ঝরাপাতার দিনগুলি পর্ব ১৮

#ঝরা পাতার দিনগুলো
#পান্না হাবিব

পর্ব- ১৮

“আমি কিছুই করিনি বিশ্বাস কর মেহের।” কম করে হলেও এই কথাটা প্রিমা বিশবার বলেছে আর কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
শেষমেশ বিরক্ত হয়ে ওকে বললাম,
-তুই কি বলবি কি করছিস না সরি কি বলছিস নাকি আমি চলে যাবো? আর তোর এই ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ কান্না দয়া করে বন্ধ কর। কি বলছিস সাব্বিরকে, একটু বল নারে ভাই প্লিজ……প্রিমা।
-আমি তো ঐরকম কিছুই বলি নাই। তোকে তো একবার বলছিলাম যে কি কথা হয়েছিলো।
-সব বলিস নাই তুই। যেগুলো বাদ গিয়েছে সেগুলো বল। আর এর আগে দয়া করে বাথরুম থেকে মুখ ধুয়ে আয়। কি করেছিস নাকের পানি বের করে!!! ছি…

আমি একটার পর একটা সিগারেট খেয়েই যাচ্ছি। লাস্ট আর একটা আছে।
-যা তো, তোর বাবার কাছ থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা নিয়ে আয়।
প্রিমা বাথরুমের দরজার সামনে হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-মুখ বন্ধ কর। মশা ঢুকবে মুখে। খালি মশা না আস্তো একটা তেলাপোকাও ঢুকতে পারবে।
ওয়াক ওয়াক করতে করতে প্রিমা বাথরুমে আবার ঢুকে গেলো।
মুচকি হেসে লাস্ট সিগারেটটা ধরালাম।

-কি হলো বাথরুমে আর কয়বার ঢুকবি? যা সিগারেট নিয়ে আয়। আমার গুলো সব শেষ।
“তুই এক প্যাকেট খেয়ে শেষ করে ফেলছিস!!!!” প্রিমার মুখ এবার শুধু হা না মস্ত বড়ো হা হয়ে গেলো।
-এবার কি মুখে ডায়নোসর ঢুকানোর চেষ্টা করছিস নাকি? তারাতাড়ি নিয়ে আয়।
-বাবা তো জেগে আছে। কিভাবে নিয়ে আসবো এখন? একটু পরে নিয়ে আসি?
-না। এখনি নিয়ে আসবি। এটা তোর শাস্তি। আরেকটা শাস্তি আছে। সেটা একটু পরে দিবো। আপাতত এটাই। পুরো প্যাকেট আনবি না। প্যাকেট খুলে দুইটা নিয়ে আসবি।
প্রিমা মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। বেচারি ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না। কিছু করতে পারছে না। অবশেষে রুম থেকে ও বের হয়ে গেলো।

টাকার বেপারে কি করবো মাথায় ঢুকছে না। সব মিলিয়ে ৮০ টাকার মতো আর আছে। ভালো লাগছে না আর এই প্যারা। সব ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে মনে চাইছে। এইরকম কারো লাইফ হয় কখনো!!! বিবাহিত মেয়েদের নাকফুল নাকি পড়তে হয়। শুধুমাত্র কবুল বললেই কি সব কিছু চ্যাঞ্জ করতে হয়? কবুল বলা ছাড়া আর তো কিছুই হয় নি। বিয়ের তিন মাসে সাব্বির হাতে গোনা দুএকদিন ছাড়া কথা পর্যন্ত বলেনি আমার সাথে। কিসের এতো জেদ ওর? ফালতু ছেলে একটা। হুদাই আমি ওর জন্য কস্ট পাই। তুই আমাকে কি দিবি, তোকেই আমি ডিভোর্স দিব। টাকা থাকলে ডিভোর্স পেপার এক সপ্তাহেই পাওয়া যাবে। সাব্বিরের বাচ্চা চার কোনাইচ্চা দাঁড়া, তোরে এর পরের বারই এসে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।

“বিরবির করে কথা বলার স্বভাবটা এখনো যাইনি। আচ্ছা তুই কি সারাদিনই বিরবির করিস?”
তাকিয়ে দেখি প্রিমা হাসিমুখে রুমে ঢুকছে। কি ব্যাপার!!
-আব্বু রুমে নাই, হি হি হি। এই নে তোর সিগারেটের প্যাকেট। তোর যে কয়টা লাগে নে বইন।
কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।

-সাব্বির ভাইয়া তো তোকে অনেক ভালোবাসে।
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম, কে বললো এই ঢাহা মিথ্যা কথা?
-সাব্বির ভাইয়াইতো বললো।
-কবে বললো?
মুখ কালো করে প্রিমা বললো, “ঐতো যেদিন ভাইয়ার সাথে কথা বললাম আরকি।”
-আর কি বলছে? আর কিভাবে কথা বলেছে?
-না মানে, আমাকে আগে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলো, সাথে একটা ম্যাসেজও। বলেছিলো আমার সাথে নাকি তার ইমারজেন্সি কথা আছে আর এই ব্যাপারে যেনো তুই না জানিস।
“আর তাই তুইও আমাকে বলিসনি” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম।
-আমি কি আর জানতাম এমন যে হবে।
জানিস প্রিমা গতকালকে আমি আমাদের পুরো বাড়িতে একা ছিলাম।
-কি বলিস!!!!! কিন্তু কেনো?
চিটাগং যাওয়া থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত সব কাহিনী ওকে বললাম।
সব শুনে ও আবার কাদতে শুরু করলো, উফ!!! এই মেয়েটা এমন কেনো!!! বিরক্তিকর পুরো।

