তুমিময় বসন্ত পর্ব -০৪+৫

#তুমিময়_বসন্ত
৪.
#writer_Mousumi_Akter

–এক আকাশ অভিমান নিয়ে রওনা হলাম শ্বশুরবাড়ি। প্রচন্ড কাঁন্না পাচ্ছে কষ্ট হচ্ছে তবুও চোখের পানি না ফেলে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম।মা বাবার প্রতি রেখে গেলাম ভীষণ রাগ ক্ষোভ আর অভিমান।জীবন টা তো এমন না হলেও পারতো।একটা মেয়ে বোঝে এই কষ্ট নিজের ভালবাসার মানুষ ছেড়ে হুট করে অন্য কারো সাথে বিয়ে হওয়ার কষ্ট।অভির জন্য ভেতর টা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।কেউ আমার মুখে অভির নাম শুনতেই চাইছেনা।কিছুক্ষণ আগে বিয়ে হওয়া মানুষ টাকে জোর করে জুড়ে দেওয়া হলো আমার জীবনের সাথে।যাকে চাইলেও কখনো ভালবাসতে পারবোনা।মনের মাঝ থেকে অভির নাম কেটে তার নাম কোনদিন লিখতে পারবোনা।তিন অক্ষরের কবুলের এত শক্তি আগে বুঝিনি।যার নামে কবুল পড়েছি আজ আমার ইচ্ছা না থাকলেও তার সাথে যেতে হবে।

বুকফাটা অার্তনাদ নিয়ে বসে আছি গাড়িতে।বাবা আমার কাছে এসে চোখের পানি ফেলে বললেন,

‘মা একদিন বুঝবি মা বাবা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।আমাদের উপর অনেক রাগ করেছিস তাইনা।খুব শিঘ্রই তুই বুঝবি আমরা ঠিক ছিলাম।’

বাবার এ কথার কোনো উত্তর আমি দিলাম না।ভীষণ রাগ অভিমানে কোনো উত্তর আমার দিতে ইচ্ছা করলো না।খুব বলতে ইচ্ছা করছিলো এটা কেমন ভালো চাওয়া বাবা।আমার মনের চাওয়ার কি কোনো গুরুত্ব নেই,যেখানে আমি নিজেই হ্যাপি নাহ।কিন্তু কিছুই বললাম নাহ।

আম্মু ওপাসে কাঁদছে,খালামনি বুঝাচ্ছে আম্মুকে।আমার ছোট বোন শ্রুতি ও কাঁদছে খুব।

খালু এগিয়ে এসে বললেন,

‘মা মুগ্ধ একটুও চিন্তা করো না।আমরা সবাই আছি তো।তাছাড়া এই এলাকাতেই তো তোমার বিয়ে হয়েছে।আমি রোজ দু’বার করে যাবো, অরহী যাবে,তোমার খালামনি যাবে।একটুও মন খারাপ করোনা।’

খালুর কথার ও কোনো উত্তর দিলাম নাহ আমি।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না আমার।এদের থেকে দূরে গেলেই যেনো শান্তি পাবো।

–বিয়ের পর মেয়ের বাড়ি থেকে একজন সাথে যায় আমার সাথে আরহীকে পাঠানো হলো আর শ্রুতিকে।এ ব্যাপার টা আরো অবাক করলো আমাকে।আরহী?যার সাথে আয়াস এর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো, বিয়েটা হলোনা অথচ তার বাড়িতে কনের সাথে কিভাবে যাবে। খুব অবাক হয়ে আরহীর দিকে তাকিয়ে আছি আমি।আমার সব প্রশ্নের উত্তর আরহীকে দিতেই হবে।কোন জন্মের প্রতিশোধ নিয়েছে আরহী আমার থেকে।এর উত্তর দিতেই হবে আরহীকে।নিজের জীবনের সব কথা যার সাথে শেয়ার করেছি,সব থেকে ক্লোজ ছিলো যে আমার সাথে সে আমার জীবন নিয়ে গেম খেললো কিন্তু কেনো?কোনো কিছুই আমার মাথায় আসছে না।

