নয়নতারা পর্ব ৮

#নয়নতারা_৮
#জেরিন_আক্তার_নিপা

নয়নতারাদের বাড়ির প্রতিটা লোক সকাল থেকে নানান কাজে ব্যস্ত। দম ফেলবারও সময় নেই কারো। কেউ এদিকটায় তদারকি করছে। আবার কেউ মেহমানদারির দিকে নজর দিচ্ছে। সবার মাঝে নয়নেরই যেন কোন কাজ নেই। তাকে ছোট ভেবে কেউ কোন কাজ করতে বলছে না। আপুর বিয়ে আজ। বিয়ের পর আপু এবাড়ি থেকে চলে যাবে, ভাবতেই নয়নতারার কান্না পাচ্ছে। ছোট থেকে আপুর ছায়ায় বড় হয়েছে সে৷ আপুকে ছাড়া কোন কাজটা সে নিজে ঠিক ভাবে করতে পারে? কিছুই তো পারে না। পার্লারের মহিলারা এসেছে। আপুকে বউ সাজাচ্ছে। ঝিনুক আপুও ওদের সাথেই আছে। সে নিজেও ছিল৷ কিন্তু তার কান্না পাওয়ায় চলে এসেছে। ইমন এদিক দিয়েই যাচ্ছিল৷ নয়নতারাকে দেখে দাঁড়াল। বলল,

—-তোর ঝিনুক আপুকে দেখেছিস?’

—-হুম। আপুর ঘরে। আপুকে সাজাচ্ছে।’

—-বউ সাজানোর জন্য ওকে লাগবে কেন? পার্লারের লোক এসেছে তো দেখলাম।’

—-ঝিনুক আপুকে ডেকে দেব?’

—-না থাক। তার তো নিজের বরের থেকে অন্যদের চিন্তা বেশি।’

ইমন গজগজ করে চলে গেল। নয়নতারা ইমনকে দেখে ভাবছে, বিয়ের পর বউয়ের কি সব সময় বরের আশেপাশে থাকতে হবে? বউ একটু চোখের আড়ালে গেলেই বর এরকম রাগ করবে?

—-আপুও কি তাহলে বিয়ের পর সারাক্ষণ নক্ষত্র ভাইয়ার সাথে থাকবে? আমাদের সময় দিবে না!’

আপু পর হয়ে যাচ্ছে ভেবে নয়নতারার এখনই কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করছে। সে যেদিন শুনেছিল ওই লোকের সাথে আপুর বিয়ে হবে। কথাটা শুনে অতটা অবাক হয়েছিল যা বলার বাইরে। নক্ষত্র সম্পর্কে তার মনে যে যে খারাপ ধারণা ছিল তা অবশ্য নক্ষত্র নিজেই দূর করেছে। মানুষটাকে এখন আর বাজে মনে হয় না তার। ভালোই তো। ইলা আপু খুশি থাকলেই হলো। নক্ষত্র তাকে বলেছে,

—-এইযে শ্যালিকা, তোমার বোনের সাথে বিয়ে হলে আমার কিন্তু তোমার উপরও অর্ধেক অধিকার এসে যাবে। তখন আমার টর্চার আরও দ্বিগুণ সহ্য করতে হবে। তুমি কিন্তু ভয় পেয়ে যখনতখন জ্ঞান হারিয়ো না। আমার একটা মাত্র শ্যালিকা।’

নয়নতারা হাসল। ইমন ভাইয়ার বিয়ের সময় কখনো ভেবেছিল সে যে, ইলা আপুর সাথে এই লোকের বিয়ে হবে।

বরের গাড়ি চলে এসেছে। গেট ধরার জন্য ঝিনুক সবাইকে গিয়ে গেটের কাছে চলে এলো। নক্ষত্র বর সেজে গাড়িতে বসে আছে। আপুর বিদায়ের সময় যত কমে আসছে ততই নয়নের কষ্ট হচ্ছে। এসব গেট আটকানো, বরের জুতা চুরি করা এসবে ওর কোন আগ্রহ কাজ করছে না।
ঝিনুকের অনেক চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে নক্ষত্রকে ভেতরে আসতে হলো। তার চোখ ইলাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। ইলাটা যে কী! সকালের পর থেকে কথাও বলল না। সে নাকি সাজতে বসেছে। আরে বাবা সাজছে কার জন্য সে? নক্ষত্রর জন্যই তো। ওর জন্য সেজে ওকেই সময় দিবে না এটা কোন কথা!

