একগুচ্ছ কালো গোলাপ পর্ব -১৩+১৪+১৫+১৬

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৩+১৪

🍁
ইসমাইলের ডাকে সাবিনা চলে যায় ।ইসমাইল বলে মেহমান আসছে খাবার রেডি না করে সময় নষ্ট করছো কেন ? সাবিনা নুপুরকে বলে আয়তো মা তারাতাড়ি আমাকে হেল্প করো । লাবিবা গাল ফুলিয়ে বসে । একেতো ওগি দেখতে পারছিনা তার উপর ডলফিনের সামনে একা রেখে আম্মুনি নুপুকে নিয়ে চলে গেলো । খুব রাগ হচ্ছে এখন আম্মুনির উপর । কেউ ভালুপাসে না 😒।
তানভীর লাবিবার সামনে এসে দাড়ালো। কিছুক্ষন গাল ফুলানো দুষ্টু পুতুলকে দেখে নিলো । বিছানার উপর থেকে দুটো টেডি বিয়ার সরিয়ে বসলো । ফোনটা সামনে রেখে বললো – তোমার ফোন ফেলে চলে এসছিলে । নাও ।
লাবিবা খুশি হয়ে মাই বেবি বলে নিতে গিয়ে থেমে যায় । ফুলা মুখে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তানভীর লাবিবার দিকে হেলে লাল লাল ফুলো গাল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে । ছোট ছোট চুল গুলো গালের উপর ছেয়ে আছে যা আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে । ঠোটের নিচে তিলটা আরো সুন্দর । তানভীর গালে আঙুলে ঠুস দিতেই লাবিবার ফুলানো বেলুন গাল পামচার হয়ে মুখ হা হয়ে যায় । যা দেখে তানভীর মুচকি হেসে বলে – টমেটো কত করে কিলো: গো ?
– হুস হুস টমেটো মানুষ খায় নাকি ? yackk…😒
– নাতো human খায় । লাল লাল টমেটো দেখে আমারতো খুব খেতে লোভ হচ্ছে । বেচবে নাকি?
– আমাদের বাগানে তো টমেটো নেই । কোথায় দেখলেন?
– তোমার বাগানেরটা চেয়েছি ।
লাবিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । তানভীরের বাকা ঠোটে দুষ্টুমি ভরা হাসি ফুটে উঠে । যার আদি অন্ত বোকা পুতুলের কিছুতেই গম্য হয়ে উঠে না । তানভীর প্যাকেট টা লাবিবার সামনে রেখে বলে এগুলো সব তোমার ।
– এতে কি আছে ?
– দেখো ।
– আমি ধরবো না যদি হাতে ব্যথা পাই ।
তানভীর প্যাকেট খুলে অনেকগুলো চকলেট আর দুটো হরলিক্সের বোয়াম আর কয়েকটা চিপস বের করলো । ফ্রুটস গুলো নুপুর নিয়ে গেছে । লাবিবা মিস্টি হাসি দিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবার গাল ফুলালো । তানভীর চকলেট গুলো লাবিবার কোলে দিয়ে বললো – সরি এক্সেপ্ট করুন রানী এলিজাবেথ । আপনার প্রজা আপনার দ্বারপ্রান্তে ক্ষমার হাত তুলে দাড়িয়েছে ।
লাবিবা মুখ স্বাভাবীক করে বলে – মেরেছে আবার আদর করতে এসেছে । চকলেট ঘোস দিতে এসেছে । তানভীর- সরি । আর মারবো না । তবে পড়া না পেলে ব্যথা দিবো ।
– আমিতো আর পড়তেই যাবো না ।
– ডেইলি চকলেট গুলো তাহলে নুপুর একাই খাবে ।
লাবিবা কেদে ফেললো । তানভীর তো অবাক । কোন কারন ছাড়াই একটা মানুষ কিভাবে কাদে ?
লাবিবা- আমি আর পড়তে যাবো না । চকলেটের লোভ দেখিয়ে লাভ নেই । আমার তো হাত নষ্ট হয়ে গেছে আমি খাব কিভাবে ? হরলিক্স গুলো চাটবো কিভাবে ?😭😭
তানভীর আরো অবাক ।চকলেট বের করে লাবিবার মুখের সামনে ধরে । লাবিবা কামড় বসায় । একটু খেয়ে বলে – yamyyy😋😋। তানভীর চোখ কুচকে বলে – by any chance ,তুমি কি হরলিক্স চেটে চেটে খাও ?
– হ্যা তো । চেটে চেটেই তো খায় । আম্মুনি বোঝে না । এক গাদা দুধের ভিতর এক চিমটি হরলিক্স দিয়ে বলে খাইতে । ঐভাবে কি মানুষ খায় ?
– এর জন্যই বলি আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা এমন খোলা মাথা কিভাবে ? বেকুব একটা গর্দভ 😠।
– আম্মুনি…😢
– চুপ থাক । হাত তেমন কিছুই হয় নি । ঠিক হয়ে যাবে । দেখি ।
– না….
তানভীর ধরতে নিলেই লাবিবা দাড়িয়ে খাটের উপর লাফ দিয়ে এই মাথা থেকে ঐ মাথা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে । তানভীর কৌশলে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে । এক হাতে ব্যন্ডেজ খুলতে থাকে । প্যাচ কম দেওয়ার জন্য সহজেই খুলতে পারে । লাবিবা অন্যদিকে ফিরে না না বলে চিল্লাতে থাকে । দুটো হাতের ব্যন্ডেজ খুলে হাত দুটো ভালো করে দেখে । এখনো লাল হয়ে আছে দেখে তানভীরের খুব খারাপ লাগছে । এমনটা সে কখনোই করতে চায়নি । দেখতে দেখতে হাতে ঠোট লাগায় । ভেজা স্পর্শে হাতের দিক তাকায় লাবিবা । কোমল নরম হাত দুটোর লাগ দাগ গুলোর উপরে তানভীর মদু ছোয়ায় অসংখ্য চুমু একে দেয় । তারপর পকেট থেকে ছোট্ট একটা মলম বের করে পুরো হাতে লাগিয়ে দেয় । আবার মলম পকেটে ডুকিয়ে রেখে দিয়ে লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । পলকের উপর পলক ফেলছে । তানভীর গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে
– you know what ?? আদরের মানুষদের থেকে আদর দিয়েই কিছু আদায় করতে হয় । আর soft মানুষদের সাথে always softly behaviour করতে হয় । আর যারা ভালুপাসার মতো তাদের অনেকগুলা ভালুপাসতে হয় । বুঝলে ??
লাবিবা হা করে মাথা ঝাকায় । বোঝায় সব বুঝেছে । কিন্তু আসলে কিছুই বুঝেনি সে । না বুঝেই মাথা ঝাকানো তার একটা স্বভাবের মধ্যে পড়ে যা তানভীরের অজানা ।
তানভীর – তারাতাড়ি সুস্থ হও । আঙুলে ধরিয়ে ধরিয়ে সব পড়া শিখিয়ে দিবো । জে এস সি তে গোল্ডেন চাই চাই ।
নুপুর এসে বলে স্যার চলুন জানু চল লাঞ্চ করবি । ইসমাইল ও আসে । ইসমাইল তানভীর কে নিয়ে চলে যায় । ডাইনিং এ বসতেই লাবিবা চেচিয়ে উঠে ।
– স্যার স্যার জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন আগে । ব্যকটেরিয়া গুলো গোল্লাছুট খেলতেছে ।আসুন আসুন ।
তানভীর লাবিবার সাথে বেসিনে যায় । লাবিবা হ্যান্ড ওয়াস দেখিয়ে বলে – স্যার হাত ধুন জীবানু দিয়ে ।
তানভীর – এইটা হ্যান্ডওয়াস দুষ্টু পুতুল জীবানু নয় ।
– ঐতো পাশাপাশি বাড়ি ওদের । একি হলো।😒
তানভীর এসে বসলে ইসমাইল, বেলাল ,লাবিবা নুপুর ও বসে । সাবিনা সবার প্লেটে খাবার দেয় । তারপর লাবিবাকে তুলে খাওয়াতে থাকে । লাবিবা নুপুরের পায়ে পা দিয়ে ইশারা করে । নুপুর টমেটোর সালাদের প্লেট নিয়ে তানভীরের প্লেটে ঢেলে দেয় । তানভীর সহ সবাই অবাক এমন কাজে । শুধু লাবিবা মিটি মিটি হাসছে । নুপুর ও অবাক লাবিবা কেন বললো টমেটো দিতে🤔 দেওয়ার পর তার চিন্তার ঝুলি খুলেছে ।
ইসমাইল – নুপুর এটা কি করলে ?
লাবিবা- আব্বু স্যার আসছে থেকেই বলছে আমি টমেটো খাব টমেটো খাব । তাই স্যারের ফেভারিট টমেটো দিলাম । স্যার আপনি খান ।
তানভীর মনে মনে -😠😠
লাবিবা-😊😊
সাবিনা লাবিবাকে ধমক দিয়ে প্লেট সরিয়ে আবার নতুন প্লেটে পোলাও দেয় ।
খাওয়া শেষে তানভীর চলে আসে । নুপুর সেখানেই থাকে লাবিবার সাথে ।

