বিরহ শ্রাবণ ২ পর্ব – ৩৪

#বিরহ_শ্রাবণ(দ্বিতীয় খণ্ড)
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_সারা মেহেক

আমি প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের পানে নিষ্পলক চেয়ে রইলাম। উনিও আমার পানে চেয়ে রইলেন। আমাদের দুজনের অনিমেষ চক্ষুজোড়া একে অপরের দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো। অন্য সময় হলে বোধহয় এতক্ষণে আমি লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিতাম। কিন্তু আজ পারছি না এমনটা করতে। কারণ আজ আমি বিস্ময়স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের মনে যে আমায় নিয়ে অনুভূতি ছিলো তা আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। সবসময় মনে হয়েছে উনি একপ্রকার বিরক্ত হয়েই আমাকে বিয়ে করেছেন এবং এতোদিন যাবত আমার যে খেয়াল রেখেছেন তা উনার চিরাচরিত পুরোনো স্বভাবের অধীন বলেই ধরে নিয়েছিলাম আমি। আচ্ছা, আমি কি উনার চাহনি দেখে কখনো ওভাবে উপলব্ধি করিনি নাকি করতে চেষ্টা করিনি যে উনার মনে আমায় নিয়ে অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে? নাকি এসব ব্যাপারে নিতান্তই বোকারাম হয়ে গিয়েছি আমি!

প্রোজ্জ্বল ভাই হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলেন,
” কি হলো চন্দ্রিমা? এতোক্ষণ চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছিস কি করে? আমার কথা কি বিশ্বাস হচ্ছে না?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কণ্ঠস্বর শোনামাত্র আমি নিজের কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে বার কয়েক পলক ফেললাম। বিনা শব্দে মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে জবাব দিলাম ‘না”।
আমার নিঃশব্দের জবাবে উনি মৃদু শব্দে হেসে উঠলেন। আমার গালে হাত ঠেকিয়ে আনম্র হেসে বললেন,
” এমন অবিশ্বাস হওয়ার মতোও কিছু বলিনি আমি। শুধু আমার মনে এতোদিন যা চাপা রাখা ছিলো আজ তা নিঃসংকোচে তোর সামনে জাহির করলাম। ”

আমি কথার পিঠে কিছু বলার মতো কথা পেলাম না। উনি পুনরায় বললেন,
” আমি যে এতোকিছু বললাম, এর জবাবে তুই কিছু বলবি না চন্দ্রিমা?”

আমি আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
” ক-কি বলবো আমি?”

প্রোজ্জ্বল ভাই খানিক বিস্মিত হবার ভান করে বললেন,
” কিছুই বলার নেই! ”

আমি সংকোচে সংকোচে পূর্বের ন্যায় বললাম,
” না।”

আমার এ জবাবে প্রোজ্জ্বল ভাই যারপরনাই হতাশ হলেন। মৃদু শব্দে দম ফেলে আমার গাল হতে হাত সরিয়ে আমার ডান হাত চেপে ধরলেন। বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন,
” তোকে নিয়ে আর পারি না…….”
বলেই উনি আমায় খাটে বসিয়ে নিজেও আমার পাশে বসে পড়লেন। আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অনেকটাই হতাশাজনক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” আমি কিছুক্ষণ আগে যা যা বলেছি তা নিয়ে তোর কোনো জিজ্ঞাসা নেই? কখন, কিভাবে হলো, কিছুই জানার নেই?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের প্রশ্নে আমি নিজের মনেই আওড়ালাম,
” হ্যাঁ, জানার আছে। কিন্তু আপনাকে এ বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন করার মতো অবস্থায় আপাতত নেই আমি। ”
এ বলার বদলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। উনি আমার এ কাণ্ডে বিরক্তি নিয়ে আমার মাথায় আলতো একটা গাট্টা মারলেন। বললেন,
” তুই নিতান্তই একটা ফিলিংলেস মানুষ চন্দ্রিমা। উহু মানুষ না, মানুষের রূপে আস্ত এক গ’ণ্ডা’র।”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এহেন কথায় আমি মুহূর্তেই তেলেবেগুনে জ্ব’লে উঠলাম। কিসের রোমান্টিক মুহূর্ত, কিসের প্রপোজ! মেজাজ আমার চট করে গরম হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পূর্বের অকল্পনীয় ঘটনাটি ভুলে তেতে উঠে বললাম,
” আমি কি এমন করলাম যে আপনি আমাকে এভাবে তাচ্ছিল্যের সুরে গ’ণ্ডা’র বললেন! ভালো বা অন্যরকম মুহূর্তকে কিভাবে নষ্ট করতে হয় তা আপনার কাছ থেকেই শিখতে হবে প্রোজ্জ্বল ভাই। ”
বলেই আমি উঠে যেতে নিলাম। কিন্তু তৎক্ষনাৎ উনি আমার হাত চেপে ধরে আমায় যেতে বাঁধা দিলেন। উল্টো যা একটু যাবার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তা উনি মুহূর্তে খ’ত’ম করে আমায় পুনরায় বসিয়ে দিলেন।
আমি ভ্রুজোড়া কুঁচকিয়ে ভীষণ বিরক্তিমাখা চাহনিতে উনার পানে চাইলাম। প্রোজ্জ্বল ভাই আমার এমন চাহনিতে হেসে উঠে বললেন,
“ যদি যানতাম এভাবে তোর মুখ থেকে কথা বের করতে পারবো তাহলে আগেই এমন কিছু করতাম।
তা…… কি যেনো বলছিলি তুই…..অন্যরকম মুহূর্ত? না?”

