প্রেম পর্ব -১৭+১৮

প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্বঃ ১৮

রাত ১১ টা। বাসে উঠলো সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে। যাওয়ায় সময়ও একইভাবে যাচ্ছে সবাই। কাজিনরা এক বাসে, বড়রা অন্য দুই বাসে। রাতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ সময় জানজট কম থাকে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাস্তা কাটিয়ে দেওয়া যায়।

স্পর্শিয়া জানালার পাশে বসে একমনে বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখছে। স্বচ্ছ আকাশ, মিটমিট করে তারা জ্বলছে। স্পর্শিয়ার খুব ইচ্ছে করছে ওই জ্বলজ্বল তারাগুলো গিয়ে ধরতে। ইস! কি দারুণ দেখতে। ও যদি পাখি হতো ! তবে এখন সত্যিই আকাশের উদ্দেশ্যে রওনা করতো।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার পাশে এসে বসলো। কিন্তু স্পর্শিয়া আকাশ দেখায় এতই ব্যস্ত ছিল যে আরাধ্যকে ও খেয়ালই করলো না। আরাধ্য স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে একমনে। কষ্ট হচ্ছে ওর। আর কয়েকটা ঘন্টা একসাথে আছে ওরা, তারপরেই আবার আলাদা হয়ে যাবে। যখন ইচ্ছা তখন ওকে আর দেখতে পাবে না। বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠছে এসব ভাবতেই। খুব ইচ্ছে করছে স্পর্শিয়াকে ওর কাছেই রেখে দিতে। কিন্তু পৃথিবীর কত আজব রীতি নীতি, ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়ার জন্যেও কত ফর্মালিটিস পূরণ করতে হয়!

চেচামেচির আওয়াজে দুজনই বাসের সামনের দিকে নজর দিল। সিমি আর রোহান ঝগড়া করছে। সিমি বলছে ও জানালার পাশে সিট চায়, আর রোহান বলছে ও চায়৷ শুরু হয়ে গেল তুমুল ঝগড়া। সিমি রোহানকে বলছে ওকে ন্যাড়া করে দিবে, রোহানও সিমিকে বলছে ন্যাড়া করে দিবে। শুধু কি ঝগড়া, চুল টানাটানিও শুরু হয়ে গেল একজন আরেকজনকে ন্যাড়া করার উদ্দেশ্যে । সবাই ওদের থামানোর জায়গায় উল্টো আরও হাসছে। অবশেষে আরাধ্যই গিয়ে থামাল। এত বড় হয়ে গিয়েছে কিন্তু কেওই এখনো বাচ্চামি ছাড়লো না।

