উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -৮+৯

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_08
#Writer_Fatema_Khan

অনেকক্ষণ ধরে কথার কোনো হেলদোল না দেখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি ভাবছে কথা হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। সে বাড়ির কাছে কিছুটা এগিয়ে গেলে তার মোবাইলে রিং পরতে থাকে। সে পকেট হতে মোবাইল বের করে দেখে স্ক্রিনে তূর্য নাম লেখা। সে রিসিভ করে,
—কিরে কাব্য তুই কই বলতো, এদিকে তুই নাকি
বাসায় যাস নাই?

— হুম এখনো যাই নি। কেনো কি হয়েছে?

—আরে আন্টি কল দিলো তুই কই আছিস এখনো নাকি বাসায় যাস নাই তাই তিনি চিন্তা করছে।

—তুই কি বললি আমি কই আছি?

—আমার সাথেই আছিস। বাসায় আসতে একটু দেরি হবে সবাই অনেক দিন পর একসাথে আড্ডা দিচ্ছি।

—আচ্ছা ঠিক আছে আর আমি বাসায় চলে যাব ১ঘন্টার ভেতর।

—এই তুই কই আছিস এটা তো বল, আমারও তো টেনশন হচ্ছে

—আমি কথার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর কিছুক্ষণ পর চলে যাব চিন্তা করিস না।

—ঠিক আছে রাখছি তাহলে। আর হে বাসায় গিয়ে আমাকে জানিয়ে দিস

— হুম রাখছি।

কাব্য মোবাইলটা সাইলেন্ট করে পকেটে নিয়ে নিলো। তারপর কথার বারান্দা বরাবর দাড়ালো। পাশে পাইপ আছে কিন্তু উঠবে কি করে কাব্য কখনো এভাবে কোথাও উঠে নি। তবে একটা সুবিধা আছে কথার বারান্দায় কোনো গ্রিল নেই। কাব্য কোনোমতে পাইপে চড়তে শুরু করলো। আস্তে আস্তে সে কথার বারান্দায় গিয়ে থামল। খুব সাবধানে সে বারান্দায় দাড়ালো যাতে কথা টের না পায়। কাব্য বারান্দার ফ্লোরে তাকিয়ে দেখে উপন্যাসের বইটির একটা একটা পাতা বাতাসে উলটে যাচ্ছে। পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে থাকা কথার চোখ দুটো বন্ধ। তবে মুখের মধ্যে একটা বিরক্তকর ভাব। কারণ তার খোলা চুল বারবার তার মুখে আসছে যা তার ঘুমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। কাব্য হাটুতে ভর করে কথার সামনে বসে পরে। এই প্রথম কাব্য কথার এত কাছাকাছি আর সামনে থেকে কথাকে পর্যবেক্ষণ করছে। সাদা রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে সে। যেনো এক শুভ্র রাঙা পরী। মুখের সামনে থেকে চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিল কাব্য। শ্যাম বর্ণের এক মায়াবী পরী যেনো তার সামনে বসে আছে। ঘন পাপরিতে ভরা চোখ দুটো বন্ধ। চোখের পলক ফেলা অবস্থায় চোখ দুটির দিকে খালি তাকিয়ে থাকতেই মন চাইবে। ঠোঁট টা একটু বাকানো হয়তো এতক্ষণ চুল মুখের উপর থাকাতে। কাব্যের চোখ খানিকটা নিচে যেতেই আটকে যায়। গলার বাম দিকে একটা কুচকুচে কালো তিল যেটা কথার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করে তুলছে। গায়ের পাতলা ওড়না এক পাশ দিয়ে পরে গেছে যার দ্বারা দৃশ্যমান কথার হাতের লোম গুলো খাড়া হয়ে গেছে। কাব্য ওড়না ঠিক করে দেয় আর বলে,
—এই ঠান্ডা দিয়ে এই মেয়েটা কোনো গরমের পোশাক তো পরেই নি তারপর আবার যা পরেছে তা দিয়ে ঠান্ডা দূর করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।