আমি খানিক বিষম খেলাম। নিজের পায়ে যে নিজেই কু’ড়া’ল মে’রে’ছি তা আর বুঝতে বাকি রইলো না। আমতাআমতা করে বললাম,
“ না, সেটা বলার চেষ্টা করিনি। আসলে ভুল করে বলে ফেলেছিলাম। মানে স্লিপ অফ টাং আর কি।”

“স্লিপ অফ টাং, তাইনা?”

এ মুহূর্তে এ প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমি চট করে বললাম,
” আপনি কি যেনো বলছিলেন প্রোজ্জ্বল ভাই, তাই বলুন। আমরা অন্য টপিকে চলে যাচ্ছি। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই ঠোঁট চেপে হাসি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বললেন,
” আমি এখন যেই টপিকেই যাই না কেনো, লস তোরই হবে। ”

বুঝলাম, প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথার অর্থ কি। ঠোঁট কামড়ে চোখ বুজে নিজের উপর ক্ষণিকের জন্য বিরক্তি প্রকাশ করলাম। আপাতত এ পরিস্থিতি থেকে পালানো সম্ভব নয় জেনেই চুপচাপ বসে রইলাম। কথা বাড়ানোর চেষ্টা করলাম না৷ এমনকি প্রোজ্জ্বল ভাইও আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালেন না। বরং উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে কিঞ্চিৎ বিরক্তিমাথা কণ্ঠ নিয়ে বললেন,
“ আজ আর বলার মুড নেই। আস্ত একটা রোমান্টিক মুহূর্ত নষ্ট করে দিলি তুই চন্দ্রিমা। অন্যদিন বলবো। রয়েসয়ে বাদাম চিবুতে চিবুতে তোকে গল্প শোনাবো। আমার প্রথম প্রেমের গল্প। যে প্রেম আমাকে ভেতরে ভেতরে ব্যাপক পু’ড়ি’য়ে’ছে। তবে দিনশেষে চৈত্রের এক পশলা বৃষ্টির মতো শীতল অনুভবও দিয়েছে। ”
এই বলে কাল বিলম্ব ব্যতিতই প্রোজ্জ্বল ভাই চলে গেলেন। আর আমি সেখানেই ঠায় বসে রইলাম৷ ভাবতে লাগলাম, কি দিয়ে কি হয়ে গেলো এই কিছুক্ষণ মুহূর্তের মাঝে!

————————-

সারাদিনের ক্লাস শেষে প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত হয়ে রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ঘর্মাক্ত শরীরে মাথার উপরের ফ্যানের বাতাস, সাথে জানালা দিয়ে প্রবেশকৃত ঝিরিঝিরি হাওয়ার স্পর্শে কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুম চলে এলো। এরপর কখন যে পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা টের পাইনি৷ ঘুম ভাঙলো প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের উচ্চ আওয়াজের ডাকে। কোনো সাধারণ মানুষের মতো উনি আমায় ঘুম থেকে ডেকে তুলছেন না আমায়। বরং এমন ব্যবহার করছেন যেনো বাহিরে যু'”দ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখনই উঠে জীবন বাঁচিয়ে পালাতে হবে।

আমি হুড়োহুড়ি করে উঠে বসলাম৷ ভীষণ বিরক্তি ও অকপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
” আপনার সমস্যা কি প্রোজ্জ্বল ভাই! এভাবে ডাকলেন কেনো আমাকে? ভালোভাবে ডেকে তুলা যেতো না?”

