তোকে দিয়েছি মন পর্ব ১

তোকে_দিয়েছি_মন❤
পর্ব-১+২
Writer: Sidratul muntaz
.
shuvo_Nill
হুট করে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমার ঠোটে কিস করলেন ইশান ভাইয়া। উনার এমন আচরণে আমি এতোটাই শকড যে প্রথম কয়েক সেকেন্ড বুঝতেই পারিনি কি হচ্ছে…….মাথাটা যেন হ্যাং মেরে গেল। কিন্তু পরক্ষনেই যখন উপলব্ধি করতে পারলাম যে কতটা ভয়াবহ একটা ঘটনা আমার সাথে ঘটছে ঠিক সেই মুহুর্তে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠলাম আমি। কিন্তু সেই আশা নিতান্তই নিরাশা সেটাও কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই বুঝে নিলাম যখন তিনি আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। উনাকে নিজের থেকে সরানো তো দুর……এক বিন্দুও নাড়াতে পারছিলাম না আমি এমন কি নিজেও নড়তে পারছি না। হাত পা যেন ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে আমার। চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। আর কিছুক্ষণ এই অবস্থায় থাকলে হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলব। কিন্তু জ্ঞান আমায় হারাতে হল না…. এর আগেই আলো জ্বলে উঠায় মুক্তি পেয়ে গেলাম আমি। আলো আসার সঙ্গে সঙ্গে এদিক ওদিক তাকিয়ে ইশান ভাইয়াকে খুজতে লাগলাম। কিন্তু উনি কোথাও নেই৷ এইটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেলেন?? আমার খুব রাগ হচ্ছে আর সেই সাথে কান্নাও পাচ্ছে। জীবনে এই প্রথম কোনো ছেলে আমার সাথে এমন আচরণ করল।

আমি আশফীয়া তারিন। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ খুব কমই হয়েছে আমার। কোনো ছেলে আমাকে কিস করা তো দুর……. জীবনে আমার দিকে চোখ তুলেও তাকানোর সাহস করেনি আমার বড়ভাই তারিফের ভয়ে। আর সেইখানে কিনা তারিফ ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে ইশান ভাইয়া আমার সাথে এমন একটা কান্ড করে বসল??? আমি রীতিমতো বিস্ময়ের শেষ পর্যায় পৌছে গেছি।

প্রথম দেখাতে ইশান ভাইকে খুব সহজ সরল আর ভদ্র ভেবেছিলাম। বড় আপুরা তো ইশান বলতেই কুপোকাত। তার কিউটনেসের প্রেমে সবাই রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে। আমিও যে প্রথম দেখাতে ক্রাশ খাইনি তা নয়। বিশাল হাইটের ফরসা সুদর্শন এই ছেলেটির প্রতি সতেরো বছরের জীবনে প্রথমবার ক্রাশ খেয়েই নিলাম আমি। কিন্তু সকালের সেই ক্রাশটা যে সন্ধ্যার মধ্যেই আমার জন্য বাশে পরিণত হবে সেটা কি করে জানব?? তারিফ ভাইয়া তো সারাক্ষণ ইশানের নামে গুণগান আওরাতে থাকে মায়ের কাছে। ইচ্ছে করছে এখনি তারিফ ভাইয়াকে গিয়ে সব টা বলে আসি। কিন্তু সেটা যে সম্ভব না। এইরকম জন সমাগম জায়গায় কি করে এই কথা ভাইয়াকে বলব আমি?? তার উপর আজকে তারিফ ভাইয়ার গায়ে হলুদ। চারদিকে একটা উৎসবের আমেজ….. এই আমেজটা নষ্ট করার ইচ্ছে বা অধিকার কোনোটাই আমার নেই। ভাইয়াও বিষয় টা জানতে পারলে খুবই কষ্ট পাবে । যেই বেস্টফ্রেন্ডকে ভাইয়া এতটা ভালবাসে,, বিশ্বাস করে,, তার নামে এইরকম একটা কথা নিশ্চয়ই সহ্য করতে পারবে না সে । বিয়ে বাড়িতে বড়সড় একটা সিন ক্রিয়েট হয়ে যাবে। এমনিতেই বার বার লাইট অফ হয়ে যাওয়ার প্রবলেম নিয়ে ভাইয়া এবং সবাই ভীষণ ভাবে বিরক্ত। অথচ এই সমস্যা টাকে অস্ত্র হিসেবে কি সুন্দরভাবেই না ব্যবহার করছে ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড নামক শয়তানটা। ঢাকা থেকে আজ সকালেই এসেছে এই ইশান নামক শয়তান আর তার দলবল। মানে ভাইয়ার অন্যান্য বন্ধ বান্ধবেরা। ইশান ভাইয়া প্রথম দেখাতেই কেমন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলেন আমার। দিকে। তখন ব্যাপারটাকে এতো সিরিয়াস ভাবে নেইনি আমি। কিন্তু এখন যেই সাংঘাতিক একটা ঘটনা ঘটে গেল…… তাতে আমি সম্পূর্ণ বাকশক্তি হারিয়ে থম মেরে বসে আছি । দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে। উঠে যাওয়ার শক্তি টুকুও নেই আমার মধ্যে। এতোক্ষনে আমার খয়েরী রঙের শাড়িটায় কাদামাটি মিশে বিছরি একটা অবস্থা। কিন্তু সেটা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। কিছুক্ষন এইভাবে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকার পর হঠাৎ আয়মান ভাইয়ার ডাকে ঘোর কাটল আমার।
আয়মান ভাই দাত কেলানো হাসি দিয়ে বললেন–

