উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -১৪+১৫

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_14
#Writer_Fatema_Khan

কলেজের বাইরে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য আর তূর্য। তিনদিন হয়ে গেছে কথাকে দেখতে পায় নি। এর জন্য তার বাবার উপরও কিছুটা রেগে আছে সে।

৩দিন আগে,
এই বৃষ্টির সকালেও কাব্যকে খুব ভোরে উঠতে হল। কারণ তার বাবা রায়হান খান। তিনি কাব্যকে আজ জোর করেই অফিস নিয়ে যাবেন। এদিকে বৃষ্টি আর ঠান্ডা মিশ্রিত সকালে কে না চায় আরামে ঘুম দিতে। কাব্যও তার ব্যতিক্রম না। কিন্তু কি আর করার আজ সে বাবার সাথে পেরে উঠলো না। তাই আরামের ঘুমকে সাইডে রেখে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিল। কাব্যকে ফরমাল লুকে দারুণ লাগছে। কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট, হাতে রিস্ট ওয়াচ। ব্যাস সে তৈরি হয়ে নিচে নেমে আসলো। গিয়ে দেখে তার বাবা তার জন্য সোফায় বসে অপেক্ষা করছে। কাব্যকে দেখে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন আর ডাইনিংয়ে গিয়ে বসলো। কাব্য নিজেও ডাইনিং এ গিয়ে বসে নাস্তা খেতে থাকলো। কাব্য চুপচাপ খাবার খাচ্ছে তাই কাব্যের বাবা বলে উঠলো,
—আজ থেকে তাহলে তুই রোজ অফিস যাবি ঠিক আছে।

—একদম না বাবা, তুমি আজ জোর করছো বলেই আমি অফিসে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছি না হলে কখনোই আমি এত তাড়াতাড়ি অফিস জয়েন করতাম না।

—তুই চাস কি আমাকে একটু বলবি

—আমি আরও কিছুদিন পর অফিসে জয়েন হতে চাই। তবে আজ যাব তোমার সাথে।

—আমি পরশু দেশের বাইরে যাব আর এই তিনদিন তুই আমার সাথে থেকে কিছু কাজ শিখে নিবি যাতে আমি না থাকলে তুই এদিকে হ্যান্ডেল করতে পারিস। তাই অন্তত আমি যতদিন না আসি ততদিন তোকেই দেখবে অফিসের সব কাজ।

—অফিস থেকে আমি কখন আসতে পারব?

—আজ যেই টাইমে যাচ্ছি রেগুলার সেই টাইমেই যাবি আর আমি যেই টাইমে বাসায় আসি মানে রাত ৮টার পর বাসায় ফিরে আসবি।

কাব্য আর কোনো কথাই বলল না। চুপচাপ নাস্তা শেষ করে বাইরে চলে যায়। আর গাড়িতে গিয়ে বসে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

বর্তমান,
তূর্য কাব্যকে ধাক্কা দিয়ে ডাকছে,
—এই কাব্য কোন দুনিয়ায় হারিয়ে গেলি, এবার বাস্তবে ফিরে আয়

—আরে তূর্য তুই আর বলিস না বাবার যন্ত্রণা বড় যন্ত্রণা। অফিস অফিস করে মাথা গরম করে দিচ্ছে। এদিকে আজ তিনদিন হয়ে গেলো কথাকে দেখা তো দূরের কথা তার গলার স্বর টাও শুনতে পেলাম না। আজ কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি এখনো আসছে না।

—ওই যে কনক আসছে, কিন্তু কথা তো সাথে নেই।

— হুম তাই তো দেখছি। কনক কাছে আসুক তারপর জিজ্ঞেস করলেই হবে।

কনক অনেকটা কাছে এলে কাব্য আর তূর্য কনকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ এভাবে দুইটা ছেলে সামনে এসে দাড়ানোতে কনক অনেকটাই ভয় পেয়ে যায়। তবু্ও সাহস করে তাদের দিকে তাকায়।
—আপনি কনক তাই তো? কথার সাথেই থাকেন এক বাসায় আবার একসাথেই লেখাপড়া করেন?

—আপনারা কে? আর কথাকেই বা কি করে চিনেন?

—কথা কিছুই বলে নি আমাকে নিয়ে আপনার সাথে? কথা পিছু নেই এই টাইপ কিছু।

—ওহ হ্যাঁ, তাহলে সেই মাস্ক পরা ছেলেটা আপনি! কথা আপনার সম্পর্কে আমাকে বলেছে

—জি আমিই সে মাস্ক পরা ছেলেটা। আর আমার নাম কাব্য আর ও তূর্য আমার বন্ধু। তবে আপনার সামনে আমি মাস্ক খুলতেই পারি। কারণ শালিকে চেহারা না দেখালে বউ পটাতে সাহায্য করবে কে?

