এক শহর ভালোবাসা পর্ব ৭

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৭
#সুরাইয়া_নাজিফা

“এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকো না প্লিজ আমার নজর লাগবে। ”

শানের কথাটা শুনে আমি তাড়াতাড়ি করে উনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। সর্বনাশ আমি যে উনাকে দেখছিলাম উনি বুঝল কি করে?উনি তো সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাহলে উনিও কি আমাকেই পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ছি ছি কি লজ্জা। এই চোখটাও এতো বেহায়া কেন কে জানে তখন থেকে শুধু উনাকেই দেখে যাচ্ছে। উফ সকাল থেকে কি যে হয়েছে আমার।

“এই কি বিরবির করছিলে বলোতো?”
“কি বিরবির করব কিছু না। ”
“তুমি এতক্ষন আমাকেই দেখছিলে বলো?”
“বয়েই গেছে আমার আপনাকে দেখতে। আমি এখনো পাগল হইনি। ”
“মিথ্যা বলছ আমার আমি নিজের চোখে দেখেছি তুমি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলে। ”
“ওহ তাই তাহলে তো বলতে হবে আপনিও আমাকেই দেখছিলেন নাহলে বুঝলেন কিভাবে যে আমি দেখছিলাম? ”

শানকে মুখ ভেঙালাম। শান হেসে বললো,

“কেউ একজন যদি এতো কাছ থেকে তোমাকে দেখে তাহলে সেটা কি তোমার অনুভব হবে না? আমারও তাই হয়েছে। নাহলে আমার এতো ঠেকা পড়ে নাই তোমাকে দেখবো।নিজের তো সৎ সাহস নাই সত্যি স্বীকার করার তাই কথা গোল গোল ঘুরাচ্ছো।”

উনার কথাটা শুনে আমি রেগে বললাম,

“হ্যাঁ আমি আপনাকে দেখছিলাম তো?এখন কি হয়েছে? এটা স্বীকার করতে আবার সাহস লাগে নাকি?জানেন কতো ছেলে আমার পিছনে ঘুরে কিন্তু আমি তাদেরকে পাত্তাও দেই না সেখানে আপনার ভাগ্য ভালো যে আমি আপনার দিকে তাকিয়েছি সেটা নিয়েই হ্যাপি থাকেন। ”

আমার কথা শেষ হতেই শান ভাইয়া হঠাৎ গাড়িটা থামিয়ে দিলেন। আর গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে হো হো করে হেসে দিলো।উনার হাসি দেখে আমি বিপাকে পড়ে গেলাম। উনার এমন হঠাৎ হঠাৎ হাসি দেখলে ভয় লাগে যে এরপর নিশ্চয়ই এমন কথা বলবে যেটাতে আমার মাথাটা কাঁটা যাবে।

শান ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো,
“উফ তাহলে স্বীকার করলে নিজের মুখে যে তুমি আমাকেই দেখছিলে আর শুধু দেখোই না আমাকে তুমি পাত্তাও দেও। দ্যাট মিন’স ইউ ফিল সামথিং সামথিং ফর মি। ”

বলে উনি আবারও হেসে দিলো। আমার মুখ আপনাতেই ইংরেজি “ও ” বর্ণের মতো আর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। আমার কথার মানেটা যে উনি এভাবে ঘুরিয়ে দেবো সেটা আমি বুঝতেও পারিনি। আমি জানতাম এমন কিছু হবে।উনার হাসি দেখেই বুঝে ছিলাম । কিভাবে প্যাঁচে ফেললো। আমি একহাত দিয়ে মুখের একপাশটা ডেকে মুচকি হেসে বাহিরের দিকে তাকালাম আর বাহিরের দিকে তাকিয়েই বললাম,

“নাথিং।এভার দয়া করে গাড়িটা চালান। ”

শানও আমার কথার আর উত্তর দিলো না। শান গাড়ি আবার স্টার্ট দিলো।তবে মনে মনে অনেক খুশি হলো শান খুব ভালো জব্দ করতে পেরেছে আজ সোহাকে। আজ মুখে স্বীকার করেছে খুব তাড়াতাড়ি মন থেকেও স্বীকার করবে সেই ব্যবস্থাই করবে শান।

