এবং স্ত্রী পর্ব – ৮

#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_৮
#Jannatul_Ferdos

উৎস নিরুপমার কথা গুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে।নিরুপমা এগুলা কি বলে গেল?উহু ওর ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।ভালোবাসার নাটক করে যখন দেখবে আমি ভালোবাসি তখনই আসল রূপ দেখিয়ে দেবে। না ওর ফাঁদে আমি কিছুতেই পা দিব না।আমি অরিত্রকে ভালোবাসি কিছুতেই অন্যকাউকে আমি ভালোবাসতে পারব না….নিজের সাথেই উৎস কথা বলছিল।

নিরুপমা উৎসের রুম থেকে বের হতেই প্রেমার সাথে দেখা হয়ে যায়।নিরুপমার উজ্জ্বল মুখে চোখের অশ্রু মুক্তার মতো জ্বল জ্বল করছে।যা প্রেমার নজর এরায় না।নিরুপমা যথা সাধ্য চেষ্টা করছে চোখের পানি মুছে হাসি মুখ বজায় রাখতে।কিন্তু যতোই মেঘের ভিতরে রোদ উঠুক মেঘের কালো ছায়া ঠিকি থেকে যায়,ঠিকি অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখা যায় চারিদিকে।নিরুপমা যতোই চেষ্টা করুক তার মুখের বিষাদ লুকিয়ে রাখতে তা কি আদৌ সম্ভব? নাকি নিতান্তই চেষ্টা মাত্র?
“ভাবি কাঁদছো কেন তুমি?ভাইয়া তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?
” কই নাতো আমি তো কাঁদছি না।
“মিথ্যা বলো না ভাবি।এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।তুমি এতো নরম থাকো কেন ভাবি?একটু জল্লাদ রুপ ধারণ করতে পারো না?এমন জল্লাদ রুপ ধারণ করবা ভাইয়ার দেখলে ও তোমাকে ভয় লাগবে।
” এমা না না স্বামী কখনো স্ত্রীকে ভয় করে না।স্ত্রী স্বামীকে ভয় করে।
“উফ ভাবি তোমার জন্যই ভাইয়া এগুলা করার সাহস পায়।আমি যা বলি মন দিয়ে শোনো…
ওদের কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠে..
” মনে হয় বাবারা এসে গেছে।
“হ্যা হবে হয়তো আমি তোমার সাথে এই বিষয়ে রিলাক্সে কথা বলব ভাবি। এখন যাও তাদের সময় দাও।
দরজা খুলে দিলনে তনিমা বেগম।বাইরে নয়ন রাহমান, ঝুমুর,লতিফ আর পারুল বেগম দাঁড়িয়ে আছে।পারুল বেগমকে দেখে খুশি হতে পারলেন না তিনি।মানুষটার তো আসার কথা ছিল না তাহলে এলো কেন?তাকে দেখে অস্বস্তি লাগলে ও মুখে হাসি টেনে রেখে তনিমা বেগম সালাম দিলেন….
” আসসালামু আলাইকুম ভাই।
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছেন বেয়াইন?
” আলহামদুলিল্লাহ আপনারা ভালো আছেন?ভিতরে আসেন।
“জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি….ভিতরে প্রবেশ করতে করতে উত্তর দিলেন নয়ন রাহমান।
নিরুপমা এসে লতিফকে জড়িয়ে ধোরে।
” কেমন আছিস ভাই??
“ভালো আছি আপু তুই কেমন আছোস?
” আছি ভালোই। কতোদিন পরে তোদের দেখলাম?ঝুমুর ভালো আছিস?…ঝুমুরের মুখে হাত রেখে বলল নিরুপমা
“ভালো আছি আপু….
না চাইতে ও নিরুপমা তার বাবাকে প্রশ্ন করলো…
” ভালো আছো বাবা?একটা মেয়ে আছে তার শ্বশুরবাড়ি আছে এই কথাটা তাহলে এতোদিন পর বুঝলে বাবা?বিয়ের সাড়ে ৩ মাস হওয়ার পর ও আমার খোঁজ নিলে না।কিন্তু যখন সপ্তাহ তিনেক আগে তোমার স্ত্রী মেয়েকে বিপদ থেকে রক্ষা করলাম তখন মনে পড়লো কোনো একটা মেয়ে ছিল তাকে বিয়ে দিয়েছো?
