বিষাক্ত বাঁধন পর্ব -০৩+৪+৫

#বিষাক্ত_বাঁধন
#পর্ব_৩
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন

তুসি ঘুম থেকে উঠে বাগানের দিকে চোখ গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো একটা প্রায় ১০,১২ বছর বয়স হবে এরকম একটা ছেলে বাগানে কাজ করতেছে । তুসি এগিয়ে গেলো ছেলে টার দিকে ।হালকা কেশে নিজের নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল আর সফল ও হলো ।ছেলেটা কৌতুহলবসত সামনে তাকিয়ে একটা মেয়েকে দেখে চমকে গেলো এই বাড়িতে এতদিন আসা যাওয়া কি এই মেয়ে কে তো কোনো দিন দেখে নি ।আর কখনো আরিয়ান ভাইয়ের বাড়িতে কোনো মেয়ে কে আসতে দেখেনি তাদের ফ্যামিলির মেয়ে ছাড়া। তুসি হাসিহাসি মুখ করে ছেলে টাকে জিজ্ঞাস করল কে তুমি বাবু? হ্যাঁ ,বাবু কী কন আপা আমি বাবু না আমার নাম তো রিয়ান ।তই আপনি কেডা ?কোনো দিন তো আপনারে এই বাড়িতে দেহিনাই।
এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ছেলে টার কথা শুনছিল রিয়ান এর কথা শুনছিল । ওর করা প্রশ্নের জবাবে উত্তর দিল। আমি তুসি ,ওহ সরি , আমার পুরো নাম সানজিদা আক্তার তুসি। রিয়ান তুসির নাম শুনে বলল আপা আপনার নামটা তো অনেক সুন্দর ।তুসি এই কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, তোমার নামও খুব সুন্দর ।আচ্ছা তুমি এইসব কী করছ ? এতো সকালে আসলে যে ? তোমার বাড়ি কোথায় ? তুমি নাস্তা করেছ?
রিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল । আপা একলগে এত কথা জিজ্ঞাইলে উত্তর কেমনে দিমু? আমার তো মনে থাকবোনা কী কী কইলেন?
আচ্ছা একটা একটা করে জিজ্ঞেস করি কেমন? তুমি এইসব কী করছ সকাল সকাল ।আমি ,এই যে বাগানটা পরিষ্কার করতাছি। ৩ দিন আসতে পারিনাই তাই মেলা ময়লা হইয়া গেছে । তাই আইজকা সক্কাল সক্কাল চইলা আইছি পরিষ্কার করার লাইগা।
অহ কেন কর এই কাজ টাকার জন্য ? হ্যাঁ । তই ভাই এমনেই টাকা দেয় আবার ইস্কুলের খরচ ও দেয় কিন্তু আমার কাছে সরম লাগে এমনে এমনে টাকা নিতে তাই এই কাজ করি, তই সপ্তাহে ৩,৪দিন আসি । তুসি জিজ্ঞেস করল আচ্ছা তুমি কিছু কথা শুদ্ধ আবার কিছু আঞ্চলিক বলতেছ কেন?
আপা আমি নতুন ইস্কুলে ভর্তি হইচি তাই কিছু কিছু পারি আর সবডা পারি না ।আর কইদিন যাইলে ইস্কুলে সব পারমু । খুব ভালো । আচ্ছা এই ঝুড়ির ফুলগুলো কী করবে ।
এইসব মালা বানাইয়া বেচমু ।
ওয়াও, তাই নাকি ? আমাকে মালা বানিয়ে দিবে ?
আচ্ছা ১০ মিনিট দেন আপা এক্ষুনি বানিয়ে দিতাছি । তুসি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল আচ্ছা ঠিক আছে ।রিয়ান সুই -সুতা দিয়ে মালা বানানো শুরু করল । ওর কাছে সুই, সুতা হব ছিল । রিয়ান মালা বানাচ্ছে আর তুসি গালে হাত দিয়ে তা দেখছে । সত্যি ১০ মিনিটের মধ্যে কয়েকটা মালা বানিয়ে ফেলল রিয়ান । তুসি এক এক করে মালাগুলো একটা একটা গলায় একটা হাতে আর একটা মাথায় মুকুট এর মতো পরে নিল ।
বাহ ,আপা আপনারে তো মেলা সুন্দর লাগতাছে । তুসি প্রাণ খুলে হাসতেছে, ও জানতেই পারলোনা কেউ একজন মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছে সে আর কেউ না আরিয়ান।
প্রত্যেক দিনের রুটিন অনুযায়ী আরিয়ান ঘুম থেকে ওঠে কফি খেতে খেতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখছিল। এতক্ষণ ধরে রিয়ান আর তুসির কার্যকলাপ দেখছিল । কাউকে এমন ঘুম ঘুম চোখে আর এলোমেলো চুলেও যে এত অপরূপ সুন্দর লাগে তা আরিয়ান এর জানা ছিল না আর তার সাথে ফুলের মালার গহনাতে যেন কোনো রাজ্যের অপরুপ রাজকন্যা ।ঠোঁটের হাসিটাই যেন কমতি ছিল সেটা যোগ হওয়ার পর সৌন্দর্য যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলো।

