চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ১৩

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ১৩

🍂🍂🍂

রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে নুর। হাতে তার একটা বেলী ফুলের মালা। আসার সময় কিনেছে। ফুলগুলো বেশ তাজা আর সুন্দর। নুর নাকের কাছে মালাটা নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। ঘ্রাণটা খুব প্রিয় তার। শুভ্রতার বাড়ির সামনে থেকে রিকশা নিলেও নিজ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই রিকশা থেকে নেমে গেলো নুর। আজ আর রিকশাতে যেতে ইচ্ছে করছে না। আরেকটু রাস্তা আছে, সে হেঁটে হেঁটেই বাড়ি যাবে। বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেলো একজন ডেলিভারিম্যান আর তার মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। নুর গিয়ে দাঁড়াতেই নিতা বললেন,
তোর নাকি পার্সেল এসেছে। কতবার বলেছি কিছু কিনলে আমাকে আগেই বলে রাখবি। আমি একটু তোর মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। এসে দেখি উনি দাড়িয়ে। আমি না আসলে কি এক ঝামেলা হতো বল দেখি।

নুর কপাল কুঁচকে ডেলিভারীম্যানের দিকে তাকালো। মাকে বললো,
সরি মা। তুমি ঘরে যাও, আমি দেখছি।

নিতা যেতেই নুর কোমরে হাত ঠেকিয়ে ডেলিভারিম্যানের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। ধীর স্বরে বললো যেনো মা না শুনতে পায়,
আমি তো কোনো অর্ডারই দেইনি। এটা এলো কোথা থেকে?

ছেলেটাও নুরের মত ফিসফিসিয়ে বললো,
ভাবি আমি জাহিদ। এটা অরণ্য ভাই পাঠিয়েছে আপনার জন্য।

নুর চমকে তাকালো। ভাবি? এই ছেলে দেখি ভাবি ডাকছে। অরণ্যর ভাই আছে জানতো না তো। নুর রাস্তায় নজর বুলিয়ে বললো,
উনি কি এসেছেন?

ছেলেটি মাথা নেড়ে বললো,
ওনার আজকে একটা অপারেশন আছে। তাই আসেনি।

নুর বক্সটা নিয়ে ধন্যবাদ জানাতেই জাহিদ চলে যেতে লাগলো। নুর ডাকতেই ছেলেটি পেছন ঘুরে তাকালো। নুর প্রশ্ন করলো,
আপনি কি অরণ্যর আপন ভাই? আসলে আমি জানতাম না ওনার ভাই আছে।

নুরের প্রশ্নটি করতে যথেষ্ট অস্বস্তি বোধ করলো। তখনই শুভ্রতার একটা কথা মাথায় আসে “কখনো কোনো কিছু জানার হলে ফট করে প্রশ্ন করে বসবি। প্রশ্ন করা উচিত হবে কিনা এসব ভেবে বসে থাকলে আর উত্তর পাবি না তারপর দেখা যাবে উত্তর না জানার দুঃখে সেন্টিখোরের মতো ঘুর ঘুর করছিস”। নুরের প্রশ্নে ছেলেটার গাল কেমন লাল বর্ণ ধারণ করলো। ঠোঁটে দেখা দিলো এক লজ্জমিশ্রিত হাসি। মাথার পেছনে হাত বুলিয়ে বললো,
উনি আমার ভার্সিটির সিনিয়র। আজকে আমার অফ ডে ছিল। ভাই হটাৎ ফোন দিয়ে বললো…
~আপনি বাসায় আসুন তবে। চা, পানি খেয়ে যান।

ছেলেটা হেসে বললো,
আন্টিকে কি বলবেন? ডেলিভারীম্যান বাড়িতে কেনো? আমি সোজা অরণ্য ভাইয়ের বরযাত্রীর সাথেই আসবো।

নুর হাসলো। এই টুকু কথাতেই নুর বুঝতে পারলো ছেলেটা বেশ চঞ্চল প্রকৃতির।
___________________________________

রাতে প্র্যাক্টিক্যাল করতে বসলো নুর। মা চা দিয়ে গেছে মনে পড়তেই দু মিনিটের ব্রেক নিলো। চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো। মনে মনে বললো,
ধুর কচু! চা টাও শান্তিতে খেতে পারি না।
ফোনটা রিসিভ করে কানে রেখেই বিরক্তি মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,
হ্যালো! কে বলছেন?
~আমার নাম্বার তোমার ফোনে সেভ্ড নেই?

নুর দ্রুত কান থেকে ফোন সরালো। স্ক্রিনে জ্বলে থাকা নামটা দেখলো “অরণ্য”। নুর জিহ্বা কেটে বললো,
সরি আমি নাম না দেখেই কল করেছি। রাগ করবেন না।

অরণ্য ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
কি নিয়ে এতো ব্যস্ত শুনি?