বরযাত্রী খেতে বসে গেছে। ইমন, আকিব ওরা সব দেখছে। এই ফাঁকে একবার নয়নতারা বাবার কাছে গেল। বাবার মুখটা আজ কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। চোখ দু’টাও হালকা লাল। বাবা তাকে দেখে কাছে ডাকলেন,

—-আয় মা।’

সে বাবার কাছে এগিয়ে গেল। বাবা তার মাথায় হাত রেখে বলল,

—-তোর খাওয়া হয়েছে?’

—-না।’

—-মন খারাপ?’

বাবার কাছে সে কিছুই লুকায় না। মন খারাপ বলেই তো সে বাবার কাছে এসেছে। নয়ন জানত সবাই ছুটাছুটিতে ব্যস্ত হলেও বাবার এখন কোন কাজ নেই। নয়নতারা বাবার কাঁধে মাথা রাখল। মৃদু গলায় বলল,

—-তোমার কষ্ট হচ্ছে না বাবা? আপু যে কিছুক্ষণ পর এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।’

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বাবা। নয়নের মাথায় হাত রাখলেন,

—-এটাই তো নিয়ম রে মা। বাবারা মেয়েদের বড় করে একসময় তাকে অন্যের ঘরে পাঠানোর জন্যই তো। মেয়েদের কি সারাজীবন নিজের কাছে রেখে দেওয়া যায়? সে তো পরের বাড়ির ঘর আলো করার প্রদীপ। ইলাটা যে দেখতে দেখতে কবে এত বড় হয়ে গেল! ও আমার বড় মেয়ে৷ এইতো সেদিন ওকে এই ছোট্টটি কোলে নিয়েছিলাম। আমার কোলে কেমন কেঁদেছিল ও। মায়ের কোলে গিয়ে আবার শান্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার সেই ছোট ইলাটার আজ নাকি বিয়ে! একটু পর ও আমাদের ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। ওর জন্যই তো আজ এত আয়োজন। এত লোক। এত আলো। একটু পর এসব কিছুই থাকবে না। লোকেরা চলে যাবে। আলো নিভে যাবে। ইলাটাও যে আমাদের রেখে নতুন সংসারে পা দিবে।’

বাবা কাঁদছেন। কষ্ট হলেও এটাই তো বাস্তবতা। মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে থাকা যাবে? একদিন না একদিন তো মেয়ে পরের বাড়িতে যাবেই। শত কষ্ট হলেও এটা মেনে নিতে হবেই। নয়নতারা বাবার কাঁধে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠল,

—-আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো যাব না বাবা। সব সময় তোমাদের সাথেই থাকব।’

অশ্রুসজল চোখে বাবা নয়নতারার মুখ তুলে দেখলেন। কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

—-হ্যাঁ। তোকে কাছ ছাড়া করে আমি নিজেও থাকতে পারব না। তুই সারাজীবন আমার কাছেই থাকবি। তোকে বিয়ে দিয়ে পরের বাড়ি না পাঠিয়ে পরের ছেলেকে নিজের ঘরে তুলব। সবার বেলায় এক নিয়ম হলেও আমার তারার বেলায় উল্টোটা হবে।’

নয়নতারা হেসে ফেলল। তার মন খারাপ কিছুটা কমেছে। বাবা বললেন,

—-যা মা। ইলার কাছে যা। ওরও তো কষ্ট হচ্ছে। একটু সময় ওর পাশে গিয়ে বোস। মেয়েটার ভালো লাগবে।’

ঝিনুক ইলার ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় নয়নতারাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,

—-তোর গবেট বোনটা কই রে? কোথাও দেখেছিস?’

—-কে ইলা আপু?’

বিরক্ত হলো ঝিনুক।

—-আর কয়টা বোন আছে তোর? দেখ না ও বেচারা নক্ষত্র ওর জন্য স্টেজে অপেক্ষা করছে। আর তোর বোনের কোন হদিস নেই। সাজগোজ শেষ করে এই ভারী লেহেঙ্গা পরে কোথায় গিয়ে মরল?’

—-ওয়াশরুমে দেখেছ?’

