পরিশেষে ভালোবাসি পর্ব ২

#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০২
#সামিয়া_মেহেরিন

বাড়ির ভেতরে ঢুকেই আমি চরম অবাক। এ আমি কি দেখছি!

আমার বোন নিশা একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। বুঝলাম মেয়েটা হয়তো আহিয়ান এর ছোট বোন। কিন্তু নিশা এ বাড়িতে কী করছে? ওকে কিডনাপ করা হয়েছে তাহলে এখানে কেমনে আসলো ও? ওর হাত পা বাঁধা ছবিই বা আসলো কোথা থেকে? আমার এসব ভাবনার মাঝেই, নিশা আর মেয়েটি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। নিশা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল

-কীরে আপু তলে তলে এতো কিছু আমাকে একবার বললি ও না। (নিশার কথায় আমার ধ্যান ভাঙল)

নিজেকে সামলিয়ে নিশা কে বললাম
_তুই এখানে কিভাবে আসলি? তোকে না..(আমাকে বলতে না দিয়ে)
_হ্যা হ্যা আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো। আহিয়ান ভাইয়াই তো আমাকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচালো।

নিশার কথার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। নিশাকে তো আহিয়ানই কিডন্যাপ করেছিল, তাহলে নিশা কেন বলছে আহিয়ান তাকে বাঁচিয়েছে? আর আহিয়ান আমাকে বিয়েই বা করলেন কেন? আমাকে বিয়ে করে তার কি লাভ?

এরকম হাজারটা প্রশ্ন আমার মাথায় কিলবিল করছে। আর আমার সব প্রশ্নের উত্তর আছে ওই খাটাশ আহিয়ানের কাছে। এসব ভাবনার মাঝে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আহিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-শেষ পর্যন্ত নিজের জেদটাই রাখলিতো আহিয়ান। একা একা গিয়ে বিয়ে করে আসলি।

-মা আমিতো আগেই বলেছিলাম।
-সে যাই হোক, মিষ্টি একটা বউমা এনেছিস আমার জন্য আর আমি এতেই খুশি। বউমা বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসো।

-আরে ভাবি ভেতরে এসো। আমার ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হবে। তুমি সত্যিই খুব মিষ্টি দেখতে।

বলেই আরিয়া আমার হাত ধরে আমাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল। এমন সময় একজন লোক হাতের মোবাইলের দিকে একমনে তাকিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। মোবাইলের দিকে নজর স্থির রেখে আহিয়ানের উদ্দেশ্যে বললেন
-কীরে আহিয়ান, আমাকে এত জলদি বাড়ি আসতে বললি কেন?

বলে মুখ তুলে তাকালো আমার আর আহিয়ানের দিকে।

-আহিয়ান, তুই বিয়ে করেছিস।( অবাক হয়ে)

তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অবাকের চরম পর্যায় থেকে লাফ দিয়ে টুপ করে পৃথিবীতে পরেছেন। আরিয়া বলে উঠল
-একি মাহাদী ভাই! আপনি না ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড। আপনাকেও ভাইয়া বিয়ের ব্যাপারে কিছুই বলে নি?
-না, আমিতো এখানে এসে জানলাম।

একটা অন্ধকার ঘরের ঠিক মাঝখানটায় একটা টিমটিমে বাতি জ্বলছে। আবছা আলোয় টেবিলের ওপর ছড়িয়ে থাকা কাগজপত্র আর এক কোণায় খুব সযত্নে রাখা একটি ফটোফ্রেম দেখা যাচ্ছে। ফটোফ্রেমে রয়েছে দুজন হাস্যজ্জ্বোল মেয়ের ছবি। ঘরের কোণায় একটা চেয়ারে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ রক্তচক্ষু নিয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ২৪-২৫ বছরের দুটো ছেলের দিকে।

-তোদের বলেছিলাম না, ওদের দুজনের উপর সবসময় নজর রাখতে? এত কিছু হয়ে গেলো অথচ তোরা কিছু জানতেই পারলি না?

