চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব : ১৫

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব : ১৫

🍂🍂🍂

চারদিকে খুশির ছড়াছড়ি। ছোট থেকে বড় কারো ঠোঁট থেকে হাসি যেনো এক পলকের জন্যও সরছেই না। অন্যদিকে এক কোণে মন খারাপ করে বসে আছে নুর। ঢাকায় থাকলে তো বন্ধু বান্ধবরা আড্ডা দিতো, বাকি সময়টুকু অরণ্যের সাথে কথা বলতেই কেটে যেতো। কিন্তু এখন যেনো সময় কাটছেই না। ২ দিন হলো এখানে এসেছে। আজ সকাল পর্যন্ত দিব্যি ঘুরলেও এখন কেমন বিরক্ত লাগছে। ছেলেরা সব বাজারে গেছে, মেয়েরা হাতে হাতে কাজ করছে। উপমা আর নুরকে কেউ কাজ করতেই দিচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে উপমাও ঘুমাতে চলে গেছে। সেও গিয়েছিলো কিন্তু ঘুম না আসায় উঠানের এক কোন চেয়ার পেতে বসেছে। ফোন হাতে নিয়ে বেশ কয়েকবার অরণ্যকে কল করলেও ধরলো না সে। লোকটা ইদানিং কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। কথা বলে না আগের মতো, সারাদিন ব্যস্ত ই থাকে। নুর বন্ধুমহলের গ্রুপে কল দিতে গিয়েও থেমে গেলো। গতবার গ্রামে যাওয়ায় দেখেছিলো রিদিতা দাদী বাড়িতে গেলে ওর সাথে ঠিক মতো কথা বলা যায় না। রুপা তো এমনিও চুপচাপ। শুভ্রতাকে কল দিলে জীবনেও সাথে সাথে পাওয়া যায় না। বিশবার কল দিলে সে একবার রিসিভ করে সালাম দিয়েই সাথে সাথে এক ধমক দিবে। নুর বিড়বিড় করে বললো,
অন্তত তিলো তো কল ধরতেই পারে।
.
চোখ বড় বড় করে, মুখ হা করে বসে আছে নুর। তার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এখন। আজ দ্বিতীয়বারের মতো শুভ্রতা প্রথম রিংয়েই কল রিসিভ করেছে, এমন কি একটা ঝাড়িও দেয়নি। নুর অবাক স্বরে বললো,
শুভ্রতা? সত্যিই এটা তুই? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।

ওপাশ থেকে শুভ্রতার শীতল কণ্ঠ,
ভিডিও কল এ আয়।

নুর দ্রুত ক্যামেরা অন করলো। শুভ্রতাও তাই করলো। শুভ্রতাকে দেখতেই নুরের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো। চিন্তিত কণ্ঠে বললো,
এই তুই কি অসুস্থ? এই অবস্থা কেনো তোর?

শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ফিক করে হেসে উঠে বললো,
কি অবস্থা?
~তুই নিজের খেয়াল রাখছিস না? মুখ এমন মলিন দেখাচ্ছে কেনো? ঠিক মতো খাস না নাকি?

শুভ্রতার হাসি ঠোঁট থেকে গেলো না। বললো,
তোর কপাল বেশ ভালো বুঝলি।
~কেনো?
~মিনিট দশেক আগেই মাথা ব্যাথায় মেজাজ খারাপ ছিলো। কফিতে দু চুমুক দিতেই তোর কল।

শুভ্রতা ভুবন ভুলানো এক হাসি দিলো। হাত উঠিয়ে কফি মগটা দেখিয়ে বললো,
কফি খাবি?

নুর নাক কুচকালো। বললো,
ওই তিতাপানি তুইই খা। তোর খাওয়া দেখলেই আমার গলা টা যেনো তেতো হয়ে যায়। তুই খাস কি করে এসব!
~তুই তো কখনো খাস নি। তেতো নাকি মিষ্টি জানিস কি করে?
~রিদি বলেছে।
~ও খেয়েছিলো?

