গল্পটা_আমারই পর্ব : ৪

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ৪
(সুরমা)

অর্ণব কখনও আমায় নিজ থেকে কল করতো না। কিন্তু আমি কল করলে বেশ কিছু সময় আমার সাথে কথা বলতো। অর্ণব আমার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছিল। কিছুতেই মনকে সামলাতে পারতাম না। ওকে পাবনা, তবুও মন ওকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতো।

আমি ধীরে ধীরে ওর ভালোলাগা খারাপ লাগাটা জেনে নিচ্ছিলাম। ওর পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে গড়তে লাগলাম। যা ওর পছন্দ না সেগুলো আমিও নিজের থেকে আলাদা করতে লাগলাম। এমনকি এখন আমি যেখানেই যাই ছবি তোলি না। তোলার কথা মনেই থাকে না।

আমার চলাফেরা বদলাতে লাগলো। অন্বী আপুও কিছুটা আন্দাজ করেছিল। একদিন আমি অর্ণবের সাথে দেখা করতে গেলাম। ওর সাথে দেখাও হয়েছিল। কথাও হয়েছিল। বেশ কিছু সময় দুজন একসাথে ছিলাম। সেই মুহূর্ত গুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ব্রাইট মোমেন্ট। হয়তো লাখ টাকা খরচ করতে পারবো বাট এমন একটা মুহূর্ত আমি কখনও পাবো না জানি। ইচ্ছে করছিল কথার ফাঁকে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করি,,,,

“অর্ণব আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?” বাট সাহস হলো না।

অর্ণবের সাথে দেখা হলে আমার মুড বিন্দাস থাকে। সেদিন অর্ণবের সাথে দেখা করে রুমে এসে দেখি তন্বী আপু আমার বেডের উপর শুয়ে আছে। তন্বী আপুকে আমার বেডে দেখে বেশ অবাক হলাম।

কারণ, এই রুমে আসার পর থেকে কোনদিন তন্বী আপুকে আমার বেডে আসতে দেখি নি। আজই ফাস্ট।
আমি আমার পাসটা লকারে রাখতে রাখতে বললাম,,,,

-আপু, তুমি হঠাৎ আমার বেডে কি মনে করে?? আমার কথা শোনেই তন্বী আপু উঠে বসে। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা আমাকেই প্রশ্ন করে,,,,,
-তুই কোথায় গিয়েছিলি? আমি বেশ অবাক হলাম। এর আগে কখনও এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হই নি। আমি চিন্তা করছিলাম। কোনটা বলবো। যা সত্যি তা নাকি মিথ্যা। তন্বী আপু বিষয়টা কিভাবে নিবে?

অর্ণবের সাথে কখন আমি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম নিজেও জানি না। অর্ণবের সাথে আমার যোগাযোগের কথা তন্বী আপুকে বলাও হয়নি। আমায় মাথায় আসে নি। তন্বী আপুর বিষয়টা আমার মাথায় ছিল না।

কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই তন্বী আপু আবার বলে,,,
– তুই অর্ণবের সাথে দেখা করতে গেছিলি তাই না?? এবার আমি বেশ অবাক হলাম। তন্বী আপু কেমনে জানলো? আমি বিছানায় বসতে বসতে বললাম,,,

-ইয়ে মানে, তুমি কিভাবে জানলে? এবারও তন্বী আপু আমার প্রশ্নের জবাব দিল না। সে আবার আমাকে এক মারাত্মক প্রশ্ন করে বসলো। যার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

-তুই অর্ণবকে ভালোবাসিস? তন্বী আপুর কথা শোনে আমি ভ্যাবলা হয়ে গেলাম। তন্বী আপু কিভাবে জানলো? আমি তো এই কথাটা কাউকে বলিনি। তাহলে?? তন্বী আপু আমার থেকে উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই আমার কথা বলে,,,
-তুই এখন ভাবছিস আমি কিভাবে জানলাম তুই অর্ণবকে ভালোবাসিস?
– ই,য়ে মা,নে

-প্রত্যেকটা মেয়ের মধ্যেই সিক্সসেন্সের একটা ব্যাপার আছে। একটা মেয়ে কাউলে দেখলেই তার মতিগতি ৫০% উপলব্ধি করতে পারে। আমিও সেভাবে উপলব্ধি করেছি। তন্বী আপুর কথা শোনে আমার কান্না আসছিল। ইচ্ছে করছিল আমি কেঁদেই দিই। আমার গলা ধরে আসছিল। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,,,,

-কিন্তু আপু অর্ণব? সেতো আমাকে ভালোবাসে না। আমি ভালবাসলেই কি আর না বাসলেই কি। ওর তো নিশ্চয় গার্লফ্রেন্ড আছে। আমার কথা শোনে আপু হো হো করে হেসে দিলো। আমি ভ্যাবলার মতো আপুর দিকে তাকালাম। আমার দু চোখে হাজার প্রশ্ন। আমার কথায় আপু এভাবে হাসলো কেন? কিন্তু আপু আমার মুখ দেখে নিজের হাসি থামানোর চেষ্টা করছিল। বাট পারছিল না। তাই তন্বী আপু আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করলো। যেন আমি এখন কিছু না বলি। আপু সব বুঝিয়ে বলবে।

