ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব -০৩

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩

—“উমমম এটা আপনি খেয়ে প্রুভ করে দিন যে এটাতে কিছু নেই।তাহলেই হবে মিস অর্ষা”

অর্ষার ফোন বেজে ওঠে তখনই।অর্ষা মনে মনে আল্লাহকে আর যে ফোন করেছে তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দেয়।অর্ষা ইরহামের দিকে তাকাতেই দেখলো তার বিরক্তি হওয়া মুখশ্রী।অর্ষা ফোনের দিকে তাকাতেই আম্মু লেখা ভেসে উঠলো।অর্ষা মুচকি হেসে ফোন রিসিভ করে বলল,,,

—“আসসালামু আলাইকুম আম্মু বলো”

ওপাশ থেকে অর্ষার আম্মু ইরিনা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন,,,
—“ক’টা বাজে খেয়াল আছে তোর বাড়িতে আসছিস না কেনো?”

—“সরি আম্মু আমি এখনই আসছি।”

ফোন কেটে দিয়ে ইরহামের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,,
—“স্যার আমি আসি তাহলে আম্মু ফোন দিয়েছে বাসায় যেতেই হবে।”

কথাটা বলে চেয়ারে থাকা ব্যাগটা কাঁধে তুলে বেরিয়ে যায় অর্ষা ইরহামের কেভিন থেকে।ইরহাম রেগে কফির মগটা আছাড় মারে।একটা বার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না,বেয়াদপ মেয়ে!ইরহাম নিজের উপরই বিরক্ত হয় নিজের কাজে।এই মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই ইরহামের রাগটা আগের তুলনায় বেড়েছে।কন্ট্রোল করতে ভীষণ কষ্ট হয়।

—“আজকে না হয় বেঁচে গেলেন মিস অর্ষা।বাট নেক্সট টাইম বাঁচার অপশন আমি রাখবো না”

৪.

অর্ষা বাইরে আসতেই দেখে রুশান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রুশান বাইকে হেলান দিয়ে ফোন টিপছিলো।অর্ষা এসে ধাক্কা মেরে বলে,,,

—“ঢং দেইখে বাঁচি না বাপু।এমন ভাব ধরিস মাঝে মাঝে যেনো তুই শাহরুখ খান বা সালমান খান।কিন্তু বিশ্বাস কর তুই হিরো আলমের লাইট ভার্সন ভাই।”

রুশান রেগে মেগে ফায়ার হয়ে যায়।ও ফোন পকেটে ঢুকিয়ে অর্ষার দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,,

—“তুই নিজে কি হ্যা শাক চুন্নি কোথাকার।শেওড়া গাছের পেত্নী আবার আমারে কইতে আইছে আমি নাকি হিরো আলমের লাইট ভার্সন।”

অর্ষা খিলখিল করে হেসে দিলো।হাতের চুড়ি গুলোও শব্দ করে বাজছে হাত নাড়ানোর ফলে।অর্ষা রুশানকে টিটকারি মেরে বলে,,,

—“তুই নিজেই তো শিকার করলি যে তুই হিরো আলমের লাইট ভার্সন।তাই না আমার এক মাসের ছোট চাচাতো ভাই।”

অর্ষার শেষের বলা কথা শুনে রুশানের মেজাজ গরম হয়ে যায়।ও কিছুতেই মানতে চায় না অর্ষার থেকে ও ছোট।অর্ষা সারাদিন এই নিয়ে খোটা দেয়।রুশান অর্ষার চুল টেনে ধরে বলে,,,

—“অর্ষা শেওড়া গাছের পেত্নী আমি তোর থেকে মোটেও ছোট নাহ!”