কিছুক্ষন পর গাড়িটা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। আমি অদ্ভুত ভাবে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছি। বিশ্বাস করতে পারছি না এটা আমার বাড়ি?তারমানে শান ভাইয়া আমাকে আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছে। এজন্যই এতো তাড়া।আর এটাই ওনার সারপ্রাইজ ছিল। আমি ছলছল চোখে উনার দিকে তাকালাম শান হেসে বললো,

“প্লিজ এখন আর তখনের মতো জড়িয়ে ধরো না যেন। ”

উনি কথাটা বলেই হাসতে লাগলেন।আমি উনার দিকে আমার হাতের কাছে থাকা একটা পানির বোতল মেরে বললাম,

“আপনার মতো ফাজিল আমি জীবনেও দেখিনি। সময় আমারও আসবে তখন শোধ তুলব মনে রাখবেন।”

কথাটা বলেই আমি গাড়ি থেকে নামার জন্য পা বাড়াতেই শান ভাইয়া আমার হাত ধরে টান দিয়ে একদম উনার কাছে নিয়ে আসল। আমার চুল গুলো একহাতে কানের পাশে গুজে দিয়ে বললো,

“এই শোধটা তোলা যেনো খুব তাড়াতাড়ি হয় ম্যাডাম আমি অপেক্ষায় থাকব একদম মন থেকে।”

উনি আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন উনার কথাটা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। না আর উনার সামনে থাকা যাবে না। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম।



বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম আম্মু বসে বসে পাশের বাড়ির আন্টির সাথে কথা বলছে। আমি চুপিচুপি গিয়ে আম্মুর পিছনে গিয়ে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলাম।
“আম্মু কেমন আছো?”

আমি ধরতেই আম্মু পুরো ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু পিছনে ফিরেই আমার মুখ দেখতেই পলকেই হেসে ফেললেন আর আমার কানটা ধরে বললেন,

“ফাজিল মেয়ে একটুও চেন্জ হসনি। সেই আগের মতোই রয়ে গেলি। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।কখন এলি? জানালি না আসবি? ”
বলেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরল।

“এইতো এইমাত্র আসলাম। আমি নিজেও জানতাম না তোমাকে কেমনে বলব।”
“শান আসেনি। ”

আমি একটু অভিমান নিয়ে বললাম,
“আমি এলাম একবারও আমার কথা জিজ্ঞেস না করে ঐ হনুমানটার কথা জিজ্ঞেস করছো? যাও কথা নেই তোমার সাথে। এর থেকেতো আঙ্কেল আন্টি ভালো আমাকে শান ভাইয়া স্যরি স্যরি শানের থেকে বেশী ভালোবাসে।”

“তুই শানকে এখনো ভাইয়া বলিস?”
“উফ মা এখন প্লিজ তুমি শুরু হয়ে যেও না। এমনিতেও এর জন্য অনেক বকা শুনেছি। এখন আর বলিনা। ”
“হুম।এখন বল শান কই। ”
“বাবা শান শান করে তো মাথা খারাপ করে দিবা। আমাকেও একবার জিজ্ঞেস করো আমি কেমন আছি?”
আম্মু আমার গালে একহাত রেখে বললেন,
“আমি জানি তুই ভালো আছিস। কারণ শান কখনো তোকে খারাপ রাখতেই পারেনা। ”
আমি আম্মুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
“বাবা এতো বিশ্বাস।”
আম্মু মুচকি হেসে বললো,
“হুম।কারণ আমি শানকে চিনি ছোট থেকে। ও ছেলেটাই এমন যে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। ”
আমি সোফায় বসে বললাম,
“আসছে তোমার বিশ্বাসযোগ্য মানুষ।”

আমি অভিমান নিয়ে বললাম আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন আর আমাকে বুকে টেনে নিলেন। তারপরও কি আর অভিমান করা যায়?আমিও আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।

এতক্ষন পাশের বাড়ির আন্টি বসে বসে শুনলেও হঠাৎ বলে উঠল,
“কেমন আছিস সোহা? ”
“এই তো ভালো। আপনি?”
“ভালো। তা হ্যাঁ রে স্মৃতি যে বিয়ের সময় পালিয়ে গেল তাই নিয়ে ওই বাড়ির সবাই তোকে কিছু বলে না তো?”
“কি বলবে?”
“না কথা শুনায় না নাকি?”

