প্রিয় পরিণতি পর্ব ৩

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৩!
লেখক: তানভীর তুহিন!

৮ টা নাগাদ মেঘ ফোন দিতেই আবিদ ফোনটা নিয়ে ছাদে চলে এলো। মেঘের খুব বুক ধুকপুক করছিলো। আবিদ ফোন রিসিভ করে বুঝতে পারলো এটা মেঘ। কারন ওপাশ থেকে কোনো শব্দই আসছিলো না।
– ” হ্যালো মেঘ! ”
– ” হ্যা হ্যা বলুন! ”

মেঘের এমন উৎসুক আচরন দেখে আবিদ কিছুটা অবাক হয়।
– ” কী করছো? ”
– ” এইতো কাল থেকে কলেজ শুরু তাই একটু প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম।আমি বোধহয় ফোন দিতে লেইট করে ফেলছি? ”
– ” তবুও তো অবশেষে দিলা। অপেক্ষা করার মর্ম আজ বুঝলাম আর ওই প্রবাদ বাক্যটাও আজ আমার জীবনে লেগে গেলো! ”
– ” কোন প্রবাদ বাক্য? ”
– ” ওই যে সবুরে মেওয়া ফলে! ”
কথাটা শুনে মেঘের খুব লজ্বা লাগছিলো। এ ছেলে আমার ফোন পেয়েই এত্তো খুশি?
– ” আচ্ছা মেঘ,আমি যদি কাল কলেজে আসি তোমার সাথে টাইম স্পেন্ট করতে তোমার কোনো প্রব্লেম আছে?”
মেঘ কিছুটা হকচকিয়ে জবাব দিলো ” ইয়ে টাইম স্পেন্ট মানে? ”
– ” আরে এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেনো? আমি শুধুই কথা বলতে আসবো। যদি তোমার কোনো সমস্যা না থাকে! ”
– ” আচ্ছা! ”
– ” থ্যানকস মেঘ! ”
– ” কেনো থ্যাংকস? ”
– ” এই যে ইম্প্রেস করা সুযোগ করে দিলে! ”

মেঘ খুব লজ্বা পাচ্ছে।এর আগে কোনো ছেলের সাথেই মেঘ এভাবে ফোনে কথা বলে নী। এর আগে কোনো ছেলেই মেঘকে এভাবে বশ করতে পারে নী। মেঘ মনে মনে ভাবছিলো, ” তুমি আর কী ইম্প্রেস করবা? আমিতো একদিনেই ইম্প্রেসড। শুধু তোমার স্বমন্ধ্যে ডিটেইলস গুলো জানি! ” মেঘ যে ফোনে কথা বলছে সে হুশ ই নেই তার। এসব ভেবে মুচকি মুচকি হাসছিল। আবিদ ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে অস্থির হয়ে গেছে!

– ” হ্যালো মেঘ আছো? ”
মেঘের যেনো এই মাত্রই হুশ ফিরলো। আবার হকচকিয়ে উত্তর দিলো।
– ” হ্যা আছিতো বলুন না! ”
– ” আচ্ছা মেঘ আমি যদি তোমায় ইম্প্রেস না করতে পারি, আমার কোনো কর্মেই যদি তুমি মুগ্ধ না হও তখন কী করবে? ”
মেঘ আবিদের একথা শুনে বুঝলো তামান্না মিথ্যে কিছু বলে নী। এই ছেলেটার ধৈর্য্যই নাই। পারে না আজকেই বিয়ে করে ফেলে।
– ” আপনার ধৈর্য্য তো খুব কম দেখছি। প্রথম দিনেই সব পেয়ে যেতে চাচ্ছেন! ”
আবিদ একটু মুচকি হাসলো। তারপর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো।

– ” আমার শর্ট টেম্পার খুব আর ধৈর্য্য একদম নেই বললেই চলে। সম্পর্কে জড়ালে আমার এসব সহ্য করতে হবে! ”
– ” কেনো সহ্য করতে হবে? আমার জন্য এসব একটু নিয়ন্রনে আনা যাবে না? ”

আবিদ যেনো পারছেনা এখনই নিজের ভেতরে ঢুকে রাগকে গলা টিপে মেরে দেয় আর মুদি দোকান থেকে একটু ধৈর্য্য কিনে আনে!

