উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -১২+১৩

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_12
#Writer_Fatema_Khan

কনক হা করে সামনের লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে, যে কিনা তার সামনে ত্রিশ টাকা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

— আয়ান আপনি এখানে!

— আসলে আমি এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারি নি।

— ওহ আচ্ছা। কিন্তু, এভাবে হাতে ত্রিশ টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

—ওইদিন তো আমার কাছে ভাংতি ছিলনা তাই দিতে পারিনি। (টাকা দেওয়া তো বাহানা মাত্র, তোমার সাথে দেখা করাই আমার মূল উদ্দেশ্য)

—আপনি পারেনও বটে, এই টাকা আমাকে ফেরত দিতে হবে না ওইদিনই তো বললাম

—আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু একটা কথা বলি আপনাকে যদি মনে কিছু না করেন?

— হুম বলুন না কিছু মনে করব কেনো?

—আমার সাথে কি এক কাপ কফি খাওয়া যায়, এই কাছেই কোনো রেস্টুরেন্টে। বেশি সময় নিব না আমি

—ঠিক আছে চলুন। তবে কাছেই তো হেটেই যাই কি বলেন

—জি চলেন। আজকের আকাশটা কেমন যেনো হয়ে আছে তাই না

—আজ আকাশ এমন দেখাচ্ছে কারণ আজ আকাশের মন খারাপ

—তাই নাকি! আপনি কি করে জানেন

—আমি জানি তো। দেখবেন কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি পরবে। তবে বেশি না গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হবে।

—এই ডিসেম্বরেও বৃষ্টি হয় নাকি!

—হয় তো,কেনো আপনি কখনো দেখেন নি আগে?

—দেখেছি মনে হয় কিন্তু মনে পরছে না এখন

—আচ্ছা বাদ দিন। ওই যে সামনের ওই রেস্টুরেন্টে চলুন

—ঠিক আছে চলুন।

_________

তূর্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছিলো। আজ সারাদিনে একবারও বাইরে যায় নি। কিছুক্ষণ আগেই কাব্যের কল এসেছে সবাইকে আসতে বলেছে তারা আড্ডা দিবে আজ বিকালের দিকে। তূর্য নিজের ওয়ালেট আর মোবাইল নিয়ে বের হবে সেই সময় তূর্যের বোন মিলি এসে দাঁড়ায় তূর্যের সামনে।
—কিরে রাস্তা আটকালি কেনো? আমি একটু বের হব এসে তোর সাথে কথা বলি।

—এই ভাইয়া শোন না আমাকে নিয়ে চল তোর সাথে বাসায় ভালো লাগছে না একদম।

—একটু আগেই তো তুই বাসায় আসলি কলেজ থেকে আর এখন ভালো লাগছে না৷

—তুই এমন কেনো, কোথায় এত বছর পর দেশে এলি বোনকে টাইম দিবি কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবি তা না করে সারাদিন আড্ডা দিতেই থাকিস। লাগবে না আমার যাওয়া

—আচ্ছা শোন তোদের কলেজের একটা মেয়ে আছে না কি যেনো নাম ও হ্যাঁ কথা তোর এক ব্যাস জুনিয়র। চিনিস ওই মেয়েকে

—আমার জুনিয়র কথা, হঠাৎ এই মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করছিস আর তুই কি করে এই মেয়েকে চিনিস?

—সেগুলো পরে বলি, আগে বল কিছু জানিস কেমন মেয়ে বা কোথায় বড় হইছে এই সম্পর্কে

—আমার জুনিয়র একটা মেয়ের এত ডিটেইলস আমি কি করে জানব? তবে হ্যাঁ আমাদের কলেজের প্রফেসর নিবির স্যার হয়তো কথাকে পছন্দ করে আর ও হয়তো কোনো একটা অনাথা আশ্রমে ছিলো এত বছর। আর এখন কয়েকটা বাচ্চাকে টিউশন করায় এভাবেই চলে যায়। এর বেশি কিছুই জানি না।