কথাটা শুনেই আমার প্রচুর রাগ হলো। এই মহিলাকে আমি মোটেও পছন্দ করিনা। সারাদিন কুটনামি করা উনার স্বভাব। এর কথা ওকে বলবে আর ওর কথা একে। আম্মু যে কেন এই মহিলাকে ঘরে ঢুকতে দেয় মাঝে মাঝে এটাই আমার মাথায় আসেনা। আমি কিছু বলবো তার আগে পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল,

“কেন? ও কথা শুনলে বুঝি আপনার শুনতে খুব ভালো লাগতো?তারপর এই নিয়ে সবাইকে হেঁটে হেঁটে বলতে সুবিধা হতো?দোষটা কি ওর ছিল যে ওকে কেউ কিছু বলবে?আপনাদের মন মানসিকতা এতো নিচু কেন?দেখছেন একটা পরিবারের উপর দিয়ে দুইদিন আগেই এতো বড় একটা ঝড় চলে গেল আর আপনাদের সেটা রসিয়ে রসিয়ে এসে বারবার এক কথাই জিজ্ঞেস করতে হবে কেন? এতে উনাদের উপর কি প্রভাব পড়ছে ভেবেছেন একবার।নিজের বাড়ির খবর তো রাখেন না এসেছে পরের বাড়ির খবর নিতে। ”

কথাটা শুনে পিছনে ফিরতেই দেখলাম শান দাঁড়িয়ে আছে। আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। শানের কথা শুনে আমিও বললাম,

“একদম ঠিক। তা আন্টি শুনলাম আপনার মেয়ে ঐ দিন রাসেল ভাইয়ার সাথে হোটেলে হাতে নাতে ধরা পড়েছে সেটা এভাবেই হেঁটে হেঁটে সবাইকে বলেছিলেন তো?নাকি শুধু অন্যের মেয়েরটাই বলেন। আমার বোন তো সেদিক থেকে অনেক ভালো আছে।”

আমার কথা শুনে আন্টি রেগে আমাকে চোখ রাঙিয়ে বললো,
“বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভুলে গেছো নাকি?বেয়াদবের মতো কথা বলছো কেন?”

“না আন্টি ভুলিনি। বড়দের থেকেই শিখেছি কিভাবে কথা বলতে হয়। ”

শান আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“শুনে নিয়েছেন। এইবার আপনি আসতে পারেন আর কখনো যেনো আপনাকে এই বাড়ির আশেপাশে না দেখি। তাহলে আরো আপত্তিকর কথা শুনতে হতে পারে।”

শান ভাইয়ার কথাই আন্টি আম্মুকে বাজ খাই গলায় বললেন,
“মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে দিয়ে এতো অপমান না করালেও পারতে রুমানা।আমি এমনি বলেছি?এমন হলে কোনো প্রতিবেশীকে পাশে পাবেনা। ”

বলেই উনি হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। উনি যেতে যেতে আমি চিৎকার করে বললাম,

“আরে যান যান আপনার মতো দুই একটা প্রতিবেশী না থাকলেও হবে যতোসব। এতো কিছু করেও কিছু মানুষ কখনো নিজের দোষটা রিয়েলাইজ করতেই চায়না। যেন দোষটা স্বীকার করলে পাপ হবে।”

আম্মু মন খারাপ করে বললো,
“দূর তোরা এভাবেই বলতে গেলি কেন।দোষটা তো আমাদের মেয়েই করেছে তাই কথাতো একটু শুনতেই হবে। ”

