তোর শহরে মেঘের আনাগোনা পর্ব -০৫

#তোর_শহরে_মেঘের_আনাগোনা (৫)
#Rawnaf_Anan_Tahiyat

সিমরান কে ফলো করতে করতে একটা জঙ্গলের কাছে এসে থামলো রাত। বিকেলের দিকে ঘুরতে বেরিয়েছে সবাই। ওরা সবাই যখন ঘুরা ঘুরি, সেলফি তুলতে ব্যস্ত তখন সবার অলক্ষ্যে সিমরান এইদিকে আসতে ধরছিল,ও সেটা খেয়াল করে মিলি দের কে কোনো রকমে ম্যানেজ করে সিমরানের পিছু নিলো। কিছুক্ষণ পরে সিমরান ওর সামনে থেকে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেল, চোখের সামনে থেকেই হঠাৎ করে কোথায় চলে গেল বুঝতে পারলো না। মিনিট দশেক ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল, হঠাৎই একটা ছেলের হাসির আওয়াজ পেলো কাছের একটা গাছের আড়াল থেকে।পা টিপে টিপে সেদিকে এগিয়ে গেল সে,গাছটার খুব কাছে গিয়ে থমকে গেল। চাপা গলায় কথা বলছে কোনো মেয়ে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে কান পেতে রইলো রাত। শুনতে পেল,,,

‘সবকিছু ঠিক ঠিক আছে তো রায়হান? তুমি হঠাৎ করে আমাকে এখানে কেন ডাকলে?’

‘সোনা খুব বড় একটা সমস্যায় পড়েছি আমি। সাকিব মনে হয় কোনো কিছু আঁচ করতে পেরেছে।কিছুক্ষণ আগে হাবিব আর লামিম কে ওর তিন বন্ধু কে দিয়ে আচ্ছ মতো মা’র’ধর করেছে। আমি কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না সিমরান, মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার।’

‘শান্ত হও তুমি, একটু কিছু হতেই এমন করো না তো।ও আঁচ করতে পারলেই কি হয়েছে,এতে তো আমাদেরই ফায়দা হাসিল করা যাবে। তোমার মোটা মাথায় কি কিছুই নেই রায়হান, সেদিন কি বলেছিলাম ভুলে গেছো?’

‘সব মনে আছে আমার। কিন্তু হঠাৎ করে লামিম এমন একটা খবর দিলো যে মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেছে আমার তাই আর কি। সাকিব শুধু একটা বার আমার সামনাসামনি হোক, এই পৃথিবীর আলো ওর জীবন থেকে চিরতরে দূর করে দিবো আমি।’

মাটিতে বসে পড়ল রাত। এই মাত্র এইসব কি শুনলো সে, সিমরান আপু??

রাত বারোটার দিকে টলতে টলতে বাসায় ফিরলো সাকিব, ওর তিন বন্ধু ওকে ধরে ধরে নিয়ে এসেছে। আসমা তখনো জেগেই ছিলেন, কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলে দেখেন সাকিব কে ওর বন্ধুরা ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে।ভাগ্যিস তখন নাসিমা জেগে ছিলেন না, সন্ধ্যা রাতেই স্বামীর সাথে ঝগড়া করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কোনোরকমে নিজের রুমে গিয়ে দেহ টাকে বিছানায় এলিয়ে দিল সাকিব,ঘুমে দুচোখ জড়িয়ে আসছে।ওর বন্ধুরা আসমাকে চুপিচুপি কিছু একটা বলে চলে গেল।

_____________________________________

সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই রাত ব্যাগ নিয়ে বাসায় এসে হাজির। নাসিমা রহমান ছেলের জন্য হাক ডাক ছেড়ে কাঁদছেন আর মাঝে মধ্যে কি একটা মনে হলেই রাত কে বক’ছেন। এইসময় রাত কে বাসায় ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেল আসমা আর রাজিয়া,বুবুর পাশে বসে ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল দুই বোন।

‘রাত এই সাত সকালে তুই? তোর না কালকে আসার কথা ছিল আর এতো সকালেই বা কেন?’

আসমার কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাত ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,

‘সাকিব ভাই কোথায় আম্মু? খুব জরুরি দরকার আছে ভাইয়ের সাথে, ভাই কি রুমেই আছে এখনও?’

‘এই মেয়ে, তুই আমার সাকিব কে খুঁজছিস কেন?তোর জন্য আজকে আমার ছেলেটার এই অবস্থা,ও কখনো নেশা করেনি কালকে তোর জন্য আমার ছেলে টা…….. তুই তুই আমার ছেলের কাছে যাবি না,তোর জন্য সিমরান বাড়ি ছেড়েছে, কালকে আমার ছেলে টা নেশা করে বাসায় ফিরেছে। এই সব অলুক্ষুণে কারবার শুধু তোর জন্য হচ্ছে, তুই যাবি না আমার ছেলের রুমে।’