– ” আচ্ছা শুনুন আমার না একটু কাজ আছে আজ রাখি। কাল কলেজে দেখা হবে! ”
– ” সময় করে কথা বলার জন্য, ধন্যবাদ! ”

মেঘ যেনো পারছেনা আবিদকে এখনই হ্যা বলে দেয়। ইশ ছেলেটা কত্তো মিষ্টি করে কথা বলে। মনে হয় মিষ্টি খেতে খেতে জন্ম হইছে। মেঘ ভাবনা রাজ্য থেকে ফিরে এসে বললো, ” আচ্ছা রাখছি। কাল দেখা হচ্ছে, বাই!” ফোনটা কেটে দিয়ে মেঘ খাটে শুয়ে শুয়ে ভাবতেছে। একটা ছেলে কীভাবে মাত্র ১ দিনে তাকে এতো পাগল করে দিলো? ছেলেটা মিষ্টি করে তো কথা বলে।আবার সিগারেটও খায়,শর্ট টেম্পার বেশি, ধৈর্য্য নাই। আচ্ছা ওর আগের রিলেশনশিপগুলো টিকে নাই কেনো? আমার সাথেও যদি কয়েকদিন পরে ব্রেকাপ হয়ে যায়? এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘের তামান্নার কথা মনে পড়ে। তামান্নাকে ফোন দিতেই দেখে তামান্না ফোন ব্যাস্ত।

এদিকে আবিদ তো পারতেসে না খুশিতে ছাদ থেকে লাফ দেয়। আবিদ খালি তামান্নাকে বলে যাচ্ছে ” মেঘ আমায় বলছে ওর জন্য শর্ট টেম্পার আর ধৈর্য্য কন্ট্রোলে আনতে। তার মানে তো আমায় ইন্ডিরেক্টলি হ্যা বলে দিসে তাই না? ” তামান্না কিছুটা মস্করা করে বললো – তা এটাও কী আগের ৩ টার মতো কেয়ারলেস হয়ে ছেড়ে দিবি? আবিদ কথাটা শুনে নিজেকেই প্রশ্ন করলো আসলেই কী এমন কিছু হবে? আবিদ নিজের থেকে যে উত্তরটা পেলো সেটাই তামান্নাকে দিলো।
– ” না রে আগের গুলোয় আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় নী। আমার মনে হয় নী যে একে পেলে কীছুটা ভালোথাকা বেড়ে যাবে! ”
আগের গুলো সব এট্রাকশন ছিলো এটা ভালোবাসা।তামান্না বুঝতে পারলো এটা আবিদ সত্যি বলছে কারন তামান্নাই একমাত্র বান্দা যার সাথে আবিদ সব শেয়ার করে আর এক চুলও মিথ্যা বলে না।
– ” আচ্ছা দেখা যাবে। এখন খেয়ে দেয়ে ঘুমা। আমি রাখলাম। ”
তামান্না ফোন কেটে দিয়ে দেখলো মেঘ ফোন দিয়েছিলো। তামান্না কলব্যাক করলো!

– ” হ্যালো তামান্না আপু আমি মেঘ বলছি। তুমি ফ্রি আছো?একটু কথা বলা যাবে? ”
– ” হু একটু কেনো? অনেকখানি বলো। হাজার হোক তুমি আমার পাগলা হারামজাদাটার প্রেম তোমার জন্য তো অলওয়েজ ফ্রি আমি! ”
– ” আচ্ছা আপু। ওনার আগের ৩ টা রিলেশনশিপ টিকে নাই কেনো? ”
– ” আসলে আবিদের ওগুলা এট্রাকশন ছিলো। কিন্তু আবিদের লক্ষ্যন বলছে তোমার প্রতি যেটা ওটা ওর পিওর ফিলিংস। আর ওর সম্পর্কগুলো না টিকার পেছনে কিছু দোষ ওর ও আছে কিছু দোষ ওর বিপরীতের মানুষেরও ছিলো।আসলে ওই মেয়েগুলো মন থেকে ভাবলে টিকে যেতো কিন্তু ওরা মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবতো। তুমি সম্পর্কে জড়ালে মন দিয়েই ভেবো ভাই। আমি তোমায় নিশ্চিত করছি আবিদের সাথে রিলেশনশিপে গেলে তুমি ঠকবা না। তবুও তোমার একটা ভালোলাগা খারাপলাগা আছে। তাই বলছি যাই করো মস্তিষ্ক থেকে ভাবার আগে একবার মনের কথাটাও কান পেতে শুনে নিও! ”
– ” আপু তুমি এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলো যে কী বলবো। আমার আগাম প্রশ্নের উত্তরও একসাথে দিয়ে দিলা! ” কথাটা শুনেই তামান্না খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। মেঘ ও হাসলো খানিক!
– ” আচ্ছা আপু একটা কথা বলবো যদি তুমি কিছু মনে না করো! ”
– ” আরে ভাই তুমি চীল থেকে বিন্দাস বলো!”
– ” আচ্ছা আপু তুমি ওনার সাথে প্রেম করো না কেনো? ”
কথাটা শুনেই তামান্না এতো এতো জোরে হাসলো যে মেঘ রিতিমতো ভয় পেয়ে গেলো। তামান্নার হাসি যেনো থামছেই না।তামান্নার হাসি দেখে মেঘ যেনো পুরো বেয়াক্কেল বনে গেলো।