সারাদিনের ধকলে বাস ছাড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই ঘুমিয়ে যেতে শুরু করলো। বাসের লাইট অফ করে দিল ততক্ষণে। আরাধ্য কোথা থেকে যেন একটা কাঠগোলাপ এনে স্পর্শিয়াকে দিল৷ স্পর্শিয়া তো কাঠগোলাপ পেয়ে ভীষণ খুশি।
– কোথায় পেলে এই ফুল আরাধ্য?
– বাগান থেকে নিয়েছিলাম। সারা বাগানে এই একটা কাঠ গোলাপ ই ছিল।
– এতক্ষন দিলে না যে?
– তুমি আকাশ দেখায় মগ্ন ছিলে যে তাই। হয়তো স্বপ্নে বিভোর ছিলে। তাই ডিস্টার্ব করতে চাইনি।
স্পর্শিয়া মিষ্টি একটা হাসি বিনিময় করলো। আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কাছে টেনে বুকে নিল। স্পর্শিয়ার সামনে পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়তে লাগলো। কপালে চুমু খেল। স্পর্শিয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো। স্পর্শিয়ার ডান হাত নিজের হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে বলল,
– আই লাভ ইউ স্পর্শ। কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ। তোমাকে ছাড়া যে কিচ্ছু ভাবতে পারি না আমি৷ আমার জীবন জুড়ে যে শুধুই তুমি।
স্পর্শিয়াকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল আরাধ্য। এত জোড়ে ধরাতে স্পর্শিয়া ব্যথা পাচ্ছে । না পেরে অবশেষে অস্ফুট স্বরে বলেই ফেললো,
– আমি ব্যথা পাচ্ছি আরাধ্য।
আরাধ্য সাথে সাথে ছেড়ে দিল স্পর্শিয়াকে।
– সরি, আমি বুঝতে পারিনি তুমি ব্যথা পাচ্ছ।
স্পর্শিয়া কিছু না বলে জানালার দিকে ঘুরে বাইরে নজর দিল। বাস খুব স্পিডে চলছে। সব গাছপালা দৌড়ে চলে যাচ্ছে। এই দৃশ্য খুব পছন্দ স্পর্শিয়ার। আর ওপরের ওই চাদটা… ওই চাদটা স্পর্শিয়ার সাথে সাথেই যাচ্ছে। ঘাড়ে আরাধ্যর নাকের ছোয়া লাগতেই চমকে উঠলো স্পর্শিয়া।
পিছনে ঘুরতে নিয়েও ঘুরতে পারলো না। আরাধ্য ওর পেটে চাপ দিয়ে ধরে আছে তাই। আস্তে করে বলল,
– আরাধ্য আমাকে ছাড়।
– কেন ছাড়বো? এখনো কি ব্যথা পাচ্ছ?
– হ্যা।
– মিথ্যে কথা।
– আরাধ্য কেও দেখলে কি বলবে?
– আমরা অনেক পেছনে, কেও দেখবে না। সবাই ঘুমাচ্ছে। আর, দেখলে দেখুক। আমার বউ আমি আদর করবো তাতে কার কি?
– আরাধ্য..
– চুপ, কোন কথা না।
আরাধ্যর কন্ঠস্বর ভারী শোনাচ্ছে। আরাধ্য স্পর্শিয়ার ঘাড়ে দাড়ি দিয়ে ঘষে দিল৷ নাক ঘষলো গালে পিঠে। স্পর্শিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে, নাকে, দুই চোখের পাতায় চুমু খেল। স্পর্শিয়ার ঠোটের কাছে আসতেই ও ভয়ে আর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। আরাধ্য অপলক তাকিয়েই আছে ওর লজ্জাভরা সেই মুখের দিকে। কিছু সময় পার হতেই আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ডাকলো,
– স্পর্শ।
স্পর্শিয়া চোখ খুললো।
আরাধ্য দুস্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বললো,
– চোখ বন্ধ করে ফেললে কেন? আমি তো কিছু করছিলাম না।
স্পর্শিয়া বোকার মতো তাকিয়ে রইলো আরাধ্যর দিকে।
– তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে লিপ কিস করবো?
এই কথা শুনে স্পর্শিয়া এবার লজ্জায় পুরোপুরিই শেষ। ও সত্যিই ভেবেছিল আরাধ্য ওকে লিপ কিস করবে। তাই লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল৷ কিন্তু, তার চেয়ে বড় লজ্জা তো আরাধ্যর কথা শুনে পেতে হলো।

.
.
.
.
.
.
.
.

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

বর্তমান…

ঘুম ভাঙলো স্পর্শিয়ার। কাদতে কাদতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল মেয়েটা। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে আয়নার সামনে দাড়ালো। দু চোখ ফোলা। মোটা করে কাজল টেনে দিল দু চোখে। আজকাল বাসায় থাকলেও প্রতিদিন চোখে কাজল দিয়ে রাখে, যাতে কেও ওর ফোলা চোখ দেখতে না পারে। সবাই মজা করে বলে, ও নাকি নতুন করে আরাধ্যর প্রেমে পড়েছে, তাই এত সেজেগুজে থাকে। অথচ আজ এগারো দিন যাবত আরাধ্যর সাথে ওর কথাই হয় না। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে ভালো মতো দেখলো। আচ্ছা, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য কি ও নিজেই দায়ী না? ও ই তো গিয়েছিল সায়ানের সাথে দেখা করতে। তবে এখন ওর এত কষ্ট হচ্ছে কেন? আরাধ্যর সাথে কাটানো পুরনো সে মুহূর্তগুলো বারবার মনে পড়ছে কেন?

ফোনের রিংটোন বাজতেই স্পর্শিয়া দৌড়ে ফোনের কাছে গেল৷ আজকাল কল আসলেই ওর বুকের হার্টবিট বেড়ে যায়। মনে হয় যেন এই বুঝি আরাধ্য কল দিয়েছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.

