তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -৩৩+৩৪

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৩৩
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

বিষন্ন ভার্সিটি থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধা হয়ে গেলো।আজ কেন জানি খুব ক্লান্ত লাগছে।জুতো পায়েই বিছানায় শরীর এলিশে দিলো বিষন্ন। প্রায় সাথে সাথে ঘুমের ঘোর তৈরি হলো।মাথাও ব্যাথা করছে।ঘুমঘুম ঘোরে বিষন্নর কানে মিষ্টি একটা স্বর ভেসে এলো

” ভাইয়া আসবো? ”

” এসো তিশু ”

” রুম অন্ধকার করে রেখেছেন কেনো? শরীর খারাপ? ”

” একটু খারাপ লাগছে,তুমি কিছু বলবে? ”

” হু,তবে এখন বলতে চাচ্ছি না।শরীর ভালো হোক তারপর বলবো ”

” ততটাও খারাপ না,এই একটু মাথাটা ধরেছে ”

” আমি মাথা টিপে দিই ”

” লাগবে না, তুমি বরং আজ একাই গানের প্রাকটিস করো, আমি যেতে পারছি না ”

” গান পরে হবে।আপনি চোখ বন্ধ করে থাকুন আমি মাথা টিপে দিবো,”

তিশু অন্ধকারে এগুতেই কিসের সাথে যেন ধাক্কা খেলো,অন্ধকার ঘরে সেটা কি বুঝতে পারলো না।বিষন্ন বললো ” তিশু আলো জ্বালিয়ে দাও,”

” আপনার সমস্যা হবে না তো? ”

” না হবে না,”

তিশু আলো জ্বালিয়ে বিষন্নর পাশে বসলো।পুরো ঘরটা একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।এই ঘরটাকে দেখলে তার কেমন কেমন লাগে।ছেলেদের ঘর এতো গোছালো থাকবে কেনো? ,এর কোনে মানে হয়? তিশুর খুব ইচ্ছে করে বিষন্নর ঘর এলোমেলো থাকবে,আর সে এলোমেলো ঘর দেখে চোখ ছোট ছোট করে বিষন্নকে ধমক দেওয়ার মতো করে বলবে ” ঘরের কি অবস্থা করে রেখেছেন হ্যা?এতো অগোছালো কেনো আপনি?”।এর উত্তরে বিষন্ন বলবে ” তুমি আছো তো, তুমিই নাহয় রোজ গুছিয়ে দিলে “।তখন তিশু বলবে ” কেনো আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ নাকি? “।তিশু এইটুকু ভেবেই মনে মনে হাসলো।মনে মনে এরকম চিন্তা আসলে তার আর থামতে ইচ্ছে করে না।ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে বিষন্নর সাথে মনের কল্পনায় সে কথা বলে।

বিষন্ন ভ্রু কুচকে তাকালো তিশুর দিকে।অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে।বিষন্ন বললো

” তিশু,কি ভাবছো ”

তিশু বিদ্যুতের গতিতে বলে উঠলো ” না কিছু না, আপনি চোখ বন্ধ করুন আমি মাথা টিপে দিচ্ছি ”

বিষন্ন চোখ বন্ধ করলো।তিশু চুলে বুলাচ্ছে। তার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে,মনে হচ্ছে নতুন বউ তার স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তিশুর নজর পড়লো বিষন্নর ঠোঁ’টের ওপর।মেয়েদের মতো লাল ঠোঁ’ট।মুহুর্তেই তিশুর মনে ঢেউ খেলে গেলো।কিন্তু ভয়ে তার কিছু করার সাহস হয়ে উঠলো না।

_______________

” এখন কেমন লাগছে? ”

অভ্রর কথায় তার দিকে তাকালো মিষ্টি। মিষ্টিকে খুব অসুস্থ লাগছে।এইটুকু সময়ের মধ্যেই কেমন যেন চুপসে গেছে।অভ্র আবারে জিগ্যেস করলো

” শরীর কি খুব খারাপ লাগছে? ”

মিষ্টি পায়ে ভর করে দাড়িয়ে বললো” এখন ঠিক আছি,তখন হঠাৎ মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়েছিলো ”

