বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ৩০+৩১

Part 30+31
#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ৩০

রোয়েন স্তব্ধ হয়ে সামনে থাকা মধ্য বয়সী নারীর দিকে তাকিয়ে আছে, আজ প্রায় বাইশ বছর পর ও এই মুখদর্শনের সুযোগ পেয়েছে।চোখের সামনে ভাসতে থাকা ঝাপসা পোট্রেইটগুলো হঠাৎ করে পরিষ্কার হয়ে উঠলো। মনে পড়ে গেলো সেইদিন গুলোর কথা যখন মায়ের হাত ধরে চাইল্ড কেয়ার থেকে ফিরতো ও, সারা পথ শুধু কথা বলে যেতো ওরা দুজন, সারাদিনের জমানো সব কথা! কিন্তু হঠাৎ করেই সব এলোমেলো হয়ে গেলো, যার হাত ওর একমাত্র ভরসা ছিলো তা হঠাৎ করে ছুটে যায় আর ওর মাম্মা!
হ্যা অনেকটা বদলে গেছে ওর মাম্মা, সামনে থাকা কিছু চুলে পাঁক ধরেছে, মুখে কিছুটা বয়সের ছাপ পড়ে গেছে কিন্তু সৌন্দর্য একটুও কমে নি বরং বেড়েছে। ওর চিনতে এতটুকু কষ্টও হয়নি যে সামনে থাকা নারী ওর মা।

ইনান কলার চেপে ধরে রোয়েনকে আরোও মারতে গেলে সায়ান পেছন থেকে চিল্লিয়ে উঠে

“ওকে ছেড়ে দে ইনান!কিছু করিস না ওকে”

ইনান রোয়েনের কলার আরোও জোরে চেপে ধরে বললো

“নো ওয়ে! আ ক্রিমিনাল ইনডিড আ ক্রিমিনাল। ওকে তো আমি আজকে মেরেই ফেলবো”

বলেই রোয়েনের নাক বরাবর ঘুষি মারলো যাতে রোয়েন কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো, নাক থেকে রক্ত বেরুচ্ছে কিন্তু তাতে ওর কোন হুশ নেই। ও একদৃষ্টিতে সেই নারীর দিকে তাকিয়ে আছে। ইনান আবারো এগিয়ে যেতে নিলে ইনায়া চিৎকার দিয়ে উঠলো

“পাপা ছেড়ে দাও ওকে প্লিজ, দোহাই লাগে তোমার ”

মেয়ের গলার আওয়াজে ইনান দমে গেলো, তারপর ইনায়ার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো, এদিকে সায়ান এগিয়ে আসতে গেলে রুশি হাত চেপে ধরলো তারপর কাঁপা কন্ঠে বললো

“যেওনা ওখানে, এই ছেলেটি খুব ডেঞ্জারাস! তোমাকে কিছু করে নি তো?তুমি ঠিক আছোতো!”

রুশির কথায় থমকে গেলো সায়ান, রুশিতো জানেই না ওদের ছোট্ট রুহান বেঁচে আছে আর এতো বড় হয়ে গেছে যাকে বলে পরিপুর্ণ যুবক। সায়ান রুশির হাত চেপে ধরে বললো

“তুমি ছেলেটির দিকে তাকিয়েছো রুশি?যদি ডেঞ্জারাস হতো তবে কি পরপর মার খাওয়ার পরও হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো? তাকিয়ে দেখো হয়তো আপন কেউ তোমার”

“নাহ দরকার নেই, তুমি এখান থেকে চলো। কে বলেছিলো একা আসতে তোমাকে এখানে। যদি তোমার জিপিএস ট্রেস করা না যেতো তাহলে হয়তো আমরা তোমায় খুজেই পেতাম না। আর কখনো এমন করবে না, আর ইনান ভাইয়া বলেছে এই ছেলেটিই সে যে ইনায়াকে নিয়ে গেছে। যদি ভালো ছেলে হতো তবে কি এমন কাজ করতো?এরা হচ্ছে বড়োলোকের বিগড়ে যাওয়া সন্তান, বুঝিনা এদের বাবা-মা কি এদের শিক্ষা দিতে পারেনা নাকি এরা শিখতে ব্যার্থ! আমার ছেলে হলেতো…”

“ও তোমার ছেলে রুশি! তোমার ছোট্ট রুহান, আমাদের সন্তান”

সায়ানের কথায় সবকিছু যেনো থমকে গেলো, ইনান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রোয়েনের দিকে আর সায়রা যে এতোক্ষন দরজা খোলার প্রয়াস করেছিলো সেও তা থামিয়ে চুপচাপ বসে আছে আর রুশি… ওর মাথায় হয়তো বিষয়টি ধরতেই পারেনি যে সায়ান ঠিক কি বললো?রুশি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে, তা লক্ষ্য করে সায়ান মাথা নাড়িয়ে বললো

“ও তোমার রুহান! তাকিয়ে দেখো একবার ওর দিকে!”

