উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -১৬+১৭

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_16
#Writer_Fatema_Khan

এই মিলি কি হলো তোর হঠাৎ থেমে গেলি কেনো? ঝাল লাগছে বেশি?
তূর্য মিলিকে কাধে ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো।

—না ভাইয়া কিছু হয়নি। খাচ্ছি আমি

—আস্তে আস্তে খা তুই, আমি চলে যাচ্ছি না।

সামনে থাকা লোকটার চোখ মিলির উপর পরতেই তাদের চোখাচোখি হলো। আর লোকটা মিলির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। এই দেখে মিলি খাওয়া বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যায়। তূর্য পেছন ফিরে ছিল তাই দেখতে পাচ্ছিল না পেছন থেকে কে আসছিল আর মিলিই বা কাকে দেখে এমন রিয়েকশন দিচ্ছে, যে তার ফেভারিট ফুচকা না খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। লোকটা মিলির কাছে আসতেই মিলি বলে উঠলো,
—আসসালামু আলাইকুম স্যার

— ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তুমি এত রাতে এখানে কেনো মিলি?

—আসলে স্যার আমার ভাইয়ার সাথে ফুচকা খেতে আসছিলাম।

—ওহ।

—ভাইয়া উনি আমাদের কলেজের ইংরেজি প্রফেসর নিবির স্যার৷ আর স্যার ইনি আমার ভাইয়া তূর্য।

তূর্য পেছন ফিরে তাকালেই নিবিরকে সামনে দেখে অবাক হয়ে যায়। আর নিবির তূর্যকে দেখে পুরাই শকড। কারণ দুপুরেই কনকের সাথে মাস্ক পরা ছেলেটার সাথে এই ছেলেটা ছিলো আর তখন দুইজনের মুখেই মাস্ক ছিলো না। তাই সহজেই নিবির তূর্যকে চিনে ফেলে। তূর্যও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। তবুও মিলির সামনে দুইজনের একজনও সিন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছিলো না। তাই দুইজনেই হাসি দিয়ে হাত মিলালো।
—তাহলে এই তোমার ভাইয়া মিলি যে কিনা মাস্ক পরে বেকার বন্ধুদের সাথে ঘুরে।

—মানে স্যার।

—আরে স্যারের সাথে আমার আর কাব্যের একদিন দেখা হয়েছিলো। তোদের কলেজে গেছিলাম তোর লেখাপড়ার খোঁজ খবর নিতে। তখন আমাদের মুখে মাস্ক পরা ছিলো করোনা বুঝতেই পারছিস আমরা দেশের বাইরে থেকে আসছি এভাবে তো সব জায়গায় যাওয়া যায় না।

—কই আমাকে তো কিছুই বলিস নি।

—তোমাকে বলে নি ভুলে গেছে হয়তো। তবে এটা ঠিক তোমার ভাই আর তার বন্ধু খুব সচেতন নাগরিক।

তূর্যের রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। কারণ সে ভালো করেই জানে নিবির শুধুমাত্র তাকে পিঞ্চ করে কথা গুলো বলছে। তবুও এখন মিলির সামনে কিছুই বলতে চাচ্ছে না। নিবির বলে উঠলো,
—আচ্ছা মিলি তুমি তোমার ভাইয়ার সাথে এনজয় করো আমি যাই এবার৷

—জি স্যার।

নিবির তূর্যের দিকে একবার রাগী লুক নিয়ে তাকালো তূর্যও নিবিরের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর নিবির চলে গেলো। আর নিবিরের যাওয়ার দিকে মিলি তাকিয়ে থাকল। মিলির চোখে হাজারো কথা আছে নিবিরকে বলার কিন্তু সে কিছুই বলতে পারে না। নিবির নিজের গাড়িতে উঠে চলে যায়। তাতেই মিলির মন খারাপ হয়ে যায়।
—এই ভাইয়া স্যার এভাবে কথা বললো কেন? তোর আর কাব্য ভাইয়ার সাথে স্যারের ঝামেলা হয়নি তো? একদম মিথ্যা বলবি না আমাকে

—আরে কিছু না। তুই শেষ কর বাসায় যেতে হবে তো।
_________

খাবার টেবিলে বসে আছে কাব্য আর নীলিমা। দুইজনেই খাবার খাচ্ছিলো। নীলিমা কাব্যের উদ্দেশ্যে বললো,
—তোর আজ অফিস যাওয়া দরকার ছিলো। নতুন একজন এমপ্লয়ি আজ নেওয়া হয়েছে। আগামী পরশু দিন থেকেই জয়েন দিবে।