তারু!! এইখানে এইভাবে বসে আছো কেনো??? আরে ওইখানে সবাই হলুদ খেলছে তুমি খেলবে না?? তারিফকে হলুদ মাখিয়েছো??

আমি মিষ্টি করে হেসে মাথা নাড়লাম। যার অর্থ না। উনার কথায় বিন্দুমাত্র আগ্রহ খুজে পাচ্ছি না আমি। সবার সাথে সঙ্গ দিতেও ইচ্ছে করছে না আর। শুধু ইচ্ছে করছে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গিয়ে দরজা দিয়ে বসে থাকতে। কিন্তু সেটা হল না। তার আগেই আয়মান ভাইয়ার ডাকে ছুটে এলো অয়ন্তি আপু আর জায়মা। জায়মা আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর অয়ন্তি আপু এসেছেন ইশান ভাইয়াদের সাথে। তারিফ ভাইয়ার ফ্রেন্ড। দুজনের জোর জবরদস্তিতে খোলা মাঠের সাজানো স্টেজে যেতে হল আমাকে। সেখানেই আরেকবার দেখা হয়ে গেল ইশান ভাইয়ের সাথে। খয়েরী রঙের শেরয়ানী পড়ে ভাইয়ার পাশে বসে নিজের সিল্কি চুলে হাত বুলাচ্ছেন। ভাইয়া আবার কি যেন একটা বলছে উনাকে। খুব হাসছে ভাইয়া। অনেকটা হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো। ইশান ভাইয়া মুচকি হেসে আগ্রহ নিয়ে ভাইয়ার কথা শুনছেন। হঠাৎ আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন উনি। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ নামিয়ে নিলাম। আড়চোখে আরেকবার তাকিয়ে দেখলাম উনি এখনো আমার দিকে দেখছেন। ভাইয়ার পাশে বসে থেকেও এইভাবে ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কি সাহস উনার??? আর ভাইয়াও যেন দিন দিন ক্যাবলাকান্ত হয়ে যাচ্ছে। কিছুই বোঝে না নাকি?? আমার ভাবনার জগৎ ছিন্ন করে জায়মা পেছন থেকে ধাক্কা দিল আমায়।

— এই তারু!! দাড়িয়ে আছিস কেনো বোকার মতো?? তারিফ ভাইকে হলুদ মাখাবি না?? ভাইয়া কখন থেকে ওয়েট করছে তোর জন্য!! চল চল।

জায়মা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল তারিফ ভাইয়ের কাছে। কিন্তু ইশান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই তখনের ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে আমার। ভীষণ লজ্জা লাগছে উনার চোখে চোখ রাখতে। কেনো জানি মনে হচ্ছে তারিফ ভাইয়ার সামনে গেলেই ভাইয়া বুঝে ফেলবে ব্যাপারটা। নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে আমার।
জায়মা আবার ধাক্কা দিল আমাকে। আমি কিছুটা নড়েচড়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখলাম তারিফ ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

— কিরে কি হয়েছে তোর?? হা করে তাকিয়ে কি এতো চিন্তা করছিস??