বলেই রুশিকে ঘুরিয়ে দিলো রোয়েনের দিকে যে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো চোখে চোখ রাখার সাহস হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। রুশি তাকালো সেই ছেলেটির দিকে, পঁচিশ কি ছাব্বিশ হবে ছেলেটির বয়স। দেখতে ফর্সা, হাল্কা বাদামি চুল, ঘন আইল্যাশ আর চেহারা! যদিও ছেলেটির মাঝে ও নিজের রুহানকে খুজে পেলো না কিন্তু কেনো যেন তাকিয়ে থাকতে মন চাইলো ওর। কি নিষ্পাপ চেহারা!এই ছেলে ক্রিমিনাল কি করে হতে পারে?নাহ ইনান ভাইয়ের কোথাও হয়তো ভুল হয়েছে, কিন্তু সায়ান যে বললো ও রুহান তবে কি ও সত্যিই রুহান?

ছেলেটির থেকে চোখ সরিয়ে সায়ানের দিকে তাকালো ও, হয়তো কনফার্ম করার জন্য যে সায়ান সত্যিই বলছে কিনা!সায়ান মাথা নেড়ে সায় দিতেই ধীর পায়ে এগুতে শুরু করলো ছেলেটির দিকে, ছেলেটি থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন নিজের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছে বুঝতেই পারেনি কিন্তু ছেলেটির ফুফিয়ে কান্না দেখে ঠিক রুহানের মতো মনে হলো। যখন চকলেট কিনে দিতো না তখন ঠিক এভাবে ফুফিয়ে কেঁদে উঠতো ভাবতেই রুশির ঠোঁটের কোনে হাসি খেলে গেলো। ওর মনে এখন আর কোন প্রশ্ন উদয় হচ্ছে না, মনে হচ্ছে এতোবছর পর কোথা থেকে আসলো ও?, কোথায় ছিলো এতোদিন?কিভাবে বুঝলো ওই রুহান?

শুধু এটাই মাথায় খেলে যাচ্ছে এই ছেলেটি ওর ছোট্ট রুহান যে বাচ্চাদের মতো ফুফিয়ে কেঁদে উঠে!ছেলেটির কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রাখলো রুশি, গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে বাদামি চোখ গুলোর দিকে। এই চেহারা দেখেই যে কেউ বললো এটা সায়ানের যৌবন কাল, পুরো সায়ানের কার্বন কপি। রুশি নিজের অজান্তেই কেঁদে উঠলো সাথে, রুহান যেনো এই মুহুর্তের অপেক্ষায় ছিলো। খুব শক্ত করে রুশিকে জড়িয়ে ধরলো, এতোক্ষন দমিয়ে রাখা শব্দগুলো হঠাৎ করেই বিদ্রোহ করে বসলো। ছেলেদের কাঁদতে নেই, আর শব্দ করে তো কখনোই নয় কিন্তু আজ সেই নিয়ম মানতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর। এতোকাল জমিয়ে রাখা কান্না একনিমিষেই চোখের কোটরে জমা হয়ে গেলো। ভরসার হাত আর কাঁধ পেয়ে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সবাই চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো “মাই মাম্মা ইজ উইথ মি, আই এম নট আ অরফ্যান এনিমোর”

রুশির কাঁধ থেকে মাথা তুলে রুশির চোখের পানি মুছে দিলো তারপর ভাঙা কন্ঠে বললো

“খু্ খুব মিস ক্ করেছি তোমাকে মাম্মা!”

