পরিশেষে ভালোবাসি পর্ব ৩

#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৩
#সামিয়া_মেহেরিন

রান্না শেষ হলে আমি ঘরে এসে দেখি খাটাশটা রেডি হচ্ছে। বোধহয় কোথাও যাবে। আমার দিকে অপলক তাকিয়ে নিজের কাজ এ মনোযোগ দিলেন।যায়ার আগে বলে গেলেন
_তুমি যে কম্পানি তে চাকরি করতে সেখান থেকে রিজাইন নেয়া হয়ে গেছে। বাড়িতে থাকবে তুমি।আর যদি চাও আমার কম্পানি তে চাকরি করতে পারো।মোট কথা আমার চোখ এর সামনে থাকতে হবে তোমাকে।
_কীইইই!

কোনো কিছুই না বলেই চলে গেলেন।আর আমি ভাবছি গত দু’দিন ধরে আমার সাথে কী কী ঘটেছে। মনে হচ্ছে অবাক এর শেষ পর্যায়ে গিয়ে চিতপটাং হয়ে শুয়ে থাকাই এখন বোধহয় বাকি আছে।

মাহাদী আহিয়ান এর সাথে কথা বলার উদ্দেশ্য তার ঘরের দিকে যাচ্ছে। একদিকে মাহাদী সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে উঠছে অন্য দিকে নিশা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। দুজনের ই মনোযোগ নিজেদের ফোনের উপর স্থিত
। অতঃপর মাহাদী নামক ব্যাক্তি ও নিশা নামক ব্যাক্তির সংঘর্ষে তাদের দুজনের ফোন ই পড়ে গিয়ে চুরমার। দুজনেই একে অপরের দিকে অগ্নিচক্ষু নিয়ে তাকালো। নিশা বলে উঠলো
_এই যে আপনি চোখে দেখেন না? নাকি সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ধাক্বা খেতে মন চায়? দিলেন তো আমার সাধের ফোনটা ভেঙ্গে।
_কী বললেন আমি চোখে দেখতে পাই না? আপনি তো নিজেই অন্ধ। আমার ফোনটার কি হাল করেছেন আপনি!
_এই আপনি নিজের দোষ আমাকে দিচ্ছেন কেন হ্যাঁ । আপনি তো বোধহয় সবসময় ফোনের ভিতরে ঢুকে গিয়েই চলা ফেরা করেন।কালকেও তাই দেখলাম নিজের দোষ স্বীকার না করে উল্টো তর্ক করছেন। আপনি আহিয়ান ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড না হলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতাম একদম।
_কীইই!

নিশা আর মাহাদীর চিল্লাচিল্লি শুনে আরিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
_এই তোমরা এভাবে চিল্লাচিল্লি করে বাড়ি মাথায় তুলছো কেন বলতো।

-চিল্লাচিল্লিতো করছে এই লোকটা। আমি কোথায় করলাম? এমা..আমার তো কোচিং আছে। কত দেরি হয়ে গেল আমার! সব হয়েছে এই লোকটার জন্য।

বলেই নিশা হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।

-মেয়েটা কে বলতো, আরিয়া। কালকেও বোধহয় দেখেছিলাম।
-ও হলো নিশা। ঈশা ভাবির ছোট বোন।
-ঈশা ভাবির মতো সুইট একটা মেয়ের এত ডেঞ্জারাস বোন। আমিতো ভাবতেই পারছি না। (একটু থেমে) যাই হোক, আহিয়ান কোথায় বলতো।
-ভাইয়া তো বাড়িতে নেই। সকালবেলা বেরিয়েছে।
-ওহ! তাহলে আমি আসি এখন।

কফিশপে বসে আছে আহিয়ান। তার সামনে বসে আছে কুহু। কুহু একদিকে আহিয়ানের ফুফাতো বোন, অন্যদিকে তার ভালোবাসা। কুহুও ভালোবাসে আহিয়ানকে।

নিরবতা ভেঙে কুহু বলে
-দেখো, ভালোবেসে ফেল না যেন ঈশাকে।

-এসব তুমি কি বলছ, কুহু। আমি কেন ঈশাকে ভালোবাসতে যাবো?
-তোমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ। পবিত্র সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক। ( ম্লান হেসে)
-আমি তোমায় ভালোবাসি, কুহু। তুমিতো সবই জানো কেন আমি ঈশাকে বিয়ে করেছি। আমাদের দুজনের মাঝে কেউ আসবে না।
-তাই যেন হয়!