কতো মেয়ে কে দেখছি অনেক এর সাথে কাজ করেছি কি কখনো তো কাউকে এত সুন্দর লাগেনি । এত মুগ্ধ হইনি কারো হাসিতে আজ কেমন এমন লাগছে আমার ।বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠছে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে । এমন কেন লাগছে? ছি ছি কী ভাবছি আমি এসব। মেয়ে টা আসার পর থেকেই আমি কী সব পাগলামু করছি । না না আমাকে আমার লক্ষ্য ভুলে গেলে চলবে না । যেই উদ্দেশ্যে নিজেকে এত বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছি সেটা ভুলে গেলে চলবে না। নিজেকে ম এইসব বুঝিয়ে দ্রুত বারান্দা ত্যাগ করল আরিয়ান।

🌸🌸🌸

পুলিশ স্টেশনে থানার বসে আছে আশরাফ খান। তৌহিদ হন্তদন্ত হয়ে এসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল ,
আই এম সো সরি , খান সাহেব আসলে একটা কাজে আটকে ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গেলো। কিছু মনে করবেন না।

খান সাহেব গম্ভীর গলায় বলে উঠল ইট’স ওকে । আমার মেয়েটার কোনো খোজ পাওয়া যায় নি কেন এখনো আর কত সময় লাগবে । যত টাকা লাগবে দিতে রাজি আমি । আমার মেয়ে কে আমার কাছে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন জলদি

দেখুন খান সাহেব আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমাদের যা করার তা আমরা অবশ্যই করব । অমরা লোক লাগিয়ে দিয়েছি চারদিকে খুব তারাতারি পেয়ে যাবো আমরা তাকে।

পুরো একটা দিন পার হয়ে গেলো এখনো আপনারা কোনো খবরই আমাকে দিতে পারেননি ।
চিন্তা করবেননা কিডনাপাররা যত চালাকই হোক না কেন আমরা ঠিক খুজে বের করব ওঁদের। কিন্তু আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার ছিল ।
বলুন
আপনার কী কখনো কোনো শত্রু ছিল বা আছে ।
না আমার জানা মতে কোনো শত্রু নেই ।

আমার মনে হচ্ছে এইটা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়েছে । আপনি ভালো করে ভেবে চিন্তে বলুন

আমি বলছি তো আমার কোনো শত্রু নেই । নিশ্চয় কেউ টাকার জন্য এমন করেছে । টাকা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই যত বলবে আমি তাদের দিতে রাজি। আমার মেয়েটার যেন কোনো ক্ষতি না হয় ।

দেখুন তারা কী করবে না করবে সেটা আমি জানিনা তবে আমার কর্তব্য আমি পালন করব।কী নিবেন বলুন ঠান্ডা না গরম ?

