দ্যি এল্ডরিচ সিটিজেনস, পর্ব:৪

#দ্যা_এলেমেন্টাল (১)
#লেখনীতে_মাহমুদা_মায়া
৪র্থ পর্ব

পরদিন সকালে

নিশি ঘুম থেকে উঠে রান্নাবান্না সহ বাড়ির অন্যান্য কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে থাকে। মায়রাকে সকালে ডেকে দিতে হয় না, সে একাই সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করে। প্রতিদিনের মতো আজও তার ব্যতিক্রম কিছুই হয়নি। তবে আজকে মায়রা শুধু হাঁটাহাঁটি করেনি। সে বাগানের একপাশে নব্য তৈরিকৃত চিড়িয়াখানার পশুপাখিকে খাবার দেয়, তাদের খাবার পানি পরিবর্তন করে নতুন বিশুদ্ধ পানি দেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পশুপাখিদের সাথে কাটিয়ে সে তার কক্ষে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। নিশির ডাকে সে নিশির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
“কিছু বলবে,মা?” মায়রার প্রশ্ন।
“হ্যাঁ, মামণি। সুন্দর একটি পোশাক পরে প্রস্তুত হয়ে খেতে এসো। তোমাকে আজকে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে যাব।” উত্তরে নিশির বক্তব্য।
“কোন শ্রেণিতে ভর্তি করাবে, মা?”
“শিক্ষকরা যেই শ্রেণিতে দিবে।কেন?”
“এমনি। আমি পোশাক পরিধান করে আসছি।”
“হুম, যাও।”

নিশি তার কাজ সারতে সারতে রিহান প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে আসে। রিহান ও নিশির মাঝে মায়রাকে কথা হচ্ছিল।
” এতো কি নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে, বউ মা?” রিহানের বাবা কথাটা বলতে বলতে বেরিয়ে আসেন।
“বাবা-মা, আপনারা কি কোথাও যাবেন আজকে? প্রস্তুত হয়ে বের হয়েছেন যে?” নিশি উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করে।
“হ্যাঁ, বউমা, আমি তোমার শাশুড়ী মাকে নিয়ে গীর্জায় যাব। ফিরে এসে সবটা শুনব। কেমন?” রিহানের বাবা বলে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
“দাদুভাই, আজকে যেও না,” মায়রা রিহানের বাবাকে পিছু ডেকে বলেন।
“দাদুভাই, আমরা প্রতি মাসে এই একদিনই যাই। এছাড়া কোথাও যাওয়া হয় না। তুমি স্কুল থেকে ফিরে আসার আগেই আমরা ফিরে আসব।”
রিহানের বাবা কথাটা বলেই বেরিয়ে যায়। মায়রার চেহারায় দুঃখের ছাপ স্পষ্ট । নিশির দিকে ঘুরে মায়রা বলে,

“সকল পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত রাখতে হয়। তাই না, বাবা-মা?”
” হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু তুমি কোন পরিস্থিতির কথা বলছ, মায়রা?” সন্দেহজনক দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করে।
“মা, আমাকে কি চেইনটা পড়িয়ে দিবে?” নিশি মায়রাকে একটি কর্ণাভরণ দিয়েছিল। তা দেখিয়ে মায়রা কথাটি বলল।
“কেন নয়? এক্ষুনি দিচ্ছি, মামণি।”
নিশি কথাটা বলেই মায়রার কথামতো সবুজ বর্ণের কর্ণাভরণটি মায়রাকে হাসি মুখে পরিয়ে দেয়।
নিশি ও মায়রা খুব খুশি হয়। রিহান লক্ষ করে দেখে, মায়রার চেহারায় অদ্ভুত এক মায়া আছে, যার মাধ্যমে মায়রা যেকোন বয়সের পুরুষ অথবা নারীকে হাজার মানুষের ভীড়ের মাঝেও আকৃষ্ট করে নিতে পারবে।
“চলো, যাওয়া যাক,” নিশি মায়রার হাত ধরে বলল।
” না মা, আজকে কোথাও যাব না,” মায়রা হাত ছাড়িয়ে বলে।
” কেন, মায়রা?” রিহান বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
“এমনি বাবা, আমি বন্ধুদের কাছে যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই মায়রা চলে যায় তার পশুপাখিদের কাছে। রিহান আর নিশি মায়রার হঠাৎ এমন ব্যবহারে কিছুটা ভয় পায়। বাহিরে বের হবে, ঠিক সেই সময় রিহান এবং নিশি দুজনই পুলিশের গাড়ির হর্ন শুনতে পায়। রিহান মায়রার কাছে না গিয়ে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটার দিকে যায়। নিশি পাশ থেকে বলে,