” আমি ড্রাইভারকে ফোন দিয়েছি,এক্ষুনি চলে আসবে, আপনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো ”

” ডাক্তার লাগবে না, আমি ঠিক আছি ”

ড্রাইভার চলে এলো।মিষ্টির এক হাত অভ্র তার কাঁধে নিয়ে তাকে ধরে গাড়িয়ে বসিয়ে দিলো।ইতস্তত করে বললো

” আমি বরং আপনার সাথে যাই,আপনাকে রেখে আমি চলে যাবো ”

” আমি ঠিক আছি অভ্র,আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না,”

” আমার কোনে কষ্ট হবে না,বরং ভালোই লাগবে।যদি বারণ করেন তাহলে কষ্ট পাবো,”

মিষ্টি আর কিছু বললো না।অভ্র গাড়িতে বসলো।গাড়ি চলতে আরম্ভ করেছে।মিষ্টি অভ্রকে জিগ্যেস করলো

” আচ্ছা অভ্র, আপনি কারো প্রেমে পড়েছেন? ”

অভ্র এরুপ প্রশ্নে খুবই লজ্জা পেলো।মেয়েরা যাকে পছন্দ করে তাকে এধরনের প্রশ্ন করে।তবে কি মিষ্টি অভ্রকে পছন্দ করে? অভ্র হেসে বললো

” জি ”

” প্রেমে পড়া কি ভয়ংকর রকমের সুন্দর, তাই না?”

” হ্যা, ”

” আচ্ছা অভ্র, প্রথম ভালোবাসা কি সত্যিই সবসময় ভুল মানুষের সঙ্গে হয়?”

” প্রথম ভালোবাসায় কোনো একজনের পক্ষে ভালোবাসা কি সেটাই সে বুঝতে পারে না।তার ক্ষেত্রে পুরোটাই আবেগের ওপর পরিচালিত হয়,এজন্যই হয়তো সেই ভালোবাসাটা পূর্ণতা পায় না ”

” ভালোবাসা তো পুরোটাই আবেগ,তাই না? ”

” অবশ্যই ঠিক,তবে সেই আবেগটা দায়িত্ব,সম্মানের।আর বেশিরভাগ সময় প্রথম ভালোবাসাটা তৈরী হয় কমবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে। তারা নিয়ন্ত্রিত হয় আবেগের দ্বারা, একসময় আবেগ কেটে যায় ”

এই কথাটা মিষ্টির বু’কে কাঁটার মতো বিঁধে গেলো।মুহুর্তেই চোখে জল টলমল করছে।মিষ্টি ভারি গলায় বললো

” টিনএজ বয়সে ভালোবাসার আবেগটা কি সত্যিই একসময় কেটে যায়? ”

” বেশিরভাগ সময়ই যায়,তখন তো তারা বুঝতে পারেনা ভালোবাসার অর্থ কি ”

” আপনি অনেক সুন্দর করে কথা বলেন অভ্র ”

অভ্র হাসলো।গাড়ি থামলো মিষ্টির ফ্লাটের সামনে।মিষ্টি নামলো।অভ্রও গাড়ি থেকে নামলো।মিষ্টি একটু হেসে বললো

” ধন্যবাদ অভ্র ”

” কিসের জন্য ? ”

” জানিনা কিসের জন্য।আসুন চা খেয়ে যাবেন ”

অভ্র তৎক্ষনাৎ হ্যা বলে দিলো।যেন মনে মনে সে এটাই চাচ্ছিলো।মিষ্টি চা বানিয়ে নিয়ে এলো।অভ্রর দিকে একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে আরেকটা কাপ মিষ্টি হাতে নিলো।অভ্র কাপে চুমুক দিয়ে বললো

” আপনি এতো ভালো চা বানাতে পারেন জানলে রোজ এসে চা খেয়ে যেতাম ”

মিষ্টি হাসলো।অভ্রও হাসলো।চা খেতে খেতে অভ্রর খুব জানতে ইচ্ছে করছে মিষ্টির কোনো পছন্দের ছেলে আছে কি না।যদি থাকে তাহলে সে মিষ্টির অফিসের জব ছেড়ে দেবে।মিষ্টিকে অন্যর হতে দেখতে সে মোটেও রাজি নয়।অভ্র ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো

” আমি কি আপনাকে মিষ্টি বলে ডাকতে পারি? ”

মিষ্টি হেসে বললো ” এটা তো অফিস না যে ম্যাম বলে ডাকতে হবে।আর তাছাড়া আপনি আমার থেকে সিনিয়র, নাম ধরে ডাকতেই পারেন ”

” আমি ভাবতে পারিনি আপনি এতো সহজেই রাজি হয়ে যাবেন।আমার যে কি খুশি লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না ”

” আমি অনেক সাধারণ একটা মেয়ে অভ্র,যতটা সাধারণ হলে কেউ ঠকিয়ে, ভুলে থাকতে পারে ”

অভ্র চাইলেও আর বলতে পারলো না মিষ্টির কোনো পছন্দের ছেলে আছে কিনা।সে বেশ বুঝতে পারছে মিষ্টির জীবনে কেউ ছিলো,সে হয়তে তাকে ঠকিয়েছে।অথচ মেয়েটা এখনো তাকে কতটা ভালোবাসে।অভ্র ঠিক করলো সে তার ভালোবাসার কথা মিষ্টিকে জানাবে।খুব শীঘ্রই জানাবে,মিষ্টিকে একবার নিজের করে পেলে সে জীবন দিয়ে হলেও তাকে ছাড়বে না।অভ্র যেতে যেতে বললো

” একটা কথা কি জানেন,আমরা সবসময় মনে করি ভালোবাসার মানুষকে কখনো ভোলা যায় না।সেটা আদৌও সত্যি কিনা তা আমি জানিনা।তবে দ্বিতীয়বারের ভালোবাসা প্রথম ভালোবাসাকেও হার মানাতে পারে।যদি মানুষটা সঠিক হয় ”

” আমার কেনে জানি এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে, প্রথম ভালোবাসা কিকরে ভোলা সম্ভব ”

” ভুলতেই হবে এমনটা না।আরেকবার ভালোবাসুন, দেখবেন প্টথম ভালোবাসা মনেই পড়ছে না।আর একবার ভাবুন তো,ভুল মানুষটার ভালোবাসা যদি এতো তীব্র হয় ,তাহলে সঠিক মানুষটার ভালোবাসা কতটা তীব্র হবে ”

কথাটা শেষ করে অভ্র চলে যাচ্ছে।মিষ্টি চেয়ে রইলো অভ্রর চলে যাওয়ার পথে।সত্যিই তো,ভুল মানুষটার ভালোবাসা যদি এতো তীব্র হয়,তাহলে সঠিক মানুষটার ভালোবাসা আরো কতটা তীব্র হবে।অথচ আমরা প্রথম ভালোবাসা মনে রেখে দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসার চেষ্টাটাও করিনা।মানুষের মন কত অদ্ভুত, তাই না?

চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৩৪
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

বিষন্নর ঘুম ভাঙলো সকাল এগারোটায়।ঘুম থেকে উঠে ঘড়িতে সময় দেখে সে হতভম্ব।এখানে আসার পর থেকে সময় সম্বন্ধে সে খুবই তৎপর।আজকে আর ভার্সিটিতে যাওয়া হলো না।ভার্সিটির প্রতিটি ক্লাসে একদিন অনুপস্থিত থাকলে এপ্লিকেশন দিতে হয়,সেখানে উল্লেখ করতে হয় কেনো ক্লাসটা মিস হয়েছে।বিষন্নর এপ্লিকেশন লিখতে ইচ্ছে করছে না।তার মন খুব খারাপ।মন খারাপটা সম্ভবত রাতের স্বপ্নের কারনে হয়েছে।বিষন্ন আধোঘুম মাখা চোখে উঠে ওয়াসরুমে গেলো।ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে আয়নার সামনে নিজেকে দেখতে লাগলো।আয়নায় ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগলো রাতের সেই স্বপ্নটা…..