বাসায় আসতেই সোহানা বলে – কোথায় ছিলি এতোক্ষন তুই ? ফোন ধরছিস না । রাজীব সেই কখন এসে বসে আছে ।
তানভীর উপরে চলে আসে । রাজীব শুয়ে ছিলো । তানভীর পাশে এসে বসতেই রাজীব উঠে বসে ।
তানভীর – কখন এসেছিস ? ফ্রেশ হয়েছিস? লাঞ্চ করেছিস? আসছিস বললেই তো আমি আর বাইরে যেতাম না ।
রাজীব- সবি করেছি । ফোনে চার্জ ছিলো না । এখন চল ।
– কোথায় ?
– আখির বাসায় ।
– গিয়ে কি করবি ?
– তোর পরিচয়ে যাবো । আখির সাথে বোঝাপড়া আছে ।
– ওর আব্বু জানলে গন্ডগোল হয়ে যাবে ।
– গন্ডগোল করতেই তো এলাম ।
– মানে ?
রাজীব বাকা হাসি দেয় ।
– তুই কি বিয়ে করবি আখিকে ?
– হুম। অনেক ভেবে দেখলাম আখিকে ছাড়া আমার পক্ষে কিছু সম্ভব নয় । এই বয়সে উড়বেই । পাখা দুটো ছেটে দিলেই উড়া শেষ । নিজের কাছে রাখবো । ওর বাবা মা রাজী হবে আমি সিউর । প্রবলেম একটাই । মম ডেড মেনে নিবে তো 🤔
– আরে ব্যপার না । পুত্র বধূর মুখ দেখলেই সব ওকে ।
রাজীব তানভীর দুজনেই হেসে ফেলে । হাসি থামিয়ে রাজিব বলে – সত্যি বলছি দোস্ত। মারাত্মক সুন্দরী । আমার ওকে লাগবেই ।
তানভীর – রেডি হ । বের হই।

নুপুরের বাসায় আসতেই আখি দরজা খুলে দেয় । নুপুরকে সাথে নিয়ে এসেছে তানভীর লাবিবার বাসা থেকে । তানভীরকে দেখে আখি অবাক ও হয় আবার লজ্জাও পায় । দৌড়ে ভিতরে গিয়ে আনিসকে বলে – আব্বু এমপির ছেলে তানভীর এসেছে । আনিস সাথে সাথে নুপুরের মা রেনু কে ডাক দেয় । এগিয়ে এসে রিসিভ করে এদের । বসতে বলে কিচেনে চলে যায় ।রেনু ও এসে ভালো মন্দ জিজ্জাসা করে । আখি তখনি রুমে চলে এসেছিলো । ওড়নাটা ঠিক করে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো আচড়ে ঠোটে হালকা গোলাপী লিপলজ দিয়ে পারফেক্ট বলে ড্রয়িংরুমে আসে । তানভীরের পাশে রাজীব কে দেখে দু পা পিছিয়ে যায় । ভয়ে মুখ শুকিয়ে যায় । হাত পা কাপতে থাকে । বার বার মাথায় একটা কথাই আসতে থাকে তানভীর সব বলে দিয়েছে রাজিব কে তাই হয়তো রাজীব চলে এসেছে। এখন যদি আব্বুকে সব বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে 😭 আব্বু কিছুতেই আমাকে আস্ত রাখবেনা😭।
রাজিব এক পলকে আখিকে দেখে যাচ্ছে । ভিতু চেহারায় পা কাপায় যতটুকু doubt ছিলো সম্পূর্ণ clear হয়ে গেছে । আনিস আখিকে দেখে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে রাজীব বলে – আংকেল আমরা চিনি । নুপুরের বোন তো । আগেই পরিচিতো আমরা ।
নুপুর ট্রেতে করে নাস্তা আনে । আখির আত্মার মধ্যে যেন পানি নেই । আনিস ভেতরে যেতে বলার সাথে সাথে সেখান থেকে চলে আসে রুমে । কান্নাও যেন আসছেনা মুখ দিয়ে এমন অবস্থা আখির । দরজার আড়ালে দাড়িয়ে কথা শুনতে থাকে ।
তানভীর একটা বিস্কিট মুখে নিয়ে খেতে খেতে বলে আংকেল আন্টি আপনাদের সাথে আমাদের কিছু কথা আছে । নুপুর তুমি ভেতরে যাও ।
তারপর তানভীর রাজিব দুজনে সমস্তটা বলে ।
আনিস রেনু মাথা নিচু করে বসে আছে । বড় আদরের দুই মেয়ে । এরকম খারাপ হয়ে গেছে মেয়ে যা তার ধারনার বাইরে । সামনের দুজনের সামনে তাকাতে পারছেনা । মাথা নিচু হয়ে আছে ।
তানভীর – আংকেল এতো কিছু জেনেও রাজীব চায় আখিকে বিয়ে করতে । টিনেজার রা ভুল করলে সেটা শুদ্ধ্যে নেওয়ার জন্য বাবা মা দের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় । যদিও আখির বয়স হয়নি সেহেতু টাকার জোরেই কাজটা করতে চাচ্ছি ।
রেনু- রাজীব তোমার ফেমেলি রাজী হবে তো ?
রাজীব – সেটা আমার উপর ছাড়ুন আম্মু । আমি কাল ই আখিকে বিয়ে করতে চাই । ঘরোয়া ভাবেই করুন আমার কোন অসুবিধা নেই । মেয়ে না বালিকা জানাজানি হলে সমস্যা হবে । বিয়ে হোওয়ার পর কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।
আনিস আখিকে ডাকে । আখি গুটি পায়ে এসেই আনিসের দিকে তাকিয়ে কেদে ফেলে । আনিস অন্য দিক তাকায় । যে মেয়ে এতোকিছু করতে পারে বাবার কথা ভাবে না তার চোখের পানিতে গলা শোভা পায় না । গম্ভীর গলায় বলে – আশাকরি তুমি এখন সব অশ্বীকার করবে না । কাল তোমার বিয়ে । প্রস্তুতি নাও ।
আখি- আব্বু
আনিস – আমি কিছু শুনতে চাই না ।

To be continue _____
#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৪

🍁

রাতে আখি রাজীবকে দেখা করতে বলে। রাজীব রাজি না হলে তানভীরের কথায় রাজি হয় । আখির বাড়ির সামনে বাশ বাগানে এসে পৌছায় রাজিব । আখি আগে থেকেই ওয়েট করছিলো । রাজীব সামনে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে অন্যদিকে ফিরে বলে
– বল কি বলবে ।
– আমি এখন বিয়ে করবো না । আমার বিয়ের বয়স হয়নি ।
– ছেলে পাগল করার বয়স তো হয়েছে ।
– দেখো হুট হাট বিয়ে করবো বললেই হয় না । আমার পরিক্ষা শেষ হক । আমার আঠারো বছর পূর্ণ হোক তারপর ধুম ধাম করে বিয়ে করা যাবে । আমি এখনি বিয়ে কি ভাবে সম্ভব ?
– তোর আঠারো বছর পূর্ণ হতে হতে তুই এক নাম্বার থেকে দুই নাম্বার হয়ে যাবি । তিন চার হতেও খুব একটা অসম্ভব কিছু না । রিজেক্ট মাল রাজিব নেয় না । বিয়ে কাল মানে কাল ই । উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবিনা । আমি কিন্তু এখানেই আছি । পা মুচরে দিবো । সাথে তোর নায়ক ইসহাক আর জহির কেও । কখন কি কার সাথে টাঙ্কি মেরেছিস সব আমার জানা হয়ে গেছে । বাসায় যা ।
– দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমাকে । এসব তোমার কানে দিয়ে বিষ ঢেলেছে আমার নামে । অনেকের নজর আমার দিকে । অনেকেই শত্রুতা করে আমার মতো সুন্দরী মেয়েকে না পেয়ে ।
রাজীব রেগে ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দেয় । আখি একটু দুরে ছিটকে পড়ে । রাজিব এগিয়ে চুলের মুঠি ধরে বলে – এতোদিন যা যা বলেছিস সব গুলো মিথ্যা । এতোকিছু জানার পর যে তোকে আমি বিয়ে করেই এইটা তোর সাত কপাল। সবার নজর না তোর দিকে ? সেই নজর থেকে বের করার ব্যবস্থাই করছি । দু তিন দিন এই বাড়িতে থাকতে পারবি তার পর তুই বন্দি হবি আমার মহলে । শুধু আমার নজর পড়বে তোর দিকে । যা বাসায় যা । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্ন দেখ ।
রাজিব রাগ দেখিয়ে চলে আসে ।