প্রোজ্জ্বল ভাই আমার কথার তোয়াক্কা না করে পরনের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললেন,
” রাণী ভিক্টোরিয়া না তুই যে আয়োজন করে ডাকবো৷ আর এই গরমে গোসল না করে ঘুমাচ্ছিস কি করে! ডা’র্টি মেয়ে কোথাকার।”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কথাবার্তায় আমার রাগ পারদ সীমা অতিক্রম করলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে উনার বাহুতে মোটামুটি জোরেই একটা আ’ঘা’ত করে রাগান্বিত কণ্ঠে বললাম,
” কি সমস্যা হ্যাঁ? কি সমস্যাটা কি আপনার? কালকে গ’ণ্ডা’ র আর আজকে ডা’র্টি মেয়ে!, এসব কি! ভাষা ঠিক করুন আপনার। আপনি দিনদিন মারাত্মক অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন প্রোজ্জ্বল ভাই। দরকার হলে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ রাখুন কিছুদিন। কিন্তু তারপরেও এসব নামে ডাকবেন না বলে দিলাম। এসব শুনলেই তো মাথা গরম হয়ে যায়। আর কি লাগে!”

এদিকে আমি রা’গের বশে উনাকে বকেই চলছি আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। উনার এ হাসি দেখেই আমার রাগ পূর্বের তুলনায় আরো বেড়ে গেলো। পূর্বের ন্যায় বললাম,
“ আশ্চর্য! হাসছেন কেনো আবার? আমি কোনো জোকস বলেছি? ”

প্রোজ্জ্বল ভাই হাসি থামাতে ঠোঁট চেপে ধরলেন। কিন্তু হাসি থামাতে পারলেন না। ওভাবেই বললেন,
” উঁহু, কোনো জোকস বলিসনি। ”

” তাহলে হাসছেন কেনো!”

” এমনি। ”

” আর হাসবেন না কিন্তু বলে দিলাম। এবার হাসলেই খা’রা’প কিছু হয়ে যাবে।”

উনি ভ্রুজোড়া নাচাতে নাচাতে বললেন,
” কি খা’রা’প হবে শুনি? কিছু খা’রা’প করতে পারলে করে দেখা। দেখতে চাই তোর দৌড় কতটুকু পর্যন্ত। ”
এই বলেই উনি আমার হাত ধরে আমাকে নিজের দিকে হেঁচকা টান দিলেন। আমি কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। মুহূর্তেই কানের নিকট ফিসফিস করে বললেন,
“ তোর দৌড় এতটুকুই চন্দ্রিমা। এর বেশি কিছুই পারবি না৷ ”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এহেন কান্ডে আমি বরফের ন্যায় জমে গেলাম। কয়েক সেকেন্ডের জন্য দম আটকে এলো আমার। আচমকা উনাকে এতোটা নিকটে আশা করিনি আমি। যেখানে উনি আমার খুব কাছে এলে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায় সেখানে উনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন বলে আমার চিন্তাশক্তি লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে বোধহয়।
গতকাল যখন উনি আমায় আচমকা জড়িয়ে ধরেছিলেন তখনও ঠিক এমনটা অনুভব হয়েছিলো। তবে গতকাল সে অনুভূতি অনেকটাই নিষ্প্রভ শিখার ন্যায় ছিলো। কারণ গতকাল আমার মন-মেজাজ একেবারেই বিগড়ে ছিলো। আর আজ সব বিগড়ে যাওয়ার পূর্বেই উনি এ কাজটা করে বসেন। যে কারণে আজ উনার কাছে আসার অনুভূতিটাও তপ্ত রোদের ন্যায় প্রখরভাবে উপলব্ধ হচ্ছে।

বেশ খানিক সময় প্রোজ্জ্বল ভাই কোনো কথা বললেন না। কিছু বলতে পারলাম না আমিও। হঠাৎ প্রোজ্জ্বল ভাই আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। তৎক্ষনাৎ আমি দৃষ্টি নত করে অন্যদিকে তাকালাম৷ উনি নরম সুরে বললেন,
” আমার দিকে তাকা তো চন্দ্রিমা। অন্যদিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?”

