এবং স্ত্রী পর্ব – ২০

#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_২০
#Jannatul_Ferdos

আজকাল উৎসের খুবই অসহ্য লাগছে।কিছু একটার শুন্যতা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।এমন কেন হচ্ছে সে ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারছে না।কিসের এতো শুন্যতা তার?সে তো বেশ আছে নিরুপমা নেই অরিত্রার স্থান নিতে ও কেউ নিতে পারবে না।কিন্তু তার মনে যে খুব বেশি বিরহ চলছে।বিরহ চলতে চলতে যেন একদম নিরুপমার মনের দুয়ার অব্দি পৌছেছে।কিন্তু এই বিষয়টা তার বোধগম্য হয় নাই এখনো।
২ টা মাস হয়ে গেছে অথচ নিরুপমার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নাই।উৎস যে নিরুপমার খোঁজ করছে না তা না সে খুঁজছে কিন্তু মুসকানের জন্য।তবে তার নিরুপমার এই খোঁজ যে তার অজান্তেই নিজের জন্য নেওয়া হচ্ছে তা উৎস এখন অব্দি বুঝে উঠতে পারছে না।

আর ১৫ দিন পর মুসকানের জন্মদিন। উৎস খুব ভালো করেই জানে নিরুপমা এইদিনে না এসে থাকতে পারবে না।অরিত্রার মৃত্যুবার্ষিকী এর দিন যে কখনো মুসকানের জন্মদিন সেলিবেট করতে হবে তা কখনো সে ভাবে নি।সেদিন সে মসজিদে মিলাদ দেবে।এতিম বাচ্চাদের খাওয়াবে।আর সন্ধ্যায় নিরুপমাকে আনার জন্য পার্টি দেবে।সে শুধু অপেক্ষায় আছে ওইদিনের।

“আর কতোকাল স্বামী সংসার ছেড়ে থাকবি নিরু?
” আমি এইখানে থাকায় কি খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে ফুফু?
“এমা না না কি বলিস এসব।আমি সেটা বলি নাই।কিন্তু মুসকান জন্মের পর মা হারা হলো এরপর তুই ওর মা হয়ে উঠলি।দুধের শিশু মা ছাড়া থাকতে পারে বল?কতো কষ্ট হচ্ছে বাচ্চা মেয়েটার একটু ভাব।
নিরুপমা একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বলল…
” আমার কিছু করার নেই ফুফু।আর তাছাড়া প্রেমা আছে ও সব সামলে নিতে পারবে।ও বাড়িতে আমাকে সকলে ভালোবাসলে কি হবে স্বামী তো ভালোবাসে না ফুফু।আমার কি কোনো আত্মসম্মান নেই।সে আমাকে ভালো না বাসুক একটু তো সম্মান দিতে পারত কি পারত না বলো?কিন্তু না সে সেটা করলো না অথচ বাইরের মানুষের সামনে আমার গায়ে হাত তুলল।আমার কি খারাপ লাগে না ফুফু?ওই মহিলা তো আমাকে ও অপমান করলো কই তখন তো প্রতিবাদ করলো না উলটে আমাকে কত বাজে কথা শুনালো।আমি ও তো রক্তে মাংসে গড়াই একজন মানুষ। অন্য সব মানুষের মতো আমার ও মন আছে।
“সবই বুঝলাম কিন্তু তাই বলে উৎস তোকে খুঁজবে না?
” খুঁজে তো
“খুঁজলে তো তোকে পেয়েই যেত
” যে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু যে ইচ্ছা করে হারায় তাকে কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না।আর আমি নিজ ইচ্ছা লুকিয়েছি।ওর ধারণা ও করতে পারছে না আমি তোমার এইখানে আছি।