গাড়িতে আমি জানালার পাশে বসলাম আমার পাশে আয়াস বসেছে।পেছনের সিটে আয়াসের মা, শ্রুতি আর আরহী বসেছে।ড্রাইভারের পাশে আয়াসের বাবা বসেছেন।আরহীদের বাড়ি থেকে গাড়িতে করে দশ মিনিট ও লাগলো না আয়াস দের বাড়ি।পাশাপাশি এলাকাতেই আরহী আর আয়াস এর বাসা।গাড়ি থেকে সবাই নেমে গেলে ও আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাবছি খেয়াল নেই গাড়ি থেমে গিয়েছে।

আয়াসের মা বললেন,

‘আয়াস বৌমা কে নিয়ে এসো।তুমি নেমে এলে কেনো বৌমা কে রেখে এলে কেনো?’

‘আম্মু তোমার বউমা গাড়ি চালাতে পারে অথচ গাড়ি থেকে নামতে পারেনা।তোমার বউমা কি বাচ্চা যে নামতে পারেনা নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণে বসে আছে।’

‘তুমি ওকে নিয়ে এসো আমরা ভেতরে যাচ্ছি।অনেক রাত হয়েছে সবাই ক্লান্ত।সবার ই রেস্ট আর ঘুমের প্রয়োজন এখন।’

আয়াসের আম্মু সহ সবাই ভেতরে চলে গেলো। আয়াস কপাল কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে জিলেপি বানানোর মান্ত্র দিয়ে নিশ্চয়ই মেয়ে মানুষ বানানো।নাহলে এত প্যাচ কেনো আল্লাহ তাদের ভেতরে এটুকু বলেই আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন,

‘সত্যি কি গাড়ি থেকে নামতে পারোনা নাকি এই হ্যান্ডসাম ছেলের কোলে ওঠার জন্য এত বাহানা।একবার কোলে নিয়ে আমার হাত ব্যাথা হয়েছে।আমার পক্ষে আর কোলে নেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় তোমাকে।তুমি যদি ভেবে থাকো রোজ রোজ নায়কদের মতো কোলে তুলে নিয়ে যাবো তোমায় এটা ভাবা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল।আমি কোনো সিনেমার নায়ক নাহ বুঝলে ডিয়ার মিসেস মুগ্ধতা আয়াস। তাও নেওয়া যেতো কোলে কিন্তু মেয়ে মানুষ যে এত ভারী হতে পারে তা তোমাকে উচু না করলে বুঝতাম নাহ।এত মটু কেনো তুমি হ্যাঁ ?কি খাও তুমি?নিজের ফিগার মেইনটেইন করতে পারোনা।এত মোটা মেয়ে আমার জীবনে দেখি নি।তোমাকে পাঁচবার কোলে নিলেই আমার ইন্না লিল্লাহ হয়ে যাবে সিওর।আর্মি ট্রেইনিং এ পাঠানো প্রয়োজন তোমাকে।’

প্রচন্ড রাগী মুডে আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আজেবাজে কথা ছাড়া বলতে পারেন না।আমাকে বিয়ে করেছেন কি এইসব আজেবাজে কথা শোনানোর জন্য।’

আয়াস এইবার মাথায় হাত চালিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

‘ ইয়া হাবিবি।যাক মুখ দিয়ে কথা বের হয়েছে।আমিতো ভেবেছিলাম দুই ঠোঁটের মধ্য কি সুপার গ্লু লেগে এটে গিয়েছে নাকি।গাড়িতে একদম মুড অফ করে এলে।বাই দা ওয়ে,

তোমার কি মনে হয়?..

