উদ্দেশ্যহীন কথা পর্ব -১৮+১৯

#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_18
#Writer_Fatema_Khan

গাড়ি থেকে নেমে কথা বাসার ভেতরে ঢুকবে ঠিক সেই সময় দেখে বাসার মেইন গেইটের তালা লাগানো। কথার কপালে চিন্তার ভাজ পরে যায়। সাথে মোবাইলও নেই যে কনককে কল করে বাড়িওয়ালা থেকে চাবি নিয়ে খুলতে বলবে। তাতে অবশ্য বাড়িওয়ালা কিছুক্ষণ চেচামেচি করবে তাতেও কিছুই করার নেই বাসায় তো ঢুকতে হবে। কিন্তু এখন কি করে বাসায় ঢুকবে। কথা পেছন ফিরে দেখে কাব্য গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে যাওয়ার জন্য। কথা তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে ছুটে যায়। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে কাব্য তাকিয়ে দেখে কথা। কাব্য গাড়ি থেকে নেমে কথাকে জিজ্ঞেস করে,
—কি হয়েছে বাসার ভেতরে না গিয়ে আবার ফিরে এলে কেনো?

—কয়টা বাজে এখন?

—১২টা বাজে হয়তো, কিন্তু কেনো, কি হয়েছে?

—বাড়িওয়ালা গেইটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। ১১টা বাজের রোজ তালা লাগিয়ে দেয়। আর এখন তো ১২টা বাজে। এখন আমি বাসায় ঢুকবো কি করে?

—ওই তো বাইরে দারোয়ান তো ঘুমাচ্ছে তাকে উঠিয়ে তারপর গেইট খুলতে বলো

—ওনার কাছে মেইন গেইটের চাবি থাকে না

—তাহলে এখন উপায় বাসায় ঢুকবে কি করে?

—সে আমি কিছু জানি না। আপনি আমাকে বাসায় ঢুকার ব্যবস্থা করুন

—আমি কি করে, আচ্ছা দেখছি

কাব্য কিছুক্ষণ মাথা চুলকে ভাবতে থাকে তারপর বলে,
—চলো আমার সাথে

—কোথায়?

—আরে আসো

কাব্য কথার হাত ধরে বাইরের গেইটের ভেতরে ঢুকে যায়। তারপর বাড়ির পেছনে চলে যায় আর কথার রুম বরাবর দাঁড়ায়।
—এটাই তো তোমার রুমের বারান্দা তাই না?

— হুম এটাই। এখন কি করবো

—পাইপ দিয়ে রুমে যেতে হবে

—কিহ্! পাইপ দিয়ে রুমে যাব মানে আমি এসব পারব না

—আরে আমি আছিতো। আর না হলে তুমি থাকো আমি আমার বাসায় যাই। আমার প্রচুর ঘুম আসতেছে।

—এই না না। এভাবে এত রাতে একটা মেয়েকে একা ফেলে রেখে যেতে আপনার বিবেকে বাধবে না?

—না একদম বাধবে না। কিন্তু কথা হলো ঝাচি কি রানি ভয়ও পায় দেখছি!

—আমি একদম ভয় পাই না

—বুঝলাম। এখন আসো আমার কাছে

—আপনার কাছে যাব কেনো আমি?

—পাইপে উঠার জন্য। আমার কাছে না আসলে একাই উঠো

—না আমি আসছি।

তারপর কাব্য কথার হাত ধরে দেখিয়ে দেয় কোথায় পা রাখবে। কথাও কাব্যের দেখিয়ে দেওয়া জায়গায় পা দিয়ে দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করছে। আর কাব্যও পরেই উপরে উঠছে। এভাবে উঠতে কথার হাত পা থর থর কাপছে। কাব্য বুঝতে পেরে বলে,
—এভাবে কাপাকাপি করলে পরে যাবা। তুমি পরলেও ঠিক আছে কিন্তু তোমার পরেই আমি আছি তারমানে আমাকে নিয়েই পরবে। এখনো বিয়ে সাদি করি নি বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখা তো বহুদূর। মা বাবার নাতি নাতনিদের স্বপ্ন আর পূরণ হবে না তার আগেই আমায় পটল তুলতে হবে।