কাব্য পাশে থাকা উপন্যাসের বইটি হাতে নিয়ে কথার পাশে বসে পরে। কয়েকটা পৃষ্ঠা উলটে বইটা বন্ধ করে রেখে দেয় পাশে। তারপর কথার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকে।
—আচ্ছা কথা বল তো আমার আর তোমার হাত এভাবে কবে থাকবে তবে সেই হাত তুমি নিজে এসে ধরবে। আরেকটা কথা জানো, আমি যখন তোমার সামনে গিয়ে দাড়াব তুমি আমাকে চিনতে পারবে তো নাকি আমার সাথে তোমার কোনোদিন দেখা হয়েছিল বা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলছিলাম সেটা মনে আছে তো। আরে তোমাকে ওইদিন আমার নামটাও বলা হয়নি। বলার আগেই ওই মহিলাটা তোমাকে নিয়ে চলে গেলো। আমার নাম কাব্য। দেখো তোমার আর আমার নামেও কত মিল। আমি কাব্য তুমি কথা। আমরা দুইজন মিলে কাব্যকথা। সুন্দর না! একদিন আমি আর তুমি এভাবেই রাত জেগে কথা বলব পাশাপাশি বসে। তুমি আমার এক হাত জড়িয়ে মাথাটা আমার কাধে রেখে কথা বলবে আর আমি অন্য হাতে তোমার চুলের সাথে খেলা করব। আচ্ছা আমাকে প্রথম দেখে তোমার রিয়েকশন কেমন হবে, মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়। তুমি যদি আমাকে ভুলেও যাও সমস্যা নাই কিন্তু আমাকে ভালোবেসে কাছে থাকতে দিও কখনো দূরে ঠেলে দিও না।

কাব্য কথার হাতে নিজের ঠোঁটের পরশ দিয়ে হাত ছেড়ে দিলো। তারপর সামনে এসে কথাকে কোলে তুলে নিল। রুমের দরজা আস্তে করে খুলে ভেতরে ঢুকলো। কনক একপাশে ঘুমাচ্ছে কাব্য কথাকে অন্য পাশে শুইয়ে দিল আর কম্বল টেনে দিল কথার গায়ে। কথার কপালে নিজের ভালোবাসার আলতো স্পর্শ দিয়ে আবার বারান্দা দিয়ে বের হয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো। নিচে নেমে বাইকে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায়।

_________

রাত ৩টার উপরে বাজে। কাব্য মাত্র বাসায় এসে পৌছাল। বাইক গ্যারেজে রেখে ভেতরে যাবে কিন্তু কথা হল কলিং বেল চাপলে যদি বাবা আর মা উঠে যায় তখন। কিন্তু কাউকে না জাগালে ভেতরে যাবে কি কিরে?
—আজ বের হওয়ার আগে একটা চাবি নিয়ে বের হওয়া দরকার ছিল। যাই হোক এখন ভেতরে যেতে হবে কি করে তা ভাবা যাক।

কাব্য দরজায় হাত রাখতেই কাব্য বুঝতে পারে দরজা খোলা। দরজা খুলে কাব্য ভেতরে ঢুকে গেলো। তারপর দরজা আটকে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালে কাব্যকে তার মা নীলিমা খাম কাব্যকে থামিয়ে দেয়।
—এত রাত অবদি কোথায় ছিলে তুমি কাব্য?

—মা তুমি এখনো ঘুমাও নি?

—আমি যেটা প্রশ্ন করলাম তার উত্তর দাও আগে।

—মা তূর্য, অয়ন আর আরাফের সাথে ছিলাম আমি। অনেকদিন পর দেখা তাই একটু বেশি আড্ডা দিয়ে ফেলেছি।

—আমি যে তোমার মা এটা তুমি ভুলে যেও না। এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিবা। আমি তোমার রুমে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

কাব্য চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে গেলো। তার মা কি বুঝতে পারল তা কাব্যের মাথায় ঢুকলো না। কথার ব্যাপারটা জানা সম্ভব না তাহলে কি জানে বুঝতে পারে না কাব্য। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরে কাব্য। আজ খুব ভালো একটা ঘুম হবে বলে তার মনে হয় না তার। এতবছর পর আজ অনেকটা সময় ধরে সে কথার এত কাছাকাছি ছিল এগুলো ভাবতে ভাবতেই কাব্য ঘুমের দেশে পারি দেয়।