—শালি মানে আমি! আমি তো খুব এক্সাইটেড জিজু।

তূর্য কাব্যের কানের কাছে এসে বলে,
—ভাবি তো তোরে পাত্তাই দেয় না আর এই মেয়ে শালি হওয়ার জন্য এক্সাইটেড। আবার তোকে জিজুও ডাকছে। আমার তো সেই হাসি পাচ্ছে। হাউ ফানি এয়ার

—তুই চুপ থাকবি। আমাকে আগে শালিকে পটাতে হবে তাহলেই তো কথা সব ডিটেইলস জানা যাবে বুঝলি। এই কথা তো আমাকে এমনিতেই কিছুই বলবে না এভাবেই জানতে হবে।

—জিজু আর জিজুর বন্ধু আমাকে রেখে কি কথা বলেন আপনারা?

কাব্য আর তূর্য নিজেদের মাস্ক খুলে ফেলে। কনক কাব্যকে দেখে বলে,
—হায় আল্লাহ জিজু আপনি তো সেই হ্যান্ডসাম! কথা আপনাকে এভাবে দেখলে পুরাই ফিদা হয়ে যাবে।

কাব্য কিছুটা লজ্জিত মুখে তাকিয়ে থাকে কনক আর তূর্যের দিকে। তারপর বলে,
—শালি সাহেবা আপনি কথার সাথে এত বছর থেকেও কথাকে ভালো করে চিনতেই পারেন নি তাহলে

—মানে বুঝলাম না?

—মানে খুব সহজ সে আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড না। সে আমি যত ভালো দেখতেই হই না কেনো? সে যার জন্য নিজের বাড়ি ছেড়েছিল এখনো তাকেই নিজের মনে রেখে দিয়েছে।

—আমার এমনটা মনে হলো না। কারণ ও আপনাকে নিয়ে আমার সাথে প্রায় কথা বলে। আপনি এটা করেছেন ওটা করেছেন। আমার মনে হয় কথাও আপনাকে পছন্দ করে।

—হ্যাঁ আমাকে নিয়ে তার আপনার সাথে কথা বলার কারণ হল আমাকে নিয়ে কথার মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে অনেক কৌতূহল জেগেছে। সেই কৌতূহল মেটাতেই আমার প্রতি আগ্রহ আছে।

—জিজু কি বলেন এগুলো কথা এখনো ওই বিহানকে ভালোবাসে?

—-তেমনটাই আমার মনে হচ্ছে।

—আচ্ছা জিজু আপনি কি করে চিনেন কথাকে?

—কথা ওর জীবনের সবকিছু বলে থাকলে আমার কথাও বলে থাকবে।

—কথার সবকিছুই আমি জানি

—কথা যখন বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে ট্রেনে তার দুইটা মহিলা আর চারজন ছেলের সাথে দেখা হয়েছে এটা তো জানোই তাহলে

— হুম জানি

—আমিই সেই ছেলে যার সাথে ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলেছিল সে

—আপনি সেই ছেলে! কিন্তু কথাকে কি করে খুঁজে পেলেন? ও বলেছিল ও আপনার নাম অবদি জানে না।

—ও জানত না, আসলে বলার সুযোগ দেয় নি ওই বয়স্ক মহিলাটা। তার আগেই ওকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। তবে আমি কথার নাম জানতাম। অনেক খুজেছি আমার বন্ধুদের দিয়ে। অবশেষে ৩বছর আগে তাকে খুঁজে পাই। আমি এতদিন দেশে ছিলাম না তাই আপনার কথা আমার অত্যাচার থেকে বেঁচে গেছে।

—ওয়াও জিজু কি রোমান্টিক আপনি।

—আচ্ছা কথা কোথায়? আজ আসে নি ও?

—না আজতিনদিন এ কলেজ আসে না। ওইদিন তো খুব বৃষ্টি হয়েছিল তাই রাতে জ্বর এসেছিল। তারপর দুইদিন ও বাসায় ছিল। আসলে ওর ইন্টারভিউ আছে একটা তাই তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

—কথার জ্বর উঠেছিল আর আমি জানিই না। আচ্ছা ওর সাথে আমার দেখা করিয়ে দিবেন একদিন?

