তুমিময় বেদনা পর্ব -০৮

#তুমিময়_বেদনা~
#Mst_Nafisa~
#Part_8

আজ জিসান মিহুর বিয়ে, খান বাড়ি বিয়ের সাজে সেজে উঠেছে। জিসানের আম্মু ছেলের বিয়ের জন্য কোন রকমের কমতি রাখেনি। এখন জিসানের আম্মু হাটতেও পারে, কথা বলতে পারে না কিন্তু সেটার ও চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ডালি আর কিছু মেয়ে মিলে মিহুকে বউ সাজে সাজাচ্ছে। মিহুর দিক থেকে কেউ নেই তাই এক বাড়িতেই বিয়ে হচ্ছে তাদের। মিহুকে লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পরিয়েছে,, মাথায় খোপা করে গোলাপ ফুল দিয়েছে চাড়িপাসে। হালকা মেইকআপ, লাল লিপ্সটিক। অনেক সুন্দর লাগছে মিহুকে কিন্তু মিহু মন খারাপ করে বসে আছে। আজ মিহুর বিয়ে অথচ মিহুর দিক থেকে কেউ নেই। মিহু মন খারাপ করে বসে ছিলো তখন রুমে আসে মামনি। মিহুকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ইশারায় বলে।

“কি হয়েছে আমার মা টার?”

মিহু মুচকি হেসে বলে।

“কিছু না। ”

মামনি মিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে ডালি আসে রুমে আর বলে।

“ম্যাম কাজি সাহেব চলে এসেছে মিহুকে নিচে নিয়ে যেতে হবে।”

মামনি মিহুর হাত ধরে নিচে নিয়ে যায়। মিহু সিরি দিয়ে নামার সময় একবার চোখ তুলে জিসানের দিকে তাকায়। কি সুন্দর লাগছে জিসানকে রেড শেরওয়ানিতে। জিসান নিচ থেকে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে হা করে। জিসানের চোখে মিহুকে পরির মতো লাগছে লাল পরি। মিহু যত এগিয়ে যাচ্ছে তত মিহুর বুক কাপছে, কেউ যেনো বুকে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। মিহু কে মামনি জিসানের পাসে বসিয়ে দেয়। কাজি সাহেব আসে বিয়ে পড়ানো শুরু হয়,, জিসান মিহুকে দেখতে এতোই বাস্ত যে কাজি কি বললো কিছুই শুনেনি সে। প্রথমে কাজি রেজিস্ট্রি পেপার এগিয়ে দেয়,, জিসান সাইন করার পর মিহু সাইন করে। সাইন করার সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রি পেপার টা জিসানের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় খুব দ্রুতই। তার৷ কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে এবার মিহুর কবুল বলার সময়। যদিও মিহুর গলা কাপছে তবুও সে বলেই দিলো তিন বার কবুল। তারপরে জিসানকে বলা হয়, জিসান কোন বাধা ছাড়াই তিন বার কবুল বলে দেয়। কবুল বলা শেষ হয় আর সেই সময় আসে জিসানের ছোট আব্বু। রাগি একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে থাকে সামনে বসে থাকা মিহুর দিকে। কিন্তু কিছুই বলে না সোজা গিয়ে দাঁড়ায় মামনির পাসে। পাসে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে টের পেয়ে মামনি পাসে তাকাতেই চমকে উঠে আরিয়ান খান কে দেখে। মামনির চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।

আরিয়ান খান শয়তানি হেসে বলে।

“তো কেমন আছেন ভাবি? শুনেছি এই মেয়ে আপনাকে একদম ঠিক করে তুলেছে, এত ভালোবাসা দিয়েছে সোজা ছেলের বউ বানিয়ে দিলেন।”

মামনি চুপ করে আছে, হাত পা কাপছে মামনির।

“ওহহো তুমি তো কথায় বলতে পারো না সো স্যাড। আচ্ছা তোমাকে কিছু বলি? বলায় যায় তুমি কাউকে বলবে না আমি জানি।”

