ডায়েরি পর্ব ৪

#ডায়েরি_পর্ব_৪

জান্নাতুল জান্নাত

কালো থাই গ্লাসের পর ভারি পর্দা ভেদ করা সূর্যের উষ্ণতার ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙলো৷ ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখি দুপুর ১টা বেজে ৩৫৷ কি ভাবছেন? আমাকে কেউ ডাকেনি কেন? ডাকবে কেন? আমি তো ঘুমানোর আগে দরজার বাইরে লিখে রেখেছিলাম৷
“আমি একটু নিরিবিলি ঘুমাবো৷ কেউ বিরক্ত করবে না৷ খাওয়ার জন্যও নয়৷ আমার যখন ঘুম ভাঙবে তখন নিজেই খেতে যাবো৷”

ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে বাইরেটা দেখে আবার দরজা আটকে দিলাম৷ গতরাতের লেখাটা আবার লিখতে হবে৷ মাঝপথে থেমে গিয়েছিলাম৷ তার আগে মিষ্টি সকাল উপস মিষ্টি দুপুরের কাহিনীটা লিখি৷ এখানে যেহেতু আমার অতীত জীবনের কিছু আনন্দ দুঃখের কথা লিখবো তাই অন্য ডায়েরিতেই লিখি৷ মেয়েটা আবার এসব দেখলে কি না কি ভেবে বসে৷

৪ঠা আগস্ট, ২০১৫ (দুপুর ১ টা বেজে ৪৫)

ঔষধ খেয়ে ক্লিয়ার একটা ঘুমের পর দরজা খুলতেই সামনে দেখলাম পূজোর ফুল প্রসাদ রাখা৷ কেউ না বললেও আমি জানি এটা অনিতা রেখেছে৷ ছোট্ট মেয়েটা এ বয়সেই কি সুন্দর ঠাকুর পূজো করতে শিখে গেছে৷ ঠিক ঘরের বৌদের মতো ভোরে উঠে স্নান করে ধোয়া কাপড় পড়ে৷ তখন কেমন যেনো ওকে ট্রিপিক্যাল বউয়ের মতো লাগে৷ কখনো নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার৷ ছবি তুলে রেখেছিলো তনিমা৷ পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়েছিলো তখন দেখেছিলাম৷ কি সুন্দর প্রতিমা আমার ঘরে৷ আসলে অনিতাকে এসব তনিমাই শিখিয়েছে৷ তনিমার পরিচয় দেয়া হয়নি৷

তনিমা তপুর মেয়ে৷ তপু আমার সিনিয়র৷ খুব ধার্মিক৷ তিন বার আহ্নিক করা টিপটপ ভদ্র ছেলে৷ চেহারায় কেমন যেনো মায়া৷ দেখলেই প্রেমে পড়ার মতো ছেলে৷ আমিও পড়েছিলাম প্রেমে৷ তবে সেটা বলিনি৷ দীর্ঘদিন দু’জন দু’জনকে দেখছি কিন্তু মনোবাসনার কথা আর বলা হয়ে উঠেনি৷ এক সকালে সরস্বতী পূজোতে দু’জন বসেছিলাম পাশাপাশি৷ আমি হলুদ রঙের শাড়ি আর ও পড়েছিলো হলুদ পাঞ্জাবী৷ সেদিন ঠাকুরের ফুল আমাকে দিয়ে বললো
-তুমি কি সারাজীবন আমার অঞ্জলি দেয়ার সাথি হবে?
ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম সেদিন৷ এমন অদ্ভুতভাবে প্রোপোজ করতে কাউকে শুনিনি৷ কেউ কোনোদিন করেছে বলেও শুনিনি৷ কিছু না বলে এসে পড়েছিলাম বাসায়৷ সরস্বতী মা যে স্বয়ং ছিলেন সামনে৷ হ্যাঁ বা না কোনোটা বলার সাহস হলো না আমার৷ তারপর থেকে প্রতিদিন মায়ের ফুল আর প্রসাদ দিতো আমায়৷ এমন দু’টো জিনিস আমায় দিতো যা ফেরানোর ক্ষমতা আমার ছিলো না৷ আমার কেন কারোরই হয়তো থাকতো না৷ অবিশ্বাস করার মতো ওর মধ্যে কিছু ছিলো না৷ ওর চলাফেরা, ওর কথা, ওর দৃষ্টির সূক্ষ্মতা ও আচরণ সবকিছু আমাকে ওকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করেছিলো৷ তারপরও পরিবারের কথা ভেবে চুপ করে ছিলাম৷ জানতাম এর পরিণতি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ কিন্তু কিভাবে যেনো জড়িয়ে পড়েছিলাম৷ সম্পর্ক এমন একটা বিষয় যেটাতে একবার জড়ালে আর বের হওয়া সম্ভব নয়৷ ঠিক গোলকধাঁধার মতো৷ যাতে প্রবেশের পথ আছে কিন্তু বেরুবার পথ নেই৷ বহুবার বের হওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি৷ মন থেকে কেন জানি মানতে পারছিলাম না যে সত্যিই তপু আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে৷ বিশ্বাস যেমনি করতে পারছিলাম না তেমনি অবিশ্বাস করারও কোন কারণও খুঁজে পাচ্ছিলাম না৷

