তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -৩৫+৩৬

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৩৫
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

কেটে গেলো আরো একটি বছর।বিষন্নর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট।সে চাইলেই সুইজারল্যান্ডে এবার নিজের জীবনটা আরো একবার সাজাতে পারবে।গ্রাজুয়েট পেপার হাতে ছাঁদের রেলিঙ ধরে দাড়িয়ে আছে সে।জব করার কোনো ইচ্ছে তার নেই।সে চায় মিউজিক অথবা সুইমিং এর মধ্যে থেকে যেকোনো একটাতে ক্যারিয়ার গড়তে।চারটা বছর পর সে দেশে ফিরে যাবে।বাবা,মা,নীলুপু,বন্ধুবান্ধব সবার সাথে আবারো এক হয়ে যাবে।নীলু ঠিক করেছিলো বিষন্ন দেশে না ফেরা অব্দি সে বিয়ে করবে না।তার বিয়ে অথচ বিষন্ন থাকবে না এটা সে কখনো হতে দিবে না জন্য সমুদ্রকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে অপেক্ষা করে রেখেছে।এজন্য তাদের মধ্যে কম ঝামেলাও হয়নি।সমুদ্র চেয়েছিলো কমপক্ষে এংগেইজমেন্টটা হোক, কিন্তু নীলুর একটাই কথা।বিষন্ন দেশে না ফেরা অব্দি সে বিয়ের বিষয়ে একপা এগোবে না।বিষন্নর ঠোঁটে হাসির আভা ফুটে উঠলো।অন্তত কেউ তো আছে যে তার জন্য অপেক্ষা করছে।

বিষন্ন ঠিক করলো তার নিজের টাকা দিয়ে নীলুর বিয়ে দিবে।ছোট্ট একটা ক্লাবে মিউজিক ট্রেইনার,সুইমিং কমপিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিষন্নর একাউন্টে বেশ বড়সড় এমাউন্ট জমা হয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে বিষন্নর বজরেই পড়েনি যে তিশু তার একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে।বিষন্নকে তাকাতে দেখে তিশু বললো

” আপনার গ্রাজুয়েশন তো কমপ্লিট,এবার নিশ্চই দেশে ফিরে যাবেন? ”

” এটাই তো হওয়ার কথা,তাই না?”

” হু, জানেন আমার কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে বলুন তো? ”

” আমি তো জানিনা ”

” সত্যিই তো,আপনি কিভাবে জানবেন ”

তিশুর চোখে জল।বিষন্ন বুঝতে পারছে তিশু তার জন্য কান্না করছে।এই কান্নাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না।বিষন্ন কিছু বলবে তার আগেই তিশু বললো

” আপনি কিন্তু এতোটাও বোকা নন, আপনি বেশ বুঝতে পারছেন আমি কি চাই।কি বুঝেন না? ”

” তিশু তুমি ভুল করছো আমা…..”

” আচ্ছা বাদ দিন,বইটা পড়েছেন? ”

” প্রথম পৃষ্ঠা পড়েছি ”

” ওইটা আমি মজা করে লিখেছি।আপনি কি বলেন সেটা শুনার জন্য,আপনি কি ভেবেছেন সত্যি সত্যিই লিখেছি?”

” না মানে ”

” বিষন্ন ভাইয়া,একটা কথা বলবো? ”

” বলো ”

” আমাকে আপনার করে নেন না,যখন থেকে শুনেছি আপনি দেশে ফিরে যাবেন তখন থেকে আমার বু’কের ভেতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে আছে,আমার খাইতে ইচ্ছে করে না,ঘুমাতে ইচ্ছে করে না,এমন কি আমি ভার্সিটিতেও আর যাচ্ছি না।আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে।আপনি না থাকলে আমার এই কষ্টটা সহ্য হবে না ভাইয়া, আমায় এলটা সুযোগ দেন না, প্লিজ ”

তিশু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।দুচোখ অশ্রুজলে ভিজে উঠেছে।বিষন্ন বুঝতে পারছে না কি বলে তাকে সান্তনা দিবে।এই অনুভূতিটা কতটা ভয়ঙ্কর সেটা বিষন্ন জানে,বেশ ভালোই জানে।বিষন্ন তিশুর হাতে হাত রাখলো।তিশু তৎক্ষনাৎ বিষন্নর বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।কান্না করতে করতে তিশু বললো ” আমায় রেখে যাবেন না প্লিজ,আমি পারবো না আপনাকে ছেড়ে থাকতে “।বেশ কিছুক্ষণ বিষন্নকে জরিয়ে ধরে কান্না করে তিশু স্বাভাবিক হলো।তার সারা শরীর এখনো কাঁপছে।বিষন্ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

