তুই হৃদহরণী পর্ব ২

#তুই_হৃদহরণী
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ২

আহরার দুপুরে খেয়ে একবার ইসার সাথে দেখা করতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু যায় নি। গাড়ি চালাতে চালাতে কোথায় যেন এসে পরেছে সে। নামও জানে না। ছোট একটা ড্রিংকের বোতল হাতে নিয়ে লেকের কাছে গিয়ে বসল। চারপাশ টা ভালোই লাগছে। অনেক টা জঙ্গলের মতো। আহরার বসে বসে মদ খাচ্ছিল।

ঝিম মেরে অনেকক্ষণ কিছু ভাবছিল। কি ভাবছিল তা জানে না। খানিক বাদে তার কালো অতীতের কথা মনো হলো। আহরার ফুসফুস করে উঠল। রাগে ফুফাতে লাগল। সেই মহিলার কথা মনে হলেই রাগে গিজগিজ করে উঠল সে। এক টানে অনেকটা মদ খেয়ে পানি তে ছুঁড়ে মারল বোতল টা। ধপাস একটা শব্দে পানি ছিটকে উপরে এলো। আহরার আর বসল না। এখানে থাকলেই যেন কালো অতীত হানা দিবে তাকে। উঠে দাঁড়াল। গাড়ি নিয়ে ছুটল আবারো। যেতে যেতে ড্রিংক করতে লাগল। এবার বোধ হয় বেশি হয়ে গিয়েছে। ঘ্যাঁচ করে গাড়ি ব্রেক করল। ঝিমঝিম লাগছে। শরীর টা কেমন করছে। একজন সঙ্গী হলে এখন তার বেশ ভালো হতো। একবার ভাবল ইসার কাছে যাবে। ওর ফিগার দেখলেই সে চিৎ হয়। কিন্তু এখন সম্ভব নয়। এখান থেকে ইসার ফ্লেট অনেক দূর। আহরারের মেজাজ খারাপ হতে শুরু করল।

বসে বসে রাস্তায় নজর দিতে লাগল। যদি কাউকে পাওয়া যায়। আহরার ঝিম বসে দেখতে লাগল। তেমন কেউ আসছে না। দুজন মেয়ে দেখল। দুজনই আহরারের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। আহরার জানে কেন। তার সৌন্দর্যের জন্যে। আহরার কে আল্লাহ এমন করেই হয়তো বানিয়ে দিয়েছে এত টা রূপবান পুরুষ হিসাবে।

মেয়ে গুলি থেকে থেকে তার দিকে ফিরছিল। আবার হাটছিল। আহরার তেমন যুত পেল না। মেয়েদের সাথে উঠা বসা করতে করতে মেয়েদের চিনে গিয়েছে সে। কোন মেয়ে কেমন হবে তা পুরোপুরি না বুঝলেও বেশ আইডিয়া আছে তার। হাজারে একবার ভুল হলেও ৯৮% সে শিওর বলতে পারে। আহরার চোখ সরিয়ে নিল মেয়ে গুলির থেকে। কারণ সে যা চায় তেমন নয় ওরা। আহরার কপাল কুঁচকে এদিক ওদিক তাকায়।

অনেক সময় পার হওয়ার পর একটা মেয়ে দেখা যায়। ফোন টিপতে টিপতে আসছে। ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়নে। শর্ট একটা স্কার্ট আর একটা দৃষ্টিকটু টপ পরনে। দেখে আহরার খুশিতে হেসে উঠল।