কিছুই না আপনি আপনার কাজটা করলে আমি বেশি খুশি হব । আজ আসি তবে খুব জলদি যেন সুখবর । আল্লাহ হাফেজ।।

🌸🌸🌸

রিয়ান চলে গেছে প্রায় দু ঘণ্টা আগে তুসি মন খারাপ করে বসে আছে। রিয়ান এর সাথে এতক্ষণ থেকে আনন্দে থাকলে ও এখন আবার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। ভাবা যায় পুরো একটা রাত আর দিন মাকে আর বাবাকে দেখেনি ভিবতেই কান্না পাচ্ছে তুসির তাই তো সার্ভেন্ট সকাল এর নাস্তা দিয়ে যাওয়ার পরও করেনি সে । একা একা নাস্তা করার অভ্যাস নেই । সবসময় মা বাবা এমনকি ছকিনা আন্টি (তুসি দের বাড়ির কাজের লোক তবে খুব আপন মনে করে) তারা সবাই এক সাথেই নাস্তা করত বাড়িতে। এমন সময় দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো…
চলবে…..

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।

#বিষাক্ত_বাঁধন
#পর্ব_৪
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন।

একজন মহিলা সার্ভেন্ট এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তুসি কে ভদ্রভাবে বলল ম্যাম আপনি নাস্তা করেননি কেন? স্যার জানলে বকবেন আমাকে । নাস্তাগুলো টেবিলে একিভাবে পড়ে আছে দেখে এই প্রশ্ন টা করল সে।

আমার ইচ্ছে করছে না।
কিন্তু….
আমার একা একা খেতে ভালো লাগে না। আচ্ছা তোমাদের স্যার এর কী পরিবারের আর কেউ নেই? একা থাকে?

সরি ম্যাম ,আমাদের কাউকে স্যার এর পারসোনাল ব্যাপারে বলা বারন আছে।

কী খাজানা লুকিয়ে রেখেছে নিজের জীবনে যে কাউকে বলা বারন,বলেই মুখ ভেংচি দিল।
মেয়ে টি হেসে ফেলল তুসির এমন বাচ্চামো কথায় ও মুখ ভেংচি কাটাতে।

আচ্ছা এইটা কী ঠিক করেছে তোমাদের স্যার এ?মুখচা কাদোঁকাদোঁ করে বলল তুসি
কোনটা ম্যাম?
এই যে আমাকে আটকে রেখেছে তার উপর আমাকে জামাকাপড় কিছু দেইনি ,আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে কিন্তু আমি মায়ের কাছে যেতে পারছি না অন্তত ফোনে একটু কথা বলিয়ে দিলে ও তো পারে তাই না বলো। কোনো দিন আম্মু কে ছাড়া এতক্ষণ থাকিনি।
আচ্ছা তুমি বল আমার মতো এত ভালো একটা মেয়ে কারো কোনো ক্ষতি করতে পারে?

না ।একদমই না আপনিত কতো ভালো।
তাহশে বল ওনার কী ক্ষতি করেছি যে আমায় আটকে রেখেছে?
সেটাতো আমি জানিনা । স্যার জানেন ।

আমার কাপড়চোপড় নেই ফ্রেশ হয়ে কী পর…

“রেডি হয়ে নাও মার্কেটে নিয়ে যাবো ” আরিয়ান চৌধুরি এতটা গরিব না যে একটা মেয়েকে কাপড় কিনে দিতে পারবেনা। নিজের কাপড় নিজে পছন্দ করে নিবে । বলেই আর এক মুহূর্ত দাড়াঁলোনা আরিয়ান চলে গেছে।

হঠাৎ দরজার কাছ থেকে আরিয়ানের কন্ঠের আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে গেল তুসি।
আমি কত কথা বলেছি । লোকটা শুনে ফেলেছে? শুনেছে ভালো হয়েছে । না শুনলে আমায় জামা কী করে কিনে দিত?এই ভেবে খুশি হল তুসি।

🌸🌸🌸

রাস্তায় হাটার সময় হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল তাসিন। পরপর আরো একটি দেহ তার উপর পড়ল।