অর্ষাও কম কিসে কয়েকটা কিল থাপ্পড় মেরে বলল,,,

—“তোর সাহস কি করে হলো এক মাসের বড় বোনের গায়ে হাত দেওয়ার বেয়াদব ছেলে ভদ্রতা নেই কোনো”

—“ওরে আমার ভদ্র মাইয়ারে আইছে নাইজেরিয়ার রানী”

দুজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারামারি করে নিলো একদফা।কখনোই বনে না দু’জনের একসাথে থাকলেই ঝগড়া মারামারি হবেই কিন্তু কারো কিছু হলে অন্যজন পাগল হয়ে যায়।চিকনি চামেলি গান বাজতেই দু’জন চমকে ওঠে।মারামারি করা থামিয়ে দেয়।রুশান তো ভয়ে লাফিয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়েছে।অর্ষা রুশানের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দেয়।

—“রুশাইন্না চল ভাই আম্মু ফোন দিচ্ছে দেরি হলে তুই ও আমার সাথে বকা খাবি।দ্রুত বাইকে উঠে স্টার্ট দে”

—“দিমু নাহ আমি।আমি হিরো আলমের লাইট ভার্সন না। যা তুই আমি নিয়ে যেতে পারবো না”

অর্ষা রুশানের কথা শুনে বাঁকা হাসে।তারপর রুশানের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,

—“তুই যে কালকে ছোট চাচ্চুর পকেট থেকে টাকা মেরে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিয়েছিস বলে দেই চাচ্চুকে,অনেক মজা হবে বল”

রুশানের এতেই কাম সারা।এতোক্ষনের বাহাদুরি শেষ।বেচারা কপাল চাপড়ায় নিজের।কেনো যে তার এমন একটা ১ মাসের বড় চাচাতো বেস্টফ্রেন্ড থাকতে গেলো!ঝামেলার শেষ নেই।রুশান মুখ গোমড়া করে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দেয়।অর্ষা হেসে উঠে পরে।কাজ তো হয়েই গেলো মাত্র একটা কথায়।

রুশান আর অর্ষা চাচাতো ভাইবোন।অর্ষাদের দোতলা বিশিষ্ট ছোট্ট বাড়ি।অর্ষার বাবা দু ভাই,একসাথেই থাকেন সবাই মিলে।রুশান আর অর্ষা সারাদিন মারামারি ঝগড়া করে বাড়ি মাতিয়ে রাখে।অর্ষার সাথে ঝগড়া হওয়ায় গতকালকে রুশান উপস্থিত ছিলো না তাই কিছু জানে ও না।

বাড়ির সামনে অর্ষাকে নামিয়ে দিয়ে রুশান বাইক রেখে নিজেও চলে আসে দাদির সাথে দেখা করতে।দাদিমা বড্ড ভালোবাসে অর্ষা রুশানকে।দুজন দৌড়ে দাদিমার রুমে প্রবেশ করে।দাদিমা তজবি গুনছিলেন।দুজনের দৌড়ে আসার শব্দে তজবি রেখে দেন।হাসেন জাহানারা বেগম দুজনের কান্ড দেখে।দুটো এতো ফাজিল।

—“কিরে এমন ছুটে এলি কেনো দু’জন সাবধানে চলবি তো।পরে ব্যাথা পেলো তো দুটোই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে বাড়ি মাথায় তুলিস।”

অর্ষা জাহানারা বেগমের পাশে বসে বলে,,,

—“উফ বুড়ি তুমি এতো কথা কও কেনো।বেশি কথা বললে কিন্তু সতীন আসবে ঘরে মনে রেখো।আমার দাদাজান কিন্তু এখনো ইয়াং আছে।”

রুশান ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,,,

—“আমার দাদিমাও কিন্তু এখনো সেই সুন্দরী আছে তুই দাদাজানকে বিয়ে দিলে আমিও আমার দাদিমাকে বিয়ে দেবো নাহলে নিজেই বিয়ে করবো কি বলো দাদিমা”

জাহানারা বেগম হাসেন দুজনের কান্ড দেখে।পেছন থেকে অর্ষার ছোট আব্বু আহিন আহমেদ দুজনের কান টেনে দাঁড় করিয়ে বলে,,,