পরদিন সকালেই ঢাকা থেকে রাজিবের বাবা মা ভাই চলে আসে । ছেলে এই ভাবে বেড়াতে এসে বিয়ে করবে কিছুতেই মানতে পারছে না তারা । ফিরোজ তাদের বোঝিয়ে বলে । তানভীর মেয়ের ছবি দেখানোর পর তারা রাজি হয় । রাজিবের বাবা মা ঢাকা থেকেই কনের শপিং সব করে এনেছে । বেলা এগারোটার দিকে রাজিব কে গায়ে হলুদ করানো হয় । ঘরোয়া ভাবে খুব সুন্দর করে গায়ে হলুদের অনুষ্টান শেষ করানো হয় । ছেলেদের গায়ে হলুদ বেশি নিয়ম নেই । বারোটার দিকে তানভীর ,রাজিবের ভাই রাজন , তানিয়া যায় কনের বাড়ি হলুদ নিয়ে । বাড়ির ভিতর ঢুকতেই আনিস ইসমাইল সাদরে স্বাগতম জানায় ওদের । তত্ব রেখে বউ দেখার জন্য ভেতরের ঘরে আসতেই দেখে লাবিবা খাটে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে সাবিনার আচল ধরে । তানভীর এগিয়ে গিয়ে বলে কাকি দুষ্টু পুতুল কাদছে কেন ?
সাবিনা – আর বলো না বাবা … হাতে সমস্যা তাই মেহেদি দিতে পারছে না । মেহেদি পাতা বেটে সবাই হাতে দিয়েছে ও পারে নি তাই কান্না করছে ।
আচল টেনে বলে – এখন চুপ কর । দেখ স্যারের সামনে কাদে স্যার কি বলবে বল তো ? বলবে লাবি মনি পচা শুধু কাদে । চুপ করে বস তোর আন্টিকে হেল্প করতে হবে তো । সাবিনা চলে যায় । তানভীর ফোন করে কাকে যেন চকলেট আনতে বলে । পাচ মিনিটের ভেতরে এক প্যাকেট চকলেট নিয়ে একটা ছেলে আসে । তানভীর চকলেট লাবিবার সামনে রেখে একটা ছিড়ে খেতে থাকে আর বলে – yammy😋😋 খেতে চাইলে ফেস ফেস কান্না বন্ধ করতে হবে । লাবিবা আস্তে আস্তে চুপ হয়ে যায় । তানভীরের দিক তাকিয়ে বলে – স্যার আপনি ব্যকটেরিয়া খাচ্ছেন কেন ? যান জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন 😒 ।
– হ্যান্ড স্যনিটাইজার ইউজ করি আমি । বাই দ্যা ওয়ে আবার হাতে ব্যন্ডেজ করেছো কেন ?
– দেখবো না আমি দাগ গুলো ভয় লাগে ।
– মলম লাগিয়ে দিয়েছিলাম । খুলে দেখো হাত একদম ঠিক হয়ে গেছে ।
– না ।
– হ্যা । হাত দাও দেখি আমি খুলে দিচ্ছি । বেন্ডেজ খুললাম । ওয়াও দেখো তুমার হাত কতো সুন্দর হয়ে গেছে ।
লাবিবা দেখল সত্যিই তো ভালো হয়ে গেছে ।
– স্যার ঐটা কিসের মলম ছিলো ?
– ঐটা ব্যথা + দাগ কমানোর মলম । ফ্রান্স থেকে আনা । আমার ফ্রাকচার বেশি হয় তাই সাথে রাখি সব সময় । সেদিন ই লাগিয়ে দিতাম কিন্তু তুমি আগেই চলে আসছিলে । বিডির টাকায় তিন লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার টাকা।
-😱😱 এতো দামী মলম ।
– জি । কাজ টাও তো দামী করে তাই না ? এখন দাও দেখি তোমার হাতে বাটা মেহেদি নাকি লাগাবে লাগিয়ে দিচ্ছি আমি । আর একদম কাদবেনা । you know what ?? কাদলে তোমাকে কিউটের ডিব্বা লাগে । কিন্তু এই লুকটা সবাইকে দেখানো যাবে না । এখন চুপটি করে বসো আমি তাড়াতাড়ি মেহেদি লাগিয়ে চলে যাবো ।
– এক মিনিট দাড়ান স্যার আমি দুই মিনিটে একটা চকলেট শেষ করি ।
একটার জায়গায় লাবিবা দুই মিনিটে তিনটি চকলেট শেষ করে । বক্স সহ তার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে । তানভীরের সামনে এসে হাত পেতে দেয় । তানভীর সুন্দর করে দশ আঙুলে ১ম গিরা পর্যন্ত ভরাট করে মেহেদি দিয়ে দেয় আর তালুতে গোল বৃত্ত আকিয়ে দেয় । লাবিবা খুশিতে বাক বাকুম করতে করতে চলে যায় । আখিকে গালে হলুদ লাগিয়ে কয়েকটা পিক তুলা হয় । সব গুলো রাজীবের ফোনে সেন্ড করা হয় । রাজিব সেগুলো ওর বাবা মাকে দেখায় । তারা প্রসংসায় পঞ্চমুখ ।
__________
সন্ধ্যার দিকে ছেলে পক্ষরা কনে পক্ষের বাসায় যায় । আখিকে আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলো । দুজন মেয়ে পার্লার থেকে এসে সাজিয়ে গিয়েছে । রুপ যেন আর ধরছে না গায়ে । বিয়েতে এমনিতেই মেয়েদের সৌন্দর্য বেড়ে যায় । রাজিবের বাবা মা আখির মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে । ছেলে বউ দেখে তাদের চোখ চিক চিক করছে । এমন রুপসী বউ পেয়ে তারা খুব খুশি । রাজিবের মা নিজের গলার হার খুলে আখিকে পরিয়ে দেয় যদিও গা ভর্তি গহনা আখির । সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলে সবাই ডাইনিং এ চলে যায় । রেনু মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে – অনেক ভাগ্য করে জন্মেছিস রে মা । আল্লাহ বেহেসতের‌‌ হুরকে আমার ঘরে পাঠিয়েছে । রুপ যেন আর ধরে না । তেমনি রাজপুত্রের মতো বর পেয়েছিস । কতো ভদ্র শ্বশুর শাশুড়ী । কতো বড়লোক ওরা । এমন ঘরে মেয়ে বিয়ে দিবো ভুল করেও যে ভাবিনি কখনো । অনেক সুখী হ মা । বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে । এদিকে আখিও এতোক্ষনের চাপা কান্না ধরে রাখতে পারে না ।মা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে কাদে ।সাবিনা এসে রেনুকে সরিয়ে নেয় । সান্তনা দিতে থাকে রেনুকে । রেনু এমনিতেই ব্লাডপ্রেসারের রোগী । পরে না হয় অসুস্থ হয়ে পড়লে আরেক ভেজাল ।
খেতে বসছে সবাই । সাবিনা লাবিবাকে নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য । লাবিবা খাবেনা জন্য বায়না ধরেছে । সাবিনা টেনেই নিয়ে আসছে । আসার পর থেকে তানভীরের চোখ দুটো লাবিবাকে খুজছে । দেখতে পায়নি কোথাও । এতোক্ষনে তার চোখে ধরা পড়েছে ।
চোখ আটকে যায় তানভীরের । পিংক কালার বারবি গাউন উইথ পিংক স্টোনের সিম্পল জুয়েলারি । চুল গুলো এক পাশে ছেড়ে রাখা । তাতেই যেন ফেয়ারি লাগছে । আর কোন সাজ নেই মুখে । সাজের কোন প্রয়োজন ই তো নেই । চোখ দুটো এমনিতে গাড় কালো ভাসা ভাসা অসম্ভব সুন্দর । গোলাপি ঠোট দুটো চকলেট খেয়ে চকলেট কালার করে রেখেছে । বড় মেয়েদের মতো লাগছে লাবিবাকে । তানভীর যেন এক নেশায় ডুব দিয়েছে । তৃষ্ণা মেটাচ্ছে চোখের । রাজনের ধাক্কায় হুস ফেরে তানভীরের । সামনে তাকিয়ে দেখে লাবিবা খেতে বসেছে । সাবিনা জোর করে মুখে খাবার পুরছে আর বলছে – সারাদিন না খেয়ে আছিস । একটু আগে ডান্স ও করেছিস । এবার মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কেমন হবে বলতো ? বিয়ে দেখবো নাকি তোকে নিয়ে ডক্টরের কাছে দৌড়াদৌড়ি করবো ?
মা মেয়ের খাওয়ানো দেখতে দেখতে নিজেও খেয়ে নেয় তানভীর । লাবিবা খেয়ে উঠেই নুপুরের কাছে চলে যায় দৌড়ে । তানভীর পিছু পিছু যায় । লাবিবা তানভীরকে দেখেই হাত উচু করে দেখিয়ে বলে – স্যার দেখুন আমার হাত । তানভীর এগিয়ে এসে হাত দুটো নিজের হাতে মুঠো করে নেয় । কেন জানি খুব ইচ্ছা করে সব সময় এই নরম হাত দুটো নিজের হাতে আবদ্ধ করে রাখতে । ছুয়ে থাকতে সব সময় । মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে – বাহ অনেক সুন্দর রং হয়েছে । সুন্দর লাগছে অনেক । কিন্তু হাতে কিছু পড়নি কেন ? খালি খালি লাগছে । নুপুর তোমার পিংক কালার চুড়ি আছে ?
– আছে তো ।
– লাবিবাকে এনে দাও । তোমার দু হাত ভর্তি চুড়ি কিন্তু ওর হাত যে খালি দেখোনি ?
-ও তো চুড়ি পড়ে না স্যার । তাই ।
– আনো পড়বে ।
নুপুর চুড়ি আনতেই তানভীর হাতে পড়িয়ে দেয় ।লাবিবা হাত নেড়ে চেড়ে দেখে সুন্দর মানিয়েছে অনেক । কাজী সাহেব বিয়ে পড়াবে শুনে তানভীর চলে আসে বর বউয়ের কাছে । লাবিবাও আসে । কাজী এখনো বসে নি । ফুলের মালা নিয়ে আসে রাজন । তানভীর খেয়াল করে মালা দুটো গোলাপী গোলাপের । তানভীর মালা দুটো হাতে নিয়ে যেখান থেকে ফুল নিলে মালা ছিড়বেনা সেখান থেকে দুই মালার দুটো ফুল ছিড়ে হাতে রাখে । বর বউ একে অপরকে মালা পড়িয়ে দেয় । কাজি এসে বসে পড়ে বিয়ে পড়ানোর জন্য । রেজিস্ট্রি কাগজে বর বউ সাক্ষর করে । সবাই দাড়িয়ে উপচে পড়ে দেখতে থাকে । তানভীর আখিকে দেখছে । সুন্দরী মেয়েটা বউ সাজে কতই না সুন্দর লাগছে । আচ্ছা দুষ্টু পুতুলটাকে বউ সাজালে কেমন লাগবে ? পুতুল বউ লাগবে একদম ।দেখার বড় লোভ জাগে তানভীরের । লাবিবার পাশে এসে দাড়ায় ভীড়ের মধ্যে। চুল থেকে ক্লিপ খুলে গোলাপ দুটো কানের পাশে লাগিয়ে দেয় ।
লাবিবা খুশি হয়ে বলে
– স্যার thank you attoogulla onkmuch.
কাজী আখিকে কবুল বলতে বলে । আখি বলতে দেড়ি করছে। তানভীর লাবিবার কানে কানে বলে
– দুষ্টু পুতুল তুমি কি জানো এখন বউ কি বলবে ?
– জানিতো ।কবুল কবুল কবুল ।
আখি কবুল বলে । তারপর কাজী রাজিব কে কবুল বলতে বলে । রাজিব ও বলে । সাথে সাথে তানভীর ও লাবিবার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে কবুল কবুল কবুল ।
একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৫+১৬+১৭