অন্যদিকে তাকিয়ে আছি কেনো তা প্রোজ্জ্বল ভাইকে বুঝাই কি করে। উনাকে এ ব্যাপারে বুঝানোর ন্যায় ভাষা আমার জানা নেই। উনি আমার এ নীরবতা দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
” লজ্জা লাগছে বুঝি?”

আমি পূর্বের ন্যায় নীরব রইলাম। প্রোজ্জ্বল ভাই এবার মৃদু শব্দে হেসে উঠলেন। পুনরায় আমায় জড়িয়ে ধরে হেসে বললেন,
“বুঝলাম, তোর এসব ব্যাপারে ভীষণ লজ্জা। একদম লজ্জাবতী গাছের মতো নুয়ে পড়ে আছিস। না জানি সামনে আর কি হবে!”

চেষ্টা করলাম শক্ত হবো, লজ্জা পাবো না৷ কিন্তু উনার শেষোক্ত কথায় আমি বরফগলা পানির ন্যায় গলে পড়লাম যেনো।

—————————

গত পরশুদিনের ঘটনার পর আজ অভ্র ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। যদিও আমি ইচ্ছাকৃতভাবে উনার সাথে দেখা করতে চাইনি। উনিই এগিয়ে এসে আমার সাথে কথা বাড়ালেন।
আজ শেষের দুটো ক্লাস হয়নি বিধায় আমি একাই বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কারণ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের অফিস আওয়ার এখনো শেষ হয়নি। যার ফলে আজ উনার সাথে যাওয়া সম্ভব হবে না।

কলেজ গেটের কাছাকাছি আসতেই পিছন হতে অভ্র ভাইয়ের ডাক শুনতে পেলাম। প্রথমবার উনার ডাক শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লেও পুনরায় হাঁটতে আরম্ভ করলাম। কারণ অভ্র ভাইকে আমি পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে চাইছি। যতটা কম কথা বললে আমাদের মাঝে অন্ততপক্ষে ক্যাজুয়াল একটা সম্পর্ক বজায় থাকে ঠিক ততোটাই কথা বলতে চাইছি আমি। এমন না যে প্রোজ্জ্বল ভাই এ ব্যাপারে আমার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আমি নিজ হতেই অভ্র ভাইকে এড়িয়ে চলতে চাইছি। কেননা আর কোনো ধরণের ঝামেলায় জড়াতে চাইছি না আমি। বিশেষ করে পরশুদিনের ঘটনার পর তো আরো চাইছি না অভ্র ভাইয়ের সাথে কোনোপ্রকার কথাবার্তা বলতে।

অভ্র ভাই পিছন হতে আরো একবার হাঁক ছাড়লেন। তা শুনেও না শোনার ভান করে হাঁটতে লাগলাম আমি। ভেবেছিলাম এভাবে করে গেট পেরিয়ে দ্রুত রিকশায় উঠে পড়বো। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই অভ্র ভাই দ্রুত পিছন হতে এসে আমার সাথে হাঁটতে আরম্ভ করলেন। খানিক হাঁপিয়ে উঠা কণ্ঠে বললেন,
“ কি ব্যাপার চন্দ্রিমা? তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছি, শুনোনি?”

এতোক্ষণ পর উনাকে লক্ষ্য করলাম, এমন ভান ধরে মৃদু হেসে বললাম,
” আরে অভ্র ভাই আপনি!
কখন ডাকলেন? আপনার ডাক আমার কান অব্দি আসেনি।”

অভ্র ভাই এমন এক হাসি দিলেন যেনো উনি আমার এ মিথ্যে আঁচ করতে পেরেছেন। জিজ্ঞেস করলেন,
” কোথায় যাচ্ছো? ”

” বাড়িতে।”

” ক্লাস শেষ?”

” হুম। বাকি দুটো ক্লাস হবে না তাই চলে যাচ্ছি। ”

” ওহ। প্রোজ্জ্বল কোথায়?”