দরজা ঠেলে মেয়েটার সামনে যায়। ফোন রেখে সে তাকায় আহরারের দিকে। তাকিয়েই থাকে। আহরার নেশা ভরা একটা দৃষ্টি দেয়। মেয়ে কে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহরার হাসে।
“আমায় একটু সময় দিতে পারবে মিস?”
“….
“এক্সকিউসমি।”
“এ্যা।”
“সময় হবে?”
“ও শিওর।”
আহরার তাকে নিয়ে গাড়িতে যায়। মেয়ে কে প্রথমে অল্প কিছু ভাবলেও পরে ভেবে নেয় পুরোটাই চলবে। পটিয়ে ফেলে মুহূর্তে। আহরার আর কিছু পারুক না পারুন মেয়েদের মন গলাতে পারে বেশ। এটাতে বেশ পটু সে। খোলা মেলা জায়গায় নিয়ে যায় গাড়ি টা। ভেতরে দুজনে মেতে উঠে নিজেদের দেহ খেলায়।

কাপড় পরতে পরতে মেয়ে টা বলল,
“তোমার নাম্বার টা পাওয়া যাবে হ্যান্ডসাম বয়?”
আহরার কিছু না বলে হাজার খানিক টাকা ধরিয়ে দেয় হাতে।
“তোমাদের কে নাম্বার নয় এটা দেওয়া চলে।”
“হোয়াট ডু ইউ মিন?”
“নাও গেটলস্ট।”
“মানে?”
“তুমি নামবে নাকি আমি ঠেলে ফেলে দিব একটু আগের মতো?”

মেয়ে টা তর্কাতর্কি লাগিয়ে দেয় গাড়িতে বসে। আহরার ঠাসস করে একটা চর বসিয়ে দিল।
“ভালো করে বলছিলাম না? এখন নাম। আরে তোরা তো প্রস্টেটিউটের চেয়েও বাদ। তারা তো টাকার জন্যে এমন করে। কিন্তু তোদের মতো কিছু আছে যারা টাকা বাদেও শরীরে তেজ ঢালতে শুয়ে পরিস। কত বিগাড়। যা নাম এখান থেকে।”
চর খেয়ে মেয়ে নেমে যায়। আহরার কে বকতে থাকে। আহরার তা পাত্তা না দিয়ে চলে আসে গাড়ি ঘুরিয়ে।

ফিরাত অফিস বসে বসে ক্রান্ত একবার তার মনের চাঁদ কে দেখে আসতে পারলে ভালো হতো। সারা দিন সময়ই পায়নি। যদিও ওর থেকে কিছুই পাওয়া যায় না তবুও একনজর দেখে আসতে পারলে ভালো হতো। মন ভরে ওর। ফিরাত নিশ্বাস ফেলে আবার ফাইল দেখতে লাগল। তখন কল এলো।
“ইয়ার খিদে পেয়েছে কখন আসবি তুই?”
“তুই কি বাসায়?
“হ্যাঁ রে।”
“ওকে তুই থাক আমি কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছে।”
“না ইয়ার আজ তোর সাথে ডিনার করব।”
“ভাই আহরার তুই ঠিক আছিস তো? বেশি খেয়ে ফেলেছিস নাকি?”
“আরে দূর। বকবক রেখে তাড়াতাড়ি আয়।”
ফিরাত হাসতে হাসতে জবাব দেয়,
“ওকে ওকে তুই থাক। আমি আসছি।”
“ওকে বাই।”
আহরার কল কেটে দিয়ে সুইমিংপুলে ল্যাপটপ নিয়ে বসল।

ফিরাত খাবার নিয়ে এসেছে বাহির থেকে।
“আহরার আহরার? কোথায় তুই?”
“এখানে চলে আয়।”
“কোথা থেকে কথা বলছিস?”
“আরে গাধা সুইমিংপুলে আয়।”

