বিবাহিত চুক্তি পর্ব ২

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্ব-২

ঠাস ঠাস দুটো শব্দ হলো খুব জোরে আর ইনায়া চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে, কিছুক্ষণ পর টের পেলো নাহ ওর গাল ব্যাথা করছে না বরং যে ওকে মারতে যাচ্ছিলো সে নিচে পড়ে আছে আর গালে হাত দিয়ে ভ্যবলার মতো তাকিয়ে আছে,,
কি হচ্ছে বুঝার জন্য আশেপাশে তাকালো আর দেখলো আশেপাশের মেয়েরা ছবি তুলতে ব্যস্ত। একজনের দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখে সামনে ছয় ফুট লম্বা এক দৈত্য দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়ার হাইট ৫’৩” তাই ওর থেকে বড় সবাইকে ওর কাছে দৈত্য মনে হয়। কিন্তু দৈত্যটি দেখতে সুদর্শন প্রায় সিনেমার হিরোর মতো,, কি হাইট মাশাল্লা যদি ওর ক্রাশ না থাকতো তাহলে এখনি হয়তো ক্রাশ খেয়ে যেতো বাট হি ইজ নট আ ভিলেন।

“রেসপেক্ট উইমেন, শি ইজ নট ইউর প্রোপার্টি দ্যাট ইউ কেন ইউজ হার এজ ইউ ওয়ান্ট, সে স্যরি টু হার… ”

হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো ছেলেটি, চোখমুখ লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে,, ছেলেটির সাপোর্ট দেখে ইনায়া সাহস পেলো, নিচে পড়ে থাকা ছেলেটির মুখে স্পষ্ট ভয় বিরাজমান, যেন বিষয়টি এতোদুর গড়াবে ভাবতেই পারেনি, ভয়ে ভয়ে স্যরি বলে দিলো, উঠে দৌড়ে পালিয়ে গেলো যেকোন সাক্ষাৎ রাবনের সাথে তার মুলাকাত হয়েছে,,

“বাব্বাহ এই ছেলের তো খুব শক্তি! দুই থাপ্পড়েই দাদা নানা মনে করিয়ে দিলো, রোজ মনে হয় জীমে যায়”

ভাবুক ভাবে কথাগুলো বাংলায় বললো, কারণ লন্ডনে কেউ বাংলা বুঝবে না তাই বলে অনেক মজা পাওয়া যায়। কথাটা শেষ করে ছেলেটির দিকে নজর পড়তেই দেখে সে ভ্রু কুচকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে আছে, ইনায়া জোর পুর্বক হাসি দিলো, আর লোকটি বিনিময়ে একবার তাকিয়ে সানগ্লাস পরে চলে গেলো,

“এইযা ছেলেটি কি বুঝে গেলো আমি কি বলেছি? নাহ বুঝবে কি করে! দেখতে তো পুরাই ইংরেজ, কিছুই বুঝেনি, ডোন্ট বি প্যানিক যাইহোক ছেলেটিকে নেক্সট টাইম পেলে থ্যাংকস জানিয়ে দিবো “বাংলায় বিড়বিড় করে বলছে,,

~কিছুক্ষণ আগে~

ইনায়া ভার্সিটিতে এসেছিলো, গেট দিয়ে ঢুকবে তখন দেখলো কয়েকটি ছেলে একটা মেয়েকে কিছু একটা বলছে আর মেয়েটা যে আনকম্ফর্টেবল তা ফেস দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো, তাই ও এগিয়ে গেলো আর গিয়ে দেখলো একটা ছেলে রিতিমতো মেয়েটিকে হেরেস করছে যা ওর সহ্য হলো না তাই কিছু না ভেবেই ছেলেটিকে দুইটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো আর বললো

“রাস্তাঘাটে মেয়েদের হেরেস করতে লজ্জা লাগেনা?তোমার ঘরে মা বোন নেই!”