—দ্যাটস গুড মা। কিন্তু আমার যাওয়ার দরকার দেখছি না তুমি তো সামলে নিয়েছো তাই না৷ আর তুমি যে বেস্ট একজনকেই বাছাই করবে তা আমার জানা আছে।

—সে যাই হোক, তোকে পরশু দিন অফিস যেতে হবে। কারণ নতুন যে আসছে তাকে তুই সব কাজ শেখাবি।

—মা আমি নিজেই ভালো করে কাজ জানি না আরেকজনকে কি করে বুঝাবো?

—এটাই তোর প্রথম পরীক্ষা ধরে নে ক্যারিয়ার জীবনে। আর কালকের দিন তো আছেই বন্ধু দের সাথে আড্ডা না দিয়ে বাসায় বসেও কাজ করা যায়।

—আচ্ছা ঠিক আছে আমি পরশু দিন অফিস যাব আর সব কাজ বুঝিয়ে দিব। এবার তো খুশি তো?

—হুম খুব খুশি। এবার খেয়ে গিয়ে ঘুমিয়ে যাস বাবা।

—ঠিক আছে।
__________

কথা আর কনক কলেজ থেকে আসছিল তখন কথা দেখে কাব্য আর তূর্য দাঁড়িয়ে আছে। কথা কনককে ডেকে বলে,
—এই কনক ওই দেখ দুইটা ছেলে মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে আছে ওরাই হলো ওই ছেলেগুলো। এদের সাথে আরও দুইজন আছে তবে তারা আজ নেই।

—ওহ এরা! তুই চিন্তা করিস না আমি আছি তো আজ তোর সাথে।

—এটাও একটা চিন্তার বিষয় যে তুই আমার সাথে আছিস

—কি বলতে চাস তুই

—কিছুনা, এবার চল যাই।

কাব্য কথাকে আসতে দেখে গেইটের দিকে এগিয়ে আসে। কথা যেনো কাব্যকে দেখেই নি এভাবে পাস কাটিয়ে আসতে নিলে কাব্য কথার হাত ধরে ফেলে। কনক গিয়ে দাঁড়ায় তূর্যের কাছে। কথা কিছুটা ঘাবড়ে যায় এভাবে রাস্তায় হাত ধরাতে। কথা রাগী চেহারা নিয়ে কাব্যের দিকে তাকায়। কাব্য কথার হাত না ছেড়ে বলে,
—এই কয়দিন কই ছিলে? তোমার কি একবারের জন্যও মনে হয় নি যে কেউ একজন তো তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

—কে আমার জন্য অপেক্ষা করল আর কে করল না তা দেখার সময় আমার নেই। আর আপনি আমার হাত ছাড়ুন এভাবে অসভ্যের মতো রাস্তায় হাত ধরে আছেন কেনো?

—আমার ইচ্ছা আমি তোমার হাত ধরব আর কেউ কিছুই বলতে পারবে না আমাকে।

এদিকে এদের কান্ড দেখে কনক আর তূর্য মিটিমিটি হাসতে লাগলো যা কথার চোখে না পরলেও দূরে থাকা আয়ানের চোখ এড়ালো না। আর সে তূর্য আর কনককে এভাবে হাসতে দেখে রাগে চলে গেলো। ঠিক তখনই নিবির তার গাড়ি করে বাইরে চলে যাচ্ছিলো। কথা আর কাব্যকে এভাবে দেখে তার মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো। সে গাড়ি থামিয়ে গাড়ির বাইরে বের হয়ে এলো।
—এখানে রোজ এভাবে গুন্ডামী না করলে আপনাদের হচ্ছে না। কথার হাত ছাড়ুন আর কাল থেকে যেনো এই কলেজের আসেপাশেও না দেখি। আর কাল থেকে এখানে দেখলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে আপনার বিরুদ্ধে।

—আচ্ছা স্যার একটা কথা বলি আপনাকে। এই এতবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি আপনি একাই আছেন যে কিনা কথাকে প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য ওর আশেপাশে ঘুরেন। আর আরেকটা কথা এখানে অন্যরা আপনার স্টুডেন্ট তাই হয়তো আপনার কথা শুনতে বাধ্য আমি বাধ্য নই।