-কুহু, তুমি সাবধানে থেকো। আর এই কয়েকদিন আমাদের দেখা না করাই ভালো।
-হুম। কাল আমি কাল আমি ফ্রান্স যাচ্ছি বাবার কাছে।
-চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।
-হ্যাঁ, চলো

নদীর ধারে মুখে মাস্ক, চোখে সানগ্লাস আর মাথায় ক্যাপ পড়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক। তাকে দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। লোকটা পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে কারো কাছে কল দেয়। ফোন রিসিভ হতে সে গম্ভীর গলায় বলে

-অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েছে?

ফোনের ওপাশ থেকে জবাব এলো
-স্যার, কাল থেকে বাড়িটার আশেপাশে অপরিচিত মানুষের আনাগোনা দেখছি।

-আমি ঠিকই ধরেছিলাম লোকটা আমাদের ওপর নজর রাখার জন্য লোক লাগাবে। চোখ-কান খোলা রাখো। আমার শ্বশুর মশাইকে ধরতে হলে তার পাঠানো লোকগুলোকেই আগে ধরতে হবে।
-জ্বী স্যার।

বিকেলবেলা বাড়ির সকলের জন্য নাস্তা বানাবো বলে রান্নাঘরে এলাম। আমার শ্বাশুরি মা প্রথমে মানা করলেও আমার অনুরোধে তিনি আর না করতে পারেন নি। নিশা আর আরিয়া এসেছিল আমাকে সাহায্য করতে কিন্তু আমি ওদেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিলাম। কারন আমার মাথায় এখন দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। সুন্দরমতো নাস্তা বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে ডাক দিলাম। সবাই খেতে বসতেই আহিয়ান বাড়িতে ঢুকলেন। মা তাকে নাস্তা খেয়ে যেতে বললেন আর তিনিও বাধ্য ছেলের মতন খেতে বসলেন। তা দেখে আমি বাঁকা হাসি দিলাম।

আহিয়ান কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই থু থু আওয়াজ করতে লাগলেন।
-এটা কি কফি নাকি লবণের শরবত?

চোখ-মুখ কুচকে কথাটা বলতেই আমি মায়ের উদ্দেশ্যে বললাম
-দেখেছেন মা, আমাদের একটু ঝগড়া হয়েছে বলে আপনার ছেলে আমার বানানো খাবারকে খারাপ বলছে।( কাঁদো কাঁদো ফেস করে)

-আহিয়ান, বউমা এত কষ্ট করে রান্না করল আর তুই ওকে এভাবে বলছিস। আর কীসের লবণের কথা বলছিস তুই? কফিতে লবণ আসবে কোথা থেকে? আমরাও তো কফি খেলাম।

-মা, এই ক…( বলতে না দিয়ে)
-আহিয়ান চুপ খরে খাও। আর কোনো কথা না।

মায়ের কথার ওপর তিনি আর কিছু বললেন না। কফি মগে একটু পরপর চুমুক দিচ্ছেন। আমি ওনার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছি আর আহিয়ান আমার দিকে ঘরে চল খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি মনে মনে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছি। অন্যদিকে আহিয়ানের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।

আহিয়ান আর না পেরে কাজ আছে বলে দ্রুত উঠে চলে গেলেন। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলাম। এবার বুঝবে আমাকে বিয়ে করার সাধ।

আহিয়ান ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তার মুখের নোনতা ভাবটা যাচ্ছেই না। বিছানায় গিয়ে টান টান হয়ে শুতেই আবার লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
-একি পুরো বিছানায় পানি কেন?

আহিয়ান বুঝলো এটা ঈশারই কাজ। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল সে।

আমি ভয়ে আর ঘরে গেলাম না। সোজা নিশার ঘরে চলে এলাম। দেখলাম নিশা আর আরিয়া বসে বসে গল্প করছে। আমিও ওদের সাথে যোগ দিলাম। আজকের সব ঘটনা ওদের বললাম। আমার কথা শুনে ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠল।

রাতের বেলা খাওয়ার পর্ব শেষ করে আহিয়ানের ঘরের সামনে পায়চারি করছি। ভেবেছিলাম আজ আর এই ঘরে আসব না। নিশা অথবা আরিয়ার সাথে থাকবো। কিন্তু ওরা দুজনেই আমাকে আহিয়ানের সাথে ঝগড়া মিটিয়ে নিতে বলে ঘর থেকে বের করে দিলো।

অসহায়ের মতো ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঘরে ঢুকলেই আমার উপগ দিয়ে টর্নেডো বয়ে যাবে। কোনো উপায় না পেয়ে সাহস করে ঘরের ভেতর ঢুকেই পড়লাম।দেখলাম আহিয়ান গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে দেখেই আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।

চলবে?

আগামীকাল ব্যক্তিগত কিছু কারণে গল্প দেবো না। পরের পর্ব ইনশা আল্লাহ্ বড় করে দেয়ার চেষ্টা করব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here