🍁
কনে বিদায়ের সময় আখি প্রচুর কান্না করে । নুপুর বোনকে ধরে অনেক কাদে । রেনু আনিস মেয়েকে ছাড়েই না । বিয়ে বাড়িতে মরা বাড়ির মতো কান্নার রোল পড়ে যায় । লাবিবাও আখির মতো চিক্কুর দিয়া কাদতে থাকে । সাবিনা মেয়ের মুখ চেপেও কান্না থামাতে পারে না । আখি কাদতে কাদতে অস্থির হয়ে যখন গলাটা একটু লো মোশনে নামিয়ে নেয় তখন সবাই অন্য কান্না শুনতে পায় । এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে লাবিবা কাদছে এই ভাবে । ইসমাইল রাগ দেখিয়ে সাবিনাকে বলে – জানোইতো কান্না দেখলে আমার মেয়ে সহ্য করতে পারেনা । ওকে এখানে এনেছো কেন ? আর মুখ চেপে ধরেছো কেন ? শ্বাস বন্ধ করে মেরে ফেলবে নাকি ?😠
সাবিনা হাত সরাতেই লাবিবা জোরে চিল্লিয়ে বলতে থাকে – আমি বিয়ে করবো না আমি কোথাও যাবো না ,আমি আব্বুকে ছাড়া কোথাও যাবো না, আমাকে তোমরা বিয়ে দিও না , আমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না , আমি বিয়ে করবো না 😭😭।
কনে সহ সবাই লাবিবার দিক বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে । এর আবার কি হলো ? কেউ কেউ বোঝাতে শুরু করে আখির বিয়ে হয়েছে । তোমার বিয়ে হয়নি । তোমাকে আমরা বিয়ে দিবো না । তুমি কান্না বন্ধ করো । কিন্তু বেচারিকে কেউ চুপ করাতে পারে না । তানভীর এসে আবার মুখ চেপে ধরে । সাবিনা ইসমাইলের দিক তাকালে তারা অসহায় লুক দেয় । তাদের মেয়ে যে এমন সেটা তো তারা ভালো করেই জানে কিন্তু আর লোকজন কি ভাববে ভেবেই টেনশনে মরে যাচ্ছে । তানভীর ইসমাইলকে ইশারা করে লাবিবাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসে । নয়তো কনে বিদায়ের অনুষ্টান না হয়ে দুষ্টু পুতুলের উথাল পাতাল কান্নার ভাব দেখতে হবে ।

চেয়ার টেনে বসিয়ে দেয় লাবিবাকে । ব্যাগে তুলে রাখা চকলেট গুলো এনে হাতে দেয় । লাবিবা ফুপাতে ফুপাতে ভেজা চোখে চকলেট খেতে থাকে । তানভীর কান্না ভেজা মুখের পানে চেয়ে থাকে । কাদলে মেয়েটাকে এত্তো কিউট লাগে ..মনে হয় কামড়েই খেয়ে ফেলি । এত্তো কিউট কেন তুমি দুষ্টু পুতুল ? তোমার এই বাচ্চামো স্বভাবের নেশাই পড়ে যাই বার বার । কোমার সরল মনটার মায়াই পড়ে যাই বার বার । তোমার দুষ্টুমি গুলোর প্রেমে পড়ে যাই বার বার । এতো বোকা কেনো তুমি দুষ্টু পুতুল ? কবে বুদ্ধি হবে তোমার ? কবে বড় হবে হবে তুমি ? আচ্ছা বড় হলে কি তুমি এমনি সহজ সরল আমার দুষ্টু পুতুল হয়েই থাকবে নাকি আজকালকার মেয়েদের মতো হয়ে যাবে ? তুমি এমনি থেকো দুষ্টু পুতুল । তুমি পাল্টে গেলে অনেক মিস করবো তোমায় । অবশ্য আমি তো থাকবোই না । ক্যরিয়ার একটা জিনিস জানো যা অর্জন করা কঠিন কিছু নয় আবার সহজ ও নয় । তবে চাইলেই অর্জন করা যায় । এক হলো তকদীর আরেক হলো তদবীর । কিন্তু এর জন্য অনেক কিছু জীবন থেকে বাদ পড়ে যায় । অনেককিছু সেক্সিফাইজ করতে হয় । কিন্তু যা ভাগ্য লেখা থাকে সেটা কিন্তু ঘুরে ফিরে তোমার কাছেই আসবে ।বড় কিছু পাবার জন্য ছোট ছোট অনেককিছু তো সেক্রিফাইজ করতেই হবে বলো । বুঝলে ??
লাবিবা এতক্ষন চকলেট খেতে খেতে তানভীরের কথা গুলো শুনছিল । শেষ কামড় টা দিয়ে হাত ঝাড়া দিয়ে বলে – হুম বুঝলাম। আব্বু বলে ক্যরিয়ারের সাথে নো কম্প্রোমাইজ । ক্যরিয়ার না গড়লে দাম নেই । কিছু একটা না করতে পারলে খাবে কি ?
– তোমার এইম কি দুষ্টু পুতুল ?
– ট্রাভেলার হওয়া ।
– তার জন্য তো অনেক টাকা প্রয়োজন । তুমি তো পড়া শুনা করোনা । জব ও তো পাবে না । আমি যতোদূর জানি কাকা তোমাকে একদম সাপোর্ট দিবে না ।
– আমি পড়বো তো । জব করবো । তারপর ঘুরে ঘুরে বেড়াবো ।
– দেখা যাবে ।
– আই সোয়ার । আমি ভালোভাবে পড়াশুনা করবো ।
– গুড গার্ল। তুমি বসে বসে চকলেট খাও আমি আসছি ।

খান বাড়িতে ফিরে আসে সবাই । বাড়ি ভর্তি লোকজন।রাজীবের আত্মীয়রাও এসেছে। তানভীরের রুমে আখি রাজীবের বাসর সাজানো হয়েছে। আখিকে রুমে এনে যাবতীয় নিয়ম পালন করানো হচ্ছে । তানভীর ফুলে সাজানো খাটের কোনায় বসে ফোন চাপছে । হটাৎ মিষ্টি একটা ভয়েজে চোখ উপরে তুলে সামনে তাকায় ।
লাবিবা ঝুলানো ফুলের মালা গুলো ধরে ধরে দেখছে আর ওয়াওও…ফেনটাস্টিক..নাইস.. উফফ লাভলি😍😍 আওয়াজ করছে । তানভীরের মেরুদন্ড দিয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায় । বুঝতে পারছেনা এটা চোখের ভ্রম নাকি অন্যকিছু ? এতোক্ষন ফোনে আজকের দুষ্টু পুতুলের পিক গুলোই দেখছিলো । যখন ওকে খাওয়াচ্ছিলো তখন তুলেছে ফোনে। তাইকি এমন সব জায়গায় দেখছে ? ইসমাইলের গলা শুনে । ইসমাইল সোহানাকে বলে – আর বলবেন না ভাবী । বাসর সাজানো দেখবে বলে লাফালাফি করছিলো । কিছুতেই আটকাতে পারছিলাম না ।
সোহানা হেসে ফেলে । লাবিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।- ছোট মানুষ তো এসবিতো দেখবে । এসেছে যখন আজ থেকে যাকনা ভাইজান । তানিয়া আছে তানিয়ার সাথে থাকুক আজ ।
– না ভাবী তা কি করে হয় ? ওর আম্মুনি চিন্তা করবে ।আজ থাক । অন্য একদিন এসে থেকে যাবে ।
তানভীর ফোড়ন কাটে ।
– কাকা থাকনা আজ । কাল সকালে আরো কতো কি আছে ..তারপর নুপুরো আসবে । আজ থাক ।
ফিরোজ ও বলে । ফিরোজের উপর কথা বলার স্পর্ধা নেই ইসমাইলের । রাজী হয়ে যায় । লাবিবার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে । সেই হাসিতে তানভীর ও হাসে ।খাটে হেলান দিয়ে দুষ্টু পুতুলটাকে দেখতে থাকে । বারবি গাউন ছেড়ে নরমাল গাউন পড়ে এসেছে । চুল গুলো দুপাশে দুটো ঝুটি করে বুকের উপর ছেড়ে দেওয়া । রজনীগন্ধার মালায় নাক ডুবিয়ে সুবাস নিচ্ছে । তানভীরের অচেতন মন খুব করে জানতে চায় দুষ্টু পুতুল তোমার স্মেল কি রজনীগন্ধার থেকেও সুন্দর নাকি খারাপ ? কেমন তোমার স্মেল ?