নুর প্রশ্ন শুনতেই সামনে থাকা খাতা, কলমের দিকে তাকালো। গাল ফুলিয়ে বললো,
প্রাকটিক্যাল করছিলাম। কাল জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট। আমি ভুলে গিয়েছিলাম।
~কমপ্লিট হয়নি? অনেক লেখা বাকি নাকি? আমার সাহায্য লাগবে?

অরণ্যের অস্থিরতা দেখে নুর নিঃশব্দে হাসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
না! তার প্রয়োজন নেই। একটুখানি লেখা বাকি।

অরণ্য দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
আচ্ছা লেখো তুমি। লেখা শেষ হলে কল দিও।
~আচ্ছা।
.

লেখা শেষ হতেই নুর এক লাফে চেয়ার ছেড়ে দাড়ালো। তার মনে হচ্ছে দীর্ঘ কয়েকবছর পর একটু শান্তিতে শ্বাস নিচ্ছে। লেখার সময় সে অসংখ্যবার পড়ালেখার প্রচলন যে শুরু করেছে তাকে বকা দিয়েছে। নুরের মনে হলো মৃত্যুর পর সে যদি জাহান্নামে যায় তবে তার প্রধান কারণ হবে এই লোককে বকা দেওয়া। নিজের উদ্ভট চিন্তায় নিজেই হাসলো নুর। অরণ্যের মাথায় আসতেই ফোনটা হাতে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো সে। মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখলো তার পড়ায় যেনো ডিস্টার্ব না হয় তাই অরণ্য কোনো মেসেজই দেয়নি। নুর বুঝলো তার প্রেমিক পুরুষটা পড়ালেখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সিরিয়াস। সিরিয়াস বলেই হয়তো লোকটা ডাক্তার হতে পেরেছে। মিনিট খানেকের মধ্যেই অরণ্যের ভিডিও কল এলো।
~লেখা শেষ?
নুর মাথা দুলালো।
~রাতের খাবার খেয়েছো?
নুর আবারো মাথা দুলাতেই অরণ্য ধমকে উঠলো,
কি সমস্যা? কথা বলতে জানো না? শুধু মাথা দোলাচ্ছো কেনো?

অরণ্যের ধমকে নুর কেপে উঠলো। এতক্ষনে চোখে থাকা লজ্জা মুহূর্তেই উবে গিয়ে জমা হলো একরাশ ভয় আর অভিমান। অরণ্য বোধ হয় বুঝলো প্রেয়সীর সেই অভিমান। চোখ বন্ধ করে লম্বা এক শ্বাস নিলো। কান ধরে তৎক্ষণাৎ রাগ ভাঙ্গানোর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
সরি নুরময়ী! প্লীজ মন খারাপ করো না। আমার রাগ উঠে গিয়েছিল। সরি।

অরণ্যের মুখভঙ্গি দেখতেই নুরের বেশ হাসি পেলো। মনে মনে বললো,
আমাকে ধমক দেওয়া! আরেকটু জ্বালানো যাক।
নুর কপট অভিমান দেখিয়ে চুপ করে বসে রইলো। অরণ্য আরো কয়েকবার সরি বললেও যখন দেখলো নুর কথা বলছে না তখন তার মনে হলো তার হৃদয়ে কেউ যেনো ভোঁতা ছুড়ি দ্বারা অবিরত আঘাত করছে। এবার অরণ্যের চোখেও ভয় দেখা দিলো। নুর অভিমান করে যদি তাকে ছেড়ে চলে যায়? অরণ্য কম্পনরত গলায় আবারো ক্ষমা চেয়ে বললো,
সরি নুর, প্লীজ রাগ করে থেকো না।

এবার নুর পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো স্ক্রিনের দিকে। স্পষ্ট দেখতে পেলো অরণ্যের চোখে জমা হওয়া অশ্রুগুলো। নুর বিচলিত হয়ে পড়লো। চক্ষুদ্বয় বড়বড় করে বললো,
আল্লাহ্! অরণ্য! আমি দুষ্টামি করছিলাম। আপনার চোখে পানি কেনো? আমি জানতাম না আপনি এত সিরিয়াস হয়ে পড়বেন। আমি সরি। প্লীজ কান্না করবেন না।

অরণ্য ক্যামেরা বন্ধ করে দিলো। নুর অবিরত ডাকাডাকি করতেই থাকলো। কিছু মিনিট পর অরণ্য ক্যামেরা অন করলো। নুর বুঝলেও অরণ্য বললো,
কাদছিলাম না। চোখ জ্বলছিল তাই মুখ ধুতে গিয়েছিলাম।

~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here