শান আম্মুর কাঁধে জড়িয়ে বললো,
“না মামনি এখানে কারোই দোষ নেই। প্রত্যেকটা মানুষের একটা পছন্দ-অপছন্দ আছে। তোমরা বিয়ে ঠিক করার আগে একবারও কি জিজ্ঞেস করেছো স্মৃতি কি চায়?ও আমাকে পছন্দ করে কিনা? আজকে যদি স্মৃতি তেমাদের কথাটা ভেবে বিয়ে করেও নিতো তাহলে আমাদের দুজনের জীবনটাই নষ্ট হতো। ও কখনো আমার সাথে ভালো থাকত না। আর না আমি। তাই ও যা করেছে একদম ঠিক করেছে। যাকে ভালোবাসে তার সাথেই গেছে। আর আমি ওকে ফুল সাপোর্ট করি। আমার কোনো অভিযোগ নেই। তোমরা আর এটা ভেবে মন খারাপ করো না। ”

আম্মু ছলছল চেখে শান ভাইয়ার হাতে হাত রেখে বললো,

“তোর সাথে এতটা হওয়ার পরেও তুই এমন মনোভাব রেখেছিস সেটা দেখে ভালো লাগলো বাবা। সোহাকে একটা সত্যিকারে মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি তাতেই আমি খুশি। ”

শানের এতো প্রশংসা কেন জানি শুনে একটু হিংসা হচ্ছিল। তাই আমি টোন কেঁটেই বললাম,

“উনাকে এতো ভালো বলার কিছু হয়নি আম্মু। উনি যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ওইদিন গিয়েছে সেই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমিও গেছি।উনার ভাইও পালিয়েছে। আমরা তো তা নিয়ে কিছু বলিনি। তাই উনার কোনো অধিকারও নেই আমাদের ওপর অভিমান করার। ”

আম্মু কিছু বলবে তার আগে শান বললো,

” মামনি তুমি কি কোথাও পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছো?”
“কি বলিস আমিতো কিছু দিয়ে আসিনি চুলায়।”
“না মামনি এটা সেই পোড়া না। এখানে কারো মন পুড়ছে। তুমি আমার প্রশংসা করছো সেটা তো কেউ চোখের সামনে দেখতেই পারছে না। ”

প্রথমে আম্মু কথাটা না বুঝলেও যখন বুঝতে পারলো আম্মু আর শান এক সাথেই হেসে উঠলো। আমি কটমট চোখে ওদের দুজনের দিকে তাকাতেই। দুজনের হাসিই বন্ধ হয়ে গেল।আম্মু বললেন,

“তোরা দুজনেই এক রকম রয়ে গেলি। এভাবে ঝগড়া করে কি জীবন কাঁটবে?”

আমার কেন জানি এসব কথা আর ভালো লাগছিলো না।হঠাৎ কি বলতে কি বলে দিবো মুখ ফসকে তখন ব্যাপারটা খারাপ হয়ে যাবে। তাই আমি বললাম,

“উফ মা বাদ দেও তো এখন কিছু খেতে দেও। অনেক খুদা লাগছে। কতদিন তোমার হাতের খাবার খাই না। ”
“আরে দেখেছিস আমি তো ভুলেই গেছিলাম। আসছি আমি এখনি।”
“আরে মামনি এতো কষ্ট করার কোনো দরকার নেই। দিনদিন তেমার মেয়েটা রাক্ষসী হয়ে যাচ্ছে। এই মাত্র খেয়ে আসছে বাসা থেকে।এতো খেলে পরে কুমড়োপটাশ হয়ে যাবে তখন বুঝবে।”
“হলে হবো আপনার সমস্যা কি?”
“আমারই তো সমস্যা কারণ জিনিসটা তো আমারই। ”

উনার কথা শুনে আমি একবার আমার দিকে তাকালাম। মানে আমি কোন দিক থেকে কোনো জিনিসের মতো দেখতে। অদ্ভুত। আমি কিছু বলতে যাবো তখনই শান বললো,

“স্টপ স্টপ স্টপ এখন ঝগড়া করার টাইম নাই। তোলা থাকল অফিস থেকে এসে করব।আসছি মামনি। ”
“মানে এখনি চলে যাবি খেয়ে যা। ”
“একদমই টাইম নেই।পরে খাবো। বাই। ”