ভাইয়ার কথার উত্তরে আমি কিছু বললাম না। ইশান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। উনার চোখেমুখে দুষ্টুমী হাসি। আর কেউ কিছু জানুক আর না জানুক অন্তত এই খাটাশ টা জানে যে আমি কি নিয়ে এতো চিন্তা করছি। রাগে মুখ ফুলে উঠল আমার। জায়মার হাত থেকে হলুদের বাটিটা নিয়ে চটজলদি ভাইয়ার পুরো মুখে হলুদ ভরিয়ে দিলাম। ভাইয়া চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে বলে উঠল–

আরে কি করছিস পাগলি?? এইভাবে নাকেমুখে কেউ হলুদ মাখায়??

জায়মা খিলখিল করে হেসে উঠল। ভাইয়াও হাসছে। আমি বাটি হাতে কটমট চোখে ইশানকে দেখছি। ভাইয়া টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন —

ইশানকেও এভাবে মাখিয়ে দে একটু।

ভাইয়ার কথায় আমি বাকা হাসলাম। এই শয়তানকে শায়েস্তা করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছি। হলুদের বাটি থেকে মুঠোভর্তি হলুদ নিয়ে ইশান ভাইয়ার মুখে লাগাতে যাব তার আগেই উনি আমার হাত ধরে হেচকা টান দিলেন। আমি অনেকটা ঝুকে পরলাম উনার দিকে।
গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছি কিছুই বুঝতে পারছিনা। ভাইয়ার সামনে এমন কান্ড করার মানে কি?? উনার মুখে এখনো সেই শয়তানি হাসি। হাতটা এতো শক্ত করে ধরে আছে যে ছাড়াতেও পারছি না। ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে হাত!

তোকে_দিয়েছি_মন❤
পর্ব-২
Writer: Sidratul muntaz

হাত ছাড়ানোর প্রানপণ চেষ্টা করেও যখন আমি ব্যর্থ….. তখন অসহায় চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া হাসছে। যেন এই ব্যপারটায় উনি ভীষণ মজা পাচ্ছে। ভাইয়ার হাসি দেখে আমি বে আক্কেল হয়ে গেলাম। এইভাবে হাসছে কেনো ভাইয়া?? এই মেন্টালের সাথে থাকতে থাকতে আমার ভাইয়াও কি মেন্টাল হয়ে গেল?? আমি চরম অবাক দৃষ্টি নিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার আচরণে আমি ভীষণ বিরক্ত আর ইশানের আচরণে আমি চরম ক্ষিপ্ত। আমার ক্ষিপ্ত আর বিরক্ত দুইটার মাত্রাই প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পেল যখন আমাকে অবাক করে দিয়ে ইশান ভাইয়া পুরো এক গাদা রঙ আমার মুখের উপর ছুড়ে দিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় মুখ হা করে দাড়িয়ে পরলাম আমি। জায়মা আমার থেকে এক হাত দূরে গিয়ে দাড়াল। আর ইশান ভাইয়া…. সে তো অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে আমার নিজের ভাইটাও। যেন হাসির কম্পিটিশন লেগেছে। লাইক সিরিয়াসলি?? এই ছিল তাদের মনে?? আমি একশ পারসেন্ট নিশ্চিত এই আইডিয়াটা ইশান নামক শয়তানের। ভাইয়ার মাথায় এইরকম ফালতু আইডিয়া আসতেই পারে না। আমাকে এইভাবে অপমান করে শয়তান টা কি মজা পেল কে জানে?? এর থেকে যদি পানি মেরে দিতো তাও অনেক ভালো ছিল?? কিন্তু তাই বলে রঙ?? রঙের বিছরি গন্ধে আমার বমি আসার উপক্রম….. আর সেইসাথে শরীর আঠালো হয়ে আসছে…… কি বাজে অবস্থা!! এইখানে আর এক মুহুর্তও দাড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয়না। ইশানকে তো আমি পরে দেখে নিব। আগে নিজের এই বেহাল দশা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি।

.