” তিশু,আমার একটা অতীত আছে।আমিও একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম,এখনো বাসি।আমি ওর যায়গায় কখনোই অন্য কাউকে ভাবতে পারিনা।তোমার বয়স অল্প,এই বয়সে ভালোলাগা থাকতেই পারে,আমি সেটাকে সম্মান করি।কিন্তু আমি মিষ্টির যায়গায় কাউকে মেনে নিতে পারবো না তিশু।”

তিশু চোখের জল মুছলো।হাসি হাসি মুখে একবার বিষন্নর দিকে তাকালো।বললো

” আপনার কাছে আমার শেষ একটা চাওয়া আছে,রাখবেন? ”

” বলো,রাখার চেষ্টা করবো ”

” আপনার হাত ধরে রাতের চাঁদটা আমরা পাশাপাশি বসে দেখবো।এই চাওয়াটুকু পূরন করবেন? ”

বিষন্ন কিছু বললো না।কি বলবে সে জানেনা।

________________

মিষ্টি ঘর অন্ধকার করে বসে আছে।গত চারদিন ধরে সে এই ঘরে বন্দি।অফিসেও যাচ্ছে না।ফোন বন্ধ থাকায় অভ্র বেশ কয়েকবার খোঁজ নিতে বাড়ির সামনে এসছিলো,মিষ্টি দারোয়ানকে বলে রেখেছে কেউ যেন ঢুকতে না পারে,কেউ না।চারদিন আগে অফিসে থাকাকালীন নীলু ফোন করে।জানায় বিষন্ন দেশে ফিরছে।এই কথা শোনা মাত্রই মিষ্টি অফিস থেকে বাসায় এসে নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে।কিছু সময়ের জন্য মিষ্টির অভ্রর প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়েছিলো।অভ্র দুইবার মিষ্টিকে প্রপোজ করে,কিন্তু বিষন্নর কথা ভেবে সে অভ্রকে ডিরেক্ট না করে দেয়।আজ তার এই অপেক্ষার অবসান ঘটবে।বিষন্ন দেশে ফিরবে।এই চারটা বছরে তার নিশ্চয়ই অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।আচ্ছা এখনও কি ওকে পিচ্চি বলে রাগানো যাবে?।এসব ভাবতে মিষ্টির খুব ভালোলাগে।গত চারদিন থেকে সারাক্ষন এটাই ভাবছে।মিষ্টিও জানে বিষন্ন তারজন্য অপেক্ষা করবে।ভুল বুঝাবুঝি একসময় চলে যাবে,আমরা আমার এক হবো।এসব ভাবতেই মিষ্টি লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে।এতোদিন পর দেখা হলে কি পড়ে যাবে সেটা ভাবতে থাকে।ঠিক করেছে শাড়ি পড়ে যাবে।সেইদিনটা তারা রিক্সায় পাশাপাশি বসে অনেক ঘুরবে,বিষন্ন তার ধরে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকবে,সামনে উড়তে থাকা চুল কানে গুজে দিবে।সবশেষে তাদের বিয়ে হবে।বিয়ের কথা ভাবতেই মিষ্টির শরীর শিউরে উঠলো।

চলবে?

এতটুকুই লেখা ছিলো,অপেক্ষা করছেন জন্য এতটুকুই দিলাম।গতকাল রাত জেগে খেলা দেখে সারাদিন ঘুমাইছি।আর দ্বিতীয় কারণ আগামীকাল আমার পরিক্ষা। পরিক্ষাটা দিয়ে নিই তারপর এক দিনে চারটা করে পর্ব দিবো।আর হ্যা,গল্পটা আপনাদের কেমন লাগে?কমেন্টে একটু জানায়েন তো,☺️🌸#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৩৬
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