তানিয়া এসে লাবিবাকে ডেকে নিয়ে চলে যায় । তানভীর আবার ফোনে মন দেয় । রাজীব আখিকে রেখে একে একে সবাই চলে যায় । এতোক্ষন রাজীবের থেকে পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য আটকেছিলো। এখন সবাই সবার পাওনা পেয়ে চলে গেছে । রুমে শুধু আখি , রাজীব আর তানভীর । রাজীব এসে তানভীরের পাশে বসে গলা খাকারি দিতেই তানভীর তাকায়।
– হুয়াট ?
– তুই কি এখানে থাকার প্লেন করেছিস ? তোর সামনেই কি এখন আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো ?
তানভীর আশে পাশে দেখে কেউ নেই ।
– ওহ । তো এতো রাগ দেখানোর কি আছে ? আমার জন্যই তো বউটা পেলি । চাইলে এখন আমিও বউকে বুকে নিয়ে ঘুমোতে পারি ।
– সিরিয়াসলি দোস্ত ?? বিয়ে করবি ? ঢাকা গিয়েই মেয়ে দেখা শুরু তোর জন্য ।
– এখানে কি মেয়ের অভাব আছে নাকি ? বুঝবিনা তুই । তোর ব্রেইন এখন ভাবী ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইছে না । ওকে বাই । গুড নাইট । তোরা জেগে থাক । আমি গিয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাই ।
– বিদায় হো শালা ।
– বউ পাইয়া মামা আমাক সহ্য করো না । আমিও বিয়ে করমু মামা । দেখিও ।

তানভীর তানিয়ার রুমে এসে দেখে তানিয়া আর লাবিবা ঘুমিয়ে আছে । তানিয়ার ঘুমোলে আর হুস থাকে না । নির্ভয়ে তানভীর দরজা লক করে লাবিবার দিকে গিয়ে বসে । ছোট চুল গুলো মুখের উপর পড়ে মুখ ঢেকে আছে । আলতো হাতে চুল গুলো সরিয়ে দেয় । টমোটোর মতো গাল গুলো দেখে হেসে ফেলে ।
এক হাতে ভর করে লাবিবার পাশেই সোজাসুজি শুয়ে পড়ে । মাঝখানে দু আঙুল ফাক রেখে । ঘুমন্ত মুখটাতে সারাদীনের চঞ্চলতাপূর্ণ বোকা বোকা লুকটা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । এ যেন স্নিগ্ধতা পূর্ণ মায়ায় ভরা ঘুমন্ত এক উচ্ছল কিশোরী । যাকে আজীবন দেখলেও দেখার শেষ হবে না । ঘন কালো ভ্রু জোড়া আরো ঘন লাগছে । বড় বড় পাপড়ি জোড়া খানিক খানিক নড়ে উঠছে । সরু নাকটা নিশ্বাসের সাথে সাথে বার বার ফুলে ফুলে উঠছে । চকলেটের ঠোট টা ভীষন টানছে। কামড়ে খেলেও যেন এর স্বাদ কমবে না । ঠোটের নিচে তিলটা চোখে ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে। আস্তে আস্তে আরো কাছাকাছি চলে আসে তানভীর । লাবিবার গরম নিশ্বাস তানভীরের সারা মুখে আচড়ে পড়ছে । হটাৎ করে লাবিবা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে তানভীরকে । তানভীরের পায়ের উপর পা তুলে দেয় । এমন কাজে তানভীর কিছুক্ষনের জন্য থ হয়ে যায় । উঠতে গেলেই লাবিবা জেগে যাবে । এভাবেও তো থাকা যাচ্ছে না । নিজেকে যে কন্ট্রোল করা খুব দায় । লাবিবা আরো চেপে ধরে । তানভীরের খেয়াল হয় লাবিবার বেডে কোলবালিশ , টেডি বিয়ার দেখেছিলো । তার মানে কোল বালিস ছাড়া ঘুমায় না দুষ্টু পুতুল । আর কিছু না ভেবে সেও নিজের বুকে লাবিবাকে চেপে ধরে দু হাতে জড়িয়ে নেয় নিজের মাঝে । নিমেষেই এক অজানা অনেচা না চাইতেই পাওয়ার সুখে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে । শরীরের শিরা উপশিরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে জোর দিতে থাকে নিজের বুকে পিশিয়ে ফেলতে । অবচেতন মন শায় দে নিজের মন যা চায় তাই করতে । ব্রেইন বলে উঠে ভালবাসার মানুষটাকে ছেড়ে না দিতে । হালকা ঠান্ডায় উষ্ণতা পেয়ে আরো একটু বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লাবিবা । তানভীর ও শক্ত করে ধরে ঘাড় থেকে এক হাতে চুল সরিয়ে মুখ গুজে দেয় । এতোক্ষনের চাওয়া বহু প্রত্যাশিত দুষ্টু পুতুলের গায়ের স্মেল নিতে থাকে । বকুলের সুবাসের মতো ধারালো একটা মিষ্টি স্মেল নাকে আসে । মন ভরে সেই স্মেল নিতে থাকে তানভীর ।

সকালে তানিয়ার ঘুম ভাঙে। চোখ কচলাতে কচলাতে পাশে তাকাতেই চোখ গোল গোল হয়ে যায় । মুখ ও হা হয়ে যায় । এক লাফে উঠে তানভীর কে নাড়াতে থাকে । – ভাইয়া উঠো । ভাইয়া উঠো । লাবিপুকে ছাড়ো । ভাইয়া উঠো ।
তানভীর চোখ খুলে তানিয়ার কথা শুনে লাবিবার দিকে তাকায় । হুস উড়ে যায় । তানিয়াকে বলে
– কেউ আসেনিতো ?
– তুমি লাবিপুকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছো কেন ?
-আমতা আমতা করে ।আরে আমিতো ভেবেছিলাম এটা তুই । আমি কি জানতাম নাকি ? কাউকে বলিসনা কিন্তু ।
-না বলবোনা ।আগে উঠো তো ।
– উঠছি । দরজা খোল ।
তানিয়া দরজা খুলতে যায় ।
তানভীর শেষ বারের ঘুমন্ত মুখটা দেখে নেয় । সোফ্ট উষ্ণতা ছেড়ে উঠতে মন না চাইলেও উঠতে হয় । কপালে গাড় করে একটা চুমু দিয়ে উঠে যায় ।

To be continue____

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৬

🍁
সকাল নয়টায় নুপুর বই খাতা নিয়ে হাজির । লাবিবা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি ।কেউ ডাকেও নি ওকে । নুপুর এসেই আখির কাছে চলে যায় । দুবোন কিছুক্ষন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে রাখে । রাজিব দেখেই হেসে ফেলে । গলা কেশে বলে – বুঝলে শালিকা ..তোমার আপু যেভাবে তোমাকে ধরেছে মনে হচ্ছে কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে । কতো ভালোবাসে তোমায় । আর আমি যে সেই কাল থেকে বলছি আমাকে একটু এমন করে ধরো ..এখনো ধরলোই না । একটুও ভালোবাসে না আমায় ।
নুপুর ফিক করে হেসে ফেলে । আখিতো লজ্জায় মরে যায় যায় অবস্থা । তানভীর রুমে ডুকতে ডুকতে বলে
– ভাবী না ধরলেও তুইতো ছাড়িস নি । ছোট ভেবে ভুল করিস না । সবি বুঝে । দাত বের করে হাসছে । এই কথাটা আমার দুষ্টু পুতুলের সামনে গিয়ে বল ..বেচারি কিছুই বুঝবে না । হা করে তাকিয়ে থাকবে । নুপুর যাও তো দুষ্টু পুতুলের ঘুম ভাঙাও।
রাজিবের দিকে তাকাতেই দেখে রাজীব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ।
তানভীর – কি?
রাজীব- তোর দুষ্টু পুতুল ?
তানভীর- কিছুনা ।
রাজীব- ডালমে কুচ কালা হে । শেষ মেষ ঐ বাচ্চাটার সাথে ?? কিভাবে পসিবল এটা ? বুদ্ধিসুদ্ধি থাকলে নয় তো মানা যেত । কিন্তু ঐটাতো ক্লাস থ্রির কিড মনে হয় ।
তানভীর – আই ডোন্ট নো ।

নুপুর এসে লাবিবাকে ঘুম থেকে তুলে । ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই সোহানা ডাকে । লাবিবা সোহানার কাছে গিয়ে দাড়ায় । সোহানা কিচেনে কাজ করতে করতে বলে – আমার মা টা কি খাবে শুনি ?
লাবিবা পেছন থেকে সোহানার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে – শাশুমা ডুডুলস খাবো । তোমার ডুডুলস অনেক মজা ।
– জানি এইটাই বলবি । তাই আগেই করে রেখেছি ।
টেবিলে বসিয়ে সোহানা লাবিবাকে খাওয়ায় । নুপুর এসে দাড়ালে নুপুরকেও খাইয়ে দেয় । তানভীর ও এসে বসে । সে নিজেও ব্রেকফাস্ট করেনি। মমতা এক বাটি সুপ দিয়ে যায় তানভীর কে । লাবিবা আর নুপুর তাকিয়ে আছে তানভীরের খাওয়ার দিকে । সকাল বেলা সুপ খাচ্ছে কেমন করে ! লাবিবা নুপুর উঠে রিডিং রুমে চলে আসে । তানভীর ও খেয়ে চলে আসে । টানা দু ঘন্টা পড়া মুখস্ত করায় । তার পর লাবিবা বাসায় চলে আসে । নুপুর আখির সাথে থেকে যায় ।
তানভীর ড্রয়িং রুমে আসতেই রাজন বলে – ভাইয়া এলাকাটা ঘুরে দেখতে চাই । তানভীর হেসে বলে – বাইক বের করবো নাকি গাড়ি ?
রাজিব – বাইক চলবে ব্রো ।
তানভীর – ডান ।