কথা চোখ রাঙিয়ে কাব্যের দিকে তাকায়। আর কাব্য চুপ হয়ে যায়। আবার উঠতে থাকে। একসময় কথার পা ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে আর পাইপে থাকা হাত ছুটে যায়। কাব্য তাড়াতাড়ি কথার হাত ধরে ফেলে তারপর কোমড় জড়িয়ে ধরে। কথাও কাব্যের গলা দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। কথা যে এখনো কাপছে তা কাব্য ভালোই বুঝতে পারছে। কথাকে এভাবে নিয়েই কাব্য উপরে উঠতে লাগলো। অবশেষে বারান্দার ফ্লোরে এসে দুইজনেই নামলো। কথা এখনো কাব্যকে জড়িয়ে ধরে আছে। কাব্য কথার চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
—আমরা এসে গেছি প্রেয়সী।

কাব্যের কথা কানে যেতেই কথা কাব্যকে ছেড়ে দেয় তাড়াতাড়ি। কথা কাব্যকে বলে,
—ধন্যবাদ। আর আমি বুঝতে পারি নি আমার পা ব্যালেন্স হারাবে না হলে এভাবে কখনোই ধরতাম না। তার জন্য সরি।

—ধন্যবাদ তো আমার বলার দরকার বাড়িওয়ালা আংকেলকে। ওনার জন্য হলেও আজ তুমি আমার এত কাছাকাছি ছিলে। আর অন্য সময় হলে কি কখনো এতটা কাছে আসতে?

কথা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারে না। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। কাব্য না গিয়ে বারান্দার দেয়ালে হেলাম দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর কথার দিকে তাকিয়ে থাকে। কথা এতে আরও লজ্জায় পরে যায়। কথা তবু্ও বলে,
—অনেক রাত হয়েছে আপনার এবার নিজের বাড়িতে যাওয়া দরকার।

—সেটা তো যাবোই। কিন্তু আমি টায়ার্ড খুব তাই একটু রেস্ট নিচ্ছি। চিন্তা করো তুমি ২০০কেজি ওজনের কিছু উপরে তুলে আনা সোজা বিষয় নাকি?

কথা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার নজর পরে কাব্যের হাতের দিকে।
—একি আপনার হাতের ওই জায়গাটা তো পুরো ছিলে গেছে রক্তও বের হচ্ছে? আপনি আমাকে আগে বলেন নি কেনো?

—ওই উপরে উঠতে গিয়ে হালকা আচড় লেগেছে। এটা সমস্যা না ঠিক হয়ে যাবে।

—কি বলেন ঠিক হয়ে যাবে, দেখি আমাকে দেখান

কথা কাব্যের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাব্যের হাত ধরে ছিলে যাওয়া জায়গাটা দেখে। আর কাব্যকে বলে,
—আপনি এখানেই থাকুন আমি ওষুধ নিয়ে আসি।

কথা ওষুধ আনতে ভেতরে চলে যায়। বারান্দার দরজা লাগানো ছিলো না শুধু চাপানো ছিলো তাই কথা সহজেই ভেতরে চলে যায়। আর এদিকে কাব্য ফ্লোরে বসে পরে। কথা ভেতরে গিয়ে দেখে কনক ঘুমিয়ে গেছে তবে বিছানায় ঠিক করে ঘুমায় নি। সে হয়তো বসে ছিলো খাটে হেলান দিয়ে তারপর সেভাবেই ঘুমিয়ে পরেছে। হয়তো কথার জন্য অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে গেছে। যাই হোক কথা টেবিলের ড্রয়ার থেকে মেডিসিনের বাক্স টা নিয়ে আবার বারান্দায় এলো। তারপর কাব্যের ক্ষত জায়গায় ড্রেসিং করে দিলো আর ওষুধ লাগিয়ে দিলো। কথা কাব্যের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই দেখে কাব্য তার দিকেই তাকিয়ে আছে। দুজনের চোখাচোখি হলে কথা চোখ নামিয়ে নেয় আবার। তারপর বলে,
—হয়ে গেছে ওষুধ লাগানো