দুপুরের কড়া রোদে পিচঢালা রোডে মরীচিকা খেলা করছে।সেখানে মাথা নিচু করে হাটছে এক যুবক,যেন সূর্যের সাথে তার বিরোধ চলছে।তার মন ভিষণ খারাপ।বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই।রোদের কড়া উত্তাপ আরো বাড়ছে,ছেলেটির শার্ট ভিজে একাকার। হঠাৎ সামনে একটা মেয়ে এসে দাড়ালো। মেয়েটাকে সেই ছেলেটা চেনে।মেয়েটা খানিক হেসে ছেলেটির হাত ধরলো।ছেলেটা মাটি থেকো চোখ সরিয়ে মেয়েটার চোখে রাখলো।কি সুন্দর সেই চোখ।ধীরে ধীরে আশপাশটা শীতল হতে শুরু করলো।কড়া রোদ সরে গিয়ে আকাশে ঘন কালো মেঘ,দমকা বাতাস। বাতাসে মেয়েটার পরনের সবুজ রঙ্গের শাড়ির উঠছে।ছেলেটা তার আরেক হাত পকেট থেকে বেড় করে মেয়েটিকে স্পর্শ করতেই ধুলির মতো হারিয়ে গেলো নিমিষেই।

স্বপ্নের মেয়েটাকে বিষন্ন চেনে।তার নাম মিষ্টি।একসময় এই মেয়েটাকে তার জীবনের সবথেকে কাছের একজন ভাবতো।মনে কত আশা,চোখে ছিলো কত স্বপ্ন, কত ইচ্ছে।আজ সেই ময়েটার সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই।

বিষন্নর ইচ্ছে করছে প্রচন্ড চিৎকার করে কাঁদতে।মেয়েটা কেনো তার সাথে এরকম করবে?কি দোষ ছিলো তার?যদি সেদিন মেয়েটা একটিবারের জন্য বলতো,” বিষন্ন তুই প্লিজ কোথাও যাস না,থেকে যা না আমার সাথে শেষ অব্দি ” তাহলে হয়তো আজ তার জীবনটা অন্যরকম হতো।সন্ধা হলেই ঘর অন্ধকার করে মিউজিক ছেড়ে বিষন্ন মিষ্টির সাথে কাটানো সময়গুলি ভাবতে থাকে।একসময় মিউজিক বন্ধ করে ওয়াসরুমে চলে যায়,বাথটাবের জলে ঘাড় অব্দি ডুবিয়ে প্রচন্ড চিৎকার করে।সে চিৎকার কেউ শুনতে পায় না।প্রাণহীন বাফটাব আর জল ছাড়া এই আওয়াজ কাউকে ছুঁতে পারেনা।আবার নিজেকে শান্তনা দেয় এসব বুঝিয়ে “কার জন্য কাঁদছি আমি?ওর তো আমার কথা মনে পড়েনা,সবসময় তো অবজ্ঞা করে গেছে,আমিও ছিলাম বোকা,ভেবেছিলাম এটাই হয়তো ভালোবাসা।তিনটা বছর কেটে গেছে,কই একবারও তো যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো না।আমি নাহয় অভিমান করেছিলাম তাই যোগাযোগ করিনি,কিন্তু তোমার তো কোনো রাগ,অভিমান ছিলো না।তবুও একটা বার আমি কেমন আছি সেটা জানতে চাওনি।মিস মিষ্টি,তোমার জীবন আমি নরক করে ছাড়বো,ভেবো না এমনি এমনিই এই বিষন্ন তোমায় ছেড়ে দিবে ”

ফ্রেশ হয়ে বিষন্ন নিচে নামলো।ডাইনিং টেবিলে রাজ আঙ্কেললে কফি খেতে দেখে বিষন্ন বললো

” কেমন আছো আঙ্কেল ”

” হু ভালো।এতো দেরিতে ঘুম ভাঙলো? ”

” রাতে মাথা ব্যাথা ছিলো,টেরই পাইনি এতো সময় পার হয়ে গেছে ”

” আজ তাহলে ভার্সিটি অফ ডে ”

” হু। তুমি বাড়িতে যে? তোমার না আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার কথা ”

” জাহাজের ফ্যান নষ্ট,সেটা সাড়তে দুদিন লাগবে,তাই বাড়িতে আসলাম।তা তোমার বাবা,মা কেমন আছে?কথা হয়? ”