লাবিবা বাসায় এসে গেইটে ডুকবে তখনি দেখে বেলাল হাতে করে মাছের ঝুড়ি আনছে। পায়ে কাদা লেগে আছে । লাবিবা সামনে গিয়ে দেখে ঝুড়িতে বড় বড় মাছ ।
– জেঠ্যু মাছ ??
– বড় পুকুর সিচছে ।
– ও আমার আল্লাহ , তাই নাকি ? আগে বলবেনা?
এক দৌড়ে লাবিবা বড় পুকুরের দিকে যেতে থাকে । বেলাল অনেক ডাকা ডাকি করেও কাজ হয় না । বাসায় গিয়ে সখিনার হাতে মাছ দিয়ে বলে সাবিনাকে বলো দুষ্টুটা পুকুর সিচার কথা শুনে বাড়ির ভিতরে না এসেই দৌড় দিছে ।

লাবিবা পুকুরের ধারে বসে বসে মাছ ধরা দেখছে । মাঝিরা মাছ ধরা শেষে মাছ নিয়ে চলে যায় । অল্প পানির কাদায় এখনো অনেক মাছ । ইসমাইল ছেলেমেয়েদের কাদায় নেমে মাছ ধরে দিতে বলে। অর্ধেক যারা ধরে দিবে তাদের আর অর্ধেক নিজেদের । লাবিবার বয়সী জুই , গোলাপী, রিমিরাও নেমেছে মাছ ধরতে । লাবিবা ওদের মজা করে মাছ ধরা দেখে ছটফট করতে থাকে । বার বার এদিক ওদিক তাকাতে থাকে । ইসমাইলকে লক্ষ্য করে জেলেদের মাছ বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত । কাজ না শেষ হোওয়া পর্যন্ত এদিকে আর তাকাবেনা । লাবিবা একটু একটু করে পাড় বেয়ে পুকুরে নামতে থাকে । জামা একটু উপরে তুলে কাদায় পা রাখে । এক পা রাখতে একটু ডুবে । কিন্তু দু পা রাখতেই অনেকটুকু পা চলে যায় গভীরে । থ হয়ে ওমনি দাড়িয়ে থাকে । আস্তে আস্তে এগুতে থাকে। ছেলেমেয়েরা ততোক্ষনে কাদা ছুড়া ছুড়ি করছে । বেচারা লাবিবা এগুতেও পারছেনা মাছ ও ধরতে পারছেনা কাদার জন্য । হটাৎ ওর জামাতে একটু কাদা এসে পড়ে । লাবিবা কাদা দেখে চিল্লাতে থাকে -ঐ ঐ হাতির হালুয়া ,মুরগির বাচ্চা , পেয়াজের কাচামরিচ, হলুদের রসুন কাদা দিস কেন আমায় 😡 আম্মুনি দেখলে যখন বকা দিবে তখনকি তোরা বকা শুনবি 😡?
সুজন – ওখানে দাড়িয়ে থাকলে কি মাছ ধরতে পারবি ? এদিকে আয় । জামা প্যান্টে গুজে কাদায় হাত লাগা ।
লাবিবা – কিন্তু আমার গায়ে কাদা ছুড়বিনা । যদি কাদা লাগে একটা মাছ ও তোদের দিবো না ।
গোলাপী – তোর খালি হুমকি দামকি তাইনা? পুকুরের মালিক চেয়্যারম্যানের মাইয়া হইছস তাই সব সময় পাওয়ার দেখাস ‌
লাবিবা- ঐ ঐ আসছে..লাল গোলাপী hate you. পাওয়ার আছে জন্য ই পাওয়ার দেখাই । তোদের থাকলে তোরাও দেখাইতি। আমি চেয়্যারমেনের মাইয়া ..in the আসিতেছে future দেখিস এমপি মন্ত্রীর বউ ও হমু । তোরা হইতে পারবি ? তোরা সবসময় এমন কথা বলিস । তার জন্য ই তোদের সাথে মিশিনা 😣।
হে হে এইটা কে ??…
আওয়াজ শুনে লাবিবা পাড়ে তাকাতেই দেখে রাজিব রাজন তানভীর ভেটকি দিতেছে লাবিবাকে দেখে ।
তিনজনে ঘুরতে বেড়িয়ে বড় পুকুরের ধারে অনেক মানুষ দেখে দেখতে আসছিল কি হচ্ছে এখানে । এসে দেখে মাছ বিক্রি করছে । পুকুরের দিক তাকাতেই দেখে লাবিবা নিচে । হাতে পায়ে জামাতেও কাদা লেগেছে দেখে রাজন সেখানেই হাসতে হাসতে শেষ ।তানভীর রাজিব ও হাসে । লাবিবা রাগ দেখিয়ে বলে
– close up মার্কা add দিতে চাইলে মিডিয়াতে যান । এখানে কি ?
– দুষ্টু পুতুল তোমাকে দারুন লাগছে ।
– খবরদার আমাকে দুষ্টু পুতুল বলবেন না । আপনাকে দাড়ান দেখাচ্ছি …
হাতে কাদা নিয়ে রাজনের দিকে ডিল দেয় । রাজন সরে যাওয়াতে কাদা লাগে না ।
সাবিনা লাবিবাকে ডাকতে এসে দেখে পুকুরে নেমে কাদা লাগিয়েছে গায়ে । রাগে লাবিবা বলে চিল্লানি দিয়ে সামনের জড়ো করে রাখা বাশ থেকে কাচা কঞ্চা ছিড়ে ধেয়ে আসে । লাবিবা সাবিনার কঞ্চা নেয়া দেখে উল্টা দিকে কাদার মধ্যে দিয়েই দৌড় । সবিনা পেছন থেকে বলছে – দাড়া , দাড়া একবার তোর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে । লাবিবা আরো দৌড় । সামনে অনেকেই আটকাতে চাইলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে । সামনে কে আছে তার দেখার বিষয় না । তার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে তাকে এই মুহূর্তে বাসায় গিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা লক করতে হবে । সাবিনা তানভীরকে ইশারায় ধরতে বললে তানভীর এগোতেই ধাক্কা লেগে দুজনেই ধপাস । লাবিবা তানভীরের উপড়ে ধপাস । কোন মতে উঠে এক দৌড়। এদিকে তানভীরের গায়ে কাদা লেগে গেছে । রাজীব রাজন দুজনেই হাসতে হাসতে শেষ । সাবিনা এসে হায় হায় করতে থাকে । ইস বাবা তোমার গায়ে জামায় কাদা লাগিয়ে দিলো পাজিটা ।
রাজিব – ইস…এই অবস্থায় বাসায় যাবি কি করে ? বেলাল এসে বলে আসোতো বাবা কাদা ধুয়ে নিবে । চলো ।
লাবিবা মাত্রই গোসল করে বাইরে আসছে । এসে দেখে তানভীররা বাসায় ঢুকছে । গায়ে কাদা মাখা ।লাবিবা দৌড়ে এসে বলে – ওমা ..😱 স্যার আপনার গায়ে কাদা দিলো কে ? আপনিও আমাদের মাছ ধরতে আসছেন 😱? আপনি বললে তো আব্বু এমনিতেই বড় বড় মাছ গুলো পাঠিয়ে দিতো । কষ্ট করে মাছ ধরতে এলেন কেন ?
তানভীর রাগে কটমট করে সেট আপ বলে দেয় এক ধমক । ইচ্ছা করছে তুলে ধরে দেই এক আছাড় । ডাফার গার্ল কথাকার । পানি আনো আমার জন্য। লাবিবা ধমক খেয়ে দৌড়ে যায় পানি আনতে । ছোট বালতি করে পানি এনে মগ দিয়ে হাতে পায়ে পানি ঢেলে দেয় । উপরের জ্যকেট খুলে লাবিবার হাতে দিয়ে বলে – এটা কুইক ক্লিন করো । লাবিবা কিচেনে এসে সাবিনার হাতে জ্যেকেট দেয় ধুয়ে দেওয়ার জন্য । সাবিনা জ্যেকেট নিয়ে বেড়িয়ে আসে ধুয়ার জন্য । তানভীরদের বসতে বলে বাথরুমে চলে যায়। ধুয়ে রোদে মেলে কিচেনে এসে লাবিবাকে ফল কাটতে বলে । জুস বানিয়ে বিস্কিট নিয়ে ফ্রুটস নিয়ে ট্রে সাজিয়ে লাবিবার হাতে দেয় । লাবিবা ড্রয়িং রুমে এনে টি টেবিলে রেখেই বাইরে চলে আসে । উঠোনে বুছির মা কে দেখে শিং মাগুর মাছ কেটে দিতে । লাবিবাও টুল নিয়ে এসে বসে বসে মাছ কাটা দেখে । পানি থেকে একটা একটা করে সাবধানে মাছ বুছির মাকে তুলে দিতে থাকে ।
বুছির মা – আম্মাগো তুমি আর ধইরো না । এইগুলা একবার গালি দিলেআর রক্ষে নাই । তুমি কোমলা হাতে ধইরো না । পরে তোমার আম্মুনি বকা দিবো আমারে ।
লাবিবা – হুস হুস । কিচ্ছু করবো না । I am সাহসী😎
আমিও শিং মাগুর ধরতে পারি । এইটা সবার জানা দরকার । আহহহ…………😫
বুছির মা – কি হ ইল,কি হ ইল ? গালি দিছে তাই না । ও সাবিনা ভাবি 📣📣 আইলেন না ? আম্মাডারে শিংএ গালি দিছে ।
লাবিবা – 😭😭😭
ঘর থেকে সবাই বাইরে আসে লাবিবার চিক্কুরে । সাবিনা বকতে বকতে রুমে নিয়ে আসে । হাত দুটো ভালো করে ধুইয়ে দেয়। লাল হয়ে গেছে যেখানে গালি দিয়েছে । সখিনা গিয়ে বুছির মাকে ধোলাই দিচ্ছে কথায় বকে । মলম লাগিয়ে সাবিনা ফু দিতে থাকে । ইসমাইল হাত পাখায় বাতাস দিতে থাকে উপরে ফেন চললেও । তানভীররা নিরব দর্শক হয়ে লাবিবাকে দেখতে থাকে । কিছুক্ষন পর লাবিবা চিৎকার করা বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে – আব্বু ব্যতা কলে .😣
লাবিবার এই বাচ্চামো ফেস আর কথায় তানভীরের ও চিক্কুর দিয়ে কাদতে ইচ্ছা করে । কাদো কাদো গলায় বলে – কাকা…কাকী..আপনারা সামলান কি করে একে ? কিভাবে এতো ধৈর্য আপনাদের ?
ইসমাইল সাবিনা অসহায় লুক দিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
________________
তানভীররা রাত করে বাড়ি ফিরেছে । তিনজনে ডিনার করে ড্রয়িং রুমে বসে মুভি দেখছে । আখি এইমাত্র এদের দেড়ি দেখে রুমে চলে যায় । রাজন মুচরামুচরি করে বলে – ভাইয়া .. এই দুষ্টু পুতুলটাকে আমার সেই লাগে । তানভীর প্রজেক্টরের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রাজনের দিকে তাকায়।
– কিরকম সেই ? আর দুষ্টু পুতুল বলছো কেন ? ওর নাম লাবিবা তানহা এলিজা ।
– আরে ভাইয়া তুমিও তো বলো । শোননা আমি এইচ এসসি দিবো দুষ্টু পুতুল জে এস সি দিবে ।
রাজিবের টনক নড়ে উঠে । রাজন চুপ কর ।

