প্রেমের রঙ পর্ব -০৬

#প্রেমের_রঙ
#পর্ব_০৬
#মোহনা_হক

‘ পদ্ম একটু বেশিই লজ্জা পেলো। ইজহান পদ্মের লজ্জা দেখে সে নিজেকে সংযত করলো। ভুলেও আর সে পদ্মের অনুমতি ছাড়া এসব করবেনা। খুব বড় ভুল হয়ে গেলো। এমনটা না করলেও হতো। ইজহান পদ্মের পাশ থেকে সরে গেলো। বিষয়টা পদ্মের ভালো লাগেনি। হঠাৎ এটা করলো কেনো?। পদ্ম চুপ করে ঘাপটি মেরে বসে রইলো। এটা দেখে ইজহান বললো-‘

“এভাবে বসে আছো কেনো?”

‘পদ্ম মুখটা ফুলিয়ে রাখলো। কোনো কথা বললো না। কথা বলার কোনো মানেই আসেনা। পদ্ম হাত থেকে মালাটা খুলে রাখলো। ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ইজহান সবকিছুই খেয়াল করেছে। তবে এমন আচরণ এর মানে বুঝতে পারলো না। ইজহান পদ্মের হাত ধরে পদ্মকে টান দিয়ে উঠিয়ে বললো-‘

“কি হয়েছে তোমার?”

‘পদ্ম ইজহানের হাত ছেড়ে দিয়ে বললো-‘
“কিছু হয়নি।”

‘ইজহান বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো-‘
“কিছু তো হয়েছে বলো আমাকে।”

‘পদ্ম মুখ কুচকে বললো-‘
“আমার হাত একটু আগে কে ধরেছিলো?”

‘ইজহান একটু নত সুরে বললো-‘
“আমি। আসলে সরি পদ্ম আমি তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার হাত ধরেছি এবং ওই কাজটা করেছি।

‘পদ্ম হাসলো। সে কোনো কারণ ছাড়াই লোকটার সাথে রাগ করলো। পদ্ম ইজহানকে বললো-‘
“সরি বলতে হবেনা। আমি কিছু মনে করিনি।”

‘ইজহান বারান্দায় চলে গেলে মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। ভালো লাগছেনা তার। এখন সব কিছুই অগোছালো মনেহচ্ছে ইজহানের। এক হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো টানছে। পদ্ম ইজহানের পিছনে দাঁড়িয়ে ইজহানে শার্ট টেনে ধরেছে৷ ইজহান ঘুরে পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললো-‘

” কি হয়েছে?”

“আমার কিছু হয়নি। আপনার কি হয়েছে সেটা বলুন।”

‘ইজহান আবার ওদিকে ফিরে বললো-‘
“মাথা ব্যাথা করছে।”

‘পদ্ম কিছু বললো না সে ইজহানের হাত ধরে রুমে নিয়ে এসেছে। পদ্ম বেডে বসে তার কোলে একটা বালিশ দিয়ে ইজহান কে বললো-‘
“শুয়ে পড়ুন এখানে, আমি আপনার চুল টেনে দিবো।ভালো লাগবে আর মাথা ব্যাথা হয়তো বা কিছু কমবে।”

‘ইজহান পদ্মের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।পদ্ম চুলগুলো টেনে দিচ্ছে। ইজহানের আসলেই খুব ভালো লাগতেছে।’

‘ইজহান পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“এখন তো আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিবো।”

‘পদ্ম হেসে বললো-‘
“ধন্যবাদ লাগবেনা। আচ্ছা আমার মা আর বোন কবে আসবে?আর কিভাবে ওনারা এতোদূর পর্যন্ত আসবে?”

‘ইজহান চোখ বন্ধ করে বললো-‘
“সেটা তোমার ভাবতে হবেনা। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।”

‘পদ্ম ইজহানের চুলগুলো হালকা টেনে বললো-‘
“বলুনা না আমি একটু শুনতে চাই।”

“যেভাবে চুলগুলো টেনে ধরেছো ব্যাথা পাইনি গায়ে কি এক ফোটাও শক্তি নেই আরও জোরে টেনে দিতে।”

‘পদ্ম অভিমানী সুরে বললো-‘
“বলুন না এমন করছেন কেনো?”