শান চলে গেল। আর আমিও টিভির সামনে বসে কার্টুন চ্যানেলটা অন করে দেখতে লাগলাম আর মনে মনে শানকে বকতে লাগলাম।



শান আজকে প্রথম ওদের চট্টগ্রাম শাখার অফিসটাতে এসেছে। কারণ এটা আরশ সামলাতো। এর আগে একবার দুইবার এসেছিল মিটিংয়ের জন্য। তবে এতো ভালো কারো সাথে পরিচিত হতে পারেনি। শানের আজকে প্রথম দিন তাই সব স্টাফরা দাঁড়িয়ে আছে শানকে ওয়েলকাম করার জন্য। শান অফিসে প্রবেশ করতেই সবাই শানকে ফুলের মালা দিয়ে ওয়েলকাম জানালো।ম্যানেজার অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

“স্যার এটা আপনার পি.এ।নুসরাত তুবা। ”
“হ্যাঁলো স্যার। ”

মেয়েটাকে পরিচয় করিয়ে দিতেই মেয়েটা শানের দিকে হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো।শান মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখল মেয়েটা যথেষ্ঠ সুন্দরী,রুচিবোধ সম্পন্ন।যদি হাতটা স্বাভাবিক ভাবে বাড়াতো তাহলে হয়তো শান ধরতো।কিন্তু মেয়েটার হাত বাড়ানোর ভঙ্গিটা আর তাকানোটা শানের মোটেও ভালো লাগলো না।শানের অস্বস্থি লাগতে লাগলো। শান বেশ বুঝতে পারছে মেয়েটা ওকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে।আর শানের এমন গায়ে পড়া মেয়ে মোটেও পছন্দ না তাই হাত না মিলিয়ে শুধু মুখে বললো,

“হ্যাঁলো।”

শানের ব্যবহারে মেয়েটার চোখ মুখ কুচকে গেল। এতক্ষনের হাসিটাও মিলিয়ে গেল। বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা শানের এই ইগনোরেন্সটা পছন্দ করেনি। মেয়েটা হাত নামিয়ে এক সাইডে গিয়ে দাঁড়ালো। শান সবার সাথে পরিচিত হওয়ার পর বললো,

“থ্যাংক্স টু অল এন্ড গো ব্যাক টু ওয়ার্ক।এতদিন আরশকে সবাই যেভাবে হেল্প করেছেন আশা করি আমাকেও করবেন।কারণ আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমার একারপক্ষে কিছুই সম্ভব না। ”

সবাই একসাথে বললো,
“ওকে স্যার।”

তারপর ম্যানেজারের দিকে ফিরে বললো,

“মি.রহমান আপনি আমাকে এতো দিনের সব পুরানো ফাইল,একাউন্টসের হিসাব, যাবতীয় ইম্পরট্যান্ট মিটিংয়ের রেকর্ড,কোথায় কত ডিল হয়েছে সবগুলো আমাকে দেখান। আমি একটু সেসব দেখতে চাই। ”

“ওকে স্যার। ”

সবার সাথে টুকটাক কথা বলেই শান নিজের ক্যাবিনের দিকে গেল। কিছুক্ষন পরই ম্যানেজার এলো আর সাথে সেই তুবা বলে মেয়েটিও এলো। মেয়েটিকে দেখতেই শানের আবার বিরক্ত লাগল। ম্যানেজার বললো,

“স্যার আপনি যা যা চেয়েছিলেন এখানে সব আছে। আর রিসেন্ট যে মিটিংটা চলছে সে ব্যাপারে তুবা আপনাকে বলবে। কারণ ওই ছিল আরশ স্যারের সাথে। ”

শান ফাইল গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,

“আচ্ছা এখন আপনারা দুজনেই আসতে পারেন। আমার যখন লাগবে আপনাদের ডেকে নেবো। ”

তখনই তুবা বললো,
“বাট স্যার মিটিংয়ের ইনফরমেশনটা? ”

শান কিছুটা বিরক্তির সাথে হেসে বললো,
“যখন লাগবে বলব আপনাকে কেমন। এখন আসুন। ”