এয়ারপোর্টে শতশত মানুষের ভিড়।মিষ্টি বারবার পায়ের পাতায় ভর করে সামনে দেখার চেষ্টা করছে।উদ্বেগ,উত্তেজনায় শাড়ির আঁচল হাতের হাতে বারবার পেঁচিয়ে আবার খুলে নিচ্ছে।তার চোখজোড়া পুরো এয়ারপোর্টে চোখ বুলাচ্ছে।সামনের খেজুর গাছের সাথে বাঁধাই করা শানের ওপর নীলু বসে আছে।তাকিয়ে আছে মিষ্টির দিকে।মিষ্টির ছটফটানি দেখে কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললো

” আরে ভাই তোর লাফালাফিতে কি প্লেন সময়ের আগেই টুপ করে ল্যান্ড করবে নাকি? ”

” তুই একদম চুপ থাক।চুপচাপ বাটি আইসক্রিম খা, ”

” এটা ম্যাংগো আইসক্রিম।যাইহোক,ল্যান্ড করতে এখনো বিশ মিনিট পার হবে।তুই লাফালাফি না করে একটু বস ”

” তুই বসে থাক,আমি ভেতরে গেলাম ”

” হু বুঝছি।ইশশ,বাবুটার জন্য মন উতলা হয়ে আছে তাই না বান্ধবী?এইটুকু সময়ই আর কাটে না,”

নীলুর কথায় মিষ্টি লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।সত্যি সত্যিই সময় যেন যাচ্ছেই না। নীলু কিছুক্ষণ পর পর লজ্জাকর কিছু কথা বলছে,আর সেসব শুনে মিষ্টি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিচ্ছে,কিছু বলতেও পারছে না।এখানে আর থাকা যাবে না,নইলে আরো এমন সব কথা বলবে যে…..। মিষ্টি চোখে মুখে রাগের ছিটেফোঁটা এনে বললো

” আমার গরম লাগছে খুব,তুই থাক আমি গেলাম ”

” আরে একটু দারা!এখনো তো তেঁতুল,আমড়া কিছুই তো খেলাম না!”

নীলুর কথায় মিষ্টি কর্ণপাত না করে হনহন করে এয়ারপোর্টের দিকে যেতে লাগলো।তেঁতুলের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকা বয়স্ক লোকটা বললো

” আম্মাজান,আরেকটু খারান,অহনি তেঁতুলের আচার দিতাছি।ওই আম্মাজান তো রাগ কইরা চইললা গেলো,আফসোস কইরবো পড়ে দেইখেন।আমনে শুধু একবার খাইয়া দেখেন।গাছের টাটকা কাঁচা তেঁতুল দিয়া বানাইছি।মুখে দিতেই কচকচ শব্দ হইবো,কাঁচা তেঁতুল কচকচ শব্দ কইরা খাওয়ার মজাই আলাদা ”

বুড়োলোকটার কথায় নীলু বিরক্তি নিয়ে বললো ” তুমি কথা কম বলো তো,তাড়াতাড়ি দাও,”

তেঁতুলে একটা কা’মড় দিতেই ” ওমাগো..ম’রে গেছি ” শব্দ নীলুর কানে ভেসে এলো।তেঁতুল মুখে নিয়ে পেছন ফিরে তাকালো নীলু।দেখলো একটু দূরেই মিষ্টি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।নীলু হতভম্ব হয়ে গেলো।মিষ্টি এভাবে শুয়ে আছে কেনো?মাথায় পোকা কামড়ে দিলো নাকি?। তেঁতুল হাতে নীলু ছুটে গেলো মিষ্টির কাছে।হাটু ফেলে বসে মিষ্টিকে বললো

” কিরে তুই এখানে শুয়ে পড়লি কেন? লোকে কি বলবে? ”

মিষ্টি মুখ তুললো।সব চুল সামনে আসায় মিষ্টি মুখ দেখা যাচ্ছে না।নীলু হাত দিয়ে মিষ্টি মুখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে দিতেই মিষ্টি চিবিয়ে চিবিয়ে বললো

” শুইনাই ডাইনি বুড়ি।হিলের সাথে শাড়ি পেঁচিয়ে পড়ে গেছি,হা করে না দেখে তোল,”

নীলু তৎক্ষনাৎ না তুলে কিছুক্ষণ হাসলো।হো হো করে হাসতে হাসতে মিষ্টিকে টেনে তুললো।মিষ্টি যত দ্রুত সম্ভব উঠে দাড়ালো। মুখের সামনে থেকে চুল সরাতেই প্রচন্ড রকম একটা লজ্জাজনক অবস্থার মুখোমুখি হলো।এয়ারপোর্টের সামনে যত মানুষ ছিলো প্রায় সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মিষ্টির চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম হলো।ইচ্ছে করলে প্লেন যেখানে ল্যান্ড করবে তার নিয়ে শুয়ে পড়তে,প্লেন এসে যেন তাকে পটল ভর্তা করে দিয়ে চলে যায়।লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে মিষ্টি দ্রুত চুলগুলো আবারো সামনে নামিয়ে দিলো।মিষ্টির এইসব পাগলামি দেখে নীলু পে’টে হাত রেখে হো হো করে হেসেই চলেছে।মিষ্টির ইচ্ছে করছে উষ্টা মেরে এই বজ্জাত মাইয়াডারে ফেলে দিতে।খানিকপর চুলের ফাঁক দিয়ে সামনে তাকালো মিষ্টি। সবাই সবার মতো আসছে যাচ্ছে। এখন আর কেউ তাকে দেখছে না।নীলু এখনো হাসছে।মিষ্টি আরো রেগে এয়ারপোর্টের দিক যেতে লাগলো।পেছন পেছন নীলুও যাচ্ছে।

ঢোকার সময় সাদা পোশাকের দুজন মিষ্টির সামনে এসে বললো ” ম্যাম আপনার লাগেনি তো?ডাক্তারের ব্যাবস্থা করবো? “।ওদের মুখে এরুপ কথা শুনে মিষ্টি মুখ ভোতা করে ভেতরে গেলো।নীলু আবারো হাসছে।

মিষ্টিকে গোমড়ামুখে বসে থাকা দেখে বিষন্নর মা নীলুকে বললো ” কিরে নীলু,মিষ্টির কি হইছে? মুখ গেমড়া করে বসে আছে কেন? ”

” বেশি পাকনামি করলে এমনি হয় ”

নীলু কথাটা এমনভাবে বললো যেন মিষ্টি শুনতে পায়।নীলুর কথা শুনে মিষ্টির মুখ আরো কঠিন হয়ে গেলো।রাগে ফুসতে ফুসতে মনে মনে ভাবলো,একবার শুধু বিয়েটা হতে দে,তারপর দেখ তোর কি অবস্থা করি।তোর হাসি বের করবো,ননদের বাচ্চা ননদ।বিষন্নর মা মিষ্টির কাছে বসে বললেন

” মুখ গোমড়া করে আছিস কেন? কি হইছে? আর তোর শাড়িতে ধুলো লেগে আছে কেন ”
কথাটা বলতে বলতে তিনি পায়ের কাছে ধুলো ঝেড়ে দিলেন।মিষ্টি অন্যদিকে মুখ করে বললো ” জানিনা,তুমি এখন যাও তো,ভাল্লাগেনা ”
” আমি আবার কি করলাম ”

মিষ্টি উঠে চলে গেলো।এখানে বসার পর থেকে সে দেখছে সেই দুজন সিকিউরিটি তাকে দেখছে আর একে অপরকে কি যেন বলছে আর দাঁত বেড় করে হাসছে।মিষ্টি প্রায় ছুটে ওয়াসরুমে ঢুকলো।এয়ারপোর্টের ওয়াসরুম এতো জঘন্য হয় মিষ্টির আগে জানা ছিলো না।ঢুকতেই শরীর কেমন গুলিয়ে উঠলো,বমি বমি পাচ্ছিলো।মিষ্টি এয়ারপোর্টের ভেতরেই একটা জলের বোতল নিলো।শাড়ুতে লেগে থাকা ধুলো ঝেড়ে মুখে জলের ছিটে দিলো।এরমধ্যেই একটা বিকট শব্দ কানে ভেসে এলো।মিষ্টি জলের বোতল ফেলে দিয়ে দাঁড়ালো বিষন্নর মায়ের সাথে।বরাবরের মতো বিষন্নকে দেখার প্রবল ইচ্ছেটা বারতে লাগলো।মিষ্টি শাড়ির আঁচল হাতের সাথে পেঁচাচ্ছে আর পায়ের পাতার ওপর ভর করে দেখার চেষ্টা করছে বিষন্নকে।