—আমার হয়নি এখনো

কথা কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলো। কাব্য সেখানেই বসে রইল। কিছুক্ষণ পর কথা দুই মগ কফি নিয়ে এলো। কাব্য তাকিয়ে দেখে কথার হাতে একটা ট্রেতে করে দুই মগ কফি আর এক প্লেট নুডলস নিয়ে এসেছে। কথা কাব্যের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে পরলো। আর কাব্যের দিকে নুডলসের প্লেট টা এগিয়ে দিয়ে বললো,
—এই নিন এটা খেয়ে নিন। সেই কখন এসেছেন আপনি বাসায়ও যান নি। তারমানে খাওয়া হয়নি। আমি আর কনক খেয়ে নিয়েছিলাম তাই ভাত দিতে পারলাম না এটাই খান এখন।

—এগুলো ট্রিক্স মনে হচ্ছে আমাকে দেখার। খেতে হলেই আমাকে মাস্ক খুলতে হবে আর ওমনি তুমি আমায় দেখে ফেলবে তাই তো

কথা উত্তর না দিয়ে নিজের মগে চুমুক দেয়। কাব্য নুডলসের প্লেট টা হাতে নিয়ে নিজের মুখের মাস্ক টা খুলে নুডলস খাওয়া শুরু করে। কথা আড়চোখে একবার তাকায় একবার কাব্যের দিকে। কথা যেনো একবার তাকিয়েই শকড। কথা কিছুই না বলে কাব্যকে ভালো করে দেখতে থাকে। কাব্য খুব ভালোই বুঝতে পারছে কথা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কথা রুমে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে কাব্যের জন্য। তখন আনতে ভুলে গেছে। কথা পানি এনে কাব্যের সামনে রেখে দেয়। কাব্য মগ হাতে নিয়ে বসে আছে। কথা বলে উঠলো,
—আপনার নামটা যেনো কি?

—কাব্য

—কাব্য আপনি কফিটা শেষ করুন। আমাকে ঘুমাতে হবে খুব ঘুম আসছে আমার।

— হুম চলে যাব এখন।
_________

আয়ান নিজের সব কাজ শেষ করে ঘুমাতে যাবে। আজ বিকাল হতেই অনেক কাজ করেছে।
—কাল তো ম্যাডামের ছেলে অফিস আসবে সব কাজ শেষ করলাম। সবকিছু ঠিক মতো করতে পারলেই হলো। আজ কতদিন হলো কনকের সাথে কথা হয়নি। আচ্ছা ওই ছেলেটার সাথে কি কনকের কোনো সম্পর্ক আছে। আমার কনকের সাথে একবার কথা বলার দরকার ছিলো। কিন্তু এ যেভাবে ছেলেটার সাথে ওইদিন কথা বলছিলো আবার আজ হাসাহাসি করছিলো দেখে তো মনে হয় অনেকদিনের পরিচিত। সে যাই হোক আমার একবার কথা বলা দরকার ছিলো। আচ্ছা রোজা কি ঘুমিয়ে পরেছে ওর তো পড়া আছে নাও ঘুমাতে পারে। একটা কল করে দেখি জেগে আছে কি না।

আয়ান মোবাইল নিয়ে রোজার নাম্বারে কল দিলে কয়েকবার রিং হওয়ার পরেই রোজা কল রিসিভ করে।
—হ্যালো ভাইয়া! কেমন আছিস?

—হ্যালো! এইতো ভালো আছি, তোর কি খবর?

—আমার এই তো যাচ্ছে লেখাপড়া নিয়ে আছি কোনোরকম। তুই জানিস ভাইয়া আমি আমার সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিন আমি আর মা ঢাকায় তোর কাছে চলে আসব। আমি তো খুব এক্সাইটেড এটা নিয়ে। আবার একটু খারাপও লাগছে গ্রামের সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে।

—মন খারাপ করিস না এখানে আসলেই মন ভালো হয়ে যাবে। আচ্ছা মা কি করছে ঘুম নাকি জেগে আছে?

—মা একটু আগেই ঘুমিয়ে পরেছে, আমিও এখন ঘুমিয়ে পরব।

—তোর পরীক্ষা তো ২১তারিখ শেষ হবে তাই না?