রাতের কথা শুনে মাঝ পথে কান্না থামিয়ে তেতে উঠলেন নাসিমা। নাসিমার কথা শুনে যতোটা না অবাক হলো রাত তার থেকে বেশি অবাক হলো উপস্থিত বাকি সবাই। সবকিছু তে রাত কে এমনভাবে দোষ দেন নাসিমা যে সাধারণ বিবেচনা বোধ টুকু ও হারিয়ে ফেলেছেন। খালামনির কথা শুনে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইল রাত, সাকিব ভাই নেশা করেছে কথা টা বুঝতে কয়েক মিনিট লাগলো তার।ধীর পায়ে সাকিবের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো, পিছন থেকে নাসিমা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে চলেছেন সেটা কান অবধি এসে পৌছুল না তার। সাকিব ভাইয়ের রুমের সামনে এসে থেমে গেল সে, কাঁপা কাঁপা হাত টা বাড়িয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ল।সাকিব তখন বেলকনিতে বসে সিগারেট টানতে ব্যস্ত, রুমে কারুর পায়ের আওয়াজ পেয়ে চেঁচালো,,,

‘আমার রুমে কে এসেছে এখন?বারণ করেছিলাম না আমার রুমে আসতে?’

‘স সাকিব ভাই, আমি এসেছি। তোমার রাত বুড়ি এসেছে তোমার রুমে।’

হাতের সিগারেট টা ফেলে দিল সাকিব,বা হাতের উল্টো পিঠে চোখের কোণে জমে থাকা পানি টা মুছে একটু হাসি দিয়ে রাতের দিকে ঘুরলো।রাত অসহায় চোখ নিয়ে সাকিবের দিকে তাকিয়ে আছে, ওর এই অবস্থা টা সহ্য করার মতো নয়।

‘তুই? ভালো কথা, সিমরান কোথায় রে? আমাকে শেষ করে দেওয়ার প্লান করছে এখনো নিশ্চয়ই?’

‘ও কোথায় আমি জানি না। কালকে সন্ধ্যার পর থেকে ওকে আর কোথাও দেখতে পেলাম না,ওই ছেলেটার সাথে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে ও।বাদ দাও ওর কথা, ওর মতো মেয়ের জন্য তুমি নাকি নেশা করেছিলে কালকে শুনলাম?’

নিচের দিকে তাকিয়ে রইল সাকিব। চোখে আবার পানি এসে জমছে, বুকের ভিতর চাপা কষ্ট গুলো বড় যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে। রাত ব্যাগ টা এক পাশে সরিয়ে রেখে সাকিবের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলো। সাকিব কান্না ভেজা চোখে একবার ওর দিকে তাকালো, পরক্ষণেই ওকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো।

*কয়েক ঘণ্টা অতীত*

রাতের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে সিমরান আর রায়হানের কথাবার্তা শুনে।যেই সিমরান কে ওর সাকিব ভাই এতো ভালোবাসে সে কিনা তাকেই শেষ করতে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে হাত মিলিয়েছে। যেখানে সিমরান সাকিব ভাই কে ভালোই বাসে না সেখানে সাকিব ভাই ওকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছে। আলগোছে পিছিয়ে এলো রাত, নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সাকিব ভাই কে তৎক্ষণাৎ একটা মেসেজ দিলো। মেসেজ টা ছিল এই যে,,,

SAKIB VAI…..tomar Simran onno akta seler sathe somporke joriye ace.o amar sathei ghurte esece ajk,kicukkhon age tumi jokhon amak call dile tokhon ami vebecilam o tomar sathe kotha bolce tai tokhon tomake bolecilam j pore sobkicu text kore janabo.but Sakib vai ami ai koyek second agei chomke dewar moto akta kotha jante parlam.simran apu tar bortoman bf mane or valobasar manuser sathe mile tomak ses kore dewar plan korece.VALO KOTHA OR SEI VALOBASAR MANUSTIR NAME RAYHAN.AMI SOBKICU ARALE LUKIYE SUNE FELECI,TUMI KONO TENTION KORO NA AMI KALKEI BASAY ASCI, GOOD BYE SAKIB VAI…

মেসেজ টা সেন্ড করেই সেখান থেকে ওর গন্তব্য স্থলে রওনা দিলো, সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরবে বলে। এদিকে সাকিব সারাদিন খোজ খবর নিয়েছে সিমরানের ব্যাপারে, ওর সব ক্লোজ বান্ধবী, বন্ধু সবাই কে ওর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। কয়েকজন সিমরানের কথা ভালো বললেও বেশির ভাগই ওর চরিত্রের গুনগান করেছে ওর কাছে, সাকিব সিমরানের উডবি এটা বিশেষ কেউ জানেনা এমনকি সাকিব কে কেউ সিমরানের সাথে দেখেও নি কখনো।তাই ওর ক্লোজ বান্ধবী গুলোই রায়হান আর ওর সম্পর্কের ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলে সাকিব কে, ওদের ডেটিং এ যাওয়া, রিলেশনশিপের মেয়াদ সবকিছু বলে। সবকিছু ওদের থেকে শুনে যদিও বা সাকিবের বিশ্বাস হতো না কিন্তু একটা ছবি দেখে ওর সিমরানের উপর থাকা সমস্ত ভরসা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

চলবে……………..

~ কালকে বোনাস পর্ব দিবো ইনশাল্লাহ ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here