‘ইজহান হেসে বললো-‘
“তোমার মা আর বোন কাল আসবে। আর আমি আমার গাড়ি পাঠিয়ে দিবো গ্রামে। গাড়ি করেই আসবে।”

‘পদ্ম বুঝলো না ইজহানের গাড়ি আবার কোনটা।অবুঝের মতো প্রশ্ন করলো-‘
“আপনার গাড়ি?কই আমি তো দেখিনি!

‘ইজহান অবাক চোখে পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
” সিরিয়াসলি! তোমার যে বিয়ে হলো তখন গ্রাম থেকে যে গাড়ি করে আসলে ওটা আমারই গাড়ি ছিলো।”

‘পদ্ম বেশ চমকে গেলো।’
“তাহলে ওইদিন যে গাড়ি করে এই বাসায় আসলাম ওটাই কি আপনার গাড়ি।”

‘ইজহান আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো।শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো।’
“জ্বী হ্যাঁ ম্যাডাম।”

‘পদ্ম আবারও প্রশ্ন করলো-‘
“মা আর বোন কখন আসবে?আপনি মাকে ফোন করেছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

‘পদ্ম ভাবলো ইজহান মিথ্যে বলছে।’
“আচ্ছা আমি তো দেখিনি আপনি ফোন করেছিলেন মিথ্যা কেনো বলছেন?”

” হসপিটালে যখন ছিলাম তখন করেছি।”

‘পদ্ম নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেলো। লোকটাকে বিশ্বাস করা উচিৎ ছিলো তার।’
“মা কি বলেছে?”

‘ইজহান বিরক্তি হলো পদ্মের কথায়। এতো প্রশ্ন করার কি আছে। তার মা আসলেই তো দেখতে পাবে।’
“বড্ড বেশি কথা বলো তুমি।”

‘পদ্ম চুপ হয়ে গেলো। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কথা বলবেনা। পদ্ম ইজহানের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। আর শুধুমাত্র রাতটা তারপর তার মা আর বোন আসবে। পদ্ম নিজে নিজেই হাসছে। ইজহান তো চোখ বন্ধ করে আছে তাই পদ্মের হাসি দেখলো না। কিছু সময় বাদে ইজহান একেবারে ঘুমিয়ে গেলো। পদ্ম দু’বার ডাক দিলো কিন্তু কোনো সাড়া দিলো না। পদ্ম ভেবে নিয়েছে ‘ইজহান ঘুমিয়ে গিয়েছে। এখন তো তাকে আর উঠানো যাবেনা। পদ্ম ইজহানের চোখ থেকে চশমা খুলে রাখলো। পদ্ম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইজহানের দিকে। কাঁপা কাঁপা হাতে ইজহানের চাপ দাড়ি গুলোতে হাত বুলিয়ে দিলো। মানুষটা এতো সুন্দর কেনো। পদ্ম কখনো ভাবেনি ইজহানের মতো একজন বর পাবে। পদ্ম হাসছে ইজহানের দিকে তাকিয়ে, আর ইজহান তো ঘুম। পদ্ম বসা অবস্থায় মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।’

‘সকাল ৬টা’
‘ইজহানের ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে সে পদ্মের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ইজহান উঠে বসলো। পদ্মের দিকে তাকিয়ে আছে, সে তো ঘুমেই। ইজহানকে ডাকলেই হতো সে সরে যেতো। এতো কষ্ট করার কি দরকার ছিলো। তবে কথা হচ্ছে ইজহানের ভালো ঘুম হয়েছে। ইজহান পদ্মকে ঠিক মতো শুইয়ে দিল। ইজহান পদ্মের গাল স্পর্শ করলো হালকা করে তার ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো পদ্মের গালে। এটা হচ্ছে ইজহানের পক্ষ থেকে পদ্মের জন্য উপহার। তবে কখনো পদ্ম এই মিষ্টি উপহারের কথা জানবেনা। ইজহান ফ্রেশ হতে চলে গেলো। রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে তার মা রান্নাঘরে। সে ওখানেই গেলো।

‘ইজহানকে দেখে মুনিরা শেখ বললো-‘
” পদ্ম কোথায় ইজহান?”