নুর মাথা ঝাঁকালো। বললো,
ও আমাকে বলেছে এটা অনেক তেতো। ভয়ে আমি আর কখনও খাই নি।
~ও বলাতেই তেতো স্বাদ পেয়ে গেলি?
~অবশ্যই। এই যে তোর মন খারাপ! আমি কিন্তু এটাও বুঝতে পারছি।
~আচ্ছা! কি করে বুঝলি?

নুর একটু ভাব নিয়ে বললো,
আমরা ৬ বান্ধবী, ৬ দেহ হলেও এক প্রাণ। একে অপরের কষ্ট বুঝবো না! আমরা তো একই স্বভাবের।

শুভ্রতা দ্বিমত পোষণ করতেই নুর কপাল কুচকালো। চোখ দুটো দেখলে যে কেউ বুঝবে শুভ্রতার উত্তর তার পছন্দ হলো না।

~আমরা ৬ বান্ধবী হলেও ছয়জন আলাদা চরিত্র। আমাদের পছন্দ, চিন্তা ভাবনা, আচার-আচরণ সবই ভিন্ন।
~আমার কেনো যেনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। আমরা কি সত্যিই এতটা আলাদা?
~আকাশ-পাতাল।

ওদের কথার মাঝেই কল জয়েন করলো রিদিতা। রিদিতাকে দেখতেই নুর ফিক করে হেসে দিলো। শুভ্রতা বিদ্রুপের কণ্ঠে বললো,
কার গাছের আম চুরি করতে গিয়ে ডান্ডার বারি খেয়ে এলি যে মাথায় বরফ দেওয়া লাগছে?

শুভ্রতার কথায় হা হা করে হাসতে শুরু করলো নুর। রিদিতা গাল ফুলিয়ে বললো,
ফাইজলামি করবি না বাল। মেজাজ এমনেই এভারেস্ট এর উচ্চতা সমান গরম হয়ে আছে।

~বারিটা কি খুব জোড়ে পড়েছে নাকি? (শুভ্রতা)

~রাখ তোর খোঁচাখুচি! আমার দুঃখের কাহিনী শুন।
~কিরে? তোর দাদী কি পটল তুলেছে নাকি? চোখে পানি তো দূরে থাক উল্টা মাথায় বরফ দিয়ে বসে আছিস। কেমন নাতিন তুই! সম্পত্তিতে ভাগ দেয় নি বুঝি? (নুর)

এবার শুভ্রতা সশব্দে হেসে উঠলো। রিদিতা চিল্লিয়ে বললো,
আমার কথা শুনবি? নাহলে আমি গেলাম।
~এই ঝাড়বাতি একদম চুপ। সম্পত্তি নিয়ে কোনো কথা বলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিস না। ওটা আমরা পরে দিবো।

শুভ্রতার কথায় নুর হেসে উঠে বললো,
একদম! রিদি শুরু কর তোর হাসির মানে দুঃখের কাহিনী।

নুর বলতে না বলতেই রিদিতা বলতে শুরু করলো,
গ্রামে এসেছি পর থেকে যার সাথেই দেখা হচ্ছে সেই বলছে “আয় হায়! এটা মাদবরের নাতিন না? ও মা!!! কতো পিচ্চিকালে দেখছিলাম। এই! আমাকে চিনছ?”

নুর কপাল কুঁচকে বললো,
এটা তো স্বাভাবিক। এতে এতো রাগের কি আছে?