আরিয়ান খান শয়তানি হেসে আবার বলে।

“এই মেয়েটাকে দেখছো না, যে তোমাকে সুস্ত করে তুলেছে। তাকে আমি অসুস্ত করার ব্যাবস্থা করে ফেলেছি। সুন্দর না ব্যাপার টা? তার সঙ্গে তোমার ওই ছেলে জিসান কেউ ওপরে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেছি।”

এই কথা শুনে মামনির চোখ থেকে পানি চলে আসে সে পারছে না চিৎকার করে এই শয়তান লোকটার মুখশ খুলে ফেলতে। আরিয়ান আবার বলে।

“স্বামী হারা, ছেলে হারা, আর এই উরে এসে জুড়ে বসা বউমা হারা হয়ে তুমি তো একদম নিঃস্ব হয়ে যাবা ভাবি। তোমার যাওয়ার যাইগা কথাও থাকবে না। তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে কারণ আমি তো তোমাকে মারবো না, ভালোবাসি যে। জোয়ান কালে তো আমার হলে না ওই আরমানকে বিয়ে করলে।এখন না হয় বুইড়া কালে আমার হয়ে যাবে।”

আরিয়ান খানের কথা শুনে মাহিরার ভিতর থেকে ঘেন্না বেরিয়ে আসে,, এই লোকটা কে মাহিরা ভিষণ ঘেন্না করে ভিষণ। আরিয়ান খান আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিসান আম্মু বলে ডাকে। জিসানের ডাকে নিজেকে ঠিক করে চোখের পানি মুছে জিসানের কাছে যায় মাহিরা খান। মিহু জিসান সালাম করে মামনিকে,, মামনি ইশারায় বুঝিয়ে দেয়,, “অনেক ভালো থাক তোরা কোনো বিপদ যাতে না আসে।” মামনিকে সালাম করা হলে আরিয়ান খানের কাছে যায় জিসান মিহু। দুই জনে সালাম করে আরিয়ান খান কে, আরিয়ান খান খুব ভদ্র ভাবে হেসে বলে।

“অনেক ভালো থাক তোরা। তো জিসান আব্বু বিয়ে টা করেই নিলে তাহলে আর এতো দিনে আমি ই একটা বিয়ে করতে পারলাম না।”

আরিয়ান খানের কথায় মিহু রাগি চোখে তাকায় তার দিকে কিন্তু পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে নেয়। জিসান মুচকি হেসে বলে।

“এমন পরিকে ফেলে রাখলে হয় ছোট আব্বু তাই বিয়ে করে নিলাম, এখন তোমার জন্য একটা কাকি খুঁজে বিয়ে দিয়ে দিবো।”

“এই বুড়ো বয়সে আর বিয়ে।”

আরও কিছু মজা করে জিসান মিহু একটা সোফায় বসে। জিসান মিহুকে ফিসফিস করে বলে।

“আমি পাগল তোমার এই রুপে সুন্দরী। ”

“পাবনা পাঠিয়ে দেয় তাহলে?”

মিহুর এমন উত্তরে জিসান বলে।

“যাও তো তুমি একটা আনরোমান্টিক। শেষ মেষ আমার কপালে আনরোমান্টিক বউ জুটলো? কি হবে আমার এখন?”

“নাটক ছারেন,, আচ্ছা আপনার ছোট আব্বু বিয়ে করে নি কেনো?”

জিসান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে বলে।

“ছোট আব্বু কলেজ লাইফ থেকে একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতো, ছোট আব্বুর ক্লাসমেইট ছিলো সেই মেয়ে। কিন্তু মেয়েটা অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসতো, আর যাকে ভালোবাসতো তার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় মেয়েটার। যদিও ছোট আব্বুর ভালোবাসা এক পাক্ষিক ছিলো তবুও বিয়ে করেনি ছোট আব্বু এখনো। কতো আনলাকি মেয়েটা যে ছোট আব্বুকে রিজেক্ট করেছে।”

মিহু বলে।

“এখন যদি আমাকে কেউ প্রপোজ করে তাহলে কি আমি চলে যাবো তার কাছে?”