ওমাগোরে! আল্লাহ বাঁচাও। কোন চাইলের বস্তা আমার উপর ঢাললা আল্লাহ্ ? হঠাৎ সামনে তাকিয়ে ওর কথা বন্ধ হয়ে গেলো।

চোখে চশমা পড়া একটা মেয়ে ওর উপর পড়েছে।

আমার উপরে আরো থাকার ইচ্ছা আছে নাকি?
তাড়াহুড়ো করে তাসিন এর উপর থেকে উঠে গেলো তাহিয়া ।
সরি, আমি দেখিনি।
তা দুই চোখের উপর আরো দুই চোখ লাগিয়েও বুঝি দেখতেন পাচ্ছেন না?
আপনি আমায় অপমান করছেন ?
নাতো অপমান কাকে বলে?ভাবুক হয়ে বলল
আপনি,, আপনি একটা বদ,অসভ্য ,লোক ।রাগে কিরমির করতে করতে বলে উঠল তাহিয়া।
তাসিন এর মেয়েটার ঝগড়া করে মজাই লাগছে । তাই মিটমিটিয়ে হাসল ,,,
তাহিয়ার রাগে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তাসিন এর হাসি দেখে
আপনি,,,,,,”এই তাহিয়া ওইখানে কি করছ ক্লাস শুরু হয়ে যাবে আয় তাড়াতাড়ি”।বান্ধবীর কথায় তাহিয়ার হুশ এলো ।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আফসোস করে বলল আরে তাইতো ক্লাস তো শুরু হয়ে যাবে। দ্রুত গতিতে সেখান থেকে বান্ধবীর দিকে রওনা হলো। যাওয়ার আগে অবশ্যই তাসিন কে একবার চোখ রাঙিয়ে গেলো।তাসিন তা দেখে আরো জরে হেসে উঠল।
আরে আমাকেত ভাই ১০ মিনিটে যেতে বলেছে এখনতো ২০ মিনিট হয়ে গেছে। দূর বাল সবসময় ভাইয়ের কাছে যাওয়ার সময়ই কেন লেট হতে হবে ।

🌸🌸🌸

আর কতক্ষণ বসে থাকবো ? তুসের প্রশ্নে আরিয়ান মোবাইল থেকে মাথা উঠিয়ে তুসির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল যতক্ষণ আমি চাইবো

মানে ।

মানে কিছু না চুপচাপ বসে থাকো ।
তুসি মনে মনে বলল আরে সেই কখন থেকে এইভাবে বসে আছি বলছিল মার্কেটে নিয়ে যাবে ।৩০ মিনিট হবে বসিয়ে রেখেছে উফফফ্ …..
সদর দরজা দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসতে আসতে বলে উঠে ভাই ,ভাই চইল্লা আইছি মুই ।

হ্যাঁ , এসেছিস তো ঠিক তবে, ৩০ মিনিট লেট করে বলেই ওর কান টেনে ধরল আরিয়ান ।

ভাই ভাই মাপ কইরা দেন পিলিজ..পিলিজ….

তাসিন এর কথায় মুচকি হেসে উঠল আরিয়ান। তুই না বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছিস ? এইসব কোন ধরনের ভাষা?

ভাই এগুলো হলো আমাগো সংস্কৃতি, ভাষা । তো এগুলার ব্যবহার করা আর বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব ও আমাদের । নাহলে ভাবো সবাই যদি শুধু শুদ্ধ ভাষাই বলে তো এইসব আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার কমে যাবে হয়ত হারিয়ে যাবে আমাদের সংস্কৃতি থেকে।