নিশাত চৌধুরী আরাধ্যর রুমে ঢুকলেন। চারিদিকে নজর বুলালেন। রুমটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে থাকে ইদানীং। আগোছালো হয়ে আছে। আরাধ্য সবসময়ই খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু বিগত কয়েকদিন যাবত না ওর রুম ঠিকঠাক আছে, না ও নিজে। কিছু তো একটা হয়েছে ছেলেটার। কি হয়েছে তা হয়তো সে আচ করতে পারছে, কিন্তু আরাধ্যকে বারবার জিজ্ঞেস করার পরেও কিছু বলছে না।

আরাধ্য ঘুমাচ্ছে। নিশাত চৌধুরী ছেলের পাশে গিয়ে বসলেন। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ডাকতে লাগলেন। একপর্যায়ে আরাধ্য চোখ খুললো। ওর মা কে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
– গুড মর্নিং মা। আজ তুমি আমাকে ডাকতে এসেছ। আমার দিন আজ খুব ভালো যাবে।
– হ্যা, ডাকতে এসেছি। অনেকবেলা হলো, অফিসে যাবি কি না সেটা জানতেই এসেছিলাম৷
– হ্যা মা, যাবো তো।
– আচ্ছা, তবে ফ্রেশ হয়ে নে।
নিশাত চৌধুরী উঠে চলে যেতে গিয়েও গেলেন না, আবারো বেড এ বসে পড়লেন।
– আরাধ্য ।
– বলো মা।
– বাবা, এভাবে মনমরা হয়ে থাকিস না। কি হয়েছে কিছুই তো বলিস না আমাকে। কিন্তু যতটুকু আচ করতে পারছি, হয়তো স্পর্শিয়ার সাথে কিছু নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে তোর। এসব ব্যাপার না বাবা। দুজন একটা সম্পর্কে থাকলে টুকটাক অনেক কিছুই হয়। তাই বলে দিনের পর দিন এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকতে হয় না। তোদের নিজেদের মধ্যে যা ই হয়েছে সর্ট আউট করে নে। দুজন দুজনের সাথে কথা বল। প্রব্লেমগুলো দুজনে মিলে সলভ কর। এই একটা বছরে তোদের মধ্যে কখনো কোন ঝগড়া বা রাগারাগি দেখিনি। এখন হঠাৎ কি হলো জানি না। সেদিন স্পর্শিয়াকে কল দিলাম, ও হয়তো আনমনেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল তুই কেমন আছিস। জিজ্ঞেস করেই হকচকিয়ে যায়, কথা ঘুরিয়ে ফেলে। তখনি বুঝতে পারলাম তোদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। আরাধ্য, স্পর্শিয়া খুব ভালো মেয়ে। ও আমাদের ফ্যামিলিকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপন করে নিয়েছে। তোদের মধ্যে যাই হয়েছে, জলদি করে সলভ করে নে শুধু এইটুকুই বলতে পারি।

মিসেস চৌধুরী একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চলে গেলেন।
আরাধ্য ঠায় বসে রইলো। তাচ্ছিল্যের সাথে হাসি দিয়ে বলল “স্পর্শিয়া খুব ভালো মেয়ে। ”
ওর চোখের সামনে ভাসতে লাগলো সে অলুক্ষুনে দিনের কথা! একটা বছর পার হয়ে গিয়েছে স্পর্শিয়ার সাথে। কখনো আরাধ্য ওকে ভালোবাসতে এতটুকু কমতি রাখেনি। স্পর্শিয়া মুখে স্বীকার না করলেও ওর ব্যবহারে সবসময়ই আরাধ্যর মনে হতো স্পর্শিয়া ওকে খুব ভালোবাসে। ও নিজেও কখনো মাথা ঘামাতো না স্পর্শিয়া কনফেস না করাতে। ভালোবাসা তো আর আই লাভ ইউ বললেই হয় না, এটা একটা অনুভূতি।

আরাধ্যর খুব ইচ্ছা ছিল স্পর্শিয়াকে কোন স্পেশাল মুহূর্তে লাল জর্জেটের শাড়ি গিফট করবে। যেহেতু ওদের ফার্স্ট এ্যানিভার্সারি ছিল সেদিন, তাই ও এই দিনটাকেই বেছে নিল লাল শাড়ি গিফট করার জন্য। স্পর্শিয়ার জন্য অনেক কিছুই প্ল্যান করে রেখেছিল ও। স্পর্শিয়ার লাইফের বেস্ট একটা দিন বানাতে চেয়েছিল সে দিনটাকে আরাধ্য। এমন একটা দিন, যে দিনটা স্পর্শিয়া কখনোই ভুলবে না। অথচ, ও আর কি সারপ্রাইজ দিবে স্পর্শিয়াকে, স্পর্শিয়া নিজেই ওকে শকিং সারপ্রাইজ দিয়ে দিল। সেই সারপ্রাইজের চেয়ে আরাধ্যর কাছে মৃত্যু শ্রেয় মনে হয়েছিল।