.

ভেজা চুল পেছনে ছড়িয়ে আমি টায়রার সাথে গল্প করছি। টায়রা হল আমার আদরের টিয়াপাখি। এইটা ভাইয়া আমার জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল। আমার লাইফের বেস্ট উপহার। টায়রা আমার নামটা খুব সুন্দর করে উচ্চারণ করে। একমাত্র ওর মুখেই আমার নামটা সবচেয়ে কিউট লাগে। তা– রিন। এইভাবে টেনে টেন আমার নামটা বলে সে। আমাকে দেখলেই ওর নাম ধরে ডাকা শুরু হয়ে যায়। আর আমি হেসে উঠি। টায়রাকে নিয়ে যখন আমি গল্পে মগ্ন ঠিক তখনি মা এসে একটা বিশাল থালা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল সবাইকে চা দিয়ে আসতে। মায়ের কথায় আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। এই রাত বারোটা বাজে কে চা খাবে মাথায় আসছে না আমার। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে মার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম–

এই রাতের বেলা কে চা খাবে শুনি??

— বাহিরে গিয়ে দেখ কে চা খাবে।

মা আমার হাতে ডিস টা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমিও উঠে দাড়ালাম…. বাহিরে কি হচ্ছে দেখার উদ্দেশ্যে। বাহিরে গিয়ে দেখলাম খোলা মাঠে সবুজ ঘাসের উপর সবাই আরাম করে বসে আছে। কেউবা শুয়ে আছে। আর গল্পে মেতে উঠেছে মহল। আজকে মনে হচ্ছে সারারাত এসবই চলবে। কারণ আমাদের বাসায় এতো মানুষ শোয়ার মতো জায়গা নেই বললেই চলে। সবাইকে উঠানে মাদুর বিছিয়ে শুতে হবে। সেটাও খারাপ বিছানা না….. আমাদের বাসার বর্ণনা টা যদি দিতে হয় তাহলে বলা যায় বাসাটা দুই চালা। দ্বিতীয় চালায় ছাদ। আর প্রথম চালায় সারিবদ্ধ ভাবে অনেক গুলো কামড়া। আর মাঝখানে বিশাল উঠান….. যা একদম খোলা মাঠ পর্যন্ত বিস্তৃত। সম্পুর্ণ জায়গাটাই আমাদের।
চায়ের ডিসটা মাটির উপর রেখেই আমি জায়মার পাশে বসে পরলাম। জায়মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। ভেজা চুলে হাত দিয়ে বলে উঠল–

গোসল কখন করলি??

— কিচ্ছুক্ষন আগে।

অয়ন্তি আপু আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে ইশারা করে বলল সাফিন ভাইয়ার জোকস শুনতে। খুব মজা করে জোকস বলছেন উনি। আর সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে। অবশ্য ইশান ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে জোকস শোনা নিয়ে উনার খুব একটা ইন্টারেস্ট নেই। আরামে বসে ফোন টিপছে। আর তারিফ ভাইয়া উনার কাধে হাত রেখে হেসে চলেছেন। মাঝে মাঝে আবার ইশানকে ঝাকিয়ে বলছেন মনোযোগ দেওয়ার জন্য। ইশান ভাইয়া হয়তো ভাইয়ার মন রাখতে শুধু কয়েকবার মাথা নাড়ছেন। হঠাৎ আয়মান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন–

আরে তারু! তুমি কি গোসল করেছো নাকি??