তিশু বিষন্নর প্লেটে নাস্তা দিচ্ছে।এরমধ্যে তিশু হাতে একটা চকলেট নিয়ে বাবার পাশে বসলো।আদুরে গলায় বললো ” বাবা ওনার উত্তরটা আমি দিই।বিষন্ন ভাইয়ার সাথে আঙ্কেল আন্টির খুব কম কথা হয় ”

তিশুর বাবা ভ্রু কুচকে বললো ” কি বলিস রে মা,বিষন্ন এই কথা কি সত্যি? ”

বিষন্ন আমতা আমতা করে বললো ” ও মজা করছে আঙ্কেল।মায়ের সাথে রোজই কথা হয় ”

তিশু চোখ সরু করে বললো ” মজা না,আমি সবটা জানি ”

এমন সময় একটা ফোন এলো।জাহাজের ফ্যানের একটা ব্যাপারে তিশুর বাবা রাজকে তখনি যেতে হলো।বিষন্ন শুধু টোস্টে এল কামড় দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।তিশু মগ্ন হয়ে সামনের ঝুড়ি থেকে আপেল নিয়ে খাচ্ছে। বিষন্ন চলে যাওয়ার পর নিশু তিশুর কাছে এসে বলল

” তিশু, তুই কি করে জানলি বিষন্ন ভাইয়ার সাথে ওনার বাবা, মায়ের কথা হয়না ”

” উনি নিজেই বলেছেন ওনার ফোনে কথা বলতে ভালোলাগেনা ”

” মানে? বুঝলাম না ”

” ওনাকে যখনি ফোন দিই তখনি খুব সামান্য কথা বলেই ফোন কেটে দেন।যখন জিগ্যেস করলাম কেন এমনটা করেন তখন তিনি বলেন ফোনে কথা বললে তার মাথা ব্যাথা করে,তাই তিনি ফোনে কারো সাথে কথা বলেন না ”

” তাই বলে বাবা,মায়ের সাথেও যে কথা বলবে না এমনটাতো না ”

” হু,সেটা আইডিয়া করে বলেছি।ওনাকে রাগিয়ে দিতে ”

” তুই খামাখা ওনাকে রাগাবি কেন? ”

” তুমি বুঝবে না আপা।আমি যাই ”

” এই দারা ”

” উফফফ আবার কি ”

” আমার বুকশেলফ থেকে একটা বই খুঁজে পাচ্ছিনা, তুই নিয়েছিস? ”

” আপা তুমি ভালো করেই জানো এসব বইটই আমি পড়িনা,আমি কেনো নিবো ”

এতটুকু বলে তিশু নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।বইয়ের বিষয়টা আপা বএঝার আগেই আগের যায়গায় রেখে দিতে হবে,যদি জানে আমি নিয়ে বিষন্ন ভাইয়াকে দিয়েছি তাহলে কিছু বুঝে ফেলতে পারে।তিশু তৎক্ষনাৎ ফোনে একটা নাম্বার ডায়াল করলো। ওপাশ থেকে শান্ত স্বর ভেসে এলো

” কে বলছেন? ”

” আমি,”

” আমি কে? ”

” তিশু,আপনি আমার নাম্বার সেইভ করে রাখেননি?আর কতবার বলবো সেইভ করে রাখতে? ”

” মনে ছিলো না,এইবার করবো ”

” বইটা পড়েছেন? ”

” না,পড়বো ভাবছি। ”

” ভালো করে পড়বেন,প্রথম পৃষ্ঠাটা ভালো করে পড়বেন,নইলে বুঝবেন না কেন দিয়েছি ”

” আচ্ছা পড়বো ”

এটা বলেই বিষন্ন ফোন কেটে দিলো।ফোনে এই মেয়েটার স্বরের সাথে মিষ্টির স্বরের অনেকটাই মিল পাওয়া যায়।এজন্য বিষন্ন বেশিরভাগ সময়ই নানান অযুহাত দিয়ে ফোন কেটে দেয়।যেমন ফোনে কথা বললে মাথা ব্যাথা করে এজাতীয় কিছু।অথচ এরকম কিছু তার কখনোই হয়না।মিষ্টির সাথে সে রাত জেগে অনেক গল্প করতো।তিশুর সাথে কথা বললে সেইসব স্মৃতি মনে পড়ে যায়,মূলত এ কারনেই ফোন কেটে দেওয়া।অযথা কষ্ট পাওয়ার কি কোনো মানে আছে?