দিলরুবা চৌধুরী একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।দিলরুবা চৌধুরি উৎসের বড় ফুফু।অঢেল টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও তার মনে বিন্দু মাত্র অহংকার এর ছাপ নেই।নিরুপমাকে খুব বেশি ভালোবাসেন তিনি। গত দুইমাস নিরুপমা তার বাসাতেই আছে।দিলরুবা চৌধুরির স্বামী গত হয়েছেন প্রায় ৫ বছর।তার বড় ছেলে কানাডায় থাকে।আর ছোট মেয়ে এবার অনার্স পড়তেছে।উৎসের ব্যবহারে তিনি খুবই বিরক্ত।
তিনি আর কথা বাড়ালেন না নিরুপমাকে হাটুর উপরে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
“আমার মনে হচ্ছে আমি আমার মায়ের কোলে আছি ফুফু
” ফুফু বলিস তো কি হয়েছে আমি কি তোর মা না?
নিরুপমা কিছু বলে না দিলরুবার চৌধুরির হাত মুঠোবন্দি করে চুমু খায়।

ছাদ থেকে মেঘলা আকাশ খুব সহজেই অবলোকন করা যায়। দূরের ওই মেঘলা আকাশের ন্যায় উৎসের মনে ও এখন মেঘলা দিন চলছে।প্রকৃতিতে যেমন রোদ বৃষ্টির খেলা চলে উৎসের মনে তেমন রোদ বৃষ্টির খেলা চলছে না।তার মনের আকাশ এখনো মেঘলা কবে যে রোদ উঠবে তা উৎসের জানা নেই।আজ প্রকৃতি খুবই ভয়ংকর লাগছে।এই মেঘের মধ্যে খুব বড় একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে।কিন্তু কখনো বা মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকিয়ে পড়ছে আবার কখনো বা মেঘের আড়াল থেকে বের হয়ে জ্বলজ্বল করে উজ্জ্বল উঠছে।ইস নিরুপমা ও যদি এই লুকোচুরি খেলা বন্ধো করে এভাবে উজ্জ্বল হয়ে আসত।একদিন খুব ঝড়ো হাওয়া বইছিল কিন্তু কোনো বৃষ্টি ছিল না ঠিক এমন একটা সুন্দর চাঁদ ছিল সেদিম নিরুপমা একটা কথা বলেছিল…

শান্ত শীতল প্রকৃতি খুব কম থাকে।প্রকৃতি খুবই মায়াময় তবে কিছুসময় খুব বেশি মায়াময় হয়ে উঠে আর তখন সেই প্রকৃতিকে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগে💚

আজ হয়তো ঠিক তেমন প্রকৃতি বিচারণ করছে।ইস আজ যদি নিরুপমা থাকত তাহলে আরো সুন্দর কিছু কথা শুনতে পারত।নিরুপমা যে খুব সুন্দর কথা বলতে পারে।আজ নিরুপমাকে খুব বেশি মিস করছে।এই দুই মাসে হয়তো এই প্রথম সে যে নিরুপমাকে মিস করছে তা বুঝতে পারছে।সে কি নিরুপমার প্রেমে পড়েছে?নাকি শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে বন্ধুকে মিস করছে?সে জানে না তবে নিরুপমাকে দরকার তার খুব দরকার।সেদিন হয়তো চড় না মারলে ও পারতো।মুখেই না হয় শাসন করতো।সে বার বার একি ভুল করে আর নিরুপমাকে তাকে বার বার ক্ষমা করে দেয়।এইবার সে খুব বেশি অভিমান করেছে তাই তো এভাবে লুকিয়ে আছে।মেয়েটা বড্ড অভিমানী। উৎস নিজে নিজেই বুলি গুলো আওরাতে লাগল।

চলবে!

আমি ব্যস্ততার জন্য গল্প বড় করতে পারি না।আজ চেয়েছিলাম বড় করে লিখব কিন্তু ভাগ্য খারাপ গল্প প্রায় অর্ধেকের বেশি লিখার পর অসাবধানতার বশত গল্প ডিলিট হয়ে যায়।যার ফলে আবার শুরু থেকে লিখতে হয়।আমি দুঃখিত।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here