বেশকিছুক্ষণ আপু হাসলো। তারপর হাসি থামিয়ে শান্ত হয়ে আমাকে বললো,,,,,

-অর্ণবের গার্লফ্রেন্ড আছে। তন্বী আপুর কথাটা আমাকে কুচিকুচি করে দিলো। টপটপ করে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসলো। বুকের ভেতরে হার্ডবিটটা টিপটিপ করতে লাগলো। মনে হচ্ছিল এখনি হার্ডটা ব্লক হয়ে যাবে। আমি এটার্ক করবো। আজকেই হয়তো আমার জীবনের শেষ দিন। শেষ মুহূর্ত। আমি কিছু না বলে বসা থেকে উঠতে নিলে তন্বী আপু আমার হাত ধরে ফেলে। আমি আপুর দিকে তাকালে আপু বলে,,,,

-সবটা শোনবি না?? আমি একরাশ কষ্ট বুকে নিয়ে বললাম,,,,,

-কি দরকার কষ্ট পাবার। আমি সইতে পারবো না।
-তুই যেখানে বলছিস কষ্ট সেটা সুখও তো হতে পারে? আমি কিছু বললাম না। কিন্তু চোখ দিয়ে এবার সত্যি সত্যি পানি পড়তে লাগলো। আমি হাজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। পানিটা কিছুতেই বাঁধা মানলো না। বৃষ্টি হয়ে সে ঝরতে লাগলো। জানি না আজ কতো বছর পর আমি কাঁদলাম। এর আগে কখন কেন কেঁদেছিলাম মনে নেই। আমি আর সহ্য করতে না পেরে তন্বী আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। কাঁদছি তো কাঁদছিই। তন্বী আপু আমাকে কিছু বলছে। আমি শোনছি না। আমার কান্নার গতি যখন প্রায় কমে আসে তখন আপু আমার কানের কাছে মুখ এনে বলে,,,,
-অর্ণবের দুবছর আগেই ব্রেকআপ হয়েছে। তন্বী আপুর কথা শুনে আমি ঝট করে আপুকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসি। তারপর চোখ মুছতে মুছতে বলি,,,,
-মানে??

-ওর সিলেশন ছিল আগে। অর্ণব মেয়েটাকে ভালোবাসতো খুব। দুবছর আগে ব্রেকআপ করেছে। আমি এবার বেশ অবাক হলাম।
-অর্ণব ব্রেকআপ করলো কেন??

-অর্ণব করেনি। মেয়েটা নিজেই ব্রেকআপ করেছে। এবার আমি চারশো চল্লিশ বোল্টের শক খেলাম। অর্ণবের মতো একটা ছেলের সাথে কেমনে ব্রেকআপ করতে পারে??? আমি বললাম,,,,,,

-কেন আপু? কি সমস্যা ছিল??
-মেয়েটার মনে হতো অর্ণব আনরোমান্টিক। ক্ষেত। সময় দিতে পারে না। অর্ণব তার ভালোবাসার যোগ্য না। অর্ণব দুবার রিলেশনে গিয়েছিল। দুবার একি কারণে ব্রেকআপ হয়। তারপর আর রিলেশন করে নি। বেচারা দুই জায়গা থেকেই কষ্ট পেয়েছিল।

আপুর কথা শোনে আমার কষ্ট লাগছিল এই ভেবে যে অর্ণব আঘাত পেয়েছিল। আবার সুখও লাগছিল এটা ভেবে অর্ণবকে পাবার একটা চান্স আছে। ওরা আমার উপকার করেছে। আমি যখন এসব চিন্তা করছি তখন তন্বী আপু আমাকে বললো,,,

-তোর কি মনে হয়? তুই অর্ণবকে ভালোবাসতে পারবি??
-পারবো। আমি উনাকে খুব ভালোবাসি আপু। এই কয়দিনে আমি উনাকে নিয়ে কি পরিমাণ স্বপ্ন দেখেছি বলে বুঝাতে পারবো না। কিন্তু, উনি? উনিতো আমাকে ভালোবাসে না আপু।
-তোকে কে বললো, ওও তোকে ভালবাসে না?
-আমি বুঝতে পারিতো।

-তুমি কচু বুঝো। অর্ণবও তোর প্রেমে পড়েছে। ওও আমাকে সব বলেছে। বাট তুই যদি রিজেক্ট করিস তাই বেচারা বলতে পারছে না। তন্বী আপুর কথা শোনে আমি বাক রুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। অর্ণব, অর্ণব আমাকে ভালোবাসে? নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছিল।

আমার খুশির সীমা ছিল না। খুশিতেও আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কতটা ভাগ্যবতী হলে অর্ণবের মতো কারো ভালোবাসা পাওয়া যায়। এবার আমার চোখের পানি কে দেখে। আমি ভ্যাউ ভ্যাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আমার এতো এতো খুশি লাগছিল। যার ফলে চোখের পানিটা কিছুতেই আটকাতে পারছিলাম না। এই প্রথম নিজেকে দেখে আমি বুঝতে পারলাম,,

” সুখেরও কান্না হয়। মানুষ যেমন দুঃখে কাঁদে তেমনি অধিক সুখেও কাঁদে। আমার এই কান্নার রং নীল, ভালোবাসার অর্ণব।”

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here