হয়েছে। তোকে আর ভাষা নিয়ে গবেষণা করতে হবে না। এইসব ভাবনা যদি কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতি তাহলে আমার ব্যাবসা আরো উন্নতি হতো ।
ভাই তুমি এইড়া কইতে পারলা আমি তো মন,জান,পরান সব দিয়া দিছি সুধু তোমার ব্যাবসা উন্নতি করার লাইগা। তার পরও তুমি আমায় এতো বড় অপবাদ দিতে পারলা ।কথা শেষে মিছে মিছে চোখ মুছার অভিনয় করলো তাসিন। তখনই তাদের কিছুটা দূরে একটা মেয়েকে তাদের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকতে দেখলো । মনে মনে কিছু একটা ভেবে লাফিয়ে উঠে আরিয়ান এর কাছে গেলো আর খুশি মনে বলল বাহ ভাই বাহ মাশাআল্লাহ ভাবি তো একদম পরির মতো সুন্দরী । আমাকে তুমি পর ভাবো তাইনা নয়তো আমাকে না জানিয়ে বায়ে করে ফেললে ।
তোর দুই লাইন বেশি বোঝার স্বভাব কবে যাবে বলত?
কি করেছি আমি?
এত বেশি ভিবতে কে বলেছে তোকে ।
তাহলে হবু ভাবী তাইতো ।যাই পরিচিত হয়ে আসি ।
হবু ভাবী,, হবু ভাবী ,, বলতে বলতে তুসির সামনে এসে হাসি মুখে বলল আমার নাম তাসিন । আমি আপনার একমাত্র হবু দেবর ।
এতক্ষণ ধরে দুই ভাইয়ের কথাবার্তা শুনছিল তুসি ।তসিন এর কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। হবু ভাবি সে আর তার হবু দেবর এনি ।।
তাসিন তুই চুপ করবি । উনি সুধু আমাদের গেস্ট। আর কিছু না । চল এখন ।
সত্যি। ক,,কিন্তু,,,
কোনো কিন্তু নয় চল । একেতো দেরি করে অসছে তার উপর এখন ভাষা,ভাবি নিয়ে গবেষণা করতে বসছে বকতে বকতে আরিয়ান বাহিরে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়াল ।
আরিয়ান এর পেছন পেছন তুসি তাসিন ও গেলো গাড়ির কাছে ।
ড্রাইভিং সিটে আগে থেকেই বসে ছিল রাজ ওর পাশে আরিয়ান বসলো ।
তাসিন আর তুসি কে পেছনে বসতে বলে।
রাজ গাড়ি স্টার্ট দিল।
তাসিন তুসির সাথে ভাব জমানোর উদ্দেশ্যে ওর নাম জিজ্ঞেস করলে তুসি বলে যে ওর নাম তুসি।
শুধু তুসি? আগে পরে আর কিছু নেই?
আ….ব হ্যাঁ আছে । আমার পুরো নাম সানজিদা আক্তার তুসি
তোমার আর আমার একটা মিল কী জানো?
কী?
তোমার নামও ত দিয়ে শুরু অর আমার নাম ও ত দিয়ে শুরু। তাসিন,তুসি । না ,,না শুধু একটা না দুইটি শব্দের মিল ,’ ত’ আর ‘স’।
হ্যাঁ তাইতো।
আচ্ছা আমাকে ভয় পাবে না ‘বি কম্পোর্টেবল ওকে?’
তুসি হাসাহাসি মুখে বলল ওকে।
তুমি কোন ক্লাস এ পড়ো?
ইন্টার ফাস্ট ইয়ার ।
মানে তুমি কলেজে পর তাইতো?
হুম।
তোমাকে দেখলে মনে হয় যে ক্লাস 9-10 এ পড়। দেখতে পিচ্ছি পিচ্ছি।
আচ্ছা আপনি কিসে পড়েন?
আমার পড়াশোনা শেষ বুঝলে এখন ভাইয়ের সাথে আমাদের ব্যাবসা দেখছি ।
ওহ তাই ?
হুম ।
ভাইয়া আমি তো আপনার ছোটো ভোনের মতো তাইনা ?
হ্যাঁ ,,হ্যাঁ ।
তাহলে আমার একটা উপকার করবেন?
কী বল?
আমাকে আপনার ফোনটা একটু দিন আমি আম্মু র সাথে কথা বলতাম।কথাটা একটু আস্তে করে বলল তুসি যাতে আরিয়ান না শুনতে পায়।
তাসিন বলল হুম ,অবশ্যই কেন নয়? নাও।

“কী ফুসুর- ফুসুর করতেছোত দুজনে”?

