ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব -১২+১৩+১৪

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১২

কাব্য মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে,আর তার সামনেই তার মা আর মেঘ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে কাব্যর দিকে।কাব্য মাথা নিচু করে রেখেছে,তখন হিয়া কাব্যর হাতে হাত রেখে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“ভাইয়া তুমি সাবিহার সাথে কী করেছো?সাবিহার সাথে আবার কোন অন্যায় করে থাকলে বলো ভাইয়া।এভাবে চুপ করে থেকো না,এভাবে চুপ করে থাকলে কোন সমস্যা সমাধান হবে না।”

“কাব্য হিয়ার কথার উওর দে,কী করেছিস তুই সাবিহার সাথে!”

ধমকে বলে উঠে কাব্যর মা,কাব্য মাথা নিচু করেই রেখেছে।কারো কথার কোন উওর দিচ্ছে না,আর কী উওরই বা দিবে কাব্য!সে যা করেছে তা ত বুক ফুলিয়ে বলার মত কোন মহান কাজ করে নি।

“কাব্য রাগ উঠাস না আমার বলে দে কী করেছিস তুই?”

“মেঘ তোমরা মা,ছেলে কী শুরু করেছো!দেখছো কাব্যর মাথায় আঘাত পেয়েছে তার মধ্যে তোমরা এমন গোয়েন্দা গিরি শুরু করেছো!এখন এসব জিজ্ঞেস করার উপযুক্ত সময় নয়,কাব্য সুস্থ হোক তারপর এসব নিয়ে কথা হবে।এখন এসব বাদ দিয়ে ছেলেটাকে একটু রেস্ট নিতে দাও।”

কাব্যর বাবা দরজা দিয়ে ডুকতে ডুকতে কথাগুলো বলে সেটা দেখে কাব্যর মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।

“তোমার জন্য তোমার ছেলের আজ এই অবস্থা,তুমি ছেলেকে আস্কারা দিয়ে এমন অমানুষ তৈরি করেছো।না তুমি ছেলেকে শাসন করো না আমাদের করতে দাও।সময় মত যদি ছেলেকে একটু শাসন করতে তবে তোমার ছেলে এত,,,

আর কিছু বলার আগেই কাব্যর কেবিনে হুড়মুড়িয়ে ডুকে সাদাফ।সাদাফ কাব্যকে দেখেই কাব্যর দিকে তেড়ে যায় আর কলার চেপে ধরে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠে,,,

“তোর সাহস কী করে হল সাবিহার গায়ে হাত তোলার!সাবিহাকে আটকে রেখে কষ্ট দেয়ার?”

সাদাফের হঠাৎ এমন আক্রমনে উপস্থিত সবাই অবাক,কাব্য থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে সাদাফের দিকে তাকায়।কাব্য খুব রেগে যায়,যা তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে,কাব্যর চোখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে রাগে।সাদাফ আবার কাব্যকে আঘাত করতে নেয় কিন্তু মেঘ গিয়ে আটকায় সাদাফকে।আর বলে উঠে,,,

“সাদাফ কী করছো এসব,শান্ত হও তুমি!”

সাদাফ মেঘের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আবার কাব্যকে মারতে যায়,তখন নিলয় আর সাদাফের বাবা আসে আর তারা দুজন মিলে সাদাফকে আটকায়।তারপরও সাদাফ শান্ত হয় না,সাদাফ ছুটার চেষ্টা করতে করতে রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“ছেড়ে দাও আমাকে,আজ আমি ওকে মেরে ফেলব।অর জন্য সাবিহা এতটা কষ্ট পাচ্ছে,আমি ওকে ছাড়ব না।সাবিহা যতটা কষ্ট পাচ্ছে তার থেকে দ্বিগুন কষ্ট আমি ওকে দিব,তোমরা ছাড়ো আমাকে।”

কাব্যর বাবা এবার রেগে বলে উঠে,,,

“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি,তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুলছো আমারই সামনে?তোমার সাহস ত কম নয়,তুমি কী জানো এর জন্য আমি তোমার বিরুদ্ধে কেস করতে পারি!”