—কোন অনাথ আশ্রম জানিস তুই

—আরে বাবা ওই মেয়ে সেলিব্রেটি নাকি যে এতকিছুর খবর রাখব। নিবির স্যার ওই মেয়েকে পছন্দ করে তাই টুকটাক সবাই জানে এই মেয়েকে নিয়ে। আমিও এতটুকুই জানি

—আচ্ছা এবার তুই যা। আর কাল তোকে নিয়ে ঘুরতে যাব ঠিক আছে, এবার খুশি তো

—অনেকে খুশি। এখন তুই যা

—ঠিক আছে যাচ্ছি, মাকে বলে যাই।

_________

—আমার এখন উঠতে হবে। আসলে আমার একটা বাচ্চাকে পড়াতে যেতে হবে। আর বসলে লেইট হয়ে যাব।

—ওহ তাহলে উঠা দরকার।

—জি, আমার এখন যাওয়া দরকার।

—আপনার আপত্তি না থাকলে আমার বাইকে করে আপনাকে দিয়ে আসি আমি। মানে এই সময় তেমন একটা রিকশা পাওয়া যায় না তাই বলছিলাম। আপনি না যেতে চাইলে জোর করব না।

—না ঠিক আছে আমি একাই চলে যাব আর আপনি আমার জন্য এত ভেবেছেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি এখন উঠছি। আল্লাহ হাফেজ

—আল্লাহ হাফেজ।

আর কিছু না বলেই কনক রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে গেলো। আয়ান বিল পে করে বাইরে বের হয়ে দেখে কনক দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। কিন্তু কোনো রিকশাই পাচ্ছে না। কনকের পাশে গিয়ে আয়ানও দাঁড়িয়ে রইল। তবে তাদের মাঝে কোনো কথা হল না শুধু একটু হাসি বিনিময় হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা রিকশা পেয়ে গেলো কনক রিকশায় উঠে আয়ানকে হাত উঠিয়ে বিদায় জানালো। আয়ানও হাত উঠিয়ে বিদায় জানিয়ে বলল,
—সাবধানে যাবেন। আর মামা সাবধানে নিয়ে যাবেন ওনাকে। আস্তে রিকশা চালাবেন এত তাড়ার কিছু নেই।

—ঠিক আছে আমি আসছি তাহলে।

— হুম, আবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

কনকের রিকশা চলতে শুরু করে। আয়ান রিকশার দিকেই তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ দেখা যায়। কনক রিকশা থেকে একবার পিছনে ফিরে আয়ানকে দেখে নেয় আয়ান তা দেখে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। রিকশা আর দেখা যাচ্ছে না। আয়ান নিজের বাইকের কাছে গিয়ে নিজের বাসায় চলে যায়।

_________

কাব্য বাইকে করে বাসায় ফিরছিলো। আজ তার মন ভালো নেই। কারণ আজ সারাদিনে একবারও কথার সাথে দেখা হয়নি। আজ মনে হয় আর হবেও না। এই সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। কাব্য বাইকটা কাছেই রেখে একটা দোকানের ভেতর গিয়ে দাঁড়ায়। তখনি একটা বাড়ি থেকে একটা মেয়ে বের হয়ে আসে। আর মেয়েটিকে চিনতে কাব্যের দুই মিনিটও সময় লাগে নি। আর মেয়েটি ছিল কথা নিজেই। কথা গায়ের ওড়নার একটা অংশ মাথায় দিয়ে একটু জোরে হাটতে থাকে। কাব্য তাড়াতাড়ি নিজের মাস্কটি পরে নেয়। আর কথা সেই দোকানেই এসে দাড়ালো। কথা মাথায় থাকা কাপড়টা সরিয়ে হাতের চুলের পানি মুছছিলো। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরাতে তেমন একটা ভিজে যায় নি সে৷ কাব্য কথার ভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বিন্দু বিন্দু পানি আছে মুখের উপর। চোখের পাপড়ি তে বিন্দু বিন্দু পানি আছে যেনো ভোরের ঘাসের উপর পরে থাকা শিশির। মেয়েদের হয়তো আলাদা কোনো ইন্দ্রিয় থাকে যা দ্বারা তারা না দেখেও বুঝতে পারে কেউ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক সেটাই হল কাব্য কথার ক্ষেত্রে। কথা হঠাৎ কাব্যের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। হঠাৎ এভাবে তাকানোর ফলে কাব্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি অন্যদিকে ফিরে যায় কাব্য।
—এই এদিকে তাকান আপনি, আমার দিকে তাকান