চলবে???
আসসালামুআলাইকুম। বেশি করে রিয়্যাক্ট ,কমেন্টস করবেন। আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে গল্প লিখতে ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।

#বিষাক্ত-বাঁধন
#পর্ব-৫
#অনামিকা-জাহান_জাফরিন ।

“তোমরা দুজনে কী ফুসুরফুসুর করতেছো”?

কী,,কিছু না । আমরাতো পরিচিত হচ্ছিলাম ।
।তুসির কথার সাথে তাসিন ও সুর মিলিয়ে বলল, হ্যাঁ ,হ্যাঁ ভাই আমরা পরিচিত হচ্ছিলাম ।জানো তুসির আর আমার নামের প্রথম দুইটি অক্ষর মিল আছে।
দুই বাচাল একসাথে হলে যা হয় আর কি ।বিরবির করে বলল আরিয়ান। ওর কথা শুনে রাজ ঠোঁট চেপে হাসল।
কিছুক্ষণ পর গাড়ি একটা বিশাল শপিংমলের সামনে দাঁড় করিয়েছে রাজ।
একে একে রাজ আর তাসিন গাড়ি থেকে বেরিয়ে এগিয়ে গেল শপিং মলের দিকে, কিন্তু তুসি যেতে পারছে না ,যাবে কী করে ওর সাইডের দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ান।।
রাজ ,তাসিন চোখের আড়াল হলে আরিয়ান গাড়ির দরজা থেকে সরে নিজেই দরজা খুলে দেয়। তুসি বেরিয়ে আসলে ওকে গাড়িরসাথে চেপে ধরে আরিয়ান বলে, তাসিন এর সাথে এত কথা কিসের তোমার?
ক..কী..করছেন?
আরিয়ান এর রাগ লাগছে খুব তবে কেন জানা নেই ওর ।তবে কী তুসি তাসিন এর সাথে কথা বলছে যে এইজন্য রাগ লাগছে ?
দূর কিসব ভাবছি আমি। মনের কথা মনে রেখে মুখে বলল তোমাকে শপিং মলে নিয়ে এসেছি তার মানে এই না যে তুমি পালিয়েযাওয়ার চেষ্টা করবে বা তোমার ফ্যামিলির কাছে কল করার চেষ্টা করবে,,,যদি এমনটা কর তবে মনে রেখ তোমার কপালে দুঃখ আছে।। আশা করি বুঝতে পারছ আমি কী বলতে চাইছি?
হ্যাঁ,,হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি আমাকে ছাড়ুন প্লিজ লাগছে আমার।
আরিয়ান সাথে সাথে ছেড়ে দাল ওকে তবে তুসির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভেতরে।
তুসি মনে মনে ভাবছে লোকটা এমন রেগে গেলো কেন? আর হাত ধরার কী আছে অমি কী যেতে পারবনা নাকী ।বিরবির করে বলল খারাপ লোক ,,,
তুসির কথা ঠিকি শুনতে পেয়েছে আরিয়ান তবে ওর রাগ লাগছেনা এই কথা শুনে বরং খুশি লাগছে তাইতো তার ঠোঁটের কোনে এক টুকরো হাসির দেখা মিলছে ।নিজের প্রতি নিজে অবাক আরিয়ান। এই মেয়ে কি তবে ওর মনে জায়গা করে নিয়েছে?অদ্ভুত!!