—অবশ্যই

—আচ্ছা কনক আমি যে ট্রেনের ওই ছেলেটাই বা আমার নাম কাব্য এসব কথাকে কিছুই বলবেন না প্লিজ।

—চিন্তা করবেন না জিজু, এই কনক কিছুই বলবে না। আর আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই আমি করব। আমার বন্ধু টা যদি একটু সুখে মুখ দেখে তাতে আমার চেয়ে খুশি আর কে হবে। কারণ ওর দুঃখের সময় আমি দেখেছি নিজের চোখে এবার সুখ দেখতে চাই।

—ধন্যবাদ, আচ্ছা এবার আমরা যাই। আল্লাহ হাফেজ।

—আল্লাহ হাফেজ জিজু।

কাব্য আর তূর্য বাইকে করে চলে গেলো। তবে কনকের হেসে হেসে কাব্য আর তূর্যের সাথে কথা বলা দুইজনের চোখ এড়ালো না। আর দুইজনেই রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।
কনক রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তবে কয়েকটা রিকশা ছেড়ে দিল সে। কারণ রোজ আয়ান আসে তার সাথে দেখা করতে, কিন্তু আজ এখনো আসে নি। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কনক চলে গেলো।

_______

আজ সন্ধ্যার আগেই কথা বাসায় ফিরে এসেছে। আজ টিউশন যায় নি আগেই বলে রেখেছিল তিনদিন কোথাও যাবে না সে। কনক এখনো বাসায় ফেরে নি। তার দেরি হবে। কথা ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার তৈরি করে নিল। কনকের জন্য অপেক্ষা করছে তার সাথে অনেক কথা বলার আছে তার। একজন মানুষের জন্য অপেক্ষা সবচেয়ে কঠিন কাজ। মানুষ অপেক্ষা করতে পছন্দ করে না। তবে তার জন্য কেউ অপেক্ষা করুক এটা খুব পছন্দ করে। কথাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে অপেক্ষার অবসান ঘটলো কলিং বেলের শব্দে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো কথার। তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে কনক খুব টায়ার্ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথা কনককে ভেতরে আসার জন্য সাইড দিয়ে দরজা আটকে দেয়।
—তোর ইন্টারভিউ কেমন হলো?

—তুই আগে ফ্রেশ হয়ে নে, তারপর খেয়ে কথা বলি। আগে তুই ফ্রেশ হয়ে আয় খুব ক্লান্ত লাগছে তোকে।

কনক চোখ তুলে কথার দিকে তাকালো আর মুচকি হেসে বললো,
—তুই সবসময়ই আগে আমার কথা ভাবিস কেনো রে? তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমার থেকে তো দূরে চলে যাবি তখন এভাবে কে খেয়াল রাখবে আমার?

—আমার বিয়ে মানে, তুই ঠিক করে এলি নাকি?

—কিছুটা এমনই

—মানে

—না না কিছু না।

বলেই রুমের দিকে ছুটে গেলো কনক। কথাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। কথা হ্যাবলার মত কনকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_15
#Writer_Fatema_Khan

কথা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল তখনই কনক রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো৷ কথা কনকের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো। কনক টেবিলের কাছে এসে একটা চেয়ার ধরে দাড়ালো। কথা কনকের উদ্দেশ্যে বললো,
—এই যে ড্রামাবাজ আপনার ড্রামা শেষ হলে খেতে বসেন। আপনি শুরু করেন আমি পানি নিয়ে আসছি৷ টেবিলে পানি নেই।

কথা পানি আনতে রান্নাঘরে চলে গেলো। কনক চেয়ারে বসে দুইটা প্লেটে খাবার বাড়তে লাগলো। কথা এসে একটা চেয়ার পেতে বসে পরে। তারপর দুইজনেই খাওয়া স্টার্ট করে দেয়। কনক কথাকে বলে,
—এবার বল ইন্টারভিউ কেমন হয়েছে?

—আজ কত ঘটনা ঘটে গেছে এই ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে তুই চিন্তাও করতে পারবি না।

—কি হয়েছে, ইন্টারভিউ ঠিক মত দিতে পেরেছিস তো আবার কোনো ঝামেলা হয় নি তো?