________

আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসে কথা। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ৫টা বাজে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল। কনকও উঠে নিজের নামাজ আদায় করে নিল। কথা রান্নাঘরে গিয়ে দুই মগ কফি বানালো তারপর রোজকার মতোই বারান্দায় গিয়ে সূর্য উঠা দেখতে লাগলো। ধোঁয়া উঠা কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর আকাশের পূর্ব দিগন্তে তাকিয়ে আছে। তাদের বাসার সামনে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছে পাখির সুমধুর গানের শব্দে তার মন এমনিতেই খুশি হয়ে যায়। কথার সাথে সাথে কনকেরও রোজকার রুটিন হয়ে গেছে এটা। দুইজনেই টুকটাক কথা বলছে কিন্তু বেশি না। তারা এই সুন্দর মূহুর্ত টাকে কথা বলে মোটেও নষ্ট করতে চায় না। সূর্য উদয়ের সময় আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে না। এটা কিছুটা লাল আর কমলার সংমিশ্রণ থাকে। শীতকালে সূর্য উদয়ের সময়টা গরমের থেকে বেশি সুন্দর লাগে কথার। কারণ কুয়াশার কারণে পরিবেশটা ধোয়াশা থাকে আর তার মধ্যে সূর্য উঠে এমন সুন্দর দৃশ্য কথা কোনো ভাবেই মিস করতে চায় না। সূর্য উঠে গেছে প্রায় অনেকক্ষণ হল। কনক ভেতরে চলে গেলো কফির মগ দুইটা নিয়ে। কলেজে যাওয়ার আগে রান্না শেষ করতে হবে তাই কথাও ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু সে নিচে তাকিয়ে দেখে কাল রাতে পড়া উপন্যাসের বইটি এখনো বারান্দায় পরে আছে।
—বইটা এখানে পরে আছে এখনো? আমিতো রাতে বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম তারপর আর মনে নাই। তাহলে আমি রুমে কি করে গেলাম?
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_09
#Writer_Fatema_Khan

কিরে এভাবে হা করে কি দেখছিস ফ্লোরে?
কনকের ডাকে কথা পিছনে ফিরে তাকায়। সে তাড়াতাড়ি কনকের কাছে গিয়ে বলে,
—কাল যখন তুই ঘুমিয়ে ছিলি আমি তখন একটা বই নিয়ে বারান্দায় বসে পড়তে থাকি। পড়তে পড়তে এক সময় ঘুমিয়ে পরি আর কিছু মনে নেই। কিন্তু সকালে উঠে দেখি আমি বিছানায়। আমার তখনও খেয়াল হয়নি আমি রাতে তো বারান্দায় ছিলাম। আমি নিজে রুমে যাই নি। আরে গেলেও নিজের বইটা এখানে রেখে যেতাম না। তাহলে আমি রুমে কি করে গেলাম?

—আরে কথা অনেক সময় এমন মনে হয়। তুই নিজেই রুমে চলে গেছিস, কিন্তু ঘুমের জন্য বই নিতে ভুলে গেছিস।

—তাহলে কি আমার কিছুই মনে পরতো না! কিন্তু আমার এমন কিছুই মনে আসছে না।

—এই কথা এভাবে বলিস না আমার খুব ভয় করছে কিন্তু। কোনো জ্বিন ভূতের কাজ নাতো?

—আরে না হয়তো আমিই ভুল করে বইটা রেখে রুমে ঘুমাতে চলে গেছি।

—তাই হবে হয়তো

—আচ্ছা চল রান্নাঘরে। অনেক কাজ পরে আছে। ওইগুলো শেষ করে আবার কলেজেও যেতে হবে। কালকের ক্লাস টাও মিস গেলো।

— হুম চল তাহলে।

কথা ও কনক রান্নাঘরে চলে গিয়ে কাজ শুরু করল।

________

রিকশা থেকে কথা ও কনক কলেজের ভেতর ঢুকছিল। সেই সময় নিবির স্যার তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। কথা ও কনক দাঁড়িয়ে যায়।
—সামনে তোমাদের এক্সাম আর তোমরা দুইজন কাল ঘুরতে গেছিলে। এটা আশা করা যায় না। এই সময় ক্লাস বাদ দিয়ে ঘুরাঘুরি।

কনক বলে উঠলো,
—আসলে স্যার হয়েছে কি কাল কথা সকাল বেলায় কোথায় যেনো….

কথা কনকের হাত চেপে ধরে চুপ করিয়ে দেয়। আর নিজে বলে,
—কাল তো বললাম স্যার আমরা ঘুরতে গেছিলাম কিন্তু আর এমন হবে না। এখন ক্লাসে যাই না হলে ক্লাসের লেইট হয়ে যাবে।

—আচ্ছা যাও।

কনক আর কথা সেখান থেকে দ্রুত চলে আসলো। কনক বলল,
—আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম কাল আর আমি জানি না