সেদিন স্পর্শিয়ার জন্য শাড়ি, চুড়ি, আর ডায়মন্ডের রিং কিনে খুশি হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকছিল লাঞ্চ করার জন্য আরাধ্য । সন্ধ্যায় স্পর্শিয়ার সাথে দেখা হবে, স্পর্শিয়াকে ও সারপ্রাইজ দিবে। কত খুশি হবে মেয়েটা, আর তার সাথে অবাকও হবে। কারণ, স্পর্শিয়ার নিশ্চয়ই মনে নেই আজ ওদের এ্যাঙ্গেজম্যান্টের এক বছর হয়েছে। বাচ্চা মেয়েটা কিছুই যে মনে রাখে না। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য আরাধ্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। একটু ভেতরে ঢুকতেই দেখে যে, কর্ণারের একটা টেবিলে স্পর্শিয়া বসে আছে। ওর ঠিক অপজিট পাশে একটা ছেলে। আরাধ্য পেছনে থাকায় ছেলেটার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না। আরাধ্যর বুকটা ধক করে উঠলো। সন্ধ্যায় স্পর্শিয়ার দেখা করার কথা ওর সাথে, অথচ এখন ও একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে কি করছে? আর ছেলেটাই বা কে? পরমূহুর্তে নিজেই নিজেকে শান্তনা দিল। ছিঃ! কি সব ভাবছে ও? হয়তো কোন ফ্রেন্ড, অথবা কাজিন, বা অন্য কোন রিলেটিভ হয়তো। সবসময় যে স্পর্শিয়া ওকে বলেই সব জায়গায় যাবে এমন তো কোন কথা নেই। আরাধ্য হাসিমুখে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। সন্ধ্যায় তো স্পর্শিয়া সারপ্রাইজ পাবেই, এখনো হঠাৎ ওর সামনে গিয়ে ওকে চমকে দেয়া যাক। আরাধ্য আগাতে আগাতে দেখলো, এরই মধ্যে ছেলেটা স্পর্শিয়ার হাত ধরে ফেলেছে । আরাধ্য এবার থমকে দাঁড়িয়ে গেল। নিজের চোখকে ও বিশ্বাস করতে পারছে না। আরাধ্য ওদের কথা এখন সব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।
ছেলেটা ওকে বলছে,
– স্পর্শিয়া, তোমার এই হাত আমি ধরেছি, আর কখনো ছাড়বো না। বিশ্বাস করো আমার জান, আর কখনো ছাড়বো না। এখন থেকে সবকিছুতে আমি তোমার সাথে আছি। ভালোবাসি যে তোমাকে অনেক।
স্পর্শিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আর আরাধ্যর বুকের ভেতর যেন রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কাওকে ভালোবাসি বলতে দেখলে, তখন রক্তক্ষরনটাও যেন কম মনে হয়।