আহরার আর ফিরাত খাবার খাচ্ছে আর গল্প করছে।
“আচ্ছা বল তো আজ কি হয়েছে তোর?”
“কোথায়?”
“এই যে তুই আমার সাথে ডিনার করতে চাইলি।”
আহরার খাবার মুখে দিতে দিতে বলল,
“সকালে তুই চেয়েছিলি। কিন্তু মাথায় পোকা উঠে গিয়েছিল তাই পারি নি। এখন ইচ্ছা হয়েছে তাই, সিম্পল।”
“….
“কিরে চুপ কেন তুই?”
“আহরার আমরা এখনো একসাথে আছি ভাবা যায়? আমাদের অনেক ফ্রেন্ড এখনো আমাদের ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে প্রশংসা করে।”
“ওদের কথা বাদ দে।”
“তবে এটা তো ঠিক আমি তোদের বাসার ড্রাইভারের ছেলে ছিলাম। আঙ্কেল যদি বাবার সাথে আমায় না রাখত তবে তোর দেখা পেতামও না। আঙ্কেল খুব বড় মনের মানুষ।”
আহরার কিছু বলছে না। নিজের মতো করে খাচ্ছে। ফিরাত আবার বলল,
“১৭ বছর বয়স পর্যন্ত একজুট ছিলাম। তারপর আবার আলাদা হয়ে গেলাম। বাবা কে ছেড়ে যেতে চায়নি। না হলে তো আমাকেও তোর সাথে বিদেশ পাঠিয়ে দিত আঙ্কে…”
আহরার চেঁচিয়ে উঠল,
“স্টপ ইট ননসেন্স। জাস্ট স্টপ ইট।”
আহরার খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেল। ফিরাত বুঝতে পারল আহরারের বিষয় টা। সেও না খেয়ে প্লেট নিয়ে নিচে গেল।

রাতে আহরার তখন ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসে ছিল। ফিরাত রুমে এলো। আহরার একবার তাকিয়ে আবার স্কিনে চোখ দিল। ফিরাত এগিয়ে গেল তার দিকে। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের কেউ কিছু বলছে না। ফিরাত নরম সুরে বলল,
“ভাই আহরার আমি সরি।’
“কিসের জন্যে?”
“তখনে…”
“চুপ। এক ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে ফেলব। এর কারণে সরি বলতে হয়?”
“…
“বস।”
ফিরাত হেসে বসল। অনেকক্ষণ গল্প করল দুজনে। আহরার মেয়ে টার কথা বলল। ফিরাত হাসলেও বরাবরের মতো এসব বাদ দিয়ে দিতে বলল। যদিও জানে আহরার এসব ছাড়বে না।

“ইয়ার। একটা কথা বলতেই ভুলে গেলাম।”
আহরার চোখ মুখ কুঁচকে তাকাল ফিরাতের দিকে।
“কি কথা?”
“কাল তো আমাদের অফিসে ইন্টার্ভিউ আছে। নতুন স্টার্ফ জয়েন্ট হবে।”
আহরার বিষয়টা পাত্তা না দিয়ে ল্যাপটপে তাকাল। বলল,
“এমন ভাবে বলেছিস যেন না জানি কত কি।”
“কাল তোর থাকতে হবে।”
“তুই তো আছিসই।”
“আহরার তোর একটা ভুল সিদ্ধান্ত কিন্তু কোম্পানির বিশাল ক্ষতি করে দিতে পারে।”
আহরার চুপ থেকে বলল,
“ওকে যাবো। কিন্তু তুই আগে যাবি আমি সময় মতো চলে যাবো।”
“তবুও…”
“আর কিছু জানি না আমি।”
ফিরাত হেসে “ওকে” বলল। সে চলে গেলে আহরার ল্যাপটপ রেখে ঘুমিয়ে পরল। কয়েক বছর ধরে স্বপ্নে আবছায়া একজন কে দেখতে পায় সে। বাংলাদেশে আসার পর থেকেই এমন হচ্ছে। কিন্তু সব টাই ধোঁয়াশাপূর্ণ, অস্পষ্ট। স্বপ্নের মানুষ টি কে দেখে কিছুই বোধগম্য হয় না। স্বপ্ন সব টা ধোঁওয়া মতো ধোঁয়াশা। মাঝরাতে আজো সেই স্বপ্ন দেখে উঠে পরে আহরার। ঘেমে একাকার হয়ে পরেছে। পানি খেয়ে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলল। চুল ঠিক করে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পরল।