রুশির জন্য এই শব্দটাই যথেষ্ট ছিলো ‘মাম্মা’, আজ বহুবছর পর এইটা শুনতে পেলো। ইনান ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বলার মতো, নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে এই দৃশ্য দেখছে।আর সায়ান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, আজ ও খুব খুশি, প্রচণ্ড খুশি। রুশির খুশি দেখে নিজের খুশিটা দেখতেই পাচ্ছে না, রুশি ওর রুহানকে খুজে পেয়েছে এই খুশিতেই বড্ড মত্ত এই মুহুর্তে ও।

রুহান রুশিকে ছেড়ে সায়ানের দিকে বেশ কয়েক পা এগিয়ে আসলেও আর এগোনোর সাহস পাচ্ছে। নিজের বাবার সাথে কি ভয়ংকর ব্যাবহার করেছে কিছুক্ষণ পুর্বে, যদি ইনায়া না বলতো আর মাম্মাও সঠিক সময় না আসতো তবে কি করে ফেলতো ও! নিজের বাবাকে…ভাবতেও গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ওর। এতোটা খারাপ ধারণা আর ঘৃণা নিজের মনের ভিতর পুষে রেখেছে আর তা প্রকাশও করেছে। এখন কি বলবে যে এই ঘৃণা আর রাগ ছিলো ওর নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে বুঝানো অনুভুতি, সত্যি তো এটাই যে প্রতিমুহূর্তে মিস করেছে ও নিজের বাবাকে, একসাথে খাওয়া, গেম খেলা, ঘুরতে যাওয়া আরোও কতো কি!

রুহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সায়ান হাসলো, ওর মনে পড়ে গেলো যখন রুহান বলেছিলো
“রুহান হেটস বাবাই”
কিন্তু পরেরদিনই জড়িয়ে ধরে বলেছিলো “বাবাই, আই লাভ ইউ”
সায়ান দ্রুত এগিয়ে গিয়ে রুহানকে জড়িয়ে ধরলো, দুবার নিজের ছেলের চোখে ঘৃণা দেখেছে ও। আর রুহানকে সুযোগই দিবে না এটা বলার যে “আই হেট ইউ”
কোনদিন দিবে না, এবার নিজের জীবন দিয়ে হলেও আগলে রাখবে ওকে, নিজের জন্য, রুশির জন্য!
রুহানও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলেও কান্নার জন্য কিছু বলে উঠতে পারছে না, শুধু ফুফিয়ে উঠছে! সায়ান রুহানের মাথায় হাত রেখে আলতো স্বরে বললো

“বাবাই মিসড ইউ রুহান!সো মাচ”

#পর্বঃ৩১

রোয়েন প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে এই মুহুর্তে যাকে বলে বিরক্তি টু এনাদার লেভেল! এই পর্যন্ত প্রায় দশবারের উপরে ইনায়াকে থামতে বলেছে ও কিন্তু সেই তখন থেকে কেঁদেই চলছে। প্রথম প্রথম ওলে কাঁদতে দেখে খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু এটা রীতিমত কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান মনে হচ্ছে!

নিজের এমনিতেই প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে, এতোগুলা বছর পর সবাইকে ফিরে পেয়েছে তাও এই পরিস্থিতে। বিশেষত ওর বাবাই এর জন্য, না বুঝে কতোগুলো কথা বলে ফেলেছে তাকে অথচ দিন শেষে তার কোন দোষই ছিলো! মনের কোনে অসংখ্য প্রশ্ন উদয় হচ্ছে যার জবাব শুধুমাত্র তার বাবা দিতে পারবে হয়তো কিন্তু এই মুহুর্তে সেই সম্পর্কে কথা বলার কোন ইচ্ছে ওর নেই। মায়ের মুখের হাসি আর বাবার চোখে দেখতে পাওয়া খুশি সবমিলিয়ে এই মুহুর্তটা বাঁচার বড্ড লোভ লাগছে তাই অন্যকিছু কিছু জিজ্ঞেস করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ওর নেই।

বাবার গাড়িতে করে বাবা-মা আর সায়রা ফিরে গেছে, ইনায়ার বাবা ওকে সাথে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু রোয়েন দেয়নি। এই মুহুর্তে ওর একটু সান্ত্বনা আর উষ্ণতা প্রয়োজন যা একমাত্র ইনায়া ফিল করাতে পারবে,কেউ একজন ঠিকই বলেছে “সকল পুরুষের একমাত্র কম্ফোর্টজোন তার নিজ অর্ধাঙ্গিনী হয় যেখানে তারা একটু উষ্ণতা খুজে বেড়ায় দিনশেষে”
কিন্তু ওর ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরো ইউ টার্ন নিয়ে উল্টো হয়ে বসে আছে, মানে যার কাছে সান্ত্বনা বাণী শুনতে চাইছে সেই তখন থেকে নাক টেনে টেনে কেঁদে যাচ্ছে। রোয়েন মহা বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থামালো তারপর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো

“কাদঁছো কেনো এতো?কয়বার বলেছি কান্না থামাতে!”