‘আমার মনে হচ্ছে আজেবাজে কথা ছাড়া আর কিছু শোনানোর জন্য আপনি আমাকে বিয়ে করেন নি।এটা ছাড়া আর কোনো কারণ নেই বিয়ে করার।’

‘ওহ রিয়েলি!আজ জানলাম ছেলেরা বিয়ে করে বউকে আজেবাজে কথা শোনানোর জন্য।’

‘সব ছেলের সাথে নিজেকে গোলাবেন না।সব ছেলে আপনার মতো বিদঘুটে আর ঠোঁট কাটা টাইপ হয়না বুঝেছেন।কিছু ছেলে রোমান্টিক ও হয়।’

‘তোমার সো কলড বয়ফ্রেন্ড বুঝি খুব রোমান্টিক ছিলো।’

‘সিওর ছিলো।আপনার মতো পা থেকে মাথা পর্যন্ত জলানো কথা বলতো না।’

‘ওহ আচ্ছা! কি যেনো তার নাম।’

‘অভি।’

‘তোমার জীবন থেকে অভি নাম টা কেটে আয়াস নামটা লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে মিসেস মুগ্ধতা। ‘

‘আমার মন থেকে অভি নামটা কোনদিন কাটবে না। ‘

‘তোমার জন্য এটাই ভালো হবে যত দ্রুত অভি নামটা মুছে আমার নাম টা লিখবে।’

‘অভির নাম কোনদিন আমার মন থেকে মুছবে না।’

‘আমি মুছিয়ে দিবো সে নাম।আর আমার নাম টা সারাজীবন এর মতো তোমার মনে লিখে দিবো।’

‘যে নাম ভালবাসা দিয়ে লেখা সেটা মুছে ফেলা যায় না।’

‘মুগ্ধতা তুমিও ভালবাসবে আমায়,আর আমার নাম টা লিখবে।’

‘কোনদিন সেটা হবেনা।’

‘চ্যালেঞ্জ করোনা,তুমি হেরে যাবে।’

‘কেনো কারো সাথে চ্যালেঞ্জ করে আমাকে বিয়ে করেছেন বুঝি।যে আমি আপনার প্রেমে পড়বোই।শুনুন আপনার কি মনে হয় আমি কিছুই জানিনা।’

‘হয়তো অনেক কিছু জানো আবার কিছুই জানোনা।তবে একটু বেশী বোঝো তুমি।বেশী বোঝার জন্য আজ এভাবে বিয়ে হয়েছে তোমার।নো নো চেতে যেও না।যাদের ওজন বেশী তাদের সবার ই এই সমস্যা টা আছে তোমার একার নয়।’

‘সামান্য ৫৪ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের একটা মেয়ে উঁচু করে যে হাঁপিয়ে যায় সে কিনা আর্মি অফিসার।কে দিছে আপনাকে এই জব।’

‘যে দিয়েছে সে কি তাহলে মারাত্মক কোনো ভুল করে ফেলেছে।বলেই আমাকে আবার ও কোলে তুলে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো।’

–গাজিপুরের শহর থেকে একটু দূরে আয়াস দের বাসা।না শহর না গ্রাম চারদিক দেখে যা মনে হচ্ছে।তবে আয়াস দের বাড়িটা ভীষণ সুন্দর। এক তলা বিশিষ্ট এ বাড়িটা চোখে তাক লাগানোর মতো সুন্দর। আগে কখনো একতলা বাড়ি এতটা সুন্দর দেখিনি।বাড়িতে ঢুকতে বিশাল বড় গেট,গেটের সামনে উঠান,তারপর ই বিল্ডিং টা।বাঙ্গি কালারের ওয়াল বেশ সুন্দর দেখতে।আয়াস আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে বললো,

‘মুগ্ধতা আমার বিশাল কোনো বিল্ডিং নেই গরীবের এই কুড়েঘর কি তোমার পছন্দ হয়েছে।’

তার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেনো বাড়িটা আমার জন্য ই বানানো।আমি সাথে সাথেই বললাম,

‘এমন ভাবে বলছেন যেনো বাড়িটা আমার জন্য বানিয়েছেন।”

‘আয়াস মৃদু হেসে বললো,তোমার সিকসেন্স অনেক ভালো।’

–তার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।মাঝে মাঝে আজগুবি কিছু কথা বলছে।বিয়ের আগে যে মুড নিয়ে আমাকে ভয় দেখালো তার কোনটায় এখন উনার মাঝে নেই।খুব আশ্চর্য লাগছে আমার কাছে ব্যাপার টা।আমাকে নিয়ে আয়াসের রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো।আয়াসের রুমটা ও দেখতে খুব সুন্দর।বেশ বড় একটা রুম সুন্দর খাট, আলমারি,সিঙ্গেল সোফা আয়াসের মতোই পরিপাটি আয়াসের রুম।