নয়ন রাহমান কিছু বলতে যেতেই প্রবীর খান নিরুপমাকে উদ্দেশ্য করে বলল..
“আহা বউমা এখন এগুলো রাখো।এতোদিন পর তারা এসেছো এগুলা এখন বলো না মা।যতোই হোক তোমার বাবা তো।
নিরুপমা কিছু না বলে লতিফকে নিয়ে চলে আসলো।নিরুপমার এখন খুব বলতে ইচ্ছা করছে “বাবা”? কোন বাবা?বাবার কি দায়িত্ব কর্তব্য তিনি পালন করেছেন?দ্বিতীয় স্ত্রী এর জন্য তিনি নিজের মেয়েকে মেরেছেন। দিনের পর দিন তিনি আমাকে অত্যাচার করেছেন।কতোই না কষ্ট দিয়েছে আমাকে?তিনি বাবা না বাবা নামের কলঙ্ক।এমন বাবা চাই না আমার।আমি তো সেই বাবাকে চাই যে বাবা ছোট বেলায় ঘাড়ে করে মাঠ দিয়ে ঘুরে বেড়ায়,আমি তো সেই বাবা চাই যে বাবা ছোট ছোট আঙ্গুল ধোরে মেলায় ঘুরতে নিয়ে যায়। নানান রকমের খেলনা কিনে দেয়।আমি তো সেই বাবা চাই যে বাবাকে সবার তার বটবৃক্ষ বলে।আমি তো সেই বাবা চাই যে বাবা তার মেয়র প্রতি হওয়া অন্যায় দেখতে পারে না।আমি তো সেই বাবা চাই যে বাবা তার মেয়ের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে ও দ্বিধাবোধ করে না কিন্তু আমার বাবা তো সেই বাবা না তাহলে?তাহলে কেন এই লোকটাকে আমি ভালোবাসব,কেন ভালোবেসে বাবা বলে ডাকব।
কিন্তু না নিরুপমা এই কথা গুলো বলতে পারল না।কেননা যেখানে তার শ্বশুর মশাই তাকে কথা বলতে বারণ করেছে সেখানে কথা বলাটা বেয়াদবি।
“আপনি কিছু মনে করবেন না ভাই।মেয়েটা হয়তো কষ্টে বলে ফেলেছে।
” না ভাই আমি কিছু মনে করি নাই এগুলা আমার প্রাপ্য ছিল…কথাটি বলে নয়ন রাহমান সকলের অগোচরেই চোখের অশ্রু বিসর্জন দিলেন।
লতিফকে নিয়ে নিরুপমা তার রুমে যায়।
“তুই এখানে বস আমি একটু পরেই আসছি।
উৎস বসে বই পড়ছিল লতিফকে দেখে বই রেখে কুশল বিনিময় করে।
“দুলাভাই একটা কথা বলি
” হ্যা বলো
“আমার আপাকে কি খুব খারাপ?
” কেন খারাপ হবে কেন?কেউ কিছু বলেছে?
“উম তা ঠিক নয় তবে আমার আপুকে তাহলে কেউ ভালোবাসে না কেন?
কথাটা শুনেই উৎসের বুকের মধ্যে কেমন ছ্যাঁত করে উঠে।কিন্তু কেন এমন অনুভূতি হলো উৎস ঠিক ঠাউর করতে পারল না।
” কেউ ভালোবাসে না মানে?…..যথাসম্ভব হাসি রেখে উৎস পালটা প্রশ্ন করলো
“ছোট বেলায় আপুর মা মারা যাওয়ার পর তো আমার মাকে বাবা বিয়ে করে।কিন্তু মাতো আপুরে দেখতে পারে না।আমারে আর ছোট আপুরে মা শিখাইতো যে আপু আমাদের সৎ বোন ওরে যেন আমরা ভালো না বাসি।ছোট আপু মায়ের কথামতো চললে ও আমি কেন জানি পারতাম না।দুনিয়ায় বোধহয় আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে আপুকে ভালোবাসি।মায়ের কান ফোড়ায় বাবা ও আপুর প্রতি বিতৃষ্ণা হয়ে উঠলো।জানো আপুনা অনেক কষ্টে বড় হয়েছে।আপু অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিল।ইন্টার ইমিডিয়েটে এ+ পাইছে।কিন্ত মা আর আপুকে পড়তে দেয় নাই।আপু এসএসসি এর সময় থেকে প্রাইভেট পড়াইতো।পড়ানোর প্রতিটি টাকা মায়ের হাতে তুলে দেওয়া লাগত।যে মাসে দেড়ি হইতো সেই মাসে মা আপুরে অনেক মারত।