“আপনি কী কেস করবেন?কেস অলরেডি হয়ে গেছে।আর আপনি ত নিজের বুঝটা ভালোই বুঝেন দেখছি।নিজের ছেলে এত অন্যায় করছে পিচ্চি একটা মেয়ের সাথে তার বেলা নিজের ছেলেকে শাসন করতে পারছেন না।আজ আপনার সামনে আপনার ছেলেকে দুইটা থাপ্পড় দেয়াতে আপনার এত কষ্ট হচ্ছে,আর ভাবুন ত আপনার বোনের কথা যার মেয়েকে আপনার ছেলে পশুর মত অমানবিক নির্যাতন করেছে।আবার আজও আপনার ছেলে ছোট্ট মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছে।মেয়েটা কথা বলতে পারছে না,এতটা অত্যাচার করেছে আপনার ছেলে।আপনি তার জন্য নিজের ছেলেকে শাসন না করে উল্টো আপনি আপনার ছেলেকে আস্কারা দিচ্ছেন?আপনার মত বাবা থাকলে মানুষ পশু হতে বেশি সময় লাগবে না।”

কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে চলেছে সাদাফের বাবা। সাদাফের বাবার কথা শুনে কাব্যর বাবা খুব বেশি রেগে যায়।আর রেগে বলে উঠে,,,

“মুখ সামলে কথা বলুন,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে,কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে যেকোন সময়।তাই নিলয় আর মেঘ ঠেলে ঠুলে সাদাফ আর সাদাফের বাবাকে কেবিন থেকে বের করে নিয়ে যায়।কাব্য আর তার বাবা রাগে ফুঁসছে,কাব্যর মা চোখে জল নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।সাদাফের বাবা যা বলেছে তা একটা কথাও মিথ্যা নয়,কাব্য আজ এতটা অমানুষে পরিনত হয়েছে তাতে তার বাবার গুরুত্ব অনেক।হিয়া তার মাকে বেরিয়ে যেতে দেখে সে ও পিছন পিছন যায়।

_____________________________________

নিলয় আর মেঘের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সাদাফ কোথাও যেতে নিলে মেঘ আর নিলয় বাঁধা দেয়।সেটা দেখে সাদাফ রেগে ওদের বলে উঠে,,,

“আমার পথ ছাড়ো,আমি ঐ কাব্যকে ছাড়ব না।জানে মেরে দিব,যে হাত দিয়ে আমার সাবিহাকে কষ্ট দিয়েছে সেই হাত আমি রাখব না।কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিব,তোমরা সরো,আমাকে যেতে দাও।”

“সাদাফ আইন নিজের হাতে তুলে নিস না,তাতে করে তোর জেল হবে।আর তুই সাবিহার থেকে দূরে থাকবি তাতে করে তুই ই বেশি কষ্ট পাবি।তাই তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ আমি কাব্যকে শাস্তি দিয়েই ছাড়ব।”

“সাদাফ তুমি শান্ত হও,আর মাথা ঠান্ডা করো।আমার ভাই তার উপযুক্ত শাস্তি পাবে।নিজের ভাই যে এতটা অমানুষে পরিনত হবে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।কিন্তু নিজের ভাই বলেও ছেড়ে দিব না তার উপযুক্ত শাস্তি পাইয়েই ছাড়ব,তুমি শান্ত হও।”

সাদাফ ওদের কথা শুনে কিছুটা শান্ত হয়,আর মনে মনে বাঁকা হাসে।যেটা মেঘ আর নিলয় দেখতে পায় না।সাদাফের এমন শান্ত হওয়া দেখে মেঘ আর নিলয় যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।কিন্তু তারা ত আর জানে না সাদাফ মনে মনে কী জগাখিচুরি পাকাচ্ছে!

★আমি একবার বেডে শুয়ে পড়ি আবার একটু পরেই বসে পড়ি।খুব অস্থির লাগছে ঐদিকে কী হচ্ছে কে জানে!বাবা ত যেতেও দিচ্ছে না আমাকে।বেড থেকে নামতে গেলেই আঙুল তুলে চোখ রাখিয়ে বলে শুয়ে পরতে।না তারা যাচ্ছে খবর নিতে না আমাকে যেতে দিচ্ছে।আমি বারবার এমন অস্থির হয়ে উঠছি আর শুয়ে পড়ছি সেটা দেখে মা,বাবা আর আপু বারবার জিজ্ঞেস করছে খারাপ লাগছে কী না?কিছু খাব কী না,এমন নানা প্রশ্ন করে চলেছে আমাকে।কিন্তু আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই আর বারবার ইশারায় বুঝাচ্ছি যে খবর নিতে ঐদিকে কী হচ্ছে?কিন্তু তারা আমার কোন কথাই বুঝতে পারছে না,ঐদিকে কী হচ্ছে কে জানে!
এসব ভাবছিলাম তখন কেবিনে প্রবেশ করে সাদাফ ভাইয়া,নিলয় ভাইয়া আর মেঘ ভাইয়া।তাদের দেখে আমার অস্থিরতা কিছুটা কমে,সাদাফ ভাইয়া আমার সামনে এসে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“খারাপ লাগছে!”

আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই যার অর্থ খারাপ লাগছে না।সাদাফ ভাইয়া মুচকি হেসে বাবার উদ্দেশ্য বলে উঠে,,,

“আঙ্কেল সাবিহার সাথে আমার একটু কথা আছে যদি একটু,,,

“হ্যাঁ কথা বলো তোমরা আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি,চলো সবাই।”

বাবা এক কথায় রাজি হয়ে যায়,সেটা দেখে আমি আর আপু দুজনেই খুব অবাক হই।আপু বাবাকে বলে উঠে,,,

“বাবা সাদা,,,

” শীলা কোন কথা না বলে চুপচাপ বাইরে আসো।”

কিছুটা রাগেই সাথেই কথাটা বলে বাবা কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়,আর পিছন পিছন মাও বেরিয়ে যায়।আর আপু গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে সেটা দেখে মেঘ ভাইয়া আপুর কানে কানে বলে উঠে,,,

“ঘটনা কী গো,শ্বশুর মশাই এক কথায় এভাবে নিজের মেয়েকে একটা ছেলের সাথে একা ছেড়ে দিল!ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় রহস্যময় লাগছে।”

এমনিতেই আপুর মেজাজ খারাপ বাবার এমন আচরনে।তার উপর মেঘ ভাইয়ার এমন কথা,বেচারি নিজেই যার কারন জানে না।কারন জানতে গিয়ে বাবার কাছে ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায়।তার কাছেই কী না কারন জানতে চাইছে!আপু আর পারল না হাতে থাকা ফোনটা মেঘ ভাইয়ার উপর ছুড়ে মেরে গাল ফুলিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।মেঘ ভাইয়া ফোনটা ক্যাচ করে আপুকে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে যায়।
এখন কেবিনে আছে নিলয় ভাইয়া,সাদাফ ভাইয়া আর আমি।সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে,,,

“তকে কী বাইরে যাওয়ার জন্য দাওয়াত করতে হবে?”

নিলয় ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় আর কোন দিকে না তাকিয়ে তিনিও বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।আমি এতক্ষণ সবটাই নীরব দর্শকের মত দেখে গেলাম,অবশ্য এটা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার আপাতত।আমি এবার আগ্রহ নিয়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই,তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও আগ্রহ নিয়ে উনার দিকে তাকাই কী বলবে সে আশায়।কিন্তু উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়।আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই,এটা কী হল!

#চলবে…

(রোমান্সের তেরোটা বাজাইয়া সেই রকম একটা মুহুর্তে শেষ করে দিলাম🥱)#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৩

“বাবা আমি বিয়ে করব”

সাদাফ হসপিটাল থেকে এসেই তার বাবাকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে কথাটা বলে উঠে।হঠাৎ এমন কথাশুনে সাদাফের বাবা অবাক চোখে তাকায়।কোন ছেলে যে তার বাবাকে এভাবে নিজের বিয়ের কথা বলতে পারে সেটা উনার ছেলেকে দেখে জানলেন।মনে মনে তার ছেলেকে কয়টা বকা দিয়ে দিলেন বাবার সামনে এমন নির্লজ্জের পরিচয় দেয়ার জন্য।সাদাফ তার বাবার কোন উওর না পেয়ে আবারও জোড়ে চিৎকার করে বলে উঠল,,,

“বাবা আমি বিয়ে করব,তুমি কী শুনতে পাচ্ছো?”

সাদাফের বাবার এবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।উনি কী কালা নাকি যে শুনতে পায় নি,এভাবে জোড়ে বলার কী আছে!তাই তিনি এবার রেগে বলে উঠল,,,

“আমার কানে কোন সমস্যা আছে?”

সাদাফ তার বাবার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সাদাফের কথার প্রতিত্তোরে যে তার বাবা এমন একটা কথা বলবে সেটা সাদাফ ভাবতে পারে নি।তাই সাদাফ ভ্রু কুঁচকে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল,,,

“মানে?”

“মানে আমাকে কী তোর কালা মনে হয় যে কানের কাছে এসে এভাবে চিৎকার করে উঠলি!”

“ত কী করব!তুমি ত কিছু বলছিলেই না তাই ত চিৎকার করতে হল।তুমি যদি প্রথম বার সারা দিতে তবে ২য় বার কথাটা বলে তোমাকে কালার খাতায় তুলতাম না,আর না আমি নিজের হায়াত কমাইতাম বেশি কথা বলে!”

“তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা ত মেজাজ খারাপ করিস না।”

“বিয়েটা করিয়ে দিবা বলো তবে তোমার চোখের সামনে,পিছনে,ডান দিকে,বাম দিক সব দিক থেকেই সরে যাব।তুমি শুধু আমার বিয়েটা করিয়ে দাও বাবা প্লিজ।”

সাদাফের বাবা পারছে না মাটি ফাঁক করে ভিতরে ডুকে যেতে।কোথায় উনি তার ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্য পাগল হবে তা না ছেলে বিয়ের জন্য পাগল হয়েছে।আর সেটা ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে এসেছে বাবাকে বলতে।আজকালের যুগের ছেলেমেয়েরা যে কী করে!তাদের সময়ে ত বিয়ের কথা শুনলেই লজ্জায় লাল,নীল,সবুজ হয়ে যেত।আর তার ছেলেকেই দেখো পুরো নির্লজ্জর ডিব্বা।

“পাবনায় একটু যোগাযোগ করে দেখো ত তারা বিয়ে পাগল ছেলেকে একটু চিকিৎসা দিতে পারবে কী না!”

হাতে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে কথাটা বলে উঠল সাদাফের মা।সাদাফ তার মায়ের কথায় খুব বিরক্ত,আর তার বাবা যেন এতক্ষণে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।এতক্ষণ ছেলে ত বিয়ে করব বলে পাগল করে দিচ্ছিল তাকে এখন তার বউ এসেছে, নিশ্চিন্ত এখন!যে সাদাফের মা বিষয়টা সামলে নিবে। তাই তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন আর সাদাফ গাল ফুলিয়ে বলে উঠল,,,

“মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাচ্ছো তাই এমন মজা করছো ত তোমরা!”

“আমরা ত মেঘও চাই নি বৃষ্টিও চাই নি,তবে তুই যেচে বৃষ্টি দিচ্ছিস কেন?”

“মা প্লিজ মজা করো না,ভালো লাগছে না এসব।তোমরা একটু বুঝার চেষ্টা করো,আমি এমনি এমনি কিছু করছি না।এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে নয়ত আমি এমন কেন করব?”

“গলা ঝেড়ে কাশ,আর ফটাফট বলে ফেল কী কারনে বিয়ের জন্য এত পাগল হয়েছিস?”

“সাবিহা এসএসসি পরীক্ষার পর Abroad চলে যাবে পড়াশোনা করতে।”

“এটা ত ভালো খবর,মেয়েটা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ত যাবে।এতে কী সমস্যা আছে যার জন্য বিয়ের জন্য পাগল হয়েছিস!”

“মা তুমি কী বুঝতে পারছো না,এখন কী সবটা খুলে বলতে হবে তোমাকে!লজ্জা সরমেরও ত একটা ব্যাপার আছে তাই না!”

“এহহহে আসছে রে আমার লজ্জাবতী লতা,বিয়ের কথা নিজের বাপের কাছে বলার সময় লজ্জা পাস নি ত এখন এত লজ্জা আসে কোথা থেকে?”

সাদাফ তার মাকে কীভাবে বলবে যে সাবিহার জীবন বিপদের মুখে।আর সাবিহাকে রক্ষা করার জন্যই সাদাফ সবসময় সাবিহার কাছেকাছে থাকতে চাইছে।আর সেটা সম্ভব একমাত্র বিয়ে হলেই,নয়ত সাবিহার কাছাকাছি থাকার সার্টিফিকেট আর সবাই দিলেও সাবিহা তাকে দিবে না।তাই সাদাফ ঠিক করল যা করার সে নিজেই করবে, কারন তার বাবা,মা এত সহজে তাকে এখন বিয়ে দিবে না।কারন সাবিহার এখনও বিয়ের বয়স হয় নি,তাই তারা ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।সাদাফ তার মাকে আর কিছু না বলে দাপদুপ পা ফেলে চলে গেলো।সেটা দেখে সাদাফের মা আর বাবা দুজনেই হেঁসে ফেলল।

______________________________________

বেডে পা ঝুলিয়ে বসে উর্না দিয়ে গাল,কপাল,ঠোঁট মুছে চলেছি,আর রাগে ফুঁসছি।সাদাফ ভাই যে এতটা শয়তান সেটা আগে বুঝি নি।বজ্জাত বেডায় আমার কথা না বলার সুযোগ নিয়ে কী কী করে গেলো।এক ঘন্টা ধরে গাল,ঠোঁট আর কপাল মুছে চলেছি।আর এক ঘন্টা আগের কথা মনে হলেই শিউরে উঠছে সারা শরীর।