“ঘুমাচ্ছে।”

“ওকে ডেকে দে।”

“কেনো মা?”

“আমার সাথে রান্না করতে হবে তাকে।”

‘ইজহান চাচ্ছে পদ্ম যেনো ঘুমায় কারণ সে কাল পদ্মর ঘুম নষ্ট করেছে হয়তো। তার জন্য পদ্ম ঘুমাতে পারেনি। ইজহান তার মাকে বললো-‘
“মা ও তো ঘুমাচ্ছে। তুমি আমাকে বলো আমি যা পারি তোমাকে হেল্প করবো।”

‘মুনিরা শেখ অবাক হয়ে গেলেন। ইজহান কি বলছে এসব। বিয়ের পর ইজহানের মধ্যে এই প্রথম পরিবর্তন মুনিরা শেখ খেয়াল করেছেন। যাক তার ছেলেটা পদ্মকে মেনে নিচ্ছে এটা ভেবেই তিনি খুশি হলেন। মুনিরা শেখ হেসে ইজহানকে বললেন-‘

“না থাক তুই যা আমি সব করতে পারবো।”

‘ইজহান চলে আসলো। মানিক কে কল করলো সে বললো পৌছে গিয়েছে গ্রামে। কিছুক্ষণ পর আবার রওনা দিবে। পদ্মের মা আর বোনকে আনতে ইজহান মানিক কে পাঠিয়েছিলো গ্রামে। ৭:৩০ এ ইজহান রেডি হয়ে গেলো হসপিটালে যাওয়ার জন্য। পদ্ম উঠে পড়েছে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে মুনিরা শেখের কাছে ছুটলো। ইজহান নাস্তা করে চলে গিয়েছে। প্রায় ১ ঘন্টা পর হুমায়ুন শেখ আর মুনিরা শেখ ও চলে গিয়েছেন। বাসায় পদ্ম একা। ও পুরো বাসা গোছাচ্ছে।

(*)
ইজহানের কেবিনে হঠাৎ করে শানায়া আসলো। প্রত্যেকবারের মতো সে ইজহানের সামনে বসেছে।শানায়া জিগ্যেস করলো-‘
“কেমন আছেন?”

‘ইজহানের কথা বলতে মন চাচ্ছিলো না তাও বললো-‘
“ভালো। এখন কি কারণে এসেছেন?”

‘শানায়া মন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো-‘
“আসতে পারি না বুঝি?

‘ইজহান বিরক্ত হচ্ছে প্রচুর।
” না আপনার মতো এতো ফ্রি থাকি না সব সময় আমি।”

“কোথায় ফ্রি থাকি? আমার প্রতিদিন কতো পেশেন্ট হয় জানেন?”

“হ্যাঁ জানি। এখন আপনি আসতে পারেন।”

‘শানায়া গেলো না সে বসেই থাকলো।
“আপনি যে ওইদিন বললেন আপনার পছন্দ করা একটা মেয়ে আছে তাকে কি আমি দেখতে পারি।”

‘ইজহান সাথে সাথেই বললো-‘
“না। আপনি দেখে কি করবেন? আমার সময় হলে আমি সবাইকেই দেখাবো।”

“আমাকে তো পার্সোনাল ভাবে দেখাতেই পারেন। আচ্ছা আমি তো মেয়েটার থেকে নিশ্চয়ই সুন্দরী আমাকে বিয়ে করলেই তো হয়।”

‘শানায়া বেসামাল হয়ে মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে। ইজহান অনেক রেগে গিয়েছে। ধমক দিয়ে শানায়াকে বললো-‘
“আপনি সিনিয়র ডক্টর দেখে ছাড় পেয়ে গিয়েছেন।এখানে আমার আর আপনার পরিচয় হচ্ছে আপনি আর আমি দু’জনেই ডক্টর। আর আপনি মোটেও সুন্দর নয়। নেক্সট টাইম যদি এসব বলেন পুরো হসপিটাল করে দিবো। হসপিটালের সিআই থেকে দারোয়ান পর্যন্ত সবাই জানবে বলে দিলাম।আর আপনার যদি মিনিমাম লজ্জাটুকু থাকে তাহলে আপনি আমার কেবিন থেকে বের হয়ে যান।”