জিসান রাগ নিয়ে বলে।

“মেরে ফেলবো তোমাকে। ”

“তাহলে ওই মেয়ে আনলাকি হয় কি করে? ওই মেয়েটা অন্য একজন কে ভালোবাসে আর তাকেই বিয়ে করেছে আপনার ছোট আব্বুকে রিজেক্ট করে। আমি এখন আপনাকে ছেড়ে তো আর অন্য জনের হাত ধরতে পারবো না তাই না?”

জিসান ভেবে দেখলো বিষয় টা,, হিসাব মিলিয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে হুট করেই সবার আরালে গালে একটা চুমু দিয়ে বলে।

“আমার বউ টা কত্তো বুঝে, বুদ্ধিমতি বউ আমার।”

মিহু ভিষণ লজ্জা পেলো, লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে কি অসভ্য এই লোকটা।

বিয়ের সব কাজ শেষের দিকে, ফটোশুট থেকে খাওয়া দাওয়া সব শেষ করে। মিহুকে জিসানের রুমে রেখে আসে ডালি, বাসর ঘর বলে যাকে আজকের রাতে। মিহুর ভিষণ ভয় লাগছে সাদা আর লাল গোলাপ দিয়ে পুরো রুম সাজিয়ে রেখেছে খুব সুন্দর লাগছে। আর ফুলের গন্ধে মহমহ করছে চারিদিকে, মিহু বেডের মাঝে চুপটি করে বসে আছে। জিসানের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু জিসানের আশার নামই নেই।

রাত ১২ টার দিকে জিসান রুমে আসে, রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে মিহু ঝিমুচ্ছে। জিসান মুচকি হেসে বেডের কাছে গিয়ে উহু উহু করে, মিহু চমকে ওপরে তাকিয়ে জিসানকে দেখে। বেড থেকে উঠে মিহু জিসানকে সালাম করে জিসান মিহুকে উঠিয়ে বলে।

“পায়ে ধরে সালাম করতে হবে না। তুমি এই গুলো পালটে আসো যাও পাতলা কিছু পরো ভালো লাগবে।”

জিসানের কথায় মিহু ওয়াশরুমে যায় একটা শাড়ি নিয়ে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে জিসান বারান্দায় দাঁড়িয়ে। মিহুও গেলো জিসানের কাছে,, পাসে মিহু দাঁড়াতে জিসান মিহুকে কাছে টেনে জরিয়ে ধরে আর বলে।

“আমার জীবনে আশার জন্য ধন্যবাদ তেজপাতা।”

“আপনি আমাকে তেজপাতা বলেন কেন?”

“কারণ তোমার চোখে মুখে আমি অন্যরকম একটা তেজ দেখি যা অন্য মেয়েদের নেই। আমার কখনো মনে হয় তোমার এই চোখেই আমার ধ্বংস, আবার মনে হয় তোমার এই চোখেই আমার সুখ শান্তি।”

মিহু কথা কাটানোর জন্য বলে উঠে।

“আজ না আমাদের বাসর রাত।”

জিসান ব্রু কুচকে মিহুর দিকে তাকায়, মিহু কি বলে ফেলেছে তা ভেবে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় আর মনে মনে বলে, “ইশ এই কথা টাই বলতে হলো। ” জিসান দুস্টু হেসে মিহুকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে।

“বাহ আমার বউ দেখি খুব ফাস্ট, আমি তো আনরোমান্টিক ভেবেছিলাম।”

“যাহ কি বলেন, ছারেন ঘুমাবো।” (ছারানোর চেষ্টা করে)

“না না আজ আবার কিসের ঘুম? তুমি না বললা আজ আমাদের বাসররাত।”

মিহু লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, জিসান মিহুকে কলে তুলে রুমে নিয়ে যায়………..

সকালে,,,,

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here