★ফ্লাসব্যাক★

সাদাফ ভাই আমার কপালে চুমু দিয়ে মুচকি হেঁসে আমার দিকে তাকায়,আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি সেটা দেখে চোখ টিপ দিয়ে আমার গালে আরেকটা চুমু বসিয়ে দেয়।আমি এতটাই অবাক যে কী রিয়েকশন দিব বুঝে উঠতে পারছি না।কিন্তু অসম্ভব রকম রাগ লাগছে এভাবে একটা মেয়েকে চুমু দেয়ার কী মানে!কথা বলবি মুখে বল এভাবে চুমু দেয়ার কোন মানে হয় না।তাই রেগে উনার গালে থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত তুলতেই উনি আমার হাতটা ধরে আটকে বলে উঠে,,,

“এই হাত দিয়ে অন্য কাউকে মেরো আমাকে নয়,এই হাতটা আমাকে আদর করার জন্য তুলে রাখো।

আমি উনার কথাশুনে রাগ ভুলে অবাক হই,কী বলছে উনি এসব!

“এখনই এত অবাক হয়ো না প্রিয়,মাত্র যাত্রা শুরু তোমার অবাক হওয়ার।প্রতিটা মুহুর্তে অবাক হবে তুমি,তার জন্য কিছু বাঁচিয়ে রাখো নয়ত আরো কয়টা চুমু দিয়ে দিব কিন্তু।”

উনার কথার সঠিক মানে আমি বুঝতে পারি নি,যে উনি আমাকে কী বুঝাতে চাইছে!কিন্তু আজ উনার হাবভাব,কথা বার্তায় বেশি সুবিধা লাগছে না আমার কাছে।উনার হাবভাবে ত মনে হচ্ছে ভালবাসে আমাকে,কিন্তু সন্দেহর বশে কী এতটা গভীরে ভাবা ঠিক হবে?আর আমি এটা সন্দেহর তালিকায় কেন ফেলছি!উনি আজ যতটা পাগলামি করলো আমার জন্য তাতে ত কোন অন্ধ ব্যাক্তিও বলে দিতে পারবে উনার মনে আমার জন্য আলাদা ফিলিংস কাজ করে।তবে আমি এত বোকাবোকা কথা কেন ভাবছি বুঝি না আমি।কথাগুলো ভেবেই নিজেকে বোকাদের তালিকায় ফেলে দিলাম ঠুস করে।
পরক্ষণেই মনে হল উনি যদি কখনও স্বীকার করে আমাকে ভালবাসে তখন আমি কী করব!ভালবাসা কথাটার প্রতিই ত আমার ঘৃণা জন্মে গেছে,তখন আমি কী করব!উনাকে কী ফিরিয়ে দিব,নাকি মেনে নিব?ভালবাসার মানুষটা যদি খালি হাতে কাউকে ফিরিয়ে দেয় তাতে কতটা কষ্ট হয় সেটা আমি জানি।কাব্য ভাই আমাকে সে কষ্টটা দিয়েছে,আমিও কী সাদাফ ভাইকে তখন এভাবেই কষ্ট দিব?না এভাবে কষ্ট দিলে কাব্য ভাই আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।কিন্তু উনাকে কষ্ট দিতে না চাইলে যদি অনিচ্ছা স্বত্বেও উনাকে মেনে নেই,তবে কী কখনও ভালবাসা শব্দটার থেকে ঘৃনার পর্দা সরিয়ে ভালবাসতে পারব?আর নাকি উনাকে ভালবাসতে পারব নতুন করে?এসব ভেবে মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে আমার,আমি চুপচাপ এসব ভেবে চলেছি তখন সাদাফ ভাইয়া হুট করে বলে উঠল,,,

“বিয়ে করবে আমাকে?”

উনার কথা শুনে পুরা ৪৪০ ভোল্টেজের শক খাইলাম।আমি এতক্ষণ উনার ভালবাসা নিয়ে এত গবেষণা করে গেলাম ফিরিয়ে দিব নাকি মেনে নিব!আর উনি ছক্কা মেরে বিয়ে অবধি চলে গেলো।ভাবা যায় এসব,ভালবাসে স্বীকার না করে পুরো বিয়েতে চলে গেছে।মাথা ঘুরছে আমার,যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারি।আমার ভাবনার মাঝে সাদাফ ভাই আবারও বলে উঠল,,,

