বিষাদের রঙ নীল : পর্ব-৪

বিষাদের রঙ নীল (পর্ব-৪)
অলিন্দ্রিয়া রুহি

-তোমার হয়েছে টা কী! বলো তো!

চয়নের প্রশ্ন শুনে তূজা মনে মনে হাসল। আমার কী হয়েছে, তা জেনে তোমার কী প্রয়োজন চয়ন? আমি কী আদৌও কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তোমার জন্যে?- কথাগুলো মনে মনে আওড়ালো সে। খেয়েদেয়ে কিছুক্ষণ আগেই ঘরে এসেছে চয়ন। তূজা ঘুমের ভান ধরে শুয়ে ছিল, কিন্তু চয়ন বুঝতে পেরেছে সে জাগনা। তাই প্রশ্নটি করেছে। চোখ মেলে তাকাল তূজা। মুখের উপর চয়নের চিন্তিত মুখটা দেখে তার হাসি পেল আবারও। সে কী আসলেই তূজার জন্য চিন্তিত? নাকি নিজের জন্য? বলে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ!

তূজা পাশ ফিরল। হালকা গলায় বলল,

-কই! কী হবে!

-লুকিয়ো না। রাতেও খেলে না। আসার পর থেকে দেখছি চুপচাপ হয়ে আছো। কী হয়েছে না বললে বুঝব কেমনে? আচ্ছা, ফোনে রাগারাগি করার কারণে রাগ করছ? এই যে আমি সরি বললাম… এই তূজা,দেখো সরি বলছি কিন্তু।

তূজার শরীরের উপর হাত রাখল চয়ন। তূজা হাত সরিয়ে দিল। উঠে বসল চয়নের মুখোমুখি হয়ে।

-সবকিছু আদৌও সরিতে সমাধান হয় কী চয়ন? ধরো, আমি কাউকে খুন করলাম, তারপর বললাম সরি। তাতে আমাকে মাফ করে দিবে জর্জ?

-কী আজব! তুমি কীসের সাথে কীসের লজিক দেখাচ্ছো! আমি একটু রাগারাগি করছি, এর সাথে খুনের কী সম্পর্ক!!

-আছে সম্পর্ক। তুমিও খুন করেছো চয়ন।

চয়ন চমকে উঠল।

-মেজাজটা খারাপ কইরো না তূজা। আমি খুন করছি মানে!! তোমার মাথার তার ছিঁড়ে গেছে মনে হচ্ছে।

-হ্যাঁ, ছিঁড়ে গেছে। এই যে এই কাগজটা দেখার পর থেকে আমার সবকিছু ছিঁড়ে গেছে। আমার মন খুন হয়েছে… নির্মমভাবে খুন হয়েছে। আর এর হত্যাকারী তুমি চয়ন.. তুমি!!

হাতের মুঠোয় ভাঁজ করে রাখা কাগজটা চয়নের দিকে ছুঁড়ে মেরে উঠে দাঁড়াল তূজা। তার দুর্বলতা সে প্রকাশ করতে চাইছে না, তবুও চোখ ভেঙে পানি আসছে। এরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে শক্ত রাখা কী আসলেই সম্ভব??
চয়ন কাগজটি নিল না, পড়ার দরকারও হলো না। শুধু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। এই কাগজটি লিন্ডা দিয়েছিল তাকে, একটা ফাইলে ঢুকিয়ে। মনের ভুলে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিল চয়ন, আর যার ফলাফল আজ ঘরে অশান্তি!! শিট, শিট, শিট!
এরকম ভুল কী করে করতে পারল চয়ন? চয়ন মনে মনে বেশকিছু দুর্বোধ্য গালি দিল নিজেকে নিজেই…

তূজার দিকে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকাতেই তূজা কঠিন গলায় বলল,

-একদম বাহানা করবে না যে এই কাগজ তুমি চেনো না। বা এসবের কিচ্ছু জানো না। নিজেকে সাধু প্রমাণ করবে না চয়ন, খবরদার। তুমি সাধু নও!!

-একটা কাগজে কী উল্টোপাল্টা লেখা আছে, তার ভিত্তিতে তুমি আমাকে সন্দেহ করছ তূজা!

-তুমি তো কাগজটা খুলেও দেখলে না, অথচ বুঝে গেলে কী লেখা আছে?