“কান্না না থামলে কি করবো? কখন থেকে চাইছি থামাতে কিন্তু থামছেই না”

কিছুটা থেকে থেকে কথাগুলো বললো ইনায়া, হিচকির জন্য ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না। কিন্তু রোয়েন এমন খাপছাড়া উত্তর শুনে মোটেও খুশি হয়নি। এটা কোন কথা!কান্না থামাতে চাইলে আবার থামবে না কেনো?তাই ধমক দিয়ে উঠলো

“থামাও বলছি কান্না, দুদিন পর বাচ্চার মা হবে আর এখনও বাচ্চাদের মতো কান্না করে যাচ্ছো!পরে দেখা যাবে আমার একসাথে দুটো বাচ্চা পালতে হবে”

রোয়েন কথা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো,কান্নার বেগ যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেলো ইনায়ার। রোয়েন উপায়ন্তর না দেখে নিজের সিট বেল্ট খুলে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরলো, নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো নিজের ভবিষ্যতকে। ইনায়ার কাঁপুনি যেনো বেড়ে গেলো কিছুটা সাথে কান্নার হারও।রোয়েন কিচ্ছু না বলে চুপচাপ জড়িয়ে ধরে বসে,কিছু কিছু সময় কাঁদলে মানুষের মনটা হাল্কা হয়। সকল দুঃখগুলো অনেক সময় কান্নার জলের সাথে হারিয়ে যায়, নিজেক বড্ড হাল্কা মনে তখন যেনো কষ্ট এবুকে কখনো বাসাই বাধে নি। রোয়েন চোখ বন্ধ করে এই মুহুর্ত উপভোগ করছে যেনো কোথাও হারিয়ে না যায়। মানুষের জীবনের প্রত্যকটা মুহুর্তে তার বাঁচা উচিৎ কারণ ঠিক পরের মুহুর্তে সে উপভোগ করার অবস্থায় হয়তো নাও থাকতে পারে।

ইনায়া কান্না থেমে গেছে প্রায় কয়েক মুহুর্ত পুর্বেই কিন্তু শরীরটা এখনো হাল্কা কাঁপছে, নিশ্চুপ হয়ে রোয়েনের বুকের সাথে মিশে আছে ও। ফোঁফানোর শব্দ না পেয়ে ইনায়াকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে নিজের সিটে বসলো তারপর টিস্যু নিয়ে ওর চোখের পানি গুলো মুছে দিলো। ইনায়ার দিকে শুকনো হাসি দিয়ে বললো

“এখন ভালো লাগছে?”

ইনায়া মাথা নাড়ালো, তারপর রোয়েনকে দেখতে লাগলো। রোয়েন নাকের পাশে আর ঠোঁটের কাছে রক্ত জমাট বেঁধে আছে, বাম গাল কিছুটা ফুলে আছে হয়তো থাপ্পড়ের কারণে। মুহুর্তেই ইনায়ার মন প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেলো, হাত বাড়িয়ে রোয়েনের ঠোঁটের পাশে ধরতেই রোয়েন কিছুটা কপাল কুচকে নিলো হয়তো ব্যথায়! কিন্তু মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরুচ্ছে না তাই ইনায়া জিজ্ঞেস করলো

“ব্যাথা করছে না?সেই কখন কেটে গিয়েছে!ইশশশ আমি খেয়ালই করিনি। দাঁড়ান বেন্ডেজ…”

ইনায়াকে আর বলতে না দিয়ে রোয়েন ওর হাত চেপে ধরলো, তারপর কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো

“আমি মাফিয়া লর্ড ইনায়া! এই রকম ছোট খাটো ব্যাথা আমার কাছে কিছুই না। তোমার এতোদিনে এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া উচিৎ”

রোয়েনের কথায় ইনায়া কিছুটা কষ্ট পেলো, ও জানে রোয়েন ইচ্ছে করেই মাফিয়া শব্দ ব্যবহার করেছে কারণ এই কথা বলেই ইনায়া ওকে ছেড়েছিলো। ইনায়ার সত্যিই কিছু বলার নেই তাই কথা ঘুরানোর জন্য বললো

“এখন তো আমি কনফিউশনে পড়ে গেছি, কি বলি ডাকি আপনাকে বলুনতো!রুহান জামিল খান?নাকি রোয়েন লিউস?”