🌸🌸🌸

ক্লাসে স্যার পড়িয়ে যাচ্ছেন তবে তাহিয়ার মন সেই দিকে নেই থাকবেইবা কি করে যার সাথে ক্লাস করত ও সুখ, দুঃখ ,আনন্দ ভাগ করত সেই মানুষটাইত আজ তার পাশে নেই।
কিরে তাহিয়া তর কি কারনে মন খারাপ?
তুসির জন্য। জবার কথায় মন খারাপ করে উত্তর দিল তাহিয়া।
কি হয়েছে আমাদের বোকারানির?
ওকে দুই দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিহহ?
হ্যাঁ রে ওকে ছাড়া আমার ক্লাসে একদম ভালো লাগে না ।আর তা ছাড়া ও ও বড্ড বোকা,সহজ সরল।
না জানি কোনো খারাপ মানুষের কবলে পড়েছে নাকী এইটা ভেবে আরো বেশি ভয় লাগছে।
আল্লাহ্ ভরসা চিন্তা করিস না ।আল্লাহ নিশ্চই এর সমাধান করবেন।
হুম।
এই তাহি তোর হাতে কি হয়েছে রে?
জবার প্রশ্নে ঘাবড়ে গিয়ে তড়িঘড়ি করে হাত ওড়নার ভেতর লুকিয়ে ফেলল তাহিয়া।
জবা কিছুক্ষন চুপ থেকে দুঃখি কন্ঠে বলল আজও তোর গায়ে হাত তুলেছে না ওই ডাইনিটায়?
জবা এইগুলো কিসব কথাবার্তা?
তুই চুপ কর তো ডাইনি কে ডাইনি বলবনাত কি বলব।
দেখি হাত দে এই বলে তাহিয়ার হাত ধরে ওকে নিয়ে স্যার এর অনুমতি নিয়ে বাইরে চলে গেলো জবা উদেশ্য একটাই তাহির হাতে মলম লাগানো এর জন্য ফার্মেসি তে যাবে।
(জবা,তাহিয়া আর তুসি ওরা তিনজন খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। একে অপরের প্রাণ। সবসময় তিন জন একসাথে ঘুরে, ফিরে আনন্দ করে আর দুইদিন ধরে তুসি নেই ।জবা আর তাহিয়া এই দুই দিন কলেজে আসেনি তাই জানেনা । তাহিয়া আজ তুসিদের বাড়িতে গিয়েছিল ওকে ডাকতে তাই শুনতে পেয়েছে যে তুহি দুইদিন ধরে মিসিং।জবা খুব সাধারণ ফ্যামিলির মেয়ে হলেও খুব সুখ তাদের পরিবারে তবে তাহিয়া যখন খুব ছোট বয়স আনুমানিক ৯ বছর তখন ওর মা মারা যায়। বছর ঘুরতে বাবা বিয়ে করে ঘরে নতুন মা আনে । প্রথম প্রথম সেই মা আদর যত্ন করলেও পরে যখন নিজের সন্তান জন্ম নেয় তখন থেকে আর তাহিয়াকে দেখতে পারে না । দিনে দিনে তা চরম আকারে পৌছায় । একসময় হতে ওর গায়ে হাত তুলতেও পিছপা হয় না ।তবে তাহিয়া কখনো প্রতিবাদ করে না । যা বলে তাই মেনে নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। কাল রাতে তাহিয়ার রান্না করা খাবারে লবনের পরিমান কিছুটা বেশি হলে সেই খাবার ওর গায়ে ফেলে দেয় ওর সৎ মা । তারই ফলশ্রুতিতে ওর হাত পুড়ে যায়। না খেয়ে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। সকালে তড়িঘড়ি করে কলেজে আসার জন্য বের হয়ে গিয়েছিল তাই আর মলম লাগানো হয় নি হাতে। এই জন্য তুসি, জবা ওর সৎ মা কে একদমই পছন্দ করে না। ওর খেয়াল রাখে ওরা। বাড়িতে যতই অত্যাচারিত হোক না কেন বান্ধবীদের সান্নিধ্য এলে ওদের ভালোবাসা পেয়ে হব ভুলে যায় । )