‘শানায়া রাগে ফোসফাস করতে করতে চলে গেলো।ইজহান ইদানীং তাকে একটু বেশিই অপমান করছে। এই প্রতিশোধ শানায়া ইজহানের প্রতিই তুলবে।’
‘ইজহান মাথা চেপে বসে রইলো শানায়ার মতো এমন মেয়ে আজ প্রথম দেখেছে। মান-সম্মান নেই বোধহয়। কেউ যদি এসব জানে বলবেনা সে ডক্টর। বিরক্তিকর মেয়ে একটা।’

(*)

‘দুপুর ১২:৪০’
ক্রলিং বেলটা বেজে উঠলো। পদ্ম দরজা খুললো। রুবিনা খাতুন আর পুষ্প দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। বিয়ের পর তার মাকে প্রথম দেখেছে। একটু বেশিই ইমোশনাল হয়ে গেলো পদ্ম। রুবিনা খাতুন মেয়েকে শান্ত করার জন্য বললো-‘

“কি রে আরকি ঢুকতে দিবি না নাকি?”

‘পদ্ম লজ্জা পেলো।তড়িঘড়ি করে করে বাসায় নিয়ে আসলো রুবিনা খাতুন আর পুষ্পকে। পুষ্প তার বোনকে পেয়ে খুব খুশি। রুবিনা খাতুনের নাকি খারাপ লাগছে তাই পদ্ম ওনাকে রুমে দিয়ে আসলেন। আর পুষ্পের সাথে পদ্ম অনেকক্ষণ ধরে ঘ্যা’ন’ঘ্যা’ন করছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য কিন্তু সে যাচ্ছে না। এক প্রকার জোর করেই পুষ্পকে ওয়াশরুমে ঢুকালো পদ্ম। পদ্ম খাবার বাড়ছে তাদের জন্য। সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করলো। গাড়ি করে আসার কারনে রুবিনা খাতুনের কেমন মাথা ঘুরাচ্ছে তাই তিনি রেস্ট করছেন।’

‘পদ্ম পুষ্পকে তার আর ইজহানের রুমে নিয়ে গেলো।’
“আপু এটা কি তোমার আর দুলাভাইয়ের রুম?”

‘পদ্ম হেসে বললো-‘
“হ্যাঁ। ”

‘পুষ্প বেশ আগ্রহ নিয়ে বললো-‘
“গ্রামের সব চাচি আর তোমার বান্ধুবিগুলো জিগায় তোমার বর কি করে? তুমি এখন কোথায় থাকো। আমি জানো কিছু বলতে পারিনা কারণ আমি তো জানিই না।”

“তুই গ্রামে গিয়ে বলবি তোর বোনের বর একজন ডাক্তার।আর আমি এখন শহরে আছি। বুঝেছিস?”

“দুলাভাই ডাক্তার?”
‘অবাক হয়ে গেলো পুষ্প।’

“হুম।”

“আচ্ছা আপু দুলাভাই তোমাকে ভালোবাসে?”

“ভালোবাসে না তোর দুলাভাই।তুই একটু বসে থাক। আমি আসছি।”

‘পদ্ম ড্রায়ার থেকে চকলেট নিয়ে আসলো পুষ্পের জন্য। কাল যেগুলো ইজহান এনেছিলো ওইগুলোই। কয়েকটা পদ্ম খেয়েছে আর বাকিগুলো পুষ্পের জন্য রেখে দিয়েছিলো। পুষ্প খুশি হয়ে গেলো চকলেট দেখে। পদ্ম পুষ্পের হাতে দিলো চকলেটগুলো।’

“এগুলো কে দিয়েছে তোমাকে?”

“তোর দুলাভাই দিয়েছিলো।”

“তুমি না বললে দুলাভাই তোমাকে ভালোবাসে না তাহলে চকলেট দিয়েছে যে?”