“তোমার যা ইচ্ছা তুমি তাই ডেকো,নাম দিয়ে কি আসে যায়? নাম বদলালেই যে চরিত্র বদলে যাবে তা কিন্তু নয়। আমি সেই শুরু থেকে জঘন্য মাফিয়া ছিলাম আর এখনো আছি আর…”

“এখন আছেন তো কি হয়েছে! ভবিষ্যতে না থাকলেই তো হয়। নিজের পরিবারের জন্য হলেও তো আপনার ছেড়ে দেয়া উচিৎ তাইনা?”

“মাফিয়া ওয়ার্ল্ড কোন সিনেমা নয় বরং এটা বাস্তবতা যা যেকোন হরর প্লেস থেকেও ভয়ংকর। তুমি নিজের ইচ্ছায় ঢুকলেও এখান থেকে নিজ ইচ্ছায় বেরুতে পারবে না।যতোদিন পাওয়ার আছে তুমি সম্মানিত আর তারপর তুমি তাদের কাছে তার সকল সিক্রেট এর ঝুড়ি যা তারা কখনোই বাঁচিয়ে রাখবে না। তাই নিজেকে বাঁচাতে আর নিজের পরিবারকে প্রটেক্ট করতে হলে তোমার পাওয়ার দরকার যা এখন আমার কাছে আছে তাই আমি চাইলেও এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব নয় আর না তোমাকে ছাড়া সম্ভব!এখন মনে হচ্ছে তোমার সাথে দেখা না হলেই হয়তো ভালো হতো, হয়তো তুমি কারো টার্গেট হতে এটলিস্ট। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি বড্ড অসহায় ইনু, তোমাকে ছাড়ার কথা ভাবলেই দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। আমি নিজের অস্তিত্ব তোমায় ছাড়া ভাবতেই পারিনা, আমি জানি এই মুহুর্তে আমাকে সেল্ফিশ মিনে হতে পারে কিন্তু আই হ্যাভ নো চয়েজ।আমাকে মরতে বললে হয়তো সেটা আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে কিন্তু তোমাকে ছাড়তে বলোনা কোনদিন”

ইনায়া চুপচাপ হয়ে রোয়েনের কথাগুলো শুনছিলো, ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে তার মনের কথা শুনতে কার না ভালো লাগে?ওরও খুব ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে সময়টা থমকে গেলে খুব ভালো হতো!ওর অজান্তেই ওর মনের উইশ পুরণ হয়ে গিয়েছে। ও চেয়েছিলো ওর মামার ছেলেকে বিয়ে করতে আর ওর বর ওর মামার ছেলে তাও আমার ক্রিমিনাল বর।নিজেকে এই মুহুর্তে সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে, এই মানুষটির ওর জীবনে না আসলে হয়তো বুঝতেই পারতো না ভালোবাসা কি!রোয়েনের কাঁধে মাথা রেখে ওর হাত চেপে ধরে বললো

“উহু কক্ষনো বলবো না,আমিও আপনার কাছে থাকতে চাই আপনার হয়ে। আমি ভেবেছি কি জানেন? আমি আপনাকে মামুর ছেলে বলে ডাকবো সুন্দর না!”

দুষ্টু হাসি হেসে বললো ইনায়া,রোয়েন প্রথমে বুঝতে না পেরে মাথা নাড়িয়ে তারপর আবার দ্রুত বলে উঠলো

“এই মামুর ছেলে মানে?আমার নাম নেই নাকি?নাম ধরে বলবা”

“ঠিকাছে যেহেতু আপনি আমার মামুর ছেলে তারমানে আমার মামাতো ভাই। তাহলে আমি আপনাকে রুহান ভাইয়া বলে ডাকবো ওকে??”