রিদিতা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,
রাগের কি আছে! পুরোটা শুন তবেই বুঝবি।
~হ্যাঁ, তো বল! (শুভ্রতা)
~তারপরই বলতে শুরু করে “মেয়ের তো বিয়ের বয়স হচ্ছে, বিয়ে দিচ্ছেন না কেনো? আমার কাছে ভালো পাত্র আছে”। ঢাকায় তো পটাইতে গেলে একটা সিঙ্গেল পোলাও পাইনা। আর গ্রামে আসছি পর থেকেই বিয়ের প্রস্তাব। ওনারা এতো ছেলে পায় কই থেকে শুনি! আমি ডেম সিওর এরা ছেলে পাঁচার করে। নাইলে এত বিয়ার বয়সী ছেলে আসে কোত্থেকে! মেয়ে দেখলেই বলে বিয়ে দেন। গ্রামে কি মেয়ে নাই?
~তো এতে সমস্যা কি? এতো এতো ছেলের মধ্যে একটাকে ধরে নিয়ে বিয়ে করে ফেল। আমাদেরও ভাগ্না-ভাগ্নির মুখ দেখতে মন চায় তো নাকি! (নুর)
~এই! ভুলেও আমার বাপের মতো কথা বলবি না। আমি মাথায় ওনার কারণেই বরফ দিয়ে বসে আছি। (রিদিতা)
~ওমা! আংকেল আবার কি করলো? (নুর)
~কি করেনি সেটা বল। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মাত্র বাথরুম থেকে বের হয়েছি আর দেখি বাপ আমার ওয়েট করছে আমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য। কোত্থেকে নাকি কোন ঘটকে বিয়ের প্রস্তাব দিছে। আমার দাদী তো বেজায় খুশি। বাড়ির বুড়ো থেকে শুরু করে লেদা যা আছে সবাই চায় আমি যেনো ছেলের সাথে দেখা করি।
~তারপর কি করলি? দেখা করেছিস? (শুভ্রতা)
~এহ! আমারে কি পাগলে পাইছে? আব্বাজানের কথায় এমন চিল্লানি দিছি যে বাবা আমার সেই যে কাকারে নিয়ে বাজারের জন্য বের হইছে এখনও বাড়িই আসে নাই। দাদিও ঘরে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। এখন মা আমাকে কথা শুনাচ্ছে যে আমার ভয়ে নাকি তারা বাড়ি আসছে না। আর তার শাশুড়ি নাকি আমার ভয়ে আরেকটু হলেই মিনি হার্ট এ্যাটাক করতো। কি এক ঝামেলা বল তো!

রিদিতার কথায় পেট চেপে খিল খিল করে হেসে উঠলো শুভ্রতা আর নুর। হাসি যেনো থামছেই না। হাসতে হাসতে নুরের ফর্সা মুখখানাও লাল বর্ণ ধারণ করেছে ইতিমধ্যে। অন্যদিকে রিদিতা গাল ফুলিয়ে বান্ধবীদের হাসি দেখে যাচ্ছে।
__________________________________

নুর কল কাটতেই দেখলো উপমা ঘুম থেকে উঠে ওর দিকেই আসছে। উপমা ঘুম ঘুম চোখে হাঁটতে হাঁটতে হটাৎই উষ্টা খেয়ে নুরের ওপর দিয়ে পড়লো। আর নুর টাল সামলাতে না পেরে চেয়ার থেকে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলো। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো দুজনেই। ফুফাতো বোন ফিহা আর জোহা এসে দ্রুত ওদের উঠালো। সরবই কারো হাসির শব্দে ঘুরে দেখলো উমান ওদের দিকে চেয়েই হাসতে হাসতে আসছে। নুর বেশ বিরক্ত হলো। গেম খেলতে গেলে এমনি সময় দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না। আর যেই না ওরা পড়ে গেলো ওমনিই এই লোক লজ্জা দিতে হাজির! নুর আর উপমার এবার ব্যথার চেয়ে রাগই বেশি অনুভব হলো। নুর বিরক্ত মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,
উমান ভাই প্রতিবার এমন সময়ই কই থেকে প্রকট হয় রে বইন! যখনই ইজ্জত এর প্লাস্টিক হয় তখনই দেখি এই বেটায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে হাসতে হাজির হয়। জাস্ট বিরক্তিকর।
~মেজাজ এমন খারাপ লাগছে না! মন চাইছে ধাক্কা মেরে পাশের পুকুরে ফেলে দেই।