—এই রুম থেকে ওই রুম। আবার ছাদে তারপর লেকের কাছে। এগুলো ঘুরা না বুঝি

—তা ও ঠিক

—এবার ক্লাসে চল।

__________

আয়ান আজ তাড়াতাড়ি নিজের কাজ শেষ করে ফেলছে। কারণ কনকের সাথে দেখা করা দরকার তার। কনকের সাথে কথা না বলে সে তার মাকে কিছুই বলতে পারবে না। নিজের কেবিনে বসে বিভিন্ন কথা চিন্তা করছে,
—কনকের সাথে প্রথম দেখায় কি করে কথা বলব, সে যদি খারাপ ভাবে? অপরিচিত একটা ছেলে নিজে থেকে কথা বললে খারাপ ভাবার কথাই। কিন্তু আমাকে তো বলতেই হবে। না না ভয় পেলে চলবে না ব্যবস্থা তো একটা করতেই হবে।

এসব ভেবে আয়ান অফিসের সব কাজ গুছিয়ে বের হয়ে যায়।

__________

ক্লাস শেষ করে কনক আর কথা কলেজের সিড়ি দিয়ে নামছিল। নিচে নেমে কনক একটা রিকশায় উঠে কথাকে বিদায় জানিয়ে যায় একটা টিউশন করাতে। কথারও টিউশন আছে তবে সেটা অন্য রাস্তায়। কথা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ ধরে কিন্তু রিকশা পায় না। নিবির এসে কথার পাশে দাঁড়ায়। কথা এক পলক নিবিরের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। তারপর আবার রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। নিবির কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বলে,
—আমি দিয়ে আসব তোমাকে?

— না স্যার, আমি চলে যাব। আমার সমস্যা হবে না। একটু বেশি টাইম নিয়ে পড়িয়ে দিব।

নিবির কথার কাধে হাত রেখে বলে,
—আমি বলছি তো আমি পৌঁছে দিয়ে আসব।

কথা নিবিরের হাতের দিকে তাকালে নিবির কথার কাধ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। সেই সময় একটা রিকশা আসে আর কথা রিকশাকে থামায় কিন্তু রিকশা যাবে না বলল। তখন একটা মাস্ক পরা ছেলে এসে রিকশাওয়ালার কাধে হাত রেখে বলে,
—ওইদিকে যাবে না কেন? কি সমস্যা ওইদিকে আমাকে বল?

—আমার ইচ্ছা আমি যামু না ওইদিকে

—তোর ইচ্ছা হলে হবে নাকি, আমি অঅনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দেখছি এই মেয়েটা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ যাচ্ছে না। এখন আমি যখন তোকে ধরেছি তোর তো যেতেই হবে।

—জোরজবরদস্তি নাকি

—যদি বলি তাই।

ছেলেটার পাশে আরও তিনটা ছেলে এসে দাঁড়ায়। সবার মুখেই মাস্ক পরা। এটা দেখে রিকশাওয়ালা ভয় পেয়ে যায় আর বলে,
—আফা আপনে উঠেন। কই যাইবেন লইয়া যাই।

ছেলেটা কথার পাশে গিয়ে কথার হাত ধরে রিকশায় উঠিয়ে রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দেয় তারপর বলে দেয় সাবধানে যেতে। কথা যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এই পাঁচ বছরে তার সাথে এমনটা প্রথম হল। রিকশা চলতে শুরু করলেও কথা পিছনে ফিরে মাস্ক পরা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিল। নিবির ছেলেটাকে বলে উঠলো,
—এলাকায় নতুন মাস্তান নাকি?

—মাস্তান গুন্ডা যাই হই না কেনো মেয়েদের কাধে হাত দেই না।

—এই মেয়ে আপনার পরিচিত নাকি, যেভাবে রিকশাওয়ালাকে থ্রেট দিলেন।

—পরিচিত থেকেও যদি গভীর কিছু থাকে সেটা বলতে পারেন স্যার। আর আপনি স্যার স্যারের মত থাকবেন একটু এটিটিউড নিয়ে আর আপনি কিনা মানুষদের লিফট দেওয়ার জন্য খোজাখুজি করেন। এক কাজ করলেও পারতেন কলেজের প্রফেসর না হয়ে ড্রাইভারের চাকরি করলেও পারতেন।

—কি বলতে চান আপনি?

—কিছু না চলি স্যার আজ। এখন তো রোজ দেখা হবে।

বলেই ছেলেগুলো বাইক নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। আর নিবির সেখানে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ আর ভাবল,
—গভীর সম্পর্ক তাদের আর কথাও কিছুই বলে নি তাহলে কি কথা এই ছেলেটাকে চেনে, সত্যিই কি খুব গভীর সম্পর্ক?