“এত ভেবে কাজ নেই,তুমি চাইলেও আমার কাছে রাখব তোমাকে।আর না চাইলেও ভালবেসে রাখব কাছে আমারই পাশে।তুমি ভালো মত মেনে নিলে ভালো কিন্তু ঝামেলা করলেও সমস্যা নাই।ঝামেলা হলে ব্যাপারটা সমাধান করার ঔষধ আমার কাছে আছে।তাই নো চিন্তা,এতদিন তোমার প্রতি ভালবাসাটা মনের কোনে লুকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু আর নয়।সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে করতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় যেমনটা হয়ে যাচ্ছিল প্রায়।আমার অনুভূতি গুলো যদি তোমার কাছে আগেই প্রকাশ করতাম তবে হয়ত তোমার মনে কাব্যর প্রতি ফিলিংস জাগত না।সেই ফিলিংস হয়ত আমার জন্য জাগত তোমার মনে।তবে আজকের দিনটা অন্য রকম হত।কিন্তু আর নয়,আজ তোমাকে হারানোর ভয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি।বুঝতে পেরেছি আমার কী করা উচিত,তাই আজ তোমাকে নিজের মনের অনুভূতি জানিয়ে দিলাম।এবার তুমি তৈরি হও আমার বউ হওয়ার জন্য।”

এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে সাদাফ ভাইয়ের কথাগুলো শুনছিলাম,কিন্তু উনার কার্যকলাপে সব কিছুতে পানি ডেলে এক বস্তা রাগ ভর করল মাথায়।উনি কথাগুলো বলেই টুপ করে আমার ঠোঁটে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

★বর্তমান★

তখন থেকে এভাবে বসে রাগে ফুঁসছি আর মুছে চলেছি।কিন্তু ঘুরেফিরে উনার বলা কথাগুলো মনে পড়ছে।আর আমি পড়েছি আরেক চিন্তায়,কী করব ভেবে পাচ্ছি না।উনার কথা মেনে নিব নাকি ফিরিয়ে দিব?

#চলবে…

(সাদাফের বক্তগন কেউ পাবনায় সিট বুকিং করো,বেচারায় বিয়ে পাগল হয়ে গেছে🤣)#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৪

কাব্য তার কেবিনে বসে আছে তখন তার কেবিনে হাতে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে তার মা।কাব্য তার মাকে দেখে নড়েচড়ে বসে,কাব্যর মা কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,

“খাবারটা রেখে গেলাম খেয়ে নিও!”

“মা তুমি আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছো!”

কাব্যর মা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,,

“কীভাবে কথা বলছি!”

“তুমি কী আমার উপর রেগে আছো!”

“তোমার এমন মনে হল কেন?”

“তুমি যখন রেগে থাকো তখনই ত এভাবে তুমি করে ডাকো আমায় তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“তোমার উপর রেগে থাকার কী যথেষ্ট কারন নেই!”

“মা তুমি প্লিজ এখন সবার মত আমাকে দোষী করো না,আমি কিছু ভুল করি নি।তুমি তোমার ছেলেকে বিশ্বাস কেন করছো না?”

মিসেস লতা তার ছেলের কথা শুনে রেগে কাব্যর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য গালে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কাব্যর চোখে না আছে কোন অভিযোগ না আছে কোন অনুতাপ।কাব্যর চোখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠছে,সেটা দেখে কাব্যর মা কাব্যর গালে আবারও থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য এবার রেগে কিছু বলবে তার আগেই মিসেস লতা রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“চোখ নামা একদম চোখ রাঙাবি না আমাকে।”