আয়াসের মা বাবা আমার পাশে এসে বসে বললেন,

–মা মুগ্ধতা একদম ভেবোনা।জানি তোমার বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি।তবে তুমি সব কিছু স্বাভাবিক মনে করো।আজ থেকে আমাদের মা বাবা বলেই ডেকো।এ বাড়িতে কোনো ঝামেলা নেই।আয়াস ছুটিতে এসেছে, ছুটি শেষ হলে আয়াসের সাথে তুমি চলে যেও যেখানে আয়াস থাকে তুমিও সেখানে থেকো।আমার আর একটা ছোট ছেলে আছে তোমার ভাই এর মতো।ও বাড়িতে নেই থাকলে দেখতে ভাবি ভাবি করে পাগল করে ফেলতো।ছোট ছেলেটা বন্ধুদের সাথে পিকনিকে গিয়েছে।আমার এই দুই ছেলে নিয়ে সুখের পরিবার।তুমি আমার মেয়ে আজ থেকে।কখনো কোনো অসুবিধা হলে আমাদের জানাবে ঠিক আছে।মা অনেক রাত হয়ে গিয়েছে অনেক গরম লাগলে ফ্রেশ হয়ে নাও বা গোসল করে নাও দেখবে ভালো লাগবে তোমার।

আয়াসের মা বাবা বাইরে চলে গেলে দেখলাম আয়াস আরহীকে বলছে,

‘ তুমি মুগ্ধতাকে কেনো বলে দিয়েছো যে মুগ্ধতাকে আমার প্রেমে ফেলে ছাড়বো।’

আরহী বললো,

‘আমি এসব বলিনি কিছুই।’

আয়াস রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘তুমি বলোনি তাহলে কে বলেছে।তুমি আর আমি ছাড়া তো এসব কথা পৃথিবীর আর কেউ জানেনা।আমাদের প্লান কি অন্য কারো জানার কথা।’

আরহী আয়াস কে নিয়ে খানিক টা আড়ালে নিয়ে গেলো।আমার মাথায় আসছে না তারা আসলে কি বলাবলি করছে।
#তুমিময়_বসন্ত
৫.
#writer_Mousumi_Akter

–রুমটা ফাঁকা কোথাও কেউ নেই।আয়াস আরহীর সাথে পাশেই কোথাও গিয়েছে।কেউ নেই সে সুযোগ এ সুটকেস থেকে ফোনটা বের করে পাওয়ার অন করলাম।আর সাথে সাথে অভিকে কল দিলাম।অভির ফোন সুইটস অফ বলছে।অভি নিশ্চয়ই ফোন সুইটস অফ রেখেই ঘুমিয়েছে।অভিকে একটা মেসেজ করলাম,

“অভি তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।আমার সাথে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।সেটা ফোনে বলা সম্ভব নয়।আমার সাথে যে কোনো ভাবে দেখা করো।না হলে আমাদের আর দেখা হবে না।আমি তোমার থেকে অনেক দূর চলে যাবো অভি।প্লিজ আমাকে বাঁচাও।আমি কোথায় ফেঁসে গিয়েছি জানিনা।”

–অভিকে মেসেজ করেই আবার ফোনের সুইটস অফ করে রেখে দিলাম সুটকেস এ।আয়াস কে দেখে যা বুঝলাম আমার বয়ফ্রেন্ড আছে জেনেও যখন বিয়ে করেছে।তার মানে কিছুতেই আমাকে অভির সাথে যোগাযোগ করতে দিবেনা।আমার কাছে ফোন আছে জানলেও ফোন নিশ্চয়ই নিয়ে নিবে।যেভাবেই হোক আমাকে অভির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।খাটের কোনায় গম্ভীর ভাবে বসে আছি।কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।এরই মাঝে শ্রুতি এলো আমার পাশে।শ্রুতির গায়ে লাল একটা রানী ফ্রক।শ্রুতিকে বললাম,

‘ এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছিস ঘুমোবিনা তুই।’