“কি ব্যাপার, বলো তো৷ হঠাৎ পুলিশ কেন আসছে? পশুপাখি গুলোর ব্যাপারে আসে নি তো?”
“আমিও তাই ভাবছি। দেখি কি হয়, মায়রাও কিন্তু সকল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে প্রস্তুত থাকার কথা বলেছিল, ” রিহান বলতে বলতে এগিয়ে যায়।
” হুম, যাও, কথা বলে দেখ।”
রিহান এগিয়ে যায় পুলিশ অফিসারের দিকে। পুলিশ অফিসার তার গাড়ি রাস্তার এক পাশে রেখে রিহানের দিকে এগিয়ে যায়। পুলিশের গাড়ির পেছন পেছন অন্য একটা গাড়ি আসে,যেটা মূলত পশুপাখি একস্থান হতে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। রিহান এবং নিশি দুজনই বুঝতে পারে কোন ব্যাপারে পুলিশ এসেছেন।
মায়রা একনজর তাদের দিকে তাকায়। সাথে সাথে তার চোখ রংধনুর সাতটি বর্ণ ধারণ করে। কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে তার বন্ধুরূপে পশুপাখিদের দিকে শান্ত এবং স্বাভাবিকভাবে তাকায়।

“হ্যালো, মিস্টার নিগাম, ” অফিসার হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।
” হ্যালো, অফিসার। হঠাৎ আমার বাড়িতে আপনার আগমণ ঘটলো?” রিহান পুলিশের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে।
“তার কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছেন, মিস্টার নিগাম। পেছনের টিম দেখে হয়তো পুরোপুরিই বুঝেছেন কেন এসেছি। আশা রাখছি, কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি করা ব্যতীত আপনি আমাদের কার্য সম্পন্ন করতে সহায়তা করবেন,” পুলিশ অফিসার কঠোর কন্ঠে বলে।
“পেছনের টিম কি কারণে আনা হয়েছে? পুলিশ অফিসার?” পেছন থেকে মায়রা কথাগুলো জিজ্ঞাসা করে, যেই কথায় মিশে আছে হাজারো রাগ এবং ক্ষোভ।
” আপনারা জংগলের পশুপাখি এনে নিজেদের বাড়িতে রেখেছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। এবং তার যথাযথ প্রমাণও পেয়েছি। পশুপাখির সুরক্ষার জন্য আমাদের কাছে তাদের হস্তান্তর করুন,” অফিসার রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
“আপনি বাবাকে ছেড়ে আমার সাথে কথা বলুন, অফিসার,” কথাটা বলে মায়রা এগিয়ে আসে।

রিহান বা নিশি মায়রাকে আটকাচ্ছে না। কারণ এই এক সপ্তাহে এতটুকু বুঝতে পেরেছে, মায়রা যা বলে, যা করে সবটাই ন্যায়ের পক্ষেই করে থাকে। তার কাছে আইন, আদালত এসবের কোন ভিন্নতা নেই। তাই তারা দুজনই এক পাশে সরে দাঁড়ায়।

