এক শহর ভালোবাসা পর্ব ১০

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১০
#সুরাইয়া_নাজিফা

সোফার উপরে ঘুটিশুটি মেরে মাথার পাশে একহাত রেখে বসে আছে স্মৃতি। ও বুঝতে পারছে না এভাবে পালিয়ে পালিয়েই বা কতদিন থাকবে। যদি বাসায় কেউ সত্যি সত্যি ওদের সম্পর্কটা না মেনে নেয় তাহলে ওরা কই যাবে।এভাবে অন্যজনের বাসায় বা কতদিন।নেহাত ফারিন অনেক ভালো মানুষ তাই এতোদিন ওদের সহ্যে করেছে। কিন্তু তাই বলে তো এমন নয় যে সবসময় সহ্য করবে। চিন্তায় চিন্তায় খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। তাও প্রিয় মানুষটা সাথে আছে বলে একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছে নাহলে হয়তো দম বন্ধ হয়েই মারা যেতো।

স্মৃতির ভাবনার সুতা কেঁটে চায়ের কাপের টুংটাং শব্দে তিন কাপ চা নিয়ে হাজির হলো ফারিন। চায়ের কাপ গুলো সেন্টার টেবিলে রেখে স্মৃতির পাশে বসে বললো,

“চা টা নিয়ে নে। ”
স্মৃতির দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিলো ফারিন। চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে স্মৃতি বললো,
“আরশ কই। ”
“ওই রুমে দেখেছিলাম। আমি আসতে বলে এসেছি। ”
স্মৃতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। ফারিন বললো,

“সারাদিন কি এতো চিন্তা করিস তুই
স্মৃতি? আগে যেই স্মৃতিকে চিনতাম আর এই স্মৃতির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। এতো গম্ভীর হয়ে গেছিস কেন? ”

স্মৃতি চায়ের কাপটা নিচে রেখে বললো,
“এতো চিন্তার মাঝে হাসি-খুশি কি করে থাকবো বলতো। আমি পালিয়ে আসার পর আমার বাড়ির কেউ আমার একটু খোঁজও নেয়নি বুঝতে পারছিস। আমাকে হয়তো ভুলেই গেছে সবাই। ”
বলেই স্মৃতি কান্না করতে শুরু করলো।

ফারিন স্মৃতিকে শান্তনা দিয়ে বললো,
“আরে আঙ্কেল আন্টি তো এখন একটু রেগে আছে তোর উপর তাই এমন করছে। তুই দেখিস তুই যখন ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াবি ওরা কখনোই তোর উপর মুখ ফিরিয়ে থাকতেই পারবে না। ”

“তুই বাবাকে চিনিস না ফারিন। আমার পরিবারের একটা মানুষও আমার থেকে এটা আশা করেনি। সেদিন শুধুমাত্র আমার জন্য আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ অপমানিত হয়েছে।আমার জন্য সোহাও একটা অপ্রত্যাশিত সম্পর্কে জড়িয়ে গেল।আর আমি শুধু আমার সুখটাই বড় করে দেখে চলে এলাম স্বার্থপরের মতো। সবার কাছে দোষি হয়ে গেছি আমি। ”

“উফ স্মৃতি তুই এতো ভেঙে পড়ছিস কেন?সোহা বলেছে তো ও সব ঠিক করে দিবে। ”

“সোহা বাচ্চা একটা মেয়ে ও কি করে কি করবে বলতো। ওকে সবসময় আমাকে সামলাতে হয়। আমার মনে হয় না এতো বড় ঝামেলা ও কখনো সামাল দিতে পারবে। ”

“আমি বলছি সোহা পারবে। সোহাকে আমি যতটুকু বুঝেছি হয়তো ওর মধ্যে বাচ্চাসূলভ স্বভাব একটু বেশী। কিন্তু ও একটা সমস্যা যেভাবে অনুধাবন করতে পারে। যেভাবে সবদিক সামলাতে পারে। একদম হুট করেই বড় হয়ে যায় তখন। তাই আমার মনে হয় ও পারবে। কেন তোর মনে নেই আমার আর সাদিফের সম্পর্কটা কিন্তু সোহার কারণেই আজ পূর্ণতা পেয়েছে।”