উপমার কথাটা বলতেই উমান নিজেই অসাবধানতার বশে পা পিছলে পাশের পুকুরে ধপাস করে পড়লো। নুর আর উপমার খুশি তো এবার আকাশ ছুঁই ছুঁই। যাক! লজ্জায় এখন আর এই লোক তাদের পড়ে যাওয়া নিয়ে সারাদিন ক্ষেপাতে আসবে না। মুহূর্তের মধ্যেই বাড়ির সকলে এক সাথে হেসে উঠলো। আর অন্যদিকে উমান করুন চোখে সকলের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো। এভাবে পড়ায় যে তার সখের ফোনটা নষ্ট হয়ে গেলো এই দুঃখেই তার এবার হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।

🍂🍂🍂

আজ উমানের বিয়ে। সারা বাড়িতে তোড়জোড় চলছে বেশ ভালো ভাবেই। ভাইয়ের বিয়েতে নুর খুশি হলেও মনটা থেকে থেকেই বিষন্নতায় ভুগছে। গ্রামে আসার পর থেকে অরণ্যের সাথে ঠিক মতো কথা হয় না নুরের। দুদিন যাবত কল দিলেও ধরছে না। অনেকগুলো কল আর মেসেজ দিলেও তা সীন পর্যন্ত করেনি অরণ্য। অরণ্যকে প্রথম প্রথম ব্যস্ত মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে অরণ্য তাকে ইগনোর করছে। কিন্তু কেনো? অরণ্য কি তাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না? নাকি সে সম্পূর্ণটাই মোহ ছিল? পরশু ঢাকা ফিরতেই সে সবার আগে অরণ্যের সাথে দেখা করবে। কি এত ব্যস্ত যে তার সাথে কথা বলতে দুমিনিটও সময় পাচ্ছে না?
___________________________________

নিকষ কালো অন্ধকারে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে নুর। এ সময় কেউ ছাদে আসবে না সে জানে। গ্রামের মানুষের রাতের বেলায় এক প্রকার ছাদভীতি আছে। তাদের মতে রাতের বেলা ছাদে জ্বীন ভুত ঘুরে বেড়ায়। নুর ভুত বলতে ভয় পেলেও অজানা কারণেই আজ ভয় করছে না। সে তো অনুভূতিহীন ভাবে আকাশ দেখতে ব্যস্ত। চোখ থেকে পানি পড়ছে অঝোর ধারায়। সে কেনো কাদঁছে তা ঠিক ঠাহর করতে পারছে না। বন্ধুত্ত্ব হারানোর কষ্টে নাকি ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর কষ্টে? মাথা নিচু করে উঠানের দিকে একবার তাকালো সে। পরিবারের বড়রা সবাই সেখানে বসে গল্প করছে। মায়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখখানার দিকে দীর্ঘক্ষণ চেয়ে রইলো নুর। কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই ঘুরে দাড়ালো নুর। উপমাকে দেখতেই এক সেকেন্ডও ব্যয় না করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। হাউমাউ করে কাদতে লাগলো। এতটা কষ্ট সে কখনোই অনুভব করেনি। সৃষ্টিকর্তা যেনো তার হৃদয়টাকে বেশ নির্দয়ভাবে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো মুহূর্তেই। নুরকে এভাবে কান্না করতে দেখে অনেকটাই ঘাবড়ে গেলো উপমা। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। নুরের মাথায় হাত বুলিয়ে আতঙ্কিত কণ্ঠে বললো,
নুর? এই নুর? কি হয়েছে তোর? এভাবে কাদছিস কেনো?