-আব্বুকে কালকেই বলবো এই মাসের মধ্যে যেনো আমাকে তাদের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।
আমি হেসে দিয়ে বললাম তাহলে শিশিরের কি হবে?
আরে গাধি কার কপালে কি আছে তা আমরা কেউই জানিনা। দেখনা, এই গত কোরবানি ঈদে এই সময়ে আমাদের বাসায় আমরা আব্বু আম্মু সহ ছয় ভাইবোন ছিলাম সাথে তাদের দুই হালি অানডা বাচ্চা। আর আমি ছোট ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করতেছিলাম বেলা ১০টার সময়ে ওর জন্যে চালের রুটি বানানো লাগতেছে সে জন্য। আর আজকে দেখ, সব ভাইবোন থাকবে দূরে থাক, আমি সারা বাড়িতে একা ছিলাম!!!
একজনের কস্ট আর একজন কখনো বুঝতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ কস্টটা ফিল করে।
আর সাব্বিরও তো আমাদের সবার জানাশোনার মধ্যেই ছিলো।
শিশির অনেক ভালো একটা ছেলে। অন্তত ফয়সালের মতো কথায় কথায় গালি দেওয়া আর সন্দেহ তো করে না।
-সাব্বির ভাইয়াকে এইগুলোই বলেছি আমি।
-থাক প্রিমা আমার আর শুনতে ইচ্ছে করছে না। শুনেইবা কি আর করবো বল। তার থেকে এখন তুই আমার জন্যে এক কাপ চা করে নিয়ে আয়। আর যদি পারিস তাহলে ঝাল করে একটু ভর্তা টর্তা বানা। বেশি করে ভাত খাবো। সকালে ভদ্রতা করে বেশি খেতে পারি নাই। আবার ক্ষুধা লাগছে আমার। এখন সব ভদ্রতা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আনটিকে বল একগাদা ভাত খাবো দুপুরে। অনেকদিন পেট ভরে খাইনা।
আমার কথা শেষ না হতেই প্রিমা চোখ মুছতে মুছতে আমায় এসে জরিয়ে ধরলো।
-ছাড় আমায়, তোর নাকের পানি দিয়ে ভরাই দিচ্ছিস আমায়!!!! ছি!!
আর তোর চোখের সাথে কি পদ্মা নদীর কানেকশন আছে? এতো পানি কই থেকে আসে রে!!!
আমি কেন কাঁদতে পারি না তোর মতো!! এইরকম করে হাউ মাউ কাঁদতে পারলেও তো অনেক শান্তি পেতাম। জানিস আমার সব অনুভূতিগুলো মনে হয় মরে গেছে!!
অনেক ঢং দেখাইছিস। যা এখন, চা নিয়ে আয়। গতকালকে সারারাত ঘুমাইনি।
প্রিমা চলে যাওয়ার পর শুয়ে পরলাম। টাকার ব্যাপারটা কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
প্রিমা চা নিয়ে আসার আগেই আমি ঘুম।
আম্মুকে আব্বুকে সপ্নে দেখলাম প্রথম বার!
কি সুন্দর তারা একটা দোলনায় বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে !! আমি দূর থেকে ঘুরে ঘুরে তাদেরকে দেখছি। এতো সুন্দর লাগছে তাদের দুজনকে!!
আমাকে দেখতে পেয়ে কাছে ডাকলো। আমি কাছে যেতেই আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,” আল্লাহকে ভুলে গিয়েছ কেনো মামনি!! আল্লাহের উপর ভরসা করো। দেখবে সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। জোহরের নামাজের সময় চলে যাচ্ছে, নামাজ পড়ো মামনি।”
তারা আবার নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল হয়ে গেলো।
ঘুম ভাংতেই দেখি দুপুর ৩.৩০ বেজে গিয়েছে।
সত্যিই তো, বিয়ের পর নামাজ পড়ার কথা আমি ভুলেই গিয়েছি!!!

অনেক সময় নিয়ে নামাজ শেষ করলাম অনেকদিন পর!! দুহাত তুলতেই চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরা শুরু হলো!!! চোখের পানি যেনো শেষই হচ্ছে না!!
এতো শান্তি লাগছে নামাজ পড়ে!!!
সত্যিই তো আল্লাহই সকল সমস্যার সমাধানকারি।

প্রিমা খাওয়ার জন্যে ডাকতে এলো।
-তুই যেই ঘুম দিয়েছিস!! তাই খাওয়ার জন্য আর ডাকিনি। আর লেট করিস না, আমি খাইনি এখনো। আর একজন অপেক্ষা করছে তোর জন্য।
মলিন মুখে বললো ও।
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করার আগেই ও বেরিয়ে গেলো।
কে অপেক্ষা করছে!!! আজব ব্যাপার!!

ডাইনিং টেবিলে হাসিমুখে সাব্বির অাংকেল অান্টির সাথে গল্প করছে!!!!
আমি এইখানে আছি সেটা কিভাবে জানলো নাকি প্রিমার বাসা কিভাবে চিনতে পারলো, কোনটা নিয়ে আগে চিন্তা করবো বুঝতে পারছি না!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here