আরে ভাইয়া তুমিও শোন । আমি তোমাদের একমাত্র ছোট ভাই । আমি তো সব তোমাদের কাছেই আবদার করবো তাই না ?

রাজন তোকে চুপ করতে বলেছি ভাই আমার । প্লিজ চুপ কর ।

ইস ভাইয়া আমি না বললে কেমনে হবে ? তানভীর ভাইয়াকে তো বলতেই হবে । ভাইয়াই পারে আমাদের সেট করে দিতে ।

রাজন চুপ কর ।
তানভীর রাজিব কে থামিয়ে বলে বলতে দে ওকে । রাজীব তানভীরের শক্ত হয়ে থাকা চেহারা দেখে রাজনকে বলে ভাই চল উপরে চল । কাল সকালে যখন চলে যাবো তখন বলিস ।

আরে ভাইয়া এখনি বলি ।
রাজন তানভীরের সামনে এসে বসে বলতে থাকে – ভাইয়া দুষ্টু পুতুলের সাথে কিন্তু আমার পারফেক্ট মেচ হবে । আমার জোস লাগে দুষ্টু পুতুলকে । বড় হলে এই মেয়ে যা সুন্দর হবে না .. নায়িকাদের মতো চেহারা । একটু গুলুমুলু বাট ব্যপার না সফট হবে অনেক উফফ শান্তি । আমি পাগল হয়ে গেছি ওকে দেখে । উজ্জল শ্যমলা রং আই লাইক ইট ,বড় বড় চোখ দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করে , রসগোল্লার মতো গাল দেখলেই কামড় দিতে_____
আর বলতে পারে না রাজন । তার আগেই তানভীর ডুসুম করে নাক বরাবর ঘুসি লাগায় 👊। রাজন চটকে পড়ে যায় । রাজিব আটকানোর সাহস পায় না । চুল ধরে টেনে তুলে বলে এতোদূর চলে গেছিস তুই ..আমার জিনিসে কামড় দিতে চাস ? তোর স্পর্ধা দেখে অবাক আমি । আমার জিনিসে নজর দেস 😠
ওকে দুষ্টু পুতুল শুধু আমি বলবো আর কেউ না । কারন ও আমার ” পুতুল বউ “। মাইন্ড ইট ।
রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলে – এই এলাকার জামাই তুই । আসতেই পারিস । বাট এটাকে যেন আমি আর কখনো এই এলাকায় না দেখি । দেখলে কি হবে ভালো করেই জানিস ।

To be continue___

#একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ🖤
#লাবিবা_তানহা_লিজা
#পর্ব_১৭

🍁
লাবিবা পড়তে এসেছে । বাসায় না ঢুকে গোলাপ গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে । গাছের নিচে দাড়িয়ে হাটা হাটি করছে ।
উফফ ও ফুল তুমি এতো উপরে কেন ফুটো ? নিচে ডাল গুলো যে তোমার জন্য মন খারাপ করে পাতাও দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সেদিকে কি তোমার খেয়াল নেই ? তুমি এতো নিষ্টুর কেনো গো ? আমি যে প্রতিদিন এসে দাড়িয়ে থাকি তুমি কি দেখোনা ? আমার প্রতি কি মায়া হয় না ? আমি এতো ডিল দেই একটাও কি পড়তে পারো না ? আজকে একটা পড় আমার জন্য প্লিজ ।
নিচে থেকে ইটের কনা নিয়ে ডিল ছুড়তেই তানভীর বলে উঠে – আমার গাছে আঘাত করার সাহস কোথায় পেলে তুমি দুষ্টু পুতুল ?
লাবিবা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে তানভীর পকেটে দুহাত দিয়ে উদাম গায়ে দাড়িয়ে আছে । লাবিবা দেখেই হা হয়ে যায় তানভীরের বডি দেখে । এমন কেনো বডি বুজতেই পারে না । আব্বুর জেঠ্যুর তো এমন না । এক দৌড়ে বাসার ভিতর ঢুকে যায় । ব্যাগ রেখে বসে একটু । নুপুর আসতে দেড়ি করছে দেখে পা টিপে টিপে তানভীরকে যেদিকে দেখেছিলো সে দিকে যেতে থাকে । দরজায় একটু ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায় । ভিতরে উকি দিয়ে দেখে ইয়া বড় হলের মতো । এক কর্ণারে দেখে তানভীর একটা যন্ত্রের দুটো হাতল ধরে টানছে আর পেশি গুলো ফুলে ফুলে উঠছে।লাবিবা অবাক ।এসব কি 😱 । ভয় পেয়ে ডেকেই ফেলে স্যারর.. তানভীর তাকায় ।হাতে টাওয়েল নিয়ে মাথা মুখ মুছতে মুছতে লাবিবার দিকে এগোয় । লাবিবা তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে । তানভীর সামনে এসে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলে লাবিবা চুপ থেকে চোখ পিট পিট করে । তানভীর মুচকি হেসে বলে
– আজ সকাল সকাল যে …. ? এই সময়ে আমি জিমে থাকি । কাল থেকে একটু পরে আসবে কেমন? চলো ।
তানভীর ডোর লক করে হাটতে থাকে । লাবিবাও পিছু পিছু যায় । বাড়ির পেছন সাইডে চলে আসে । লাবিবার চোখ পুরো ধাধিয়ে যায় ।
– উফফ লাভলি..😍 সুইমিং পুল😱
তানভীর মুচকি হাসে । লাবিবা দৌড়ে গিয়ে বসে পড়ে পা ভেজায় । তানভীর ও লাফ দেয় । পুরো পুলে উল্টা সাতারে ঘুরে আসে । লাবিবা মুখে একরাশ হাসি রেখে তানভীরের সাতার কাটা দেখতে থাকে । তানভীর ঘুরে আসে লাবিবার কাছে । হাতে পানি নিয়ে ছুড়ে মারে ।
– আহহহ … আমি ভিজে যাবো তো ।
– সাতার পারো ? এখানে সেইফ । মন চাইলেই কাটতে পারো তানিয়াকে নিয়ে ।
– আমি সাতার পারি না ।
– কিহহ?
– হুম । আমি পুকুরে নামলেই জর আসে । আমাদের পুকুরের জায়গাটা ভালো না।
– তাহলে সেদিন নেমেছিলে কেন ?
– সবাই মাছ ধরছিল দেখে আমারো নামতে ইচ্ছা হয়েছিল তো আমি কি করব 😒
– নুপুর মনে হয় চলে আসছে । যাও গিয়ে পড়তে বস ।
লাবিবা দৌড়ে চলে যায়। তানভীর সেই কিউট কিউট পায়ের দৌড়ানো দেখে ।
রিড়িং রুমে এসে দেখে নুপুর । লম্বা একটা টান দেয় -দোস্ত………………
– জানু……………….
– কত ঘন্টা পর তোকে পেলাম ..আয় আমরা বুকাবুকি করি
– আয় জানু বুকে আয় বুকাবুকি করি ।
তানভীর রুমে ঢুকতেই দেখে এরা ইদের দিনের মতো কোলাকোলি করছে ।
– এখানে কি হচ্ছে ?
নুপু,লাবি- বুকাবুকি স্যার☺
– what is বুকাবুকি ?
– হাগ স্যার হাগ ।
– হাগ দেওয়াকে বুকাবুকি বলছো । এর ইংলিশ ভার্সন কি হবে? হাগা-হাগি।
তানিয়া মুখ ঢেকে হেসে বলে – খাস বাংলায় পটি করা🙊।
– সেট আপ😡। যাও গিয়ে পড়তে বসো সবাই ।

পড়া শেষে নুপুর লাবিবা হেলতে দুলতে রাস্তা দিয়ে হেটে যায় । রাস্তার এপাশ থেকে একবার ওপাশে যায় আবার ওপাশ থেকে এপাশ থেকে ওপাশে যায় । পিছু পিছু তানভীর ও বের হয় দুষ্টু দুইটা বাসায় ঠিকমত যাচ্ছে কিনা দেখার জন্য । রাস্তায় দুজনের কান্ড দেখে রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার অবস্থা । বেশি গাড়ি না চললেও মোটামুটি ভালোই গাড়ি চলছে । মেইন রোড বলে কথা । গাড়ি থামিয়ে জোরে হেটে ওদের পিছনে যেতেই শুনতে পায়