— হুম। ওহ ভাইয়া শোন রিয়ান ভাইয়া আসছিলো বাসায়

—কিছু বলেছে নাকি? কই আমার সাথে তো কথা হয় ফোনে কিছুই বলেনি

—আমাকেও বলতে মানা করছে কিন্তু আমি বলেই দিলাম। রিয়ান ভাইয়ার মা মানে আন্টি তোর জন্য আচার বানিয়েছে আর ক্ষীরের সন্দেশ সেগুলোই দিতে এসেছিলো।

— তাই নাকি! ওইগুলো কিন্তু আমার তুই আবার নজর দিস না পেত্নী কোথাকার

—আমি তোমার এসব খাবার খাই না বুঝলে, হুহ্

—আচ্ছা তাহলে রাখছি ঘুমিয়ে পর আমিও ঘুমিয়ে পরি।

—আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া।

—আল্লাহ হাফেজ।
__________

— ধন্যবাদ তোমার হাতের কফি আর নুডলসের জন্য। ঘুমিয়ে পরো আমার কথা রাতে এত চিন্তা করতে হবে না আমার সাথে আবার দেখা হবে। তবে কাল দেখা হবে না আমি কলেজ যেতে পারব না। পরশু দিন চেষ্টা করব আসার তবে একটু চাপে আছি। আরে আমার মা আছে না খুব চাপ দিচ্ছে কি যে করি। মায়ের বুঝা দরকার তার ছেলে বড় হইছে কত কাজ থাকতে পারে তাই না। আর বাবাও এই সময়ে দেশের বাইরে গেছে। কোথায় চুটিয়ে প্রেম করব তা না এখন এসব করতে হচ্ছে।

কাব্যের কথা শুনে কথার খুব হাসি পাচ্ছে তবু্ও কোনোমতে হাসি আটকিয়ে বলল,
— কিসব করতে হচ্ছে?

—ও কিছু না। আমি আসব শীঘ্রই তুমি চিন্তা করো না। জানি আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে তবু্ও বলছি এত অপেক্ষা করতে হবে না। তোমাকে তো বুঝাচ্ছি এদিকে নিজের কি হবে?

কাব্যের কথা শুনে এবার আর হাসি থামাতে পারল না। কথা ফিক করে হেসে দেয়। কাব্য তা দেখে ভ্রু কুচকায় আর বলে,
—তুমি হাসছো কেনো, ওহ এটা দিয়ে বুঝাচ্ছো যে আমার জন্য অপেক্ষা করবে না তাই তো

—কিছু না। এমনি হাসি এসে পরলো।

—হইছে তোমার অপেক্ষা করতে হবে না। আমিই অপেক্ষা করব আবার কবে দেখা হয়? আমি চলে যাচ্ছি আজ। আবার পরে দেখা হবে।

কাব্য উঠে দাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য। কথাও উঠে দাড়ালো। কাব্য আরেক নজর কথার দিকে তাকালো, একবার দেখেই কাব্য বারান্দা দিয়ে নিচে নামতে যাবে ঠিক তখনই কথা বলে উঠলো,
—কাব্য শুনোন

কাব্য আবার পেছনে তাকালো দেখলো কথা কাব্যের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
—কিছু বলবে আমাকে?

— হুম

—কি?
#উদ্দেশ্যহীন_কথা
Part_19
#Writer_Fatema_Khan

কাব্য অধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কথা কি বলতে চায় তা শোনার জন্য। কথা কি এমন বলবে যার জন্য তাকে আবার থামালো কথা নিজেই।
—কি হলো বলো কি বলবে?

—আপনি সেই রাতের ট্রেনের ছেলেটা তাই না যে আমার সাথে রাতে ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন?

কাব্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কি উত্তর দিবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এতে কাব্যের খুশি হওয়ার দরকার যে কথা তাকে ভুলেনি নাকি কথার থেকে লুকানোর জন্য ভয় পাওয়া উচিত। কথা কাব্যের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে আছে এদিকে। কিন্তু তার মুখ দিয়ে কথাই আসছে না কি বলবে।
—কি হলো কথা বলছেন না কেনো? এতদিন এত নাটক এত লুকোচুরির মানে কি ছিলো? আমি জেনে গেলে কি আপনাকে মেরে ফেলতাম নাকি, বললেন না কেনো?