ভাইয়া! মানে শেষমেশ ওর বউ ওকে ভাইয়া বলে ডাকবে?তাহলে ওর বাচ্চারা ওকে কি বলে ডাকবে ‘মামা’!মানে শেষমেশ ওর বাচ্চার মুখ মামা ডাক শুনতে হবে? অসম্ভব,,,

রুহান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো

“আমি যে তোমার হাজবেন্ড তা কি প্র‍্যাকটিকালি বুঝাতে হবে তোমাকে?আমার কিন্তু কোন আপত্তি নেই।”

ইনায়া ঢোক গিলে কিছুটা দূরে সরে গেলো তারপর হাত নাড়িয়ে বললো

“নাহ থাক, আপনি আমার হাজবেন্ড তা আমার বেশ মনে আছে। যে হারে বন্দুক মাথায় ঠেকিয়ে বিয়ে করেছেন! এই জনম কেনো আগামী সাত জন্মেও ভুলা সম্ভব নয়।ভাবতেই পারছিনা আমার শান্তশিষ্ট মামার এই রকম জল্লাদ ছেলে থাকতে পারে, আগে জানলে জীবনেও বিয়ে করার উইশ করতাম না”

পরের কথাগুলো মিনমিনিয়ে বললো যাতে শুনা না যায়,তারপর রুহানের দিকে দাঁত কেলিয়ে বললো

“আপনি বরং আমাকে আমার বাড়ি পৌঁছে দিন, সময় তো কম হয়নি। একটু পর সন্ধ্যা নামবে”

“কেন শশুর বাড়ি যাবা না?আমি ভাবলাম তোমায় আরো শশুর বাড়ি নিয়ে যাই”

“নাহ থাক শশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য অনেক টাইম পড়ে আছে, আপাদত বাবার বাড়ি যেয়ে এনার্জি জোগাড় করি”

“ইনু!কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো তারপর একেবারে সমাজের সবাইকে জানিয়ে নিজের ঘরে তুলবো তোমায়।অপেক্ষা করবে না আমার জন্য!”

ইনায়া মাথা নাড়িয়ে শায় দিলো, তারপর রুহান ইনায়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসার দিকে রওনা হলো। আজ প্রায় বাইশ বছর পর নিজ গৃহে ফিরে যাচ্ছে ও,যেখানে ওর মা,বাবা আর ছোট্ট বোন আছে। আচ্ছা কি নাম ওর? নামটাই এখনো জানা হয়নি ওর।

~~~এক সসপ্তাহ পর~~~

সকালে জগিং থেকে ফিরেই দেখে ওর ফুফা আর ফুফি সোফায় বসে আছেন। ওর ফুফা মানে ইনায়ার বাবা ওকে দেখেই মুখ কালো করে অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো,আর কিছু বলার জন্য ওর বাবার দিকে তাকালো যেনো এতোক্ষন ওর অপেক্ষায় ছিলো!

“সামু কার্ডটা বের করে দাও”

ওর ফুফি কার্ডটা বের করে টেবিলে রাখতেই ওর বাবা প্রশ্ন করে বসলো

“কিসের কার্ড এটা?”

“আমার মেয়ে মানে ইনায়ার বিয়ের কার্ড!সামনের শুক্রবার মানে আজ থেকে তিনদিন পর বিয়ে”

ইনায়ার বিয়ের কথা শুনে রুহান থমকে গেলো, বিয়ে মানে?কাল রাতেও ওর সাথে কথা হয়েছে ইনায়ার। কই এমন কিছুতো শুনেনি?ও চোয়াল শক্ত করে বললো

“ইনু জানে?ওকে না জানিয়ে আপনি ওর বিয়ে দিবেন মানে কি?”

“যা হচ্ছে আমার মেয়ের সম্মতিতেই হচ্ছে! আর আমার মেয়ে তাই কি করবো না করবো তা আমি বুঝবো তুমি না”

রুহান থমকে গেলো, ইনায়ার সম্মতিতে হচ্ছে বিয়ে! মুহুর্তেই ওর চেহারা লাল হয়ে গেলো রাগে। বিড়বিড় করে বললো

“ইনু তুমি বলেছিলে ওয়েট করবে আমার জন্য কিন্তু তুমি তোমার কথা রাখোনি।এবার আমি যা করবো তা করতে তুমি আমায় বাধ্য করেছো।”

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর জানাবেন কেমন হয়েছে। হ্যাপি রিডিং 💜)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here