ঢোক গিলল চয়ন। নিজেকে শান্ত আর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল।

-না মানে, অনুমান করছি আর কী! উল্টোপাল্টা না লেখা থাকলে তো তুমি এতোটা রিয়েক্ট করতে না!

তূজা অল্প একটু হাসল। এগিয়ে এসে চয়নের বাম কানে জোরে ডলা দিল। চয়ন ‘আও’ বলে দূরে সরে বসল। কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। তূজা আবার আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চয়ন বলল,

-আমি তোমার স্বামী তূজা! বিহেভ ইউর সেল্ফ!

-হুম, বিহেভ মাই সেল্ফ! এই যে, এটা কী?

তূজার আঙুলের ডগায় হালকা খয়েরী রঙ। খুবই হালকা। এইবার চয়ন শিউরে উঠল ভেতরে ভেতরে। নিশ্চিয়ই ঘুমের ভেতর কানে চুমু খেয়েছিল লিন্ডা। অথচ অন্ধ চয়ন সেটা দেখতেও পায়নি এতক্ষণ যাবত! বৃষ্টিতে ভিজলো, গোসল করল তাও গেল না এই লিপস্টিকের দাগ! কোন কোম্পানির লিপস্টিক, আল্লাহই ভালো জানেন।
চয়ন বিরক্তি প্রকাশ করল। সেই সাথে এটাও বুঝে ফেলল, তূজার সঙ্গে সংসার জীবনের এখানেই ইতি ঘটবে বোধহয়। তূজাকে যতটুকু চেনে সে, অন্যায়কে সহ্য করার মতো মেয়ে ও নয়!!

চয়নকে নিশ্চুপ দেখে পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে এলো। সে হাসতে শুরু করল। চয়নের বুকের উপর চেপে থাকা পাথরটা সরে গেল। তূজা নিশ্চয়ই মজা করে তাকে ভড়কে দিতে চাইছে। ভুজুংভাজুং দিয়ে বোঝানো যেতে পারে।

চয়ন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

-কোনোকিছু থেকে রঙ লেগেছে বোধহয়!

-রং? নাকি লিপস্টিক? আমাকে বোকা ভাবো তুমি?

-লিপস্টিক! কীসব বলছো তুমি!

-একদম ন্যাকা সাজবে না চয়ন। আমি বোকা নই। আমার কপালে গাধা উপাধী লেখা নেই।

তূজার মুখ থেকে হাসি হাসি ভাবটা কেটে গেছে। চোখ দুটো ছলছল করছে। কার্নিশ উপচে পানি পড়ার চেষ্টা, তূজা শক্ত করে জল আঁটকে রেখেছে। কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর শরীরে লিপস্টিকের দাগ পায়, তখন তার বুকের ভেতরে কীরকম হাহাকার করে? ভুক্তভোগী ছাড়া এই যন্ত্রণা আর কেউ বোঝার নয়! চয়ন বুঝতে পারল, তার কুকীর্তি ফাঁস হয়ে গেছে। এখন আর চাইলেও তূজাকে কিছুই বোঝানো যাবে না। তাই সে শক্ত কণ্ঠে বলল,

-হ্যাঁ, এটা লিপস্টিকের দাগ, আর ওই কাগজটাও আমাকেই দিয়েছে। তাতে কী হয়েছে?

-এসব নর্মাল ব্যাপার তোমার জন্য তাই না?

-হুম, নর্মাল। বিয়ে করছি, তার মানে এই না যে কাউকে ভালো লাগতে পারবে না!

তূজা চোখ মুছল।

-আমিও দেখব, তোমার এই ভালো লাগা কতটুক সময়ের জন্যে। এই বাড়িটা এখনো আম্মার নামে। সে যদি এসব জানে তোমার অবস্থাটা কী হবে? একবার ভাবছ? আমি কিছুই করব না, যা করার আম্মা করবে।

বিছানার উপর কাগজটা পড়েছিল, তূজা যেই না ওটা তুলতে যাবে, তার আগে চয়ন ওটা তুলল এবং এক টানে ছিঁড়ে ফেলল। তূজা পলক ফেলতে পারল না, কাগজটি কুচিকুচি করে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল চয়ন। তারপর বিদ্রুপ ভরা ঠোঁট নাড়িয়ে বলে উঠল,

-এখন? কী প্রমাণ আছে তোমার কাছে?