—“এই যে দুই বাঁদর সমস্যা কি তোদের আমার আম্মু আব্বুকে আবার বিয়ে দিতে চাইছিস এতো সাহস কোথা থেকে পাস বল তো”

—“আব্বু ছেড়ে দেও ব্যাথা পাচ্ছি তো”

—“তোদের দু’জনের বাঁদরামি কবে কমবে বল তো।শান্তি মতো বাইরের বাড়িতে কাউকে থাকতে দেয় না।”

ইরিনা বেগম রুমে ঢুকে দুজনের দিকে চোখ পাকিয়ে বলে,,,”তোরা ফ্রেশ না হয়ে এখনও এখানে আছিস।”

রুশান অর্ষা একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজন দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আহিন আহমেদ হেসে ফেলেন বাচ্চাদের কান্ডে।এতো দুষ্ট দুইটা।আরিশাও হয়তো এতো ফাজিল না।সবাই বের হয়ে যায় রুম থেকে।

৫.

—“দা ভাই আসবো”

ইরহামের রুমে নক করে ইলমা কথাটা বলল।ইরহাম ভেতরে আসতে বললে ইলমা রুমে প্রবেশ করে।ইরহাম ল্যাপটপে কাজ করছে।ইলমা ল্যাপটপটা নিয়ে বলল,,,

—“দা ভাই শোনো না তুমি না অনেক ভালো।আমার কিউট দা ভাই”

ইরহাম চশমা খুলে রেখে বালিশে হেলান দিয়ে বলে,,,

—“কি বলবি বলে ফেল এতো দরদ দেখাতে হবে না।কিছু লাগবে তোর”

ইলমা ইরহামের কথায় গাল ফুলায়।ইরহাম দেখে হাসে।এক হাতে বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

—“এতো গাল ফুলাতে হবে না বল কি বলবি ভাইয়া তোর জন্য সব করতে পারে।”

কথাটা শোনা মাত্রই ইলমার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে।সে তো এটা শোনার অপেক্ষায় ছিলো।ইলমা জানে তার দা ভাই তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।ইলমা আমতা আমতা করে বলেই ফেলে,,,

—“দা ভাই আমি ভাবি হিসাবে অর্ষা আপুকেই চাই প্লিজ প্লিজ দা ভাই মানা করো না।তুমি তো কাউকে ভালোবাসো না তাহলে সমস্যাটা কোথায়।ছোট ভাইয়ুও চায় তুমি অর্ষাকে বিয়ে করো।”

অর্ষাকে বিয়ে করার কথা শুনে ইরহাম রেগে যায় প্রচন্ড।বোনের সাথে রাগ দেখাতে চায় না ইরহাম তাই শান্ত গলায় বলে,,,

—“ইলমা তুমি এখন যাও ভাইয়ুর কাজ আছে অনেক।”

ইলমা ভাইয়ের গলা শুনে চমকে যায়।ইরহাম যখন রেগে যায় তখনই তুমি তুমি করেবলে।ইলমা নিঃশ্বব্দে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।ইরহাম বোনকে ভীষণ ভালোবাসে তা আয়রা ইসফাক খুব ভালো করেই জানে তাই বিয়েতে রাজি করাতে ইলমাকে পাঠানো।ইরহাম পাশে থাকা ফুলদানি ছুড়ে মারে।

নিচ থেকে ইলমা শব্দ পায়।ভয় পায় ও।আয়রা ইসফাককে বলে,,

—” এই ছেলে জীবনেও রাজি হবে না।যার নাম শুনলেই রেগে যায় তাকে বিয়ে ইরহাম তো জীবনেও করবে না”

ইসফাক হেসে বলেন,,,,

—“জানো আয়রা আমরা যাকে সব থেকে অপছন্দ করি শেষ পর্যন্ত তার প্রেমেই পরি।তুমি একদিন দেখে নিও তোমার ছেলেও অর্ষা বলতে পাগল হবে”

চলবে~

[আপনাদের কি অর্ষার বকাগুলো ভালো লাগছে না?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here