শ্রুতি বললো,

‘ঘুম আসছেনা আপুই।এই বড়িটা ভীষণ সুন্দর আমার ঘুরে দেখতে খুব ভালো লাগছে।আর জানো আপুই ওইযে আমার দুলাভাই আছে না মানে আয়াস ভাইয়া কে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে জানো।ভাইয়া খুব সুন্দর ভাবে কথা বলে। তাছাড়া দেখতেও সিরিয়াল এর নায়কদের মতো।আর আয়াস ভাইয়ার যে মা -বাবা আছে না ওনারা আরো ভালো।’

শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারলাম আয়াস শ্রুতির ব্রেইন ওয়াস ভালোই ওয়াস করেছে।আয়াস এর অতি প্রশংসা এই মুহুর্তে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।বেশ বিরক্তি নিয়ে শ্রুতি কে বললাম,

‘মানুষের বাইরের চেহারা টা আসল নয় শ্রুতি ভেতরটায় আসল।তুই এখনো অনেক ছোট মানুষ দেখে কিভাবে বুঝবি কে ভালো আর কে খারাপ।’

‘দেখো আপুই আমি কিন্তু ক্লাস সেভেনে পড়ি একদম ই বাচ্চা না।আমার সব বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ড আছে। তারা বাচ্চা নেওয়ার প্লান ও করছে।আমাকে অতটা বাচ্চা ভাবা ও ঠিক না।তোমার ওই বয়ফ্রেন্ড অভিকে আমার ভালো লাগতোনা তার থেকে আয়াস ভাইয়া অনেক ভালো বুঝেছো।’

শ্রুতির কথা শুনে মাথা ঘুরাচ্ছে আমার।ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়ের কিনা বান্ধবীরা বাচ্চা নেওয়ার প্লান করছে।আসলে কোন যুগে এসে পড়লাম।শ্রুতিকে বললাম,

‘বাবা আমার বিয়ে না দিয়ে তোর বিয়ে দিলে ভালো হতো।’

‘বাবাকে বলবো আমার বিয়ে যেনো আয়াস ভাইয়ার মতো কোনো হ্যান্ডসাম এর সাথেই দেয়।আমি তোমার মতো অত রাগারাগি করবো না।’

শ্রুতির কথা শুনে এক চক্কর মাথা ঘুরালো আমার।ভীষণ দুঃচিন্তায় আছি আমি।মানুষের মন বলা তো যায় না আয়াস যদি আমার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে।আমি তো জোর করে কিছুই করতে পারবো না।এমন কি মানুষ কে বলতেও পারবো না আমার সাথে কি করেছে।নিজেকে বাঁচাতে মনে মনে ভাবলাম শ্রুতিকে আমার কাছে ঘুমোতে বলবো।

শ্রুতিকে বললাম,

‘শোন শ্রুতি আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি চেঞ্জ করতে তুই কিন্তু আমার পাশেই ঘুমোবি।অচেনা বাড়ি অন্য কারো পাশে ঘুমোতে হবেনা তোর।’