তূজা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইল। এই একে ভালোবেসে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়েছিল একদিন সে! ছিঃ ভাবতেই নাড়িভুড়ি উল্টে আসছে। ইচ্ছে করছে চাকু দিয়ে কুচিকুচি করে ফেলতে চয়নের পুরো শরীর। তারপর সেই মাংস কুকুরকে খাওয়াতে… তবে যদি একটু শান্তি নামতো মনের কুঠুরিতে!

তূজার মাথায় আসলো, বহ্নিকে সে এই কাগজ দেখিয়েছিল। এর মানে বহ্নি সাক্ষী আছে! বুদ্ধিটা উপস্থিত হতেই তূজা দৌড়ে ঘর ছাড়ল। তার পিছুপিছু চয়নও এলো।

মমতাজ বেগম ডাইনিং টেবিলে বসে পান চিবুচ্ছেন। বহ্নি আর কনকও রয়েছে। তূজা গিয়েই মমতাজ বেগমকে জড়িয়ে ধরল শক্ত হাতে। মমতাজ বেগম মৃদু চমকালেন। তূজার ফোঁপানি শুনে অবাক চোখে চয়নের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন,

-কী হয়েছে মা! চয়ন, বউমা কাঁদছে কেন? কী বলেছিস তুই ওকে? ওর গায়ে হাত তুলিসনি তো?

-না আম্মা! আমি কিছুই করি নাই। তোমার বউ মায়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কীসব আবোলতাবোল বকতেছে। তুমিই সামলাও।

-বউমা, কী হইছে? আমাকে বলো মা। আমাকে না বললে আমি কীভাবে বুঝব?

তূজা কান্না থামাতে পারল না। তার বুকের মধ্যে যে ঝড় শুরু হয়েছে, তা এত সহজে থামবার নয়। ক্রন্দনরত অবস্থাতেই সে টেনে টেনে বলল সবটা। সব শুনে বিস্ফোরিত চোখে চয়নের দিকে তাকাতেই চয়ন ইনোসেন্ট কণ্ঠে বলে উঠল,

-আরে বিশ্বাস করো আম্মা! তুমি আমারে চেনো না? আমি এসব করি নাই! ওর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি আসার পর থেকে ওর যন্ত্রণায় শান্তি পাচ্ছি না। ও যদি আমার সাথে সংসার করতে না চায়, তাহলে না করবে। তাই বলে এসব উল্টাপাল্টা কথা কেন ছড়াইতেছে?

তূজা বলল,

-আমি উল্টাপাল্টা বলতেছি? আচ্ছা, ঠিক আছে। বহ্নি আপা… তুমিই বলো, তোমাকে আমি কাগজটা দেখাইছিলাম না? বলো…

বহ্নি কনককে তার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে ততক্ষণে। কাছে এগিয়ে এসে তূজার কাঁধে একটা হাত রাখল। তূজাকে আকাশ সমান বিস্মিত করে দিয়ে বলল,

-এসব তুমি কী বলছ তূজা! আমাকে তুমি কখন কোন কাগজ দেখাইছো? তুমি ঠিক আছো তো! তোমার কী হইছে?

তূজা স্তব্ধ হয়ে গেল। যাকে এতোদিন বড়বোনের ন্যায় সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে এসেছে, সে আজ এসব বলছে? এভাবে ভোল পাল্টালো? এর মানে বহ্নিও ওদের দলে…!

তূজার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। চারিদিকে এত মুখোশধারী সাপ… সূচের দিয়ে তার হৃদপিণ্ড ক্ষতবিক্ষত করে তুলছে। মাটিতে ধপ করে বসে হাত খামচে ধরল তূজা। মমতাজ বেগম এগিয়ে এসে তূজাকে ধরার চেষ্টা করলেন।

বহ্নি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

-আম্মা, ওরে ডাক্তার দেখাতে হবে মনে হচ্ছে। ওর মাথায় গন্ডগোল হইছে। নিশ্চয়ই কোনো স্বপ্ন দেখছে আর সেটা নিয়া বাস্তবে চিল্লাচিল্লি করতেছে।

চয়ন রাগ নিয়ে বলল,

-বাসায় আইসাও শান্তি নাই আমার!! যত্তসব!!