উনার কথা সবাই থেমে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন। সাফিন ভাইও জোকস বলা বাদ দিয়ে আমাকে দেখছেন। আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গলা ঝেরে বললাম—

হুম।

আয়মান ভাইয়া আবার বললেন—

পাগল নাকি?? এই ঠান্ডার মধ্যে তাও আবার রাতের বেলা কেউ গোসল করে?? ঠান্ডা লেগে যাবে না??

জানিনা উনার কথার পাওয়ার কতটুকু ….. কিন্তু কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে একটা হাচি দিয়ে বসলাম আমি। আমার হাচির আওয়াজে প্রায় সবাই হেসে উঠল। ইশান ভাইয়া মোবাইলের স্কিনে চোখ রেখেই হাসছেন। আয়মান ভাইয়া হাসতে হাসতে বললেন–

দেখছো! বলতে না বলতেই।

জায়মা মুখ চেপে হেসে দিয়ে বলল–

গোসল না করে কি আর উপায় ছিল?? যেই আলকাতরা পড়েছে গায়ে…… তারু তোকে কিন্তু তখন পুরা মা কালির মতো লাগছিল।

আয়মান ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন–

আলকাতরা?? মানে কি??

তারিফ ভাইয়া হেসেই চলেছে। জায়মা আয়মান ভাইয়ার কথার উত্তরে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আমি জায়মার হাত খামচে ধরলাম।
তারিফ ভাইয়া বলল–

দোস্ত এই খুশিতে একটা গান হয়ে যাক??

আমি তারিফ ভাইয়ার কথায় চোখ সরু করে তাকালাম। কিসের খুশির কথা বলছেন ভাইয়া??

অয়ন্তি আপু বলল– কিসের খুশি রে!!

তারিফ ভাইয়া বলল— আরে খুশি মানে খুশির ঠেলায়।

— কিসের খুশির ঠেলায়?? ও বুঝেছি। তোর তো আবার বিয়ে। তারিফের বিয়ের খুশির ঠেলায় এখন গান শুনবো আমরা।( হাত উচু করে তালি বাজিয়ে)

সাফিন ভাইয়া বললেন— হ্যা আর গানটা কে গাইবে??

অয়ন্তি আপু নাকে পেচকি কেটে বললেন — অন্তত তুই এই কাকের মতো কণ্ঠ নিয়ে গান করার কথা বলিস না প্লিজ। তোর কণ্ঠে জোকস টাই মানায় গান না।

সাফিন ভাইয়া বললেন– অপমান করলি??

আয়মান ভাইয়া বলল— অপমানের কিছু নেই। তোর গানের কণ্ঠও ভালো। কিন্তু ইশানের মতো গুড সিংগার থাকতে তুই কেনো কষ্ট করে গান করতে যাবি??( হেসে হেসে)

আয়মান ভাইয়ের কথা শুনে ভ্রু উচু করে তাকালাম আমি। গুড সিংগার?? এই শয়তান আবার গানও জানে না কি?? যদি সত্যিই ইশান গান করে….. তাহলে সেই গান শোনার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। তাই উঠে দাড়ালাম। উদ্দেশ্য ঘরে চলে যাব। কিন্তু সেটা হল না। তার আগেই জায়মা আমার হাত ধরে বলল— এই তুই কই যাস?? বোস আমাদের সাথে!!

— না রে….. আমার অনেক শীত লাগছে। আমি ঘরে চলে যাই।

তারিফ ভাই বললেন– আরে কিসের শীত?? লাগে তো আমার চাদর গায়ে জড়িয়ে রাখ। তবুও বোস।
ইশানের গান টা শুনে যা….. কি যে চমৎকার গান করে। এই ইশান… তুই শুরু কর তো।

ইশান ভাইকে দেখলাম পেছন থেকে গিটার বের করলেন। বাহ!! সবকিছু নিয়েই একদম তৈরি হয়ে বসেছেন দেখছি। আল্লাহই জানে কি গান গাইবে। এর গান শুনে অকালে প্রাণ ত্যাগ করার ইচ্ছে আমার নেই। তাই বলে উঠলাম–