বেচারা কাব্য উপায় না পেয়ে কথার দিকে তাকায়।
—আপনি এখানেও। তারমানে আপনি আমার পিছু নিয়েছেন তাই না।

—না মানে তেমন কিছুই না। আমি এই পথেই যাচ্ছিলাম তারপর বৃষ্টি শুরু হল তাই এখানে দাড়ালাম। কিন্তু আপনি যে আমাকে দেখে আমার পিছু পিছু চলে আসবেন সেটা ভাবতে পারি নি। তাই তাকিয়ে ছিলাম।

—আমি আপনার পিছু নিব কেনো আর আপনি নিজেকে কি ভাবেন যে আমি আপনার পিছু নিব।

—আজ কিন্তু আমি এখানে আগে এসেছি তারপর আপনি। আর একটা কথা বলি আমি আপনার পিছু নিব আপনাকে টুকটাক জ্বালাব তা না আপনি আমার পিছে ঘুরছেন। জিনিসটা আমার ভালো লাগে নি।

—মানে কি এসবের?

—মানে সিম্পল আমি সবসময় আপনার পিছনে পিছনে থাকার কথা কিন্তু আজ আপনি এসে গেলেন। কি ব্যাপার, আমাকে না দেখেই প্রেমে টেমে পরে গেলেন নাকি?

—আপনি তো বড্ড অসহ্যকর মানুষ

—ভালো করে তো কথাও হল না এতেই আপনার কাছে আমি অসহ্যকর হয়ে গেলাম আর সারাজীবন কি করে থাকবেন বলুন?

—সারাজীবন মানে! আমি সারাজীবন আপনার কথা শুনতে যাবোই বা কেন? আর নেক্সট টাইম আমার পিছু নিলে পুলিশে দিব কিন্তু আমি।

—সে আপনি আমার সাথে যা মন চায় তাই করতে পারেন কিন্তু পরে যেনো আপনি কষ্ট না পান

—আমি কষ্ট পেতে যাব কেনো? আর আপনার তো কোনো কিছুই আমার ভালো ঠেকে না এভাবে চোরের মত সবসময় মাস্ক পরে থাকেন

—চোরেরা মাস্ক পরে না বুঝলেন মাস্ক পরে মাস্ক পরে সচেতন মানুষেরা বা ডাকাতেরা। এখন আপনি আমাকে হয় সচেতন মানুষের ভেতর ফেলবেন আর নয়তো ডাকাত কারণ আপনার সবকিছুই ডাকাতি করে নিয়ে যাব আমি

—আপনাকে তো আমি….

—আপনি বেশি কথা বলেন বুঝলেন। বৃষ্টি থেমে গেছে বাসায় যান। এভাবে ডেইলি দেরি করে বাসায় যাবেন না। সবসময় তো আর আমি থাকব না আপনার পিছু পিছু। আমারও কাজ থাকে।

—আমি আপনাকে একবারও বলেছি আমার পিছনে পরে থাকতে, আমার খেয়াল আমি নিজেই রাখতে পারি।

—সেটা আমার চেয়ে ভালো কে ই বা জানে। না হলে ১৪ বছরের একটা মেয়ে ঢাকায় একা তার পরিবার ছাড়া একা একা সার্ভাইভ করে আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

—মানে! আপনি কি করে…

—বললাম না আপনি আমাকে চিনেন। সব মনে আছে আমাকেই বুঝি আপনি ভুলে গেছেন। আচ্ছা আজ বাসায় যান আরেকদিন সময় নিয়ে সব মনে করিয়ে দিব।

কাব্য একটা রিকশা ডেকে কথাকে রিকশাতে বসিয়ে দেয়। তারপর রিকশা চলে যায় আর কাব্যও নিজের বাইকে উঠে নিজের বাসায় চলে যায়।
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_13
#Writer_Fatema_Khan

