#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ১১
🍂🍂🍂
চৈত্রের শেষ সময়। গরমের প্রকোপ তেমন নেই। বসন্তের বাতাসটা শরীর ছুঁয়ে যেতেই নুর চোখ বন্ধ করে নিলো। অনুভব করতে চাইলো প্রকৃতিকে।
~আজ তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে।
পুরুষালি কণ্ঠ কর্ণপাত হতেই নুর চোখ মেলে তাকালো। ডান পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তার ভালোলাগার মানুষটিকে। আদৌ কি অরণ্য তার ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা বুঝে উঠতে পারছে না সে। মোহিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার দিকে। উত্তরে কিছু বলতে চাইলেও পারলো না। চেয়ে রইলো অরণ্যের হাসি মাখা মুখের দিকে। অরণ্য আবার বললো,
ওরা সবাই ছবি তুলছে। চলো তুমি আর আমিও তুলি।
অরণ্যের মতো সেও বাকিদের দিকে তাকালো। শুভ্রতা রিদিতাদের ছবি তুলছে আর চন্দ্র শুভ্রতার পাশে দাড়িয়ে একটানা কথা বলেই চলেছে। চন্দ্রের কথায় শুভ্রতা মাঝে মাঝে রাগী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তো মাঝে মাঝে হাসছে। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মাহতাব চন্দ্র আর শুভ্রতার ছবি তুলছে। নুর ওদের কান্ড দেখে হাসলো। ক্যামেরা অন করে সেও মাহতাবের মতো শুভ্রতাদের বেশ কয়েকটা ছবি তুললো। পাশ থেকে অরণ্য গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
আমি ছবি তোলা বলতে ক্যামেরাম্যান হতে বলিনি।
নুর অরণ্যের দিকে ঘুরে তাকালো। অরণ্যের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।
~লক? (নুর)
~দাও আমি খুলে দিচ্ছি। (অরণ্য)
নুর দিলো না। ফোনটা পেছনে লুকাতেই অরণ্য মুচকি হাসলো। লক বলতেই নুর ফটাফট ফোনটা আনলক করলো। ক্যামেরা অন করে অরণ্যের সাথে কয়েকটা সেলফি নিয়ে অরণ্যের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো,
ছবি গুলো আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করতে ভুলবেন না কিন্তু।
অরণ্য অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। নুর ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
আরো ছবি তুলবেন?
অরণ্য নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে রইলো নুরের দিকে। সে যেনো নির্বাক, কথা বলতেই ভুলে গেছে। নুর গলা উচিয়ে তিলোত্তমাকে ডাকলো। তিলোত্তমা আসতেই ওর হাতে ফোন ধরিয়ে বললো,
আমাদের সুন্দর করে কয়েকটা ছবি তুলে দে না।
~আমি? সুন্দর না হলে? শুভ্রতাকে ডাকছি। ও সুন্দর তুলতে পারে।
নুর বাঁধা দিয়ে বললো,
তুই ই তুলে দে। ও তো রিদিতাদের তুলে দিচ্ছে। ওকে ডাকলেও উপমা ওদের জ্বালায় ঠিক মতো তুলতে পারবে না।
তিলোত্তমা ফোন নিয়ে দাড়ালেই নুর হেসে অরণ্যের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। অরণ্য শুধু নুরকে দেখেই চলেছে। এই প্রথম সে নুরকে এত কথা বলতে দেখলো। নুর ভাবনার মাঝেই অরণ্যকে বললো,
কি হলো? হাসছেন না কেনো? আর এভাবে হা করে চেয়ে আছেন কেনো? ভুত দেখেছেন?
অরণ্য দ্রুত মাথা নাড়ালো। অরণ্যের অভিব্যক্তি দেখে নুর ফিক করে উঠলো। অরণ্য বাঁকা হেসে নুরের কাধে হাত রেখে তিলোত্তমার উদ্দেশ্যে বললো,
এবার তোলো। সুন্দর যেনো হয়।
তিলোত্তমাও বিস্তর হেসে বললো,
জ্বি দুলাভাই।
তিলোত্তমার কথায় নুর যেনো আকাশ থেকে পড়লো। দুলাভাই? এই মেয়ে এতো জলদি অরণ্যকে দুলাভাইও বানিয়ে ফেলেছে! তিলোত্তমাই যেখানে দুলাভাই ডাকছে, ভাগ্যিস সে শুভ্রতাকে ছবি তুলে দিতে বলে নি। নয়তো দেখা যেতো সে ইতিমধ্যে কাজী ডেকে এনে বিয়ে করিয়ে দিয়ে বলছে “শোনো মেয়ে! আগামী এক সপ্তাহ এর মধ্যে খুশির খবর শুনতে চাই। নাহলে তোমাকে আর বাবার বাড়ি আনছি না। যা শশুর বাড়ি যা!!!”। ভাবতেই নুর চেঁচিয়ে উঠে বললো,
আমি মোটেও এক সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা নিবো না। আপনি দূরে যান, যান বলছি!
অরণ্য আর তিলোত্তমা অবাক হয়ে তাকালো। এক সাথেই অবুঝের মতো বললো,
বাচ্চা?
নুর যেনো হুসে এলো। ঝড়ের গতিতে মাথা ঝাঁকালো। জোরপূর্বক হেসে বললো,
নাহ! কিছু না তো। কিসের বাচ্চার কথা বলছিস তোরা?
তিলোত্তমা সন্দিহান চোখে চেয়ে বললো,
তুই ই তো বলছিলি…
~ভ্রম! ভ্র.. ভ্রম হয়েছে হয়তো তোদের। আব.. আমি… আমি শুভ্রতার কাছে যাচ্ছি।
নুর হাঁটার নামে এক প্রকার দৌড় দিলো। ভাবতে লাগলো বান্ধবীদের সাথে থাকতে থাকতে তারও মনে মনে মনকলা খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে যেনো। অন্যদিকে তিলোত্তমা আর অরণ্য একেওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নুরের যাওয়ার দিকে চেয়ে বললো,
আপনার বান্ধবীর কাহিনী কিছু বুঝলেন শালিকা?
তিলোত্তমা ঠোঁট উল্টে বললো,
না দুলাভাই।
এরপর এক সাথে হতাশার শ্বাস ফেলে দুজনেই নুরের পিছু পিছু ছুট লাগালো।
~~~
চলবে~
(আজকের পর্বটা অনেক ছোট জানি। চোখে ঘুম নিয়ে লিখতে বসছি। হয়তো তেমন ভালো হয়নি। রিচেক করা হয়নি আজকে। বানান ভুল হলে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)