—-সব জায়গায় দেখেছি। গাধীটা কোথাও নেই।’

—-আচ্ছা আমি খুঁজে দেখছি।’

সেই থেকে ইলাকে খোঁজা শুরু হয়ে গেল। প্রথমে সবাই ভেবেছিল ইলা আশেপাশেই কোন রুমে আছে। কিন্তু পুরো বাড়ি খুঁজে ফেলার পরও যখন ইলাকে পাওয়া গেল না। তখন পরিবেশ একটু গম্ভীর হয়ে গেল। বাড়ির একটা মানুষও নাকি ইলাকে দেখেনি। ওকে কেউ কোথাও যেতে দেখেনি তাহলে মেয়েটা গেল কই? এতটা কেয়ারলেস মেয়ে কারো হয়? ইলা কি জানে না আজ তার বিয়ে? নক্ষত্রকে স্টেজে রেখে সে কোথায় গেল।
কিছুক্ষণ নিজেরা খোঁজাখুঁজি করার পর কথাটা নক্ষত্রর কানে যায়। নক্ষত্র ইলাকে না পাওয়ার খবর বাইরের কাউকে জানাতে না করে। ইলা যেখানেই যাক ঠিক সময় ফিরে আসবে। এটা তার বিশ্বাস। বিয়ে নিয়ে এতদিন কত স্বপ্ন দেখেছে ওরা। আজ সেই স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে। নক্ষত্র চায়না অন্তত আজকের দিনে কোন ঝামেলা হোক। ভেতরে ভেতরে ওরা মরিয়া হয়ে ইলাকে খুঁজছে। কিন্তু ইলাকে কোথাও পাওয়া গেলে তো!
নক্ষত্রর বাবার কথাটা জানতে বেশি সময় লাগল না। এমনিতেই উনার সময় নেই। তাও একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে বড় কষ্টে কিছুটা সময় বের করে এখানে এসেছে। এখন তো এখানে এসে নতুন নাটক দেখছে।

—-আপনাদের মেয়ে কোথায় গেছে কেউ জানেন না? এটা কীরকম কথা! মেয়ে বিয়ের দিন পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে কোথায় যাবে? এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন একটা মেয়েকে তুমি পছন্দ করেছ নক্ষত্র? যার নিজের বিয়ে নিয়েই কোন চিন্তা নেই। কাউকে কিছু না জানিয়ে লাপাত্তা হয়ে বসে আছে। সে আমাদের বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্যতা কীভাবে রাখে?’

নক্ষত্র রক্তবর্ণ চোখে বাবার দিকে দেখে কিন্তু কিছু বলে না। ইলা ওকেও না বলে কোথায় যেতে পারে! ইলা তো এরকম নয়। নিজের বিয়ের দিন সে এরকম একটা কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ কখনো করবে না। তার কোথাও যাবার হলেও নক্ষত্রকে অন্তত বলে যেত।
তখনই নক্ষত্রর ফোনে একটা মেসেজ আসে। সে ভাবে ইলা হয়তো মেসেজ করেছে। সে কোথায় আছে তাকে জানানোর জন্য। ইলারই মেসেজ। নক্ষত্র তাড়াহুড়ো করে মেসেজ ওপেন করে স্তব্ধ হয়ে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইল। চোখের পলক পড়ছে না তার। শ্বাস আটকে আছে। ইলা এসব কী লিখেছে!
কিসের জন্য সরি বলছে ইলা?
মেসেজটা এরকম,

—-সরি নক্ষত্র। আমাকে তুমি ক্ষমা কোরো। এই বিয়েটা করতে পারব না আমি। কেন সেই কারণ জানতে চেও না। আমি বলতে পারব না। শুরু এটুকু জেনে রাখো, তোমার আগেও আমার জীবনে একজন ছিল। যাকে আমি তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসতাম। আজ হঠাৎ সে ফিরে এলে আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি।’

হাত থেকে ফোন পড়ে গেল নক্ষত্রর। মিথ্যা। এই মেসেজ ইলার ফোন থেকে করা হলেও এই লেখাগুলো ইলা লেখেনি। ইলা কখনো এরকম কাজ করতে পারবে না। নক্ষত্র এটাও মানতে পারছে না ওর আগেও ইলার জীবনে কেউ ছিল। যার জন্য আজ ইলা তাকে ধোঁকা দিয়ে ওই মানুষটার হাত ধরে পালিয়ে গেছে। মিথ্যা। সব মিথ্যা। ইলা নিশ্চয় কোন বিপদে আছে। তাকে ইলাকে খুঁজে বের করতে হবে। ইলাকে খুঁজে পেলেই এই মেসেজের সত্যতা যাচাই করা যাবে। তার আগে নক্ষত্র কারো কথা বিশ্বাস করবে না। ইলাকে তার থেকে ভালো আর কে চিনে?
নক্ষত্র হয়তো কখনও এই মেসেজটা সত্য বলে বিশ্বাস করত না। যদি না ইলার ভাই এসে এই কথাটা জানাত। বাবলু নিজে দেখেছে ইলার কারো বাইকের পেছনে বসে কোথাও যাচ্ছে। বাবলু আর তার বন্ধু রাকিব পেছনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরিবিলিতে মনের সুখে সিগারেট টানছিল। এই কথাটা সে গোপন করে বাকি কথাটুকু বলে।
বাবার প্রশ্নে বাবলু উত্তর দেয়,