🌸🌸🌸

তাসিন থেকে মোবাইল নিয়ে আরিয়ান এর আড়ালে সেই মোবাইল থেকে বাবার কাছে কল করে তুসি । পর পর দুই বার রিং হওয়ার পরে ও বাবা কল ধরছে না দেখে কান্না করে দিল তুসি । কত সাহস করে তাসিন কে বুঝিয়ে আরিয়ান এর আড়ালে ফোনটা নিয়ে এসেছিল বাবার কাছে কল করার জন্য কিন্তু ওর বাবায় কল ধরছে না দেখে খুব খারাপ লাগছে। অবশেষে তিন বার রিং হওয়ার পরে কল রিসিভ করেছে ওর বাবা।
আব্বু …….
কে ?আমার তুসি মামনি । ত..তুই কোথায় আছিস? বল আমাকে। এরকম অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছেন আশরাফ খান কিন্তু কান্নার কারনে তুসি কিছুই বলতে পারছেনা। ছোট থেকেই এমন ও মা বাবার সামনে বেশি ইমোশনাল হয়ে যায়। আশরাফ তো জানেন মেয়ের স্বভাব তাই মেয়েকে শান্ত করতে নানা কথা বলছেন তিনি । মামুনি তুমি আমাকে বল কোথায় তুমি ?না হলে আমি তোমাকে কি করে নিয়ে আসব বল?কি কি হয়েছে বলো আমাকে । কিন্না থামাও।
আব…. আব্বু আমাকে একটা লোক তুলে নিয়ে এসে ওনার বাড়িতে আটকে রেখেছে। এখন শপিং মলে নিয়ে এসেছে জামা কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য। প,,প্লিজ আমাকে নিয়ে যাও। তোমাদের ছাড়া আমি থাকতে পারবনা । হেচকি তুলতে তুলতে এই বলে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল তুসি। ।
আমি নিয়ে আসব তোমাকে মামনি । আমার মাটাতো গুড় গার্ল। একদম কান্না না হ্যাঁ বাবা খুব তারাতারি পিয়ে আসব তোমায় ততদিন গুড় গার্ল হয়ে থাকবে কেমন?
আচ্ছা ,কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারবনা ।
আচ্ছা এখন এইটা বল তুমি কোন জায়গায় আছো?
আমিত জায়গা চিনি না ।
আরে শপিং মলের নাম দেখত?
আচ্ছা ,,ঠিক তখনই তুসির হাতের মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে নিল আরিয়ান।
ওকে দেখে তুসি ভয়ে কাঁপতে লাগলো ।
রাগে আরিয়ান ফোঁস ফোঁস করছে কপিলের রগগুলো ফুলে উঠেছে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে বুঝাই যাচ্ছে অনেক রেগে আছে সে।
তুসি ভয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করল। ।
বজ্র কন্ঠে আরিয়ান বলে উঠল,তোমার সাহস কি করে হয় আমার কথা অমান্য করার? ভেবেছিলাম তোমার সাথে কিছুই করবনা কিন্তু তুমি বোধ হয় চাইছ আমি তোমার সাথে খারাপ কিছু করি । ওয়েল, এইবার বুঝতে পারবে এই আরিয়ান চৌধুরি কি জিনিস। এই বলে তুসির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে তাসিন এর মোবাইল থেকে সিম কার্ড খুলে ভেঙ্গে দিয়ে মোবাইল টা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলল ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করল।
রাজ আর তাসিন কে ফেলে গাড়ি চালাতে শুরু করল গাড়ির পেছনে ফেলে গেলো দুই বিস্মিত মুখ। একজন তাসিন আর একজন রাজ। গাড়ি দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেলো মুহূর্তেই আর ওরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিলল।
কী হল এটা ভাই এত রেগে গেলো কেন?না জানি মেয়েটা কি এমন করেছে যে এত রেগে গেছে।
হ্যাঁ রে । না জানি মেয়েটার ভাগ্যে কি আছে ।রাজ এর কথার সমর্থনে তাসিন বলে উঠল।
৩ নম্বর মোবাইলটা ও শেষ। আমার এতো সাধের মোবাইল কোনো দিন আমি হাত থেকে ও ফেলিনি ।আহাজারি করে বলল তাসিন।

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here