ছেলেটা আবারও বললো,
– স্পর্শিয়া, তুমি কি আমার না? বলো, তুমি কি আমার না? আমাকে কি ভালোবাসো না তুমি? বলো স্পর্শিয়া, প্লিজ উত্তর দাও। চুপ থেকো না আজ প্লিজ।
আরাধ্যকে অবাক করে দিয়ে স্পর্শিয়া মাথা নাড়িয়ে বললো ও ছেলেটাকে ভালোবাসে।
আরাধ্য যেন জ্ঞানহীন হয়ে পড়লো। ওর কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। কারন, ওর বিশ্বাস স্পর্শিয়া এমন না। ও যা দেখছে সব ভুল। বারবার দোয়া করছে আল্লাহর কাছে, ও যা কিছু দেখছে, যা কিছু ওর চোখের সামনে ঘটছে সব যেন স্বপ্ন হয়, অথবা ওর ভ্রম হয়।
আরাধ্য ঠায় দাঁড়িয়ে আছে । ঘটনার আকস্মিকতায় না ও সামনে আগাতে পারছে, আর না পারছে চলে যেতে। এরই মধ্যে স্পর্শিয়ার নজর আরাধ্যর উপর পড়লো। স্পর্শিয়া সায়ানের হাত ছেড়ে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল। মুহূর্তেই স্পর্শিয়ার চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আরাধ্যও টলমল চোখে স্পর্শিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেল আরাধ্য । সায়ান দাঁড়িয়ে আরাধ্যকে দেখে চমকে গিয়ে বলল,
– আরাধ্য ভাইয়া, তুমি এখানে!
প্রেম 💙 (Love has no limits) #পর্বঃ ১৮ রাত ১১ টা। বাসে উঠলো সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে। যাওয়ায় সময়ও একইভাবে যাচ্ছে সবাই। কাজিনরা এক বাসে, বড়রা অন্য দুই বাসে। রাতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ সময় জানজট কম থাকে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাস্তা কাটিয়ে দেওয়া যায়। স্পর্শিয়া জানালার পাশে বসে একমনে বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখছে। স্বচ্ছ আকাশ, মিটমিট করে তারা জ্বলছে। স্পর্শিয়ার খুব ইচ্ছে করছে ওই জ্বলজ্বল তারাগুলো গিয়ে ধরতে। ইস! কি দারুণ দেখতে। ও যদি পাখি হতো ! তবে এখন সত্যিই আকাশের উদ্দেশ্যে রওনা করতো। আরাধ্য স্পর্শিয়ার পাশে এসে বসলো। কিন্তু স্পর্শিয়া আকাশ দেখায় এতই ব্যস্ত ছিল যে আরাধ্যকে ও খেয়ালই করলো না। আরাধ্য স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে একমনে। কষ্ট হচ্ছে ওর। আর কয়েকটা ঘন্টা একসাথে আছে ওরা, তারপরেই আবার আলাদা হয়ে যাবে। যখন ইচ্ছা তখন ওকে আর দেখতে পাবে না। বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠছে এসব ভাবতেই। খুব ইচ্ছে করছে স্পর্শিয়াকে ওর কাছেই রেখে দিতে। কিন্তু পৃথিবীর কত আজব রীতি নীতি, ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়ার জন্যেও কত ফর্মালিটিস পূরণ করতে হয়! চেচামেচির আওয়াজে দুজনই বাসের সামনের দিকে নজর দিল। সিমি আর রোহান ঝগড়া করছে। সিমি বলছে ও জানালার পাশে সিট চায়, আর রোহান বলছে ও চায়৷ শুরু হয়ে গেল তুমুল ঝগড়া। সিমি রোহানকে বলছে ওকে ন্যাড়া করে দিবে, রোহানও সিমিকে বলছে ন্যাড়া করে দিবে। শুধু কি ঝগড়া, চুল টানাটানিও শুরু হয়ে গেল একজন আরেকজনকে ন্যাড়া করার উদ্দেশ্যে । সবাই ওদের থামানোর জায়গায় উল্টো আরও হাসছে। অবশেষে আরাধ্যই গিয়ে থামাল। এত বড় হয়ে গিয়েছে কিন্তু কেওই এখনো বাচ্চামি ছাড়লো না। সারাদিনের ধকলে বাস ছাড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই ঘুমিয়ে যেতে শুরু করলো। বাসের লাইট অফ করে দিল ততক্ষণে। আরাধ্য কোথা থেকে যেন একটা কাঠগোলাপ এনে স্পর্শিয়াকে দিল৷ স্পর্শিয়া তো কাঠগোলাপ পেয়ে ভীষণ খুশি। – কোথায় পেলে এই ফুল আরাধ্য? – বাগান থেকে নিয়েছিলাম। সারা বাগানে এই একটা কাঠ গোলাপ ই ছিল। – এতক্ষন দিলে না যে? – তুমি আকাশ দেখায় মগ্ন ছিলে যে তাই। হয়তো স্বপ্নে বিভোর ছিলে। তাই