—কেউ আপনাকে বাধ্য হতে বলে নি, আপনি আমার স্টুডেন্ট দের বিরক্ত করলে অবশ্যই সেটা দেখতে হবে।

—আপনার সাথে কথা বলার আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ হচ্ছে না। এভাবে প্রতিদিন আমাদের মাঝে না আসলে চলছে না। আর কথা কাল আমি আসব না তাই দেখাও হবে না। তাই তুমি অপেক্ষা করবা না আমার জন্য। তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু এই বিরক্তিকর মানুষটা রোজ আমাদের মাঝে চলে আসে তাই আর বলা হয় না। আমি আজ তোমাদের বাসার নিচে অপেক্ষা করব (কাব্য কথার কানের কাছে গিয়ে কথাটা বলে)। আচ্ছা এখন চলি আমি। বাই কথা, বাই কনক

—বাই বাই
কনক খুব হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে বলছিলো কিন্তু কথার মুখের এক্সপ্রেসন দেখে তার মুখ চুপসে গেলো। তারপর কাব্য আর তূর্য চলে গেলো। গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে মিলি সব দেখলো।
—তার মানে এই জন্য তূর্য ভাইয়া আমাকে ওইদিন কথার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিলো কারণ কাব্য ভাইয়া কথাকে পছন্দ করে। আর এই জন্যই কাল নিবির স্যার আর ভাইয়া এভাবে কথা বলছিলো একজন আরেকজনের সঙ্গে। তবে যাই হোক কথা খুব লাকি হবে যদি কাব্য ভাইয়া তার জীবন সাথী হয়।

আর কেউ খুশি হোক আর না হোক মিলি খুব খুশি কাব্য কথার ব্যাপারে জানতে পেরে। নিবির কথার উদ্দেশ্যে বলল,
—তোমার কোনো আপত্তি না থাকলে আমি তোমাকে ডেইলি আসতে আর নিয়ে যেতে পারব।

—তার কোনো দরকার নেই স্যার। আর ওই ছেলেটা আমাকে তেমন বিরক্ত করেও না। আজ কি হলো বুঝলাম না। তবে আপনার আমাকে নিতে এত চিন্তা করতে হবে না৷ আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

—কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানাবে।

—জি স্যার ধন্যবাদ।

কথা আর কনকও চলে গেলো সেখান থেকে। কনক চুপচাপ বসে আছে। কারণ কথা কখন জানি প্রশ্ন করে বসে ওকে কিছু? সে কথার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে কথা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি আবার সামনের দিকে তাকায় সে।
—তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে কনক।
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_17
#Writer_Fatema_Khan

কথা অসহায় দৃষ্টিতে কনকের দিকে তাকিয়ে আছে। কনক কিছুই বুঝতে পারছে না হঠাৎ কথার কি হলো।
—কি বলবি বল?

—আচ্ছা এই ছেলেটার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই তো? কিভাবে সবার সামনে আমার হাত ধরে ছিল এত মানুষের সামনে আর স্যারের বারণ করা সত্ত্বেও সে আমার হাত ছাড়েনি। আজ এমনটা কেনো করল?

—সে তোকে ভালোবাসে বলেই তো এমন করে এটাও বুঝিস না। আজ তিনদিন পর তোকে দেখতে পেয়েছে তাই হয়তো এমনটা করেছে।

—আর তোর হাবভাবও আমার ভালো ঠেকছে না বুঝলি।

—মানে! আমি আবার কি করলাম

—আমার মনে হলো তুই ওদের সাথে মিলে আছিস। যেভাবে সবসময় ওদের সাপোর্ট করিস আর আজ তো কিভাবে হেসে হেসে বাই বলছিলি। আর আমাকে কি বলে বাইরে গেলি “আমি আছি না”। আমার সাথে খুব ছিলি তুই ওই আরেকটা ছিলো না তার সাথে দাঁড়িয়ে ছিলি আর হাসছিলি। আমি সব খেয়াল করেছি।

—এই যাহ এখন কি হবে, কথাতো দেখছি সব খেয়াল করেছে। এখন আমার কি হবে?