‘পদ্ম হেসে বললো-‘
“চকলেট দিলেই কি সে ভালোবাসবে? এমন কোনো কথা আছে! তাড়াতাড়ি খা তো। আমার ঘুম পাচ্ছে। তুই খেয়ে আমার পাশে ঘুমিয়ে পড়িস।”

‘পুষ্প চকলেট খেয়ে পদ্মের পাশে শুয়ে পড়লো। পদ্মকে ঝাপটে ধরে শুয়েছে। আগেও এমন করতো মেয়েটা। পদ্ম আর পুষ্প ঘুমিয়ে গেলো।’
‘সন্ধ্যা ৭টা।’
ইজহান হসপিটাল থেকে চলে এসেছে। তার সব পেশেন্ট দেখা শেষ তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। বাসায় এসে ক্রলিং বেল চাপ দেওয়ার পর তার শ্বাশুড়ি এসে দরজা খুলেছে। ইজহান রুবিনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে রুমে আসে। পদ্ম আর পুষ্প একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। ইজহান কোমড়ে হাত দিয়ে দেখছে দু’বোনকে। ইজহান মনে মনে বলছে ‘আমি এখনো আমার বউকে এভাবে ধরে ঘুমাতে পারলাম না আর আমার শালীকা কি সুন্দর আমার বউকে ধরে ঘুমিয়ে আছে।’ ইজহান তাদের দেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ইজহান সোফায় বসলো। তাকে দেখে রুবিনা খাতুন জিগ্যেস করলো-‘

” বাবা পদ্ম উঠেনি এখনো?”

‘ইজহান রুবিনা খাতুনের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
“না মা।”

‘রুবিনা খাতুন পদ্মকে উঠাতে চলে গেলো। ইজহান বাসায় এসেছে তাও মেয়ের ঘুম ভাঙেনি। এতো ঘুম কিসের তার? রুবিনা খাতুন অনেকবার পদ্মকে ডাকলেন মেয়েটা এখনো উঠছেনা। রুবিনা খাতুন পদ্মকে ধমক দিলো। পদ্ম লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। পদ্ম ভয় পেয়ে গেলো।’

“কি হয়েছে এতো ডাকাডাকি করার কি আছে?”

‘রুবিনা খাতুন রেগে বললেন-‘
“ইজহান বাসায় এসে পড়েছে আর তুই ঘুমিয়েই যাচ্ছিস।”

‘পদ্ম মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুয়ে ইজহানের কাছে গেলো। ইজহান টিভি ছেড়ে রেখে দিয়ে ফোন চাপছিলো। পদ্ম ইজহানের পাশে দাঁড়িয়ে বললো-‘
“আপনি এতো তাড়াতাড়ি এসেছেন যে?”

‘ইজহান পদ্মের কি একবার তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকালো।’
“সব কাজ শেষ তাই চলে এসেছি।”

“ওহ।”

‘পুষ্প ঘুম থেকে উঠে শুনেছে তার দুলাভাই এসেছে। সে তো মহাখুশি। ইজহান যে সোফায় বসেছিলো পুষ্পও ওই সোফায়ই বসেছে। ইজহান পুষ্পের দিকে তাকালো। পুষ্প ইজহানকে দেখে একটা হাসি দিলো। ঠিক সে কাজটা ইজহানও করলো। ইজহান পুষ্পকে জিগ্যেস করলো-‘

“কেমন আছো?”

‘পুষ্পের হাসি যাচ্ছেনা মুখ থেকে সে হাসেই চলছে।
“ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

‘ইজহানের হাসি অলরেডি অফ হয়ে গিয়েছে। তবে পুষ্পের এমন হাসি দেখে কিছুটা অবাক হলো। ও এতো হাসছে কেন?’
“ভালো। তুমি এতো হাসছো কেনো?”

“আপনি খুব সুন্দর দুলাভাই।”

‘পুষ্পের এমন কথা শুনে কিছুটা বিব্রতবোধ করলো। সে জিগ্যেস করলো হাসছো কেনো, আর ও বলছে ইজহান খুব সুন্দর।’

“তাই? একটু সুন্দর না বেশি সুন্দর?”