” তুমি ছোট, তাই এসব থেকে দূরে থাকো মেয়ে। “-পুলিশ অফিসার মায়রাকে শাসিয়ে বলে।
” আমি কেন দূরে থাকব? আমিই তো পশুপাখিগুলোকে এনেছি। তাই যা বলার আমাকেই বলতে হবে,” মায়রা শান্তভাবে পাল্টা জবাব দিতে থাকে।
“মেয়েকে তো ভালো বেয়াদপ বানিয়েছেন, মিস্টার নিগাম। বড়দের সাথে তর্ক কিভাবে করতে হয়, তা এই ছোট বয়সের মেয়ে ভালোই শিখেছে,” অফিসার তাচ্ছিল্যভাবে বলে।
“কাজের থেকে অকাজ বেশি শিখেছেন অফিসার। ন্যায় কথা বললে সবাই বেয়াদব হয়। হোক সে ৫ বছরের শিশু,বা ১০ বছরের বালিকা অথবা ৫০ বছর বয়সের বৃদ্ধা,” মায়রা কথাটা বলতেই তার পেছনে এসে অন্যান্য পশুপাখিরাও দাঁড়ায়। যেখানে বাঘ থেকে শুরু করে হাতিও ছিল।
—”কা, কাজের থেকে অকাজ বলতে ক, কি বুঝাচ্ছ, মেয়ে? আমি ইচ্ছা করলে এক্ষুনি তোমায় থানায় নিয়ে শাস্তি দিতে পারব,” অফিসার পশুগুলোকে দেখে ভয় পেয়ে তুতলিয়ে কথাগুলো বলতে থাকে।
” আচ্ছা! ওহ, হ্যাঁ। আপনারা তো কোন প্রমাণ ছাড়া, কোন অন্যায় ছাড়াই কারো উপর অন্যায় অবিচার করতে পারেন। এটা তো আপনাদের মতো কিছু সরকারি কর্মকর্তার স্বভাব।”
মায়রার উত্তরে অফিসার রাগান্বিত হয় ঠিক, কিন্তু বাঘের গর্জনে সে তার রাগ প্রকাশ করতে এবং সামনে এগোতে সাহস পায় না।
“যখন জংগলে আগুন লেগেছিল, তখন আপনি এবং আপনার সাথে আগত টিম কোথায় ছিল? তখন আপনার কাজ কোথায় ছিল?” মায়রার কথাগুলো বাঘের দ্বিতীয় গর্জনের মতো শোনায়।
“আমাদের কিছুই ইনফর্ম করা হয় নি,” অফিসার একটি রুমাল বের করে ঘাম মুছে উত্তর দেয়।
” ইনফর্ম? আপনাদের ইনফর্ম করতে কেন হবে? এটা তো আপনাদের কাজ। এসকল অবলা পশুপাখিদেরকে দেখে রাখা, তাদের বাসস্থান অর্থাৎ জংগলের দিকে নজর রাখা এগুলোও তো আপনাদের কাজ। তখন কোথায় ছিলেন? আর এখন ভয়ই বা পাচ্ছেন কেন?” মায়রা কথাটা বলতেই একটা বাঘ এসে তার হাতের নীচে মাথা রাখে। যেন এক মনিবের কাছে তার পোষা বিড়াল আদর নিতে চাইছে।
“এসব প্রানী থেকে দূরে সরে যাও মেয়ে, এরা ভয়ংকর,” অফিসার ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে বলে।
“একে দেখতে ভয় লাগছে? আমার তো মনে হচ্ছে না। আপনি না এদের নিয়ে যেতে এসেছেন? এখন নিচ্ছেন না কেন?” মায়রা বাঘটাকে আদর করতে করতে বলে।