তপু আস্তে আস্তে আমার বন্ধুমহল, পরিবার, আত্মীয় স্বজন সবার পরিচিত ওর ভালোবাসার মানুষ হয়ে গেলো৷ মনের কোণে কোথায় যেনো জেগে উঠেছিলো অস্ফুট বাসনা হ্যাঁ আমি সঠিক লোককেই আমার জীবনে পেয়েছি৷ আরো একটি কাজ করেছিলো তপু যাতে ওর প্রতি বিশ্বাসটা আমার শতভাগ হয়েছিলো৷ একদিন সাঝবেলাতে এক কালী মন্দিরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ হঠাৎ আমার হাত ধরে তপু বললো
-এসো অঞ্জনা ভিতরে এসো৷
মন্দিরে ডেকেছে না তো করতে পারবো না৷ তাই ওর হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করলাম৷ কেউ ছিলো না তখন মন্দিরে৷ মায়ের সামনে থাকা সিঁদুর নিয়ে আমার সিঁথিতে পড়িয়ে দিলো তপু আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই৷
-এ কি করলে তপু?
-তোমায় আমি বাঁধলাম সখি আমারই বাঁধনে৷ আর পারবে না কখনো হারাতে৷ যা আমার ছিলো তা আমারই আছে, থাকবেও চিরকাল৷ এই বিশ্বাস অন্তরে খোদাই করে যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারবো আমি৷
-কিন্তু এভাবে কেন করলে?
-এ ছাড়া উপায় কি? তুমি তো আমায় অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে পারোনি এখনও৷
-হ্যাঁ পারিনি তাই বলে এভাবে?
-ভয় নেই অঞ্জু আমি তোমাকে ছোঁবো না৷ স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবো না৷ শুধু একটা অদৃশ্য বন্ধন দিলাম তোমায়৷ তুমি যেমন ছিলে তেমনই থাকবে শুধু যদি অন্য কারো হতে যাও তখন তোমার মনে পড়বে আমি তোমার স্বামী৷ আমি যে তোমায় কালী মায়ের সামনে সিঁদুর পড়িয়েছি৷ অস্বীকার করার ক্ষমতা কি তোমার আছে?
-না, নেই৷
সত্যিই আমায় কখনো ছুঁয়েও দেখেনি তপু৷ বিশ্বাসটা হয়তো তাই বেশি গাঢ় হয়েছিলো৷

হঠাৎ বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করলেন বাবা৷ কোন উপায় না পেয়ে বাবাকে আমার আর তপুর সম্পর্কের কথা বললাম৷ বাবা নারাজ ছিলেন৷ কিন্তু তপু আমার পরিবারের অনেকেরই পছন্দের ছিলো৷ তাই বাবার না মতটা বেশি জোড়ালো হলো না৷ বাবাও রাজি হয়ে গেলেন৷ বললেন সামনের সপ্তাহে যেনো তপু বাবার সাথে দেখা করে বিয়ের কথা বলার জন্য৷