‘পদ্ম হাত দিয়ে দেখালো-‘
আপনি বেশিই সুন্দর। একদম বোঝেনা সে বোঝেনা নাটক আছে না? ওই নাটকের নায়কের মতো দেখতে তবে নায়কের আপনার মতো দাড়ি ছিলো না যাই হোক কিছুটা একই লাগছে।”

‘ইজহান ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।এই বাচ্চা মেয়ে এসব কি বলছে। ইজহান ছোট্ট করে উত্তর দিলো-‘
“ওহ।”

“আচ্ছা দুলাভাই আপনি কেনো আমার আপুকে ভালোবাসেন না কেনো?”

‘ইজহান চোখ বড় বড় করে পুষ্পের দিকে তাকালো।’
” কে বলেছে এসব কথা?”

“আপু বলেছে দুলাভাই।”

‘ইজহান কেনো জানি কথাটা বিশ্বাস করলো না কারণ পদ্ম এসব কথা বলবে না সে জানে। ইজহানের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে পুষ্প আবারও বললো-‘
“দুলাভাই তাহলে কি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন?

‘ইজহান হকচকিয়ে গেলো।’
” তুমি কি চাও আমি তোমাকে ভালোবাসি?”

‘পুষ্প হাসি দিয়ে বললো-‘
“হ্যাঁ।”

‘ ইজহান পদ্মকে ডাক দিলো। সাথে সাথে পদ্ম এসে উপস্থিত।পদ্মকে দেখে ইজহান বললো-‘
“ও কি তোমার বোন?”

‘পদ্ম ভ্রু কুচকে বললো-‘
“জ্বী কেনো?

‘ইজহান মাথায় হাত দিলো তার বউ কখনো তাকে এসব বলেনি আর তার শালী এসব বলছে। হাস্যকর ব্যাপার।’
“তুমি তোমার বোনের মতো হলেনা কেনো? আমার আর এতো কষ্ট করা লাগতো না।”

‘পদ্ম না বুঝে ইজহানকে প্রশ্ন করলো-‘
“বুঝিনি আমি!”

“এতো বোঝা লাগবে না।”

‘পদ্ম সেখান থেকে চলে আসলো। আর পুষ্প একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে। ইজহান খুব মন দিয়ে কথাগুলো শুনছে। আর কেউ হলে এতোক্ষণ অনেক কিছু বলে দিতো। যেহেতু তার একটামাত্র শালীকা তাই সে বসে বসে পুষ্পের কথা শুনছে। কিছু সময় বাদে রুবিনা খাতুন আসলেন।ইজহান ওনাকে বসতে বললো। রুবিনা খাতুনের সাথে পদ্মও এসেছে। পদ্ম তার মায়ের পাশে বসেছে। ইজহান রুবিনা খাতুনেকে বললো-‘

“মা আমি চাচ্ছি পদ্মকে পড়াশোনা করাতে। এই বিষয়ে আমি ওর সাথে কথা বলেছি।”

‘রুবিনা খাতুনের চোখ চকচক করছে। তার মেয়েটা পড়াশোনা করতে চাইতো কিন্তু তার ভাগ্যে বিয়ে ছিলো তাই মেয়ের ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেলো।ইজহানের কথা শুনে রুবিনা খাতুন খুব খুশি হলেন। ইজহান বললো পদ্ম শুধু পরীক্ষা দিতে যাবে ওখানে। রুবিনা খাতুন রাজি হলেন। রাত ১০টা চারজন এক সাথে ডিনার করলো। ইজহান রুমে পায়চারি করছিলো কখন পদ্ম রুমে আসবে। প্রায় আধ ঘন্টা পর পদ্ম রুমে আসলো। ইজহান পদ্মের একদম সামনে দাঁড়িয়ে বললো-‘

” আমি তোমাকে ভালোবাসি না এটা তুমি পুষ্পকে বলছো?”

‘পদ্ম ঘাবড়ে গেলো এখন সে ইজহানকে কি বলবে? এই পুষ্পের পেটে কোনো কথা থাকেনা। ইজহান আবারও জিগ্যেস করলো-‘

“বলেছো?”

‘পদ্ম আমতা আমতা করে বললো-‘
“জ্বী!”

“যেহেতু বলছো ভালোবাসি না তাহলে আজ ভালোবেসে দেখিয়ে দিবো। তুমি তৈরি থাকো।”

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here