শ্রুতি মাথা নেড়ে বলবো,আচ্ছা আপুই তুমি যাও আমি এখানে সুয়ে পড়ছি।

–ওয়াশরুমে গিয়ে ভারী শাড়ী গহনা চেঞ্জ করে নিলাম।গায়ে একটু পানি লাগতেই ভীষণ ভালো লাগলো।এই মুহুর্তে গোসল করলে বোধহয় বেশী ফ্রেশ লাগবে।ঝরনা ছেড়ে গোসল সেরে নিলাম।কতক্ষণ গোসল করলাম খেয়াল নেই। নতুন বউ সাথে কোনো থ্রী পিছ নেই।যা আছে সব ই শাড়ী।আমি তো শাড়ি পরতে জানিনা।কাকে ডাকবো?শ্রুতি তো শাড়ী পরাতে জানেনা।আরহী কে ডাকবো।ষাড়ের মতো চিৎকার করে নতুন বউ এর ডাকা কি শোভনীয় দেখাবে।মনে মনে ভাবলাম শ্রুতিকে বলবো আরহীকে একটু ডেকে দে।এই সুযোগে আরহীকে সব প্রশ্ন ও করা যাবে।গায়ে খুব ভালোভাবে টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুমের দরজা হালকা একটু খুলে ডাকলাম শ্রুতি একটু অহনাকে ডাকবি আমি শাড়ি পরতে পারছি না।কয়েকবার ডাকাডাকির পর শ্রুতির কোনো আওয়াজ না পেয়ে দরজা পুরাটা খুলতেই দেখি আমার সামনে আয়াস দাঁড়িয়ে আছে।আয়াস কে দেখেই মাথা ঘূর্ণিপাকের মতো ঘুরছে।লজ্জায় মন চাচ্ছে ফ্লোর ফাঁকা হয়ে যাক আর আমি ভেতরে চলে যায়।ছিঃউনি আমাকে এই বিশ্রি অবস্থায় দেখে ফেললেন।দ্রুত খুলে রাখা বেনারসি গায়ে জড়ালাম।আয়াস আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখছে।মানুষ এত অসভ্য কিভাবে হতে পারে।আয়াস কে বললাম,

‘একি আপনি না বলে কয়ে নক না করে প্রবেশ করেছেন কেনো?’

আয়াস ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,

‘হাউ স্ট্রেইঞ্জ।বউ আমার, রুম আমার, ওয়াশ রুম আমার এখানে কি আসে যায় আমার নক করে আসা আর না আসাতে।আর এখন লজ্জা পেয়ে লাভ কি সুইটহার্ট। যা দেখার দেখা তো হয়েই গিয়েছে।’

‘আ-আপনি এক্ষুনি বেরোন আগে এখান থেকে। আরহীকে ডেকে বলুন আমাকে হেল্প করতে।’

‘আরহী ঘুমিয়েছে।’

‘শ্রুতি কে ডাকুন, শ্রুতি হেল্প করবে।’

‘আমার একমাত্র শালিকা ও ঘুমিয়েছে।’

উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন,ঠিক যেনো আমার চোখের তারার দিকে তাকিয়ে আছেন।অদ্ভুত সে চাহনি।যেনো মনোমুগ্ধকর কিছু দেখছেন উনি।আমার মুখের উপর ভেজা ঝিরি ঝিরি কতগুলো চুল সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললেন,

‘মুগ্ধ।’

‘আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম আপনিও আমাকে মুগ্ধ নামে ডাকছেন।’

‘না মানে তোমার পুরাটায় মুগ্ধতায় ভরপুর।তোমার দিকে তাকালে মনে হয় একরাশ মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেলো আমাকে।’

আমি চুপচুপ উনার কথা শুনছি।উনাকে ধাক্কা মেরে বললাম,

‘ ফ্লার্টিং করছেন।কি ভেবেছেন আমাকে এসব বলে পটাবেন।মুগ্ধতা অত সহযে কারো ছলনায় ধরা দিবেনা।’

আয়াস আমার এসব কথায় পাত্তা দিয়ে বল লো,

“মুগ্ধতা জাস্ট টাওয়াল পরে শরীর জুরে পানি নিয়ে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আমার দ্বারা অনর্থ করতে চাও নাকি।আমার দ্বারা কোনো অনর্থ হলে আমাকে দোষ দিতে পারবেনা কিন্তু।”

“কিসের অনর্থ শুনি।আপনি ওয়াশরুমে এসেছেন কেনো? আমি কি ডেকেছি নাকি আপনাকে।”

উনি আমার দুই হাতের কব্জি ধরে বললেন,

“একসাথে সাওয়ার নিতে এসেছি।এতে প্রেম ভালবাসা বাড়ে।”

“হেল ইওর ভালবাসা,আমি মাত্রই সাওয়ার নিয়েছি।”

“আরেকবার নেওয়া যাবেনা এমন কোনো রুলস আছে নাকি ডিয়ার মিসেস মুগ্ধতা আয়াস।”

এটুকু বলেই আয়াস পানির ঝরনা ছেড়ে দিলো আর বললো,

“ভুলভাল কিছু বলোনা ফিউচারে তোমাকেই পস্তাতে হবে।যেদিন আমাকে ভালবেসে ফেলবে এসব কথার জন্য নিজেই কষ্ট পাবে ইউ নো হোয়াট।”

–আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি এতটা রহস্যময় কথা কেনো বলেন উনি।আয়াস গায়ের গেঞ্জি খুলে খালি গায়ে সাওয়ার নিচ্ছে।ফর্সা সরু নাকের মাথায় ছোট্ট একটা তিলে আয়াস কে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে।ভেজার পরে আয়াস কে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে।আমার মাথায় ও পানি পড়ছে।ইচ্ছা করছে এখান থেকে পালিয়ে যায়।বেশ অস্বস্তি ও লাগছে আমার।আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে আমার দুই হাতের দুই কব্জি ধরে বললো,

“পৃথিবীর সব মুগ্ধতা কি তোমার মাঝেই আছে।”

আয়াসের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভীষণ মায়াভরা চোখেই আয়াস কথাটা বললো।আয়াস এর থেকে বাঁচতে বললাম,

“অসভ্য মানুষ একটা ছাড়ুন আমায়।”

আয়াস আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

“কি ভাবছো তোমার সাথে রোমান্টিক সাওয়ার নিলাম। নোপ মুগ্ধতা, লেডিস ফার্স্ট ব্যাপার টা আমার পছন্দ নয়।এইজন্য আরেকবার ও তোমাকে ভেজালাম।লেডিস ফার্স্ট হতে দিলাম না।এবার সরো আমি বাইরে গিয়ে চেঞ্জ করবো।”

মানুষটার কি অদ্ভুত বিহেভিয়ার। উনি তো বাইরে চলে গেলো আমি ভেজা শরীরে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি।ভেতরে রাখা শাড়ি ও ভিজে গিয়েছে।বাধ্য হয়ে ভিজে চুপচুপে কাপড় এর পানি সহ রুমের ভেতরে প্রবেশ করলাম।ফ্লোর পানিতে ভিজে যাচ্ছে।কিন্তু কিছুই করার নেই।আয়াস কে দেখলাম কালো ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে চুল মুছছে।আমাকে দেখা মাত্রই আয়াস আমার দিকে বললো,

“ষ্টুপিড এর মতো কাজ করছো।নিজেই ওখানে আছাড় খাবে আর আমাকেই নায়কের মতো ধরতে হবে।কোন জন্মের নায়কা হওয়ার শখ মেটাচ্ছো বুঝলাম না।এই পড়ে গিয়ে আমার গায়ের উপর পড়ছো,গাড়ি থেকে কোলে উঠে বাড়িতে প্রবেশ করছো,আবার একসাথে সাওয়ার নিতে প্রায় খালি গায়ে ওয়াশরুমে ওয়েট করছো।এখন আবার চাইছো আমি তোমায় শাড়ি পরিয়ে দেই তাইনা।”

ভীষণ রাগে মনে চাচ্ছে আয়াস এর গলা টিপে দেই।মানুষ এত বানিয়ে বানিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারে।আয়াস কে বিরক্তি নিয়ে বললাম,

“আপনার জন্ম কোন লগ্নে হয়েছিলো। বাজে কথা বলার লগ্নে তাইনা?আপনাকে নিয়ে আমি কিছুই ভাবছি না ওকে।”

“আরে থাক বুঝি বুঝি।মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটেনা।আসো আমি তোমায় হেল্প করি।”

“ঘরের মধ্য তাকিয়ে দেখি শ্রুতি নেই।আয়াস কে বললাম,শ্রুতি কোথায়?”

“আরহীর পাশে ঘুমোতে গিয়েছে।”

শ্রুতি এখানে না ঘুমিয়ে চলে গেলো।আমার কি হবে তাহলে সেটাই ভাবছি।এরই মাঝেই আয়াস আবার বললো,

“এভাবে খাম্বার মতো ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে রুমটা বন্যায় না ভাষিয়ে আগে চেঞ্জ করো।জানি নিজে পারবেনা আমি হেল্প করছি।”

“নো নিড ইওর হেল্প।”

“ওকে ফাইন!আমি ঘুমোতে যাচ্ছি।সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।”

চলবে?…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here