তখনি ছেলেটি রেগে যায় আর বলে “তুমি জানো আমি কে?মার্ক থ্রোর্নের কখনো কারো ঋণ রাখে না বরং আরো বেশি দিয়ে পুশিয়ে দেয় ” ততক্ষণে সাথে থাকা দুটি ছেলে এনার আর ওর হাত চেপে ধরে তাই ও নড়তে পারেনা আর ওই ছেলেটি মারার জন্য হাত উঠায় আর তারপরের টা তো জানাই আপনাদের,,

তখনি এনা ওর কাধে হাত রেখে বললো,

“ইনা, কি হ্যান্ডসাম ছেলে দেখছিস? মাই গড এইরকম কেউ লাইফে থাকলে আমি আমার হাজবেন্ড কেও ছেড়ে দিতাম হোয়াট আ হট ম্যান”

“তাহলে কি ছেড়ে দিবে তোমার বয়ফ্রেন্ড নং 4 কে?”

“নো ইটস একচুয়ালি 5, কম তাইন!”

“মাই গড হোয়াটস ইউর আজ বেব?”

“অফ কোর্স টুয়েন্টি”

“এই বয়সেই পাচটা রিলেশন! বাকি লাইফ কি করবে? সবচেয়ে বেশি কোন রেলেশন টিকেছে? ”

“কারেন্ট, অলরেডি একমাস দিন হয়ে গেছে ”

“মানে ওইগুলো আরো কম? এত তাড়াতাড়ি কেন ব্রেক আপ করো?”

“কজ সম্পর্কে মতের মিল থাকা খুব জরুরি, যদি সবকিছু না মিলে তাহলে সম্পর্ক টিকে না”

“এটা ভুল ধারণা, সবকিছু ভাইবোনদের মিলার কথা হাজবেন্ড ওয়াইফের না, প্রতিটা সম্পর্ক মতের মিল হতে হবে এমন কিছু কথা কিন্তু লিখা নেই।যেকোন সম্পর্কের মুল ভিত্তি হচ্ছে ট্রাস্ট আর একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। মতের মিল নাই থাকতে পারে তবে একে অপরের মতকে প্রাধান্য দেয়াই হচ্ছে ভালোবাসা। যখন তুমি কাউকে মন থেকে চাইবে তখন তার জন্য কম্প্রোমাইজ করা শিখে যাবে। আর সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট কথা যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে ইগো থাকেনা। ‘সে স্যরি বলবে, আমি বললে আমি ছোট হয়ে যাবো, আমার সেল্ফ রেসপেক্ট চলে যাবে, তার সাথে আমি আগে কথা বলবো কেন?’ সত্যকারের সম্পর্কে এসব কথা থাকে না কারণ তারা একে অপরের সাথে থাকতে চায় আজীবন যেকোন কিছুর বিনিময়ে ”

“আমার জানামতে তুই কখনো রিলেশনে যাসনি, তাহলে ভালোবাসা সম্পর্কে এত জ্ঞান কোথা থেকে এলো?”

“ভালোবাসা মানেই রিলেশনে যেতে হবে এমন কিন্তু না কারণ ভালো দূর থেকে বাসা যায়। আর আমার চোখের সামনে এমন উদাহরণ আছে তাই আমি জানি ভালোবাসা কি! একটা মানুষ কতটা নিঃস্বার্থ ভাবে আরেকজনকে ভালোবাসতে পারে তা আমি নিজের চোখে দেখেছি ” বলেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো ও, তারপর ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে গেলো।

বাসায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফিরলো আগামী কাল ওদের ভার্সিটিতে প্রদর্শনী অনুষ্ঠান হবে তাই ক্লাস মনিটর হিসেবে ওর দায়িত্ব বেশি ছিলো, প্রায় সন্ধা হয়ে গিয়েছে ফিরতে ফিরতে, ফ্রেশ হয়ে কিছু খাবে এমন সময় ফোন বেজে উঠলো, কল দেখেই মুচকি হাসি দিলো সায়রা মানে ওর মামতো বোন ফোন দিয়েছে, ওর থেকে গুনে গুনে ছয় মাসের বড় কিন্তু আপু থাক দূরের কথা দুজনে এখনো চকলেটের লাস্ট বাইট নিয়ে ঝগড়া করে
দুজন বোন কম বেষ্ট ফ্রেন্ড বেশি,, এখানে আসার পর খুব মিস করে ওকে,,

“কিরে পেত্নী ফোন ধরিস না কেন? কতক্ষণ ধরে দিচ্ছি তোকে, ওইখানে গিয়ে নতুন ফ্রেন্ড বানায়া আমাকে তো ভুলেই গেলি ”