বিষন্ন বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা খুললো।বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় টানাটানা হাতের লেখা। বিষন্ন লেখাটা পড়লো,সেখানে লেখা ” আপনার সামনাসামনি দাড়িয়ে বলার সাহস আমার নেই,তাই বইয়ের মাধ্যমে বলছি।আপনাকে আমার ভালোলাগে, শুধু যে ভালোলাগে তা না,অসম্ভব ভালোলাগে।বিষন্ন ভাইয়া, আপনি কি আপনার হাতটা আমায় একটু ধরতে দিবেন? “। বিষন্ন বই বন্ধ করলো।পুরো লেখা পড়ার কোনো মানে হয়না।বিষন্ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।তিন বছর আগে তার মধ্যে যে আবেগটা ছিলো আজ ঠিক সেই আবেগটা সে খুজে পেলো তিশুর মধ্যে।এটাই হয়তো প্রকৃতির নিয়ম।

__________________

মিষ্টি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে।অভ্রর বলে যাওয়া রাতের কথাগুলি বারবার কানে ভেসে বেড়াচ্ছিলো।চোখের একবিন্দু অশ্রুও এখন অবশিষ্ট নেই।তার জীবনটা বড্ড এলোমেলো হয়ে আছে।আর কতদিন এভাবে চলবে? তারও তো ইচ্ছে করে ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেতে,ছোট্ট একটা সংসার করতে,পুচকি একটা বাচ্চা সারাঘর ছোটাছুটি করবে।কিন্তু সেটা কি আদৌও সম্ভব?মিষ্টি আকাশের দিকে তাকালো।এখন তার বড্ড আফসোস হচ্ছে,বারবার মনে হচ্ছে সেদিন যদি বিষন্নর কথা মতো দূর কোথাও চলে যেতে পারতাম!কত সুন্দরই না হতো তাহলে।

তবে ইদানীং অভ্রর প্রতি মিষ্টির হালকা টান অনুভব করছে।কেন করছে সেটা মিষ্টির কাছে অজানা।হয়তো মিষ্টির ইচ্ছে করে কাউকে তার মনের সব দুঃখ, কষ্টগুলি বলবে,মন খারাপে তার মন ভালো করার জন্য কেউ একজন অন্তত থাকবে যে চেষ্টা করবে মিষ্টির মন ভালো করতে।যার বু’কে মাথা রেখে সে হাসতে পারবে, আবার কাঁদতেও পারবে। হয়তো তার ইচ্ছে করে কেউ তার হাতে হাত রেখে বলবে ” চটপট শাড়ি পড়ে নাও তো,আজ রাতের শহরটা তোমার আমার।চলো হেঁটে বেড়াই শহরের ব্যস্ত রাস্তায়,যেখানে কৃষ্ণচূড়ারা কৃষ্ণচূড়ারা ব্যাকুল হয়ে আছে তোমার পাশের স্পর্শের “।

তবে কি সে তার সকল ইচ্ছে গুলির পূর্ণতায় অভ্রকে কাছে পেতে চায়?এলোমেলো জীবনটা কি তার স্পর্শেই সাজাতে চায়? ।এর উত্তর মিষ্টির অজানা।তবে অভ্রর কথাগুলি মিষ্টির কষ্টকে একটু হলেও প্রশমিত করে,তার সঙ্গ মিষ্টিকে একটু হলেও ভুলিয়ে রাখে।মিষ্টি বারবার পড়ে যাচ্ছে দ্বিধাদ্বন্দে।এই এলোমেলো,কষ্টদায়ক জীবন থেকে মুক্তির জন্য অভ্র? নাকি প্রথম ভালোবাসা যদি কখনো ফিরে আসে সেই আশায় অপেক্ষা! কি করা উচিত তার?

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here