—আসলে আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে চেনো কিনা তাই বলি নি

—আমি তখন বাচ্চা ছিলাম নাকি যে ভুলে যাব, আর আপনার কথা বলতে হলে আগেও দেখতে বাজে ছিলেন এখনও তার থেকে একটু বেশি বাজে হয়েছেন এই আর কি। না চেনার কারণ দেখছি না।

—ওহ আমি বাজে দেখতে বলে তোমার চিনতে সুবিধা হলো শুনে ভালো লাগলো।

— হুম না হলে কি চিনতাম নাকি আমি?

—আচ্ছা এখন আসি আমি তোমার ঘুমানো দরকার। পরে আবার দেখা হবে

— আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ

— আল্লাহ হাফেজ।

কাব্য আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে। কুয়াশার কারণে পাইপ ভিজে আছে তাই তাড়াতাড়ি নামতে গেলে স্লিপ কেটে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কথা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য নিচে নেমে উপরের দিকে তাকালো, তাকিয়ে কথাকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে ভেবেছিলো কথা হয়তো ভেতরে চলে গেছে। কাব্য হাত উঠিয়ে কথাকে বিদায় জানালো আর কথাও তাই করলো। কাব্য গাড়িতে উঠে চলে গেলো। কুয়াশার কারণে গাড়িটা যেনো মুহূর্তের ভেতর হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ফ্লোরে পরে থাকা কফির মগ, পানির গ্লাস, নুডলসের বাটি গুলো নিয়ে কথা রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রান্নাঘরে গিয়ে সব প্লেট বাটি ধুয়েমুছে গুছিয়ে রাখলো। রাত অনেক হয়ে গেছে এখন ঘুমানো দরকার না হলে সকালে উঠা সম্ভব না কথার। সকালে অফিস আছে তার। তাই দেরি না করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর শুয়ে পরলো। এদিকে কাব্যও বাসায় গিয়ে নিজের কাপড় বদলে শুয়ে পরে। ভাগ্যিস আজ তার মা জেগে নেই না এত এত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো কাব্যকে।
____________

খুব সকালে তূর্য ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে নেয়। আজ তার অফিসে প্রথম দিন, তাই কোনো ভাবেই দেরি করা সম্ভব না। তূর্য খুব তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলো।
—মা তুমি কোথায়, তোমার হয়েছে? হলে তাড়াতাড়ি চলো।

—মাশাআল্লাহ, আমার ছেলেটা কে তো এইভাবে দেখতে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। আর আমার হয়ে গেছে কিন্তু তুই আগে কিছু খেয়ে নে তারপর বের হবো।

—আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু মিলি কোথায় ওকে দেখছি না যে?

—ও কলেজে চলে গেছে আরও আগেই। তুই এখন খেয়ে নে

—ওহ আচ্ছা।

তূর্য আর তূর্যের মা নাস্তা শেষে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। তাদের গাড়ি এসে থামে তাদের অফিসের সামনে। তূর্য আর তার মা তূর্যের মায়ের রুমে গিয়ে বসে। তারপর আয়ানকে আসতে বলে।
—মে আই কাম ইন ম্যাম

—ইয়েস কাম ইন আয়ান

খুব হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তূর্যের মা আয়ানকে ভেতরে আসতে বলে। আয়ানও হাসি মুখ নিয়েই ভেতরে ঢুকে।
—আয়ান ও আমার ছেলে তূর্য এখন থেকে রোজ অফিসে আসবে আর তুমি ওকে সব বুঝিয়ে দিবে আর আমিতো আছিই। আর তূর্য ও হলো আয়ান তোমাকে যার কথা বলেছিলাম।

তূর্য দাঁড়িয়ে আয়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় আয়ানও তাই করে। কিন্তু তূর্য কে দেখার সাথে সাথে আয়ানের হাসি মিলিয়ে যায়। আয়ান ভাবতেই পারছে না এই ছেলেটাই তূর্য যে কিনা এখন থেকে তার অফিসের বস। দুইজন হাত ছেড়ে দিলে আয়ান নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় রাগে কিন্তু কিছুই মুখে কিছুই বলার থাকে হাসি মুখেই তাদের সাথে কথা বলতে থাকে।
_________

—কথা এভাবে তাড়াহুড়ো করিস না। ধীরে ধীরে রেডি হয়ে নে।

—আমার অলরেডি ৩০মিনিট দেরি হয়ে গেছে আর আজ অফিসের প্রথম দিন। আমি কি করে এত দেরি করে উঠলাম, সব ওই কাব্যের জন্য।

—কাব্য মানে!