—কি গুনগুন করে বলছিস আমি শুনতে পারছি না। জোরে বল।

—আরে ও কিছু না। আসলে আমি চাই নি ওইখানে একটা সিনক্রিয়েট হোক। কিন্তু ওই নিবির স্যার সবসময় মাঝে এসে সব ভেস্তে দেয়।

—মানে কি, নিবির স্যার তো ওই ছেলেটা কেই বাধা দিচ্ছিলো যাতে এসব কলেজের সামনে না করে।

— হ্যাঁ তোর তো এখন ওই স্যারকেই সঠিক মনে হবে। এদিকে কা.. মানে ওই ছেলেটা তোকে কত পছন্দ করে তা বুঝবি না।

—তোর সাথে আমার কথা বলার ইচ্ছাই হচ্ছে না। আমাকে আজ টিউশনে যেতে হবে তাদের মানা করে দিতে হবে কাল থেকে আর যেতে পারব না।

—আচ্ছা আমিও যাই তাহলে।
__________

সন্ধ্যা ৭টা বাজে,
কথা নিজের রুমে পড়ছিলো। পাশে থাকা টেবিলে বসে কনকও পড়ছিলো। কথা কনককে বললো,
—এই কনক ওই যে তোর সাথে দেখা করে মিঃ ত্রিশ টাকা ওনার খবর কিরে?

—জানিনা রে। উনি তো এই দুইদিন আসেই না। অসুস্থ হয়ে পরে নি তো আবার?

—হতেও পারে না হলে একবার হলেও আসতো যে কিনা রোজ দেখা করে। আচ্ছা কাল না হয় পরশু ঠিক চলে আসবে দেখিস।

— হুম। আচ্ছা তুই পড় আমি দুইজনের জন্য কফি নিয়ে আসি।

কনক রান্নাঘরে গিয়ে দুই মগ কফি বানিয়ে এক মগ কথাকে দিলো আর আরেক মগ নিজে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। কনক বারান্দায় যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ কনক জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো। কথা কনকের কান্নার শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি বারান্দায় চলে গেলো কি হয়েছে দেখার জন্য। কথা বারান্দায় গিয়ে দেখে কনক ফ্লোরে বসে আছে আর পেট হাত দিয়ে চেপে রেখেছে। কথা চিন্তিত হয়ে যায়। এইমাত্র সুস্থ মেয়েটার কু হলো?
—এই কনক কি হয়েছে তোর? হঠাৎ এমন করছিস কেনো?

—আমার খুব পেট ব্যাথা করছে তুই বাইরে গিয়ে আমার জন্য ওষুধ কিনে নিয়ে আয় না আমার খুব ব্যাথা করছে।

—কিন্তু এভাবে তোকে একা রেখে আমি কি করে যাই?

—তুই আমাকে রুমে দিয়ে আয় তারপর যা গিয়ে ওষুধ নিয়ে আয় আমার জন্য। তাড়াতাড়ি কর

—আচ্ছা আচ্ছা চল ভেতরে চল।

কথা কনককে রুমে এনে খাটে শুইয়ে দেয় আর এক গ্লাস পানি কাছে এনে রাখে। তারপর পাতলা চাদরটা গায়ে জড়িয়ে বাইরে চলে যায়। কথা বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথে কনক উঠে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর বারান্দায় গিয়ে কাউকে হাত দেখিয়ে বুঝায় কাজ হয়ে গেছে।
_________

কথা খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ওষুধের দোকানের দিকে। কিন্তু বেশি দূর না যেতেই কেউ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। সে ব্যক্তি আর কেউ নয় কাব্য ছিলো। কথা বারবার ছুটতে চাইলেও একজন ছেলের সাথে শক্তিতে তো আর পেরে উঠা যায় না। কিছুদূর একটা গাড়ি দাঁড় করানো ছিলো। সেখানে কথাকে নিয়ে গাড়ির ভেতর বসিয়ে দেওয়া হয় আর ড্রাইভিং সিটে নিজে গিয়ে বসে পরে। কথা বের হতে চাইলেও সে জোর করে হাত ধরে রাখে। গাড়ি লক করে কাব্য কতগার সিটবেল্ট লাগিয়ে দেয় আর গাড়ি স্টার্ট দেয়। অনেকটা দূর এসে একটা ব্রিজের উপর এনে গাড়ি থামায় কাব্য। নিজে গাড়ি থেকে নেমে কথাকেও নামায়। কথা গাড়ি থেকে নেমেই কাব্যকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারে। আকশ্মিক এমন কিছু হবে ভাবতেই পারেনি কাব্য। টাল সামলাতে না পেরে দুই কদম পেছনে চলে যায় সে। রাগে এখনো পুরো শরীর কাপছে কথার। একে তো এভাবে তুলে আনা আর দ্বিতীয় তো কনকের শরীর ভালো না। কনকের কাছে এখন কথার থাকার দরকার ছিলো।
—আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এভাবে উঠিয়ে নিয়ে আসার আর আপনি জানেন কনক ওইদিকে খুব অসুস্থ আর আপনি কিনা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি ছাড়া ওর আর কেই বা আছে?