তামান্না হাসি থামিয়ে বললো, ” আমরা সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে বিচরন করছি। আবিদ আর আমার বাবা বেষ্টফ্রেন্ড। আমাদের স্কুল কলেজ সব এক ছিলো। আমার আর আবিদের বন্ডিং টা অনেকটা ভাইবোন এর মতো। আমার বা ওর কখনই জীবনসঙ্গী হিসেবে একে অপরের প্রতি ফিলিংস জন্মায় নী।
মেঘ কথাগুলো শুনে বুঝতে পারলো তামান্না একদমই স্পষ্টভাষী। আর তামান্না আপু যখন আবিদের স্বমন্ধ্যে বলেই দিয়েছে। তামান্না আপুর কথা শুনে তো সব ঠিক-ঠাক ই লাগছে।

– ” আচ্ছা আপু,উনি লাইফ আর ক্যারিয়ার নিয়ে কেমন সিরিয়াস “?
– ” সত্যি কথা বলতে কী আপু আবিদ্দা সিরিয়াস খুব কম হয়। কিন্তু ও সিরিয়াস না হয়েই আমাদের ব্যাচের টপার। তাই ওর ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু ওর শর্ট টেময়ার, ধৈর্য্য আর রাজনিতিই যা সমস্যা করে আরকি! ”
– ” রাজনিতি করে নাকি? ”
– ” করে মানে? মারামারিও করে। অবশ্য ও কারে শুধু শুধু মারে না। আসলে তুমি কলেজে নতুন তো তাই কিছু বুঝতেসো না। কয়েকটা দিন যাক তুমি নিজেই আবিরের প্রেমে পড়ে যাবা। আমি বলি কী তুমি ৩-৪ দিন সময় নাও রেগুলার কলেজে যাও। দেখবা সবটাই পরিষ্কার! ”
– ” থ্যাংকস এ লট আপুনি। আমি মনে হয় তোমায় বিরক্ত করলাম! ”
– ” একদম থাপ্পড় দিবো একটা। শোনো তুমি আবিদের পছন্দ না আমারও পছন্দ। আমি আবিদকে এর আগে এমন ক্যাবলা হতে দেখিনি। তাও আবার কোনো মেয়েকে দেখে। তাই এভাবে থ্যাংকস, কষ্ট এসব ব্লা ব্লা বলে আমায় পর করে দিবা না!
মেঘ কিছুটা হেসে জবাব দিলো,” আচ্ছা আপু! ”

– ” আচ্ছা মেঘ তুমি কী আবিদের সাথে কাল দেখা করা নিয়ে কিছু বলছো? না মানে ও খুব ঘুমায় তো। দেখা করতে হলে আমাকে উঠিয়ে দিতে হবে আরকি।
– ” হ্যা, আপু সকালবেলা দেখা করার কথা কলেজে! ”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি জাগিয়ে দিবো!”
– ” তুমিও এসো আপু! ”
– ” আচ্ছা ওকে, টাটা। সকালে দেখা হচ্ছে! ”

সকালবেলা তামান্না আবিদকে উঠিয়ে নিয়ে ৯ টার দিকে ক্যাম্পাসে এলো। মেঘ ক্যাম্পাসে ঢুকতে ঢুকতে ১০ টা বেজে গেলো কারন সারারাত না ঘুমিয়ে খালি আবিদের কথাই ভাবছে। তাই সব ঘুম এসে সকালে চোখে বাসা বাধছে।তাড়াহুড়ো করে ক্যাম্পাসে ঢুকছিলো দেখলো আবিদ বসে আছে। মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বিরক্ত হয়ে গেছে প্রচুর।মেঘ সামনে গিয়ে বললো, ” আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। সরি! ” আবিদ আসলেই বিরক্ত হয়ে ছিলো। কিন্তু মেঘের এই নরম শব্দগুলো যেনো আবিদের মন একদম গলিয়ে দিলো। আবিদ মুচকি হেসে বললো, ” সমস্যা নেই।তুমি ক্লাস করে আসো আমি ওয়েট করে আছি। ” মেঘ কিছুটা অবাক হলো বলে কী ৩ ঘন্টা ওয়েট করে থাকবে?
– ” আপনি এতক্ষন বসে থাকবেন কেনো? আমি ফোনে কথা বলে নিবো! ”
আবিদ মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ” কিন্তু আমার যে ফোনে কথা বলে মন ভরবে না! ” মেঘও আবিদের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো কথাটা শোনার সাথে সাথেই যেনো মেঘের হৃদস্পন্দন চারগুণ বেড়ে গেলো। মেঘ চোখ নামিয়ে নিলো।
– ” আচ্ছা যাও ক্লাস শুরু হয়ে যাবে! ”
– ” আচ্ছা আসি, ওয়েট করানোর জন্য সরি! ”
মেঘ চলে যেতেই আবিদ মুচকি হেসে বসলো। আবিদ খেয়াল করলো মেঘ যাবার সময় জুলফিকার এর সাথে কথা বলছে।মেঘ ক্লাসে চলে যেতেই আবিদ জুলফিকারকে ডাক দিলো!

– ” এইই জুলফি এদিকে আয়! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here