—না তেমন কোনো ঝামেলা হয় নি। তুই আগে শোন কি কি হয়েছে।

—তো তাড়াতাড়ি বলবি তো, আমার তো তর সইছে না।

কনক মনোযোগ সহকারে কথার দিকে তাকিয়ে আছে কথা কি কি বলছে তা শোনার জন্য। কথা আজকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলছে কনককে। একজন মানুষের এক্সিডেন্ট, তাকে দেখে কথা রিকশা থেকে নেমে তাকে সাহায্য করতে যাওয়া। খুব স্মার্ট দেখতে একজন মহিলা ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ওই মহিলার গাড়ি করেই লোকটাকে হসপিটাল নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। তারপর কথার ইন্টারভিউ এর কথা জানতে পেরে কথাকেও তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ইন্টারভিউ তে কথা সবার শেষে পৌঁছায়। তবে সমস্যা হয় নি কথাকে ইন্টারভিউ দিতে ভেতরে নেওয়া হয়। কথার ইন্টারভিউ প্রায় শেষ এই সময় একজন ইন্টারভিউ রুমে ঢুকে পরে।

ইন্টারভিউ রুম,,,
যারা ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তারা কথাকে কিছু প্রশ্ন করতে থাকল। আর কথা সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল। হঠাৎ রুমের দরজা খুলে একজন রুমের ভেতর ঢুকল। কথা তো তাকে দেখে অবাক। আর সে ব্যক্তিও কথাকে এখানে দেখতে পারবে ভাবতেও পারে নি। কথা অস্ফুটস্বরে বলল,
—আপনি এখানে

কথার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীলিমা খান। এই কোম্পানির মালিক রায়হান খান যিনি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তাই ওনার অবর্তমানে ওনার ছেলে কাব্য খান সব দেখাশোনা করছিল। কিন্তু আজ কোনো কারণে তিনি আসতে পারেন নি তাই বাধ্য হয়েই নীলিমা খানকে ইন্টারভিউ নিতে আস্তে হল। আগে অবশ্য নীলিমা খান অফিসে বসত তবে বছর কানেক আগে থেকে তিনি অফিসে আসেন না। নীলিমা খালি চেয়ারটাতে গিয়ে বসল আর কথার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। তারপর বাকি যারা আছে তাদের সাথে কথা বলতে লাগল।
—ওনাকে সব প্রশ্ন কি করা শেষ?

সেখান থেকে একজন বলল,
—জি ম্যাম ওনার সব প্রশ্ন করা শেষ আর উনি খুব ভালো উত্তর দিয়েছেন সব কটার।

—আচ্ছা আমি বাকিদের ডিটেইলস প্লাস কে কোন প্রশ্নের কি উত্তর দিয়েছে তা জানতে চাই। তারপর সিদ্ধান্ত নিব।

তারপর সেখানের একজন স্যার কথাকে বলল,
—আপনি বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন বাকিদের সাথে আমরা কিছুক্ষণ পরেই রেজাল্ট জানিয়ে দিব।

—জি ধন্যবাদ।

কথা ইন্টারভিউ রুম থেকে বের হয়ে বাইয়ে চেয়ারে বসে পরে। এভাবে প্রায় ৩০মিনিট কেটে যায়। তারপর একজন স্টাফ এসে কথাকে ভেতরে যেতে বলল। কথা উঠে ভেতরে চলে গেলো। কথাকে তারা বসতে বলল। আর বলল,
—আপনার রেজাল্ট খুব ভালো আর যেসব প্রশ্ন এখানে আপনাকে করা হয়েছে সব উত্তর আপনি খুব সুন্দর ভাবে দিয়েছেন। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জবটি আপনাকে দিব।

— সত্যি বলছেন আপনারা!

—জি আপনি চাইলে কাল বা পরশু থেকেই জয়েন করতে পারেন।

—আমি পরশু দিন হতে জয়েন দেই ।

—আচ্ছা তাতে আমাদের সমস্যা নেই। আর এই নিন আপনার এপয়েন্টমেন্ট লেটার।

কথা এক পলক নীলিমার দিকে তাকালো। তিনি কথার দিকেই হাসি মাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। তারপর কথা সালাম দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

বর্তমান,,,,
—বুঝলি এবার কি হয়েছিল আজ ইন্টারভিউ তে।

কনক কোনো কথাই বলছে না। চুপ করে বসে আছে। কথা কনকের কাধে হাত রেখে কিছুটা ধাক্কা দিল। কিন্তু তাতেও কোনো হেলদোল নেই কনকের। কিন্তু হঠাৎ করেই কনক লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো আর কথার হাত ধরে ঘুরতে লাগলো।
—দোস্ত কংগ্রাচুলেশনস, অনেক অনেক শুভ কামনা তোর জন্য। ফাইনালি তোর জব হয়েই গেলো। আর কত কাহিনী টাই না ঘটে গেলো এর মাঝে। আমি খুব খুশি খুব খুব খুব।

—আচ্ছা ছাড় আমাকে খাবার টা তো খেতে দিবি নাকি, আর এভাবে ঘুরালে আমার মাথা ঘুরে। ছাড় আমাকে। কিন্তু কথা হলো কি কাহিনী ঘটে গেলো এর মাঝে?