—ইস ঢং মনে হয় চেনে না কাব্যকে। আজ আমাকে বাসায় ফিরতে দে তোর খবর আছে বলে দিলাম। এখন আমার সময় নেই তাই কিছুই বললাম না।

কথা তাড়াহুড়ায় অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো। তবে ভাগ্য ভালো ছিলো একটা রিকশা পেয়ে গেছে আজ। তবে এই শীতেও কথার মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে শুধু টেনশনে। আজ প্রথম দিন এমন করলে অফিসের সবার সামনে ওর ইমেজটাই খারাপ হয়ে যাবে।
_________

গত আধা ঘণ্টা যাবত অফিসে বসে অপেক্ষা করছে কাব্য নতুন এমপ্লয়ির জন্য। কিন্তু তার আসার কোনো নাম নেই। কাব্য রেগে তার মায়ের দিকে তাকায় আর মনে মনে ভাবে,
—এই নতুন এমপ্লয়ির জন্য এখানে না এসে যদি কথার সাথে দেখা করতে যেতাম তাও ভালো ছিলো।

—কিরে কি ভাবছিস এত?

—আমি খুব বিরক্ত মা, আসলে যাকে নতুন রেখছো সে কাজের তো, আমার মনে হচ্ছে না।

—না বাবা খুব ভালো মেয়ে আর ওর রেজাল্ট খুব ভালো আর সব প্রশ্নের উত্তর কি সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়েছে।

—হলেই ভালো। আসুক সে আগে।
_________

—কি হলো চাচা তাড়াতাড়ি চালান একটু আজ আমার অফিসের প্রথম দিন। আমার চাকরিটাই না চলে যায় প্রথম দিন। কিছুই ভালো লাগছে না, আমার আজকের দিনটাই খারাপ।

—এইতো মা আইয়া পরছি আরেকটু আচে।

অবশেষে কথা অফিসের সামনে এসে নামলো। ভাড়া মিটিয়ে তাড়াতাড়ি অফিসের ভেতরে গেলো। লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে লিফট উপর থেকে নামছে। তাই অপেক্ষা করতে থাকলো। লিফট নিচতলায় নামলে কথা চট জলদি উঠে পরলো। লিফট থেকে নেমে সোজা নীলিমা খানের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। রুমের সামনে এসে সাহস জুগিয়ে নক করে দরজায় আর বলে,
—মে আই কাম ইন ম্যাম

—ইয়েস কাম ইন

কথা রুমের ভেতরে ঢুকে দাঁড়ায়।
_________

সকাল থেকেই আয়ানের সাথেই ছিলো তূর্য। আয়ান আর তূর্যের মা তূর্যকে সব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে আর তূর্যও খুব জলদি সব কাজ বুঝে নেয়। আয়ানের রাগে যেনো মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই তাকে যে এগুলো সহ্য করেই কাজ করতে হচ্ছে।
—ওয়াও আয়ান আপনি তো খুব দক্ষ সব কাজেই। আমি সত্যিই ইমপ্রেজড। খুব ভালো লাগলো আপনার সাথে সারাদিন।

—কি বলেছিলাম তোকে আয়ান খুব দক্ষ সব কাজে। এখন নিজেই তো আজ দেখলি।

— হ্যাঁ মা ভাবতেই পারি নি এত সহজেই সব কিছু আয়ত্তে আনতে পারব কিন্তু আয়ানের জন্য সহজেই সব কিছু আয়ত্ত করতে পেরেছি।

— আরে স্যার ম্যাম আপনারা তো বাড়িয়ে বলছেন। এটা তো আমার দায়িত্ব ছিলো।

— না সত্যি বলছি আপনি আসলেই খুব সুন্দর করে আমাকে সব বুঝিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

—এটা আমার দায়িত্ব স্যার। ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
__________

আয়ান নিজের বাইক সোজা কনকের কলেজের সামনে চলে গেলো। কিন্তু কনককে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরেই কনককে দেখা গেলো কনক ভেতর থেকে আসতেছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here