_________

আয়ান কনকের বাসার নিচের এক টি স্টলে বসে চা খাচ্ছে। আর রাস্তায় তাকিয়ে আছে কখন কনক আসবে। প্রায় ১ঘন্টার মত বসে আছে সে চায়ের দোকানে কিন্তু কনকের আসার খবর নেই। আরও ১০-১৫ কেটে যাওয়ার পর কনককে দেখা গেলো না। আয়ান ভাবলো আজ হয়তো কনক কলেজ যায়নি তাই এখনো আসে নি। তাই চায়ের বিল দিয়ে ভাবলো আজ চলে যাবে।
—চাচা চায়ের দাম কত আসছে?

—তিন কাপ চা খাইছেন আমনে তয় তিরিশ টেয়া ওইছে।

—আচ্ছা

আয়ান মানিব্যাগ থেকে ১০০০টাকার একটা নোট বের করে চাচাকে দিল। চাচা নোট হাতে নিয়ে আয়ানের তাকিয়ে বলল,
—বাবা আমার চোট দোকান কয়জনই বা কাস্টমার আইয়ে। এত বড় নোটের ভাংতি নাই আমার কাছে। আমনে আমারে খুচরা তিরিশ টেয়া দেন

—আমার কাছে তো খুচরা টাকা নাই। তাহলে এখন কি করব

—এই নাও চাচা ওনার ত্রিশ টাকা

পেছনে কোনো মেয়ের কন্ঠ শুনে আয়ান পেছনে তাকিয়ে দেখে কনক ত্রিশ টাকা চাচাকে দিচ্ছে। আয়ান তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
—না না আপনি আমার বিল দিবেন কেনো? আমিই দিব সমস্যা নেই

—কোত্থেকে দিবেন আপনার কাছে তো ভাংতি নেই। নাকি চাচার দোকানের কাপ ধুয়ে?

—না মানে ইয়ে

কনক খিলখিল করে হেসে উঠলো আয়ান যেনো চোখ সরাতেই পারছে না। কনকের গগণ মাতানো হাসি যেনো আয়ানের কানে সুমধুর ধ্বনির সৃষ্টি করছে।
—কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলেন? আরে আপনি আজ আমার থেকে ধার নিন অন্যদিন আমি আপনার থেকে ধার নিব। ঠিক আছে তাহলেই তো হবে।

—তার মানে আমাদের আবার দেখা হবে?

— হুম আমার ত্রিশ টাকা ফেরত দিবেন না আপনি তাই আবার দেখা হবে।

— হুম তা তো দিতেই হবে। আজ আপনি না থাকলে কি বিপদে পরতাম বলেন তো। আচ্ছা আপনি কি এখানেই থাকেন?

—জি এই যে বাড়িটা এটাতেই থাকি আমি।

—আপনার নামটা যেন কি? না মানে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নামটা জানা দরকার

—কনক আর আপনার?

—আয়ান

—আচ্ছা তাহলে আমি আসি আজ।

—ঠিক আছে, কিন্তু আবার কবে দেখা হবে, মানে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য।

—ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

—আল্লাহ হাফেজ।

কনক মুচকি হাসি দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।

________

কথার টিউশন থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। লেইট করার কারণে একটু বেশি টাইম নিয়ে পড়ালো কারণ বাচ্চাটার কাল পরীক্ষা আছে। রিকশা পেতে দেরি হচ্ছিলো তাই সে একটা সিএনজি তে উঠে পরলো। সেখানে আগে থেকেই তিনজন লোক ছিলো। পেছন থেকে দুইজন সামনে এসে বসলো আর কথাকে পেছনে জায়গা দিলো। কথার পাশের লোকটি বারবার কথার দিকে তাকাচ্ছিলো। কথা যেনো দেখেও না দেখার ভান ধরে রইল। ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও উপরে তা দেখাচ্ছে না। রিজার্ভ করা সিএনজি না তাই রাস্তার মোড়েই কথাকে নামতে হলো। একটা গলি দিয়ে ঢুকে যেতে হয় কথার বাসায়। কথা হাটছে তবে মনে হলো তার সাথে সাথে কেউ হেটে যাচ্ছে। কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না কথা। হাটার গতি বাড়িয়ে দিলো। চাচার দোকানের সামনে আসার পর হঠাৎ কে যেনো তার হাত ধরে টান দিয়ে দোকানের পিছনে নিয়ে গেলো। পিছনের দিকটা অন্ধকার তাই রাস্তা থেকে সেখানে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কথা কিছু বুঝার আগেই কথাকে দোকানের দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো কেউ।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

[আশা করি নায়ক কে এই পবে সবাই বুঝতে পারছেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here