লতিফের মুখে নিরুপমার কষ্টের কথা শুনে কেন জানি উৎসের খুব কষ্ট হচ্ছে খারাপ লাগছে।একটা মানুষ এতোটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে তাকে দেখলে বোঝাই যায় না।
” আর তুমি ও তো আপুকে ভালোবাসো না দুলাভাই….. লতিফের কথা শুনে সহসা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে উৎস।লতিফ কি করে জানল সে নিরুপমাকে ভালোবাসে না?
“তোমাকে কে বলেছে নিরুপমা?
” না আপু আমাকে কিছুই বলে নি।আমি আপুর মুখ দেখলে বুঝি ও কেমন আছে।তোমার যে বিয়েতে মত ছিল না আমরা সবাই জানি।আর আপুর মুখে যে বিষাদ আমি দেখতে পাই তাতে পরিষ্কার জানান দেয় আপু এখনো অনেক কষ্টে আছে।
একটা টেনে পড়ুয়া ছেলে নিরুপমার হাসিমুখের আড়ালের বিষাদ দেখতে পেল অথচ সে দেখতে পেল না?উৎসের খুব রাগ হচ্ছে।কিন্তু সে তো কখনো নিরুপমার দিকে ফিরে ও তাকাইনি ভালো করে পর্যবেক্ষণ ও করে নি তাহলে কি করে সে নিরুপমার বিষাদ ভরা মুখ দেখতে পাবে?ভাবনা গুলো মাথায় আসতেই চোখ যায় অরিত্রার ছবির দিকের। নিমিষেই সব ভাবনা উলট পালট হয়ে যায়।কি ভাবছে সে?সে অরিত্রা ছাড়া আর কারোর কথা ভাবতে পারবে না।কিছুতেই না।যা খুশি ঘটে যাক সে নিরুপমার প্রতি দুর্বল হবে না।কিছুতেই না।উৎস লতিফকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বের গেল।এখন তার একটু শান্তির প্রয়োজন এজন্য ছাদে কাটাবে কিচ্ছুক্ষন।নিরুপমা ফালুদা নিয়ে আসে লতিফ আর ঝুমুরের জন্য।পারুল বেগম এর সামনে সে তার ভাইবোনকে ভালোবাসা দেখাইতে পারবে না।সে শুধু ভাইবোন দুটোকে খাওয়াবে আর ওদের তৃপ্তি সহকারে খাওয়া দেখবে।রুমে গিয়ে দেখে উৎস নেই…
“তোর দুলাভাই কই গেল?
” কি জানি মাত্রই বের হলো।
“অহ। আচ্ছা যা ঝুমুরকে ডেকে নিয়ে আয় আমি গিয়ে তোর দুলাভাইকে খুজে আনি।
” ঠিক আছে।

নিরুপমা যখন সারাবাড়ি খুজে পেল না।তখন ছাদে গেল।সে জানে উৎস যদি বাসা না থাকে তাহলে তাকে ছাদে পাওয়া যাবে।তার অনুমান ও সঠিক হলো উৎস ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে পকেটে দুই হাত পুড়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিরুপমা পিছন থেকে ডাক দেয়
“উৎস?
” কি চাও….উৎস না ঘুরেই উত্তর দেয়
“রুমে চলেন।সবাই এসেছে এভাবে আপনার এখানে থাকা ভালো দেখায় না
” তুমি যাও তো জ্ঞান দিতে এসো না
“আমি তো..
” চুপ একদম চুপ।তুমি এতো বেহায়া কেন বলেতো?সারাক্ষণ পিছু পিছু প্যান প্যান করতেই থাকো।যে কাজের জন্য এসেছো সেটা করো না।মুসকানের জন্য এসেছো ওকে নিয়েই থাকো।তোমার চালাকি আমি বুঝি না ভাবছো?তোমার সৎ মায়ের মতো তুমিও একি কাজ করবা।আমার ভালোবাসা পাওয়ার পর আমার মুসকানকে ভুলে যাবা।ছুঁড়ে ফেলে দিবা।হয়তো তোমার সৎ মায়ের মতো আমার ও ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলবা এরপর আর আমি ওকে দেখতে পারব না।আর তুমি নিজের স্বার্থ ছাড়া তো আর আমাকে বিয়ে করো নি আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসোনি তাই না?।স্বার্থ হাসিল হলেই আমার মেয়েকে ছুঁড়ে ফেলতে ও তোমার হাত কাঁপবে না।হাজার হোক সৎ মা তো সৎ মাই হয় তাই না?

নিরুপমা এবার শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে উৎসকে থাপ্পড় মারে।রাগে শরীর কাঁপছে তার।চোখ দিয়ে আগুনের শিখা বের হচ্ছে।যেন দাবানলের আগুন উপচে পড়ছে।উৎস গালে হাত নিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথে তার চোখে বিস্ময়ের সর্বশেষ পর্যায় দেখা দেখা যাচ্ছে।সে ভাবতে পারছে না নিরুপমা তাকে থাপ্পড় মারলো?

চলবে!
আর কতোবার বলব আমি নাইস নেক্সট এগুলা না লিখে একটু কষ্ট করে বড় করে কমেন্ট করেন। মনে শান্তি লাগে।যারা বলেন নিরুপমা নরম দেখেন দেখনে আপনাদের নিরুপমার কাহিনী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here