—সে কিছু না। চল খেয়ে নেই। কিন্তু তোর অফিসের বসের ছেলের নাম কাব্য

— তো কি হয়েছে? সত্যি আজ তোর কিছু কিছু কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

—এত ভাবতে হবে না তুই খেয়ে নে আগে।
________

তূর্য শিষ বাজাতে বাজাতে বাসায় ঢুকলো। বাসায় ঢুকে দেখে তার মা সোফায় বসে আছে। তূর্য গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।
—মা কি করো একা একা বসে

—কিছু নারে

—তাহলে এভাবে মন মরা হয়ে আছো কেনো? কিছু হয়েছে কি মা?

—তুই দেশে আসলি তো কিছুদিন হয়ে গেছে। তাই ভাবছিলাম আমাদের অফিসে যদি এবার তুই নিজের দায়িত্ব বুঝে নিতি, তাহলে আমার উপর থেকে একটু বোঝা কমতো। আর কতদিন এই বুড়ো বয়সে অফিস হ্যান্ডেল করব বল

—মা। ঠিক আছে আমি কাল পরশুর মধ্যেই অফিস জয়েন করব।

— সত্যি যাবি তো বাবা?

—কিন্তু আমাকে কাজ তো বুঝিয়ে দিতে হবে তাই না। আমিতো কাজের কিছুই বুঝি না।

—সেটা নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। আমি আছি আর আমাদের অফিসে একজন আছে যে খুব এক্টিভ নিজের কাজে। আয়ান, আয়ান তোকে সব বুঝিয়ে দিবে।

—আচ্ছা, ঠিক আছে। মা আমি উপরে যাই মিলির কাছে।

—আচ্ছা যা।
_________

তূর্য সোজা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো। মিলির রুমের সামনে এসে দেখে দরজা চাপানো তবে লক করা না। তূর্য দরজায় একবার নক করে। আর ভেতর থেকে শব্দ আসে দরজা খোলা আছে। তূর্য দরজাটা খুলে রুমে ঢুকে দেখে মিলি পড়ার টেবিলে পড়ছে। তূর্য গিয়ে মিলির সামনে দাঁড়ায়।
—কিরে ভাইয়া তুই কখন বাসায় এলি? রোজ তো আরও দেরি করে আসিস।

—আজ ইচ্ছে করেই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। আচ্ছা দেখতো কয়টা বাজে?

—এই তো ৮ঃ৩০ টা বাজে।

—আচ্ছা তুই এক কাজ কর। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে

—এখন কিন্তু কেনো?

—আরে মনে নেই ওইদিন বলেছিলাম তোকে নিয়ে বাইরে যাব। কিন্তু তারপর তো বৃষ্টির জন্য বের হওয়াটাই মুশকিল হয়ে পরে। তাই আর যাওয়া হয়নি। তাই আজ আর এখনই যাব আমরা।

— সত্যি ভাইয়া! তুই আমাকে এখন নিয়ে যাবি?

— হুম, নিয়ে যাব বলেই তো বলছি। তাই না

—ঠিক আছে আমি ১০মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে নিচে আসছি।

—তাড়াতাড়ি কর না হলে তোকে রেখেই আমি একা ঘুরতে চলে যাব।
________

ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোর নিচে হেটে চলছে মিলি আর তূর্য। কিছু দূর যাওয়ার পর মিলি একটা ফুসকার স্টল দেখতে পায়। মিলি তো তূর্যের হাত ধরে লাফাতে থাকে আর বলতে থাকে,
—ভাইয়া ওই যে ফুচকার স্টল। আমি কিন্তু ফুচকা খাব।

—ফুচকা খাবি ভালো কথা। কিন্তু ব্যাঙের মত লাফাচ্ছিস কেনো সেটা আগে বল?

—এটাকে ব্যাঙের মত লাফানো বলে না এটাকে উত্তেজিত বলে। আর আমিও ফুচকা খাওয়ার জন্য এভাবে লাফাচ্ছি।

—ফুচকা পাগলি একটা। চল

তূর্য ফুচকা দিতে বলল ফুচকাওয়ালা কে। আর মিলি ফুচকা পেয়ে তো নাকে মুখে খেতে লাগল। খেতে খেতে হঠাৎ মিলির চোখ একটু দূরে সামনে থাকা লোকটার উপর পরে। সাথে সাথে মিলির খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here