ডিস্টার্ব করতে চাইনি। স্পর্শিয়া মিষ্টি একটা হাসি বিনিময় করলো। আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কাছে টেনে বুকে নিল। স্পর্শিয়ার সামনে পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়তে লাগলো। কপালে চুমু খেল। স্পর্শিয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো। স্পর্শিয়ার ডান হাত নিজের হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে বলল, – আই লাভ ইউ স্পর্শ। কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ। তোমাকে ছাড়া যে কিচ্ছু ভাবতে পারি না আমি৷ আমার জীবন জুড়ে যে শুধুই তুমি। স্পর্শিয়াকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল আরাধ্য। এত জোড়ে ধরাতে স্পর্শিয়া ব্যথা পাচ্ছে । না পেরে অবশেষে অস্ফুট স্বরে বলেই ফেললো, – আমি ব্যথা পাচ্ছি আরাধ্য। আরাধ্য সাথে সাথে ছেড়ে দিল স্পর্শিয়াকে। – সরি, আমি বুঝতে পারিনি তুমি ব্যথা পাচ্ছ। স্পর্শিয়া কিছু না বলে জানালার দিকে ঘুরে বাইরে নজর দিল। বাস খুব স্পিডে চলছে। সব গাছপালা দৌড়ে চলে যাচ্ছে। এই দৃশ্য খুব পছন্দ স্পর্শিয়ার। আর ওপরের ওই চাদটা… ওই চাদটা স্পর্শিয়ার সাথে সাথেই যাচ্ছে। ঘাড়ে আরাধ্যর নাকের ছোয়া লাগতেই চমকে উঠলো স্পর্শিয়া। পিছনে ঘুরতে নিয়েও ঘুরতে পারলো না। আরাধ্য ওর পেটে চাপ দিয়ে ধরে আছে তাই। আস্তে করে বলল, – আরাধ্য আমাকে ছাড়। – কেন ছাড়বো? এখনো কি ব্যথা পাচ্ছ? – হ্যা। – মিথ্যে কথা। – আরাধ্য কেও দেখলে কি বলবে? – আমরা অনেক পেছনে, কেও দেখবে না। সবাই ঘুমাচ্ছে। আর, দেখলে দেখুক। আমার বউ আমি আদর করবো তাতে কার কি? – আরাধ্য.. – চুপ, কোন কথা না। আরাধ্যর কন্ঠস্বর ভারী শোনাচ্ছে। আরাধ্য স্পর্শিয়ার ঘাড়ে দাড়ি দিয়ে ঘষে দিল৷ নাক ঘষলো গালে পিঠে। স্পর্শিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে, নাকে, দুই চোখের পাতায় চুমু খেল। স্পর্শিয়ার ঠোটের কাছে আসতেই ও ভয়ে আর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। আরাধ্য অপলক তাকিয়েই আছে ওর লজ্জাভরা সেই মুখের দিকে। কিছু সময় পার হতেই আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ডাকলো, – স্পর্শ। স্পর্শিয়া চোখ খুললো। আরাধ্য দুস্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বললো, – চোখ বন্ধ করে ফেললে কেন? আমি তো কিছু করছিলাম না। স্পর্শিয়া বোকার মতো তাকিয়ে রইলো আরাধ্যর দিকে। – তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে লিপ কিস করবো? এই কথা শুনে স্পর্শিয়া এবার লজ্জায় পুরোপুরিই শেষ। ও সত্যিই ভেবেছিল আরাধ্য ওকে লিপ কিস করবে। তাই লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল৷ কিন্তু, তার চেয়ে বড় লজ্জা তো আরাধ্যর কথা শুনে পেতে হলো। . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . বর্তমান… ঘুম ভাঙলো স্পর্শিয়ার। কাদতে কাদতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল মেয়েটা। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে আয়নার সামনে দাড়ালো। দু চোখ ফোলা। মোটা করে কাজল টেনে দিল দু চোখে। আজকাল বাসায় থাকলেও প্রতিদিন চোখে কাজল দিয়ে রাখে, যাতে কেও ওর ফোলা চোখ দেখতে না পারে। সবাই মজা করে বলে, ও নাকি নতুন করে আরাধ্যর প্রেমে পড়েছে, তাই এত সেজেগুজে থাকে। অথচ আজ এগারো দিন যাবত আরাধ্যর সাথে ওর কথাই হয় না। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে ভালো মতো দেখলো। আচ্ছা, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য কি ও নিজেই দায়ী না? ও ই তো গিয়েছিল সায়ানের সাথে দেখা করতে। তবে এখন ওর এত কষ্ট হচ্ছে কেন? আরাধ্যর সাথে কাটানো পুরনো সে মুহূর্তগুলো বারবার মনে পড়ছে কেন? ফোনের রিংটোন বাজতেই স্পর্শিয়া দৌড়ে ফোনের কাছে গেল৷ আজকাল কল আসলেই ওর বুকের হার্টবিট বেড়ে যায়। মনে হয় যেন এই বুঝি আরাধ্য কল দিয়েছে। . . . . . . . . . নিশাত চৌধুরী আরাধ্যর রুমে ঢুকলেন। চারিদিকে নজর বুলালেন। রুমটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে থাকে ইদানীং। আগোছালো হয়ে আছে। আরাধ্য সবসময়ই খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু বিগত কয়েকদিন যাবত না ওর রুম ঠিকঠাক আছে, না ও নিজে। কিছু তো একটা হয়েছে ছেলেটার। কি হয়েছে তা হয়তো সে আচ করতে পারছে, কিন্তু আরাধ্যকে বারবার জিজ্ঞেস করার পরেও কিছু বলছে না। আরাধ্য ঘুমাচ্ছে। নিশাত চৌধুরী ছেলের পাশে গিয়ে বসলেন। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ডাকতে লাগলেন। একপর্যায়ে আরাধ্য চোখ খুললো। ওর মা কে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, – গুড মর্নিং মা। আজ তুমি আমাকে ডাকতে এসেছ। আমার দিন আজ খুব ভালো যাবে। – হ্যা, ডাকতে এসেছি। অনেকবেলা হলো, অফিসে যাবি কি না সেটা জানতেই এসেছিলাম৷ – হ্যা মা, যাবো তো। – আচ্ছা, তবে ফ্রেশ হয়ে নে। নিশাত চৌধুরী উঠে চলে যেতে গিয়েও গেলেন না, আবারো বেড এ বসে পড়লেন। – আরাধ্য । – বলো মা। – বাবা, এভাবে মনমরা হয়ে থাকিস না। কি হয়েছে কিছুই তো বলিস না আমাকে। কিন্তু যতটুকু আচ করতে পারছি, হয়তো স্পর্শিয়ার সাথে কিছু নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে তোর। এসব ব্যাপার না বাবা। দুজন একটা সম্পর্কে থাকলে টুকটাক অনেক কিছুই হয়। তাই বলে দিনের পর দিন এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকতে হয় না। তোদের নিজেদের মধ্যে যা ই হয়েছে সর্ট আউট করে নে। দুজন দুজনের সাথে কথা বল। প্রব্লেমগুলো দুজনে মিলে সলভ কর। এই একটা বছরে তোদের মধ্যে কখনো কোন ঝগড়া বা রাগারাগি দেখিনি। এখন হঠাৎ কি হলো জানি না। সেদিন স্পর্শিয়াকে কল দিলাম, ও হয়তো আনমনেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল তুই কেমন আছিস। জিজ্ঞেস করেই হকচকিয়ে যায়, কথা ঘুরিয়ে ফেলে। তখনি বুঝতে পারলাম তোদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। আরাধ্য, স্পর্শিয়া খুব ভালো মেয়ে। ও আমাদের ফ্যামিলিকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপন করে নিয়েছে। তোদের মধ্যে যাই হয়েছে, জলদি করে সলভ করে নে শুধু এইটুকুই বলতে পারি। মিসেস চৌধুরী একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। আরাধ্য ঠায় বসে রইলো। তাচ্ছিল্যের সাথে হাসি দিয়ে বলল “স্পর্শিয়া খুব ভালো মেয়ে। ” ওর চোখের সামনে ভাসতে লাগলো সে অলুক্ষুনে দিনের কথা! একটা বছর পার হয়ে গিয়েছে স্পর্শিয়ার সাথে। কখনো আরাধ্য ওকে ভালোবাসতে এতটুকু কমতি রাখেনি। স্পর্শিয়া মুখে স্বীকার না করলেও ওর ব্যবহারে সবসময়ই আরাধ্যর মনে হতো স্পর্শিয়া ওকে খুব ভালোবাসে। ও নিজেও কখনো মাথা ঘামাতো না স্পর্শিয়া কনফেস না করাতে। ভালোবাসা তো আর আই লাভ ইউ বললেই হয় না, এটা একটা অনুভূতি। আরাধ্যর খুব ইচ্ছা ছিল স্পর্শিয়াকে কোন স্পেশাল মুহূর্তে লাল জর্জেটের শাড়ি গিফট করবে। যেহেতু ওদের ফার্স্ট এ্যানিভার্সারি ছিল সেদিন, তাই ও এই দিনটাকেই বেছে নিল লাল শাড়ি গিফট করার জন্য। স্পর্শিয়ার জন্য অনেক কিছুই প্ল্যান করে রেখেছিল ও। স্পর্শিয়ার লাইফের বেস্ট একটা দিন বানাতে চেয়েছিল সে দিনটাকে আরাধ্য। এমন একটা দিন, যে দিনটা স্পর্শিয়া কখনোই ভুলবে না। অথচ, ও আর কি সারপ্রাইজ দিবে স্পর্শিয়াকে, স্পর্শিয়া নিজেই ওকে শকিং সারপ্রাইজ দিয়ে দিল। সেই সারপ্রাইজের চেয়ে আরাধ্যর কাছে মৃত্যু শ্রেয় মনে হয়েছিল। সেদিন স্পর্শিয়ার জন্য শাড়ি, চুড়ি, আর ডায়মন্ডের রিং কিনে খুশি হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকছিল লাঞ্চ করার জন্য আরাধ্য । সন্ধ্যায় স্পর্শিয়ার সাথে দেখা হবে, স্পর্শিয়াকে ও সারপ্রাইজ দিবে। কত খুশি হবে মেয়েটা, আর তার সাথে অবাকও হবে। কারণ, স্পর্শিয়ার নিশ্চয়ই মনে নেই আজ ওদের এ্যাঙ্গেজম্যান্টের এক বছর হয়েছে। বাচ্চা মেয়েটা কিছুই যে মনে রাখে না। কিন্তু রেস্টুরেন্টে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য আরাধ্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। একটু ভেতরে ঢুকতেই দেখে যে, কর্ণারের একটা টেবিলে স্পর্শিয়া বসে আছে। ওর ঠিক অপজিট পাশে একটা ছেলে। আরাধ্য পেছনে থাকায় ছেলেটার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না। আরাধ্যর বুকটা ধক করে উঠলো। সন্ধ্যায় স্পর্শিয়ার দেখা করার কথা ওর সাথে, অথচ এখন ও একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে কি করছে? আর ছেলেটাই বা কে? পরমূহুর্তে নিজেই নিজেকে শান্তনা দিল। ছিঃ! কি সব ভাবছে ও? হয়তো কোন ফ্রেন্ড, অথবা কাজিন, বা অন্য কোন রিলেটিভ হয়তো। সবসময় যে স্পর্শিয়া ওকে বলেই সব জায়গায় যাবে এমন তো কোন কথা নেই। আরাধ্য হাসিমুখে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। সন্ধ্যায় তো স্পর্শিয়া সারপ্রাইজ পাবেই, এখনো হঠাৎ ওর সামনে গিয়ে ওকে চমকে দেয়া যাক। আরাধ্য আগাতে আগাতে দেখলো, এরই মধ্যে ছেলেটা স্পর্শিয়ার হাত ধরে ফেলেছে । আরাধ্য এবার থমকে দাঁড়িয়ে গেল। নিজের চোখকে ও বিশ্বাস করতে পারছে না। আরাধ্য ওদের কথা এখন সব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। ছেলেটা ওকে বলছে, – স্পর্শিয়া, তোমার এই হাত আমি ধরেছি, আর কখনো ছাড়বো না। বিশ্বাস করো আমার জান, আর কখনো ছাড়বো না। এখন থেকে সবকিছুতে আমি তোমার সাথে আছি। ভালোবাসি যে তোমাকে অনেক। স্পর্শিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আর আরাধ্যর বুকের ভেতর যেন রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কাওকে ভালোবাসি বলতে দেখলে, তখন রক্তক্ষরনটাও যেন কম মনে হয়। ছেলেটা আবারও বললো, – স্পর্শিয়া, তুমি কি আমার না? বলো, তুমি কি আমার না? আমাকে কি ভালোবাসো না তুমি? বলো স্পর্শিয়া, প্লিজ উত্তর দাও। চুপ থেকো না আজ প্লিজ। আরাধ্যকে অবাক করে দিয়ে স্পর্শিয়া মাথা নাড়িয়ে বললো ও ছেলেটাকে ভালোবাসে। আরাধ্য যেন জ্ঞানহীন হয়ে পড়লো। ওর কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। কারন, ওর বিশ্বাস স্পর্শিয়া এমন না। ও যা দেখছে সব ভুল। বারবার দোয়া করছে আল্লাহর কাছে, ও যা কিছু দেখছে, যা কিছু ওর চোখের সামনে ঘটছে সব যেন স্বপ্ন হয়, অথবা ওর ভ্রম হয়। আরাধ্য ঠায় দাঁড়িয়ে আছে । ঘটনার আকস্মিকতায় না ও সামনে আগাতে পারছে, আর না পারছে চলে যেতে। এরই মধ্যে স্পর্শিয়ার নজর আরাধ্যর উপর পড়লো। স্পর্শিয়া সায়ানের হাত ছেড়ে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল। মুহূর্তেই স্পর্শিয়ার চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আরাধ্যও টলমল চোখে স্পর্শিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেল আরাধ্য । সায়ান দাঁড়িয়ে আরাধ্যকে দেখে চমকে গিয়ে বলল, – আরাধ্য ভাইয়া, তুমি এখানে! (চলবে) লিখা: Dewan Oishi
(চলবে)

লিখা: Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here