” উনি ডিপার্টমেন্টে। অফিস আওয়ার শেষ হয়নি এখনো। ”

” ওহ হ্যাঁ। খেয়াল ছিলো না। ”

অভ্র ভাই আরো কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু আমি উনাকে আর কথা বাড়ানোর সুযোগ না দিয়ে বললাম,
” অভ্র ভাই, আমি যাই। বাড়িতে কিছু কাজ আছে। দ্রুত যেতে হবে। ”
বলেই আমি যাবার পথে পা বাড়ালাম। কিন্তু উনি পুনরায় আমায় থামিয়ে বললেন,
” চলো, তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি। ”

আমি সাথে সাথে উনার প্রস্তাব নাকচ করে বললাম,
” না না অভ্র ভাই। শুধু শুধু কষ্ট করবেন কেনো। আমি একাই যেতে পারবো।”

“ কষ্ট হবে না। আমি এমনিই বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আম্মার প্রেশারের ওষুধ নেই। সেটা কিনে দিতে যাচ্ছি। আধ ঘণ্টার জন্য একটু বের হলাম আরকি। ”

“ মামির ওষুধ আমার কাছে কিনে দিন অভ্র ভাই। আমিই নিয়ে যাচ্ছি৷ ”

অভ্র ভাইকে যতভাবে এড়িয়ে চলা যায় ততভাবেই আমি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি৷ কিন্তু উনি আমায় ঠিক ততভাবেই বাগে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এবার অভ্র ভাই আচমকা জিজ্ঞেস করলেন,
“ চন্দ্রিমা? ইগনোর করছো আমাকে?”

এ মুহূর্তে উনাকে ইগনোর করলেও তা অস্বীকার করলাম আমি। সাথে সাথে মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে মেকি হাসি দিয়ে বললাম,
” আরে না না অভ্র ভাই। কি বলছেন! আপনাকে ইগনোর কেনো করতে যাবো!”

অভ্র ভাই মৃদু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
“ মিথ্যে বলো না চন্দ্রিমা। তোমার বডি ল্যাংগুয়েজ বলে দিচ্ছে তুমি আমাকে ইগনোর করছো। কারণটা কি জানতে পারি?”

আমি নীরব রইলাম। সরাসরি এভাবে কারণ বলাটা বেশ দৃষ্টিকটু বলে অন্য বাহানা বানিয়ে দিতে চাইলাম। কিন্তু এর পূর্বেই উনি নিজ হতে বললেন,
“ আচ্ছা? তুমি আমাকে কালচারাল প্রোগ্রামের ঐ ঘটনার জন্য ইগনোর করছো না তো?”

উনি যে চট করে ব্যাপারটা ধরতে পারবেন তা আশা করিনি আমি। এভাবে হাতনাতে ধরা পরে বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম৷ ঠোঁট কামড়ে পুনরায় নীরবে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। উনি আমার এ নীরবতায় পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেলেন এবার। খানিক উচ্চ শব্দেই হেসে বললেন,
“ চন্দ্রিমা… আমি আইডিয়াও করতে পারিনি এ কারণে আমাকে ইগনোর করবে তুমি। আচ্ছা? প্রোজ্জ্বল কি এ ব্যাপারে নিষেধ করেছে তোমাকে?”

আমি সাথে সাথে বলে উঠলাম,
“ না, উনি কিচ্ছুই বলেননি এ ব্যাপারে।”

” ওহ, তাহলে তুমি নিজ থেকেই এমন করতে চাইছো। সমস্যা নেই। আমিও তোমার সাথে তেমন কথা বলবো না। জানি, আমাদের সম্পর্ক আর কখনোই বিয়ের আগের মতো হবে না। এর সবটার জন্য আমি নিজেই দায়ী। ”

অভ্র ভাইয়ের এ কথা শুনে নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হলো। বললাম,
“ কিছু মনে করবেন না অভ্র ভাই। আমি জানি…”

আমায় মাঝেপথে থামিয়ে উনি বললেন,
“ কালচারাল প্রোগ্রামে গাওয়া গানটার জন্য এক্সট্রিমলি সরি চন্দ্রিমা। আমায় ভুল বুঝো না। আর হ্যাঁ, চিন্তা করো না, আমি কখনোই তোমার আর প্রোজ্জ্বলের মাঝে আসবো না। আমি সবসময় চাইবো তোমরা সুখে সংসার করো।