সেই বিকাল হতেই বৃষ্টি হচ্ছে থামার নামই নেই। বৃষ্টি আর ঠান্ডায় চারপাশ কেমন নিস্তব্ধ। অন্যান্য দিন কথার বাসায় সামনের খালি জায়গায় বাচ্চাদের খেলতে দেখা যেত কিন্তু আজ কাক পক্ষীও নেই। কথা রোজ বারান্দায় থাকে তবে আজ তার আর সুযোগ নেই। এমনিতেই কাক ভেজা হয়ে বাড়ি ফিরেছে। যে হারে বৃষ্টি হয়েছে রিকশায় থেকেও কথা পুরো ভিজে গেছে। আজ রুমের ভেতরেই জানালার পাশে বসে কফি খাচ্ছে। এদিকে কনক ঠান্ডা পেয়ে এসেই ঘুম দিয়েছে। কথাও হয়ত এতক্ষণে ঘুমিয়ে যেত কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তার মাথা ব্যাথা করছে রাতে হয়ত জ্বরও আসবে। আর মনে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।
—এই মাস্ক পরা ছেলেটা কে? এর পরিচয় কি? আমাকে নিয়ে এতকিছু জানে কি করে? আবার বলছে আমিও চিনি তাকে? কিন্তু কি করে? এত এত প্রশ্ন আমি এসবের উত্তর পাব কি করে? মাথায় কিছুই আসছে না, কিভাবে জানব আমি এই ছেলে আসলে কে? কিছুই বুঝতে পারছি না কি করে জানব সবকিছু?

—একা একা এখানে বসে কি ভাবছিস? আর তোর কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেছে

— হুম সমস্যা নেই। জানিস আজ কি হয়েছে?

— কি হয়েছে?

—ঢাকায় আমি কাউকেই চিনি না শুধু তোদের ছাড়া কিন্তু একজন আছে যে আমার জীবনের অনেক কিছু জানে আর তাকে নাকি আমিও চিনি

—কে?

—ওই মাস্ক পরা ছেলেটা।

—আরে তোকে বিভ্রান্তিকর করছে, দেখ গিয়ে আসে পাশে খবর নিয়ে এসব বলছে। তুই এসবে কান দিয়ে নিজের মাথা নষ্ট করিস না।

—তুই ঠিক বলছিস, আমি একটু বেশিই ভাবছি।

—তবে একটা কথা কি জানিস, ছেলেটা তোকে পছন্দ করে। না হলে এভাবে তোর পেছন পেছন ঘুরত না।

—কিছুই বুঝতেছি না। আর এই ছেলে মুখে মাস্ক পরে থাকে চিনবোই বা কি করে বল?

—তাও ঠিক। জানিস তোর কথাই ঠিক ছিল। আজ আবার আয়ানের সাথে দেখা হলো। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে কফি খেলাম৷ তারপর সে আমাকে তার বাইকে লিফট দিতে চাইছিল কিন্তু আমি নেই নি। রিকশা করে চলে এসেছি।

—কি বলেছিলাম বল আজ আবার দেখা হবে তোদের। তুই দেখে নিস ডেইলি দেখা হবে তোদের আর তোর ওই আয়ান কোনো না কোনো বাহানায় হাজির হবে।

—কিন্তু কেন?

—পছন্দ করে তোকে বোকা মেয়ে তাই । এবার চল পড়তে হবে তো নাকি।

— হুম
________

পরের দিনও বৃষ্টি থামার নামই নেই। গতকাল বিকাল হতে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেই বৃষ্টি মুষলধারে চলছে। কথা আর কনক আজ কলেজ যাবে না। তাই সকালের আরামের ঘুম মিস করতে চায় না। দুইজনেই ঘুম। অবশ্য রাতে কথার খুব জ্বর এসেছিল। সারারাত কনক তার পাশেই জেগে ছিলো আর সেবা করেছে। শেষ রাতের দিকে জ্বর কমলেও সারারাত না ঘুমানোর ফলে শরীর অনেকটাই দূর্বল। তাই দুইজনেই আজ বাসায় থাকবে।
সকাল ১১টার দিকে উঠে কনক কিছু রান্না করে নেয়। তারপর কথাকে জাগিয়ে দেয়। কথা উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়। ৩০মিনিট পর গোসল সেরে বের হয়।
—কথা আয় খাবি। আমি সব রান্না করে রেখেছি। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

—তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না, বরাবরই তুই আমার জন্য কষ্ট করে যাচ্ছিস। আর আমি কিনা তোর কোনো কাজেই আসলাম না কখনো।

—মন খারাপ করছিস কেনো আর এভাবে তুই কথা বলছিস কেনো? আমি কি তোর বোন না?