কথা বলতে বলতেই কান্না করে দেয়। কাব্য কথাকে কান্না করতে দেখে তাড়াতাড়ি কথার দিকে এগিয়ে আসে আর কথার দুই বাহুতে ধরে বলে,
—কনক ঠিক আছে আর পুরোপুরি সুস্থ আছে। ট্রাস্ট মি কনকের কিছুই হয়নি। তোমাকে বাসার বাইরে পাঠানোর জন্যই ও মিথ্যা বলেছিলো যাতে তোমার সাথে আমার দেখা হয়। আমি বলেছিলাম আজ রাতে আমি আসব। তাহলে একটা বারের জন্য বারান্দায় এসে আমাকে দেখা দিলে কি হতো? আমি কি এতটাই খারাপ যে একটা বারের জন্য বারান্দায় আসা যায় না?

কথা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারে না। এসব শুনে যেনো সে আরও রেগে গেলো। শেষ পর্যন্ত এই ছেলের সাথে মিলে কনকও ওর সাথে মিথ্যা অসুস্থতার নাটক করলো। কথা কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য কথার কাছে গিয়ে তার দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
— এই কয়দিনে কি তোমার একবারের জন্যও মনে হয় নি আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি। শুধু এই কয়েকদিন ধরে না সেই পাঁচ বছর ধরে। কিন্তু আমিতো তোমার ধারে কাছেও ছিলাম না যে সামনে আসব তোমার আর যখন এসেছি তুমি আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছ। আমার চোখে কি তুমি নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাও না, সত্যি করে উত্তর দিবা।

—আমি কাউকে ভালোবাসি না আর না কাউকে ভালোবাসতে চাই আর রইল আপনার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা সেটাও আমার দেখা বারণ।

—কেনো এত বারণ তৈরি করে নিয়েছো নিজের জন্য এবার এসব বাদ দিয়ে নিজের জন্য ভাবো। পাঁচ বছর আগে করে আসা ছোট্ট একটা ভুলের শাস্তি আর কত দিবে নিজেকে? এবার তো সামনে তাকানোর পালা।

—আমার দ্বারা এসব কিছুতেই সম্ভব হবে না।

—সময়ের খাতায় পরে থাক না সেসব অতীতের কথা। বহমান জীবনের সাথেই সবাইকে এগিয়ে যেতে হয়। ঠিক তেমনি তোমাকেও এগিয়ে যেতে হবে নিজের জীবনে। আমি তোমাকে বলছি না যে আমাকেই ভালোবাসতে হবে কিন্তু নিজে তো এগিয়ে যাও নিজের জীবনে। এভাবে জীবন চলে না অতীত আর বর্তমানকে সাথে নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

—আপনার ভাষণ শেষ হয়ে গেলে আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। আর আমার লাইফে আমি কি করব তা কাউকে বলে কয়ে তো করব না তাই না। তাই এসব বাদ দিয়ে কোনো কাজ করা শুরু করেন। আর আমার সম্পর্কে আপনি কি করে জানেন তা আমি নিজেও জানি না আর আজকের পর তো জানতেও চাই না। আর আরেকটা কথা আজকের পর থেকে আমার থেকে দূরে থাকবেন এটা যেনো মনে থাকে।

—কাল থেকে এমনিতেও হয়তো আর দেখা হবে না তোমার সাথে। তাই আজ কিছুক্ষণ তোমার সাথে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি সত্যি ভাবি নি এমন কিছু বলবে তুমি আমাকে। ঠিক আছে কাল থেকে আমি আর তোমার আশেপাশেও থাকব না সেই চিন্তা করো না। এখন গাড়িতে উঠো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।

কথা গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। কাব্যও গিয়ে গাড়িতে বসে পরে আর গাড়ি চালানো শুরু করে। গাড়ি বাসার সামনে আসলে কাব্য গাড়ি থেকে আর নামে না কথা নেমে যায়। কিন্তু তখনই কথা দেখতে পায়…….

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here