পাস্ট ইজ পাস্ট। আমায় কখনো তোমাদের মাঝে থার্ড পার্সন হিসেবে চিন্তা করো না। আর আমি কখনোই এমন নিচু লেভেলের কাজ করবো না, এটার শিওরিটি দিতে পারি।
যাই হোক, এভাবে দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছি। ”
এই বলে উনি মৃদু হাসলেন। পকেট থেকে টাকা বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
“ এই নাও টাকা। আম্মার জন্য ওষুধ কিনে নিয়ে যেও। আমি ওষুধের নাম ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। ”
এই বলেই উনি আমায় আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন।
এ মুহূর্তে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে কিছু কথা বলার একান্তই প্রয়োজন ছিলো। কেননা আমি চাই না ভবিষ্যতে অভ্র ভাইয়ের কারণে পুনরায় সাজানো গোছানো সব নষ্ট হয়ে যাক। এমনটা নয় যে অভ্র ভাইয়ের সাথে একেবারেই কথা বলবো না৷ তবে অন্ততপক্ষে কয়েক মাস এভাবেই আমাদের চলা উচিত। যেনো ভবিষ্যতে আর কোনোপ্রকার কোনো সমস্যা না হয়।

———-

এশার আজান দেওয়ার পরপরই নামাজ পড়ে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছি। কিছুক্ষণ পূর্বেই তুমুল বেগের বৃষ্টি থেমে এখন পরিবেশ শান্ত আছে। চারপাশে সুতীব্র শীতল হাওয়া বইছে। মাঝে মাঝে তা শরীরে কাঁটা ধরিয়ে দিচ্ছে। তবুও দুরন্ত এ হাওয়ায় সমস্ত শরীর ভাসিয়ে দিয়ে স্বচ্ছন্দ মনে তা উপভোগ করার আনন্দই অন্যরকম।

ছাদের যে পাশে চন্দ্রপ্রভা গাছটি মাথা ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে পাশে রেলিঙে দু হাত ঠেকিয়ে খানিক সামনে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছি। মাঝে মাঝে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মেঘ ও চাঁদের লুকোচুরি খেলা দেখছি। একলা দাঁড়িয়ে উপভোগ করার মতো মন্দ পরিবেশ নয় এটি। রসকষহীন মানুষেরও এমন পরিবেশে মন নরম হয়ে যাবে।

হঠাৎ পিছন হতে পেটের উপর কারোর হাত পড়তেই চমকে উঠলাম আমি৷ উপরন্তু যখন কাঁধের উপর খোঁচা খোঁচা অনুভূতি পেলাম তখন বিস্ময়ে প্রায় আঁতকে উঠলাম যেনো। এ নিয়ে ভয়ে চিৎকার দিতে যাবো তখনই অকস্মাৎ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কণ্ঠস্বর আমার কানে ভেসে এলো।
“ চন্দ্রিমা, আমি।”
অর্থাৎ আমায় পিছন হতে আচমকা এভাবে জড়িয়ে ধরা মানুষটি আর কেউ নয় বরং খোদ প্রোজ্জ্বল ভাই।

আমায় এভাবে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রোজ্জ্বল ভাইকে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে উদ্যত হলাম। কিন্তু এর পূর্বেই উনি রিনরিনে কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“ এখন রাগ দেখানোর দরকার নেই। একটু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। পরিবেশটা এঞ্জয় করতে দে। ”
বলেই উনি পুনরায় আমার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে দু হাত আমার পেটের উপর রেখে দাঁড়িয়ে রইলেন। উনার গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার কাঁধে ভীষণ বিঁধছে। এ নিয়ে অনুগ্র স্বরে অভিযোগ জানালে উনার জবাব হলো এরূপ,
“ সামান্য দাড়ির খোঁচা সহ্য করতে পারিস না তুই! সহ্য কর। আর না করতে পারলেও কিছু করার নেই আমার। আমি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো। ”

অগত্যা এ মৃদু ব্যাথা সহ্য করা ছাড়া উপায় রইলো না আমার কাছে। একদিকে এ মৃদু ব্যাথা অন্যদিকে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এ স্পর্শে আমার আর এক পা নড়াবার ক্ষমতা রইলো না। পা জোড়া যেনো অনেকটাই অবশ হয়ে গিয়েছে। উপরন্তু বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে কানে বাড়ি খাচ্ছে। জানি না, এ পরিস্থিতির অবসান কখন আর কিভাবে ঘটবে।

খানিক বাদে প্রোজ্জ্বল ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোর নামটা কে রেখেছে জানিস চন্দ্রিমা?”