নুর কথা বলছে না। শব্দ করে কেঁদেই চলেছে। কি এক ঝামেলা? এখন যদি কেউ ছাদে এসে ওকে এই অবস্থায় দেখে তাহলে বাড়িতে কি জবাব দিবে সে? নুরও কিছুই বলছে না। নুরের কান্নায় উপমার ভয়ে হাত পা কাপছে। কি এমন হলো যে এভাবে কাদছে নুর? ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দরজার দিকে তাকালো সে। নাহ! কাজিনরা কেউ আসেনি উপরে। এবার উঠানের দিকে চেয়ে দেখলো বড়রা কেউ আবার ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়নি তো? সকলকে উঠানে আগের মতই বসে থাকতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল সে। ভয়ে গলাটা যেনো শুকিয়ে আসছে। নুরও কোনো রূপ জবাব দিচ্ছে না। কি করবে সে? জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আরেকবার নুরকে ডাকলো,
~এই ঝাড়বাতি? ছাড় আমাকে, দেখি? কি হয়েছে কি? কাদছিস কেনো? দেখ, না বললে কিন্তু আমি এখনই শুভিকে কল করে জানাবো। বোন আমার! শান্ত হ প্লীজ। কি হয়েছে বল আমাকে।

নুর এবার ছেড়ে দাড়ালো। সে যেনো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তিটাও হারিয়ে ফেলছে। নাহ! আর দাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। নুর ছাদের রেলিং ঘেসে ধপ করে বসে পড়লো। উপমাও নুরের সামনে বসলো। এক হাত নুরের কাধে আর এক হাত নুরের মাথায় রেখে চিন্তিত কণ্ঠে বললো,
দোস্ত? কি হয়েছে? কাদছিস কেনো?

কান্নার ফলে নুর কথা বলতে পারছে না। কথারা সব যেনো গলায় আটকে আছে। নুর বহু কষ্টে বললো,
ফ্ ফোন…

উপমা দ্রুত নুরের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। ওদের ছয় বান্ধবীর একে অপরের ফোনের পাসওয়ার্ড জানায় ফোন আনলক করতেও কষ্ট হলো না। ফোন আনলক করতেই ভেসে উঠলো দুজন ছেলে মেয়ের ছবি। উপমার চোখদুটো বিশ্বাস করতে চাইলো না। তার মনটাও যেনো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললো,
এটা ভ্রম, সে ভুল দেখছে। এটা মিথ্যে। তার বান্ধবী এমন করতেই পারে না।

সে বার বার ছবিগুলো দেখতে লাগলো। সে মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। যদি বুঝা যায় এগুলো এডিটেড কি না। কিন্তু না এগুলো আসল ছবি বলেই মনে হলো তার কাছে। তারপরও সে নুরের কাছে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
আমার বিশ্বাস হচ্ছে না এটা শুভ্রতা। আমরাতো ওকে এত বছর ধরে চিনি। আমাদের সম্পর্ক কি এতটাই ঠুনকো? বিশ্বাস রাখ নুর। কোনো কিছু সম্পর্কে পুরোটা না জেনেই রিয়েক্ট করা উচিত না। আমরা ঢাকায় গিয়ে ওদের সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করবো।

নুর আচমকাই উপমাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাড়ালো। ধাক্কার ফলে উপমা পরে গিয়ে কনুই তে বেশ ব্যাথাও পেলো কিন্তু এই ব্যথাটাকে বন্ধুত্ত্ব শেষ হওয়ার ভয়ের থেকেও বেশি গভীর মনে হলো না তার। নুর চিৎকার করে বললো,
কি জিজ্ঞেস করবো আমি? কতদিন ধরে তোদের সম্পর্ক, কিভাবে শুরু হলো, কতটুকু এগিয়েছে? এসব জানতে চাইবো আমি? নাকি জিজ্ঞেস করবো আমার সাথেই কেনো এমন গেম খেললো?

~শুভ্রতা কখনো মিথ্যা বলে না নুর। এটা তুইও জানিস, আমিও জানি, বন্ধুমহলের সবাই জানে।

~শুভ্রতাকে প্রশ্ন না করলে সে অনেক কথাই শেয়ার করে না। এটা অবশ্যই কারো অজানা নয়।

উপমা আর প্রতিউত্তর করলো না। বিশ্বাস অসীম না হলে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। তার ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে এভাবে বন্ধুত্বটা শেষ হয়ে যাবে? তবে কি শুভ্রতার সেদিনের কথাটাই সত্যি ছিল? তাদের বন্ধুত্ত্ব কি শেষ তবে?
~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here