🎶🎶 বাপে দেই না বিয়া ..
মায়ে দেইনা সাইরা…
কিযে করি আমি একলা একটা মাইয়া ..
ঘটক দেইখা পরান যায় ..
পাত্রের ছবি দেইখা কান্দন পায় 🎶🎶
নুপুর – জানু তারপরে কি গাইমু ?
লাবিবা- দারা আবিষ্কার করতেছি ।

🎶🎶 হই হই
রাস্তা দিয়া যখন আমি যাই
মাঝে মাঝে একটা পোলা দেখতে পাই
আলতা রাঙা পায় আবার শাড়ি পড়েছে
পোলারে দেখতে কিযে সুন্দর লাগতাছে
কিউট কিউট আমার বউ মনে হইতাছে 🎶🎶
নুপু,লাবি- হাততালি .👏👏
নুপু- দোস্ত চল আমরা ঢাকা যাইগা । ক্ষুদে গান রাজে গানগাইমু । দেখবি নোবেল টা আমরাই পামু ।
লাবিবা- তুই না পাইলেও আমি সিউর পামু । গিয়ে বলমু আমি সাবিনা ইয়াসমিন শিল্পির মেয়ে । সবাই ভাববো শিল্পি ..আমি তোমাদের এই গান শুনাবো ..তোমাদের মন ভরাবো এই গানের শিল্পি সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়ে । তারপর দেখবি সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকেই নোবেল দিবো। আমার মানেই তোর জানু । উম্মাহ হহহ😘
নুপুর – 😫😫
লাবিবা- ও আমার আল্লাহ কান্না করিস কেন ? কি হইলো ?
নুপুর – তোর গান শুইনা মুইনের কথা মনে হইল । ওরে আর দেখি না । পেটের নুপুর ,মনের নুপুর, বুকের নুপুর আর বলে না ।
এদিকে লাবিবা মুইনের কথা শুনে ফুটপাতেই বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । পেছনে এতোক্ষন তানভীর মুখ চেপে হাসি আটকে রাখলেও এবার আর পারে না । সেও হাসতে হাসতে ফুটপাতের ঘাসের উপর বসে পড়ে । তানভীরকে দেখে নুপু লাবি দুজনেই অবাক । তানভীরের দিক মুখ করে দুজনেই বসে হা করে চোখ পিট পিট করে হাসি বন্ধ করে তানভীরের হাসি দেখতে থাকে । কেউ দেখলে নিশ্চিত বলবে রাস্তার পাশে সাধু বাবা বসে আছে আর তার সামনে দুটো চেলা বসে আছে । তানভীর অনেক কষ্টে পেট চেপে ধরে হাসি থামায় । ওদের দিকে তাকিয়ে বলে – এগুলা তোদের গান ? ভাবাগো ভাবা ..ইচ্ছে করতেছে আমিই দুইটা নোবেল কিনে এনে তোদের হাতে ধরিয়ে দেই । আর কি ??পেটের নুপুর? মুইন ? হা হা হা ..এই মুইনটাকে তো দেখতে ইচ্ছা করতেছে এখন ।
দুজনেই- do you follow আমাদের ?
– সন্ধ্যা হয়ে গেছে । চল বাসায় পৌছে দেই ।অটো নিলে কি হয় ?
লাবি- স্যার দেখেন নুপুর কতো সুন্দর । একবার নুপুর অটোতে উঠেছিলো । একটা বুইড়া third gender খালাম্মা বলছিলো ” হেই বেবি ..তুমি অনেক সুন্দর । তোমাকে আমার ছেলের বউ বানাবো । চলো আমার বাসায় যাই ।” অটো ওয়ালা ভালো ছিলো জন্য তখনি গাড়ি থামিয়েছে আর সাথে সাথেই ভয়ে নুপুর দৌড় দিছে । একবার ভেবেছেন ঐ খালাম্বা যদি নিয়ে যেতো তখন আমার ভালুপাসাটাকে কই পেতাম ?
তানভীর – সব সময় তো এক হয় না । আর থার্ড জেন্ডার রা এরকমি করে । একবার এক মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে দিয়াবাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলাম । সেখানে একদল এসে বলেছিল টাকা দে নয়তো দুজনের থেকে একজন কে নিয়ে যাবো । আমি না করেছিলাম জন্য আমাকেই চ্যাং দোলা করে নিয়ে যাচ্ছিলো আর বলছিলো সুন্দর পোলা পাইছি ..সুন্দর পোলা পাইছি। আমার ফ্রেন্ড তো ভয়ে টাকা যা ছিলো সব বের করে দিয়ে দিচ্ছিলো । আমি বার বার বলছিলামম টাকা না বের করতে । অবশেষে আমাদের কলেজের ই কয়েকজন বড় ভাইয়ের দেখা পেয়ে ডাক দেই । ওরা এসে আমাদের বাচায় ।
নুপু লাবি – 😱😱
আযানের আওয়াজ আসে কানে । তানভীর জিজ্জাসা করে – নামায পড়ো না তোমরা ?
লাবিবা – আমি পড়ি কিন্তু নুপুর পড়ে না ।
– নুপুর নামায পড়বে । আমি যেন আর না শুনি তুমি নামায পড়ো না ।
নুপুর – আমি পড়ি । কিন্তু মিসদেই বেশি । এখন তো পড়তে পারবোনা । একেবারে এশার সময়ে কাযা পড়ে নিবো ।
তানভীর – গাড়ি তে গিয়ে বসো ।
তানভীর ওদের কে নিয়ে সামনে একটা মসজিদের সামনে গাড়ি থামায় ।
– শোন । চুপটি করে বসে থাকবে । আমি নামায শেষ করে আসছি ।
তানভীর গাড়ি লক করে মসজিদে চলে যায় । ফিরে এসে দেখে লাবিবা আর নুপুর দুদিক হয়ে বসে আছে ।
– কি হয়েছে ? ঝগড়া করেছো ?
দুজনেই মাথা নাড়ায় ।
– ঝগড়া করা ভালো না । মিল হয়ে যাও এখনি ।
দুজনেই মাথা নাড়ে ।
– এখনি ভাব করে নিলে দুজনেই গিফ্ট পাবে ।
– গিফ্ট.. উফ লাভলি😍
দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে । তানভীর শব্দ করে হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয় । বাজারের পাশে দু মিনিটের জন্য গাড়ি থামিয়ে দু প্যাকেট চকলেট বক্স এনে দুজনকে দেয় । নুপুরের বাসার সামনে নুপুরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘোরায় । লাবিবাকে চুপচাপ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেও কিছু বলে না । লাবিবার বাসার একটু আগে গাড়ি থামিয়ে নেমে পেছনের গেইট খুলে বলে নামো । লাবিবা চকলেট খাচ্ছিলো । খাওয়া বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকাতে যায় ।
তানভীর – দুষ্টু পুতুল ..তোমাকে কেমন জানি লাগছে । তুমি কি কিছু বলবে আমাকে ?
লাবিবা উপর নিচে মাথা ঝাকিয়ে আবার ডানে বামে মাথা ঝাকায় । তানভীর বুঝতে পারে ।
– তুমার যা মনে আছে সব বলতে পারো নির্ভয়ে । আমি কিছুই বলবোনা তোমাকে । যদি বলো তাহলে কাল আরেক বক্স চকলেট দিবো । বলবে তাহলে ?
লাবিবা উপর নিচে মাথা ঝাকায় । তানভীর গাড়িতে উঠে বসে গেট বন্ধ করে মুখোমুখি অনেক কাছে আসে লাবিবার ।
– বলো ।
– স্যার আপনি এতো মারামারি জানেন তাহলে ঐ third gender লোকগুলো আপনাকে নিয়ে চলে গেলো আপনি কিছুই বলতে পারলেন না কেনো ?
– তখন আমি ছোট ছিলাম তোমার মতো । তখন ক্লাস টেনে পড়তাম ।
– ওও..স্যার আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর । আমার অনেক ভালো লাগে ।
– কি ভালো লাগে ?
– অনেককিছু ।
– বলো ।
– এই খোচা খোচা দাড়ি গুলো ।
– ধরবে ? ধরে দেখো । তানভীর নিজেই হাত দুটো দাড়িতে নিয়ে রাখে । লাবিবা হালকা ছুয়ে বলে
– এতো সফট কেন ? দেখে তো মনে হয়না এতো সফট
– আর কি ভালোলাগে বললে নাতো।
– আপনার চোখ দুটো । যখন রেগে গিয়ে লাল করে ফেলেন তখনো ভালো লাগে । কখনোই খারাপলাগে না ।
– আর ?
– আজ দেখেছি আপনার মাথা থেকে টুপ টুপ করে যখন পানি পড়ে তখন অনেক সুন্দর লাগে ।
– আর ?
– আপনার ভেজা পায়ের লোম গুলো অনেক সুন্দর লাগে ফর্সা পায়ে । আপনি এতো ফর্সা ..আমি এতো কালো কেন ? আমি কেন ফর্সা হলাম না ?
– তুমি যে নিজেই নিজের তুলনা তাই ফর্সা হওনি । তুমি যদি বড় হতে তাহলে এগুলা না দেখে দুইটা জিনিস দেখতে ।
– কি ?
– বড় হোও তারপর নিজেই জানবে । নিজেই বলবে স্যার আপনার এইগুলা খুব সুন্দর ।
– আপনি সত্যিই খুব সুন্দর ।
-বাসায় যাও । ওকে ?
– হামম।

To be continue ______
To be continue ____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here