তারপর বেডরুমে চলে গেল। তনয় এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল সবটা,এবার মুচকি হেসে সেও নিজের ঘরে চলে গেল। বহ্নিও চলে গেল। রইল শুধু মমতাজ বেগম। তূজাকে সে ভীষণ ভালোবাসেন। একদম নিজের মেয়ের মতো করে। অন্যসব শ্বাশুড়িদের মতো তিনি নন। তার মন বলছে, তূজা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সকাল হোক, তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করবেন চয়নের সাথে। সমস্যাটা কার, সেটা বের করতেই হবে।

তূজার শরীর ছেড়ে দিয়েছে। চোখ দিয়ে জলপ্রপাতের মতো পানি পড়ছে শুধু। মমতাজ বেগম বললেন,

-আয় মা, আজকে তুই আমার সাথে ঘুমোবি। আয়…উঠ।

তূজাকে ধীরস্থির ভাবে উঠে দাঁড় করালেন, তারপর নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে এগোলেন।

-তুমি তো বলেছিলে আজকে অফিসের কাজে সেখানেই থাকতে হবে। তাহলে আবার চলে এলে যে!

লিয়াকত হোসেনের প্রশ্নে লিন্ডার হেলদোল হলো না। সে ঝুঁকে পায়ের হিল জুতো খুলতে লাগল। লিয়াকত হোসেন ফের বললেন,

-প্রশ্নের জবাব কই লিন্ডা?

-কাজটা পেন্ডিং রেখেছি। শরীর ভালো লাগছিল না। তাই চলে এলাম বাসায়। আমার আসায় তুমি বোধহয় খুশি হওনি তাই না?

-এসব কীধরনের কথা লিন্ডা! তুমি আসায় আমি কেন খুশি হবো না?

-কারণ, আমি না থাকলে তুমি আর পলি আন্টি যেসব করতে পারো, তা তো আমার উপস্থিতিতে করতে পারবে না!

-লিন্ডা!!

লিয়াকত হোসেন চোখ বড় বড় করে ফেললেন।

-তিনি তোমার মা!

-মাই ফুট!

বলে লিন্ডা হাসি ছুঁড়ে দিল। তারপর টলতে টলতে নিজের ঘরের দিকে এগোলো। আড়ালে দাঁড়িয়ে বাপ-মেয়ের কথোপকথন পুরোটাই শুনল পলি। লিন্ডা চলে গেলে সে আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে লিয়াকত হোসেনের পাশে বসল। মুখে মিষ্টি হাসি ফুঁটিয়ে বলল,

-তুমি চিন্তা করো না। ও একদিন আমাকে ঠিকই মা বলে মেনে নিবে।

-তুমি ওকে চেনো না পলি। ও ভীষণ জেদি।

-ওর থেকে জেদটা আমারও বেশি লিয়াকত! ওকে মানতেই হবে!!- মনে মনে বলল পলি। মুখে বলল,

-আচ্ছা দেখা যাবে। ওকে সময় দাও। আর ও না মানলে নেই। আমি তোমার ভরসায় এই বাসায় এসেছি। তুমি আমার পাশে থাকলেই চলবে।

ঘুমটা ছুটে গেল তূজার৷ চোখ মেলে নিজেকে শ্বাশুড়ির ঘরে আবিষ্কার করল। মমতাজ বেগম ঘুমোচ্ছেন। ঘড়িতে রাত কয়টা বাজছে- তূজা অনুমান করতে পারল না। চয়নকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। চয়নের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। যতই শক্ত খোলসে মোড়ানো থাকুক বাহিরটা, ভেতরটা তো সীমাহীন বেহায়া!!

ধীর পায়ে শব্দহীন ভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো তূজা। লম্বা বারান্দা পেরিয়ে ডাইনিং এ পা রাখতেই দ্রুত সরে গেল। দেয়ালের সাথে মিশে রইল নিঃশ্বাস বন্ধ করে। কারণ, চয়ন। সে কোথায় যাচ্ছে? তূজা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখল, একটা ঘরের সামনে দাঁড়াল চয়ন। দুইবার হালকা আওয়াজে টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল। সে ঢুকে পড়ল। দরজা আঁটকে গেল। পুরোটা রুদ্ধশ্বাসে চেয়ে চেয়ে দেখল তূজা। হাঁটু ভেঙে ওখানেই বসে পড়ল। রুমটা আর কারও নয়, বহ্নির। তবে কী বহ্নিই সেই মেয়ে? বহ্নির সাথেই চয়নের অবৈধ সম্পর্ক? নইলে কেন বহ্নি এখনো এই বাড়িতে পড়ে আছে? আর কেনই বা আজ সবার সামনে মিথ্যে বলল?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here