বিষন্নকে জড়িয়ে ধরে মা,আর নীলু দুজনেই কান্না করছে। বিষন্নর চোখেও জল টলমল করছে।বেশ কিছুক্ষণ পর নীলু বিষন্নকে ছেড়ে দিলো।বিষন্নর মা বললেন

” আর কোথাও তোকে যেতে দিবো না,আমার একটাই ছেলে,এখন থেকে সবসময় চোখে চোখে রাখবো।শরীরের কি অবস্থা করেছিস,খাওয়া দাওয়া ঠিক সময়ে করিস না বোধহয় ”

মায়ের কথা শুনে নীলু চোখের জল মুছতে মুছতে বললো ” কি যে বলো মা,ভাইকে দেখতে একদম হিরোর মতো লাগছে,আর তুমি বলছো চেহারা নষ্ট হইছে? ”

মা রাগি স্বরে বললেন ” চুপ কর ফাজিল মেয়ে।এইসব বলতে আছে নাকি।বিষন্ন, বুকে একটু থুথু দে তো ”

বিষন্ন বড়বড় চোখ করে বললো ” থুথু দিবো কেনো? ”

” তাহলে নজর কাটা যাবে,”

বিষন্ন বাধ্য ছেলের মতো বু’কে একটু থুথু দিলো।নীলু আশপাশ তাকিয়ে মায়ের উদ্দেশ্য বললো ” মা মিষ্টিকে দেখতে পাচ্ছি না, মিষ্টি কেথায় গেলো? ”

নীলুর কথায় মা আশেপাশে তাকালো।চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো ” আমার পাশেই তো ছিলো এতোক্ষন।কই গেলো ”

বিষন্ন গম্ভীর স্বরে বললো ” বাড়িতে চলো মা।”

মা বললেন ” যাবো তো,কিন্তু মিষ্টি কোথায় গেলো ”

বিষন্ন রাগি স্বরে বললো ” কে না কে তার জন্য এখন আমাকে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে? তোমরা থাকো,আমি গেলাম ”

বলেই স্যুটকেচ হাতে বিষন্ন যেতে লাগলো।বিষন্নর সাথে সাথে নীলুও যাচ্ছে।সেই দুজন সিকিউরিটি গার্ডকে দেখতে পেয়ে নীলু জিগ্যেস করলো ” আমার বান্ধবীকে দেখেছেন আপনারা? ওইযে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো,শাড়ি পড়া মেয়েটা ”

ওরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললো “উনিতো একটু আগেই দৌড়ে বেড় হয়ে গেলো ”

নীলুর কথায় বিষন্ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলো ” আপু কি বলছিস? মুখ থুবড়ে পড়েছে মানে? ”

নীলু আমতা আমতা করে বললো ” ও কিছু না,আমি আজকাল বাজে বকি।কখন কি বলি ঠিক নেই।চল তো!”।স্যুটকেচ গাড়ির পেছনে রেখে তারা তিনজনই গাড়িতে উঠলো।

_______________________

মিষ্টি একটা দোকানের সামনে দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ” মামা একটা জলের বোতল দেন তো ”

কথা শেষ করে হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে লাগলো।দোকানী বোতল দিলে এক নিশ্বাসেই সবটুকু জল খেয়ে আরেকটা বোতল দিতে বললো।বোতল গিয়ে বসলো সামনে টেবিলে।তার সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতো লাগছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।এয়ারপোর্টে যখন লাফালাফি করতে করতে বিষন্নকে একপলক দেখতে পেলো তখন মনে হচ্ছিল পুরো পৃথিবীটা যেন থমকে গেছে।শতশত মুখের ভিড়ে ওর মুখটাই চোখে পড়ছে বারবার।মুখ থেকে বারবার একটা শব্দই বেড় হচ্ছে ” এই ছেলেটাকে আমি ভালোবাসি।কে বলবে এই পিচ্চি ছেলেটা এতো বড় হয়ে গেছে।চুলগুলো ঘাড় অব্দি,কালো ব্লেজার,কালো সানগ্লাস উফফফ,আমি পাগল হয়ে যাবো মনে হচ্ছে “।হঠাৎ আরেকটা কথা মাথায় এলো ” আচ্ছা আমি হঠাৎ দৌড়ে পালিয়ে এলাম কেন?

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here