তখনই আরশ পাশের রুম থেকে ড্রয়িংরুমে এসে বললো,
“রাইট। এটাই আমি ওকে সবসময় বুঝাই যে সোহা হয়তো একটু মজা মাস্তি করে লাইফটা কাটাতে চায়। কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। তবে ওর মাথা আমাদের সবার থেকে বেশী চলে আর ও ঠিক আমাদের সাহায্য করবে। কিন্তু এই ম্যাডাম তো নিজের বোনের উপরই বিশ্বাস রাখতেই পারছে না। ”

স্মৃতি একটু বিরক্তির সাথে বললো,
“কথাটা এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের না আরশ। আমি অনুতপ্ত এই জন্য যে আমার কারণে আমার ছোট্ট বোনটার জীবনে এতো চাপ পড়ছে।এতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ”

“তুমি শুধু শুধুই চিন্তা করছো স্মৃতি। সোহা খুবই ভালো আছে ভাইয়ার সাথে।দেখো তুমি শান ভাইয়া থাকতে সোহার জীবনে কোনো চাপ পড়তেই দিবেনা। ”

“অদ্ভুত আরশ তুমি এমন ভাবে বলছো যেন তোমার ভাই আমার বোনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। ওদের বিয়েটা কিন্তু আমাদের করা একটা ভুলের কারণেই হয়েছে সেটা ভুলে যেও না। জানি না শান ভাইয়া আমার বোনকে মেনে নিয়েছে কিনা। ”
আরশ মুচকি হেসে বললো,
“সেটাই তো সিক্রেট। সময় হলে সব জানতে পারবে। আর এছাড়াও সোহা তো ঐদিন বললো তোমাকে যে ও খুব তাড়াতাড়ি আমাদের সাথে দেখা করে যা করার করবে একদম চিন্তা করো না। ”

ফারিন বললো,
“হুম ভাইয়া বুঝান ওকে একটু।আচ্ছা আপনারা কথা বলেন আমি কিছু কাজ সেড়ে আসছি। ”
কথাটা বলেই ফারিন চলে গেল।

ফারিন যেতেই আরশ স্মৃতির হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললো,
“আমি আছি তো তোমার পাশে স্মৃতি তারপরেও এতো চিন্তা করছো কেন?”

“তুমি আছো বলেই তো এখনও বেঁচে আছি। আচ্ছা আরশ তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যাবে নাতো?”

স্মৃতির কথা শুনে আরশ রেগে বললো,
“এসব কি কথা বলছো স্মৃতি। ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য কি পরিবারের সবার অমতে তোমার হাত ধরে বেড়িয়ে এসেছি। কেন এসব বেহুদা কথা বলছো। ”

“তুমি এতো রাগ করছো কেন? আমি তো এমনি বললাম। ”

“কেন বলবে আমার ভালোবাসার উপরে কি তোমার বিশ্বাস নেই? ”

“আছে তো বিশ্বাস। নিজের থেকেও বেশী। ”
বলেই আরশের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরলাম,
“আচ্ছা আরশ যদি আমাদের কেউ না মেনে নেয় তাহলে কি হবে? ”

আরশ হেসে বললো,
“কি আর হবে এভাবেই একটা পাখির মতো খড়কুটো দিয়ে ছোট্ট একটা ঘর বানিয়ে সেখানেই সারাজীবন দুজনে একসাথে থাকব। ”

“আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি। ”

“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে মজা করেছি আমিও সিরিয়াসলি বলছি।কেউ না মানলে আমরা এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটা না একটা চাকরী তো অনায়াসেই পেয়ে যাবো।তারপর আমাদের মতো করে বাঁচব।আমাদের একসাথে যেই ছোট্টঘর বানানোর স্বপ্ন। একটা সংসার সাজানোর স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা অবশ্যই পূরণ করব। ”

আরশ স্মৃতিকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। স্মৃতিও নিজের মাথাটা আরশের বুকে রেখে একটা শান্তির নিঃশ্বাস নিলো। এই জায়গাটাই তো ওর চিন্তা মুক্তির একমাত্র জায়গা। যেখানে থাকলে ওর মনে হয় ওর জীবনে শুধু খুশি আর খুশিই আছে। সেখানে কোনো দুঃখের ছায়া নেই।


