছে তোর?

—আজ খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেছে আমার কারণ রাতে আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। কিন্তু তুই অনেক রাত অবদি পড়ছিলি তাই তুই ওই সময়ে ঘুমিয়ে ছিলি। একা একা ভালো লাগছিল না তাই ভাবলাম বাইরে থেকে একটু হেটে আসি। আর এখানে এসে খুব শান্তি লাগছিল, সময়টা ভালো কাটছিল। তোকে কল করে বলব ভাবছি এখানে আসার কথা এদিকে আমি মোবাইলটাও নিয়ে আসি নি। তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।

—তুই জানিস আমার নিজেকে কত অসহায় লাগছিল যখন তোর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। আর কার থেকেই বা সাহায্য নিব বল।

—সরি, এই নে কানে ধরছি আর কখনো এমন হবে না।

—এই মেয়ে আমার কান ছাড়, নিজের কান ধর

—হাহাহা! এবার চল বাসায় যাই। খুব খিদা লেগেছে, পেটের ইদুর সব এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে মনে হচ্ছে এখন খাবার না খেলে আমার পেট টাই খেয়ে নিবে।

—তোর কাছেই এসব আজব কথা শোনা যায়

—ঠিক, এবার চল। আর আজ আমার জন্য একটা ক্লাস মিস হয়ে গেলো তাইনা

— হুম। সব তোর হেলামির জন্য আর তুই কিনা লেকে বসে হাওয়া খাচ্ছিস।

— হ্যাঁ বাবা আমি বুঝতে পেরেছি। এটা বারবার বলতে হবে না আমার জন্য তুই আজ ক্লাস মিস করলি।

— আচ্ছা সারাদিন তো কিছুই খাস নি তাই না

— হুম কিছুই খাই নি, এখানেই বসে ছিলাম। তুইও মনে হয় আমাকে খুজতে গিয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে বসে আছিস?

—তো কি করব বল, কত টেনশন হচ্ছিল তোর জন্য আমার। তুই ছাড়া আমার আছেই বা কে

—আচ্ছা এবার বাসায় চল। দাড়া একটা রিকশা নিয়ে নেই

কনক আর কথা রিকশা খুজতে থাকে। ওই পথ দিয়েই আয়ান যাচ্ছিল। আয়ান কনককে দেখতে পায় একটু দূরে রিকশা খুজতেছে। তার সামনে আরেকটা মেয়েও আছে। তবে মেয়েটির ফেস দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কনককে একটু অগোছালো লাগছিল তাই আয়ান কিছুটা চিন্তিত হয়ে পরে।
—আচ্ছা কনককে এমন দেখাচ্ছে কেনো, কেমন অগোছালো আর সাথে একটা মেয়েও আছে। এই মেয়েটাই মনে হয় কনকের সাথে এক বাসায় থাকে। কিন্তু মেয়েটা ওইদিকে ফিরে আছে তাই দেখা যাচ্ছে না ।

কথা একটা রিকশা পেয়ে সেটাতে উঠে গেলো তারপর কনক নিজেও উঠে যায়। তারপর রিকশা চলতে শুরু করে আর আয়ান সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রিকশার দিকেই তাকিয়ে থাকে সে। ধীরে ধীরে রিকশা তার চোখের আড়ালে চলে যায়।

_________

ফ্রেশ হয়ে কথা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চুল মুছে সোজা খাবার খেতে চলে গেলো। সারাদিন কিছু না খাওয়া রয়েছে। কনক আর কথা দুইজনে বসে খাবার খেয়ে নেয়। তারপর কনক পড়ার টেবিলে পড়তে বসে যায়। আর কথা গিয়ে খাটের উপর বসে নিজের মোবাইল হাতে নেয়। সে দেখতে পায় তার মোবাইলে ১৪৭ টা মিসড কল। চেক করে দেখে ১৫টার মত কল ছিলো কনকের বাকিগুলো সব নিবির স্যারের। কথা বারান্দায় গিয়ে তাড়াতাড়ি নিবির স্যারকে কল দিলো।
—স্যার এতগুলো কল দিলো অবশ্যই জরুরি কোনো কথা বলার জন্য। রিং পরছে কিন্তু স্যার রিসিভ করছে না কেনো?

কল কেটে যায় আবার ডায়াল করতে যাবে এর আগেই কথার ফোনে নিবির স্যারের কল এসে পরে। কথা রিসিভ করে,
—আসসালামু আলাইকুম স্যার

—ওয়া আলাইকুমুস সালাম

—স্যার আপনি এত্তগুলা কল দিয়েছেন কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

—না তেমন কোনো সমস্যা না

—তাহলে এত কল

—আসলে হয়েছে কি, তুমি আর কনক দুইজনের একজনও কলেজ আসোনি তাই নক করলাম তোমরা তো ক্লাস মিস দাও না। কিন্তু রিসিভ করছিলে না তাই ভয় পেয়ে গেছিলাম। এর জন্যই বারবার কল দিলাম। তবু্ও তুমি রিসিভ করো নি তুমি।

—দুঃখিত স্যার। আসলে আমি সারাদিন বাসায় ছিলাম না আর ভুলে মোবাইল বাসায় রেখে গেছিলাম। তাই রিসিভ করতে পারি নাই।

—কই গেছিলে?