—-আমি তখন রাকিবের সাথে পেছনের রাস্তায় ছিলাম। ইলা আপু মাথায় ওড়না দিয়ে কেমন যেন চুপিচুপি বেরিয়ে এলো। বাইক নিয়ে ছেলেটা আগেই দাঁড়িয়ে ছিল। আপু এসে ওর সাথে কিছু কথা বলে বাইকের পেছনে উঠে বসে কোথাও চলে গেল। আমি পেছন থেকে ডেকেছি। আপু শুনেনি। হয়তো শুনছে কিন্তু ফিরে তাকায়নি।’

নক্ষত্র জিজ্ঞেস করল,

—-ইলা নিজের ইচ্ছায় ছেলেটার বাইকে উঠেছে?’

—-হুম।’

—-ছেলেটাকে তুমি দেখেছ? ও কে তা তুমি চেনো?’

—-আমি ওর মুখ দেখিনি। হেলমেট পরা ছিল।’

—-বাইকের নাম্বার মনে আছে?’

—-তখন এতকিছু খেয়াল করিনি ভাইয়া।’

নক্ষত্র কিছুই বুঝতে পারছে না। ইলা তাহলে সত্যিই তাকে ঠকিয়েছে? তাকে বিয়ের করার স্বপ্ন দেখিয়ে, এমনকি বিয়ের আসর পর্যন্ত টেনে এনে প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে! যাবার আগে একটা বার তার কথা ভাবল না? তার ভালোবাসা কিছুই ছিল না। নয়নতারার বাবার বুকে ব্যথা উঠেছে। উনাকে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইলার এমন কাজে সবাই হতভম্ব। কেউ কথাটা বিশ্বাসই করতে পারছে না। ইমন বাবলুর উপর রাগারাগি করছে।

—-ইলাকে তুই অন্য একটা ছেলের সাথে যেতে দেখেছিস তবুও আমাদের জানালি না কেন?’

—-আমি বুঝতে পারিনি আপু পালিয়ে যাচ্ছে।’

ইমন চিৎকার করে উঠল। বোন পালিয়ে গেছে সে এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না।

—-চুপ। ইলা পালায়নি৷ ওকে কেউ ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গেছে। ইলাকে আমরা খুঁজে বের করব। তাহলেই সব সত্য জানা যাবে।’

নক্ষত্র আজ সব হারিয়ে এই মুহূর্তে নিঃস্ব হয়ে বসে আছে। ইলাকে সে কতটা ভালোবাসে তা শুধু সে-ই জানে। ইলার জন্য বাবা মা’র বিরুদ্ধে গিয়েছে। আজ ইলাই তাকে ধোঁকা দিল! সত্যিই তার আগে ইলার জীবনে কেউ ছিল! থাকলেও ইলা তাকে জানায়নি কেন?
নক্ষত্রর বাবা মা ছেলেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ইলার পরিবারকেও ইতোমধ্যে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছে। বাড়ির প্রতিটা মানুষ মুখ বুজে সব অপমান সহ্য করেছে। কেউ একটা টুঁশব্দও করেনি। দোষ তো তাদের মেয়েরই। কথা শোনার ভাগিদার তো তারাই।
নক্ষত্রর বাবা বলল,

—এখানে আর বসে থেকে কী হবে? চলো ফেরা যাক। নাক যতটা কাটানোর ছিল, কেটেছে। এখন এই নাটক শেষ করো।’

বাবার কথায় নক্ষত্র কান দিল না। তার মধ্যে একটা জেদ কাজ করছে। প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে বুকে। সে বলল,

—বিয়ে করতে এসেছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে হোক, আজ বউ নিয়েই ফিরব।’

চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here