তারপর ওর বাবা মায়ের সাথে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে৷ আমি তো তখন খুশির ভেলায় ভাসছি৷ মনে হচ্ছে মেঘের মতো উড়ছি৷ খবরটা জানালাম তপুকে৷ তপুও খুশি হলো৷ কবে বাসায় আসবে কথা বলতে তাও ঠিক করে ফেললো৷ তখন তো মোবাইলের এতো চল ছিলো না৷ বাবার ফোন দিয়ে কল করলাম তপুর এক দাদাকে কিন্তু তিনি বললেন গতকাল থেকে তপুর কোন খোঁজ নেই৷ এমনকি রুমেও যায়নি৷ শুনে খুব অবাক হলাম৷
“ও তো ভার্সিটিতেও আসেনি৷ তাহলে কি বাড়িতে কোন বিপদ হলো?”
কিন্তু কি করে খবর নিবো আমি তো কারো ঠিকানা জানি না৷ ওর বাড়ির ঠিকানা জানি কিন্তু সেখানে উপস্থিত হওয়া তো সম্ভব নয়৷ পরে ভাবলাম হয়তো কোন সমস্যায় আছে পরে হয়তো যোগাযোগ করবে৷ তারপর দেখা করার দিনও পেরিয়ে গেলো তপু আর ফিরে এলো না৷ শুধু আমি কেন আমার পরিচিত কারো সাথেই ওর কোন যোগাযোগ নেই৷ হঠাৎই যেনো চেনা জগতের বাইরে চলে গেলো সে৷

তপুর খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের খবর পেলাম৷ দেখা করলাম তাদের সাথে৷ যা শুনলাম তারপর আমি চেয়েছিলাম বসুন্ধরা দ্বিখন্ডিত হোক আর আমি তোমাতে বিলুপ্ত হই৷ কিছুতেই তাদের বলা কথাগুলোকে সেদিন বিশ্বাস করতে পারিনি আবার অবিশ্বাস করারও জোরালো কারণ পাইনি৷ বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলছিলাম আমি৷ পেরিয়ে গেলো আরো কিছুদিন৷ তপুর সেই বন্ধু বললো আমি যেনো তপুকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করি৷ তপুর আশায় বসে থাকলে আমার শুধু সময়ই নষ্ট হবে৷ তাকে তখন কি করে বলতাম আমি যে তখনও তপুর নামে সিঁথিতে সিঁদুর পড়ি সবার অলক্ষ্যে৷ আমাদের বিয়ের সাক্ষী তো নেই কেউ৷ তার চেয়েও বড় কথা এক মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সংসার কি করে ভাঙি? বাসায় এসে দরজা আটকে দিলাম৷ যতটা সিঁদুর ছিলো আমার কাছে সবটুকু সিঁথিপাটিতে ঢেলে দিলাম৷ তারপর ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম৷ সিঁদুরগুলো ধুয়ে ধুয়ে পড়ছিলো৷ বাথরুম লাল হয়ে গেলো আমি একটুও নড়িনি৷ তারপর চুলে শ্যাম্পু করে সিঁদুরের সবটুকু আভা সিঁথি থেকে ধুয়ে মুছে জীবন থেকে তপু নামটাকে বিদায় দিয়ে বাথরুম থেকে বেরুলাম৷

অবাক লাগছে আমার কান্ড দেখে? হ্যাঁ, তপু আসলে বিবাহিত ছিলো৷ অনেক আগেই ও বিয়ে করেছিলো৷ সাথে ছিলো ওর এক ফুটফুটে কণ্যাসন্তান৷ এক বিয়ে থাকাকালীন ২য় বিয়ের অস্তিত্ব নেই আর যেটার কোন সাক্ষ্যপ্রমাণও নেই৷ আমি তো একটা মেয়ে আর মেয়ে হয়ে কি করে অন্যের স্বামীকে কেড়ে নিতাম? আমি যদি এখন বিয়ের কথা বলি তাহলে সবাই ভাববে মিথ্যে বলছি৷ আর তপু? তপুও তো আমাকে আর স্বীকার করবে না৷ সরে এলাম তপুর জীবন থেকে৷ প্রথমে খুব কষ্ট হতো মনে হতো কেউ আমার কলিজাটা নিয়ে গেছে কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছিলাম৷ তপু আর আমার সামনে পড়েনি কখনও৷ সামনে পড়লে একটা কথাই জানতে চাইতাম কেন আমার সাথে এমন করলো? কি লাভ হলো ওর এতে? আমার মন ভাঙলো৷ যখন ও বিবাহিতই ছিলো তবে আমার সিঁথিতে কেন সেদিন সিঁদুর পড়ালো? কেন করলো এই সিঁদুরের সাথে এই খেলা? সৃষ্টিকর্তাকে এতো ভালোবাসে তার ভয়ও কি হয়নি ওর?