-সরি স্যার, ভুল হয়ে গেছে।

দুজন ছেলের মধ্যে একজন কথাটা বলতেই মধ্যবয়স্ক লোকটি হুংকার দিয়ে উঠলেন।
-ভুল হয়ে গেছে? কোন কাজ তোরা ঠিকভাবে করতে পারিস? (একটু থেমে) ওদের ব্যাপারে সব খোঁজখবর নে আর সবসময় নজর রাখবি ওদের উপর। এখন যা এখান থেকে।

দুজনেই চলে গেলো। মধ্যবয়স্ক লোকটা ফটোফ্রেম হাতে নিয়ে সযত্নে হাত বুলিয়ে আবারও আগের জায়গায় রেখে দিলেন।

এদিকে-
-আহিয়ান, তুই এসবের মধ্যে ঈশাকে জড়িয়ে ঠিক করছিস না।
মাহাদীর কথা শুনে আহিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

-আমাদের ঈশাকে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই।

মাহাদী আর কথা বাড়ালো না। কারণ সে জানে আহিয়ার এখন তার কোনো কথাই শুনবে না। আর ঈশাকে তো সে বিয়ে করেই ফেলেছে, কিছু বলেও লাভ নেই।

মাথায় এক ঝুড়ি প্রশ্ন নিয়ে আহিয়ানের রুমের মধ্যে পায়চারি করছি। উদ্দেশ্য আহিয়ান ঘরে আসলেই তার দিকে এক ঝুড়ি প্রশ্ন ছুঁড়ে মারব। নিশা আর আরিয়া আমাকে এ ঘরে রেখে গেছে। গত একঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি অথচ তার আসার নাম-গন্ধও নেই।

আহিয়ান ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমি তার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম
-আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন? আমাকে বিয়ে করে আপনার কি লাভ? নিশাকে কিডন্যাপ কেন করেছিলেন আপনি? আর নিশা এ বাড়িতে কি করছে? আমাকে এ বাড়িতে কেন এনেছেন? এসবের পেছনে আপনার উদ্দেশ্য কী?

একদমে সবগুলো প্রশ্ন করে হাঁপাতে লাগলাম। আর উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বললেন
-সময়মত সব জানতে পারবে।

বলেই আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আর আমি বোকার মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি তাকে এতগুলো প্রশ্ন করলাম আর তিনি এটুকু বলেই চলে গেলেন।

আহিয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বলল
_এমন বোকার মত দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমি তো বললাম সময় হলে সব জানতে পারবে।আর ততদিন আমার স্ত্রীর পরিচয়ে এখানে ই থাকতে হবে তোমাকে। আমাদের দুজনের ভেতরের কথা বাইরের কেউ যেন জানতে না পারে, কথাটা ভালভাবে মাথায় ঢুকিয়ে রাখো। তোমার বোন কিন্তু এই বাড়িতেই থাকবে।যেটাই করবে ভেবে করো।

বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। চোখ বন্ধ করে বললেন, আলমারিতে তোমার জামা কাপড় সব রাখা আছে।
আমি সেভাবেই কিছূক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভালো ভাবেই বুঝে গেছি এই খাটাশ আহিয়ান আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবে না। এসবের মধ্যে ঘোর রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। আমার সব প্রশ্নের উত্তর বের করতেই হবে।
চিন্তা ভাবনা সব দূরে ফেলে আলমারি খুললাম। দেখলাম অনেক গুলো থ্রিপিস আর শাড়ি রাখা আছে। সেখান থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াসরূম এ ঢুকে পরলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে পরলাম আরেক বিপদে। উনিতো বিছানায় শুয়ে আছেন। ঘুমিয়েও গেছেন বোধহয়। আমি তাহলে কোথায় ঘুমাবো। উনার সাথে বিছানায় ঘুমানো অসম্ভব। আমি তো উনাকে স্বামী হিসেবে মানিই না।আগেপাছে না ভেবে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।

আবার ও আগমন ঘটলো নতুন এক সকালের। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম আহিয়ান এখন ও ঘুমাচ্ছেন। আমি নিচে নেমে এসে রান্না ঘরের দিকে গেলাম। দেখলাম আমার শ্বাশুড়ি মা রান্না করছে। আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন। আমি তাকে সাহায্য করতে লাগলাম।আর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে লাগলাম।

ঈশার যাওয়ার অনেক ক্ষন পর ই আহিয়ান এর ঘুম ভাঙ্গে। ফ্রেশ হয়ে এসে বাইরে‌ যাবে বলে রেডি হচ্ছে।আজ সে তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে তাই মনে মনে খুশিও হচ্ছে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here