আমি ছোট্ট করে জবাব দিলাম,
“ উঁহু, জানি না। ”

“ আমি রেখেছি তোর নামটা।
তোর যখন জন্ম হয় তখন আমার বয়স সাত কি আট। ফুফুর কোল যখন তোর ঐ ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটো দেখেছিলাম তখন এত মায়া লেগেছিলো! চঞ্চল আর আমি সারাদিন তোর হাত দুটো ধরে বসে থাকতাম। আম্মা এ কারণে মাঝে মাঝে ব’ক’তো আমাদের। কারণ অনেকক্ষণ হাত ধরে রাখায় তুই কান্না করে দিতি।
সে যাই হোক, নাম রাখার বিষয়ে আসি।
বাড়িতে এ চন্দ্রপ্রভা গাছটা আমি ছোট থেকেই দেখে আসছি। চন্দ্রপ্রভা ফুল যখন ফুটতো তখন যে কি আনন্দ লাগতো বলে বুঝানো সম্ভব না। চন্দ্রপ্রভা আমার অনেক পছন্দের একটা ফুল। তখন এ ফুলের নাম উচ্চারণ করতে বেশ বেগ পেতে হতো। কিন্তু তারপরও ভালো লাগতো। আমি মাঝে মাঝেই মাটিতে পরে থাকা পরিষ্কার ফুল এনে তোর হাত গুঁজে দিতাম। তুই তখন মাত্র দু মাসের। ঐ ফুল হাতে নিয়ে কি যে নড়াচড়া করতি! একদিন কি মনে করে যেনো ফুফুকে বললাম,
“ ফুফু বাবুর নাম চন্দ্রপ্রভা রাখা যায় না?”
তখনও তোর কোনো ভালো নাম রাখা হয়নি। বাড়ির সবাই বাবু বলে ডাকতো। ফুফু আমার মুখে চন্দ্রপ্রভা নাম শুনে এটাই রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে আব্বা চন্দ্রপ্রভা নাম বদলে কাটছাট করে আমায় বলে তোর নাম চন্দ্রিমা রাখে। তখন থেকেই বাবু হয়ে গেলো চন্দ্রিমা। এভাবেই তোর নামটা আমি রেখেছি, বুঝলি?

আমার নাম রাখার এ ঘটনা কোনো সময়ই আমার জানা ছিলো না। আজই প্রথম প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের নিকট হতে বিস্তারিত শুনলাম। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“ এগুলো মনে ছিলো নাকি আপনার?”

“ নাহ, এতো ছোটবেলার ঘটনা মনে থাকে নাকি! সবটাই ফুফু আর আম্মার মুখে শোনা। ”

“ ওহ।”

প্রোজ্জ্বল ভাই ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় বললেন,
“ ছোট থেকে খুব আদর যত্নে রাখার চেষ্টা করতাম তোকে। যখনই তুই আমাদের বাড়িতে আসতি আমার আনন্দের সীমা থাকতো না তখন। এরপর যখন ফুফু একেবারে এ বাড়িতে থাকা শুরু করে তখন থেকে আমি আর চঞ্চল সবসময় তোকে চোখে চোখে রাখতাম৷ তোর প্রয়োজন পূরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম আমরা। এভাবে চোখে চোখে থেকেই তুই বড় হয়েছিস। তারপর যখন চঞ্চলও মা”রা গেলো তখন তোর প্রতি মনোযোগ আর দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো আমার। চঞ্চলের দায়িত্বটুকুও নিজের কাঁধে তুলে নিলাম আমি।
এভাবে সময় যেতে যেতে কখন যে তোর প্রতি আমার মনে অনুভূতি জন্মাতে শুরু করে তা টেরই পাইনি৷ টের পেলাম তখন, যখন অভ্রর সাথে তোর বিয়ের ঠিক হয়ে গেলো। বুঝলাম, তোকে অন্য কারোর সাথে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। ভীষণ কষ্ট হয়। সহ্য করতে পারি না। এরপর ধীরেধীরে বুঝলাম তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছি আমি। আর এ ভালোবাসার সূচনা বোধহয় তোর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ আর দায়িত্বের কারণেই ঘটেছে। মাঝে মাঝে অবশ্য আমি কিছুটা আঁচ করতে পারতাম। কিন্তু কখনোই আমি এ অনুভূতিকে গুরুত্ব দেইনি। আমার বিবেক বলেনি এ অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে। কিন্তু অভ্রর সাথে তোর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমার বিবেক যেনো লোপ পেতে শুরু করে। মন চাচ্ছিলো, তোর সামনে গিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরে বলি, ভালোবাসি চন্দ্রিমা,তোকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু সে সাহসটুকু যোগাতে পারিনি আমি। তার উপর তোকে দেখে মনে হচ্ছিলো, তুইও অভ্রকে পছন্দ করতে শুরু করেছিস।
একদিকে বন্ধুত্ব,আরেকদিকে তোর সুখ, সব মিলিয়ে আমি পুরোপুরি নিজেকে পিছিয়ে নেই। চেয়েছিলাম সব সহ্য করে নিবো। নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, সময় যেতে যেতে সব ভুলে যাবো আমি। কিন্তু দেখ, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে কি লিখে রেখেছিলো। তোর সাথে এভাবে বিয়ে হয়ে যাবে কখনো কল্পনাই করিনি আমি। প্রথম প্রথম মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। আর তোর ঐ কষ্টে জর্জরিত মুখখানা দেখে মনে হচ্ছিলো এখনই আমি এ বিয়ে ভেঙে ফেলি। আমি ভাগ্যকে সময় দিতে চেয়েছিলাম তোকে। মনে মনে ভাবছিলাম, তুইও একসময় আমাকে মেনে নিবি, আমাকেও ভালোবাসতে শুরু করবি।
কি? ভালোবাসবি না আমায় চন্দ্রিমা?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের মুখে পুরো ঘটনা শুনে অনেকটা স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। কখনো ভাবিনি উনিও আমায় ভালোবাসেন। কখনো ভাবিনি, এ বিয়েতে কোথাও না কোথাও উনার মত ছিলো।