“অনেক সময় হয়ে গেছে আমাদের এইবার যেতে হবে চলো। ”

আমি হাঁটতে হাঁটতে শানের কথা শুনে থমকে দাঁড়ালাম,
“আপনি এতো রুড কেন বলেন তো? এই সুন্দর প্রকৃতিতে এসেও আপনার মুড চেন্জ করতে পারলেন না। একটু স্থির হয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্যটা অনুভব করুন না। ”

শান সোহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার যাকে অনুভব করার তাকে অনুভব করে নিয়েছি।বর্তমানের আর কিছু অনুভুতিতে আনতে চাইছি না। ”

এতক্ষন আমি আর শান পাশাপাশি হাটছিলাম। হঠাৎ উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে ঘুরে উনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওনার দিকে চেয়ে পিছনে হাটতে থাকলাম।পিছনের দিকে না দেখে। আর শান নিজের দুই পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাটছে।আমি আগ্রহের সাথে প্রশ্ন করলাম,

“যাকে মানে? কাকে অনুভব করছেন কোনো মানুষ না অন্যকিছু?”

শান মুচকি হেসে বললো,
“অবশ্যই মানুষ।আর শুধু মানুষই নয় একটা মেয়ে মানুষ। যার মনটা এই সাগরের মতো বিশাল আর সুন্দর,চেহারায় সূর্যের রশ্মির মতো সৌন্দর্য আর হাসিটা যেকোনো মিষ্টিকেও হার মানাবে সে মেয়েটাই এমন। ”

উনার কথা শুনে আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,
“বাবা আপনি আবার ধমক ছাড়া এতো সুন্দর উপমা দিয়েও কথা বলতে পারেন জানা ছিল না তো। ”

“কি করে জানবে?কখনো চেষ্টা করেছো আমাকে বুঝার বা জানার? ”

আমি কিছু একটা ভেবে বললাম,
“হুম সেটাও ঠিক কথা। ”

কিন্তু পরমুহূর্তেই অনেকটা আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“বাট মেয়েটা কে?আপনি যেভাবে বললেন মনে হয় অনেক সুন্দর।”

“হুম সুন্দর তো। অন্য সবার কাছে কেমন আমি জানি না। তবে আমার কাছে পৃথিবীর সব সুন্দর মেয়েদের থেকে সে বেশী সুন্দরী। ”
ওনার কথা শুনে কেন জানি আমার খুব মন খারাপ হলো। কি এমন সুন্দর মেয়েটা? আচ্ছা সে কি আমার থেকেও বেশী সুন্দর?হবে হয়তো নাহলে কি এতো প্রশংসা করতো। আমার জন্য তো নিজের মুখ থেকে কোনো দিনও দুটো ভালো কথাও বের হয় না। আর অন্য একটা মেয়েকে দেখো কতো সুন্দর করে প্রশংসা করছে। আমি হতাশ হয়ে বললাম,

“মেয়েটি নিশ্চয়ই আপনার গার্লফ্রেন্ড?তাহলে আমার সাথেও মিট করিয়ে দিন। ”

কথাটা বলতেই হুট করে শান আমার কোমড় ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো। আচমকা এমন করাতে আমি পুরা হতভম্ভ হয়ে গেলাম। কি এমন বললাম যে উনি এমন ব্যবহার করছে? আশেপাশে এতো মানুষ কি ভাবছে সবাই । আমি কিছুটা তুতলিয়ে বললাম,

“ক কি ক করছেন আপনি?”
“প্রেম করছি।”
আমি খানিকটা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম,
“মানে? ”
শান ধমক দিয়ে বললো,
“আরে মাথামোটা তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে প্রেম করছি? এভাবে উল্টা হাটছো কেন?এখনি একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেতে। সোজা হাটো।”

বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি মনে মনে বললাম,
“হুম হনুমান একটা একটু ভালো করে কথা বললে কি হয়। দেখিয়ে দিলো আবার নিজের আসল রূপ।আল্লাহ জানে এই খারুচের সাথে কে প্রেম করে। আমার জীবনটাই তেজপাতা বানিয়ে দিছে তাহলে তার জীবনটা তো পোড়া কয়লা বানিয়ে দিবে।”

ভাবতেই ঐ বেচারীর জন্য আমার মায়া লাগতে লাগল। তখনই শান আমাকে চিৎকার করে বললো,
“কি ব্যাপার আজকে সারারাত কি ওখানে দাঁড়িয়েই পাড় করবে নাকি বাসায়ও যাবে। অদ্ভুত যেখানে যাবে সেখানেই আটকে যাবে। আর নড়তেও চায় না। অলসের ঢেঁকি একটা। ”

“উফ এই লোকটা, তোর কি মনে হয় সবাই তুই নামক সুনামির মতো স্পীডে চলবে নাকি। একটা জায়গাও শান্তিতে থাকতে পারলাম না। ”

কথা গুলো মনে মনে আওড়াতে আওড়াতেই শানের কাছে দৌড়ে চলে গেলাম। উনি আমার আগে হাটছেন আর আমি উনার পিছন পিছন। কিছুটা আসতেই একজন ক্যামেরাম্যান বললো,

“ম্যাম, স্যার আপনাদের জুটিটা বেশ ভালো লেগেছে একটা ছবি তুলে দেই? ”

আমি কিছু বলবো তার আগেই শান বললো,
“নো থ্যাংক্স লাগবে না। ”
আমি চিৎকার করে বললাম,
“লাগবে না মানে। ঘুরতে এসেছি আর ছবি তুলব না। আপনি না তুললে না তুলেন আমি তুলব। ”
শান চোখ দেখিয়ে বললো,
“বললাম তো লাগবে না। ভাইয়া আপনি যান।”
“না ভাইয়া আপনি দাঁড়ান আমি তুলব। ”
তারপর শানের দিকে ফিরে বললাম,
“এমন করছেন কেন বলুন তো আমার সাথে ছবি তুললে কি আপনার জাত যাবে নাকি? ওহ স্যরি গার্লফ্রেন্ড দেখে ফেলবে সেই ভয়ে তুলছেন না তাই তো। ”

“একদম ফালতু কথা বলবে না। আমার ছবি তুলতে ভালো লাগে না তাই তুলব না। ”
“প্লিজ প্লিজ প্লিজ তুলুন না অন্তত আমার জন্য। আমার ভালো লাগে ছবি তুলতে। ”

লোকটা আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল।উনি হয়তো এখানে আসা কাপলদের সাথে আমাদের দুজনকে মিলাতে পারছে না তাই একটু অবাক হয়েই দেখছেন আমাদের দুজনকে। লোকটা হঠাৎ করেই বলে উঠলো,
“আচ্ছা স্যার আপনারা কি কাপল না ভাই-বোন?”

লোকটার কথা শুনেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। শান রাগান্বিত হয়ে বললো,
” সব পাগল আমার সাথে কেন জুটে। আমাদের দেখে কি আপনার ভাই-বোনের মতো লাগে?”

“স্যরি স্যার আসলে ম্যাম এতোবার বলছে বাট আপনি এতো ইতস্তত করছেন সেটা দেখে মনে হলো।”

লোকটার কথা শুনেই আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি নিজের হাত মুখে চেঁপে ধরে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছিলাম আর মনে মনে বললাম,

” ছবি তুলবি না তাই না এইবার বুঝ ঠ্যালা। ”

সাথে সাথে শান আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার দিকে টেনে নিলো আমি গিয়ে পড়লাম উনার বুকের উপর তারপর ক্যামেরাম্যানকে বললো,

“শুধু একটা ছবি তোলা না তোলা নিয়ে যদি কাপল কিনা সেটা বিবেচনা করা হয় তাহলে এইবার দেখুন আমরা ১০০% কাপল। আর আমরা কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা না পিউর হাজবেন্ড ওয়াইফ গট ইট। নাউ তুলুন ছবি। ”

আমি উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি,
“অদ্ভুত সামান্য একটা কথায় এতো রিয়েক্ট করার কি আছে। ”

শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছ ক্যামেরার দিকে তাকাও। ”
“এভাবে ধরেছেন কেন আমার দম আটকে আসছে ছাড়ুন। ”
শান আরো শক্ত করে নিজের সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কেন আমরা কাপল না আর কাপলরা তো এভাবেই ছবি তোলে। পরে দূরে দূরে দাঁড়ালে আবার কি বলবে তার থেকে এভাবেই থাকো। ”

অজান্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। আমি ক্যামেরার দিকে তাকালাম আর বেশ কতগুলো ছবি আমরা দুজনেই তুললাম। তবে সব ছবিতেই আমার দৃষ্টি শুধু ওনার দিকেই ছিলো। ছবি তোলা শেষে সাথে সাথে আমরা ছবি গুলো নিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাক করলাম।



বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পেলাম শানের মা আর বাবা ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আমরা ভিতরে আসতেই মা বললো,
“কি ব্যাপার তোদের এই অবস্থা কেন? পায়ে এতো বালি। সোহার শাড়ী ভেজা কি ব্যাপার?”
শান নিজের টাই খুলতে খুলতে বললো,
“সোহার মন খারাপ ছিল তাই ওকে নিয়ে একটু সী-বিচ থেকে ঘুরে আসলাম। ”
বাবা চিন্তিত হয়ে বললো,
“কেন মন খারাপ কেন? ”
“কেনো আবার ও বাড়ি থেকে তো আসতেই চাইছিল না। জোর করে নিয়ে এলাম তাই মন খারাপ। ”
আমি মাথা নিচু করে অভিযোগের স্বরে বললাম,
“না বাবা তেমন কথা নয় আমি শুধু দুটো দিন থাকতে চাইছিলাম বাট উনি সেটাও দেয় নি। ”
বাবা বললেন,
“আচ্ছা ব্যাপার না পরে কখনো গিয়ে থেকে আসবি। এখন এখানেই আমাদের সাথেই থাক। ”
মা বললেন,
“আচ্ছা যা আগে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয়। যে অবস্থা দুজনের পরে ঠান্ডা লেগে যাবে। ”

মায়ের কথা শুনে আমি আর শান দুজনেই ভালো মানুষের মতো উপরে চলে গেলাম।তারপর ফ্রেস হয়ে নিচে এসে সবার সাথে বসে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমে চলে গেলাম। অনেক টায়ার্ড ছিলাম তাই শোয়া মাত্রই ঘুম পড়ে গেলাম।



পরেরদিন সকালে উঠে দেখলাম শান আমার আগেই উঠে গেছে। রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। আমি আর না খুজে আমার মতো উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম।আজকে থেকে ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করব। এতদিন বিয়ের চক্কোরে কিছুই পড়া হয়নি। আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে রেডি হচ্ছিলাম তখনই শান আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

“বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠান হয় জানতাম না তো?”

আমি ওনার দিকে ফিরে বললাম,
“মানে?বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কেন?”

“না তুমি যেভাবে সেজেছো তাতে মানুষ সেটাই মনে করবে। ”
শান কফি খেতে খেতে সোফায় বসল,

আমি মুখ ঝামটা মেরে বললাম,
“আমি এভাবেই যাই। ”

“হুম যাও তবে তোমাকে দেখতে যে একদম পেত্নী লাগছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ”

কথাটা বলতেই আমি রেগে উনার দিকে তাকালাম,
“পেত্নী লাগছে মানে?আমি তো দেখতে পাচ্ছি আমাকে সুন্দর লাগছে। ”

শান খিলখিল করে হেসে বললো,
“নিজেকে নিজের কাছে সব মানুষের সুন্দর লাগে। অন্যজনের কাছে তোমাকে কেমন লাগছে সেটাই আসল কথা। আর আমার কাছে তোমাকে মোটেও ভালো লাগছে না। ”
আমি কান্না কান্না মুখ করে বললাম,
“তাহলে এখন? ”

শান উঠে আমার কাছে এসে বললো,
“যাও গিয়ে মুখ পরিষ্কার করে এসো তাহলেই হবে। ”

আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে ওয়াশরুম থেকে ভালো করে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে আসলাম।
“এখন ঠিক লাগছে। ”

শান একবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিলো আর গালে হাত দিয়ে মনে মনে বললো,
“উফ এখন তো মেকাপ ছাড়া আরো বেশী সুন্দর লাগছে । ”

শানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি বললাম,
“কি হলো কিছু বলছেন না কেন? ভালো লাগছে না দেখতে? ”

শান নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো,
“হুম বাট কেমন জানি ফ্যাকাসে লাগছে চেহারাটা। ”

আমি মিনমিনিয়ে বললাম,
“ফ্যকাসে লাগবে কেন?আপনি ঠিক করে আমাকে দেখে বলুন এখন নিশ্চয় ভালো লাগছে। ”

শান একটু মাথা চুলকে বললো,
“দেখেই বলেছি। আচ্ছা তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও আমি আসছি। ”

বলেই শান কোথায় চলে গেল। এদিকে আমার লেইটও হচ্ছে।আমি বিরক্তির সাথেই মনে মনে বললাম,
” অদ্ভুত তো এখন গেলো কোথায়। ”

কিছুক্ষন পরই সে হাতে একটা ক্রিম নিয়ে আসল,
“নেও এটা লাগাও তাহলে ভালো লাগবে। ”

“এটা কি ক্রিম। আমি এসব ইউজ করিনা। ”

“আরে করেই দেখো না ভালো লাগবে দেখতে।নাহলে আর কি পেত্নীর চেয়েও খারাপ লাগছে আমার বলার বললাম বাকিটা তোমার ইচ্ছা। ”

শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের ঘড়ি পড়তে লাগল। আমি আর উপায় না পেয়ে ওটাই ইউজ করলাম। ঘড়ির দিকে খেয়াল করতেই দেখি অনেক লেইট হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি বের হবো তখনই শান বললো,

“চলো আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি। ”
“আপনি আবার উল্টা যাবেন কেন। লাগবে না আমি পারবো।”

“আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আর না অনুরোধ করেছি। আমি তেমাকে যেতে বলেছি মানে যাবে। দ্যাট’স ফাইনাল। তাড়াতাড়ি এসো। ”

কথাটা বলেই উনি আগে বেরিয়ে গেল। আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম
“আমি তো উনার কষ্ট হবে ভেবেই বললাম। তারপরও আমাকেই রাগ দেখায়। ”

তারপর বাবা মাকে বলে বেরিয়ে গেলাম। উনি আমাকে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলেন।এরপর ওখান থেকে ট্রেনে করে আমি একাই গেলাম।কারণ আমার ফ্রেন্ডেরা সব ক্যাম্পাসেই থাকে। তাই ক্যাম্পাসে গেলেই সবার সাথে দেখা হবে। ক্যাম্পাসে পৌছেই ক্লাসে চলে গেলাম। মাত্র কয়েকদিন আসেনি তাতেই মনে হয় কয় বছর আসিনি।প্রাণ ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিলাম প্রাণের ক্যাম্পাসের বাতাসে।

কম্পাসে পৌঁছাতে ওদেরকে কয়েকবার ফোন দিলাম বাট কেউ রিসিভড করলো না। ভাবলাম সবাই হয়তো ক্লাসে আছে তাই আমিও ক্লাসে চলে গেলাম। কিন্তু ক্লাসে গিয়েই আশ্চর্য হলাম এখানেও কেউ নেই। ক্লাস পুরা ফাঁকা তাহলে সবাই কোথায়। তখনই হুট করে এসে কেউ আমাকে পিছন থেকে চোখ চেপে ধরল। আমি তাড়াতাড়ি চোখ থেকে হাত সরানোর জন্য তার হাতের উপর হাত রাখতেই বুঝতে পারলাম এটা কোনো ছেলের হাত।আমি একটু ভয় পেলাম। আমি ভিত কন্ঠে বললাম,

“আরে কে আপনি?”

কিন্তু কারো কোনো শব্দ এলো না। ভয় আরো দ্বিগুন হলো। ভয়ে আমার শির দাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here