—(স্যারকে বলা উচিত হবে না, কি না কি ভাববে আমাকে নিয়ে। এভাবে কাউকে না বলে লেকের কাছে গিয়ে বসে ছিলাম। আর সবাইকে কত টেনশনে ফেলে রেখেছিলাম) আসলে আমি আর কনক একটু ঘুরতে গেছিলাম। তাই আর কি স্যার।

—আচ্ছা বুঝলাম। তাহলে কাল কিন্তু কলেজ চলে আইসো দুইজনেই। সামনে তো এক্সাম সেই কথা মাথায় রাইখো

—অবশ্যই স্যার। আচ্ছা স্যার এখন রাখি কাল ক্লাসে দেখা হবে।

—আচ্ছা ঠিক আছে। আর নিজের খেয়াল রাখবা।

—জি স্যার।

তারপর কল কেটে কথা রুমে এসে খাটের উপর বসেই পড়তে বসে। কনক জিজ্ঞেস করে,
—কার সাথে কথা বললি?

—নিবির স্যার কল দিয়েছিল অনেক গুলো। তাই স্যারকে কল ব্যাক করলাম।

—দেখলি স্যার কত খেয়াল রাখে তোর।

— হুম দেখলাম এবার পড়। একটু পর মাগরিবের আজান দিবে তারপর আবার উঠে নামাজ পড়তে হবে। কিছু তো কমপ্লিট করি এই টাইমে

—ওকে পড়, আমিও পড়ি।

_________

একটা চায়ের দোকানে বসে আছে কাব্য আর তূর্য। অপেক্ষা করছে তাদের দুই বন্ধু যারা সেদিন তাদের সাথে ট্রেনে ছিলো অয়ন আর আরাফ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দুইজনেই সেখানে উপস্থিত হয়। এই দোকান টাতেই আগে তারা আড্ডা দিত। তবে আগে দোকানটি টিনের ছিল আর এখন ইট সিমেন্টের দেয়ালে পরিণত হয়েছে আগে চুলায় চা বানিয়ে দিত আর এখন সব মেশিনে হয় তাও কফি টাই চলে বেশি। তবে কাব্য চায়ের মানুষ তার ওই কফিতে পোষে না। চারজন বন্ধু একটা টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। তখন আরাফ বলে উঠলো,
—কিরে ভাবির সাথে কখন দেখা করবি?

—আমিতো আজকেই দেখব কিন্তু সে আমাকে কবে দেখবে জানিনা। আচ্ছা শোন তোরা

—কি বল

—আমাকে তোদের কাছে কেমন মনে হয়, আমি কি বদলে গেছি বা আমাকে আগের মত দেখায় না? কথা যদি আমাকে না চিনে তখন আমার কি হবে? পাঁচ বছরে মানুষ কত চেঞ্জ হয় তাই না

—আরে ভাবি চিনবে তোকে দেখে নিস।

—সেটা ঠিক আছে আমাকে কথা না চিনলেও আমি তাকে চিনতে বাধ্য করব।

—ভাবি কিন্তু আজ কলেজ যায়নি

—কলেজ যায়নি কেনো, শরীর খারাপ নাকি?

—না শরীর ভালোই আছে। কিন্তু ভাবি হয়তো আপসেট ছিল কোনো কিছু নিয়ে। কিন্তু পরে যখন লেকের কাছে বসে ছিলো আবার বাচ্চাদের খেলা দেখছিলো তখন মুখে হাসি ছিলো মানে ভাবি খুশি ছিলো।

— হুম ভালো তাহলে

_______

স্টাডি রুমে বসে আছে রায়হান খান। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। কিন্তু সে একবারও ঠোঁটের ছোয়া লাগায় নি এটাতে। সিগারেটের আগুন নিভিয়ে উঠে দাড়ালো রায়হান খান। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছিল তখনই চোখ বন্ধ করে নেয়। হঠাৎ তার চোখের সামনে কথার চেহারা ভেসে উঠলো সাথে সাথে তিনি চোখ খুলে ফেললেন। এসি চলাকালীন সময়ে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। টেবিলের কাছে এসে একটা টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলো।
—আচ্ছা ওই মেয়েটা কি আমাকে চিনে ফেললো? কিভাবে যেনো তাকাচ্ছিল আমার দিকে, আমার তো খালি এটাই মনে পরছে ওই মেয়ে কিভাবে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে আর যখন আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে আসছিলাম তখনও আমার দিক থেকে নজর সরছিলো না। এদিকে কাব্য দেশে এসে গেছে। তারও একটা ফিউচার আছে। ভাবছি আমার অফিসে কাব্যকে বসতে দিলে কেমন হয়? হ্যাঁ এটাই করতে হবে, কাব্যকে অফিসের কাজ দিয়ে দিব।

_________

রাত১০ঃ৪৫ মিনিট বাজে,
কনক আর কথা রাতের সব কাজ শেষ করে এখন ঘুমাতে যাবে। কনক সব কাজ শেষ করেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে তবে কথা গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আজ আকাশে অনেক তারা উঠেছে আর তাদের মাঝে রয়েছে চাঁদ যেন একটা গোল থালা। কথা বারান্দায় থাকা লাইট টা জ্বালিয়ে দেয়। তবে এটাতে তেমন একটা আলো দেয় না। ড্রিম লাইটের মত আলো ছড়ায়। কথা রুমের ভেতর গিয়ে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে এলো। তারপর বারান্দার ফ্লোরে বসে উপন্যাস পড়তে শুরু করে। এদিকে একজোড়া চোখ কথাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। তার তৃষ্ণার্ত চোখ দুটি যেনো তার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে কথাকে দেখে। আর এদিকে কথার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই৷ সে ব্যস্ত আছে তার আকাশ ভর্তি তারা আর তার মাঝে গোল চাঁদ দেখতে একটা উপন্যাসের পাতায় পাতায় নিজেকে মগ্ন করতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here