তারপর তুবা আর ম্যানেজার দুজনেই বেরিয়ে গেল। শান পুরানো ফাইল গুলো থেকে ওর কাজ করা শুরু করল।কারণ ওর অফিসের পরবর্তী ডিসিশন নিতে প্রথমের কাজ গুলো বুঝতে হবে।



আমি বসে বসে কার্টুন দেখছিলাম তখনই আমার ফোনে একটা নাম্বার থেকে কল এলো। কলটা আসতেই আমি রিসিভড করে আমার রুমে চলে গেলাম।

“কিরে তোর খবর কী বলতো? তোর ফোন বন্ধ কেন?আমি কতটা টেনশনে ছিলাম তোর কোনো ধারণা আছে? কি হয়েছে সেদিন?”

“উফ আপু আমাকে কিছু বলতে দিবি? সব তো তুই বলছিস?”

“তো বলবো না। সেদিনের পর তোর তো আর খবরই নাই। শান ভাইয়া কি সব জেনে গেছে?”

“আর বলিস না। ”
“কেন কি হইছে?”

তারপর আমি আপুকে সবকিছু খুলে বললাম শুধু বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যে ঝামেলাটা হয়েছিল সেটা চেপে গেলাম । কারণ এটা বললে আপু এখন হাজার প্রশ্ন করবে যার উত্তর আমি এখন দিতে চাচ্ছি না। আপু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“ওফ ভাগ্যিস শুনতে পায়নি।”
“হুম। এজন্যই আর কল দেওয়ার সাহস পাইনি পরে।”
“ভালো করেছিস। নাহলে আমার জন্য তোর সংসারেও ঝামেলা বাঁধতো।”
“ধ্যাত তেমন কিছুই না। আচ্ছা শোন তোরা কোথায় আছিস? চট্টগ্রাম শহরে আছিস তো নাকি বাহিরে?”
“না চট্টগ্রামেই আছি ফারিনের বাসায়। ”
“ফারিন আপুর বাসা কই কাঠঘর না? ”
“হুম। ”
“আচ্ছা আমি আসবো। আর এই নাম্বারে কল দিলে কি তোকে পাওয়া যাবে?”
“হ্যাঁ এটা ফারিনের নাম্বার পাবি। ”
“আচ্ছা। ”

আপুর সাথে কথা বলে একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম মা শুনেনি তো আবার। তারপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।



অনেকক্ষন কাজ করতে করতে শানের টায়ার্ড লাগছিলো। তাই ফ্রেস ফিল হওয়ার জন্য ওর ক্যাবিনের জানালা খুলে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল।একহাতে কফি আর এক হাত পকেটে দিয়ে। হঠাৎ কেউ একজন এসে পেছন থেকে শানকে জড়িয়ে ধরল। আচমকা এমন হতে ও একটু আশ্চর্য হলো। আরো আশ্চর্য হলো যখন শান তার চেহারা দেখলো,

“ঐশি তুমি এখানে?”

ঐশি মুখে একটা হাসি টেনে বললো,
“তো অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি?”

শান কফি কাপটা টেবিলে রেখে বললো,
“কবে এসেছো?”

ঐশি একটু অভিমান করে বললো,
“কালকেই। সকালে এতগুলো ফোন দিলাম রিসিভড করলে না কেন?”

“ফোনটা আমার কাছে ছিল না তাই।”

ঐশি কান্না কান্না ফেস করে বললো,
“ওকে।বাট শান এখানে এসে যেটা শুনলাম সেটা মোটেও বিশ্বাস হচ্ছে না । তুমি বিয়ে করেছো শান?”

“কে বলেছে?”
“আব্বু বলেছে। ”
“হুম। ”
“তুমি মন থেকে বিয়েটা করোনি না? শুনেছি যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ওই মেয়েটা পালিয়ে গেছে। আর এখন যে তোমার বউ ওকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছো?”
“তেমনটা নয় ঐশি।”
“যেমনই হোক আমি কিছু শুনতে চাই না শান। তুমি আমার ছিলে আর আমারই থাকবে। যতো তাড়াতাড়ি পারো ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে দেও। তাহলে আর আমাদের মধ্যে কোনো বাঁধাই থাকবে না। ”
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here