এরপর থেকে পরিবারের কেউ তপুর কথা বললেই আমি বারবার এড়িয়ে যেতাম৷ হয়তো তারাও ততদিনে বুঝে গেছে আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা আর নেই৷ বাবা সুব্রতর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলো৷ বাঁধা দেয়ার কোন কারণই ছিলো না৷ সুব্রতর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো৷ বিয়ের সাতবছর পর তপুর সাথে আমার দেখা রাস্তায়৷ খুব ইচ্ছে ছিলো ওর পাঞ্জাবী ধরে বলি
“কেন আমাকে ঠকালে তপু? কেন আমাকে তনিমার মা হতে দিলে না? কেন তনিমা অন্য কারো মেয়ে হলো?”
কিন্তু কিছু বলিনি কারণ তপুর হাত ধরা ছিলো বারো বছরের একটি মেয়ে৷ এই সেই মেয়ে তনিমা, যার মা আমি হবো বলেছিলো তপু কিন্তু হলো অন্য কেউ৷ স্বাভাবিক কথোপকথন হলো আমাদের মধ্যে
-কেমন আছো? তোমার মেয়ে তনিমা?
-এই তো চলে যাচ্ছে৷ হ্যাঁ আমার মেয়ে তনিমা৷
-তুমি ঢাকাতেই থাকছো আজকাল?
-না৷ ওর মা মারা গেছে৷ মেয়ে মানুষ কে দেখে শুনে রাখবে তাই হোস্টেলে দিতে এসেছি৷
-আমরা কফি খেতে খেতে কথা বলতে পারি৷ সামনের কফিশপটাতে বসি চলো৷

তিনজনই কফিশপে বসলাম৷ তনিমার চেহারাটা খুব মায়াবী৷ আজ তপুর সাথে আমার বিয়ে হলে তনিমা আমাদেরই মেয়ে হতো৷ ভাবতে ভাবতে কফির অর্ডার দিয়ে তপুকে বললাম
-হোস্টেলে কেন রাখতে চাও ওকে? হোস্টেলে কত কষ্ট হয়৷ কোন আত্মীয়ের বাসায় রাখতে পারো৷
-না৷ তেমন কোন আত্মীয় নেই তো আমার৷
তনিমার দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমি তোমার বাবার বান্ধবী৷ আমার সাথে আমার বাসায় থাকবে? আমার এক মেয়ে আছে ৫ বছরের আর এক ছেলে আছে ৩ বছরের৷ তুমি ওদের দিদির মতো হয়ে থাকবে৷ আজ থেকে জানবো আমার ৩টি সন্তান৷ কখনো অন্য দৃষ্টিতে দেখবো না৷ তবে আমি ব্যস্ত থাকি৷ আমাকে তেমন একটা পাবে না তুমি৷ অনিতা আর অর্ণবকে নিয়ে তোমার সময় কেটে যাবে৷ থাকবে?
তনিমা কিছু না বলে তপুর দিকে তাকালো৷
-তোমার স্বামী কিছু বলবে না অঞ্জু?
-সেটা আমার বিষয়৷ তুমি রাজি কিনা বলো?
-তোমার প্রতি আমার ভরসা ও বিশ্বাস দু’টোই আছে৷ আমি জানি আমার মেয়েকে তুমি নিজ মেয়ে ভিন্ন অন্যকিছু ভাববে না৷
-এইটুকু বিশ্বাস যেহেতু এখনও অবশিষ্ট আছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট৷ তুমি কি এখন যাবে আমার সাথে?
-না, তনিমাকে নিয়ে যাও৷ আমি অন্য কোন সময় যাবো৷ তনিমা তুই তোর অঞ্জনা মাসির সাথে…
-তপু ওকে মাসি নয় মা বলতে বলো৷
-আমি তোমায় মামনি বলবো৷ ঠিক আছে?
-আচ্ছা৷ তপু আমার হাতে সময় নেই৷ আমি আপাতত তনিমাকে বাসায় রেখে কাজে যাই৷
-আচ্ছা যাও তোমরা৷ ভালো থাকিস মা৷
-ভালো থেকো তপু৷
সেই থেকে তনিমা আমার সাথে থাকে আমার আরেকটা সন্তানের মতো৷

ডায়েরিটা বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম৷ হায়রে জীবন কখন যে কি খেলা করিস বোঝার সাধ্য কার আছে? অনেক সময় নষ্ট করলাম এখন স্নান সেরে খেয়ে আবার শ্যুটিংএ যেতে হবে৷ তনিমা নিশ্চয়ই কলেজ থেকে ফিরেছে এতোক্ষণে৷ যাই স্নান সেরে দেখা করি৷
চলবে……

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here