কাব্য তার মাকে আবারও কিছু বলতে চাইলে তিনি তার আগেই বলে উঠে,,,

“চুপ একদম চুপ,একটা কথাও বলবি না তুই।নিজের মাকে চোখ রাঙাচ্ছিস তুই ছিঃ।আমার ঘৃনা হচ্ছে তোর প্রতি,তুই যে আমার ছেলে সেটা ভাবতেই ঘৃনা লাগছে,থু।তোর থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।
ছোট মেয়েটার সাথে এতকিছু করেও তুই বলছিস ভুল কিছু করিস নি!আর আমাকে চোখ রাঙানো ত তোর কাছে কিছুই না।সেদিন ছোট একটা কারনে মেয়েটাকে পশুর মত মেরেছিস,আর আজ মেয়েটার সাথেও নিশ্চয়ই ভালো কিছু করিস নি।তারপরও বলছিস তুই ভুল কিছু করিস নি,আরে মেয়েরা মায়ের জাত,আর তুই তোর নিজের মাকে চোখ রাঙাস।আবার তুই সে মেয়েকেই পশুর মত অত্যাচার করিস,ছোট মেয়েটাকে অপমান করিস কোন কারন না থাকা স্বত্বেও।তুই নিজেকে এতটাই প্রাধান্য দিচ্ছিস যে এত অন্যায় করার পরও মনে করিস তুই ভুল কিছু করিস না,করতে পারিস না যা করিস একদম ঠিক।কিন্তু মনে রাখিস নিজের কাছে ভালো থাকা মানে ভালো তুই নস।এতগুলো মানুষ তকে তোর অন্যায়টা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তুই ত চোখ থাকতেও অন্ধ।নিজের ভুলটা দেখতেই পারছিস না,এতদিন ভালবাসায় অন্ধ ছিল আর এখন রাগে,সাথে তোর বাপও যোগ হয়েছে।তকে আর তোর বাপকে ত একটা মানুষও ভালো বলে না।নিজের রাগ কমা,আর মানুষের মত ভাব যে তুই ঠিক কতটা জঘন্যতম কাজ করেছিস।তোর সাথে কথা বলতেও বাঁধছে আমার।”

কথাটা বলেই মিসেস লতা রেগে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়,আর কাব্য তার মায়ের কথাগুলো এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে শুনেছে।কাব্য তার মায়ের কথায় ভাবতে থাকে,,,

“আসলেই কী আমি ভুল করেছি?আমি কী সত্যিই সাবিহার সাথে অন্যায় করেছি?কিন্তু আমি ত অকারণে কিছু করে নি,সাবিহার সাথে আজ এমনটা হওয়ার পিছনে সাবিহা দায়ী তাই আজ এসব হয়েছে।সাবিহার জন্য আমার ভালবাসা আমার থেকে দূরে,আমার থেকে আমার বন্ধুরা দূরে আর আজ আমার মাও আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছে।সবকিছুর জন্য সাবিহা দায়ী।”

কথাগুলো কাব্য নিজ মনে আওড়ে আবারও নিজের মনকে প্রশ্ন করল,,,

“সত্যিই কী এসবের পিছনে শুধু সাবিহা দায়ী?তাতে কী আমার কোন হাত নেই!সাবিহা দোষ করত কিন্তু তার দোষের ক্ষেত্রে আমি ত সাবিহাকে তিনগুন বেশিই শাস্তি দিয়েছি।বাচ্চা মেয়েটার বয়সই বা কত?এই বয়সে ভুল হলে সেটা সুধরে দেয়ার দায়িত্ব ত বড়দেরই।সাবিহা অবুঝ কিন্তু আমি ত অবুঝ ছিলাম না,আমি ত ইচ্ছে করলেই ঠান্ডা মাথায় সাবিহাকে বুঝিয়ে সবটা ঠিক করতে পারতাম।কিন্তু আমি ত সেটা করি নি উল্টো মেয়েটাকে আঘাত করেছি।”

কাব্য আর ভাবতে পারছে না,এসব ভেবে কাব্যর মাথাটা ব্যাথা করে উঠল।কাব্য তার মাথা চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

______________________________________

ছাঁদে পা ঝুলিয়ে বসে আছি,দৃষ্টি আমার সুদূর আকাশপানে।আকাশে আজ তারা নেই,চাদটাও মেঘের আড়ালে,চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।আমার মনের আকাশে যেমন আজ মেঘ জমেছে তেমনি এই আকাশেও মেঘ জমেছে।তাতে মনটা যেনো আরো বিষন্নতায় ঘিরে ধরেছে,হসপিটাল থেকে আজ বিকালেই বাড়ি ফিরেছি।
আর রাতে ডিনার করতে গিয়েই জানতে পারি আপুর বিয়েটা বাবা ভেঙ্গে দিয়েছে।কথাটা ভাবতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।সব কিছু আমার জন্য হয়েছে,আমি কেন কাব্য নামের অমানুষকে ভালবাসলাম?কেন আমি তার কাছে ভালবাসার দাবী নিয়ে গিয়েছি?আমি তাকে ভাল না বাসলে ত আজ এত কিছু হত না।সবকিছুর জন্য আমি দায়ী,আমার জন্য আজ দুইজন ভালবাসার মানুষ আলাদা হওয়ার পথে।মেঘ ভাইয়া আর আপু ত দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে।কীভাবে থাকবে একে অপরকে ছেড়ে,আপু ত কথাটা শোনার পর থেকে এক নাগাড়ে কেঁদেই চলেছে।আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরছে কীভাবে আপু আর মেঘ ভাইয়ার বিয়েটা দেয়া যায়!কিন্তু মাথাতে কিছুই আসছে না।
হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকাই আর দেখি সাদাফ ভাই।উনাকে দেখে কোন রিয়েক্ট করলাম না,হাতটা সরিয়ে নিয়ে আবারও আকাশের দিকে তাকালাম।সাদাফ ভাই আমার হাতটা আবার নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো।আমি আবারও ছাড়াতে গেলে উনি ছাড়লেন না।উনি আমার গালে এক হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“শীলার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে বলে মন খারাপ?”

আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম, ছাড়লেন না উনি আরো শক্ত করে ধরলেন।উনি মুচকি হেঁসে বলে উঠলেন,,,

“চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে,আমি আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলব।”

বাবার সাথে কথা বলবে শুনেই হঠাৎ আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।উনিই পারবে বাবাকে রাজি করাতে,উনি ম্যাজিক জানে কী না সেটা জানা নেই কিন্তু এর আগে উনি বাবাকে কীভাবে যেন মেনেজ করেছিল হিয়াকে আমার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য।তাই আমি খুশিতে গদগদ হয়ে নিজের গলার কাটা জায়গার কথা বেমালুম ভুলে কিছু বলব তার আগেই উনি আমার ঠোঁটে তার আঙুল বসিয়ে বলে উঠে,,,

“কথা বলার চেষ্টা করো না ব্যাথা পাবে।”

উনার কথা শুনে হাসিমুখটা নিমিষেই চুপসে গেলো।কথা না বলতে পারার কষ্টটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি আমি।সাদাফ ভাই এবার বাঁকা হেসে আমাকে আবারও বলে উঠল,,,

“আমি কিন্তু এমনি এমনি কোন কাজ করি না বুঝেছো!তোমার বাবাকে মেঘ ভাইয়া আর শীলার বিয়েতে রাজি করানের জন্য কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।রাজি থাকলে বলো চুটকি মেরে আঙ্কেলকে রাজি করিয়ে ফেলব।”

উনার কথাটা শুনে এবার রাগ হল,ঐদিনও এমন করেছে আর আজও।এভাবে কারো দুর্বলতার সুযোগ নেয়া ঠিক না,লাগবে না উনার সাহায্য।দরকার পড়লে দুজনকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে দিব নয়ত মেঘ ভাইয়া আর আপুকে কিডন্যাপ করে বিয়ে দিব তারপরও উনার সাহায্য নিব না।কথাগুলো মনে মনে বলে হঠাৎ করেই চুপ করে গেলাম তারপর কিছু একটা ভেবে বাকাঁ হেসে সাদাফ ভাইয়ার নাকে আস্তে একটা ঘুসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আমার কান্ডে সাদাফ ভাইয়া চোখ বড়বড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে চলে আসতে নিলে সাদাফ ভাইয়া উঠে দাঁড়ায় আর বলে উঠে,,,

“তোমার মতিগতি ত আমার ঠিক লাগছে না,নিশ্চয়ই কোন শয়তানি বুদ্ধি করছো তাই না?তুমি কী জগাখিচুরি পাকাচ্ছো বলো ত আমাকে?কী চলছে তোমার মনে!কোন শয়তানি বুদ্ধি থাকলে ফটাফট বলে ফেলো নয়ত ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”

আমি উনার কথা শুনে একবার নিচের দিকে উঁকি দিলাম।তারপর সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিলাম,উনি জোড়ে একটা চিৎকার করে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।আমি হাত দুইটা ঝাড়া দিয়ে হাসতে হাসতে নিচে চলে এলাম।

______________________________________

শীলা তার রুমে বসে থেকে মেঘের দেয়া সবগুলো গিফট দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে।মেঘের দেয়া প্রতিটা উপহার খুব যত্ন সহকারে তুলে রেখেছে শীলা।শীলার ফোনে সেই কখন থেকে মেঘ কল দিয়ে চলেছে তাতে শীলার কোন হুসই নেই।কিন্তু হঠাৎ জোড়ে কিছু পড়ার শব্দ শুনে শীলা ভয় পেয়ে যায়।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সে দরজা খুলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।বাইরে এসে দেখে তার বাবা,মা দৌড়ে বাইরে যাচ্ছে।সেটা দেখে শীলার মনে কেমন একটা ভয় হল,শীলাও তাদের পিছন পিছন গেলো।অরা গিয়ে যা দেখল তার জন্য তারা কেউই প্রস্তুত ছিল না।সবাই এমনভাবে দেখছে যে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

#চলবে…

(সাদাফকে মেরে দিলে কেমন হয়🤔?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here