প্রোজ্জ্বল ভাই আমায় ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমার থুতনি ধরে মুখখানা উঁচু করে আমার দৃষ্টি বরাবর চাইলেন। আধো আধো আঁধারে উপলব্ধি করলাম, উনার ঐ দু চোখের দৃষ্টিখানা কিছু যেনো বলতে চাইছে।
উনি জিজ্ঞেস করলেন,
“ আমায় কি ভালোবাসা দিবি না চন্দ্রিমা? আমায় কি কখনো স্বামী হিসেবে মানতে পারবি না?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এ দুটো প্রশ্নে যেনো তীব্র আকুতি, আকাঙ্খা মিশে ছিলো। মন চাইলো না উনাকে ফিরিয়ে দেই। আর ফিরিয়েই বা দিবো কেনো, আজ হোক, কাল হোক, উনাকে স্বামী হিসেবে পুরোপুরিভাবে গ্রহণ করতেই হবে আমায়। তাহলে আজ থেকে নয় কেনো!
আমি মৃদু স্বরে বললাম,
“ আমি প্রথম থেকেই একটু একটু করে মেনে নিতে চেষ্টা করছি আমাকে। হয়তো খুব দ্রুতই পুরোপুরিভাবে আপনাকে মেনে নিবো। একদম মন থেকে।”

“ আজ কি পারবি আমায় মেনে নিতে চন্দ্রিমা?”

আমি নিশ্চুপ রইলাম৷ উনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোকে সম্পূর্ণরূপে নিজের করে নেওয়ার অনুমতি আমায় দিবি চন্দ্রিমা?”

প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এহেন প্রশ্নে চমকে উঠলাম আমি। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো পূর্বের তুলনায় বহুগুণ। যেনো এখনই হৃদয়খানা বক্ষপিঞ্জর হতে ছুটে পালিয়ে যাবে। উনার এ আকুতিভরা প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হলাম আমি। উপরন্তু মৌন দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি জিজ্ঞেস করলেন,
“ তাহলে কি মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নিবো আমি?”

আমি এবারও জবাব দিতে ব্যর্থ হলাম। তবে মন হতে যেনো চিৎকার করে কেউ বলতে লাগলো,
“ হ্যাঁ, আজ এই মৌনতাকেই সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নিন আপনি। ”

প্রোজ্জ্বল ভাই আর কথা বাড়ালেন না। উপরন্তু আমার দিকে এক কদম, দু কদম করে এগিয়ে আসতে লাগলেন। এক পর্যায়ে এগিয়ে আমার একদম নিকটে এসে পিছন হতে এক হাত দিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরলেন। আর কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই আমার ওষ্ঠ জোড়া আবদ্ধ করে নিলেন।
®সারা মেহেক

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here