অফিসার তার পেছন থেকে রিভলবার বের করে মায়রার দিকে তাক করে ধরে। কিছু বুঝে উঠার আগে সে মায়রার দিকে শুট করে। নিশি ও রিহান ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু গুলি বা বুলেট ঠিক মায়রার এক আঙ্গুল পরিমাণ সামনে গিয়ে থেমে যায় এবং কাঁপতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তা ভেঙে গুঁড়ো হয়ে মাটিতে মিশে যায়। উপস্থিত সকলেই এতে ভয় পেয়ে যায়। অফিসার নিজেও কিছুটা হতবাক হয়ে যায়।
অফিসারের পেছনে থাকা টিমকে ইশারা করলে তারা তাদের যন্ত্রপাতি নিয়ে এগিয়ে যায় মায়রার পশুপাখিগুলোকে ধরার জন্য। মায়রা সেখান থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়, যেন পশুপাখি ধরতে কোন সমস্যা না হয়। পশুপাখিগুলোও সেই স্থান থেকে না সরে সেখানেই একে একে বসে পরে। যেন তারা সিনেমা দেখার জন্য বসেছে। এমন একটা ঘটনায় সকলেই অবাক হয়, শুধুমাত্র মায়রা ছাড়া।
কর্মীরা ভয়ে ভয়ে এগোতে থাকলে একটা সময় তারা আর এগোতে পারে না। যেন তাদের সামনে কোন অদৃশ্য এক দেয়াল রাখা হয়েছে। কয়েকজন তাদের হাতে থাকা যন্ত্র দিয়ে অদৃশ্য দেয়ালে আঘাত করতে গিয়ে তা ভেদ করে পশুপাখিগুলোর সামনে হুড়মুড়িয়ে পরে যায়। সামনে তাকিয়েই তারা ভয়ে কাঁপতে থাকে। উল্টো দিকে ঘুরে বাকিদের কাছে যেতে চাইছে। কিন্তু আবারও সেই অদৃশ্য দেয়াল এসে পথ আটকিয়ে দিয়েছে। বসে থাকা পশুপাখিগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে তারা বিনোদন পাচ্ছে।
এমন অবস্থা দেখে বাকিরা আর সেখানে না থেকে গাড়িতে ফিরে যায়।
দেয়ালের অপর পাড়ে আটকে পরা লোকগুলো মুক্তি পেলে হুড়মুড়িয়ে প্রাণপণে দৌঁড়াতে থাকে। অফিসার মায়রার দিকে আঙুল উঠিয়ে বলে,
“খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে আমাদের।”
গাড়িতে উঠে বসে দ্রুত প্রস্থান ঘটে অফিসারের। সকলেই চলে গেলে পশুপাখিগুলো তাদের স্থানে ফিরে যায়। আর বাঘ চলে যায় পাশের জংগলে।

মায়রা মিষ্টি করে হাসলে, নিশি এবং রিহান মায়রাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।
বিকালে প্রতিদিনের মতো সকলেই বাগানের গাছগাছালি এবং পশুপাখির যত্ন নিয়েই সময় কাটায়। কয়েক দিন স্বাভাবিকভাবেই কাটে। মায়রা এর মাঝে অনেক কিছুই আয়ত্ত্ব করে নেয়। এখন সে যেকোন লেখাও পড়তে পারে।সবসময়ের মতোই মায়রা অন্যদের তুলনায় বেশি বুদ্ধিমতী এবং ম্যাচুর৷

একদিন সকালে,

মায়রা, নিশি এবং রিহান প্রস্তুত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। আজকে মায়রাকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে। মায়রাকে অনেক খুশিও দেখাচ্ছে, সে তার বাবা মায়ের থেকে শুনেছে স্কুলে নাকি তার আরো মনুষ্য বন্ধুবান্ধব হবে।
বাবা মায়ের হাত ধরেই সে স্কুলে ভর্তি হয়। তৃতীয় শ্রেণীতে দেওয়া হয় মায়রাকে। আজকে ক্লাস করানোর জন্য রিহান মায়রা এবং নিশিকে স্কুলেই রেখে আসে।
ক্লাসে,

মায়রার শিক্ষিকা তাকে তার শ্রেনীকক্ষে নিয়ে যায়। শ্রেনীকক্ষে গিয়ে তার শিক্ষিকা সকলের মাঝে তাকে পরিচিত করিয়ে দেয়। এবং সকলের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করে,

“তোমাদের মাঝে কে মায়রার ফ্রেন্ড হতে চাও?”
—”মিস,আমি হতে চাই। ”