ভাইয়া আমি যাই। আমার ভালো লাগছে না।

ইশান ভাইয়ার মুখে কথা ফুটল এবার। গিটার টাকে ঠিক মতো ধরতে ধরতে বললেন–

আরে বসো বসো। আমি আবার তারা না দেখে গান গাইতে পারি না। ( দুষ্টমি হাসি)

আয়মান ভাইয়া বললেন– হ্যা দোস্ত! আজকে আকাশে কিন্তু অনেক তারা। একদম ঝলমল করছে।

ইশান ভাই বললেন— জমিনেও অনেক তারা ঝলমল করে।

উনার কথায় চোখ বড় করে তাকালাম আমি। কথাগুলো কাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন সেটা বেশ বুঝতে পারছি আমি। নাক গাল এক সঙ্গে ফুলিয়ে বসে পড়লাম জায়মার পাশে।

আয়মান ভাই বললেন– জমিনে তারা কোথায় দেখলি??

আমি কটমট চোখে ইশান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। সাফিন ভাই হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। তাই হঠাৎ বলে উঠলেন–

বুঝি বুঝি। আকাশের তারা কি করে জমিনে নেমে আসে সবই আমরা বুঝি।

তারিফ ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন — কিভাবে রে??

সাফিন ভাই বললেন— ওইযে! খুশির ঠেলায়। তোর বিয়ের খুশিরে ব্যাটা!!

উনার কথায় সবাই খিলখিল করে হেসে উঠল। আমিও হাসলাম। ইশান ভাইয়া গান শুরু করলেন এবার।

দিল কি দারিয়া… বেহ হি গায়া
ইশক ইবাদাত… বান হি গায়া
খুদ কো মুজহে… তু সোপ দে
মেরি জারুরাত…. তু বান গায়া….
বাত দিল কি….. নাজরো নে কি…..
সাচ কেহ রাহা…… তেরি কাসাম…
তেরি বিন আভ না লেংগে এক ভি দাম…….
তুজহে কিতনা….. চাহনে লাগে হাম!!
তেরে বিন আভ না লেংগে এক ভি দাম…..
তুজহে কিতনা…. চাহনে লাগে হাম!!

উনার গান শুনে মুখে ভেংচি কাটলাম আমি। হ্যা কণ্ঠ ভালো ঠিকাছে….কিন্তু এমন ভাব করছেন যেন অরিজিৎ সিং!! এইরকম রোমান্টিক গান কেনো গাইছেন…..আর কাকে উদ্দেশ্য করে গাইছেন সবই বুঝি আমি। কিন্তু আমি কিছুতেই উনার ফাদে পা দিচ্ছি না। খুব ভালো করে চিনি এদের। ঢাকা থেকে কয়েকদিনের জন্য এসেছে….. সুন্দরী মেয়ে দেখেছে….. এখন কয়েকদিন ইচ্ছেমতো ফ্লার্ট করবে….পটে গেলে প্রেমও করবে। তারপর একদিন হুট করে ” ইউ আর নট মাই টাইপ…. ফ্যামিলি মানবে না…… হেন তেন বলে ব্রেক আপ করে দেবে। হুহ!! খুব ভালো করে জানা আছে এসব আমার। কত দেখলাম!!

ঘরে ঢুকেই দরজা দিয়ে দিলাম। অনেক রাত হয়েছে…. এবার ঘুমানো খুব জরুরি। কাল আবার ভোরবেলা উঠতেও হবে….. কত কাজ!! চুলগুলো ঝারতে ঝারতে বিছানায় শুতে যাব তার আগেই বিছানার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম আমি। চোখে একটা ডলা দিয়ে আবার ভালো করে তাকালাম। ঠিক দেখছি তো আমি?? ইশান ভাইয়া আমার বিছানায় বসে আছে?? আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে দাড়ালেন উনি। ধীরপায়ে আমার দিকে এগুচ্ছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দরজার সাথে লেগে গেলাম আমি। জোরে চিৎকার করতে যাবো…. তার আগেই আমার মুখ চেপে ধরা হল। আমি গোল গোল চোখ করে উনার দিকে তাকালাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here