সকালে আহরারের ঘুম ভাঙ্গার আগেই ফিরাত চলে গিয়েছে। আহরার উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে বের হয়ে যায়।

জ্যামের মাঝে আটকে আছে গাড়ি নিয়ে। মেজাজ খিটখিট করছে। বারবার ঘড়ি দেখছে। আকস্মিক তার চোখ গেল রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়ের দিকে। হঠাৎ তার বুকে টা ধুক করে উঠল মেয়ে টি কে দেখে। এই প্রথম এমন কিছু ফিল করল আহরার। আহরার অবাক হয়ে নিজের বুকের বা পাশে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আবার মেয়ে টার দিকে তাকাল। বিস্মিত নয়নে তাকাল। বোরকা পরা একটা মেয়ে। সাদা, মেরুন, হাল্কা সবুজ আর কি রংয়ের একটা বোরকা পরা। উপরে সাদা হিজাব। হিজাবের মাঝে ঘন কালো পাপড়িযুক্ত চোখ গুলি এক পলক দেখল আহরার। বুক টা হুহু করছে এক অজানা কারণে। কেন যেন খুব চেনা লাগছে তাকে। মেয়ে টা কিছু ফাইল হাত নিয়ে জড়িয়ে রেখেছে। ধবধবে সাদা চিকন লম্বা হাত গুলি দেখে আহরারে বুকে অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছে। শরীরের শিরায় শিরায় শিহরণ জেগে উঠছে। মেয়ে টি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। আহরারের মন ব্যাকুল হয়ে উঠল। উৎফুল্ল চোখ নিয়ে তাকাল মেয়েটির পানে। কিছুতেই চোখ ফিরানো যাচ্ছে না।

আহরার গাড়ি থেকে নামল। গাড়ির ভিড় উবছে রাস্তায় গিয়ে উঠল। বোরকা পরিহিতা তখনো রাস্তার এদিক ওদিক করছিল। আহরার যতই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়ের দিকে ততই তার কেমন চেনা চেনা ঠেকছে। যত এগুচ্ছে ততই সেই অজানা অনুভূতি হচ্ছে বুকে। ধুকধুক শব্দ বের হয়ে আসছে তার ভেতর থেকে।

আহরার বোরকা পরিহিতার দেহের গঠন দেখল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলাল। মুখ দেখেনি অথচ এই প্রথম কোনো মেয়ে তার হৃদয়ে গেঁধে গিয়েছে।

আহরার এগিয়ে গেল বোরকা পরিহিতার কাছে। খুব কাছে গেল। ডাকল,
“হৃদহরণী।”
বোরকা পরিহিতা ভয়ে পাশ ফিরে তাকায়। সামনে সুদর্শনে বিশাল দেহের মানুষটিকে দেখে তার ভয় আরো বেড়ে গেল। একবার আশপাশ তাকিয়ে দেখল কোনো মেয়ে আছে কি না।
“আপনাকেই বলছি মিস।”
এটা শুনে সে আরো অবাক হয়। তাকে এই অচেনা অজানা এমন মানুষ “হৃদহরণী” ডাকবে? ভেবে পাচ্ছে না কিছু। কিন্তু ভয় লাগছে।
“মিস আপনার সাথে একটু কথা বলার সময় হবে কি?”
“….
“আপনাকে প্রথম দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি আপনার থেকে একটু সময় চাই। উইল ইউ শেয়ার দ্যা বেড উইদ মি? প্লিজ মিস।”
বোরকা পরিহিতার এবার ভয় ভুলে গেল। অচেনা লোকের মুখে এ কথা শুনে তার শরীর রিরি করে উঠল। রাগে ক্ষোভে সে আহরার কে ঠাসস করে এক চর দিয়ে হাটা ধরল। রাগে যেন সে ফুঁসছে।

চলবে….

(আমি ছাড়া কেউ অন্য কোনো পেইজে বা গ্রুপে কপি করে পোস্ট করবেন না। আবারো বলছি কপি করবেন না।)

Sabriha Sadi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here