ছাত্রছাত্রীদের মাঝ থেকে একজন হাত উঁচু করে বলে। মাঝ বরাবর সীটে বসার কারণে সামনে বসা সকল ছাত্রছাত্রী পেছনে ঘুরে তাকায়। একজন ছেলে হাত উঁচু করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। শিক্ষিকা খুশি হয়ে মায়রাকে বলে,

“মায়রা, অই ছেলেটা হচ্ছে রুহান। যাও, তার পাশের সিটে গিয়ে বসে ক্লাস করো। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে, কেমন? ” শিক্ষিকা বললেন।
” ইয়েস, মিস।” কথাটা বলেই মায়রা রুহানের দিকে এগিয়ে যায় এবং তাকে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।

সামনের একটি দাঁত নেই, হয়ত দুইদিন হলো পরেছে। গালের দুপাশে লাল হয়ে আছে, যেন ব্লাশ করেছে, গোলাপি এবং বেগুনি দুটো রং একত্রে মিশালে যেই রং হবে ঠোঁটের রংও একই।কালো চুলগুলো গোছিয়ে আঁচড়ানো, ফর্সা দেহের সাথে কালো রঙের ইউনিফর্মটা দারুন মানিয়েছে। হাসি দেওয়াতে ফোকলা ফোকলা দেখাচ্ছে।
মায়রা গিয়ে রুহানের পাশে দাঁড়াতেই, রুহান তাকে হেসে জায়গা করে দেয়। মায়রা তার পাশে বসতেই এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

“হাই, আমি রুহান শার্মা। ক্লাসের টপ বয়। ”
” আমি মায়রা নিগাম। ”
মায়রা হাসিমুখে হাত মিলিয়ে হেসে বলে।
” তোমার তো বই নেই, আমারটা শেয়ার করছি,” রুহান কথাটা বলে তার বই দুজনের মাঝ বরাবর রাখে এবং ক্লাসে মনোযোগ দেয়।

টুকটাক কথা হয় রুহানের সাথে মায়রার। স্কুল ছুটির পর দুজন একত্রে স্কুল থেকে বেরিয়ে আসে। মায়রা তা মা নিশিকে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে অন্য এক মহিলার সাথে কথা বলতে দেখে। রুহান নিশির মায়ের পাশে থাকা মহিলাকে দেখে দৌড়ে যায় তার কাছে এবং বলে

” মা। ”
” এই তো আমার ছেলে। দেখেছেন, বলেছিলাম, আপনার মেয়ের সাথে আমার ছেলেই আগে বন্ধুত্ব করবে। তাই হলো,” রুহানের মা হেসে বললেন।

রুহান এবং মহিলার কথায় মায়রা বুঝতে পারে তারা মা-ছেলে। মায়রা তার মায়ের পাশে এসে দাঁড়াতেই পাশের গাছ থেকে দুটি পাখি এসে মায়রার কাধে এসে বসে, যাদের চিকন দুই ঠোঁটের মাঝে ছিল দুটো মাঝারি আকারের সাদা বর্ণের ডেইজি ফুল। মায়রা তাদের ঠোঁট থেকে হেসে ফুল দুটো নিতেই উড়ে চলে যায়।
“ওরা হয়তো তোমাকে স্কুলের প্রথম দিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল, মায়রা,” নিশি খুশি হয়ে বলল।
“হ্যাঁ মা,একদম ঠিক ধরেছ,” মায়রা কথাটা বলে পাশে তাকায়।
—”ভয় পেয়ো না। কেউ দেখে নি। সবাই চলে গিয়েছে। চলো আমরাও ফিরে যাই।”
—”আচ্ছা মা,চল।”

রিহান মায়রা এবং নিশির জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। মা, মেয়ে দুজনই গাড়িতে উঠে বসে। রাস্তায় নিশি মায়রাকে তার প্রথমদিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মায়রা সবটা বলে। মায়রা যে ভীষণ আনন্দিত তা বুঝতে নিশির বেশি সময় লাগে না।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here