“হুহ ভুলি নাই, ফ্রেশ হচ্ছিলাম তাই দেখিনি”

“নাকি নতুন বফ জুটিয়ে ফেলছিস? ”

“আরে নাহ, তুইতো জানিস আমি বিয়ে করলে দেশি কাউকে করবো, আমাদের দেশি ছেলেদের দেখে মায়া হয় বুঝলি, প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে তাদের কিন্তু এখানের ধলা বিলাইদের দেখে ওমন ফিলিংস আসে না, দে কান্ট বি মাই লাভ ইউ নো! আর তাছাড়া বিয়ে করলে সারাদিন ইংরেজিতে পটরপটর করতে হবে। দেশি ঘি এর খাটি স্বাদ কি বিদেশিতে পাওয়া যায়! বিয়ে তো দেশি কাউকে করবো যাতে প্রান খুলে বাংলায় কথা বলতে পারি”

“সেই বুঝলাম কিন্তু বিদেশের মাটিতে দেশি জিনিস পাবা কই?”

“আছে আছে কেউ না তো অবশ্যই আছে, যাইহোক মামা আর মামনি কেমন আছে? ”

“ভালোই ”

“কার সাথে কথা বলছিস রে?”

“মামনি আমি তোমার ইনুপাখি, তোমাকে বরাবরের মতোই সুন্দরি লাগছে, ইউ আর সো গর্জিয়াছ মামি ”

“মাইর দিবো একদম বলে দিলাম, কেমন আছিস? ”

“ভালো, মামা কোথায়? ”

“আমি এইযে, কি খবর তোমার ইনায়া? ”

“এইতো মামা ভালো, তুমি তো দেখছি সো হ্যান্ডসাম হয়ে যাচ্ছো দিন দিন, কি মাখো বলোতো?”

“কিছু মাখতে হয়না, সায়ান জামিল খান এমনিতেই হ্যান্ডসাম বুঝেছো?”

“এই না হলে আমার মামা! হোয়াট আ কনফিডেন্স ইয়াং ম্যান ”

তখনি সায়ান সায়রার দিকে একটা পেকেট এগিয়ে দিয়ে বললো এটা তোমাদের জন্য

“বাবাই তুমি কি করে জানলে মাম্মা এটা খেতে চেয়েছে?” অবাক হয়ে বললো সায়রা,

“মনে হলো নিয়ে আসি তাই আনলাম, আমি উপরে গেলাম, বাই ইনু মা, টেক কেয়ার অফ ইউর সেল্ফ ”

“ইয়েস হ্যান্ডসাম ম্যান ”

তারপর আরো কিছু কথা বলে ফোন কেটে দিলো ইনায়া,মামা মামি কে ছোট থেকে আসছে ও আর বড় হওয়ার পর বুঝেছে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়, মামিকে কখনো সেইভাবে মামার সাথে কথা বলতে দেখেনি আর না মামাকে। তাদের দেখে মনে অনেক কথা জমা হয়ে আছে কিন্তু কিছু জড়তার কারনে বলতে পারছেনা। দুজন ঠিকিই এর সমাপ্তি ঘটাতে চায় তবে হয়তো অনেক দিনের কারণে অভিমান গুলোও বিশাল হয়ে গিয়েছে।
তবে তাদের মধ্যে মনের এতো মিল! দুজন দুজনকে কিছুই বলে না অথচ সব বুঝে যায় নিমিষে,,
মামাকে দেখে মনে হয় মামা, মামির অভিমান ভাংগার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু দিনশেষে তার প্রচেষ্টা একই মোড়ে শেষ হয়।তখন সবচেয়ে অসহায় লাগে তাকে, খুব কষ্ট হয় তাকে দেখে।

প্রত্যকটা মেয়ে চায় তার লাইফ পার্টনার তার বাবার মতো হোক কিন্তু ওই হয়তো প্রথম যে চায় তার অর্ধাংগ তার মামার মতো হোক।ওর কাছে হাজবেন্ড এর রোল মডেল হচ্ছে ওর মামা,, ইশশ যদি মামার একটা ছেলে থাকতো!! তাহলে তো তাকেই বিয়ে করতো ও

to be continued

(কেমন হয়েছে জানিনা, ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here