—তুই আর অনাথ আশ্রমের সবাই ছাড়া আমার আর কে আছে বল, তোরাই তো সব। মা বাবা আর রিয়ান ভাইয়ার সাথে কখনো দেখা হবে কিনা কে জানে বা তারা আমাকে মনে রেখেছি কিনা সেটাও তো জানি না।

—মা বাবা কখনো তার সন্তানকে ভুলতে পারে না আর রইল রিয়ান ভাইয়ার কথা তুই নিজেই তো বলিস রিয়ান ভাইয়াই একমাত্র যে কিনা তোকে সব বিপদ থেকে আগলে রাখে। তাহলে তারা কি করে ভুলতে পারে?

—আচ্ছা আমি কি তাদের আবার ফিরে পাব কিন্তু আমি কি করে তাদের সামনে যাব? এতবড় একটা ভুল করে কোন মুখে সবার সামনে যাব। আর আমার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তাদের কি করে বলব?

— চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।

—আচ্ছা শোন আমি কালকেও কলেজ যেতে পারব না। পরশু আমার একটা ইন্টারভিউ আছে তার প্রস্তুতি নিতে হবে।

—ঠিক আছে। কিন্তু ওই মাস্ক পরা আশিকের কি হবে রে এই তিনদিন তোকে না দেখে

—তা আমার জানার বিষয় না। কে আমার জন্য অপেক্ষা করল আর কে করল না। এসবে আমি জড়াতে চাই না এটা তুই ভালো করেই জানিস। তবে এই ছেলেটার ব্যবহারে আমি অবাক হই।

—কেনো কি করে সে?

—তেমন কিছুই না। কিন্তু কিছু না করার মাঝেও অনেক কিছু। কাল আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আমি যেই না টের পেয়ে ওর দিকে তাকালাম এমন ভাব করছিল আমাকে দেখেই নাই তারপর নিজে রিকশা ডেকে আমাকে বিদায় দিয়ে তারপর নিজে যাওয়া। আচ্ছা চল খেয়ে নেই।

—তুই যা আমি আসতেছি।

—ঠিক আছে।

কথা চলে গেলে কনক হেসে দেয় আর বলে,
—তুই গেছিস কথা আমি বুঝি আর এই মাস্ক পরা ছেলেটাই তোর সব দুঃখ দূর করবে এটা আমার বিশ্বাস। এখন দেখা যাক ক হয়
_________

২দিন পর,
কথা খুব ভোরে উঠে নিজের সব কাজ শেষ করে। ইন্টারভিউ ১০টায় আছে৷ এর আগেই তার প্রস্তুতি কমপ্লিট করে। কথা তৈরি হয়ে বসে আছে। ৯টায় বাসা থেকে বের হবে। একটু আগেই বের হয়ে যাবে সে। আর তাই করলো, কথা ৯টা বাজার আগেই বের হয়ে গেলো। কথা একটা রিকশা নিলো তারপর ইন্টারভিউর উদ্দেশ্যে বের হল। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর কথা রাস্তায় দেখে একজন বয়স্ক লোক বসে আছে। কথা রিকশা থেকে নেমে বয়স্ক লোকটার কাছে গিয়ে দেখে উনি হয়ত কোনো গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে ব্যাথা পেয়েছে। তিনি দাড়াতে পারছেন না। পাশে দিয়েই একটা গাড়ি যাচ্ছিল কথাকে দেখে গাড়ি থামালো। গাড়ির ভেতর থেকে নীলিমা খান বের হয়।
—আরে কি হয়েছে ওনার?..

—আসলে আন্টি আমিও জানি না। আমি তো ইন্টারভিউতে যাচ্ছিলাম তখন দেখি উনি এভাবে পরে আছেন। তাই নেমে আসলাম রিকশা থেকে ওনার কি হয়েছে জানার জন্য। মনে হচ্ছে আন্টি ওনাকে কোনো গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে। আমার ওনাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার।

—তুমি তোমার ইন্টারভিউ তে যাও আমি ওনাকে আমার গাড়ি করে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব।

—না আন্টি আমিও যেতে চাই।

—তোমার ইন্টারভিউ কয়টায়?

—১০টায় শুরু হবে।

—এখন তো ৯ঃ১৫ বাজে। আচ্ছা চলো।

তারপর নীলিমা আর কথা নীলিমার গাড়িতে লোকটাকে উঠিয়ে ডক্টরের কাছে নিয়ে যায়। লোকটাকে ডক্টর দেখানোর পর নীলিমা কথাকে বলে,
—তোমার নাম কি?

—জি কথা। আন্টি আমার এবার যাওয়া দরকার এমনিতেই আমি যেতে যেতে লেইট হয়ে যাব।

—আচ্ছা যাও। আবার দেখা হলে ভালো লাগবে তোমার সাথে।

—অবশ্যই আন্টি আমারো খুব ভালো লাগবে। এখন আসছি। আল্লাহ হাফেজ।

—আল্লাহ হাফেজ।

কথা তাড়াতাড়ি হসপিটালের বাইরে চলে যায়। নীলিমা কথার দিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ না কথা
চোখের আড়াল না হয়।
—মেয়েটা দেখতে কি সুন্দর। আর সবচেয়ে বড় কথা হল কত ভালো মনের মেয়ে। না হলে কেউ নিজের ইন্টারভিউ থাকাকানীল কেউ আরেকজনের উপকার করতে আসে যাকে কিনা সে চিনেই না। মেয়েটার সাথে কিছুক্ষণ কথাও হল না। আবার দেখা হলে জোর করে বাসায় নিয়ে যাব।

ড্রাইভার নীলিমাকে বলল,
—ম্যাডাম হয়ে গেলে চলুন। আমাদের দেরি হচ্ছে।

— হুম চলো। আমি তো ভুলেই গেছি আমাদেরও তো দেরি হচ্ছে।

__________

রিকশা ভাড়া মিটিয়ে কথা দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো। সে যেখানে ইন্টারভিউ দিবে সেটা ৮ম তলায়৷ হেটে যেতে খুব লেইট হবে তাই লিফটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর লিফট খুললে সে তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে পরে তারপর ৮ম তলায় পৌঁছে যায়। অফিসে গিয়ে সে যেখানে ইন্টারভিউ নিবে সেখানে যায়। গিয়ে দেখে সবার নেওয়া শেষ। বাইরে কেউ নাই তবে একজন ভেতরে আছে তার ইন্টারভিউ নিচ্ছে। কথার সামনেই একজন স্মার্ট মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আর এটাই বসের এসিস্ট্যান্ট। কথা ওনার সাথে কথা বলছিল আর রিকুয়েষ্ট করছিল তার ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য। কিন্তু ওই মেয়ে মানা করে দিচ্ছিল কারণ এই সিদ্ধান্ত সে নিতে পারবে না তবে সে কথা বলে দেখবে। রুম থেকে ইন্টারভিউ দিয়ে শেষেরজন বের হয়ে গেলো। তারপর এসিস্ট্যান্ট রুমের মধ্যে গেলো। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা কথাকে ভেতরে যেতে বলল। কথা কিছুটা নার্ভাস হয়ে পরেছিল তবু্ও সাহস নিয়ে ভেতরে ঢুকল। রুমে তিনজন লোক বসে ছিল আর একজন মহিলা। আরেকটা চেয়ার খালি ছিল। সে এখনো আসে নি। কথাকে তারা বসতে বলল আর কিছু প্রশ্ন করতে থাকল। হঠাৎ রুমের দরজা খুলে একজন রুমের ভেতর ঢুকল। কথা তো তাকে দেখে অবাক। আর সে ব্যক্তিও কথাকে এখানে দেখতে পারবে ভাবতেও পারে নি। কথা অস্ফুটস্বরে বলল,
—আপনি এখানে?

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,

,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here